তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৫০+৫১

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫০

পরদিন ভার্সিটিতে না এলো আহনাফ, না এলো তানিশা, না এলো নিঝুম আর না এলো শান্ত! আহিম, তিথি, ইফা, নীলাভ্র, আফিন, রিয়া আর দিয়া সবাই হতবাক। চারজন’ই কি একসাথে অসুখ বাঁধালো নাকি। কি হলো কি? কি কারণে এলো না কেউ! ছুটির পর চারজনের বাসায় ফোন করে একটাই কথা জানা গেল, “কেউই ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে পারে নি।” কাকতালীয় হলেও যেন এই ব্যাপারটায় একটা রহস্য রহস্য গন্ধ পেতে লাগল সবাই। কেন এলো না সবাই! তিথি ইফা আর আহিমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগল, “কি হলো এটা? চারজন’ই কি এতো গভীর ঘুম দিলো নাকি চারজন’ই একসাথে স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত ছিল!

ইফা জবাব দেবার বদলে হন হন করে চলে গেল। কিছু একটা আঁচ করতে পারছে সে। আহিম শুধু মুখ টিপে হাসল। শান্ত আর নিঝুমের ব্যাপারটা তার জানা ছিল। কিন্তু আহনাফ আর তানিশার কি হলো?

সত্যি কথা ছিল, চারজন’ই আধো সত্য আর আধো মিথ্যে বলেছে। নিঝুম আসে নি, কারণ মাঝরাতেই খুব জ্বরে ভুগছিলো সে। জ্বরটা শুধু তার একা না, শান্ত’র ও আসে। এমন জ্বর, যে বিছানা থেকে উঠা দায়। মাঝরাতে আহনাফ চলে আসে তার বাসায়। ঔষধ খাইয়ে আর মাথায় পানি দিয়ে কোনমতে তার জ্বর কমায়। সারারাত শান্ত’র ঘুম হয় নি। জ্বর কাবু করে ফেলেছিল। আবছা আবছা স্বপ্ন দেখছিল সে। এই দেখছে চশমিশের হাত ধরে হাঁটছে, এই দেখছে রাতে চশমিশ কে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য। এই জ্বর টা বড্ড ভালো লাগছিলো তার। শেষ রাতে শান্ত’কে ঘুমাতে দেখে আহনাফও ঘুম দেয়। সেই ঘুমে দুজনেই উঠে দুপুর ১২ টায়। শান্ত এখন অনেকটাই সুস্থ!

এদিকে নিঝুম এখনো ঘুমাচ্ছে। হিনা তার ফোনের জবাব দেয়। নিঝুম গতরাত যেভাবে শান্তিতে ঘুমিয়েছিল এখন তার চেয়েও খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। মাঝরাতে অনেকটা সময় বাবা মঈনুল হক পাশে বসে ছিলেন। মা তাহমিনা বেগম একটু পর পর জল পট্টি দিচ্ছিলেন। অথচ নিঝুমের কিছুই মনে নেই। সে একগাদা লেপ গায়ে দিয়ে ঘুম। তাহমিনা বেগম একবার দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলেন, নিঝুম এখনো ঘুম। ফোনে নিঝুমের বাবা কে বললেন, “মেয়ে ঘুমাচ্ছে!”

কিন্তু তবুও খান্ত হলেন না তিনি। বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “জ্বর কমেছে কি না। ঔষধ খাইয়েছে কি না” অথচ মঈনুল হক নিজের হাতে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে গেছে। তাহমিনা বেগম মাথায় হাত রেখে বললেন, “না জ্বর আর বাড়ে নি।” তবুও চিন্তায় উসখুশ করতে লাগলেন মঈনুল হক। একবার জিজ্ঞেস করলেন “হাসপাতালে ভর্তি করাবো নাকি”!

তাহমিনা বেগম এবার রাগে ফোন’ই কেটে দিলেন। মেয়ে নিয়ে বরাবরই একটু বেশি বারাবারি মঈনুল হকের। তাহমিনা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলেন।নিঝুম ওপাশ হয়ে গেল। সাড়া দিল না। তিনি ভাবলেন, “আরো কিছুক্ষণ ঘুমাক।” যদিও গতরাতে প্রচুর বকাঝকা করেছেন। বৃষ্টিতে ভিজেছিল এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। রাতেই হাঁচি দিতে দিতে কাহিল হয়ে পড়েছিল। ভাবছিলেন জ্বর বোধহয় আসবে, বলতে বলতে এসেও গেল। তাহমিনা বেগম বিরক্তি স্বরে বললেন, “একটা মেয়েও ভালো না। কেউ শোনে না আমার কথা, কেউ না।”
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন। হিনা দুই কানে হেডফোন গুঁজে বই নিয়ে বসল।

তানিশার ব্যাপারটা ভিন্ন। সে আসে নি লজ্জায়, আহনাফের সামনে এসে কিভাবে দাঁড়াবে এটা ভেবেই অস্থির সে। যদিও রাতের সেই মুহুর্ত এখনো ভুলতে পারে নি সে‌। মুগ্ধতার রেশ এখনো আছে। ঘোরে আটকে আছে এখনো। সারাটা রাত ঘুম হয় নি তার। তবে একটা বিষয়ে এখনো ভাবছে সে। নিঝুম কেন এমনটা হলো? কি করতে চাইছে এই নিঝুম!
পুরো একটা রাত বদলে দিল চারজনের জীবন। কি হবে এখন বাকিটা!

—–

শান্ত অনেক ভেবেচিন্তে কল করলো নিঝুম কে। কয়েকবার রিং হবার পর ফোন রিসিভ হলো।

“হ্যালো!

শান্ত প্রথমে খানিকটা হতভম্ব হলো। অতঃপর বলল, “চশমিশ!

“বলুন।

“তোমার গলার স্বর এমন কেন লাগছে?

“কেমন লাগছে? আপনার গলার স্বর অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে।

“সে তো রাতে আমার জ্বর ছিল।

“আমারও ছিল, কিন্তু এখন সেড়ে গেছে। জানেন অশান্ত, আমার চোখ গুলো কোয়েল পাখির ডিমের মতো ফুলে গেছে। মুখটাও বেলুনের মতো ফুলা।

“তুমি কি সারাদিন ঘুমিয়েছো।

“হুহ। পুরো সারারাত আর দিন পুরোই ঘুমিয়েছি।

শান্ত হাসল। আয়নার দিকে ফিরে দেখল তার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। চোখ দুটো অসম্ভব লাল, মুখ ফুলে গেছে তবে অতোটা না। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল সে। বলে উঠল, “তোমার কি এখনো ঘুম পাচ্ছে চশমিশ!”

নিঝুম তখনো বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বলল, “উহু!

তাহমিনা বেগম দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, “আর কতোক্ষণ এভাবে গড়াগড়ি খাবি। বিছনা ছেড়ে এবার উঠ। গোসল করতে যা।

“মা, আমার জ্বর!

“তাই বলে গোসল ছাড়া থাকবি। ছিঃ ছিঃ কি কথা এসব। গোসল সেরে ভাত খেতে আয়। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস। তোর বাবা ফোন দিতে দিতে আমার মাথা খেয়ে ফেলল। আর গতকাল কার জামাকাপড় পড়ে এসেছিস। এগুলো কি এখনো ছাড়বি না।

নিঝুম মাথা নিচু করে তাকাল। অশান্ত’র টি শার্ট এখনো তার গায়ে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার বান্ধবীর এটা!”

“দেখেছিস তোর বান্ধবী তোর চেয়ে কতো লম্বা। শরীর স্বাস্থ্য কতো ভালো। তোর দ্বিগুন। আর তুই কি, এখনো পুঁটি মাছ হয়ে আছিস। এরা তোর সাথে বন্ধুত্ব করে কি করে?

“মা তুমি আমায় অপমান করছো!

“রাখ তো অপমান। গোসল সেরে দু মিনিটে এসে হাজির হ। বলে গেলাম! নাহলে এই ঘরে তোর জায়গা নেই।

তাহমিনা বেগম যাওয়া মাত্র নিঝুম মুখ ভেংচি কাটলো। হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল অশান্ত এখনো লাইনে। হতবুদ্ধির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত কানে দিল। ওপাশ থেকে নিশ্চুপ সে। নিঝুম বলে উঠল, “অশান্ত!

শান্ত হাসছে, খুব জোরে জোরে হাসছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল নিঝুম। শান্ত হাসতে হাসতে ধপাস করে
মেঝেতে বসে পড়ল। বলে উঠল, “পুঁটি মাছ!

“এই অশান্ত চুপ করুন। মা বেশি বেশি বলেছে।

“চশমিশ তুমি পুঁটি মাছ!
বলে আবারো হাসতে থাকে শান্ত। নিঝুম রেগে ফোনই কেটে দিল। ইচ্ছে করছে মা কে এখন কতগুলো কথা বলতে। কোন সময়ে কি বলতে হয় কিছুই জানে না। ধ্যাত! এদিকে অশান্ত’র হাসি এখনো থামে না। খুব কষ্ট করে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে সে। আহনাফ বেলকনির কাছে দাঁড়িয়ে বলল, “এতো হাসি কিসের?

শান্ত আহনাফের মুখের দিকে ফিরল। জবাব দেবার বদলে হাসতে লাগলো। আহনাফ কারণ খুঁজে পেল না। দীর্ঘ এতো ঘন্টা মেঝেতে পা রাখতে গিয়েই হিমসিম লাগছে নিঝুম। আলসেমি লাগছে, ইচ্ছে করছে না গোসল করতে। গোসলের কথা মনে পড়তেই অশান্ত’র কথা মনে পড়ল। কি হাসা হাসছিল! নিঝুমের এবার লজ্জায় কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এবার গোসল না করলে অশান্ত এসে বলবে, “তোমার মা’র কথা শুনেছিলে তো। নাকি তোমার মা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে! উফ অসহ্য!

ডেসিন টেবিলের কাছে আসতেই নিজেকে দেখতে লাগল সে। সত্যি সত্যি অশান্ত তার চেয়ে অনেক লম্বা! আচ্ছা অশান্ত’র এই টি শার্ট আর ট্রাউজার তাকে ফেরত না দিলে কিছু হবে? কি আবার হবে? এসব গিয়ে দিতে পারবো না। শেষে গিয়ে আবারো বলবে, “পুঁটি মাছ! ধ্যাত!
ধপাস ধপাস করে হেঁটে গিয়ে ঢুকল বাথরুমে।

—–

নিঝুম কমলা খাচ্ছে। মঈনুল হক মেয়ের জন্য কমলা আর বিরিয়ানি এনেছে! বিরিয়ানি দেখেই তাহমিনা বেগম রেগে একা একাকার।
“ইচ্ছে হলে তো ঘরেই রেঁধে খাওয়াতে পারতেন। দোকানের এসব আনবার কি দরকার ছিল!” জবাবে মঈনুল হক মাথা নেড়ে বললেন, “মেয়েটা সারাদিন কিছু খায় নি তাই!”
তাহমিনা বেগম বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে নিঝুমের দিকে ফিরে বললেন, “নাও খাও। বাবা শখ করে এনেছেন। আর আমার রান্না করা খাবার গুলো নষ্ট হোক। ঘরের খাবার তো কারো মুখে জুটে না।”

বলতে বলতে চলে গেলেন তিনি। মঈনুল হক মেয়েকে জ্বরের কথা জিজ্ঞেস করে ঘরে ঢুকলেন। মা বাবার এমন ঝগড়া দেখে দু’বোন হাসতে লাগল।
নিঝুম ডয়িংরুমে সোফায় পায়ের উপর পা রেখে কমলা খাচ্ছে। হিনা কমলার খোসা ছুলতে ছুলতে বলল, “আপা, গতরাতে যেই ভাইয়াটা তোমাকে গাড়ি করে দিয়ে গেল সে কে গো!

কমলাটা যেন নিঝুমের ঠিক গলায় আটকে গেল। সে উঠে বসে তা গিলতে চেষ্টা করল। চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে তার। কোনমতে হিনার দিকে ফিরে তাকাল। হিনা মিটিমিটি হাসছে!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫১

“এই চশমিশ!

নিঝুম ঘুরে পেছন ফিরল। শান্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিঝুম একগাল হেসে দৌড়ে এসে বলে, “এই অশান্ত, আপনার জ্বর কমেছে!

“হ্যাঁ! তোমার?

“না কমলে এখানে এলাম কি করে?

“ওহ হ্যাঁ তাই তো!

নিঝুম হেসে বলল, “আপনি ঠিক আছেন অশান্ত।

“হ্যাঁ , কেনো?

“খুব অদ্ভুত লাগছে আপনাকে দেখতে, মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে অনেক চিন্তা করছেন।

শান্ত মাথা দুলিয়ে না বলল। নিঝুম বাহুতে হাত চাপড়ে বলল, “নার্ভাস হচ্ছেন কেন? ভাবুন সেই রাতে কিছুই হয় নি।

শান্ত হতচকিয়ে, “মানে!

নিঝুম রহস্যময়ী ভাবে হাসল। শান্ত’র চোখ মুখে এখনো অবাকের ছাপ। নিঝুম চট করে শান্ত কে একটা চিমটি মে*রে বলল, “বোকা অশান্ত!

বলামাত্র মুখ ফিরিয়ে বলল, “আরে আহনাফ!

“কেমন আছো তুমি?

“আমি তো সবসময় ভালোই থাকি। আপনি বলুন?

“ভালোই আছি।

নিঝুম দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলল, “আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না আহনাফ?

“মানে?

“সেদিন রাতে যে আমায় দেখতে পান নি, সেটা বলছি।

“ওহ, আহিম তো আমায় বলল শান্ত তোমায় পৌঁছে দিয়েছে। আচ্ছা তুমি এটা জানো, শান্ত বৃষ্টিতে ভিজলো কি করে? জানো , সেদিন রাতে কি জ্বর এলো ওর।

নিঝুম মুখ টিপে শান্ত’র দিকে হেসে বলল, “জানি!

শান্ত হতচকিয়ে নিঝুম কে আহনাফের সামনে থেকে সরিয়ে বলল, “ক্লাসের জন্য দেরি হচ্ছে চল!

“তুই এতো তাড়া কেন দিচ্ছিস, ক্লাসের জন্য এতো উতালা হতে আগে কখনো তো দেখি নি তোকে।

আহনাফ বিব্রত হয়ে কথাটা বলল। শান্ত তার বাহু টেনে জোর করে ক্লাসের দিকে গেল। পেছন ফিরে দেখল নিঝুমের দিকে। সে হাসছে, এই মেয়েটা তাকে বিপদে ফেলবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

নিঝুম সবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে, অমনি তানিশা এসে তার সামনে দাঁড়াল। নিঝুমের মুখ হাসি হাসি, তানিশা কে যেন সে আশাই করেছিল। তানিশা থমথমে মুখে বলল, “তোমার প্ল্যান কি বলো তো!

“কোন প্ল্যান, কিসের প্ল্যান?

“সেদিন আমাকে কেন আহনাফের সামনে এনে দাড় করালে।

“কেন নাচ করতে ভালো লাগেনি। না ভালো লাগলে বলে দিতে, আমি গিয়ে নাচতাম।

তানিশা চোয়াল শক্ত করল। নিঝুম হেসে ফেলল। তানিশা কড়া গলায় বলল, “মজা করছো!

“না তা কেন করতে যাবো। এতো বড় উপকার করলে তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম মাত্র। তাই বলে ভেবো না, আহনাফ কে তোমায় দিয়ে দিচ্ছি, মনে রেখো আমরা ডেটেও গেছিলাম।

“তুমি কি বলতে চাও!

নিঝুম জবাবে হেসে, পাশ কাটিয়ে চলে এলো। তানিশার মুখে এখনো থমথমে ভাব ‌। এই মেয়ে কিছু একটা তো ভাবছে। কি করতে চাইছে এ!
ক্লাসে বসে আছে নিঝুম। তিথি তার পাশে বসে বলে,

“ইফার কি হলো বলতো!

নিঝুম কলমটাকে ঠোঁটের উপর রেখে বলল, “কি?

“আমাদের সাথে আজ বসলো না যে?

“কি জানি, হয়তো ইচ্ছে করেনি

“তোদের কি ঝগড়া হয়েছে।

“বাহ রে ঝগড়া হতে যাবে কেন?

“তুই মিথ্যে বলছিস আমায় নিঝুম।

“সত্যি! তোকে দেখাচ্ছি। এই ইফা এই!

ইফা মুখ ফিরল। নিঝুম তাকে একটা ফ্লাইং কিস দিল। ইফা মুখ ফিরিয়ে নিল। নিঝুম হেসে বলল, “দেখলি তো।

তিথি অনেকটা অবাক হলো। কিছু তো একটা হচ্ছে তার পিছন পিছন, কিন্তু সে ধরতে পারছে না। নিঝুম হঠাৎ তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “আহিম ভাইয়ের থেকে দূরে থাক।

“কেন?

“তার গার্লফ্রেন্ড আছে?

“তো!

“তো! তো মানে কিছুই না। তুই যেভাবে তার সাথে থাকিস আমি তো ভাবলাম…

“বেশি ভাবছিস, তেমন কিছুই না। সমস্যা ওই আহিমের। সে শুধু শুধু আমায় জ্বা*লায়।

“না হলেই ভালো;
আবারো মুখ টিপে হাসলো নিঝুম। সে ভেবেই এসেছে। আজ এক এক কান্ড করে একেকজনের মাথা খা*রাপ করবে।
ক্যাম্পাসের দিকে আগাতেই পেছন থেকে ডাক পরল ইফার। নিঝুম পিছন ফিরে বলল, “আমি তো ভেবেছিলাম মনব্রত রেখেছিস!

“তুই ঠিক কি করতে চাস বলতো?

“অনেক কিছু!

“শান্ত ভাইয়াকে ভালোবাসিস!

নিঝুম খানিকক্ষণ ভেবে বলল, “ভালোবাসি আবার বাসিও না। কিন্তু এটা সিউর অশান্ত আমায় ভালোবাসে।

হেসে কথাটা বলল নিঝুম। ইফা ঠোঁট কামড়ে কামড়ে ধরে রাখল। নিঝুম বলে উঠল, “তুই আর আমি একটা যু*দ্ধে নেমেছি ইফা।‌ সেই যু*দ্ধের প্রতিধাপে তোকে টেক্কা দিয়ে চলছি আমি। হেরে যাবি তুই!

“চ্যালেঞ্জ করছিস আমায়!

“এটা তো কবেই করে ফেললাম। ওই যে মনে আছে, ছাদ থেকে ফে*লে দি*লি আমায়। সব তো ওখান থেকেই শুরু ‌

“তুই সবাইকে গিয়ে বলে দিচ্ছিস না কেন?

“বলে কি লাভ। আমি তোকে একটু একটু করে আড়াল থেকে ক*ষ্ট দেবো, আর‌ তুই আড়ালেই ক্ষতবিক্ষত হবি। মনে করিয়ে দেই, যেভাবে আমাকে আর অশান্ত কে বন্ধুতের আড়াল থেকে ধোঁকা দিয়ে গেছিস আমিও সেভাবে তোকে সামনাসামনি ধোঁকা দেবো। মজার ব্যাপার তুই না পারবি সইতে, না পারবি কাউকে বলতে।

“তুই ভুল করছিস নিঝুম। ইফার এক চালে মাত করে দিতে পারে তোকে।

“তাই নাকি, চল! তোকে আমি বলি সেই রাতে কি হয়েছিল। মনে আছে , সেই রাতে বৃষ্টিতে আমি আর অশান্ত উধাও হয়ে গেছিলাম। তুই তো নিশ্চিত খেয়াল করেছিস, করেস নি। তোকে বলি শোন, আমি আর অশান্ত একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি। বৃষ্টি বিলাস বলতে পারিস। রোমান্টিক… ( বাকি কথা না বলে মুখ টিপে হাসল নিঝুম )

ইফা’র ঠোঁট কাঁপছে। নিঝুম খেয়াল করলো তার হাতও কাঁপছে। নিঝুমে‌র চোখ টলটল করছে। কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে আরো কাছে এসে বলল , “ইফা, তুই আমার বন্ধুত্ব দেখেছিস, শত্রু*তা দেখেসনি। তুই যা করেছিস এর ফল তোকে পেতেই হবে। মনে রাখিস!

নিঝুম এগিয়ে এলো। ইফা চোয়াল শক্ত করে বলল, “কি করবি তুই?

নিঝুম হাসল। সামনে তাকিয়ে দেখল শান্ত, আহনাফ, তানিশা ওরা সবাই দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। নিঝুম পেছন ফিরে বলল, “ট্রেইলার দেখতে চাস!

ইফা ভ্রু কুঁচকালো। নিঝুম খানিকটা এগিয়ে গেল। অশান্ত বলে চেঁচিয়ে উঠলো। শান্ত হতচকিয়ে তাকিয়ে আছে। নিঝুম হেসে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। শান্ত হতবাক, হতভম্ব, হতবুদ্ধি’র মতো দাঁড়িয়ে রইল। আহনাফ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, বাকি সবার চোখে রয়েছে বিস্ময়। নিঝুম এতোক্ষণ অশান্ত’র বুকে মুখ লুকিয়ে ছিল। এবার মুখ তুলে তাকাল সে। তানিশা চেঁচিয়ে বলে উঠল, “এ কি করছো তুমি!

নিঝুম দাঁত বের করে হাসল। মুখ ফিরিয়ে তাকাল পিছনে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইফা। নিঝুম তাকে চোখ টিপ মারতেই হন হন করে চলে গেল সে। দিয়া ছুটে এসে নিঝুম কে সরালো। তিথি এসে নিঝুমের হাত ধরে বলল, “ঠিক আছিস তুই!

“হুম ঠিক আছি?

“এই মেয়ে এটা কি করলে তুমি?

“কিছু না, ডেয়ার ছিল সেটাই করলাম!

আহনাফ বিস্মিত কণ্ঠে বলল, “ডেয়ার!

“হ্যাঁ ,একজন বলল যে কোন একটি ছেলেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরো, আমিও এসে ধরলাম। ডেয়ার ডান!

আহনাফের চোখে মুখে এখনো বিস্ময়। শান্ত তো ঘোরের মধ্যেই আছে। নীলাভ্র শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “আমি ভাবলাম কি না কি?

তানিশাও বলে উঠল, “তাই বলে শান্ত কেই ধরতে হলো।

নিঝুম দুই হাত কোমরে রেখে বলল, “ডেয়ারে অশান্ত কি আর আহনাফ কি তাই না আহনাফ!

আহনাফ হতচকিয়ে বলল, “হ্যাঁ মানে..

নিঝুম হেসে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম দাঁত কেলিয়ে বলল, “মনে আছে সেই ডেয়ার। সেই রাত, সেই ছাদ, রাত ধরা, প্রোপ…
আহনাফ খুক খুক করে কেশে উঠল। নিঝুম মুখ টিপে হাসল। সন্দেহের চোখে তাকাল তানিশা। শান্ত ঢোক গিলে তাকাল আহনাফের দিকে। চঞ্চল চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ‌। নিঝুম ঠাস্ করে তার মাথায় বারি মেরে বলল, “আরে ঠিক আছেন আপনি!

শান্ত হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমায় মা*রলে!

“মার*লাম কোথায় জিজ্ঞেস করছি!

চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “আহনাফ আপনি এতো হতচকিয়ে আছেন কেন?

“না কিছু না, কিন্তু তোমার আজ কি হলো?

“তেমন কিছুই না। এই একটু বোর হচ্ছিলাম আর কি!

“কি উদ্ভট কান্ড কারখানা করো তুমি!

—-

শান্ত’র দুচোখ খুঁজছে নিঝুম কে। কোথায় গেল এই মেয়ে, খানিকক্ষণ আগেও তো এখানেই ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল নীলাভ্র’র সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। শান্ত বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও নিঝুমের নজরে এলো না। এদিকে নীলাভ্র আর নিঝুম বারবার হেসেই চলছে। শান্ত দ্রুত তার ফোন বের করে কল করলো নিঝুম কে। নিঝুম সরাসরি কলটা কেটে দিল। শান্ত চোখ কপালে, নিঝুম কিভাবে পারল এটা করতে। শান্ত মেসেজ টাইপ করছে,

“এই চশমিশ, এইইই, কল ধরো আমার। ডান দিকে তাকাও তোমার।

মেসেজ চেক করে ডান দিকে তাকাল নিঝুম। তবুও পাত্তা না দিয়ে কথা বলতে লাগল নীলাভ্রের সাথে। শান্ত আবারো টাইপ করছে, “সমস্যা টা কি? ইগনোর করছো আমায়। কথা বলছো না কেন? কি হলো কি তোমার?

নিঝুম মেসেজ চেক করলো‌। এবারও পাত্তা দিল না শান্ত কে আরো বরং সে নীলাভ্রের সাথে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। শান্ত রীতিমতো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের পথচলা দেখছে।

ভার্সিটির গেট থেকে বের হতেই শান্ত ছুটে এসে দাঁড়াল নিঝুমের সামনে। নিঝুম হেসে বলল, “আপনার অপেক্ষায় করছিলাম?

“তুমি আমার কল কেন কেটে দিল।

“সামনেই তো ছিলেন, খামোখা ফোনের টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয়!

“মেসেজের রিপ্লাই কেন দিলে সে?

“বললাম তো সামনেই ছিলেন।

শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “নীলাভ্রের সাথে হাঁটতে কেন গেলে?

“এই তো, এতোক্ষণ পর বলেছেন ঠিক একটা কথা।

“মজা নিচ্ছ? তুমি সবার সামনে আমায় জড়িয়ে কেন ধরলে?

“ইচ্ছে হয়েছিল তাই!

“তোমায় কেন ডেয়ার দেই নি তাই না।

নিঝুম মাথা নেড়ে না করল। হেসে চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “এতো হাইপার কেন হচ্ছেন?

“তোমার মতিগতি আমার মোটেও ঠিক লাগছে না। এই বলছো ভালোবাসো আমায় , অথচ আমায় পাত্তা দিচ্ছ না।

“ভালোবাসি বলেছিলাম নাকি!

“চশমিশ!

“তো ভুলে যান না, সেদিন কি বলতে কি বলেছিলাম! এসব মনে রাখতে আছে।

“চশমিশ তুমি এভাবে বলতে পারো না। তুমি আমায় সেদিন ভালোবাসি বলেছিলে, কি বলো নি।

“হ্যাঁ বলেছিলাম, তো আপনি! আপনি কি করেছিলেন?

মুখের রঙ বদলাতে শুরু করল নিঝুমের। শান্ত খানিকটা থমতম গেল। রাগে ফুঁসছে নিঝুম। চেঁচিয়ে তেড়ে এসে বলল, “তখন আপনি কি করছিলেন বলুন, কি করেছিলেন।

শান্ত ধীরে ধীরে বলল, “আশেপাশে মানুষজন!

নিঝুম থেমে গেল। দেখা গেল রাস্তার লোকজন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম নিজেকে সংযত করল। শান্ত তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসাল। নিঝুম জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। শান্ত নিজের সিটে বসে পানিল বোতল এগিয়ে দিল। ঢকঢক করে পানি খেল নিঝুম। অতঃপর বিস্ফোরিত চোখে শান্ত’র দিকে তাকাল। চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “বলুন কি বলছিলেন?

“কিছু না!

“কিছু না মানে? ও হ্যাঁ বলছিলাম তো আমি। তো কি যেন বলছিলাম, মনে পড়েছে। আপনি কি করছিলেন তখন বলুন। আমি ভালোবাসার কথা বলেছি আপনি জবাব দিয়েছিলেন!

শান্ত হতভম্ব হয়ে মাথা নেড়ে না করছে। নিঝুম হেসে বলল, “বাহ, উদ্ধার করেছেন আমায়!

“রেগে যাচ্ছ কেন?

“রাগবো না আমি, না রাগবো না। রাগবো কেন আমি। আপনি যদি উওরে কিছু নাই বলে থাকেন এতে আমার কি? আবার যদি সেই কথাটাই আমার মনে করিয়ে দিতে হয় তাতেই বা আমার কি?

সবটা বোধহয় এবার পরিষ্কার হলো শান্ত’র কাছে। শান্ত ঠোঁট কামড়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তার দৃষ্টি এবার বাইরের দিকে। নিঝুম সামনে এসে শান্ত’র গাল দুটো চেপে ধরে বলল, “শুনুন মিঃ বোকা অশান্ত! আপনি যদি এখনো চুপচাপ বসে থাকবেন তো ভেবে থাকেন, তাহলে কান খুলে শুনুন। দুদিন সময় দিচ্ছি, কিছু করুন, আমার রাগ ভা*ঙান নাহলে যে কোন ছেলে দেখে তার গলায় ঝুলে পড়বো। বুঝলেন!

“এটার মানে কি?

“সেটাই যেটা শুনলেন। আল্লাহ হাফিজ।

“আরে কিন্তু!

নিঝুম কিছু শুনল না। হন হন করে বেরিয়ে পড়ল সে। কি আজব! অশান্ত তার রাগ টাই বুঝল। এই অশান্ত শুধু বোকা না, মাথা মোটাও। হুহ!

#চলবে….

Mimi Muskan
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here