তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -২৮+২৯

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৮

“তুমি! তুমি এই সময়?

নিঝুম হাতে থাকা প্যাকেট টা নাড়িয়ে বলল, “টা টা নিয়ে এসেছি!

“কি এনেছো?

“বিরিয়ানি! তাও নিজ হাতে রেঁধে..

“খেতে পারবো তো!

“অশান্ত! দেখি সরুন তো।

বলেই অশান্ত কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিঝুম অনায়াসে তার রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মুখে হাসি হাসি একটা ভাব। মনে হচ্ছে বিরিয়ানি রেঁধে আনতে পেরে বেশ খুশি সে। কিন্তু অশান্ত এখনো সংশয়ে আছে সেই বিরিয়ানি আদৌও খেতে পারবে তো সে।

নিঝুম প্লেটে বিরিয়ানি বাড়ছে। অশান্ত বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি সত্যিই রেধেছো নাকি কোন দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছ?

“কেন বলুন তো!

“চশমিশ! বিরিয়ানি দেখে ঠিকঠাক মনে হচ্ছে কিন্তু এটা তুমি রেঁধেছে এটা বিশ্বাস করতে আমার আপত্তি আছে।

“ওমা! কেন?

“না তেমন কিছু না।

“তেমন কিছু না মানে, খেয়ে দেখুন! কতো ভালো মতো রেধেছি আপনি জানেন সেটা!

বলেই অশান্ত’র সামনে এসে দাঁড়াল প্লেট হাতে। অশান্ত ফোনটা রেখে বিরিয়ানি মুখে দিল। নিঝুম অনেক আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অশান্ত মুখ ফিরিয়ে বলল, “এটা কি রেধেছ?

“কেন বিরিয়ানি!

“এটাকে বিরিয়ানি বলে , বিরিয়ানি এমন ঠান্ডা কেন?

“ওহ এই কথা! আমি ইচ্ছে করেই গরম গরম বিরিয়ানি আনি নি। যদি হট বিরিয়ানি খেয়ে আপনার মাথা আবার হট হয়ে যায়।

“তাই মাথা ঠান্ডা করতে ঠান্ডা বিরিয়ানি!

“না না কুল বিরিয়ানি!

“চশমিশের বাচ্চা…

নিঝুম দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিতেই যাচ্ছিল। কিন্তু এর মাঝেই পায়ের কাছে নরম আলতো কিছুর ছোঁয়া নিচে তাকাতেই বিড়াল কে দেখতে পেল সে। বিড়াল তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম এক চিৎকারে সোফার উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে লাগল।

“বিড়াল বিড়াল বিড়াল!

“বিড়াল কেন বলছো, ওর নাম অমি!

“ওওওই অমি টমি আমি জানি না। এটা আপনার ঘরে কি করছে?

“পুষতে এনেছি!

বলেই অশান্ত অমি কে কোলে নিয়ে নিঝুমের দিকে আগাতে লাগল। নিঝুম আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে। অমি এর মাঝেই মিয়াও মিয়াও করে ডাকছে। অশান্ত ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল, “দেখো ও কত্তো কিউট!

“এএএই অশান্ত একদম এসব আমার কাছে আনবেন না। আমার খুব ভয় করে।

“কি বলছো এসব? বিড়াল আবার কোন মেয়ে ভয় পায়।

“কেউ না পেলে না পায়। আমি পাই , আপনি সুরুন আমার সামনে থেকে আমি বাসায় যাবো।

“দেখো অমি কি সুন্দর তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, তুমি বরং ওর সাথে একটু খেলো।

“কোনমতে না।

বলেই কোনমতে দৌড়ে দরজার কাছে আসল। অতঃপর ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বলল, “অশান্ত আপনার বাসায় কি এতো ইঁদুর যার জন্য আপনার বিড়াল পুষতে হয়েছে!

“ইঁদুর থাকুক আর না থাকুক, তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য অমি কে এবার রাখতেই হবে।

“আমি আর কখনো আসবো না আপনার বাসায়, দেখিয়েন।

“আহ খুব শান্তি পেলাম কথাটা শুনে।

“অশান্ত..

“হি হি হি তুমি পুরো আহনাফের মতো। আহনাফও বিড়াল প্রচুর ভয় পায়।

নিঝুম অবাক চোখে বলল, “সত্যি!

“হুম, তুমি চশমিশ তোমার বিড়াল কে ভয় পাওয়ার কারণ কি , তুমি তো নিজেই একটা বিড়াল। সারাক্ষণ কামড় আর খামচাখামচি করো।

“অশান্ত!

“আহ রেগে যাচ্ছ নাকি, যাও বাসায় গিয়ে ঠান্ডা ধুর কুল বিরিয়ানি খাও রাগ পড়ে যাবো ‌

“😒 , চলে যাচ্ছি আমি।

“যাও! যাবার আগে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে যাও।

নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে জোরে দরজা বাড়ি মেরে চলে গেল। অশান্ত বলে উঠল, “আরে দরজা ভেঙে তোমায় মাথা পড়বে তো।

অশান্ত’র কথার জবাবে নিঝুম যেতে যেতে জিহ্বা ভেঙিয়ে দিল। অশান্ত হেসে অমি কে নিচে নামিয়ে দিল। অতঃপর বিরিয়ানির দিকে তাকাল। হাতে বিরিয়ানির প্লেটে এলো রান্না ঘরের দিকে। চশমিশ এতো ভালো রাঁধতে পারে এটা তার জানাই ছিল না। অশান্ত এখন আবার এগুলো কে গরম করতে লাগলো। একটা কথা বলা হয় নি, বিরিয়ানিতে লবণ কম ছিল, ছিল না বোধহয় এই মেয়ে লবণ দিতেই ভুলে গেছিল। এই কথাটা আর বলা হয় নি। অশান্ত হঠাৎ করেই হেসে উঠলো। ফোন থেকে হ্যালো হ্যালো শব্দ আসছে। শান্ত’র এতোক্ষণে মনে পড়ল নানাজান ফোনের ওপাশে অপেক্ষা করছে। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে বলল, “সরি, আসলে আমি..

“মেয়েটা কে?

“ও! ও হচ্ছে একটা‌ বিপদ।

“কই আমার তো মনে হলো তোর গার্লফ্রেন্ড..

“গার্লফ্রেন্ড তাও আমার, এটা আবার কে? চশমিশ! নানাজান তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো। পৃথিবীতে ওই একটা মেয়ে থাকলেও আমি তার কাছে যাচ্ছি না।

“আচ্ছা কি করছিস?

“বিরিয়ানি গরম করছি?

“কেন?

“খাবো বলে?

“ভালো হয়েছে!

“হ্যাঁ এতোটা খারাপ না। তবে লবণ দেই নি!

“লবণ ছাড়া কিছুই খেতে ভালো লাগে না!

“হুম জানি!

বলেই শান্ত সেগুলোর উপর একটু লবণ ছিটিয়ে দিল। ওপাশ থেকে নানাজান হেসে বলল, “এতো কেন করছিস? ভালো যখন হয় নি তাহলে খাবারের এতো আয়োজন কেন। ফেলে রাখ না।

“কি বলছো তুমি?

“কিছু না, মেয়েটা তোকে অশান্ত ডাকে কেন?

“ওর মাথায় সমস্যা, ঠিক মতো কিছুই বলতে পারে না।

“আর তুমি কি ডাকিস চশ..

“মিস চশমিস!

‘তাহলে তোর মাথায়ও কি সমস্যা?

“নানাজান!

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ পাওয়া গেল দ্বিতীয়বার। শান্ত বলে উঠল, “রাখছি আমি। তোমার ঔষধের টাইম হয়ে গেছে। নার্স এখনি এসে ঔষধ খাওয়াবে। চুপচাপ খেয়ে বিশ্রাম নাও।

নানাজান কিছু বলতে যেয়ে দেখল কেবিনে সত্যি সত্যি নার্স এসে পড়েছে। তিনি কিঞ্চিত হেসে ফোন রাখলেন। শান্ত বিরিয়ানি আবারো প্লেটে রেখে সোফায় এসে বসল। চামচ মুখে বিরিয়ানি মুখে দিচ্ছে আর হাসছে। ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম সত্যিই বিরিয়ানি রেঁধে নিয়ে আসবে এটা সে ভাবতেই পারে নি। পাগল মেয়ে বটে একটা! অমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শান্ত কি করছে তা উপলব্ধি করছে। শান্ত তাকে কোলে বসিয়ে দিতেই খাবারের প্লেট শুঁকতে লাগলো সে।

—–

বাসায় আজ কুরুক্ষেত্র বেজেছে! নিঝুম পুরো রান্না ঘরে যুদ্ধ লাগিয়েছে। মা এসব পরিষ্কার করছেন আর বকে যাচ্ছেন। খাবার টেবিলে তিনজন’ই চুপচাপ বসে খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। বাবা বলে উঠেন, “হঠাৎ রাধতে গেলি কেন?

“আরে বাবা আমার এক বন্ধু রেগে গিয়েছিল আমার উপর। তাই তাকে কুল করতে বিরিয়ানি নিয়েছিলাম!

হিনা বলে উঠল, “বিরিয়ানি তোর মুখে ছুঁড়ে মারে নি তোর ভাগ্য ভালো।

“কেনো কেনো?

“তুই তো বিরিয়ানিতে লবণ’ই দিস নি। আম্মু এসব আবার ঠিক করেছে। কিন্তু বেচারার টা..

বলেই হাসতে লাগলো। নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সত্যিই কি এমনটা হয়েছিল নাকি।‌ বাবা নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, “থাক মা এতো ভাববার কিছু নেই, প্রথমবার এমন হতেই পারে। তোকে তোর ফ্রেন্ড কিছু বলেনি।

“কই না তো।

“তাহলে নিশ্চিত তার ভালোই লেগেছিল!

নিঝুম কিছু একটা ভাববার চেষ্টা করল। এর মাঝেই মায়ের গলার আওয়াজ পেলো , “নবাবজাদি রাঁধতে এসে আমার রান্না ঘরের হাল বেহাল করেছে। তুই আসিস আরেকবার এই রান্না ঘরে। তোর পা ভেঙ্গে রেখে দেব!

তিন তিনজনের মুখে চাওয়াচাওয়ি করে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিল!

—–

তিশা অনেকটা বিচলিত হয়ে আছে। একের পর এক মেসেজ এসে চলেছে তার ফোনে। কোন মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে ফোনটা বেজে উঠলো মুহুর্তেই। তিশা কাঁপতে লাগলো ‌। হাত থেকে ফোনটা নিমিষেই পড়ে গেল মেঝেতে। ভয়ার্ত চোখে সেই ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে সে। গলা ক্রমশ শুকিয়ে আসছে তার। ফোনের টিং টিং আওয়াজ একসময় থেমে গেল। খানিকটা শান্ত বোধ হতে লাগল তখন। তিশা মেঝেতে বসে ধীরে ধীরে ফোনটা হাতে নিতেই আবারো বেজে উঠল। তিশা আঁতকে উঠলো। ফোন না ধরা অবদি এভাবেই বাজতে থাকবে নাকি। আবারো বাজা বন্ধ হয়ে গেল ফোনটা। তিশা হাতে চেপে রইল ফোনটা। এবার ফোন কেঁপে উঠল। মেসেজ এসেছে। ফোন স্ক্রিনের উপরে ভেসে উঠল মেসেজ। ইংরেজি করা মেসেজের বাংলা অনুবাদ এমনটা ছিল, “ফোন ধরো, নাহলে আমি সব কিছু শেষ করে। তুমি কি এমনটা চাও!

তিশা পেছনে আসতে আসতে দেওয়ালের সাথে ঠেকল। ওপাশ থেকে এবার ফোন বাজার সাথে সাথে সে ফোন রিসিভ করল। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ে পড়ছে। শ্বাস ফেলে কোনমতে বলে উঠল, “হ্যালো !

ওপাশ থেকে তখনই এক হাসির শব্দ। তার সাথে বলা কিছু তিক্ত কথাবার্তা। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটা একজন ভিনদেশী! তার ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে সে। তিশা তার প্রতিটা কথায় কেঁপে উঠছে। শরীর শিউরে উঠছে তার। কোনমতে ফোনটা রেখে দিল সে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। এর সাথে ভেসে আসা মিষ্টি কন্ঠে ডেকে যাচ্ছে আহনাফ! খুব মধুর লাগছে তার গলায় নিজের নামটা শুনে! তিশা দ্রুত উঠে বিছানার কাছে যাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ। কোনমতে নিজেকে ঠিক করে ঘুমানোর ভান ধরে শুয়ে রইলো সে। আহনাফ ঘরে ঢুকা মাত্র তাকে ঘুমাতে দেখে চলে গেল। দরজা লক করার স্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলো সে। দ্রুত উঠে এসে দরজা লক করে দিল। দৌড়ে গেল ওয়াশরুমে। মুখে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাতে লাগল সে। আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে লাগল। ঘৃণা ইচ্ছে এখন নিজের উপর। কিভাবে পারছে সে এমন একটা মানুষকে ধোঁকা দিতে। কিভাবে? কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল তিশা। মেঝেতে ধপ করে বসে হাঁউমাঁউ করে কাঁদতে লাগল। আহনাফ কে কষ্ট দিতে যতটা না কষ্ট লাগছে এর চেয়েও বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে আহনাফ এটা কিভাবে সহ্য করবে। পারবে তো সহ্য করতে। আহনাফ তাকে কতোটা ভালোবাসে এটা সে নিজেও জানে। সবকিছু জেনেও কিভাবে তাকে ধোঁকা দিতে পারল সে। কাঁদতে লাগল সে, এই কান্নার আওয়াজ চাপা পড়ল দরজার ভেতরেই।

আহনাফ দ্বিতীয় বার খাবার হাতে এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু এবার দরজা বন্ধ থাকতে দেখে নক করল সে। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন শব্দ’ই পেলো না। মনে দ্বিতীয় ভাবনা আনলো না। হয়তো তিশা ঘুমাচ্ছে, হয়তো চাইছে না কেউ তাকে ডিস্টার্ব করুক। ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে পা পিছিয়ে নিল সে।

—–

আফিন হন হন করে হেঁটে এসে কোনমতে বসে পড়ল। নীলাভ্র তার দিকে তাকাতেই বলে উঠল, “কোন খোঁজ পাই নি!

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল, “আজব তো! মেয়েটা কি হাওয়া নাকি যে খুঁজে পাবি না।

শান্ত শব্দ করে হেসে বলল, “আমার শত্রু বলে কথা, কাঁচা কাজ করে কিভাবে?

আহিম ঢকঢক করে পানি খেয়ে বলল, হুম বহুত চালাক!

তার কথায় রিয়া আর দিয়া শব্দ করে হেসে ফেলল। তানিশা বলে উঠল, “এই কোন ভাষায় কথা বলছিস! মনে হচ্ছে মুরব্বি মুরব্বি!

“হুম আমি নাহয় মুরব্বি’ই হলাম। কদিন পর দেখবি আমার দাড়ি গজাবে, পেকে সাদা হবে।

রিয়া মাঝখানে বলে উঠল , “ভুড়িও বেড়ে যাবে!

একদল হাসির রোল পড়ে গেল। আহিমও হাসতে হাসতে বলে উঠল, “সেটা তোকে বিয়ে করবার পর আফিনের হালও এমনই হবে।

আফিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কি বলছিস?

আহনাফ হালকা কেশে বলল, “বিয়ের পর বউয়ের হাতে রান্না খেয়ে সব বরের একটু আকটু ভুড়ি বারেই!

রিয়া বলে উঠল , “ওই ভুড়ি ওয়ালা বর আমার দরকার নেই ভাই!

দিয়া বলে উঠল, “তাহলে কি করবি। ছেড়ে দিবি নাকি বিয়েই করবি না!

“দ্বিধাতে ভুগছি!

নীলাভ্র আহনাফ’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “শুধু আফিন কেন? তোরও হাল তাই হবে। দেখিস..

শান্ত বলে উঠে, “চান্স কম! তিশা রাঁধতে জানে না।

“কেল্লাফতে তাহলে..

তানিশা ফোড়ন কেটে বলে উঠে, “তিশা তার বরমশাইয়ের হাতে রান্না খেতে খেতে অস্থির হবে, এই তো!

ইফা , তিথি আর নিঝুমের আগমন ঘটল তখন। তিথি গাছের সাথে হেলান দিয়ে বলল, “কিসের কথা হচ্ছে?

“বিবাহ অভিযান!

“বিয়ে কার বিয়ে..

“তোমার!

“ইশ! কি বলে..

তিথির বাচ্চামো দেখে সবাই হেসে অস্থির। ইফা হাসি থামিয়ে বলে, “এতো হাসাহাসি রেখে কাজের কথা বলো।

নিঝুম এর মাঝেই অশান্ত’র পাশে বসে তার কানে কানে বলতে শুরু করে, “এই অশান্ত! কাল বিরিয়ানিতে কি লবণ ছিল না!

অশান্ত চোখ ঘুরিয়ে তাকাল তার দিকে। আহনাফ বলে উঠল, “না কাজের কিছুই হয় নি। মেয়েটা কে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

“একটা পুলিশ কেস করবে নাকি!

শান্ত বলে উঠল, “না!

নিঝুম চিমটি মেরে বসল। অশান্ত চেঁচিয়ে উঠলো। সবার নজর সেখানে। আফিন বলে উঠল, “কি হলো আবার?

আহিম হেসে বলল, “কি আর হবে, বিড়ালের সাথে আছে, তাই বিড়ালও কামড় দিয়েছে।

নিঝুম বলে উঠল, “বিড়াল! ( অশান্ত’র দিকে ফিরে কিছু শুকতে লাগল।)

শান্ত হতভম্ব! আহিম বলল, “দেখলি বিড়ালের মতো এখন শুকছে!

নিঝুম মুখের ভঙ্গি বদলে দাঁড়িয়ে বলল, “ছিঃ! আপনার গা থেকে বিড়ালের গন্ধ আসছে!

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ হেসে বলল, “কি বললে বিড়াল!

তানিশা মুখ ভেংচি কেটে বলল, “ওর গায়ে বিড়ালের গন্ধ আসবে কেন?

“সারা দিন রাত বিড়াল কে কোলে করে রাখলে তো গন্ধ আসবেই!

শান্ত দাঁড়িয়ে নিঝুমের মাথায় বাড়ি মেরে বলল, “ওর নাম বিড়াল না অমি ঠিক আছে চশমিস!

“জাত তো বিড়াল’ই তাই না!

নীলাভ্র জিজ্ঞেস করল, “অমি কে?

সবার চোখে এক প্রশ্ন। শান্ত হেসে বলল, “আমার ছোট্ট নাদুসনুদুস বিড়ালের বাচ্চা!

আহনাফ দাঁড়িয়ে বলল, “কিহহ ? বিড়াল! তততুই বিড়াল পালতে শুরু করলি কবে থেকে?

“দুদিন হবে ?

“শান্ত! যা আমি আর তোর বাসায় যাবো না। এতো কিছু থাকতে শেষে কি না বিড়াল।

“আসিস না। দাওয়াত তো দেই না তবুও সবাই এসে ঘামটি মেরে বসে থাকিস! তোরা না আসলে আমিও একটু শান্তি পাই।

আহিম বলে উঠল, “বিড়ালে আমার সমস্যা নেই। কুকুর হলে যেতাম না।

“চিন্তা করিস না। সেটাও পালা শুরু করবো।

নিঝুম নাক ছিটকে বলল, “ছিঃ ছিঃ ঘরগুলো সব কুকুর আর বিড়ালের আস্তানা হবে।

“হলে বেশ হবে। এতে তোমার কি?

নিঝুম নাক ফুলিয়ে জোরে এক চিমটি মেরে দৌড়ে দূরে এসে বলল, “গতকাল বিড়ালের ভয় দেখানোর জন্য আপনার শাস্তি। এরপর আমার সাথে এমন করলে আপনাকে ইঁদুর বানিয়ে বিড়ালের সাথে ছেড়ে দেবো।

অশান্ত ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে। নিঝুমের পিছন এখন দৌড়ে লাভ নেই। সে এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল নখ বসে আছে। আরে এই তো তাকে খামচি দিয়েছে। কতো বড় বড় নখ কে জানে। ওর নখ গুলো একদিন ধরে কেটে দিবে তারপর দেখবে কিভাবে এমন খামচি দেয়।

বলেই মুখ ফুলিয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়ল। সবাই শান্ত’র দিকে তাকিয়ে হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করছে!

—–

তিশা কে বেশ কয়েকদিন ধরেই কেমন অগোছালো অগোছালো লাগছে। আহনাফের কেবলি মনে হচ্ছে তিশা কে সে সময় দিতে পারছে না বলে এই অবস্থা তার। কিছু একটা করে তিশা’র মন ভালো করা উচিত।

অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। তিশা কে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবে। পছন্দ মতো একটা রেস্টুরেন্টেও ঠিক করা হলো। তাদের কাজ বুঝিয়ে দিল। তিশা এখানে আসা মাত্র’ই তাকে খুশি করবার যেন সব চেষ্টা করা হয়।

আহনাফের বাবা বাড়িতে নেই। দুদিনের জন্য শহরের
বাইরে গেছে। আহনাফ আর তিশা আজ রাতে ডিনার করতে বাইরে যাবে। ফিরতে তাহলে বেশ রাত’ই হবে।ইফা আড্ডা মারার জন্য নিঝুম আর তিথি কে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলো। নিঝুমের মনটা একটু খারাপ আহনাফ
আর তিশা বাইরে যাবে শুনে। কিন্তু সে এবার মন
বোঝাতে শিখে গেছে। তিনজন’ই হাসতে হাসতে বাড়ির কাছে এসে পৌঁছাল। অতঃপর বাড়ির দরজা খুলতেই কিছু একটা পড়তে শুনে তিনজন’ই থমকে গেল। নিঝুম সামনে তাকিয়ে দেখল আহনাফ রেগে তাকিয়ে আছে তিশা’র সামনে। তিশা কেঁদে চলেছে নির্বিকারে। ঘরের জিনিসপত্র পড়ে আছে মেঝেতে। আহনাফ মুহুর্তেই মধ্যেই চেঁচিয়ে উঠল। নিঝুম ভয়ে পিছিয়ে গেল। পুরো শরীর কম্পিত হলো তার। এ আহনাফের কেমন রুপ। ভয়ে আতকে উঠল তিশা! অতঃপর…
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯ [ প্রথমাংশ ]

“তিশা!

তিশা হতভম্ব হয়ে পিছনে তাকাল। দরজার কাছে দাঁড়ানো আহনাফ। তার কথাই এতোক্ষণ ভাবছিল সে। হুট করেই দেখতে পেয়ে যেন ভয় পেয়ে গেল । আহনাফ কিঞ্চিত হেসে এগিয়ে এলো। পেছন থেকে দুই বাহুতে তিশা কে জড়িয়ে ধরে বলল, “কি হলো? ভয় পেয়ে গেলে নাকি!

“না হুট করে মানে তাই একটু..

আহনাফ নিজের থিতুনি টা রাখল তিশা’র ঘাড়ে। তিশা’র অস্বস্তি লাগতে শুরু করছে। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে বারবার। আহনাফ তার গালে আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিল। তিশা ঠোঁট গিলল। ধীর কন্ঠে বলে উঠল, “ছাড়ো আমায়!

আহনাফ তাকে ছেড়ে দিল। হাতের প্যাকেট টা তার হাতে দিয়ে বলল, “তৈরি হয়ে আসো!

“কেন?

নিজের মুখটা তার কানের কাছে নিয়ে বলল, “তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে! আমি আসছি তুমি তৈরি হয়ে নাও।

বলেই বেরিয়ে গেল আহনাফ। তিশা দাঁড়িয়ে রইল। না এভাবে আর চলতে পারে না। এর পর হয়তো না বললে আহনাফ আরো বেশি কষ্ট পাবে। এর চেয়ে ভালো না এখনি তাকে সবটা বলে দেওয়া। এখনি বলবে!

মনে করেই পেছন পেছন গেলো সে। আহনাফ সিঁড়ির কাছেই দাঁড়ানো ছিল। তিশা ছুটে গেল তার কাছে। আহনাফ কে ডাকতে যাবে অমনি তার ফোনটা বেজে উঠল। আহনাফ তার ফোনে মগ্ন! ওপাশ থেকে কারো সাথে বলার শব্দ আসছে। কথাটা তিশা কে নিয়েই হচ্ছে। তার সাথে আজ সময় কাটানোর সমস্ত মুহুর্ত বলছে কাউকে। আর সাহস হলো না তার। যেমন ভাবে ছুটে এসেছিল ঠিক তেমনি নিঃশব্দে চলে গেল সে। বিছানার ওপাশে বসেই কাঁদতে শুরু করল সে। কি করবে কিছুই পারছে না। এসময় তার ফোনে মেসেজের টুং শব্দ এলো। চোখের পানি মুছে ফোনটা হাতে নিল সে। এটা তার মেসেজ! স্পষ্ট ভাষায় লেখা তাকে আজ’ই ফ্লাইটে উঠার কথা বলা হয়েছে। না হয় কাল সে আসবে!

তিশা নিঃশব্দে ফোনটা রেখে দিল। কোন জবাব না দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিল আহনাফের দেওয়া প্যাকেট টা! লাল রঙের খুব সুন্দর একটা গাউন! লাল রঙ তিশা’র বেশ পছন্দ, আহনাফ ভুলে নি সেটা। তিশা ড্রেস টা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। বেশ মানাবে তাকে। আহনাফের পছন্দ বরাবরই সুন্দর!

ঠোঁটে লাল রঙের গাঢ় দিয়ে সাজ শেষ করল তিশা! আহনাফ দরজায় কড়া নাড়ল। ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে, “তিশা তৈরি তুমি!

তিশা উঠে দাঁড়াল। ফোনটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে সামনাসামনি হলো আহনাফের। আহনাফ বিস্মিত চোখে শুধু তাকিয়ে আছে তিশা’র দিকেই।

“কি দেখছো ওমন ভাবে!

আহনাফ লজ্জা পেয়ে গেল। নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বলল, “না কিছু না!

“আহনাফ আমি তোমায় কিছু বলতে চাই!

“আচ্ছা শুনবো, কিন্তু তার আগে এসো আমার সাথে..

বলেই তিশা’র হাত ধরল সে। দ্বিতীয় বার দৃষ্টি মেলে তাকাল তিশা’র দিকে। বেশ সুন্দর লাগছে আজ তাকে। আহনাফের পড়নে আজ সাদা রঙের স্যুট! লালের পাশে সাদা! হ্যাঁ দারুন লাগবে। আজ তাকে আর আহনাফ কে সবচেয়ে সুন্দর কাপলের মধ্যে একজন লাগবে। আহনাফ তিশা’র নরম দুটি হাত নিজের আয়ত্তে এনে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিশা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। যেভাবেই হোক আহনাফ কে আজ সবটা বলবে সে। আজ বলতেই হবে তার!

“আহনাফ! আমার কথাটা একটু শোন!

“বললাম তো সব শুনবো। তুমি আমার সাথে এসো।

“কথাটা খুব জরুরী আহনাফ..

কথা বলতে বলতে তিশা’র গলা ধরে এলো। আহনাফ ততোক্ষণে তার হাত ধরে নিচে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। সে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল তিশা’র চোখের কোনে অশ্রু জমে আছে। যে কোন মুহূর্তেই তা গড়িয়ে পড়বে। আহনাফ বিচলিত হয়ে পড়ল। তিশার দুই গালে হাত রেখে বলে উঠল, “কি হলো তিশা, তুমি কাঁদছো কেন কেন? কি হয়েছে?

মুহুর্তেই আহনাফ কে জড়িয়ে ধরল তিশা। শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল সে। হাউমাউ করে কাঁদছে তিশা, আহনাফ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি হলো এমন, কেনো কাঁদছে তিশা!

হাতের ফোনটা আবারো শব্দ করল। তিশা এবার কান্না থামাল! দু চোখ মুছে তাকাল ফোনের স্ক্রিনে! কোন একটা ভিডিও সেন্ড হয়েছে এই মাত্র। তিশা সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল। দুটো কাঁপছে তার। আহনাফ তিশার এমন হাল কে খুব অবাক হলো। তার দিকে এগিয়ে যাবার আগেই ফোনটাকে জোরে আছাড় মারল তিশা। আহনাফ হতবাক। তিশা কে আগলে নিতে চাইলে তিশা তার থেকে ততোটাই দূরে সরে যেতে চাইলো। আহনাফ ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “কি হয়েছে তিশা!

তিশা মুখ ফিরল আহনাফের দিকে। আহনাফের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল, “অনেক কিছু হয়েছে আহনাফ? অনেক কিছু! আর যা হয়েছে সবটাই খারাপ হয়েছে। কি করবো এখন আমি!

এগিয়ে এলো সে। তিশার দুই বাহু আগলে ধরে বলল, “আমায় বলো কি হয়েছে?

আবারো কেঁদে ফেলল তিশা। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমাকে ক্ষমা করো আহনাফ! আমি পারি নি তোমার কথা রাখতে, আমি পারি নি। তুমি এক মনে শুধু আমায় ভালোবেসে গেছো আর আমি.. আমি ধোঁকা দিলাম তোমায়। আহনাফ বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করো আমি জেনেশুনে কিছু করি নি। ওই রাতে, ওই রাতে ড্রিংক করার পর…

আর কিছুই বলতে পারল না তিশা। নিজের প্রতি ঘৃণা আর ধিক্কারে সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে তার। কিন্তু আহনাফ বোধ হয় সবটাই বুঝল। তবুও শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?

তিশা অবাক চোখে তাকাল তার দিকে। আহনাফ এগিয়ে এলো। তিশার গালে দু হাত রেখে বলল, “কি হয়েছে তিশা!

“আহহহনাফ! আহনাফ আমি..

“তিশা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! গত ৮ টা বছর আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। শুধু তোমার জন্য। আমার এতো বছরের সাধনা তুমি ওই এক রাতে শেষ করে দিলে।

“আহনাফ বিশ্বাস করো আমায়..

“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তিশা। খুব বিশ্বাস করি, এখনো করি!

আহনাফের কথায় ভেঙ্গে পড়ল তিশা। কাঁদতে শুরু করল সে। আহনাফ গলার কলার ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “কেনো এতো ভালোবাসো তুমি আমায়, কেনো আহনাফ কেনো? আমি পারিনি তোমার ভালোবাসা আগলে রাখতে, পারি নি আমি। ঠকিয়েছি তোমায়, নিজের ভালোবাসার কাছে ঠকে গেছি আমি। এমন একটা মেয়েকে এখনো কিভাবে ভালোবাসতে পারো তুমি কিভাবে?

তিশা মুহুর্তেই মেঝেতে বসে পড়ল। এখনো কাঁদছে সে। তার কান্নার শব্দ কানে বাজছে আহনাফের। আহনাফ দুই পা পিছনে সরে গেল। তার চোখে অশ্রু জমছে। কোনমতে সেই অশ্রুকণা লুকিয়ে নিল সে। শুকনো ঠোক গিলে এগিয়ে এসে বসল তিশা’র কাছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কান্না থামাও তিশা! কাঁদছো কেন তুমি?

তিশা মুখ তুলে তাকাল। আহনাফ তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে উঠে দাড় করাল তাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের উপর হাত রেখে বলল, “তিশা তুমি আমার। শত ভুল করার পরও তুমি শুধুই আমার। আমি তোমাকে ভালোবাসি তিশা, শুধু তোমাকে! আমি এখনো তোমাকেই চাই!

তিশা হাত দুটো ছাড়িয়ে নিল। আহনাফ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে‌। খুব অসহায় লাগছে তাকে। তিশা পিছিয়ে যেতেই আহনাফের মুখের রঙ বদলে গেল। মুখ থেকে শুধু একটি শব্দ বের করলো সে , “তিশা!

তিশা মাথা নেড়ে বলতে লাগলো, “না আহনাফ এটা হয় না। আমি পারবো না এমনটা করতে।

“তিশা আমি বলছি তো!

“তুমি বুঝতে পারছো না আহনাফ , ওর কাছে সেই রাতের ভিডিও। আমাকে যেতে হবে ওর কাছে। না হলে…

“আমি আছি তিশা তোমার সাথে, তবুও তুমি ভয় পাচ্ছো!

“আহনাফ তুমি বোঝার চেষ্টা করো!

“কি বুঝবো আমি, কি বুঝাতে চাইছো!

বলেই পাশে থাকা ফুলদানি টা জোরে আ*ছাড় মারে তিশার পায়ের কাছে। তিশা ভয়ে কুঁকড়িয়ে উঠে। আহনাফ এখন মারা*ত্মক রেগে গেছে। ঘরের সব জিনিসপত্র ভে*ঙে অস্থির সে।

নিঝুম, তিথি আর ইফা তিনজন’ই ভয়ে আতকে উঠে। আহনাফের এমন রুপ যেন তাদের হতবাক করে দিল। তিশা দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে নির্বিকারে। আহনাফ তার সামনে এগিয়ে আসতেই ভয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকালো সে। আহনাফ দুই হাত তার বাহুতে জোরে চেপে ধরল। চিৎকার করে বলে উঠল, “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, কিভাবে পারো তুমি এমনটা বলতে, কিভাবে? আমি তো বলছি তোমার সাথে থাকবো, আগলে রাখবো তোমায় তবুও কেন এতো দ্বিধা তোমার, কেন তিশা! জবাব দাও তুমি, আমি উওর শুনতে চাই। এই ভালোবাসলে তুমি আমায় এই!

বলেই তাকে ছুঁড়ে মারল আবারো দেওয়ালের দিকে। তিশা দেওয়ালে আটকে থেকেই কাঁদতে লাগলো! আহনাফ তার চোয়াল শক্ত করে এদিক তাকাল। কারো দিকে না ফিরে হন হন করে হেঁটে বের হয়ে গেল সে। তিনজন’ই অস্থির হয়ে উঠল। কি করবে এখন? নিঝুম বলে উঠল, আমি আহনাফের পিছন যাচ্ছি!

ইফা বলল, “আমি শান্ত ভাইয়া কে কল করছি!

দুজনেই সরে গেল। তিথি এগিয়ে এলো তিশা’র সামনে। হাঁটু গেড়ে চুপচাপ বসে আছে সে। মুহুর্তেই কান্না থেমে গেছে তার। মুখ ফিরিয়ে তাকাল তিথির দিকে!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯ [ বর্ধিতাংশ ]

পর পর দু”বার কল করার পর ওপাশ থেকে শান্ত ফোনটা রিসিভ করল। তার চোখে এখনো ঘুমের রেশ। ভর সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখনো তার রেশ রয়ে গেছে তার চোখে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইফা এক নিঃশ্বাসে কতো গুলো কথা বলে ফেলল। শান্ত কিছুই ঠিকমতো বুঝতে পারল না। সে উঠে বসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “তুই একটু দম নিয়ে কথা বল তো। কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, আহনাফের কি হয়েছে আবার!

“আহনাফ ভাইয়া রাগে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেছে।

“কোথায় গেছে? আর রাগ’ই বা করল কার উপর?

“তিশা’র আপুর উপর!

“তিশা! তুই কি পাগল হলি নাকি।

“না আমি পাগল হয় নি। ভাইয়া সত্যি সত্যি তিশা আপুর সাথে ঝগড়া করেছে।

“হয়তো কথা কাটাকাটি করেছে।

শান্ত বিছানা ছেড়ে উঠল। ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে মুখে পুড়ল। ওপাশ থেকে ইফা বলে উঠল, “না কথা কাটাকাটি না। অনেক বড় কিছু হয়েছে। ভাইয়া রাগে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেছে। তিশা আপু এখনো কাঁদছে। এই রাতে আহনাফ ভাইয়া ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।

“আজ না ওদের বাইরে ডিনার কথা ছিল। আচ্ছা তুই রাখ আমি দেখছি!

বোতলের মুখটা আটকে টেবিলে রাখল শান্ত। মুখে জল ছিটিয়ে একটা জ্যাকেট পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল সে।

——

“আহনাফ! আপনি দাঁড়ান।

মুহুর্তেই থেমে গেল আহনাফ। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে। দু হাতে কাঁধের ব্যাগটা কে শক্ত করে ধরে আছে সে। আহনাফের মুখ চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। নিঝুম খুব সাহস জুগিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। আহনাফের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল, “মাথা ঠান্ডা করুন আহনাফ। আপনি একটু বেশিই করছেন। এভাবে রেগে গেলে কিছুই ঠিক মতো হয় না।

আহনাফ চট করে বলে উঠল, “তাহলে কি করতে বলছো আমায়!

“কিছুই করতে বলছি না আহনাফ। আপনি ঠান্ডা মাথায় তিশা আপুর সাথে কথা বলুন। যা হয়েছে তা মিটমাট করুন।

“তিশা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তুমি শুনতে পাও নি।

“আহনাফ! চলে যেতে চাইলেই কি চলে যাওয়া যায়।

আহনাফ শব্দ করে শ্বাস ফেলল। এক পা এগিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল নিঝুমের। দুই হাত দিয়ে নিঝুমের বাহু দু’টো আঁকড়ে ধরল। নিঝুম হতভম্ব! আহনাফ চোয়াল শক্ত করে বলল,

“তুমি যেই কথা বলছো সেটা বইয়ের পাতায় সুন্দর লাগে। কিংবা উপন্যাসে বলা কথাগুলো, যে যেতে চায় তাকে দাও! তাহলেই কি সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমি ভালোবাসি ওকে, নিজের করে চাই আমি তিশা কে। কিন্তু সে এখন আমার হয়ে থাকতে চায় না। তুমি বুঝছো আমার কষ্ট টা! বুঝছে পারছো!

চেঁচিয়ে উঠল আহনাফ। নিঝুম ভয়ে তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। আহনাফ আবারো বলতে শুরু করল, “ভালোবাসা কি জানো তুমি, কাউকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা বুঝো তুমি! না কখনো বুঝবে না সেটা, কখনো না। বুঝতে পারলে..

ছেড়ে দিল নিঝুম কে। নিঝুম পিছিয়ে গেল সাথে সাথে। আহনাফ সামনে ফিরে আবারো হন হন করে হেঁটে চলে গেল। নিঝুমের দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। সত্যিই তো, আহনাফের কষ্টটা কি কখনো বুঝতে পারবে সে। কিন্তু তার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছে সে। বুঝতে পারছে আহনাফ অনেক কষ্টে আছে। প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট! চোখের পানি মুছে নিঝুম আশপাশ তাকাল। এখানকার এলাকা আবাসিক! একটু চেঁচামেচিতেই আশপাশের বাড়িগুলোর জানালা থেকে মানুষ গুলো উঁকি মারতে শুরু করেছে। নিঝুমের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। ছুটে আবারো বাড়িতে ঢুকল সে। ফিরে এসে দেখল তিথি গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে তিশার সামনে। ইফা সবেমাত্র ঘরে ঢুকেছে।

——

শান্ত গাড়ি চালিয়ে আহনাফের বাসার দিকেই রওনা হয়েছে। রাস্তার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে সে। আহিমকে কল করে সবটা জানিয়েছে। ফোনটা রাখতেই হঠাৎ মনে হলো দূর থেকে আহনাফ কে দেখছে সে। শান্ত গাড়ি থামিয়ে দিল। হ্যাঁ এটা আহনাফ! এলোমেলো চুলে অনেকটা অস্থির লাগছে আহনাফ কে। গাড়ি থেকে নামল শান্ত। চোখাচোখি হলো দুজনের। শান্ত কে কিছুই বলতে হলো না। আহনাফ নিজ থেকেই গাড়িতে উঠে বসল। শান্ত চুপচাপ বসল তার সিটে। আহনাফ সিটের বেল্ট বেঁধে রইল। শান্ত ড্রাইভ শুরু করল। আহনাফ কে কিছুই জিজ্ঞেস করল না সে। পানির বোতল টা বের করে তার দিকে এগিয়ে দিল। আহনাফ চুপচাপ পানি খেল। সামনের আয়নাতে তাকাল সে। শান্ত তার দিকে ফিরছে না, কিছু জিজ্ঞেস করছে না। কেনো করছে না, তার কি কিছু জানার আগ্রহ নেই।

গাড়ি জ্যামে আটকে আছে, এসময় জ্যামে থাকার চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই। শান্ত চাইছে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরা দরকার। আহনাফ কে যা বলার জিজ্ঞেস করার সবকিছুই বাড়ি ফিরে করবে।

জ্যাম ছেড়েছে। শান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। শান্ত নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে না। আহনাফ হুট করেই বলে উঠল, “তুই জানিস ও আমাকে কি বলেছে?

“না!

“জানতে চাস না!

“না চাই না।

“কেন?

“তুই এখন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে আমাকে বলবি। আহনাফ তুই বড় হয়েছিস এখন আর বাচ্চা নেই।

আহনাফ চোয়াল শক্ত করে বলল, “আমি কাঁদবো না।

“কেন কাঁদবি না।

“কারণ আমি এখন ওকে ভুলে যাবো!

শান্ত হতবাক হলো কিন্তু তবুও প্রকাশ করল না। ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো সে। আহনাফ বাইরের দিকে ফিরল। গলা ধরে আসছিল তার। অভিমান স্বরে বলে উঠল, “ও কিভাবে পারল আমাকে এ কথা বলতে।

“কি বলেছে তোকে?

“ও আর একটা ছেলে..

“ও আর একটা ছেলে!

আহনাফ রুদ্ধ চোখে শান্ত’র দিকে ফিরল। বলে উঠল , “তুই কি কিছুই বুঝতে পারছিস না।

“পারছি! কিন্তু তুই কি এ কারণে রাগ।

“থাকতাম কিন্তু ও যখন সব বলে আমার কাছে বসে কাঁদতে লাগল তখন আর রেগে থাকতে পারি নি।

“তাহলে এখন রেগে আছিস কেন?

“এতো কিছুর পরও ওকে নিজের করে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও থাকতে চায় না তাই!

“আচ্ছা আহনাফ তোর রাগ হচ্ছে না, তুই ছাড়া অন্য একটা ওকে ছুঁয়েছে!

“ছেলেটা রীতিমতো ওকে ফাঁসিয়েছে, এখনো ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে।

“আশ্বাস দিয়েছিলি!

“নিতে রাজি না।

শান্ত কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু বলল না। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে বলে উঠল, “ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে শান্ত!

এতো টুকু কথাটাই যেন শান্ত কে কাঁপিয়ে দিল। গলার স্বরটা কেমন কেমন লাগলো! আহনাফ কি তাহলে কাঁদছে। শান্ত ঢোক গিলল। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল সে।

—–

আহিম আর আফিন বাইক নিয়ে সবে ঢুকল আহনাফের বাড়িতে। ইফা দরজা খুলে তাদের দেখে মোটেও অবাক হলো না। ঘরের হাল এখনো আগের মতোই। সোফায় এক কোনে শুধু তিশাকে বসে থাকতে দেখল তারা। আহিম শুধু জিজ্ঞেস করল, “আহনাফ এসেছে?

“না!

আফিন বলে উঠল, “বোধহয় শান্ত’র বাড়িতে!

“চল তাহলে ওখানে, ( তিশার দিকে ইশারা করে ) ওর খেয়াল রাখিস আমরা আসছি!

বের হতেই যাবে ওমনি গাড়ির আওয়াজ এলো। ঝড়ের বেগে দৌড়ে এলো তানিশা। তার পিছে পিছে রিয়া আর দিয়া। তানিশার হাল এর মাঝেই অবাক করার মতো। মাথার এলোমেলো চুল , দু চোখ লাল হয়ে আছে। রাগে ঠোঁট কামড়াচ্ছে সে। তিশা কে দেখে সেই রাগ কয়েক গুন বেড়ে গেল। শুধু আহিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আহনাফ কোথায়?

“জানি না বোধহয় শান্ত’র বাসায়!

তিশা’র দিকে তাকিয়ে, “এই মেয়েটা এখনো এখানে!

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল নিঝুম। তানিশা গলার আওয়াজ শুনে সেখানেই থমকে গেল সে। রিয়া পিছন থেকে বলে উঠলো, “তানিশা শান্ত হ!

“কি শান্ত হবো আমি। এই মেয়েটা.. এই মেয়েটা কি করেছে আহনাফ কে। এতোদিন আহনাফ কে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের করে রাখল। আর আজ! আজ এমন কি হলো যার কারণে আহনাফ ওর উপর এমন রেগে গেল‌‌ । তুই দেখছিস না ঘরের হাল!

তিশা এবার মুখ তুলে তাকাল। তানিশা আর তিশা মুখোমুখি! তানিশা হন হন করে হেঁটে তিশার সামনে এসে দাঁড়াল। আফিন পেছন থেকে ইশারা করে রিয়া কে বলছে তানিশা কেন এখনো! রিয়া বেচারি যেন ফেসেই গেল। তানিশা কে ফোন করে জানানোটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে তার।

তানিশা তিশার সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠল , “কি বলেছো তুমি আহনাফ কে? আহনাফের তো কখনো এমন রেগে যায় না। তুমি দেখতে পারছো পুরো ঘরের অবস্থা। এসব শুধুই তোমার জন্য? কি করেছো তুমি আহনাফের সাথে!

তিশা হুট করেই হেসে ফেলল। বলে উঠল, “ছেড়ে দিয়েছি, মুক্ত দিয়ে দিয়েছি তাকে। আর আগলে রাখতে পারি নি!

তানিশা দুই পা পিছনে হটে গেল। উপস্থিত সকলে হতভম্ব! নিঝুম এবার ছুটে নিচে এলো। দিয়া বলে উঠল, “কি বললে তুমি! তুমি ছেড়ে দিয়েছ আহনাফ কে? এই সম্পর্ক আর রাখতে চাও না তুমি।

“না আর সম্ভব না।

তানিশা অবাক কন্ঠে বলে উঠল , “কি বললে তুমি ! এটা কিভাবে করতে পারো তুমি, কিভাবে? তুমি জানো না আহনাফ তোমাকে কতোটা ভালোবাসে , এতো গুলো বছর শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিল সে। তাকে এভাবে ধোঁকা দিলে তুমি!

“হতভাগা আমি, এতো সুন্দর ভালোবাসাটা আগলে রাখতে পারলাম না!

তানিশা চেঁচিয়ে বলে উঠল, “কি পারো নি তুমি? কি পারো নি! হতভাগা তুমি নও, আহনাফের ভালোবাসা পেয়েছ তুমি, ক”জন পায় না এই ভালোবাসা। এটা পারলে না নিজের করে রাখতে। জানো আহনাফ কতোটা কষ্ট পেয়েছে? কিভাবে পারো তুমি ওকে কষ্ট দিতে!

রিয়া আর নিঝুম ছুটে যায় তানিশাকে আটকাতে। রেগে তিশার দিকে তেড়ে যেতে চাইলো। আহিম কোনমতে এসে থামালো তাকে। নিঝুম বলে উঠল, “থামো কি করছো তুমি!

“তুমি! তুমিও এখানে!

তিশা উঠে দাঁড়াল। তানিশা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “ভালোবাসতে সবাই জানে না , কিন্তু কষ্ট দিতে জানে। আহনাফের কষ্ট আমি ঠিক আন্দাজ করছে পারছি তবুও কিছু করার নেই আমার। অসহায় আমি!

বলেই তিশা কাঁদতে কাঁদতে উপর চলে গেল। তানিশা রেগে বলে উঠল , “শুনলি তোরা মেয়েটার কথা শুনলি। কি বলল ও! ও নাকি অসহায়।

আহিম বলে উঠল, “থাম তানিশা অনেক হয়েছে! তুই রেগে আছিস, রিয়া ওকে নিয়ে বাসায় যা!

তানিশা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলল না। দৌড়ে বাইরে চলে গেল। ইফা আর তিথি ভীত চোখে শুধু তাকিয়ে রইল!

—-

“ঘরে কিছুই নেই, তোকে কি আমি নুডুলস রেঁধে দেবো!

আহনাফ গায়ের স্যুট টা খুলে সোফায় রেখে মেঝেতে বসে পড়ল। শান্ত জবাবের আশা করল না। আহনাফ এখনো কিছু খায় নি এটা সে জানে। রাত অনেক হয়েছে , সে রান্না ঘরের দিকে গেল। চুলোয় গরম পানি বসিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা কোল্ডড্রিক বের করল। বাসায় নতুন অতিথির আগমণ অমি টের পেয়েছে। লেজ নাড়িয়ে এসে হাজির হয়েছে আহনাফের কাছে। অবাক চোখে দেখে যাচ্ছে তাকে। আহনাফ ও তার চোখের দিকে তাকানো। নীল রঙের ভীষণ সুন্দর আঁখি গুলো দেখতে খারাপ লাগছে না। হঠাৎ শান্ত’র আওয়াজে ভড়কে গেল অমি। শান্ত বলে উঠল, “অমি এখান থেকে যাও, আহনাফকে জ্বালাবে না!

অমিও চলে যেত নিল। আহনাফ হুট করেই তাকে ধরে বসল। কোলের মধ্যে বসিয়ে বলল, “থাক ও!

“তুই সিউর!

আহনাফ কিছুই বলল না। কলিং বেল বেজে উঠল। শান্ত দরজা খুলতেই ভড়কে গেল! তানিশার হাল তাকে অবাক করে দিয়েছে। হাঁপিয়ে যাচ্ছে সে। শ্বাস নিতে নিতে বলল, “আহনাফ এখানে!

শান্ত কিছুই বলল না। তবুও তানিশা ঘরে ঢুকে গেল। বসার ঘরে এসে দেখল মেঝেতে বিড়াল কোলে শান্ত ভাবে বসে আছে আহনাফ! মুখখানি মলিন তার, একটু আগে যে ঝড় তার উপর দিয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই তার মাঝে। এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো তানিশা। আহনাফ মেঝের দিকে তাকিয়ে তানিশার পা পেলো। এক পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আরেক পা ঘসছে তানিশা! আহনাফের হুট করেই যেন হেসে ফেলল। কিন্তু কিসের হাসি সেটা। মুখ তুলে তাকাল তানিশার মুখে। তানিশা চমকে উঠল। আহনাফ মাথা নামিয়ে আবারো বিড়ালকে আদর করতে লাগল। আশ্চর্য! আজ বিড়াল কে ভয় পাচ্ছে না সে। ভালো লাগছে বিড়াল কে তার। বিড়ালটাও আদর পেয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইল। এর মাঝেই বড় করে মুখ খুলে হামি ছাড়ল। আহনাফ বলে উঠল,
“দেখলে তানিশা, ভাগ্য কি রকম চক্রের মতো ঘুরে। আমি পারিনি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তাই আজ আমার এই করুণ দশা!

আবারো মুখ তুলে তাকাল তানিশার দিকে। তানিশা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ তানিশার মুখের দিকেই তাকিয়ে বলল, “রাগ করো না তানিশা, আমার মন ভালো না। উল্টো পাল্টা কিছু বলে ফেললে ক্ষমা করে দিও। আচ্ছা তুমি জানো, তিশা চলে যাচ্ছে আমায় ছেড়ে। শুনেছ তাই না!

মুখটা আবারো নামিয়ে ফেলল। তানিশার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে রইল না সে, ছুটে বেরিয়ে গেল। শান্ত সবে গরম পানিতে নুডুলস গুলো ফেলল। এর মাঝেই তানিশা কে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে দেখল। এতোটা অবাক হলো না, হয়তো এটা তার জানাই ছিল।

তানিশা ছুটে এসে বসল গাড়ির ভেতর। ঠোঁট কামড়ে ছিটকে আসা কান্না টাকে আটকাতে চাইছে সে। কিন্তু পারলো না! আহনাফের কষ্টতে খুব কষ্ট পাচ্ছে সে। এমনটা তো না হলেও পারতো, কেন এতো কষ্ট হচ্ছে তার কেন?

শান্ত নুডুলসের বাটি এনে আহনাফের সামনে রাখল। আহনাফ বাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, “তুই কি আমার বাসায় যাবি একবার!

“কেন?

“তিশা আজ চলে যাবে, ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসবি!

“তুই যাবি না।

“কষ্টটা চাপা থাক না এখানে, বাড়িয়ে কি লাভ!

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। যাবার আগে বলে গেল, খাবারটা খেয়ে নিস!

—–

তিশা তার ব্যাগ হাতে নিচে নামল। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।‌ইফা জিজ্ঞেস করে ফেলল, “কোথায় যাচ্ছ?

“চলে যাচ্ছি !

“এতো রাতে?

“যেতে হবে, অনেক কষ্ট দিলাম তোমাদের। আমি যাবার পরেও এর প্রভাব থেকে যাবে।

নিঝুম বলে উঠল, “তুমি রাত টুকু থাকো!

“না আর না! আর সম্ভব না আমার পক্ষে। দয়া করে জেনেশুনে আগুনে ফেলে দিও না আমায়!

কারোই আর কিছু বলার ছিল না। তিশা ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেল। যে যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। আফিন আর আহিম তিশা’র পিছন পিছন বেরিয়ে গেল। শান্ত গাড়ির পাশেই দাঁড়ানো! তাকে দেখে অনেকটা অবাক হলো তারা। তিশা এগিয়ে এলো। শান্ত গাড়ির দরজা খুলে দিল! আহিম কে ইশারায় তার ওখানে যেতে বলল। অতঃপর নিজে উঠে বসল।

সারা রাস্তায় একটা শব্দ অবদি উচ্চারণ করলো না দুজনের একজন। এয়ারপোর্টের সামনে তিশা কে নামিয়ে দিল শান্ত। গাড়ি থেকে নেমে তিশার দিকে ফিরল সে। তিশা ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল, “তোমার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছি ওকে, নাহলে আমি কখনো পারতাম না শান্ত! দেখে রাখবে তো ওকে।

শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “সাবধানে যেও!

“এখন কেমন আছে ও?

“যেমন টা থাকার কথা তবে কথা দিচ্ছি বেশিদিন থাকবে না।

“ধন্যবাদ তোমায়।

শান্ত আবারো গাড়িতে উঠে বসল। তিশা তার পথের দিকে আগালো। শান্ত অবাক হচ্ছে এটা ভেবেই কতোটা সহজেই না একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। এর শুরুটা তো এমন ছিল না। একটা রাতের মাঝেই সবটা শেষ! কিভাবে? এতোটাই তুচ্ছ কি সম্পর্ক ,ভালোবাসা! কি লাভ এসব মানুষের জীবনে এসে। বেদনা ছাড়া এর কি পেয়েছে মানুষ ভালোবেসে! তবুও কেন বার বার মানুষ ভালোবেসে বসে , কেন করে এমনটা বোকামি। কতোটা বোকা এই মানুষগুলো!

আহিম শান্তর বাসায় দরজার বাইরে। দরজাটা বাইর থেকে বন্ধ। দরজা খুলে ভেতরে এলো তারা। বসার ঘরে এসে দেখল আহনাফ ঘুমাচ্ছে! মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে সে, তার কোলে একটা বিড়াল! সেও ঘুমিয়ে আছে। একবার চোখ মেলে তাদের দেখে আবারো ঘুমালো। পাশে একটা বাটিতে একটু নুঢুলস পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ খেয়েছে! দুজনেই শব্দ করে শ্বাস ফেলল!.

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here