তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ১৫

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

১৫.

টিভির পর্দায় একটা নিউজ শুনে শরীরে কাটা দিয়ে উঠল ফারাহ্’র। সন্ধ্যা সাত টার খবর। ‘ বিশিষ্ট শিল্প ব্যবসায়ী আমজাদ শরিফের একমাত্র ছেলে আকিবুর বুরহান গাড়ি এ’ক্সি’ডে’ন্ট ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এতটুকু শুনে কেঁপে উঠে ফারাহ্ আমজাদ শরিফ কে বিশিষ্ট শিল্প ব্যবসায়ী হিসেবে ও চিনার আগে চিনতো। ওর বড়বাবার মিত্র হিসেবে। আর আকিবুর বুরহান মানে আকিব নামে চিনে যাকে সে নাহিয়ানের ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল। ওদের পারিবারিক ভাবেই পরিচিত হয়। তার পর একই স্কুল , কলেজ এবাই বন্ধুত গাড় হতে থাকে। মাঝ খানে কিছু নিয়ে ভেজাল হওয়ায় কেউ কার‍্য সাথে কথা বলে নি আর। মাথাটা প্রচন্ড ঝিম ধরে আছে ফারাহ্’র। হুট করেই ঝিমঝিম করছে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সোফা থেকে উঠে রুমে গিয়ে বেডে গা এলিয়ে দিতেই ঝিমঝিম ভাব কিছু টা কমল। দুপুরে না ঘুমানোর জন্য হয় তো এমন ঝিমঝিম করছে। ভোর সন্ধ্যা মেয়েকে ঘুমাতে দেখে অবাক হলেন সুফিয়া হানজালা। যদি ও এটাকে সন্ধ্যা ও বলে না। তার পরে উনি কিছু টা ক্ষু’ব্ধ হলেন। মেয়েটা দিন দিন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে।

” ফারু মা এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস কেনো? ”

মায়ের ডাকে চোখ মেলল ফারাহ্। লাল টকটকে চোখ জোড়া দেখে ঘাবড়ালেন সুফিয়া হানজালা। চট জলদি মেয়ের ললাটে হাত ছোঁয়ালেন। উত্তাপে হাত সরিয়ে নেন উনি। জ্বরে কাবু হয়ে আছে মেয়েটা। উনি চকিতে ডাক দিলেন ফাতেহ কে।

” ফাতেহ শুন ফারাহ্’র রুমে আয়। ”

ডাকার কিছু ক্ষণ পর ফাতের আগমন ঘটল রুমে। ভিজা হাত খানা গামছায় মুছতে মুছতে বলল ,

” কিছু লাগবো সুফি বইন। ”

” জলদি আমাদের পপিকে বল মিরাজ কে কল দিয়ে আসতে বলতে আর না পারলে কোনো ডাক্তার কে পাঠাতে। ”

” কেনো? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? ”

” আরেহ আমার নয় ভাই , ফারাহ্’র জ্বর এসেছে। ”

” কি কও আমি এক্ষুনি যাইতাছি। ”

ফাতেহ ছুটল ডাক্তার কে কল দেওয়ার জন্য। সুফিয়া হানজালা এসি অফ করে দিয়ে পাখা অন করলেন। হালকা বাতাসে চলছে পাখা। উনি একটা বাটিতে পানি এনে রুমাল ভিজিয়ে মেয়ের কপালে জ্বর পট্টি দিতে থাকেন। ইতি মধ্যে পুরো বাড়ি খবর হয়ে গেছে ফারাহ্’র জ্বর এসেছে। সবাই হন্যছাড়া হয়ে পড়ল। অসময়ে জ্বর আসায় কম বেশি সবাই ভ’য় পাচ্ছে।
.
সারাফাত ইন্ডাস্ট্রি , মিটিং রুমে বসে আছে নাহিয়ান। মুখে বিজয়ের হাসি। তার পাশে বসা মিরাজ কিছু টা নুয়ে আছে। আজকে সকালে কি দেখে ঘুম ভেঙে ছিল কে জানে। সকাল থেকে একটার পর একটা ধামাক্কা পাচ্ছে সে। নিরবতা ইফতেখার সারাফাত মুখ খুললেন ,

” আকিবুর বুরহান তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাহিয়ান। ”

চোখ তুলে জন্মদাতা পিতার দিকে সাবলীল দৃষ্টিতে চাইলো। বরাবরই গম্ভীরতা মুখ টা দেখতে পায় সে। প্রতুত্তরে জবাবে বলল ,

” ছিল। ”

” এখন নেই? ”

” না। ”

” কি এমন হয়ে ছিল যার জন্য বন্ধুত্ব নামক সম্পর্ক টার অন্তিম টানলে? ”

কিছু বলল না নাহিয়ান। নির্বকারছন্দে উঠে দাঁড়ালো। মিটিং রুম ছাড়ার আগে আফজাল সারাফাত , এহসান সারাফাতের দিকে একপলক চাইলো সে। মিরাজ প্রলম্বিত শ্বাস চেপে বলল ,

” আমি ও উঠি তাহলে? ”

জানিয়ে বের হয়ে আসে। ও জানে এখন সব প্রশ্ন উত্তর ওকেই দিতে হবে। যা দিতে চায় না সে। কিছু কিছু কথা আড়াল থাকা শ্রেয়। প্যান্টের প্যাকেট থেকে মুঠোফোন বের করে অবাক হয়ে তাকালো। পপির পনেরো প্লাস কল। পপি লাজুক স্বভাবের মেয়ে। প্রয়োজনের বাহিরে ওকে দুইটা কলের বেশি দেয় না আজকে পনেরো টা কল দেখে অতি বিস্মিত সে। দ্রুত কল ব্যাক করল। কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।

” আজকে এত বার কল দিলে যে কোন সমস্যা? ”

” ছিল এখন নেই। ”

পপির গলার স্বর মৃদু কাঁপছে। অস্থিরতায় ভুগছে মেয়েটা। মিরাজ আবার জিজ্ঞেস করে বসল ,

” কি হয়েছে বলো? ”

” কিছু না বাসায় আসলে এমনি জানতে পারবেন। ”

বলেই কল কেটে দিল পপি। মিরাজ কিছুসময় থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। হাস্পাতালের যাওয়ার উদ্দেশ্যে থাকলে ও আর ওই দিকে গেলো না। গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা হল।

_____

মাথা ঝিমঝিম করা আগের তুলনায় আরো বেড়ে গেছে ফারাহ্’র। চোখ মেলতেও কষ্ট হচ্ছে। শরীর অবশ বিষাদে লিপ্ত। অসহনীয় ব্যথা করছে। গলা শুকিয়ে কাষ্ঠ। যেনো কত কাল পানি মিলে নি। তেষ্টা মেটানো প্রয়োজন। কোনো রকম ঢোক গিললে গিয়েই ব্যা’থা কুঁকড়ে উঠল। ঘোলাটে দৃষ্টিতে পুরো রুম চোখ বুলালো। কেউ নেই রুমে। হয়তো ওকে ঘুমাতে দেখে চলে গেছে। উঠার শক্তি নেই। নিস্তেজ হয়ে এসেছে শরীর টা। ফের চোখ বুজে নিল। টিক টিক করে ঘড়ির কাটা ঘুরছে। এক ঘন্টা ফেরিয়ে গেলো। মিরাজ বড় বড় পা ফেলে ফারাহ্’র কাছে এলো। বুক ধড়ফড় করছে। তার বোন অসুস্থ হয়ে বেডে পড়ে কাতরাচ্ছে আর ও’ ‘ও ডাক্তার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জ্বর মেপে দেখল ১০৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিছু ঔষধের নাম লিখে দিয়ে ফাতেহ কে বলল ,

” ফাতেহ মামা ঔষধ গুলো নিয়ে আসো , আর একটা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট। ”

” আচ্ছা আমি এক্ষুনি যাইতাছি। ”

সুফিয়া হানজালা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন ,

” প্রেগনেন্সি কিট! কেনো আনতে বললি? ”

” মম দো’আ করো এমন কিছু যাতে না হয়। ফারাহ্ কে দেখে এটা আশঙ্কা হচ্ছে। যদি এমন কিছু হয় নাহিয়ান কি করবে আমি ভেবে পাচ্ছি না। ”

সুফিয়া হানজালার মনে ও ভয়ের দানা বাঁধল। গ্রামের যাওয়ার আগের দিন রাতে নাহিয়ানের বলা কথা গুলো ভিতরে ভিতরে ধলা বেঁধে যাচ্ছে। নাহিয়ান ফারাহ্ কে হারাতে চায় না। তারা পর এই মেয়েটা কে নিয়ে সে বেঁচে আছে। ফাতেহ ঔষধ আর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট নিয়ে আসার কিছু ক্ষণ পর পপি এসে মিরাজ কে জানালো ,

” পজেটিভ। ”

দু’হাত দিয়ে মাথা চেঁপে ধরল মিরাজ। ওর তো খুশি হওয়ার কথা তাহলে হতে পারছে না কেনো? সারাফাত ফ্যামিলিতে একটা নিয়ম আছে। বিয়ের সাথে সাথেই প্রেগনেট হতে হবে এমন কথা নয়। পড়া লেখা চলা কালিন তো নয়ই। ফারাহ্ এখন ও ইন্টের সেকেন্ড ইয়ার। এখন অনেকেই বলবে এই বয়সে একটা মেয়ে দুই টা বাচ্চার মা হয়ে যায়। এদিকে ফারাহ্ ও ধকলে আছে। ঔষধের প্রভাবে জ্বর কমে গেল ও। দূর্বলতা কাটে নি। এখন আবার ভ’য় টা ঝেঁকেছে মনে। নাহিয়ানের কড়া কথা ছিল অনার্স শেষ করার আগে বেবি না নেওয়ার জন্য আর ও কি করেছে। না জানি ছেলেটা যখন জানবে তখন কি করে বসে। রাত প্রায় দশ টা নাহিয়ান এলোমেলো পা ফেলে বাসায় ডুকে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসল। ফুল এসে কফি দিয়ে যেতে নিলেই নাহিয়ান প্রশ্ন করে ,

” ফারাহ্ কোথায়? ”

ফাতেহ সংকোচ করে উত্তর দিল ,

” রুমে। ”

বলেই এক ছুটে কিচেনে চলে গেল। ফুল ও মিষ্টি হেসে কিচেনে চলে যায়। ভ্রু কুচকালো নাহিয়ান। আসার পর থেকেই একটা বিষয় খেয়াল করল। সবাই কেমন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আকষ্মিক গম্ভীর সুরে বলল ,

” আমি বা’ঘ ভা’ল্লু’ক নাকি এমন বিহি-বিহেভ করছো কেনো? ”

সকলে নিশ্চুপ। নাহিয়ান সবার দিকে এক নজর চেয়ে গিয়ে থামল শামীমা আখতারের দিকে। উনি কিছু টা ধা’ক্কা খেলেন। ছেলের প্রশ্নের উত্তর উনাকে দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে বলবে? ফুল চট জলদি বেল ফেলল ,

” ভাইজান আপনি বাপ হইতে যাচ্ছেন। ”

আচমকা ফুলের মুখে এমন কথা শুনে বিশ্বাস করল না নাহিয়ান। সে মনে মনে আওড়াচ্ছে ও খুব সতর্ক ছিল। হুট করে বাপ হওয়ার কথা পাত্তা দিল না সে। সবাই আ’তংকি’ত। ফুল হেসে হেসে আবার বলল ,

” ভাইজান আপনি খুশি হন নি? ”

এবার টনক নড়ল নাহিয়ানের। কেউ মজা করলে একবার বলে দুই বার নয়। আর ফুলের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না মজা করছে। দ্বিধা কাটানোর জন্য বলল ,

” ফুল কি সত্যি বলছে? ”

সবার মুখ থমথমে। মিরাজ মাথা নিচু করে বসার ঘর ত্যাগ করল। মিনা আরাফা ও হাঁসফাঁস করে চলে গেলেন কিচেনে। বাকিরা না যেতে পারছে না দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে এই অবস্থা। শামীমা আখতার গ’র’ম চোখে ফুলের দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটা কে পরে সব বুঝিয়ে বলতো কেউ। হুট হাট এখন বলে পরিস্থিতি বি’গড়ে তুলল।

” আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি! ”

চেঁচিয়ে উঠল নাহিয়ান। কন্ঠ ক্রোধান্বিত , তেজ অতিরিক্ত জিদ্দের সাথে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে উপস্থিত সবার পানে। সুফিয়া হানজালা মাথা ঝাঁকালেন। মানে , সত্যি। ধপ করে আ’গু’ন জ্বলে উঠল নাহিয়ানের। এমনিতেই মাথা গ’র’ম তার। এর পর এখন আরেক কাহিনি। যা চায় না শুধু তাই ঘটে ওর সাথে। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়ে। হঠাৎ চুল ছেড়ে ফ্লোরে ডান হাত দ্বারা সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ঘুষি মারলো। নাহিয়ানের পা’গ’লা’মো দেখে অতি দ্রুত এগিয়ে গেলেন শামীমা আখতার ছেলে কে টেনে তুলে ক’ড়া সুরে বললেন ,

” কি করছিস তুই পাগল হয়ে গেছিস? ”

নাহিয়ান আরো দ্বিগুণ ক্রোধের সাথে শব্দ করে আওড়ালো ,

” হ্যাঁ পা’গ’ল হয়ে গেছি আমি। মম ওই মেয়েটা কি জানে না এখন ওর মা হওয়া বারণ। আই নৌ এই বয়সে অনেক মেয়ে মা হয়। কিন্তু ওদের সাথে ওর জীবন আলাদা। ওকে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তার পর গিয়ে বেবি নেওয়ার কথা বলে ছিলাম আমি। তোমরা সবাই জানো এটা। আরেহ্ ওর আগে তো মিরাজ , পপির বিয়ে হয়েছে। মম আমি সত্যি আর নিতে পারছিনা। যাকে আগলে বাঁচতে চাই সেই ছেড়ে চলে যায়। ”

সুফিয়া হানজালা , শামীমা আখতার কেঁদেই দিবেন এমন চেহারা হয়ে গেছে। সদর দরজা দাঁড়ানো আফজাল সারাফাত , ইফতেখার সারাফাত , এহনাস সারাফাত থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন। সবার একই অবস্থা। খুশি হতে গিয়ে ও পারছেন না। কোথাও বাঁধা পড়ে আছে।

________

কেটে গেল ৪৯ ঘন্টা। দুপুর একটা ‘র ঘরে ঘড়ির কাটা। বিষন্ন মন নিয়ে বসে রইল বেডের উপর ফারাহ্। এখন ও পর্যন্ত নাহিয়ানের সাথে দেখা মিলে নি ফারাহ্ ‘র। আচ্ছা নাহিয়ান কি খুশি হয়েছে? ওর মন বলল না হয় তো হলে একবার হলে ও ওর সাথে দেখা করতে আসতো। নেত্রী যুগোল জ্বলে উঠে মুহূর্তে। ও কি ভুল কিছু করেছে? আবার কি আসতে চললো ওদের সম্পর্কের মধ্যে! ভেবেই বড়সড় একটা শ্বাস চাপল। আকষ্মিক ,

” তুই ইচ্ছে করেই এমন করেছিস না! ”

বোকা চোখে তাকালো ফারাহ্ নাহিয়ানের দিকে। ও কি করেছে? আজকে তো না বাড়ি থেকে বের হয়েছে না বাড়ির ভিতরে কোন দু’ষ্ট’মি করেছে তাহলে কিসের কথা বলছে নাহিয়ান? প্রশ্নতাক্ত চাহনীতে চেয়ে আছে প্রাণপ্রিয় মানুষটির পানে। প্রায় দুই দিনের মাথায় লোকটার দেখা মিলল। কন্ঠ স্বর শুনলো। অতঃপর ধীর গলায় বলল ,

” আমি কি করেছি? ”

” ন্যাকা সাজচ্ছিস তুই ইচ্ছে করেই কন্সিভ করেছিস না। ”

” আমি __”

পুরো কথা বলতে যাবে তার আগেই নাহিয়ান হুং’কা’র ছেড়ে বলল ,

” কেনো আমার সাথে এমন হয় কেনো? কেনো আমাকে কেউ বুঝে না? এক এক করে সবাই চলে যা সবাই। খুব কম ভালোবেসে ছিলাম তারা কে সে এখন আকাশের তারা হয়ে গেছে। না ও হারিয়ে যেত আমার জীবন থেকে না আজকে এমন একটা দিন দেখতে হ__”

এক পর্যায় গিয়ে থেমে যা নাহিয়ান। রা’গের বশে কি থেকে কি বলছে ও। মাথা চেঁপে ধরে চোখ বন্ধ করে নিল। কিছু ক্ষণ পর আঁখি জোড়া মেলে সামনে থাকা রমণীর দিকে তাকালো সে। ওর প্রিয়াসীর নেত্র যুগোল টলমলে। হয় তারা কথা এখন এই মূহুর্তে আশা করে নি। নাহিয়ান হাত বাড়িয়ে ফারাহ্ কে ছুতে যাবে তখনই কয়েক পা পিছিয়ে গেল ফারাহ্। নাহিয়ান কিছু বলার আগেই ফারাহ্ ভেজা কন্ঠে বলল ,

” কোন সাইফাই গাইতে হবে না আপনাকে , আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। ”

দ্রুত পদে রুম থেকে বের হয়ে আসে ফারাহ্। ও ভেবে ছিল যতই হোক নাহিয়ান বেবি আসার কথা শুনে খুশি হবে। ওকে পরম আবশে আগলে নিবে বক্ষপিঞ্জরায়। কপলে উষ্ণ ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলবে ,
‘ ভীষণ ভালোবাসি আমার ফারাহ্ মনি কে৷ আমি খুব খুশি হয়েছি তুই আমার জীবণের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ’

নিজের নিচক ভাবনায় কেঁদে দিল ফারাহ্ তার স্বামী যে এখন তার প্রনক্তাকেই ভালোবাসে। হুট করে মাথা ঘুরে উঠে। ভাবলো নিচে গিয়ে একটু লেবুর শরবত খেয়ে নিবে। যদি একটু ভালো লাগে তো। আগোছালো পায়ে হাঁটতে গেলে ঠাস করে পড়ে যায় শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে। সিড়ি দিয়ে ফারাহ্ কে গড়ি পড়তে দেখে মুহূর্তে থেমে যায় ইফতেখার সরাফাত। স্ব-জোড়ে চেঁচিয়ে বললেন ,

” ফারাহ্ ! ”

_

কয় ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছে জানা নেই ফারাহ্ ক্লান্ত শরীর টা নাড়াতে ও পারছে না। অবশ হয়ে আছে। আধো আধো চোখ মেলে তাকালো। সাথে সাথে ভিতরের টা আ’তং’কে উঠল। ও হাসপাতালে কেনো? বাড়ির সবাই উপস্থিত ওর ক্যাবিনে একে একে সবার উপর চোখ বুলালো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। শামিমা আখতার মুখে কাপড় গুজে হালকা শব্দ করে কাঁদছেন। সুফিয়া হানজালা নীরবে কাঁদছে। বাকিদের মুখ মলিন। মিরাজে পিছনে ডিভানের উপর নতজানু হয়ে বসে আছে নাহিয়ান। চুল গুলো উশখুশ , চেহরা ফ্যাকাসে। শার্টের অবস্থা বেহাল। সকলের নিরবতা দেখে ফারাহ্ পেটের উপর হাত রেখে অস্ফুটে স্বরে আওড়ালো ,

” আমার বেবি ঠিক্ আছে তো? ”

নাহিয়ানের বুকে ছু’ড়ির মতো আঘাত করেছে ফারাহ্ কথা গুলো। ভুলে ও ফারাহ্ চোখে চোখ মেলাচ্ছে না। মিরাজ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে হন্য হয়ে ক্যাবিন ত্যাগ করে। ফারাহ্ সবার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাচ্ছে কেউ কিছুটি বলছে না ওকে। তখনই ডাক্তার এলো ফারাহ্ কে দেখে ভরসা গলায় বললেন ,

” চিন্তা করো না আল্লাহ যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন। ”

ডাক্তার চলে যেতেই ফারাহ্ চিৎকার করে বলল ,

” কেউ কিছু বলছো না কেনো আমার বেবির কিছু হয় নি তো? ”

সানজিদা নাহিয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ফারাহ্ উত্তর কি দিবে ভেবে পাচ্ছে না। একে একে ওরা সবাই ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়। ফারাহ্ যা বুঝার বুঝে গেছে পেট থেকে হাত সরিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল। নাহিয়ান এসে ফারাহ্ পাশে বসে শোয়া অবস্থায় ফারাহ্ কে জড়িয়ে ধরল। হুট করে ফারাহ্ থেমে যায় নাহিয়ান কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল। অশ্রু শিক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। নাহিয়ান বিমূঢ়। ফারাহ্’র মুখ ফিরানো দেখে হৃদপিণ্ডে গিয়ে আঘাত করল। ও’ কি হারিয়ে ফেলবে ফারাহ্ কে ও। নিয়তি কি খেলা খেলছে ওর সাথে?

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here