তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -২৪+২৫

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৪_ও_২৫

“ভালোবাসা কে সংজ্ঞায়িত কিভাবে করে আমার জানা নেই! পৃথিবীতে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আসলেই বড় অদ্ভুত। তিশা কে এখন খুব হিংসে হচ্ছে আমার। হিংসে হবার’ই কথা! আমার ক্রাশ কে সে পেয়েছে হিংসে হবে না আবার। কিন্তু তানিশা ! এই মেয়েটা হুট করেই বড্ড ভাবাচ্ছে আমাকে। আহনাফ আর তানিশা’র এতো বছরের বন্ধুতে আহনাফ আজ অবদি তানিশা কে বুঝলো না। নাকি বোঝার চেষ্টাই করে নি। প্রতিদিন নিয়ম করে একটা মানুষের জন্য চিরকুট আনা, সে পড়বে না জেনেও তাকে দেওয়া! কেন? তানিশা’র কি আত্নসম্মান নেই নাকি সে কিছু বুঝতে পারে না। একি! আমি তানিশা’র কথা এখন ভাবছি কেন? নিজেকে একটু বড় বড় মনে হচ্ছে কেমন গভীর গভীর কথা ভাবছি আমি। কেন ভাবছি? তানিশা’র মতো এমন এক স্মার্ট মেয়ে ভালোবাসার কাছেও নিজেকে কিভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে এটা তাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না আমি।‌ হ্যাঁ ওটা তানিশা’ই ছিল! শপিং মলে দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা তানিশা ছাড়া কেউ না। ওকে চিনতে এতোটা ভুল হবার নয় আবার। তানিশা কে দেখতেই যখন অশান্ত কে বললাম সে এদিকে না ফিরেই হেসে বলল, “আমি বুঝতে পারি না এই ভালোবাসা আসলে কি? এতো কিছুর পরেও ও এখানে এসেছে!

“আপনি সিউর ওটা তানিশা।

“তোমার আগেই আমার চোখে পড়েছে। আহনাফের ভাগ্য আসলেই অদ্ভুত তাই না বলো তুমিও এখানে আর তানিশাও! ( শব্দ করে হাসল )

“এই এই শুনুন! আমি জানতাম না ওরা এখানে, জানলে আসতাম না হুহ।

বলেই আবারো ওদিকে তাকাতেই দেখি তানিশা গায়েব। মেয়েটা আড়ালে চলে গেল আবার! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলাম। মানুষের ভাগ্য নাকি আগে থেকেই ঠিক করা। আহনাফের ভাগ্যে নিশ্চিত আমরা তিনজন নেই তবে হ্যাঁ কেউ না কেউ তো আছে। হয়তো এই তিনজনের মাঝেই কিংবা নতুন কেউ!

নতুন কেউ কথাটা মনে পড়তেই নিঝুম চোখ বন্ধ করে ফেলল। জীবন এতো কমপ্লিকেটেড কেন রে ভাই; হুহ এখন মনে হচ্ছে আমি নিঝুম। একটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছি। যাহ ভালো মতো শ্বাসও নিতে পারছি। ওতো গভীর গভীর চিন্তা ভাবনা আমার দ্বারা হবে না। এসব বাদ দিতে হবে আমার। যা আছে তাই হবে, ভেবে কি হবে। চোখের চশমা ফেলে রেখে বালিশে মুখ গুজল নিঝুম। এতো আদর্শবান হবার কিছু নেই। যার যার মন তার তার। আমার কি? অতঃপর ঘুমের দেশে পারি দিল সে।

পরদিন সকালে ,,, আজ একটু বেশিই ঘুমিয়ে ফেলল নিঝুম। উঠতে গিয়ে দেখল বেশ দেরি হয়ে গেছে। কোনমতে তৈরি হয়ে না খেয়েই বেরিয়ে গেল। মা জোর করে যাবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ালো। আশ্চর্য এখনো কি সে ছোট আছে নাকি। রাস্তায় কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে দৌড়াতে লাগল সে। দশ মিনিটের মধ্যে বাস ছাড়বে, বাস ধরতে না পারলে শেষ সে। এর পরের বাসে যে লেভেলের ভিড় হয় চিপকে যাবার মতো।

নিঝুম দৌড়ে যাচ্ছে ‌, হঠাৎ পাশে চোখ পড়তেই দেখল একটা ছেলে হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুমের ইচ্ছে করল বলতে, মুখটা বন্ধ করুন তাহলে মশা মাছির আস্তানা হয়ে যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই এটা না করে জিহ্বা বের করে ভেঙিয়ে এলো সে। ছেলেটা এখন হতভম্ব! নিঝুমের বেশ হাসি পেল।

বাস ছেড়ে দিয়েছে। নিঝুম হাত নাড়িয়ে থামতে বলছে। বাসের হেলপার ছোট ছেলেটা নিঝুম কে দেখতে পেয়েই বাস থামিয়ে দিল। নিঝুম বাসে উঠেই ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “থ্যাংকু রে!

“ওয়েল কাম আপু!

নিঝুম কিঞ্চিত হাসল। ওর বয়সী একটা বোন তারও আছে। কিন্তু সে স্কুলে যায় তবে ছেলেটার ভাগ্য তেমন না। প্রত্যেকটা মানুষের আলাদা নিজ নিজ ভাগ্য আছে । চলার পথে একটা মানুষের পরিচয় হয় হাজার টা মানুষের সাথে। তবে শেষে জীবন পারি দিতে হয় এক জনের সাথেই। জানালার সিটটা পেয়েই গেল সে। কোনমতে সেখানে বসে পড়ল। বাস ছুটে চলছে! হ্যাঁ কি জানি ভাবছিল সে, মনে পড়েছে। এতো মানুষের সাথে পরিচয় হবার পরেও একজনের সাথেই থাকতে হয়। তবে কি এমনটা হবে শেষে আহনাফ তার’ই হবে! ভ্রু কুঁচকে গেল তার। পুরো শরীরে অদ্ভুত এক অনুভূতি! কিন্তু নিঝুম এটা উপেক্ষা করে গেল। দু কানে হেডফোন গুজল সে।

ভার্সিটিতে আজ কিছু একটা বেঁধেছে,‌বেশ একটা গোলমেলে আবহাওয়া। কিন্তু ভাবার বিষয় হচ্ছে গোলমাল একমাত্র গ্যাং ডেভিলের পক্ষেই সম্ভব , সোজাসাপ্টা বললে অশান্ত ! এ আবার নতুন কি করল? নিঝুমের এক কানে যেই হেডফেন টা ছিল তাও নামিয়ে ফেলল। খুব অদ্ভুত একটা বিষয় হলো আশপাশের লোক তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাকে দেখবার কি হলো আবার। নিঝুম খানিকটা হতভম্ব বোধ করল। এভাবে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকাতে অস্বস্তি লাগছে তার। অতঃপর সবাইকে উপেক্ষা করে ভেতরে পা রাখল সে। এক জায়গায় সবাই যেনো জড়ো আছে। নতুন কোন নোটিশ লাগানো হলো নাকি। সবার মতোই নিঝুমের কৌতুহল ওই দিকে। কিন্তু ব্যাপার ঘটল যখন সবাই এখন তার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো কানাঘুষা করছে, কিংবা হাসছে। একজনের মিনমিনিয়ে কথা কানে এলো, “আরে এই মেয়েটাই তো!

“হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই! নিঝুম ওর নাম।

“বাহ নতুন এসেই এই কান্ড।

“তা আর বলতে, ইদানিং তো দেখছি শান্ত’র সাথে অনেকটা চিপকে থাকতে আর এই কয়েকদিনেই এই কান্ড!

নিঝুম চোয়াল শক্ত করল। কিছু একটা তো হয়েছেই আর যা হয়েছে তাকে আর অশান্ত কে নিয়েই। আরেকজনের কথা কানে এলো, “কান্ড টা শান্ত’ই ঘটিয়েছে! তোরা জানিস না এই মেয়ে শান্ত কে কিভাবে হেনস্তা করেছে। একদিন তো চড় মেরেই বসল।

এমন কানাঘুষা নিঝুমের আর সহ্য হচ্ছে না। সবাইকে ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো কি হয়েছে সেটা দেখবার জন্য? কিন্তু তার জন্য কি অপেক্ষা করছিল এটা তার ধারণার বাইরে ছিল। নিঝুম থমকে দাঁড়িয়েছে, তার কানে শুধু বাজছে আশেপাশের মানুষের কথা। নিজের চোখ কে এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। সে তার চোয়াল শক্ত করল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু সামনের দিকে। রাগে তার ঠোঁট কাঁপছে, ঠোঁট দুটোও কামড়ে ধরল সে। চোখের কোনে কমশ্র অশ্রু আশ্রয় নিচ্ছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করল নিঝুম। পিছনের মানুষগুলো এখন তার উপর হাসছে। কেউ কেউ মজা নিচ্ছে। মজা তো নেবার মতোই ঘটনা ঘটেছে। সামনে যেই পোস্টার লাগানো হয়েছে সেটা দেখে যে কেউই মজা নিবে। রাগে ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তাদের মধ্যে তো কখনো এমন কিছু ঘটেনি, তাহলে এমন ছবি তুলল কে?
ছবিটা দেখে এখন কিছুটা মনে পড়ছে নিঝুমের। এটা দুদিন আগের:ই ঘটা ঘটনা। যখন সে কাঁদতে কাঁদতে অশান্ত’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সব দোষ চাপাচ্ছিল অশান্ত’র ঘাড়ে। অশান্ত তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ব্যাপারটা কোনভাবেই খারাপ দিকে নেয় নি নিঝুম। একজন বন্ধু হিসেবে এভাবে অশান্ত আগলে রাখতেই পারে। কিন্তু এখানকার ছবির সাথে সেই ঘটনার কোন মিল নেই। নিঝুমের বেশ মনে আছে অশান্ত তাকে জড়িয়ে ধরে নি, শুধু তার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখানকার ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অশান্ত তাকে জড়িয়ে আছে। দুজনের এই ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত পোস্টার আকারে বড় করে ছাপিয়ে পুরো ভার্সিটি জুড়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে! দুজনের মুখ দুটি স্পষ্ট! পাশে আবার বড় বড় লেখা, “নতুন প্রেমিক প্রেমিকার আর্বিভাব ঘটল ভার্সিটিতে! এখন তাদের প্রেমলীলা চলবে পুরো ভার্সিটি জুড়ে!”

লাইন দুটো নিজের মুখে পড়তে হয় নি। আশপাশের মানুষ চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছে কথাগুলো। “শান্ত কে ঘোল খাওয়ানো! একদম বেশ বুঝিয়ে দিয়েছে। ইট মারলে পাটকেলটাও খেতে হয়। সবার সামনে চড় মে*রে শান্ত কে অপমান করায় শান্ত তার প্রতিশোধ নিয়েছে। তা কি এমন তেমন প্রতিশোধ নাকি। পুরো আগুন লাগিয়ে দিয়েছে!’

কথাগুলো শরীরে কাটার মতো বিধলো। তবে কি সত্যিই শান্ত প্র*তিশোধ নিল তার কাছ থেকে। ছিহ! কতোটা নিকৃষ্ট ধরণের মানুষ হতে পারে অশান্ত এটা এখনো বুঝতে পারছে নিঝুম। সবার এই হাসাহাসি’র‌ মাঝে দুজন মেয়ে আবার দৌড়ে এসে বলল, “এই সত্যি তুমি আর শান্ত কি প্রেম করছো? এই অসাধ্য সাধন করলে কি করে?

বলেই গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগল। লজ্জা, ঘৃণা আর রাগ সবকিছু ঝাপটে ধরল নিঝুম কে। গা বার বার গুলিয়ে যাচ্ছিল তার। অশান্ত কে খারাপ ভেবেছিল তবে এতোটা না। কতোটা কুরুচিপূর্ণ কাজ করেছে সে। পাশ ফিরে তাকাল নিঝুম। পোস্টার শুধু এখানেই না আরো দেওয়াল জুড়ে লাগানো। বুঝতে বাকি নেই পুরো ভার্সিটিতে কথাটা জানাজানি হয়ে গেছে। নিঝুম পিছিয়ে এলো। এখানে থাকলে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বের হতে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল সে। তার সামনে দাঁড়ানো অশান্ত। আশপাশ আরো অনেকেই আছে কিন্তু কাউকে চোখে পড়ল না তার। নিঝুম দূরে এসে চট করেই শান্ত’র গালে ঠাসিয়ে একটা চ*ড় মারল। উপস্থিত সবাই সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল। যারা হাসাহাসি করছিল এখন তারাও চুপ! যেই অশ্রু গুলো তার চঞ্চল চোখে আশ্রয় নিয়েছিল তা মুহুর্তেই এখন গাল বেয়ে পড়ে গেল। শান্ত হতবাক! সে গালে হাত রেখে সামনে তাকাল। নিঝুম তাকে চড় মারল! ‌এটা বুঝতেই কিছু সেকেন্ড লাগল তার। অতঃপর রেগে যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি নিঝুমের চোখে পানি দেখে নিশ্চুপ হয়ে গেল সে। শুধু চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে রইল। নিঝুম কেঁদে কেঁদেই বলতে লাগলো, “আপনি এমনটা কিভাবে করতে পারলেন অশান্ত কিভাবে? আপনাকে বন্ধু ভেবেছিলাম আমি! আর আপনি…

শান্ত কিছুই বুঝতে পারছে না। তার পাশে দাঁড়ানো আহনাহ হতভম্ব! পেছন থেকে তানিশা রেগে বলে উঠল, “এই মেয়ে কি বলছো তুমি এসব? আর তুমি শান্ত কে আবারো চ*ড় মারল। এতো সাহস তোমার?

তানিশার কথাগুলো হয়তো নিঝুমের কানে পৌঁছাল না। সে বরং আরো দু পা এগিয়ে এসে শান্ত’র কলার আঁকড়ে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে শান্ত’র‌ চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। শান্ত স্পষ্ট নিঝুমের চোখে ঘৃণা দেখতে পাচ্ছিল। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপেই বলল, “ছিহ শান্ত ছিহ! আমার সম্মান নিয়ে এভাবে খেলতে পারলেন আপনি। শুধু প্রতি*শোধ নেবার জন্য এতোটা নিচে নামলেন!”

শান্ত’র কানে কোন কথাই যাচ্ছিল না। নিঝুমের মুখ থেকে প্রথমবার শান্ত নামটাই যেন সবকিছু গুলিয়ে ফেলল। নিঝুম ছেড়ে দিল শান্ত কে। চোখের পানি মুছে রেগে হন হন করে বেরিয়ে গেল সে। শান্ত’র বোধ হতেই সে পেছন থেকে তাকে ডাকতে লাগল, “এই চশমিশ! চশমিশ আমার কথা শোন! কিসব বলছো তুমি কি করেছি আমি!

কথা গুলো কানে গেলেও নিঝুম আর দাঁড়ালো না। সে বেরিয়ে গেল ভার্সিটি ছেড়ে। শান্ত তার পিছনে যেতে নিবে ওমনি আহনাফের গলা কানে ভেসে এলো। আহনাফ শুকনো মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শান্ত’র অদ্ভুত লাগল। সে দৌড়ে এবার ভেতরে গেল। এদিকে নিঝুম বের হবার মুখেই তিথি আর ইফার সঙ্গে দেখা হলো। দুজনেই তাকে দেখে হতভম্ব। ইফা নিঝুমের গালে হাত রেখে বলল, “তুই কাঁদছিস কেন নিঝুম?

নিঝুম কান্নায় ভেঙে গেল। ইফা তৎক্ষণাৎ তাকে জড়িয়ে ধরল। তিথি ক্রমশ মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। নিঝুম শুধু একটি বাক্য বলল, “আমি ভুল করেছি ইফা! ভুল করেছি!

কিন্তু তার কথা তিথি আর ইফার বোধগম্য হলো না। দুজনেই দুজনের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল।

শান্ত তার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। ছবি গুলো কি সত্যিই তার আর চশমিশের। সে এগিয়ে গেল, ছবিতে হাত রাখল। চশমিশের চড়ের কথা মনে পড়তেই সজোরে লাথি মারল দেওয়ালে। চশমিশ তাহলে এই কথাই বলছিল। কিভাবে ভাবতে পারল এই কাজটা শান্ত করবে কিভাবে? রেগে পোস্টার ছিঁড়তে লাগল সে। তবুও খান্ত হলো না। সেই পোস্টার হাতে নিয়ে আবারো ছিঁড়তে লাগল। দিয়া, রিয়া, তানিশা, নীলাভ্র, আহিম, আফিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। উপস্থিত সবাই অবাক! শান্ত তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “নাটক শেষ এবার চলে যেতে পারো সবাই”!

তার এই কথায় ভিড় কমতে লাগল। আহনাফ শান্ত’র ঘাড়ে হাত রাখল। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “যে এমনটা করেছে আমি তাকে ছাড়বো না। এর দাম তাকে দিতেই হবে!

বলেই হন হন করে চলে গেল। আহনাফ বুঝতে পারল কাজটা শান্ত’র না। কিন্তু নিঝুম ভাবছে এটা শান্ত’র কাজ। ভাবনাটা ভুল না, শান্ত এমনটা আগেও করেছে কিন্তু এবার চাকা তার দিকেই ঘুরছে! ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফোনটা বেজে উঠল তার, তিশা’র ফোন। তানিশার নজর পড়ল ফোনের দিকে। তিশা’র নামটা ভেসে উঠতে দেখেই চোখ নামিয়ে ফেলল সে। হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে!

কফি হাউজের এক কোনের টেবিলে বসে আছে তিনজন। ইফা, তিথি চুপচাপ বসে নিঝুম কে দেখছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে। এখন অবশ্য কান্না কিছুটা থেমেছে। কাজটার জন্য ওতোটা কষ্ট লাগছে না বরং কাজটা যে অশান্ত করেছে এটা ভেবেই কষ্ট বেশি লাগছে তার। হয়তো অশান্ত না করে অন্য কেউ এই কাজটা করলে এতোটা কষ্ট লাগতো না বরং তাকে গিয়ে শিক্ষা দিত সে। কিন্তু তাই বলে অশান্ত কে ছেড়ে দিবে এমনটা না। রেগে ঠোঁট কামড়ে ধরল সে। টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠল। আহনাফ’র নামটা ভেসে উঠল ফোনে। নিঝুম চোখ সরিয়ে নিল। ইফা ফোনটা রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ , আমরা রাস্তার মোড়ের কফি হাউজটায় আছি। আচ্ছা ঠিক আছে!

বলেই রেখে দিল। তিথি জিজ্ঞেস করল, “কি বলল?

“ভাইয়া আসছে!

নিঝুম শব্দ করে শ্বাস ফেলল। খানিকক্ষণ পরেই আহনাফ কে দেখা গেল। নিঝুম চোখ ফিরাল। আহনাফ কিঞ্চিত হেসে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। নিঝুমের বিপরীত দিকে চেয়ারটায় বসে পড়ল আহনাফ। নিঝুম অনেকটা বিচলিত। আহনাফ নিঝুমের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর জিজ্ঞেস করল, “অনেক কেঁদেছ দেখছি!

নিঝুম মুখ ফিরল। তবে কিছু বলল না। ইফা বলে উঠল, “শান্ত ভাইয়া এমনটা কিভাবে করতে পারল ভাইয়া!

“হ্যাঁ তাই তো! কিভাবে করল তিনি। তার সাথে তো নিঝুমের খুব ভাব জমে গিয়েছিল।

আহনাফ ওয়েটার কে ডেকে একটা কফি অর্ডার করে বলল, “তোমরা কিছু খাবে!

নিঝুম ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি বলতে এসেছেন সেটাই বলুন!

“বাহ; তোমার রাগি রাগি স্বরটাও কিন্তু দারুন!

“আহনাফ!

আহনাফ শব্দ করে হাসল। অতঃপর বলল, “তোমরা কি ভাবছ? শান্ত এমনটা করেছে!

“না করবার কারণ কি?

“তাও ঠিক করবার কারণ তো আছে! না করবার কারণ কি? এছাড়া এমন কাজ তো আগেও অনেকবার করেছে, কি তাই তো!

“আপনি আপনার ফ্রেন্ডের হয়ে সাফাই গাইতে এসেছেন।

“গাইলেই বা দোষ কি? আফটার অল বেস্ট ফ্রেন্ড তো আমার’ই!

নিঝুমের দৃষ্টি স্থির! ওয়েটার এর মাঝেই কফি নিয়ে এলো। আহনাফ কফি মগে চুমুক দিয়ে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা নিঝুম আমি যদি তোমায় বলি এই কাজটা শান্ত’র না তুমি বিশ্বাস করবে!

নিঝুম স্পষ্ট স্বরে বলল , “না!

আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। তিথি বলে উঠল, “সত্যি কি শান্ত ভাইয়া এমনটা করে নি!

আহনাফ দ্বিতীয় বারের মতো কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল, “নিঝুম তুমি প্রমাণ করতে পারবে কাজটা শান্ত’র?

“হ্যাঁ পারবো! কেন পারবো না? আপনি তো নিজের মুখেই বললেন এমন কাজ উনি আগেও করেছেন! কি বলেন নি?

“অস্বীকার কখন করলাম! আচ্ছা তোমার পক্ষে কি যুক্তি শুধু এই একটাই! আর কিছু কি বলবে ?

নিঝুম ভ্রু কুঁচকে নিল। ইফা বলে উঠল, “ভাইয়া এতো পেচালো ভাবে না বলে সত্যি টা বলো না।

“আমি আগেই বলছি আর আমার কাছে এর যথেষ্ট প্রমাণও আছে!

“কি প্রমাণ? – প্রশ্ন ছুঁড়ে মারল নিঝুম! আহনাফ হেসে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে এসে নিঝুমের হাত ধরল হুট করেই। অতঃপর তাকে টেনে নিয়ে গেল নিজের সাথে। নিঝুম জিজ্ঞেস করে বসল, “কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?

“প্রমাণ দেখাতে!

——-

শান্ত একে একে সব পোস্টার দেওয়াল থেকে ছিঁড়ে যাচ্ছে। কখনো আবার সেগুলো পায়ে মচরে দিচ্ছে, এই সেগুলোতে লাফাচ্ছে, আবার হাত দিয়ে ছিঁড়ে কুটি কুটি কড়ছে। নিঝুমের এই প্রথম মনে হলো, রেগে গেলে একা শুধু সেও না, আরো অনেকেই পাগল হয়! নিঝুম আহনাফের দিকে মুখ ঘুরে বলল, “আমায় এখানে আনলেন কেন?

“কান্ড দেখছ ওর?

“দেখছি! এগুলো দেখবার জন্য এনেছেন। বাহ তাহলে পাগলাগরাদ নিয়ে গেলেই বোধহয় বেশি সুবিধা হতো সেখানে উনার মতো আরো অনেকজন আছে।

আহনাফ শব্দ করে হাসল। অতঃপর বলল, “ও রেগে এসব পোস্টার ছিঁড়ছে, কি মনে হয়? ও নিজে এসব লাগালে এমনটা করতো?

নিঝুমের এবার ভাবনায় পড়ল। আহনাফ বলতে শুরু করল, “সেদিন প্রিন্সিপালের রুমেও শান্ত স্বীকার করেছিল তমা’র পোস্টার সেই লাগিয়েছে! তাহলে আজ কেন অস্বীকার করছে, কিসের ভয় আজ!

নিঝুম ভ্রু কুঁচকে নিল। আহনাফ এবার তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আর সবচেয়ে বড় কথা, যদি তোমাকে অপদস্থ করার হতো তাহলে তোমার সাথে নিজের ছবি কেন লাগালো।

নিঝুম সাথে সাথে উওর দিল, “যাতে উনাকে সন্দেহ না করি!

“তবে এখন কেন করছো?

নিঝুম চুপ হয়ে গেল। “শোন নিঝুম! শান্ত এমন কাজ আগেও করেছে বলে তোমরা তাকেই দোষারোপ করছো ‌। কিন্তু একথা কেউই বলছো না, কাজটা ও ছাড়াও তো অন্য অনেকেই করতে পারে কি তাই নয় কি! আগে করেছে বলে এখনো করবে এমন কোন কথা নেই।

নিঝুম এখন খানিকটা বিচলিত। এখানে শান্ত অনেকটা ক্লান্ত। খানিকক্ষণ পর পরই চশমিশের মুখের কথা মনে পড়ছে তার। বার বার মনে পড়ছে চড়ের কথা! পুরো ভার্সিটিতে সবার সামনেই চড় মারলো তাকে। এতো অবিশ্বাস! কিভাবে ? এটাতে কি আদৌও বন্ধুত্ব বলা চলে! হাস্যকর ব্যাপার বটে…

উঠে দাঁড়াল। না রাগ এখনো কমে নি। কি মনে করে এদিকে তাকাতেই চশমিশ আর আহনাফ কে চোখে পড়ল। শান্ত চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকাল। চশমিশের চোখের চাহনিও প্রায় এক ! দুজনেই তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে। হঠাৎ শান্ত মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল । নিঝুম হতভম্ব! আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখলেন! দেখলেন আপনি উনার কান্ড! কি রকম করল আমার সাথে!

“বিনা দোষে চড় খেলে অমন একটু আকটু সবাই করে!

“আপনি বলছেন কাজটা উনার না, কই উনি তো একবার এসে বলছেন।

“বলে এখন কি লাভ, চড় তো দিয়েই দিলে

“বার বার চড়ের কথা তুলছেন কেন আহনাফ! যদি অশান্ত কালপ্রিট না হয় তাহলে আসল কালপ্রিট কে খোঁজার পরিকল্পনা করুন!

“এতোক্ষণ পর একটা ঠিক কথা বললে!

“আমি কখনো ফালতু বকি না। – বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল।

আহনাফের বেশ মজা লাগলো। সে তার পকেট থেকে একটা পোস্টার বের করল। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে বলল, “এইটা নিয়ে ঘুরছেন কেন?

আহনাফ পোস্টারের নিচে তাকিয়ে বলল, “এখানে লেখা আছে দোকানের নাম। চলো সেখানে গিয়ে খোঁজ করা যাক। কি বলো?

নিঝুম মুখ ঘুরিয়ে আহনাফের দিকে তাকাল।‌ হাস্যজ্জ্বল মুখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে। নিঝুম চোখ নামাল। আহনাফ আবারো তার হাত ধরে নিয়ে গেলো তার সাথে। নিঝুমের নজর তার হাতের দিকে। পাশের ভবনের বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে তানিশা! একসাথে যাচ্ছে আহনাফ আর নিঝুম। ভালোবেসে তার জীবনটা তো তোলপাড় হয়ে গেছে অনেক আগেই, এখন সেখানে শুধু দমকা হাওয়ায় বইতে থাকে। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস!

দোকানের বাইরে দাঁড়ানো নিঝুম আর আহনাফ। দুজনেই ভিতরে ঢুকতে নিল তখন’ই আহনাফের ফোন বেজে উঠল। আহনাফ ফোন হাতে নিয়ে দেখল আবারো তিশা’র ফোন। আগেরবারের মতো এবারও ফোনটা কেটে দিলো সে। নিঝুমের চোখে পড়ল সবটা। অতঃপর বলল, “চলো!

দুজনেই ভিতরে প্রবেশ করল। থমকে গেলো দুজনেই। হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তোরা এখানে!

আফিন আর নীলাভ্র পিছু ফিরল। নিঝুম চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

——

“আমাদের শান্ত পাঠিয়েছে খোঁজ নিতে। কার কাজ এটা?

নীলাভ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কিন্তু তোরা এখানে!

“আমরাও এই কারণে এসেছি! কিছু জানতে পারলি তোরা।

আফিন বলল, “হুম! পোস্টার দেখে দোকানদার বলল একটা মেয়ে নাকি দুদিন আগে রাত্রি বেলা এসে পোস্টার বানানোর জন্য অর্ডার দিয়ে গেছিল!

নিঝুম অবাক কন্ঠে বলল, “মেয়ে!

আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিঝুমের দিকে ফিরল। অতঃপর নীলাভ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল, “তানিশার ছবি দেখিয়েছিলি!

আহনাফ তানিশার নাম নেওয়ায় নিঝুম বেশ অবাক হলো। তবে কি আহনাফ তানিশা কে সন্দেহ করছে। তবে কাজটা করার পিছনে যুক্তিও আছে বটে।

“হুম! কিন্তু দোকানদার কিছু বলতে পারল না। কারণ মেয়েটার মুখ সে দেখতে পারে নি। তার মুখে মাস্ক আর মাথায় টুপি ছিল।

আফিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি সিসিটিভি ফুটেজ আনতে বলেছি। দেখা যাক কিছু পাওয়া যায় নাকি!

সিসিটিভি ফুটেজ আসল। কিন্তু কোনভাবেই মেয়েটা কে চেনা গেল না। মেয়েটাও যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল রাখার চেষ্টাই করেছিল। এর মাঝেই দোকানদার বির বির করে বলতে লাগল, “আমি তখন’ই বুঝেছিলাম এটা নিয়ে একটা ঝামেলা হবেই হবে। না’ই করে দিয়েছিলাম কিন্তু এতো টাকার রেট মেয়েটা শেষে বাড়িয়ে দিল।

আহনাফ রেগে গিয়ে কিছু বলতে নিল কিন্তু নিঝুম পরক্ষণেই থামিয়ে দিয়ে বলল, “আপনার আর কি দোষ! কাজ তো টাকার জন্য’ই করছেন। আহনাফ ছাড়ুন এসব।

বলেই বেরিয়ে এলো। তার পিছু পিছু বেরিয়ে এলো বাকি সবাই। নিঝুমের পাশে দাঁড়িয়ে শব্দ করে শ্বাস ফেলল আহনাফ। নিঝুম মুখ ফিরে বলল, “আর ভাববার দরকার নেই। কাজটা অশান্ত’র নয় এতোটুকু এতোক্ষণে বুঝে গেছি।

নীলাভ্র বলে উঠল, “কিন্তু কার সেটাও বের করতে হবে। এভাবে ফেলা রাখা যায় না সবটা!

আফিনও তার কথায় সায় দিল। ফোন বেজে উঠল। শান্ত’র ফোন দেখতে পেয়ে নীলাভ্র রিসিভ করল। ওপাশ থেকে শান্ত একের পর এক কথা জিজ্ঞেস করছে। নীলাভ্র হাল ছেড়ে বলল খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে আহনাফ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবার পর নিঝুমের হাতের কব্জি শক্ত করে ধরল। নিঝুম কেঁপে উঠলো হঠাৎ। আহনাফ তার দিকে ফিরে বলল, “আমার সাথে এসো!

বলেই টেনে নিয়ে গেল। আফিন আর নীলাভ্র খানিকটা হতভম্ব! গাড়িতে উঠিয়ে নিজের সিটে বসল আহনাফ। নিঝুমের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, “ভার্সিটিতে মেয়েদের মধ্যে একমাত্র তানিশা যে তোমাকে সহ্য করতে পারে না। এছাড়া আর কি কেউ আছে নিঝুম!

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল আহনাফ! নিঝুম কিছু বুঝল না আর না বুঝল মাথা নাড়িয়ে না না করল। গাড়ির স্টার্ট দিল আহনাফ। নিঝুম বলে উঠল, “আহনাফ ধীরে..

তানিশা, দিয়া, রিয়া আর আহিম একসাথে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের এক কোনে। ঠিক ওপাশেই দাঁড়ানো ইফা আর তিথি! নিঝুম কে নিয়ে বড্ড চিন্তা হচ্ছে দুজনের। আহনাফ ছুটে এসে তানিশা:র হাত ধরে তাকে সামনে ঘুরিয়ে হুট করে জিজ্ঞেস করল, “কাজটা তোমার?

তানিশা হতচকিয়ে গেল। চোখ ফিরিয়ে তাকাল হাতের দিকে। আহনাফ এখনো শক্ত করে তার হাত ধরে আছে। আহনাফ তার হাত নাড়িয়ে আবার বলল , “তুমি বলো কাজটা তোমার কি না!

তানিশা জবাব দিবে তখন’ই দৌড়াদৌড়ি করে এলো নিঝুম। আহনাফ:র নাম ধরে ডাকল সে। আহনাফ হাত ছেড়ে দিল। তানিশা সাথে সাথে বলে উঠলো, “কি করেছি আমি ?

“তুমি ওই পোস্টার ছাপানোর অর্ডার দিয়েছিলে, তাই না!

“পোস্টার! কোন পোস্টার? – মুখ ফিরল নিঝুমের দিকে।

নিঝুম মুখ নামিয়ে ফেলল। আহনাফ বলে উঠল , “আজকের এই পোস্টার, যা পুরো ভার্সিটি জুড়ে শোরগোল পাকিয়েছে। দোকানদার বলেছে , পোস্টার তৈরির জন্য একটা মেয়েই এসেছিল।

“আর তুমি মনে করো সেই মেয়েটা আমি কি তাই তো!

দিয়া বলে উঠল , “আহনাফ! এসব কি বলছিস তুই! তানিশা, তানিশা করবে এটা?

চেঁচামেচি’র শব্দে ইফা আর তিথিও ছুটে এলো। রিয়া আর আহিম যেন কথাটা বিশ্বাস’ই করতে পারছে না। আহনাফ বলে উঠে, “তানিশা ছাড়া আর কে আছে যে নিঝুমের সাথে এমনটা করবে ! তোরাই বল, তোরা ছাড়া আর কারা ওকে সহ্য করতে পারিস না।

দিয়া বলে উঠে, “আমার তো ওকে এখনো সহ্য হচ্ছে না।

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল দিয়া:র দিকে। দিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিল। তানিশা শব্দ করে হাসল। রিয়া বলে উঠল, ”আহনাফ তুই সিউর ওটা তানিশা!

‘আরে রিয়া ছাড় তো! আহনাফ এখন তার নতুন বন্ধুত্ব পেয়ে পাগল হয়ে গেছে। তা না আহনাফ তুই কি আমায় দেখেছিলে সেখানে..

আহনাফ আর নিঝুম দুজনেই চুপ! তানিশা আবারো জিজ্ঞেস করল, ‘কি হলো বল!

পেছন থেকে আফিন বলে উঠল , “না মেয়েটার মুখ দেখা যায় নি, তবে এটা নিশ্চিত কাজটা কোন মেয়ের!

“তাহলে তো হয়েই গেল। আর অমনি আহনাফ তোর মনে হলো কাজটা আমার!

নিঝুম এবার চোয়াল শক্ত করে স্পষ্ট স্বরে বলল, “এছাড়া আর কে হতে পারে। ভার্সিটিতে একমাত্র তুমি ছাড়া আর কে আছো?

“তাই তো! এক হচ্ছি আমি আর দ্বিতীয় হচ্ছে শান্ত আর কে আছে? কিন্তু নিঝুম তোমাকে একটা কথা, যদি আমার কাছে সময় আর সুযোগ দুটোই থাকতো না তাহলে এর চেয়েও বড় কিছু করতাম আমি তোমার জন্য।

আহনাফ বলে উঠল “তানিশা!

তানিশা আহনাফের দিকে ফিরল। নিজেকে শক্ত করে বলে উঠল , “আহনাফ! তুই আমায় কি ভাবিস আমি জানি না তবে তোরা আমার বন্ধু। আর নিজের ফ্রেন্ডদের ক্ষতি তানিশা করে না। এই মেয়েটার জন্য ওর সাথে শান্ত’র ছবি ছাপিয়ে হেনেস্তা করার কোন দরকার নেই।এই জন্য ও একাই যথেষ্ট। খামোখা শান্ত’র ক্ষতি কেন করতে যাবো আমি।

আফিন বলে উঠল , “তানিশা এটা সত্যি তো!

“আফিন তুইও! তোরও মনে হয় এটা আমি। এখন আর কি বাকি রইল তাহলে আমার। তোরা মনে করিস আমি তোদের না জানিয়ে একা একা এতো বড় একটা কাজ করে ফেলবো।

“আমি ওভাবে বলতে চায় নি তানিশা!

“রাখ তুই! আর এই যে এই মেয়ে শোন তুমি, তোমাকে কিছু করার জন্য আর যাই হোক নিজের বন্ধুত্ব মাটি দিচ্ছি না আমি। তবে হ্যাঁ আমি আবারো বলছি, যদি সময় আর সুযোগ দুটোই পাই না তাহলে তোমাকে বুঝিয়ে দেবো আমি কে! কথাটা মনে রেখো। আর তোমাকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানানোর জন্য শান্ত’র ছবির দরকার পড়বে না। এজন্য তুমি একাই যথেষ্ট!

বলেই নিঝুম কে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল তানিশা। তার পিছু পিছু দিয়া আর রিয়া। আহনাফ নিজেই বির বির করে বলল, “তানিশা না করলে তাহলে কে?

আহিম বলে উঠল, “হবে নতুন কেউ। তবে আমি তানিশা:র সাথে একমত। সবার সামনে শান্ত কে কোনভাবেই অপমান করাতে চাইবে না ও। আহনাফ ক্লান্ত শ্বাস ফেলে কপালে হাত রাখল। এদিকে নিঝুম এক কথাই ভেবে যাচ্ছে, তানিশা এটা না করে থাকলে আর কে? কে করতে চাইবে তার আর শান্ত’র ক্ষতি? কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা অশান্ত কে সে চড় মেরেছে! এই নিয়ে দুবার, এর ফল কি হবে এখন ভাবতেই নিঝুমের গা শিউরে উঠল। মুখ তুলে তাকাতেই দূরে অশান্ত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল সে। বিস্ফো*রিত চোখে অশান্ত তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম পিছুতে যেয়ে সামলাতে না পেরে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে নিঝুমের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here