তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৪৮+৪৯

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৮

“কি হলো? ভয় পেয়ে গেলি কেন?

“আমায় টেনে এখানে কেন নিয়ে এলি?

“একটু কথা বলতে ইচ্ছে করলো তাই, সবার সামনে কথা বলতে গেলো তো ভয়ে অস্থির হয়ে পড়তি!

“কেন? ভয় পেতাম কেন? কি করেছি আমি!

“খু*ন করতে চেয়েছিলি, একজন খু*নি তুই! একবার না, পরপর দু’বার আমার মা*রার চেষ্টা করছিস।

চোয়াল শক্ত করে নিল ইফা। ভয়ে তার চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে। নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে আশেপাশে তাকাল। ইফা কঠিন গলায় বলল, “আমায় ভয় দেখাচ্ছিস‌ !

“ভয় দেখানোর কি আছে, তুই তো এভাবেই ভয় পেয়ে আছিস। যে দোষ করে সে ভয় তো পাবেই।

“আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না নিঝুম।

“তাই নাকি, তা বেশ ভালো তো।

“শান্ত ভাইয়া কিন্তু আমার’ই হবে।

“তাই, কিন্তু কি করে? অশান্ত তো তোকে ভালোবাসে না। তবুও চেষ্টা করে দেখ। আমিও দেখি আর কি কি করতে পারিস তুই।

“আর কতো নিচে নামাবি তুই আমায়। চলে যাচ্ছিস না কেন এখান থেকে।

নিঝুম হাসল। হেসে বলল, “আমি তোকে নিচে নামাচ্ছি না। তুই নিজে নেমে যাচ্ছিস। একটা নিম্নস্তরের জীব হয়ে গেছিস তুই।

ইফা ঠোঁট কামড়ে অলপক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। নিঝুম চোখ ফিরিয়ে চলে যেতে নিল। ইফা চট করে বলে উঠল, “শান্ত ভাইয়া তোকে ভালোবাসে বলে এতো ভাব দেখাচ্ছিস। তোর কি মনে হয়, শান্ত ভাইয়া আমার হবে না।

“হলে তো ভালোই। আমি তো বললাম চেষ্টা কর!

“তাহলে তুই চলে যা আমাদের মাঝখান থেকে। এখনো আছিস কেন এখানে?

“কারণ আমাকে থাকতে তুই বাধ্য করেছিস। যদি একবার এসে নিজের মনের কথা বলতি আমি এভাবেই চলে যেতাম। তোর কি মনে হয় ইফা, তুই আমাকে বলতি আমি তবুও তোদের মাঝে থাকতাম। কখনো না। কিন্তু তুই, তুই কি করলি? নিজের দিকে একবার ফিরে দেখ ইফা। এখন আর তুই আমার বন্ধু ইফা নেই, পুরো অন্য এক মানুষে পরিণত হয়েছিস! খুব কুৎসিত আর নোংরা মনের মানুষ। এখন আর তোর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না আমার।

“তাহলে বলছিস কেন ?

শীতল দৃষ্টিতে ইফার দিকে ফিরে বলল,
“শেষবারের মতো দেখতে এসেছিলাম, এখনো তুই আমার বন্ধু ইফা আছিস নাকি! কিন্তু তুই আমায় ভুল প্রমাণ করলি!

হইচই আবার শুরু হলো। রিয়া কেক কাটছে! নিঝুম হন হন করে হেঁটে গেল। ইফা সেখানেই দাঁড়ানো। রাগে তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অস্থির হয়ে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

তিথি এসে নিঝুমের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “কিরে কোথায় ছিলি?

“এইখানেই ছিলাম!

“ইফা কোথায়?

“দেখ হয়তো ওখানে?

“কিছু কি হয়েছে তোর আর ওর মাঝে!

“কই না তো!

“তাহলে তোরা এতো চুপচাপ যে।

“ওর মনটা খারাপ, আমি জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম কিন্তু বলছে না। হয়তো কাউকেই বলবে না।

“আমি গিয়ে একবার জিজ্ঞেস করবো

“কর!

তিথি পা বাড়ালো ইফার দিকে। নিঝুম ভাবছে, তিথি যদি সত্যি টা জানতে পারে তখন কি হবে। ইফা কি পারবে এতো গুলো মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে। নিজের প্রিয় মানুষগুলোর চোখে ঘৃণা দেখতে পাওয়ার অনুভূতি যে কি ভ*য়ানক এটা সে বুঝতে পেরেছে, ইফা কি পারবে সহ্য করতে। কি জানি? দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। নীলাভ্র পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “কোথায় ছিলে?

“আপনার জন্য বউ খুঁজতে গিয়েছিলাম!

“পেয়েছো?

“না, পাই নি! তবে এখনো খুঁজছি!

নীলাভ্র হেসে ফিরল নিঝুমের দিকে। শান্ত দূর থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল নিঝুমের দিকে। নিঝুম এতে পাত্তা দিল না। তার মনে এখনো অভিমান জমা। সেদিন রাতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল অশান্ত’র বাসার সামনে। পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছিল, তবুও দাঁড়িয়ে ছিল। নিঝুম জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল, অশান্ত কেন সেদিন একবারও ফোন করে নি তাকে। একবারও খোঁজ নেয় নি। অশান্ত খুব বড় অন্যায় করেছে। এ অন্যা*য়ের শা*স্তি তাকে পেতেই হবে। হুহ এতো সহজে কি ছেড়ে দেবে নাকি। এতো শত’র পরেও কথা বলতে গিয়ে কি না ইগনোর করলো। হুহ, কি দায় পড়েছে তার, তখন এসে আহনাফ কে বলছে “চশমিশ কে পোঁছে দিতে।” কেন রে! তুই দিলে কি দোষ হতো। বেশ হয়েছে আমি আহনাফের সাথে চলে গেছি। খুব ভালো করেছি। আরো করবো, সবসময় করবো। যা পারিস কর গিয়ে! মুখ ভেংচি কাটলো নিঝুম! শান্ত তা দেখতে পেয়ে হতচকিয়ে গেল।

কেক কাটা হলো। খুব হইচই হচ্ছে এখন। বাইরে বৃষ্টিও পড়ছে। ডান্স ফ্লোরে খুব রোমান্টিক ভাবে নাচছে আফিন আর রিয়া। আফিন তার হাত দুটো রেখেছে রিয়ার কোমরে, রিয়া আফিনের গলা জড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এদিকে নিঝুম খুব বড় করে হামি ছাড়ল।‌ আহনাফ হেসে বলল, “ঘুম পাচ্ছে তোমার?

নিঝুম মাথা নাড়ল। আহনাফ বলে উঠল, “চলো নাচি, তাহলে ঘুম চলে যাবে।

“আপনার নাচতে ইচ্ছে করছে আহনাফ!

“ইচ্ছে করছে আবার করছেও না।

“আমি একটা পার্টনার খুঁজে দেবো আপনাকে!

“মানে?

“আমি একজনের কাছে ঋণী, পরিশোধ করে দেবেন আপনি।

“আমি কেন করবো?

“আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে!
আহনাফ জবাবে হাসল। গান শেষ হলো। আফিন আর রিয়ার নাচও শেষ। তিথি আহিমের হাত ধরে দৌড়ে ডান্স ফ্লোরে এলো। সবাই মিলে নাচবে এইবার! নিঝুম উঠে ধরল আহনাফের হাত।‌ শান্ত ভ্রু কুঁচকে নিল। ইফা শান্ত’র পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “শান্ত ভাইয়া নাচবে!

শান্ত ফিরল ইফার দিকে। হ্যাঁ না কিছু বলার আগেই ইফা তার হাত ধরে নিয়ে এলো ডান্স ফ্লোরে। এদিকে নিঝুম আহনাফ কে দাঁড় করিয়ে গেল তানিশার কাছে। তানিশার বিয়ারের ক্যান টা সবে খুলেছে। নিঝুম চট করে তার হাত ধরতেই চমকে উঠল সে। নিঝুম হেসে বলল, “সারপ্রাইজ দিয়েছিলে, রির্টান গিফট তো পাও!

“মানে!

“বলছি, এসো!

অতঃপর তানিশা কে এনে দাঁড় করায় আহনাফের সামনে। আহনাফ খানিকটা হতভম্ব! নিঝুম হেসে বলল, “নিন, ঋণ টা পরিশোধ করে দিন।‌

তানিশা অবাক কন্ঠে বলল, “কিসের ঋণ!

নিঝুম হেসে তানিশার কানের কাছে বলল, “বেস্ট অফ লাক!

নিঝুম চলে এলো। আহনাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থেকে তানিশার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। এতোই বাড়ছে, মনে হচ্ছে এখনি হার্ট হাতে এসে পড়বে। গান সবে শুরু হলো। দুজনেই মুখোমুখি এখনো, বাকি সবাই নাচ শুরু করেছে। পেছন থেকে কারো ধাক্কা খেয়ে আহনাফ কিছুটা সামনে ঝুঁকে পড়ল।‌ অস্থিরতা ঘামছে সে, তানিশা চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই হুট করেই আহনাফ তার হাত ধরে ফেলল।‌ নাচতে শুরু করলো তারাও, সবাই অবাক এই জুটি দেখে। তানিশা নিজেই হতবাক! যারা নাচছে তারাও ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে তাদের।‌ সবার আকর্ষণ যেন এখন শুধুমাত্র আহনাফ আর তানিশা! তানিশা হাত মুঠ করে শক্ত করে ধরে আছে আহনাফের কলার। দু’জনের দৃষ্টি’ই মেঝেতে। তানিশার মনে হাজারো প্রশ্ন, তবুও সব প্রশ্ন কে একপাশে রেখে অনুভব করছে এই মুহুর্তেকে। ইচ্ছে করছে নিজের সব শক্তি দিয়ে সময়টাকে এখানেই থমকে দিতে। আহনাফের মুখপানে তাকিয়ে ভাবল, “যদি সময় থমকে যেত তাহলে এই মুখখানি দেখতো পেত সামনে থেকে। যতোটা কাছাকাছি যাওয়া যায়, ততোটা কাছেই এসে থাকতো আহনাফের। দিনের পর দিন এভাবে থাকতেও অসুবিধা ছিল না। আশপাশ কি হচ্ছে না হচ্ছে এ ব্যাপারে কোন খোঁজ নেই তার। সামনে এখন আহনাফ, তার সব চিন্তা ভাবনা এখন শুধু তার’ই বশে! এটা কি আহনাফের কোন অলৌকিক শক্তি নাকি তার দুর্বলতা!

নিঝুম দূরে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে। তার ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিত হাসি। সেই হাসি থমকে গেল অশান্ত আর ইফাকে একসাথে দেখে। দু’জনে বেশ ভালোই নাচ্ছে একসাথে। চোখাচোখি হলো শান্ত আর নিঝুমের। শান্ত মাথা ঘুরিয়ে এখন দেখছে নিঝুম কে। আবার এদিকে ঘুরে দেখল আহনাফ আর তানিশা একসাথে। একি হলো? কি হলো আর কি ভাবল সে। শান্ত থমকে দাঁড়িয়ে গেল।‌ নীলাভ্র এগিয়ে এসে নিঝুম কে বলল, “তুমি না হয় আমার সাথে চলো!

নিঝুম একগাল হেসে মুখ ফিরিয়ে নীলাভ্রের হাত ধরল।‌ শান্ত যেখানে থেমে গেল সেখান থেকেই শুরু করল। ইফা হয়তো কিছু বুঝল, শান্ত কে বলে উঠল, “নিঝুম দেখছি নীল ভাইয়ার সাথে খুব ভাব!

কথাটা যেন ধক করেই বুকে গাধল। শান্ত কি করছে না করছে এতে তার মন নেই। মন রয়ে গেল চশমিশের কাছে। নীলাভ্র নিঝুমের হাত ধরে বলল, “আহনাফ আর তানিশা, কি করতে যাচ্ছো তুমি?

“যা আপনারা কেউ ভাবতে পারেন নি!

“তোমার কি মনে হয়, তুমি এটা করতে পারবে!

“চেষ্টা করতে অসুবিধা কি?

“তাহলে আমি বলবো, নিঝুম তুমি অসাধ্য সাধন করতে পারো।

নিঝুম হেসে বলল,
“নীলাভ্র আমার পা ব্যাথা করছো!

নীশাভ্র নাচ থামিয়ে বলল , “একি! আগে বলো নি কেন?

হাত ধরে চলে এলো একপাশে। দু’জনেই বসে পড়ল একদিকে। নীলাভ্র বলে উঠল, “পায়ে কি খুব বেশি ব্যাথা!

নিঝুম মাথা নেড়ে বলল, “না!

“আমার মনে হয়, তখন দুতলা থেকে প*ড়ে গিয়ে এই ব্যাথা টা পেয়েছো। নিঝুম তোমার ডাক্তারের কাছে গিয়ে একবার চেকাপ করানোর দরকার।

“না, তেমন কিছু না।

“আর ইউ সিউর!

“ইয়াহ।

নীলাভ্র মুখ ফিরিয়ে এবার সবাইকে দেখতে লাগল। দিয়া এসে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “তুই একা দেখছি,‌ তাহলে আমার সাথে চল!

নীলাভ্র নিঝুমের দিকে একবার ফিরে দিয়ার সাথে উঠে দাঁড়াল। খানিকক্ষণ পর শান্ত’র খেয়াল হলো নীল এখন দিয়ার সাথে। চশমিশ সাথে নেই, মাথা ঘুরিয়ে দেখল চশমিশ এক কোনে বসা। তার মাথায় একটা কথা ঘুরছে, “চশমিশ কাকে ভালোবাসো, কে সে? কার কথা বলেছিল সে আহনাফ কে? সে কি সত্যিই নীল!

বুকে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করল। ছটফট করতে লাগল,‌ উওরটা শোনবার জন্য। আবার মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখল চশমিশ নেই। একি! এইতো এইখানেই ছিল। গান শেষ হবার আগেই নাচ থামিয়ে দিল শান্ত। ইফা তার ভাবনার ভুবন থেকে বের হয়ে এলো। শান্ত ইফাকে রেখে খুঁজতে লাগল চশমিশ কে। ইফা যেন সবটা বুঝতে পারল । পুরো কফি শপ খুঁজেও পেলো না নিঝুম কে।‌ গেলো কোথায়? একজন কে জিজ্ঞেস করতেই বলল, “একটা মেয়েকে সে নাকি দেখেছে বাইরে চলে যেতে।”

শান্ত অবাক হলো? বাইরে এই বৃষ্টির মধ্যে নিঝুম একা একা বেরিয়ে পড়ল। কোথায় গেলো সে? কোন ভাবনা ছাড়াই সেও বেরিয়ে পড়ল!

——-

রাস্তায় কারোই চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। চশমিশের পাখনা গজালো নাকি। এতো তাড়াতাড়ি কোথায় গেলো সে। শান্ত হাঁটতে হাঁটতে অনেকখানি পথ ছুটে এলো। কেন এলো এখানে? কিসের জন্য এতো উত্তেজনা, ভাবনা! এসব কিছুই তার মাথায় এসে নি। শুধু একটাই ভাবনা, চশমিশ কে খুঁজে বের করতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে টুইটম্বুর সে। গায়ের শার্টটা ভিজে একাকার! বৃষ্টি এখনো পড়ছে। আজ রাতে এই বৃষ্টি থামবে বলে মনে হয় না। ছুটতে ছুটতে অনেকদূরে আসবার পর সামনে কাউকে দেখলো সে। কে তা না জেনেই চশমিশ বলে ডাক দিল। প্রথমবার ডাক কাজে দিল না। পর পর কয়েকবার ডাকবার পর’ই থেমে গেল সে। মুহুর্তেই পেছন ফিরে তাকতেই দেখল কেউ ছুটে আসছে। কে সে শান্ত!

মেইন রোডে বৃষ্টির জোড়ের কারণে তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। চোখে দেখাও মুশকিল‌। কয়েকটা রিক্সা যাও দেখা গেল, তাও প্যাসেঞ্জার বসা। শান্ত আর ইফা কে একসাথে দেখে এক প্রকার রেগেই বেরিয়ে গেল নিঝুম। তার আর অশান্ত’র মাঝে একটা যু*দ্ধ চলছে। নিরব যু*দ্ধ! এ যুদ্ধে কেউ মুখে কিছু বলছে না, কিন্তু তার প্রতিটা পদক্ষেপ, হাবভাব ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে আরেকজন কে।‌ অশান্ত কি তা বুঝতে পারছে।‌ কে জানে? নিজের অদ্ভুত নাম শুনে থেমে গেল নিঝুম। পেছন ফিরে দেখলো কেউ দৌড়ে আসছে। না দেখেই বলে দিতে পারে এটা অশান্ত! কিন্তু তবুও তার দৃষ্টিতে কতো কৌতুহল!

চশমার পানির বিন্দু ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে। নিঝুম বার বার চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করছে। অশান্ত তার সামনে দাঁড়িয়ে এখন হাফাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তুমি এখানে একা কি করছো?

নিঝুম স্পষ্ট স্বরে বলল, “বাসায় ফিরছি!

“এমন বৃষ্টিতে একা একা, পাগল হয়েছো নাকি।

নিঝুম মিনমিনয়ে বলল,
“বৃষ্টির দোষ কেন দিচ্ছেন!

অশান্ত জোরে বলল, “কি বললে? জোরে বলো!

বৃষ্টির শব্দে এতো ভালো করে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। নিঝুম রেগে চেঁচিয়ে বলল, “আমার ইচ্ছা আমি যাচ্ছি, আপনি এখানে কি করছেন!

উওর শান্ত’র‌ জানা ছিল না। কি বলবে সে, ওখানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ছুটতে ছুটতে এখানে চলে এসেছে।‌এতোদূর! বিষয়টা ছেলেমানুষী ছাড়া আর কি কিছু! অশান্ত কিছুই বলল না, নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রইল। জবাব না পেয়ে রেগে আবারো পা বাড়ালো নিঝুম। শান্ত তার বাহু টেনে ধরে বলল, “এতো রাগ কিসের তোমার?

“কিসের রাগ! কি কথা বলছেন আপনি।

“তুমি রীতিমতো বার বার আমাকে ইগনোর করছো কেন?

“শুরুটা কি আপনি করেন নি!

শান্ত একটু চুপ হলো। নিঝুম চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। শান্ত তার হাত সরিয়ে বলল, “তুমি যে আহনাফ কে রিজেক্ট কই সে কথা তো আমাকে বলো নি। এভাবে তো সারাদিন আমার কানে কাছে এসে বকবক করতে। এখন এই কথাটা বলার সময় হলো না।

নিঝুম রেগে যাচ্ছে। রেগে সে ধপ করে এক পা কাছে এগিয়ে এলো। একটু উঁচু হয়ে শান্ত’র কানের কাছে বলল, “সেদিন রাতে আমি এসেছিলাম, আপনার”ই সময় হয় নি আমার কথা শুনবার। মনে আছে?

শান্ত ধীরে ধীরে বলল, “তাই বলে কি পরে বলতে পারলে না।

নিঝুম চেঁচিয়ে বলল, “কি বললেন?

“বলছি পরে কি বলতে পারলে না!

নিঝুম চোখের চশমা খুলে আবারো পড়ল। শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টির জো এইবার কমছে। তাই ধীরেই বলল, “আপনাকে কেন বলবো?

শান্ত নাক ফুলাল। দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলল, “ওহ তাই তো আমাকে কেন বলবে?

নিঝুমও মুখ ফিরিয়ে বলল, “নাচছিলেন তো, তা নাচ ছেড়ে এখানে এলেন কেন?

“আমি কি একাই নাচছিলাম, তুমি কি করছিল?

“যা ইচ্ছে হয় তাই করবো, আপনি কে?

“হ্যাঁ তাই তো, তোমার যা ইচ্ছে করো গিয়ে।

দু’জনেই আবার চুপ হয়ে গেল। মুখ ঘুরিয়ে দুজন দুদিকে তাকিয়ে রইল। বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু আবারো হবে সেই আভাস দিচ্ছে। মেঘ ডাকছে। নিঝুম টু শব্দ অবদি করছে না। এটা যেন কোন খেলা, যে আগে কথা বলবে সেই হার মানবে। শান্ত শেষ অবদি হার মেনে বলল, “বাসায় যাবে না, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

নিঝুম হাত দেখিয়ে বলল, “আপনার তো ওদিকে যাবার কথা, সেখানে যান!

“চশমিশ ঝগড়া করো না।

“শুনে রাখুন, আমি ঝগড়ুটে। সবসময় ঝগড়া করবো। আপনার শুনতে চাইলে শুনুন, নাহলে চলে যান এখান থেকে‌

“তুমি এভাবে কেন কথা বলছো যেন সব দোষ আমার।

“তাহলে দোষ কি আমার!

“নাহলে কার? তুমি আমায় বললে তুমি আহনাফ কে পছন্দ করো। তার সাথে ডেটেও গেলো। তাহলে সেখানে গিয়ে কেন বললে, তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসো।

“অফকোর্স ভালোবাসি বলেই বলেছি

“তাহলে ডেটে কেন গেলে, ভালোই যখন বাসো না তাহলে ডেটে যাবার কি দরকার ছিল!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে ফিরে তাকাল। কিছু বলার থাকলেও সে বলে উঠল, “আমার ইচ্ছে তাই!

বলেই চলে যেতে নিল। শান্ত তার হাত ধরে হিচকে তার কাছে টেনে বলল, “জবাব দিয়ে যাও। আমায় দুটানায় ফেল না।

“দুটানায় আপনি কেন ভুগছেন!

“নিঝুম!
চেঁচিয়ে উঠলো শান্ত, নিঝুমের চোখে অশ্রু জল জল করছে। শান্ত তার নাম ধরে ডাকলেই এমনটা হয়। শান্ত’র হাত ছাড়িয়ে বলল, “দরকার ছিল!

“কিসের দরকার?

নিঝুম চোয়াল শক্ত করে বলল, “কারণ উনি আমার কার্ড টা পড়েছিলেন। একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারতো, সেটা ক্লেরিফাই করার দরকার ছিল তাই। আর এক্সপ্ল্যানেশন দিচ্ছি না আমি আপনাকে!

বলা মাত্র হন হন করে চলে গেল নিঝুম। শান্ত পেছনে দাঁড়িয়ে রইল। পর পর দুটো গাড়ি শো শো করে চলে গেল। শান্ত এবার চেঁচিয়ে বলল, “তুমি কাকে ভালোবাসো নিঝুম!

নিঝুম দাঁড়িয়ে গেল। রাগে এবার তার শরীরটা জ্বলছে। প্রশ্নটা যতোটা না কুৎসিত নামটা আরো বেশি কুৎসিত লাগছে। শান্ত হন হন করে এগিয়ে এবার সামনে এসে দাঁড়াল। নিঝুম ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “আপনাকে আমার নামে ডাকতে বারণ করেছি আমি, ভুলে গেছেন সেই কথা।

“তুমি আমার কথার জবাব দাও আগে, কে সে?

“দেবো না!

শান্ত ঠোঁট কামড়ে ধরল। রাগ তারও হচ্ছে, তবুও সংযত হবার চেষ্টা করছে আর নিঝুম বার বার সেই রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। শান্ত এবার সোজাসুজি বলল, “তুমি নীল কে ভালোবাসো। তোমার সেই ভালোবাসার মানুষটি কি নীল!

নিঝুম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। তার ইচ্ছে করল চেঁচিয়ে কান্না করতে। কিন্তু নিঝুম হেসে ফেলল। হেসে বলল, “এটা মনে হলো?

“তা ছাড়া আর কি? কে আছে আর!

“ভালোই বলেছেন , আহনাফ কে তো রিজেক্ট করলাম। আপনাকে তো সম্ভব না, বাকি রইল নীলাভ্র। না উনি ভালো ছেলে, আমার সাথে ভালোই মানাবে।

দু’জনের দৃষ্টি এবার স্থির। একে অপরকে দেখছে, কিসের এতো রাগ দু’জনের মাঝে কেউ বুঝতে পারছে না। শুধু তারা জানে তাদের রাগাতে হবে, রেগে রেগে কথাগুলো বলে অপরজন কে কষ্ট দিতে হবে। শান্ত নিচে তাকাল। তাকিয়ে হেসে ফেলল। এই পরিস্থিতিতে এর চেয়ে ভালো আর কিছু করা সম্ভব না তার পক্ষে। তবুও দ্বিতীয় বারের মতো জিজ্ঞেস করল নিঝুম কে , “কবে থেকে ভালোবাসো তুমি নীল কে, এই ভালোবাসা তোমাদের মাঝে আবার কবে থেকে হলো?

নিঝুম নিশ্চুপ, হতবাক! হতচকিয়ে গেল এটা ভেবে অশান্ত তার অভিমানে বলা কথাগুলোই বুঝল না। আবারো প্রশ্ন করছে তাকে। টপটপ করে আবারো বৃষ্টি পড়ছে। শান্ত এখনো উওরের আশায় আছে। সে আবারো জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলছো না কেন? কবে থেকে তুমি ভালোবাসো নীল কে?

কথাটা শেষ হতে না হতেই বেশ জোরালো ভাবেই একটা চড় পড়লো তার গালে। শান্ত হতচকিয়ে গেল। রাগে তার‌ চোখ দুটো লাল হয়ে যাচ্ছিল। এই বৃষ্টির মাঝেও মনে হতে লাগল তার শরীর জ্বলছে। নিঝুম তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “চলে যান এখান থেকে, আপনার সাথে কথা বলার রুচি চলে গেছে আমার!

কথাগুলো কাঁটার মতো বিধল শান্ত’র গায়ে। চলে যেতেই নিল সে, কিন্তু আবারো পিছিয়ে এলো। নিঝুম অবাক হয়ে তাকাল। শান্ত ফট করে তার চশমাটা খুলে ছুঁ*ড়ে ফেলে দিল। নিঝুম বড় বড় চোখ করে তাকাল। তার চোখের সামনে এখন সবকিছুই অন্ধকার। শান্ত বলে উঠল, “যাও, এবার এভাবেই বাসায় যাও!

বলেই হন হন করে চলে গেল। শত চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারল না নিঝুম। কি জানি, কেন এতোক্ষণ এভাবে ঝগড়া করল তারা। কি ছিল তাঁদের ঝগড়ার কারণ। শুধুই কি অভিমান! কেন বুঝল না একজন অপরজনের কথা। মনের কথা গুলো কি এতোই বোঝার দরকার ছিল।

মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল নিঝুম। এখন এক পা বাড়ানোর সাহস নেই তার। অশান্ত কিভাবে পারল এটা করতে, চশমা ছাড়া এক মূহূর্ত চলতে পারে না সে। একটা গাড়ি আসছে, সেই গাড়ির আলো পড়লো নিঝুমের দিকে। নিঝুম পিট পিট করে তাকিয়ে আছে। গাড়ির হর্ণের আওয়াজ তার কানে আসছে। গাড়ি ধেয়ে আসছে তার দিকেই।

কি হলো জানা নেই, কিন্তু একজনের বুকের মধ্যে যেন ঠাঁই পেল সে। বৃষ্টির বেগ এখন আরো বেড়েছে। এই বৃষ্টি রাতে কোন পুরুষের বুকের মধ্যে আছে সে। হুট করেই জড়িয়ে ধরল তাকে। এই দেহ তার চেনা, গায়ের গন্ধ তার জানা। সে তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখল সে।‌ খানিকটা অবাক হলো সে। নিঝুমের কান্নার আওয়াজ তার কানে বাজছে, আশ্চর্য! এই বৃষ্টির মধ্যেও তার কান্না স্পষ্ট ভাবে শুনতে পাচ্ছে সে। নিঝুম নাক টেনে কম্পিত স্বরে বলল, “আমি আপনাকে ভালোবাসি অশান্ত, আপনাকে ভালোবাসি! আমার সেই ভালোবাসার মানুষটি শুধুই আপনি!”

বলেই যেন তার বুকের মধ্যে আরো জড়োসড়ো হলো। অশান্ত হতবুদ্ধি’র মতো দাঁড়িয়ে আছে। কথাগুলো কি ভুল শুনলো সে। নিঝুম কে কি বলবে, আরেকবার বলতে। তার কি ভ্রম হলো নাকি। এতো বিভ্রান্ত কেন হচ্ছে সে। নিঝুম কাঁদছে কেন? তার এখন কি করা উচিত। তাকে জড়িয়ে ধরা উচিত নাকি তার কান্না থামানো উচিত। নাকি বলা উচিত, “তার চশমিশ কে কতোখানি ভালোবাসে সে। সত্যিই যে খুব ভালোবাসে! বিশ্বাস করবে কি সে!” মেঘ গর্জে উঠল। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে। ভালোবাসার প্রেমে মত্ত দুই প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে ফাঁকা রাস্তার মাঝে। তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে আছে বৃষ্টির এই রাত! #তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৯

ভাঙা চশমা হাতে মুখ ফিরল নিঝুমের দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরল নিঝুমের দিকে। গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। বৃষ্টি এখনো কমেনি, দুজনেই ভিজে একাকার। শান্ত থমথমে গলায় নিঝুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “চলো, চশমা ভেঙ্গে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই!

নিঝুম কিছুই বলল না, শুধু পা বাড়াল। পরিস্থিতি এখন বদলেছে, এতোক্ষণ কি হয়েছিল এটা ভাবতেই দুজনের গা শিউরে উঠছে। এভাবে দুজন আর কতোক্ষণ একসাথে থাকবে বলা যায় না। লজ্জায় একজন আরেকজনের মুখও দেখছে না। পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক করা দরকার। শান্ত আগে আগে হাঁটছে, নিঝুম তার পিছু পিছু! হঠাৎ নিঝুম ডেকে উঠে বলল, “এই অশান্ত, অশান্ত!

“কি?

“আমি আপনার হাতটা ধরে একটু হাটি!

ধাক্কার মতো খেলো শান্ত। এতোক্ষণের পরিস্থিতি এবার বেসামাল হয়ে যাচ্ছে। থমথমে মুখে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। এখন আর তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রাত অনেকটা গভীর হয়ে আসছে। নিঝুম আবারো বলে উঠল, “আমি চোখে কিছুই দেখতে পারছি না অশান্ত, হাঁটতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। হাত ধরা লাগবে না, আপনার শার্টের এক কোনে একটু ধরে শুধু হাটি।

শান্ত এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে এসব কি ভাবছে, নিঝুম বিপদে পড়েই কথাটা বলেছে। তার এসব ভাবা মোটেও উচিত হয় নি। আর যাই হোক, যা হয়েছে সেটা তো তার জন্য’ই। শান্ত কথা না বলে খানিকটা পিছিয়ে গেল। নিঝুম তার হাতের শার্টের একটু অংশ চিমটি মেরে ধরল। কয়েকপা হাঁটার পর শান্ত তার হাতটাই ধরে ফেলল। ব্যাপারটা কি ঠিক হলো, বিভ্রান্ত সে। কিছু করার ছিল না,‌ ওভাবে হাটা যে মুশকিল! আরেকটু সামানে আসার পর ভাগ্য করে একটা সিএনজি পেয়ে। কাকভেজা হয়ে দু’জনেই উঠে বসল সিএনজিতে। অবাক করার বিষয় ছিল শান্ত এখনো নিঝুমের হাতটা ছাড়ে নি, না নিঝুম বলল হাতটা ছাড়তে। শীতে এখন কাঁপছে সে, অশান্ত’র হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে। হঠাৎ আঁতকে উঠে বলল, “অশান্ত!

“কি?

“আমার ব্যাগ, ব্যাগে আমার ফোন। আমি তো সাথে করে কিছু্ই আনে নি।

“তো দোষ তোমার, আমি কি করবো?

“আপনি কি করবেন মানে, আমি মোটেও এভাবে ভিজে বাসায় ফিরছি না। ব্যাগে আমার আরেকটা চশমা রাখা আছে।

“তাহলে কি বলছো? সিএনজি ঘুরিয়ে ওখানে ফিরতে বলল।

“পাগল হয়ে গেলেন নাকি, আপনি তো দেখছি বোকার সাথে মাথা মোটাও। সবাই এভাবে আমাদের দেখে কি বলবে?

“তাহলে কি করবো, তুমিই বলো!

নিঝুম কথা বলল না। শীতে কাঁপতে কাঁপতে অশান্ত’র ঘাড়ে মাথা রাখল সে। শান্ত সিএনজি চালক কে নিজের বাসায় যেতে বলল। এখান থেকে এখন তার বাসা’ই কাছে।‌ আর আহিম কে মেসেজ করে বলল, “তার গাড়ি আর চশমিশের ব্যাগ খুঁজে নিয়ে যেন তার বাসায় চলে আসে।”
নিজের বাসায় যাবার কথা বলেও অনেকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কে জানে চশমিশ এখন কি ভাববে? এভাবে, এসময়ে তার বাসায় ঠিকানা বলা কি ঠিক হয়েছে, নাকি হয়নি। চশমিশ কি অন্য কিছু ভাবল, তাকে খারাপ কিছু ভাবছে না তো। কিন্তু না, সে তো আর এতোভেবে বলে নি। কে জানে? শুকনো ঢোক গিলে মুখ ফিরাল বাইরের দিকে। একরম অস্বস্তি আগে কখনো হয় নি। নিঝুম তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ভালোবাসার কথা বলবে এটা সে স্বপ্নেও ভাবে নি। কিন্তু মুখ ফুটে নিজের ভালোবাসার কথা না বলে বোকামি করেছে সে। এটা করা উচিত হয় নি। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের মনের কথা বলে দিলে ভালো হতো। সে টা কেন করলো না সে? নিঝুম কি তাহলে ঠিক বলে, “সে সত্যি সত্যি বোকা!”

কিছু না বলা সত্ত্বেও নিঝুম এখন তার সাথে। রাগ করে চলে যায় নি, কেন যায় নি। তার তো অভিমান করে চলে যাবার কথা। নাকি অভিমান করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে। নিঝুম কি তবে তার মনের কথা বুঝতে পেরেছে। এই বৃষ্টিতে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তার কান গরম হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়। নিঝুম হঠাৎ মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে বলে উঠল, “অশান্ত, আপনি কখনো আমায় নিঝুম বলে ডাকবেন না। শুনতে খুব কুৎসিত লাগে আমার কাছে, খুব!

অশান্ত ভ্যাবাছেকা খেয়ে গেল। নিঝুম আর কিছু বলে নি, সে এখন ঘোরে আছে। কি জানি, যা বলল তা তার আদৌও মনে আছে নাকি!

——

শান্ত তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রুমে ঢুকল। জানালার কাছে দাঁড়ানো নিঝুম। কারো রুমে আসার শব্দে পিছন ঘুরল সে। অশান্ত তার চশমিশ কে দেখে খানিকটা থমকে গেল। তার মনে হলো সময়ও থমকে গেছে। নিঝুমের পড়নে তার একটা টাইজার, যা তার পায়ের পাতা ছাড়িয়ে এখন মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।‌ তার গায়ের টি শার্ট টা হাটু অবদি ঝুলে আছে। হাতা গুলো অবশ্য নিঝুম বটে রেখেছে। এমন অদ্ভুত পোশাকেও নিঝুম কে দারুন লাগছে শান্ত’র কাছে। কিন্তু কেন? এই মেয়েটা কি এমন জাদু করল তার উপর।‌ কেন তার মন এখন তার অধিকারে। সেই প্রথম নিঝুম তাকে জড়িয়ে ধরার অনুভুতি এখনো হচ্ছে তার।‌ হৃৎস্পন্দন বাড়ছে দ্রুত, শান্ত তোয়ালে হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। নিঝুমও তাকিয়ে আছে তার দিকেই কিন্তু বুঝতে পারছে না অশান্ত কি সত্যিই তার সামনে নাকি। একটু এগিয়ে সামনে আসতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিল। শান্ত ছুটে গিয়ে ধরল তাকে।‌ হৃৎস্পন্দনের প্রতিটা শব্দ এখন আরো দ্রুত। থমকে গেছে সময়, থমকে গেছে সে। সব কিছুই যেন স্তব শুধু তার জন্য। বাইরে বজ্রপাত এসে ঠেকেছে কানে। বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দে মুখরিত সবকিছু। এই পরিস্থিতি মুহুর্তেই বদলে দিতে পারে শান্ত, কিন্তু সে বদলে দিচ্ছে না। কেন তার মন মানছে না। তবুও নিজেকে সরিয়ে আনলো শান্ত। এতোটা আবেগপ্রবণ হওয়াটা সত্যিই কাজের না। নিঝুমের কোমরের থেকে হাত সরিয়ে নিল। জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল “ঠিক আছো!” উচিত ছিল বৈকি। জিজ্ঞেস’ই করতে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই নিঝুম এক হাঁচি দিয়ে বসল। পর পর আরো তিনবার হাঁচি দিয়ে নাক খসতে লাগল সে। শান্ত’র কেমন এখন অদ্ভুত লাগছে। ঢোক গিলে বলল, “ঠিক আছো তুমি!”

“আছি!” বলার পর পরই আবারো হাঁচি। শান্ত হালকা কেশে বলল, “সর্দি লাগিয়ে ফেলেছো দেখছি।”

“সব দোষ আপনার।

“কথায় কথায় দেখছি আমার দোষ দেওয়া তোমার স্বভাব হয়ে যাচ্ছে

“আজ রাতে আপনার কারণেই জ্বর আসবে আমার।

শান্ত তার হাত ধরে বিছানায় বসাল। তোয়ালে দিয়ে নিঝুমের মাথা মুছতে মুছতে বলল, “ভালো হবে, দুদিন বিছানায় থেকে তোমার মাথা ঠান্ডা হবে‌

“এই অশান্ত একটা কথা বলি!

“একটাই বলবে, ঠিক আছে!

নিঝুম মাথা নেড়ে বলল, “আমার না বেশ লজ্জা লজ্জা লাগছে।

হতচকিয়ে গেল শান্ত। নিঝুম মুচকি মুচকি হাসল। শান্ত কারণ জিজ্ঞেস করতেই নিঝুম মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল, “কারণ কেন বলবো? আপনিই তো বললেন একটা কথা বলতে বলেছি!

“কিন্তু..
বাকি কথা বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। শান্ত নিঝুম কে ঘরে থাকতে বলে তড়িখড়ি করে বেরিয়ে পড়ল। আহিম এসে গাড়ির চাবি আর নিঝুমের ব্যাগ শান্ত’র হাতে দিতে দিতে বলল, “উহুম উহুম!

“কাশছিস কেন এভাবে?

“মনে তো হচ্ছে চশমিস ম্যাম এখানেই।

“তো।

“দেখি ভিতরে আসতে দে আমায়। এভাবে বাইরে কেন দাড় করিয়ে রেখেছিস।

*তোর কাজ শেষ, চলে যা এখন!

“আরে আরে…

শান্ত দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিল।‌ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সে। সামনে ফিরেই দেখল অমি তার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে দেখছে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখল অমির খাবার শেষ। সে নিচু হয়ে অমির মাথা হাত বুলিয়ে বলল, “গুড অমি। এবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!

ঘরে এসে দেখল নিঝুম এখনো জানালার ধারে। এই মেয়েকে বলেছিল বিছানায় থাকতে। পাকনামি করে আবারো গেছে জানালার ধারে। কিছু একটা হয়ে গেলে, এভাবেই তো চোখে ঠিকমতো দেখতে পারে না। নিঝুম আবারো ভিজে যাচ্ছে, বাইরের ঠান্ডা বাতাস আর বৃষ্টির ছিটে এসে পড়ছে তার গায়ে। শান্ত আবারো যেন নিঝুমের ভাবনায় ডুবে গেল। ভাবতেই অবাক লাগছে, চশমিশ এখন তার, শুধুই তার!

কাছে এসে চশমিশ কে সরিয়ে তার চোখে চশমা পড়িয়ে দিয়ে বলল, “সবকিছু দেখতে পারছো এবার!

চশমিশ মাথা নেড়ে আবারো হাঁচি দিল। ফোন বেজে উঠলো, বাবা’র‌ ফোন! নিঝুম তড়িখড়ি করে বলল, “বাসায় যেতে হবে, বাবার ফোন!
শান্ত কিঞ্চিত হেসে বলল, “চলো!

—–

গাড়ি ড্রাইভ করছে শান্ত, বৃষ্টি থেমে গেছে। আর হবার সম্ভাবনা নেই। নিঝুম মুখটা জানালার বাইরে দিয়ে রেখেছে। তার মনে আজ প্রশান্তি, কিসের প্রশান্তি সে জানে না। এতো দিনের চেপে থাকা কথাটা অবশেষে বলেই দিল অশান্ত কে।‌ কিন্তু বলে দেবার পর যে এখন অন্য সমস্যা, কিছুতেই ঠিক হতে পারছে না সে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা!

পুরোটা রাস্তা একটা কথা অবদি বলল না নিঝুম। শান্ত বেশ অবাক, নিঝুম বকবক ছাড়া এতোক্ষণ থাকলো কিভাবে এটাই ভাবছে সে। হঠাৎ মনে পড়ল সেই কথা, নিঝুম বলল তার লজ্জা লাগছে, কিন্তু কেন বলল? কারণ তো আর বলল না।‌ কিন্তু কারণটা মনে হয় এতোক্ষণে বের করতে পেরেছে অশান্ত।

গাড়ির দরজা খুলে বের হলো নিঝুম। শান্তও বের হলো।‌নিঝুম বাড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাত নাড়িয়ে বলল, “বাই!

শান্তও অবিকল হাত নাড়িয়ে বলল, “বাই! কিন্তু তার মোটেও ইচ্ছে করছিল না নিঝুমের সঙ্গ ছেড়ে দিতে।‌ নিঝুম এগিয়ে যাচ্ছে, শান্ত কি ভেবে ডাক দিয়ে বসল তাকে।‌ নিঝুম থমকে গেল।‌ শান্ত এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হেঁটে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। নিঝুম অবশ্য খানিকটা অবাক হলো। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হতে লাগল ক্রমশ। ঠোঁট কামড়ে ধরল সে।‌ শান্ত তাকে ছেড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “গুড নাইট!

“গুড নাইট!

এরপর আর পিছন ফিরে তাকাল না শান্ত। হন হন করে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।‌ নিঝুমের সাথে যতক্ষন’ই থাকে, ততোক্ষণই নিজেকে দুর্বল বলে মনে হয়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল সে, মনে হলো যেন পালিয়ে যাচ্ছে। নিঝুম তখনো দাঁড়িয়ে, শান্ত’র চলে যাওয়া দেখছিল সে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here