তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -২৬+২৭

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৬_ও_২৭

দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে রেখে হেঁটে যাচ্ছে শান্ত। হাঁটতে হাঁটতে এলাকার পার্কের সামনে এসে দাঁড়াল সে। পার্কের ভেতর কয়েকটা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে। কি না কি মনে করে পার্কের ভেতর ঢুকল সে। ফাঁকা বেঞ্চিতে বসে পড়ল অনায়াসে। চোখ বুলাল আকাশের মাঝে। বিশাল এই আকাশের মাঝে ওই তো এক টুকরো চাঁদ এছাড়া আর কি আছে? এই চাঁদ টাই সবার আকর্ষণ! বিশাল এই আকাশের মাঝে এখন রাজত্ব চলছে তার। সারাটা দিন যেই ভ্যাপসা একটা গরম পড়েছিল তাও রাতের আঁধারের মধ্যেই ঢেকে গেল। গুটি গুটি আলো ফেলে জ্বলছে আবার তারাও! তবুও সেগুলো কে হার মানিয়ে দিচ্ছে এই চাঁদ! শুধু শুধু এমন চাঁদ দেখতেও শান্ত’র অনেক ভালো লাগে। একটা সময় ছিল যখন সে আর আহনাফ রাতের বেলা ছাদে বসে এমন চাঁদ দেখতো। তখন তারা খুব ছোট ছিল। তবুও আঁধার কে এতো ভয় পেতো না। আহনাফ চাঁদের দশা বলতে পারতো। কখন পূর্ণিমা কখন অ্যামাবসা! কিন্তু শান্ত’র এই সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেলিয়ে পড়ল সে। ছোটবেলার কথা আজ হুট করেই অনেক মনে পড়ছে তার। ছোটবেলা টা অনেক চমৎকার কেটেছে আহনাফের সাথে। খেলার সাথি বলতে একমাত্র আহনাফ! তাকে বড় ভাই ও বলা যায় , সবসময় শান্ত কে বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখত। শান্ত কোন কষ্ট পেলে তার ভাগ নিতে চাইতো সবসময়। হঠাৎ যেন তার আর আহনাফের কাটানো সেই মুহুর্ত তার চোঁখের সামনে ভেসে উঠল। দুজনে মিলে ছোটাছুটি করত প্রতি মুহুর্তে। শান্ত’র ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিত হাসি। তার মনে পড়ে না , আহনাফ কখনো কি তাকে জেনেশুনে কষ্ট দিয়েছিল! না দেয় নি, আচ্ছা কষ্ট দিবেন বা কেন? হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন চাপল তার মাথায়!

শান্ত মন ঘুরাল। বেশি ভাবনা চিন্তে করলে আজেবাজে অনেক কথাই হুট করে মাথায় ঢুকে যায়। কিন্তু ভাববার মতো তেমন কিছু পাচ্ছে না। আচ্ছা ওই মেয়েটা কে হতে পারে! আহিম কি কোন খোঁজ পেল মেয়েটা কে? কেন তাকে আর চশমিশ কে অপমান করার জন্য এতো উঠে পড়ে লেগেছে। শান্ত এবার সোজা হয়ে বসল। তাকে অপমান করতে চায় না এমন মানুষের সংখ্যা অনেক কম কিন্তু সবার সাহসে কুলায় না। এই মেয়েটার কুলিয়েছে! ভার্সিটির প্রত্যেকটা দাড়োয়ান থেকে শুরু করে সবাই কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। পোস্টার গুলো তারাই লাগিয়েছে! ভেবেছিল শান্ত পাঠিয়েছে! এমন পোস্টার আগেও শান্ত তাদের দিয়ে লাগিয়েছে এজন্য তারা ভেবেছে এগুলোও শান্ত’ই পাঠিয়েছে। এটাই তাদের বক্তব্য! বেচারাদের উপর খুব রাগ চেপেছিল শান্ত! এমন কোন কাজ হলে সে নিজেই বলে কিন্তু এখানে সে বলে নি। তবুও এমন কাজ কি করে করল তারা।

বক্তব্য অনুযায়ী সকালে একটা ছেলে এসে গেটের দারোয়ানের কাছে পোস্টার গুলো দিয়ে বলে যায় এগুলো শান্ত ভাইয়া পাঠিয়েছে! ছেলেটা আমার নাম জানে , হয়তো ওই মেয়েটাই বলেছে! এখন তাহলে ছেলেটাকে খুঁজতে হবে। নীলাভ্র কে সেই কাজেই লাগানো হয়েছে! ছেলেটা হয়তো রাস্তার ফুটপাতে’ই থাকে তাই এতো সকাল সকাল তাকে পাওয়া গেছিল। কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ টা করেছিল। তাকে তো কেউই চিনে না এমনকি নামটাও জানে না। এই ছেলেকে এখন খুঁজে বের করা খুব মুশকিল তবে অসম্ভব না!

চিন্তা আবারো বদলালো, আচ্ছা যদি দাড়োয়ান কে তারা জিজ্ঞাসা না করে চশমিশ করত তাহলে কি হতো। তারা তো ফট করেই আমার নাম বলে দিত। কাজ তখনি সারত! গালে আবার একটা চড় পরতো !

ঠোঁট কামড়ে ধরল শান্ত! চড়ের কথা মনে পড়ে গেল তার। চশমিশের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে দুবার তাকে চড় মেরেছে ! ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম! – নামটা উচ্চস্বরেই নিল শান্ত! খানিকটা ভেঙিয়ে। মনটা হঠাৎ করেই আবার খারাপ হয়ে গেল। তখন দুটো কাজ করতে ইচ্ছে করে , এক চুপচাপ বসে থাকা অন্যটা হচ্ছে আহনাফের সাথে কথা বলে। প্রথমটা করতে ইচ্ছে করছে না। ফোনটা বের করল শান্ত ! এখন আহনাফ কে কল করা যাক।‌ নামটা সামনে আসার পরও ফোন করল না সে। আবারো গুটিয়ে রেখে দিতে নিল। তখনই টুং করে একটা শব্দ এলো। মেসেজ করেছে কেউ! শান্ত ভ্রু কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাল। চশমিশের মেসেজ!

“অশান্ত 🌚” ঠিক এমনভাবে করা মেসেজটা। শান্ত সীন করবে না ভেবেও সীন করে ফেলল। ভুলবশত’ই কাজটা হয়েছে। দ্রুত ফোন অফ করে পকেটে পুড়ল। চশমিশ তাকে মেসেজ দিল কেন? সে যে ভুল করেছে এজন্য ক্ষমা চাইতে! না শান্ত তাকে ক্ষমা করবে না। এতো সহজে তো কখন’ই না। এমনকি চশমিশের সাথে কথাও বলবে না। হুম মনস্থির করে ফেলেছে। হঠাৎ করেই ফোন আবারো টুং টুং শব্দ করে উঠল। তাও একবার না , বার বার! তো কি? কোন রিপ্লাই দিবে না সে। দেওয়া উচিত’ইও না। বন্ধু বলে ডেকে এতো টুকু ঘটনাতেই তাকে সন্দেহ করে বসল। হ্যাঁ ঘটনা এতোটুকু না, অনেক বড় তাও!

শান্ত উঠে দাঁড়াল এবার চলে যেতে। হঠাৎ মনে হলো তার পায়ের নরম কিছু একটা আছে। শান্ত পায়ের কাছে তাকাল। কিছু একটা তো আছেই এখানে। হাত দিয়ে সেটাকে ছুঁতে যেতেই তা দৌড়ে চলে গেল। কৌতূহল বেড়ে গেল। শান্ত হাঁটু গেঁড়ে বসে বেঞ্চের নিচে তাকাল। হঠাৎ তার মুখে হাসি ফুটল। একটা বিড়ালের বাচ্চা এটা! খুব ছোট তাই দৌড়ে বেশি দূর যেতে পারল না। শান্ত’র মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিড়াল পালার শখ অনেক দিনের কিন্তু এই শখ টা এতোদিন মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হয়েছে একমাত্র আহনাফের জন্য। ও বিড়াল কে খুব ভয় পায়। ছোট বেলায় একবার খেলতে গিয়ে কি এক বিড়াল তাকে কামড়ে দিয়েছিল। এরপর থেকেই বিড়ালে তার ভয়। শান্ত দাঁত বের করে হাসল। শখ টা আজ বেশ পূরণ করতে ইচ্ছে করছে। সে হাত বাড়িয়ে বিড়াল বাচ্চা টাকে ধরতে গেলো। বিড়াল ততোই জড়োসড়ো হয়ে কোণে পড়ে রইল। শান্ত একপ্রকার জোড় করেই তাকে ধরল। এতে বিড়াল মসাই বেশ ক্ষুব্ধ! শান্ত হাত খামচাতে শুরু করল। তবুও খান্ত হচ্ছে না, কামড়ে যাচ্ছে! আবার মিঊ মিঊ বলে ডেকেও যাচ্ছে। তাতে কিছু হচ্ছে না, শান্ত তাকে নিয়েই বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়াল।

——

আহনাফ বাড়ি ফিরতে ফিরতে আজ রাত হয়ে গেল ভীষণ! ওই ছেলেটাকে খোঁজার চেষ্টা করছিল নীলাভ্রের সাথে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার ভয়ে কিছু বলতে চাইছেও না। ব্যাপারটা যেন আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। দরজার কলিং বেল চাপতেই ইফা দরজা খুলে দিল রহস্যময়ী হাসি দিল।

“যাক বাড়ির কথা মনে পড়েছে তোমার!

“হাসির কারণ কি?

“আরেকজন তো আমাকে জিজ্ঞেস জিজ্ঞেস করতে করতে প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছে সেই খবর রাখো নাকি।

“কোথায় এখন?

“ছাদে বসে এখন আর বাবা নিজের ঘরে। যাও দেখা করে আসো, আমি পাহাড়া দিচ্ছি তোমাদের।

“চুপ কর, আমি নিজের ঘরে যাচ্ছি!

বলেই আহনাফ সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। ইফা আবারো মুচকি হাসল। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালালো আহনাফ। কাঁধের ব্যাগ, মানিব্যাগ আর ফোন বিছানার উপর রেখে ফ্রেশ হতে গেল। মুখে পানি ছিটিয়ে ভেতরে আসতেই তার মনে‌ হলো ঘরে কেউ আছে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে, ফোনটা হাতে ধরল সে। হঠাৎ বেলকনি থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, “৫০+ মিসকল আর ৩০+ মেসেজ! এর বেশি আর করতে ইচ্ছে হয় নি!

নিজের ভাবনা এখন বাস্তবে প্রমাণ নিল। বেলকনিতে তিশা আছে। আছে কিংবা ছিল হয়তো, এর মানে ইফা তাঁকে মিথ্যে বলেছিল মজা করার জন্য। আহনাফ এগিয়ে গেল বেলকনির কাছে। গ্রিলে হাত রেখে পেছন ফিরে তাকাল তিশা! চাঁদের আলোয় তার মলিন মুখখানি দেখে কিঞ্চিত হাসল আহনাফ। কিছু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “অপেক্ষা করছিলে নাকি আমার!

“এছাড়া সারাদিন আমার কাজ কি ছিল?

“অনেক কান্ড হয়েছিল আজ! তুমি জানো…

“হুম জানি! ইফা জানিয়েছে আমায়। তা রহস্য উদ্ধার করতে পারলে!

আহনাফ এবার আলতো করে ছাড়ল তিশা কে। তবুও সম্পূর্ণ না! এক হাত এখনো তিশার কোমরে রেখে অন্য হাত দিয়ে তার গালের কাছে হাত রাখল সে। কোমল স্বরে বলল , “সরি!

“বাদ দাও; কিছু খেয়েছ সারাদিনে..

“না!

“বসো আমি নিয়ে আসছি।

“আনা লাগবে না। একসাথেই সবাই খাবো। তুমি যাও নিচে আমি বাবা কে আসছি!

“আচ্ছা!

বলেই তিশা দ্রুত বেরিয়ে গেল। আহনাফ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। পেছন ফিরে দেখল তিশার চলে যাওয়া। কেবলই মনে হচ্ছে তিশা যেন তার থেকে পালাতে চাইছে! সত্যি’ই কি তাই কিন্তু কেন?

খাবার টেবিলে খেতে বসেও সেঈ প্রসঙ্গে কিছু কথা উঠল। আহনাফ জানিয়ে দিল, “আসল কালপ্রিট কে খুঁজে সে বের করবেই!

তিশা বলে উঠল , “এমন ভাবে বলছো যেন খু”ন করেছে!

“তার চেয়েও বা কম কি?

ইফা বলে উঠল , “তাই তো! একটা মানুষের সম্মানের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে বলো!

—–

“এই ছাম্মাকছালো;

“এই এই ছাড় ছাড়! শান্ত’র জিনিস নজর দিলে তোকে ছাড়বে না।

“কেন ছাড়বে না। পার্মানেন্ট তো আর না। এই তো ইউজ করে এখন ফেলে দিয়েছে দেখছিস না

“তোরা চুপ কর তো , ম্যাডাম রেগে যাচ্ছে।

“আহ! রেগে গেলে তোমায় বড্ড সুন্দরী লাগে গো। কোথাও কি শুনেছিলে এই কথা।

“না শুনে কি আর ছিল নাকি!

“তুই এমন ভাবে বলছিস যেন তোর মুখে শোনার জন্য’ই বসেছিল!

হাসির রোল পড়ে গেল মুহুর্তের মধ্যেই! কথা গুলো আর পাঁচটা ছেলে বলছিল নিঝুম কে। রাগে এখন সে থরথর করে কাঁপছে। থমকে ভেবেছিল ইগনোর করে চলে যাবে। কিন্তু ইগনোর করাটাও এতো সহজ না। সবাই পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে। হয়তো এখন তাদের সাথে তাল মিলাও নাহলে মুখ বুজে সহ্য করো। কেন? মুখ বুঁজে সহ্য করবে কেন? সে তো অন্যায় কিছুই করে নি। তাহলে.. না এবার পিছিয়ে গেল না নিঝুম। একজন কে সুযোগ দিলে বাকিরাও জেপে বসবে। চোখের চশমা টা ঠিক করে মুখ ফিরালো। হাসি থামিয়ে সবাই এখন নিঃশব্দে তার দিকেই তাকাল। নিঝুম কোমরে হাত রেখে সামনে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,

“আমায় রাগলে না বরাবরই সুন্দর লাগে বুঝলেন আপনারা।

“তাই নাকি! এই রুপের মায়াজালে বোধহয় শান্ত ধরা দিয়েছিল!

নিঝুম ঠোঁট কামড়ে ধরল। মুখ ফুটে জবাব দিল, ” তা পড়লে কি দোষের কিছু!

“না তা তো বলছি না আমরা।

“কিন্তু প্রেম করছো আবার সেটা পুরো ভার্সিটি জুড়ে বলে বেরাচ্ছ সেটাই একটু ব্যাকডেটেট লাগলো আর কি!

পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দিয়া, রিয়া আর তানিশা! ছেলেগুলোর কথা কানে আসতেই থেমে গেল তারা। রিয়া তানিশার দিকে ফিরে বলল, “যাবি নাকি!

“না থাম!

নিঝুম তখনি স্পষ্ট স্বরে বলল, “বললেই বা দোষের কি? আপনারা এটা বলুন তো প্রেম তো আমি করছি আপনাদের এতো জ্বল*ছে কেন?

কথা গুলো একটু উচ্চস্বরেই বলল। চারপাশের মানুষজন থেমে গেল তার আওয়াজে। তানিশা কিঞ্চিত হেসে বলল, “দরকার নেই চল!

নিঝুমের এই মুখে মুখে কথার জবাব দেখে ছেলেগুলো এবার নিশ্চুপ হয়ে গেল। নিঝুম আবারো বলে উঠল , “আমি কোন নাবালিকা নই আর না আপনারা নাবালক। নিজের ইচ্ছেমত চলার স্বাধীনতা আপনার যেমন আছে তেমনি আমারো আছে। এই বয়সে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার কোন কারণ তো দেখছি না। যদি প্রেম করতেই হয় তাহলে আপনাদের দেখিয়েই করবো। দশজন দেখবে আর জ্বলবে, যদি তাই না হয় তাহলে প্রেম করে লাভ কি?

আশপাশের ছেলে মেয়ে গুলো এখন ছেলে গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে। একজন হুংকার দিয়ে বলে উঠল, “তাহলে ভার্সিটিতে প্রেম করার জন্য এসেছ নাকি পড়াশুনা করতে। এখন একজনের সাথে ঠেসাঠেসি করছো লোকজন দেখিয়ে। কিছু একটা তখন কার উপর দোষ চাপাবে। এই আমাদের উপর তো। আর তাছাড়াও তোমার জন্য আরো পাঁচ জনের নাম খারাপ হবে এই নিয়ে কি বলতে চাও!

নিঝুম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। প্রথমে তাদের বলতে চেয়েছিল তার আর অশান্ত’র মধ্যে কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু সেই কথা যে বিশ্বাসের বাইরে এটা সে আগেই বুঝেছিল। তাই ওইসব কথা বলল। কিন্তু মনে হচ্ছে না এদের মুখ বন্ধ করা যাবে। নাক ফুলিয়ে চোখের চশমা ঠিক করল সে। কিছু কঠিন কথা বলার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই অন্য কারো কথা কানে ভেসে এলো , “তারা তোরা বুঝি খুব সাধু, একদম দুধে ধোয়া তুলসী পাতা!

সব গুলো ছেলেই এবার পিছনে তাকাল। তার সাথে সাথে ফিরল নিঝুমও! ইয়া বড় লম্বা লাগছে হঠাৎ অশান্ত কে! ব্যাপার কি? অশান্ত এতো লম্বা হলো কিভাবে। পরক্ষণেই টের পেল অশান্ত তার পিছন বরাবর দাঁড়িয়ে আছে বলেই তাকে এত্ত লম্বা লাগছে। নিঝুম এবার একটু সরে দাঁড়াল। অশান্ত দুই হাত বাহুতে গুঁজে জিজ্ঞেস করল, “ওর জন্য বাকিদের নাম খারাপ হবে আর তোদের জন্য! এভাবে একটা মেয়েকে টি*জ করা ঠিক কোন ধরণের সভ্যতা আমায় বল তো!

ছেলেগুলোর মুখ নিমিষেই নিমিয়ে গেল। কোন জবাব না পেয়ে শান্ত চেঁচিয়ে উঠল। নিঝুমও তার ধমকানিতে কেঁপে উঠল। বেশ মিনমিনেয়ে একটা ছেলে বলে উঠল, ভাইয়া আমরা তো আপনার’ই সাহায্য করছিলাম!

“কিসের সাহায্য! আমি বলেছি তোদের কিছু করতে..

“নননা মানে, ওই যে পোস্টার আপনি.. আমরা ভাবলাম হয়তো আপনি আপনার প্রতিশোধ..

“কিসের প্রতিশোধ! আমি তোদের একবারও বলেছি পোস্টার আমি লাগিয়েছি।

ছেলে গুলোর মুখ এইবার কাচুমাচু! অশান্ত তেড়ে যেতেই তারা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল। নিঝুম পেছন থেকে তার নাম নিতেই অশান্ত থেমে গেল। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল , “কখনো অতিরিক্ত কিছুই করতে যাবি না। আমি তোদের বলেছি এমনটা করতে! আর তা ছাড়াও যখন ওখানে লেখাই ছিল ও আমার গার্লফ্রেন্ড তাহলে তোদের সাহস কি রে হয় আমার গার্লফ্রেন্ড কে উল্টোপাল্টা বলা। পোস্টারে লেখা ছিল আমরা ডেট করছি , ব্রেকআপ হলো এটা কোথায় লেখা!

ছেলেগুলোর মুখ এবার ফ্যাকাশে! নিঝুম হা হয়ে তাকিয়ে রইল। আশপাশে গুঞ্জন রটিয়ে গেল শান্ত আর নিঝুম সত্যি একজন আরেকজনকে ডেট করছে। এর সাথে সাথে একথাও জুড়ল পোস্টার লাগানোর কাজটা শান্ত’র ছিল না। সবাই মুখ তুলে তাকাচ্ছে নিঝুমের দিকে। নিঝুম বিচলিত মুখে একবার এদিক তাকাচ্ছে তো আরেকবার ওদিক। ছুটে গিয়ে শান্ত’কে গুঁতো দিয়ে ফিসফিস করে বলল, “এসব কি বলছেন অশান্ত!

অশান্ত চশমিশের দিকে ফিরল। এবার তাকাল পিছনের দিকে। বেশ বড়সড় একটা ভিড় জমেছে। হুট করেই চশমিশের বাহু খানা ধরে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,‌”হ্যাঁ আমি আর মিস চশমিশ একজন আরেকজনকে ডেট করছি। সত্যি করছি! পেট ভরে গেছে সবার। নাও গেট আউট!

আবারো তার ধমকে কেঁপে উঠলো সবাই। পেছনের ছেলে গুলো পালিয়ে গেলে‌ যেন বাঁচে। সামনে দাঁড়ানো দর্শক ও উধাও! অশান্ত মুখ ফিরে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম ঠোঁট কামড়ে ভ্রু কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অশান্ত তার বাহু ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে নিল। তৎক্ষণাৎ নিঝুম বলে উঠল , “এই অশান্ত! দাঁড়ান আমার কথা শুনুন!

অশান্ত দাঁড়াল না। চশমিশ কিছুক্ষণ তার চারপাশে ঘুরে ফট করেই সামনে এসে দাঁড়াল। অশান্ত তাও পাশ বেয়ে চলে যেতে নিল। নিঝুম দুই হাত সোজা করে উঠিয়ে বলল , “আগে আমার কথা শুনুন! আপনি সবার সামনে মিথ্যে কেন বললেন আমায় নিয়ে?

অশান্ত অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল , “শুধু শুধু চড় মেরেছ! এর প্রতি*শোধ তো নিতে হবে তাই না।

“কিন্তু গতকাল তো আমি আপনাকে ১০১ বার সরি বললাম অশান্ত!

অশান্ত মুখ ফিরল। চোখ ছোট ছোট করে বলল , “১০১ বার কখন?

“মানে বলিনি! মেসেজ করেছি, আপনি চেক করুন! জানেন কতো কষ্ট করে লিখেছি।

“তুমি এতো গুলো মেসেজ গুনলে কি করে?

নিঝুম চুপ হয়ে গেল। অশান্ত বুঝতে পারল এর মাঝেই ঘাপলা আছে। সে বলে উঠল ,”সত্যি করে বলো!

“আসলে একটা অ্যাপ আছে মানে ওটা দিয়ে আর কি.. ( দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো )

“হাসা বন্ধ করো;

“করছি। কিন্তু তবুও বলেছি তো।

“তুমি কি ভাবো একটা চড়ের দাম ১০১ বার সরি বললেই মিটে যায়।

“আরো বলার দরকার ছিল নাকি?

“তোমাকে আমি এখন মে’রে দিয়ে বলি সরি , ঠিক আছে।

“আরে আরে এসব কি বলছেন।

‘তাহলে আর কি বলবো। চড় যখন মেরেছে শোধ তো নিতেই হবে তাই না

“আপনি বলছেন আপনি এখন আমায় উল্টো চড় মারবে*ন।

” বুদ্ধি টা খারাপ না। একদম শোধ বোধ হয়ে যাবে।

“আচ্ছা.. কিন্তু আপনি একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে চড় মারবেন!

“ওহ আচ্ছা! তুমি মেয়ে বলে যখন তখন যাকে তাকে চড় মারবে, কামড় দিবে ওতে কিছু না।

মিন মিন স্বরে , “ওভাবে বলছেন কেন? আমি তো আর জেনেশুনে…

“জানা উচিত ছিল , আমাকে এসে জিজ্ঞেস করার দরকার ছিল করেছো

চশমিশ মাথা নিচু করে মাথা নেড়ে না করল।

“বেশ তো!

বলেই অশান্ত আবারো হাঁটা ধরল। নিঝুম আবারো তার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলছে, “এই অশান্ত শুনুন না! এভাবে রাগ করার কি হয়েছে। আমি আপনাকে দুটো কোল্ডড্রিংক আর একটা চকলেট খাওয়াবো প্লিজ রাগবেন না।

“দুটো কোল্ডড্রিংক!

“হ্যাঁ যেনো আপনার মাথা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়।

“কি বললে তুমি?

“এই না না কিছু না রেগে যাবেন না। আপনাকে আমি বিরিয়ানি রেঁধে খাওয়াবো সত্যি;

‘বিরিয়ানি! তুমি রাঁধতে পারো..

“হ্যাঁ খুব ভালো রাধি!

“বেশ তো রেঁধে নিয়ে আসো!

বলেই অশান্ত আবারো চলে গেল। নিঝুম কিছু বলার সুযোগ’ই পেলো না।

——

ক্লাসে বেঞ্চে মাথা ঠুকে বসে আছে নিঝুম। তার চারপাশে অনেকগুলো মেয়ে বকবক করেই যাচ্ছে। তাদের বক বক শুনে এখন নিঝুম মাথা ধরে গেছে। সব অশান্তর কাহিনী! কীভাবে তাদের প্রেম হলো, কে প্রথমে স্বীকার করলো। কি কি করল ইত্যাদি ইত্যাদি! নিঝুম বার বার’ই একটি কথা বলতে লাগলো , “এমন কিছু না, আমাদের মধ্যে কিছুই নেই। কিন্তু কেউই তার কথার দাম দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে আরো কিছু দল মেয়েরা হাজির হলো। ওরা এসে এক ধমক দিতেই আশেপাশের মেয়েরা উধাও। নিঝুম হতচকিয়ে গেল। অতঃপর মেয়েগুলো একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একসাথে বলে উঠল, “সরি!

নিঝুম এবার তাদের দেখতে লাগল। এই চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছিল তাদের। এক পর্যায়ে চেনা গেল। এই গুলো ওইসব মেয়েই যারা সেদিন তাকে অপদস্থ করছিল। তানিশার কাছে মিথ্যে কথা বলছিল। তারা আজ তাকে সরি বলতে এসেছে এটা দেখেই নিঝুমের চোখ চড়াকগাছ! সে উঠে দাঁড়াল। সামনের একটা মেয়ে অনুরোধ স্বরে বলল, “প্লিজ সেদিন আমরা যা করেছি তা মনে রেখো না। আমাদের ক্ষমা করে দাও। আমরা আর এমনটা কখনো করবো। তুমি প্লিজ শান্ত ভাইয়া কে কিছু বলো না।

“আমি তাকে কেন কিছু বলতে যাবো। আর তোমার হঠাৎ মানে এতোটা পরিবর্তন!

“তুমি তো শান্ত ভাইয়ার প্রেমিকা মানে ডেভিল গ্যাং এর সদস্য! আর গ্যাং ডেভিলের সাথে আমরা কখনোই লাগতে যায় না। তো প্লিজজজ ( সবাই একত্রে বলে উঠল )

নিঝুম চেঁচিয়ে বলল , “এই থামো তো! আমি কোন গ্যাং এর সদস্য না। আমি নিঝুম বুঝলে। আর এখানে এসে একদম আমার মাথা খাবে না। যাও দূর হও!

তার চেঁচামেচিতে মেয়ে গুলো চলে গেল। ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হলো তিথি। নিঝুমের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল, “তুই আমার থেকে এটা লুকাতে পারলি।

“কি?

“সবাই কি বলছে নিঝুম। তুমি আমাকে ছেড়ে দিলি!

বলেই হুমড়ি খেয়ে নিঝুমের গায়ের উপর পড়ল। নিঝুম কোন মতে তাকে ছাড়িয়ে বলল, “পাগল হলি নাকি। আমি আবার কি করলাম। আর কি শুরু করলি তুই বল তো। এই ইফা বাঁচা আমায়!

“কি হলো তোদের আবার।

“আর কি হবার বাকি রেখেছে। নিঝুম আমাদের দল ছেড়ে দিয়েছে।

“ওমা কেন?

তিথির কাঁদো কাঁদো স্বর। নিঝুম কিছুই বুঝতে পারছে না। ইফাও তাই অবস্থা। ইফা তিথি কে ধাক্কা মেরে বলল, “এই ঠিক করে বল তো; কি হয়েছে?

খানিকটা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে, “তুই আমাদের ছেড়ে গ্যাং ডেভিলে যোগ দিয়েছিস!

“কি?

“হ্যাঁ সবাই তো তাই বলছে। আর শান্ত ভাইয়া নাকি নিজে বলেছে তুই আর সে ডেট করছিস। কথাটা সত্যি নিঝুম!
তুই আমার থেকে এটা কিভাবে লুকাতে পারলি।

নিঝুম এখন প্রায় ক্লান্ত! কিছুই আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। এদিকে তিথি অন্যদিকে ইফা। দুজনেই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

—-
ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেলো নিঝুম। ইফা হাসতে হাসতে ক্লান্ত। তিথি মুখ ভেংচি কেটে বসে আছে। সে আবারো এক কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো , “তুই সত্যি বলছিস তো নিঝুম!

নিঝুম মুখ ঘুরিয়ে তাকাল ইফা’র দিকে। বেচারির হাসি থামিয়ে রাখা এবার কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবুও মুখ টিপে বেচারি হেসে যাচ্ছে।

“আরে তিথি থাম এবার, নিঝুমও যেমন শান্ত ভাইয়াও তেমন। কেউ কারো থেকে কম না।

নিঝুম হাফ ছেড়ে বাঁচল। আরো একজনের উপস্থিতি হলো এই সময়। আহনাফ দূর থেকেই এগিয়ে এলো সামনে। চেয়ার টেনে পাশে বসল সে। সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করল আহনাফ। তিনজন’ই এসব শুনে হা হয়ে রইল। আহনাফ বলে উঠল, “এতো অবাক হবার কিছু হয় নি।

“কি বলছো কি ভাইয়া অবাক হবো না! মেয়েটা তো মনে হচ্ছে খুব চালাক!

নিঝুম চোয়াল শক্ত করে বলল, “তা কি? আমি কি চালাক কম নাকি! দেখে দেবেন মেয়ে টা কে তো আমি খুঁজেই ছাড়বো

তিথি হাত উঠিয়ে বলে, “তোর সাথে আমিও আছি।

ইফাও হাত উঠিয়ে বলল, “আর আমিও!

——

“হ্যালো কে?

“গলার স্বর শুনে চিনতে পারছিস না নাকি নাম্বার খেয়াল করিস নি।

“আপনি ভুল নাম্বারে কল দিয়েছেন। আপনাকে আমি চিনি না।

“চিনবি কি করে! দশদিন তো হাসপাতালে’ই ভর্তি ছিলাম। এতোদিন পর জ্ঞান ফিরল আজ।

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল, “তা আমার কি? যখন জ্ঞান ছিল না তখন কি জানিয়েছিলে। এখন কেন জানাচ্ছো!

“চিন্তা করবে বলে জানাই নি। যাই হোক, বলো কেমন আছে?

“ভালোই আছি। খারাপ থাকবো কেন?

“হ্যাঁ তাও ঠিক, খারাপ থাকবে কেন? এই বুড়োর কথা কি কেউ মনে রাখো

“এই শোন একদম সিমপ্যাথি পাওয়ার ধান্দা করবে না। বুড়ো হয়েও ঢং কমছে না তোমার।

“বুড়ো হয়েছি বলে কি এখন কথাও বলতে পারবো না নাকি।

“কথা বলো ঢং করতে কে বলেছে?

” তোমার নানুর মতো একদম কথা বলবে না তো!

“নানু যা বলতো সত্যি বলতো আর ঠিক বলতো। আর আমিও ঠিক বলছি।

“রাখছি আমি ফোন..

“রেখে দাও আমার কি?

“ওয়াট ইজ দিস , শান্ত আমি রেগে যাচ্ছি!

“যাও! ওই দূরে বসে ফোনে বলতেই পারবে আমি রেগে গেছি। এতে আমার কি? কিছু কি করতে পারবে তুমি।

“আমি এখান থেকে বসেই অনেক কিছু করতে পারি। ইউ নো দেট!

“আমি অনেক কিছুই জানি। আচ্ছা বাদ দাও, ঔষধ খেয়েছ কি!

“বুড়ো হয়ে গেলে কেউ দাম দিতে চায় না।

“কি চাইছো তোমায় আবার বিয়ে দিয়ে দিই!

“এখানে একটা মেয়ে আছে। ওর নাম এলিসা..

“মাই ডিয়ার গ্র্যান্ডপা! শুনেছি তোমার নাকি ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে ছিল। তা ওই মেয়েকে দেখে নাকি।

“হ্যাঁ ! লাভ এড ফাস্ট সাইড। আমি ওর খোঁজ নিয়েছি। কেউ নেই ওর। স্বামী মা*রা গেছে ২০ বছর হবে। এ অবদি বিয়ে টিয়ে করে নি। কোন সন্তানও নেই! পুরো একাই থাকছে…

“বাহ ভালোই তো। সব খোঁজ নেওয়া তো শেষ। বিয়েটা সেরে ফেলো।

“এজন্য’ই গার্জিয়ান কে বলছি।

“মত দিচ্ছি না আমি।

“ওয়াট! তুমি কি সারাজীবন আমাকে সিঙ্গেল রাখতে চাস!

“আমি চাই তুমি আমার নানুর ভালোবাসা নিয়েই জীবনের শেষ প্রহর অবদি থাকো। বুড়ো বয়সে আবার বিয়ের শখ। ম*রে ছিল তো আজ ৩০ বছর হয়ে গেল। তখন করো নি কেন?

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিঃ জায়ান আহমেদ। এই হসপিটালে তার কেবিনটা বেশ বড়সড়। ভিওআইপি বলে কথা , সামনের দিকে তাকালে কাঁচের ওপাশে পুরো শহর টা কে দেখা যায়। আধশোয়া থেকে তিনি এবার উঠে বসলেন। পাশ থেকেই তার গার্ড তাকে নিষেধ করলেন। তিনি তা অগ্রাহ্য করে বেডের পাশে থাকা ছবিটা উঠিয়ে নিলেন। ছবিতে এক হাস্যজ্জ্বল মেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। তিনি কিঞ্চিত হাসলেন! ছবির এই মেয়েটাকে দেখলে তার মনে এক প্রশান্তির বাতাস বয়ে যায়। ঠিক ৩০ বছর আগে তাকে যেমনি ভাবে ভালোবাসতেন আজও তাই বাসেন। একটিবারের জন্য তা কমে যেতে দেন নি। তিনি কিঞ্চিত হেসে বললেন,

“বড্ড ভুল হয়েছিল সেদিন। প্রথমবার ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে যদি পাশ কাটিয়ে চলে আসলে বোধহয় খুব ভালো হতো! অ্যাট লিস্ট আমি এতো গুলো বছর সেই চোখের মায়ায় বন্দি থাকতে হতো না। মুক্ত থাকতাম!

“তোমার চরিত্র যে ঠিক ছিল না এটা নানু ভালো করেই জানতো। তাই মায়া রেখে গেছে যাতে অন্য মেয়ের দিকে নজর না দাও কিন্তু তুমিতো দেখছি তাও নাছোড়বান্দা!

ওপাশ থেকে উচ্চহাসির শব্দ ভেসে এলো। শান্ত’র মুখেও এবার কিঞ্চিত হাসি। তিনি বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, “যখন তোমার নানু কে আমি প্রথম বার ভালোবাসি বলেছিলাম তিনি তখন ভাব দেখিয়ে চলে গেলেন। পরপর যখন তাকে দেখার আশায় রাস্তার এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকতাম তখন সে আমাকে দেখে মুখ ভেঙিয়ে বলেছিল, “নাছোড়বান্দা তো তুমি! এভাবে পিছে কেন লেগে আছো আঠার মতো! মেয়ে দেখোনি কখনো…

এপাশে ফোন হাতে শান্ত’র হাসির শব্দ শোনা গেল। ক্যাট ফুড পাত্রে ঠেলে খুঁজে চলছে সে অমি কে। হ্যাঁ বিড়ালের নাম অমি। এর মধ্যেই তার নাম ঠিক হয়েছে। তার জন্য একটি টুং টুং শব্দ করা গলার ঘন্টা ও কিনা হয়েছে।

অমি শান্ত’র চারপাশে ঘুড়াঘুড়ি করছে খাবারের জন্য। মাঝে মাঝে মিউ মিউ বলেও ডাকছে। শান্ত ফোনটা হাতে ক্যাট ফুড নিচে রাখতেই অমি তাতে হামলে পড়ে। তাকে খানিকটা আদর করে শান্ত এসে সোফায় বসে। শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে , “ঠিক মতো ঔষধ খাচ্ছো তো, শরীরের উপর যত্ন নাও এখন। ডাক্তার কি বলেছে জানো?

“আর রাখো ডাক্তারের কথা। আমার এলিসার কথা শোন!

“থামলে না তুমি..

ওপাশ থেকে কিছু বলল কিন্তু সেই কথা কানে এলো না শান্ত’র। কলিং বেলের আওয়াজে দরজার দিকে আগাল সে।

দরজা খুলে দেখল এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে চশমিশ! হাত জোরে জোরে নেড়ে বলল, “হাই অশান্ত!

“তুমি!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here