তোর নামেই এই শহর পর্ব -০৩

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_০৩

(৭)

সকালের সোনালী রোদ পুকুরের পূর্বকোণে দাঁড়িয়ে থাকা জারুল গাছের ডগায় এসে পড়ছে।তার কিছুটা দূরেই পাতাবিহীন শিমুলগাছ তার কাটা যুক্ত ডালপালা মেলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।ঢালে ঢালে লাল টুকটুকে শিমুল ফুল কুড়ি মেলে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন জানান দিচ্ছে।
রাস্তার দিক থেকে দৌড়ে এসে হাটুতে হাতের ভর দিয়ে হাঁফাতে থাকে ইয়াদ। কপাল থেকে অঝরে ঘাম ঝড়ে পড়ছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই মাত্র জগিং করে ফিরেছে। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে। গলায় ঝুলে থাকা তোয়ালে দিয়ে চুল আর কপাল বেশ ভালো করে মুছে বাড়ির দিকে ফিরবে বলে মনস্থির করে। কয়েকদম এগিয়ে যেতেই সে দেখলো হুরায়রা পুকুরের দিকে ঝুঁকে কিছু একটা করছে। খোলা চুল গুলো পিঠ ছড়িয়ে কোমরের নিচে নেমে এসেছে। সামনের কয়েক গোছা চুল মুখের একপাশ ঢেকে রেখেছে ইয়াদ গভীর দৃষ্টিতে বেশ খানিকটা সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকলো। এই মুহূর্তে হুরায়রাকে তিলোত্তমার চেয়ে কম কিছু মনে হচ্ছে না তার। পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য যেন বিধাতা তাকেই দিয়ে দিয়েছে। ইয়াদ সহসা সেদিক থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না তবুও অনিচ্ছাকৃত ভাবেই সরিয়ে নিলো।

শানবাঁধানো পুকুর ঘাটের শেষ সিঁড়িতে বসে কয়লা দিয়ে দাঁত ঘষছে হুরায়রা আর একটু পর পর পিছ পিছ করে থুতু ফেলছে। কাজটা সে খুব উৎসাহ নিয়েই করছিলো কারন তার দাদী বলেছেন মাঝে মাঝে কয়লা দিয়ে দাঁত ঘষলে দাঁত চকচকে হয়। প্রায় সকালেই হুরায়রা চুপি চুপি তার দাদীর ঘরে ঢুকে কয়লার শিশিটা থেকে কিছুটা কয়লা সরিয়ে পুকুর ঘাটে চলে আসে।
কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতে বেশ লাগে তার। যদিও এই ভালো লাগাটা অনেকের পছন্দ না বিশেষ করে মায়ের। তবুও হুরায়রা মাকে লুকিয়ে প্রায় সকালে কাজটা করে।
“পেটে কি কয়লা নিয়ে ঘুরিস যে রোজ সকালে কয়লা বমি করিস।”

পানিতে পা ডুবিয়ে আঁজলা ভরে পানি মুখে তুলে নিচ্ছিলো হুরায়রা। পেছন থেকে ইয়াদের কণ্ঠস্বর কর্ণকুহর হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে। তার থেকে কয়েকটা সিঁড়ি ব্যবধানে বসে আছে ইয়াদ। ইয়াদকে দেখেই মুখ থাকা পানি ছেড়ে দিলো হুরায়রা।
“আবার তুই কয়লা চুরি করেছিস হুর?”
ইয়াদের কথায় গাল ফুলায় হুরায়রা। এই লোকটা যখন তখন যা খুশি বলে ফেলে। বেশ অভিমান হয় তার। অভিমানে সে গালটা আরেকটু ফুলিয়ে বলল,
“বারেহহ চুরি করতে যাবো কেনো? কয়লা কি চুরি করার জিনিস হলো নাকি?”
“ওহ তাই বুঝি? তা রোজ সকালে যে পা টিপে টিপে নানীর ঘরে ঢুকে এই মহান কার্যটি সম্পন্ন করিস সেটা কি তিনি জানেন?”

এইবার হুরায়রা একেবারে ভড়কে গেলো। সে যে প্রায় সকালে দাদির ঘরে ডুকে কয়লা চুরি করে সেটা ইয়াদ কি করে জানলো ভেবেই কাছুমাছু করতে লাগল।
“আমি সব জানি এবং দেখি। তুই কি ভেবেছিস তুই কখন কি করবি আর সেটা আমি জানবো না?”
“মা-মানে?”

“তোকে এত মানে বুঝতে হবে না। আর শুন আজকের পর থেকে কখনো কয়লা দিয়ে দাঁত মাজবি না, না হয় তোর দাঁত আমি ভেঙে ইঁদুরের গর্তে ছেড়ে দিবো।”
হুরায়রা দম বন্ধ করে একটা ফাঁকা ঢোক গিলল। ইয়াদ যে এমন কাজ করবে না এই বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। কে জানে হয় তো এক্ষুনি তার দাঁত দুটো ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিলো।

ইয়াদ একেবারে উপরের সিঁড়িতে বসে কথাগুলো বলছিলো। পরে উঠে কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে হুরায়রার পাশে গিয়ে বসলো। হুরায়রা আড় চোখে একবার তাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো। শীতকাল হওয়ার শর্তেও ইয়াদের কপালে বিন্দু বিন্দু গাম জমেছে। যেটা কিনা তার সৌন্দর্যকে আরো কয়েকশো গুন বাড়িয়ে তুলেছে।হুরায়রার ইচ্ছা হলো ইয়াদের কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো নিজ শাড়ির আঁচলে মুছে দিতে কিন্তু সাহস হলো না তাই নিজের অদম্য ইচ্ছাটাকে সে মনের মাঝে দমিয়ে রাখল।

ফাল্গুনের দক্ষিণা হওয়া বইয়ছে চারপাশে ইয়াদ চোখ বন্ধ করে সেটা উপভোগ করছে। হুরায়রা অপলকে ইয়াদের মুখপানে চেয়ে আছে। একটা প্রচণ্ড ভালোলাগা তার মনের কোণে শিহরন বইয়ে দিচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাসে ইয়াদের চুলগুলো উড়ে এসে বারবার কপাল ছুঁয়ে যাচ্ছে হুরায়রা সে দিকে অবলোকন করে মনে মনে বলল,

“আপনার অবাধ্য চুলগুলোকে দেখে আজ বড্ড হিংসে হচ্ছে। কি অবলীলায় তারা আপনার ললাট স্পর্শ করে চলেছে, অবাধ্যতার সীমাহীন সাহস তারা পেড়িয়ে গেছে তবুও কোনো বাঁধা নেই। আর আমার তপ্তহৃদয় অবাধ্য হয়ে উঠেছে আপনার ললাটের এতটুকু উষ্ণ ছোঁয়া পেতে।”

“এমন বিচ্ছিরী ইচ্ছা তোর হয় কি করে? কি অশ্লীল রে তুই।”

ইয়াদের কথায় চমকে উঠে হুরায়রা। আশ্চর্যান্বিত হয়ে ইয়াদের দিকে তাঁকায় সে। এমনটাও কি হয় যে এক জনের মনের কথা অন্য জন শুনতে পায়?ভাবনায় পড়ে গেলো হুরায়রা। বরাবরের মতো ইয়াদ কি এইবারো তার মনে কথা শুনতে পেয়ে গেছে? ইশ শুনতে যদিও পায় তবে সেকি লজ্জার কথা। এতক্ষন ধরে সে কি না কি ভাবছিলো ভেবেই লজ্জায় আরক্ত হয়ে উঠলো তার মুখ। ইয়াদ ঘাড় ফিরিয়ে হুরায়রা দিকে তাঁকিয়ে আবার হো হো শব্দ করে হেসে উঠলো। হুরায়রা আরেকবার অবাক হয়ে তার দিকে তাঁকাতেই ইয়াদ বলল,

“তুই প্রচণ্ড রকমের অতিশয় ভদ্র চোর দেখছি।”

হুরায়রা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে বুঝতে পেরে সহাস্যে বলল,

“কয়লা চুরি করে দাঁত মেজেছিস তার উপর আবার সেটার প্রমাণও রেখেছিস,,,কি ভদ্র চোর হে তুই?”বলেই আরেকবার অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লো ইয়াদ।
হুরায়রা মুখ বাঁকিয়ে সামান্য পানির দিকে ঝুকে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাঁকালো। এতোক্ষণে সে ইয়াদের কথার অর্থ বুঝতে পেরে দ্রুত পানি নিয়ে ঠোঁটে কোণে লেগে থাকা কয়লা পরিষ্কার করে নিলো।
“চুরি করে প্রমাণ রাখতে হয় না এই কথাটাও জানিস না?”
“আপনি বার বার চুরি করার কথা কেনো বলছেন?”
“তবে তুই বলছিস যে তুই চুরি করিস নি।”
হুরায়রা কিছু না বলে মাথা দোলায়।

“তাহলে তুই বলতে চাইছিস এই যে কয়লা তুই নানীর সম্মতিতে তার ঘর থেকে নিয়ে এসেছিস?”
এইবার হুরায়রা মনে মনে আঁতকে উঠলো। আসলে তো সে দাদীকে বলে কয়লা আনে নি একপ্রকার চুপি চুপি দাদীর ঘরে ডুকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে।

“কি ভাবছিস এত?”

“কিছু না আপনি এখন কয়লার পেছনে পড়তে গেলেন কেনো? আর কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না বুঝি?”

হুরায়রার কথা শেষ হতেই ইয়াদ তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাঁকালো। হুরায়রা ইয়াদের এই চাহনি দেখে দমে গেলো। এই মুহূর্তে ইয়াদের মুখে মুখে তর্ক করাটা তার ঠিক হবে না বলে মনে করলো।
হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই মুখভার করে ঠোঁট ফুলিয়ে পানির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো সে। মনে মনে সে শতবার আল্লাহকে ডেকে চলেছে ইয়াদ না জানি তার কয়লা চুরির ব্যাপারটা সবাইকে বলে দেয় তাহলে তার দাদি তাকে আর আস্ত রাখবে না গোটা পানের সাথে তাকেও চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিবে।

ইয়াদ হুরায়রার দিকে তাঁকিয়ে মনে মনে একটা ছোট্ট শ্বাস ছাড়লো। পানির গভীরতার দিকে তাঁকিয়ে হুরায়রার উদ্দেশ্য করে বলল,

“তুই কি জানিস তোর রসগোল্লার মতো ফুলো ঠোঁট দুটো আমাকে প্রেমিক পুরুষ হতে বাধ্য করে?”

ইয়াদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পেরে ভ্যাবলার মতো ডেব ডেব করে তাঁকিয়ে রইলো হুরায়রা।
“এইভাবে তাঁকিয়ে থাকবি না চোখ বেড়িয়ে হাতে এসে পড়বে।”
মুহূর্তে শুকনো একটা ঢোক গিললো হুরায়রা।ইয়াদের এমন কঠিক কঠিন কথা সে বুঝতে পারে না। মাঝে মাঝে সহজ কথা গুলোও কেমন অগোছালো আর কঠিন বলে মনে হয়, হুরায়রারও তাই হলো। বলল,
“এমন কঠিন কথা না বলে সহজ করে বলতে পারেন না?”
“কঠিন কথা কি বললাম?”
“কেন এই যে এখন বললেন।”
“সব কথা তোকে বুঝতে হবে কেন? আজকাল বেশি পাঁকা হয়েছিস।”
হুরায়রা পুনরায় গাল ফোলাল। তার কাছে ইয়াদকে গোটা একটা সাহিত্য বলে মনে হয় যার আগা মাথা কিছুই সে বুঝতে পারে না।
“এইভাবে গাল ফুলোবি না পেচার মতো লাগে।”
“আমাকে কি কখনো আপনার ভালো নাগে না?”
“তোর কাছে কি এমন আলাদা আছে যে তোকে আমার ভালো লাগলতে হবে? তুই নারী আর পৃথিবীর সব নারীই একরকম আলাদা করে তোকে ভালো লাগার কি আছে।”

“আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?”
বলে কাতর চাহনিতে ইয়াদের মুখপানে চেয়ে রইলো সে। পৃথিবীতে ইয়াদের ছেয়ে কঠিন মানুষ আর দুটো আছে বলে তার মনে হয় না।

“এই এইভাবে তাঁকিয়ে থাকিস কেন চোখে কি আজকাল দেখিস না নাকি।”
এইবার ইয়াদের প্রতি সত্যি সত্যি অনেক অভিমান হলো। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“এই লোকটা কি একটু ভালো ভাবে কথা বলতে শিখেনি? জন্মের সময় ফুঁপিমা লোকটার মুখে মধু দেয় নি নাকি। আজ জিজ্ঞাস করে নিতে হবে।”
“না মধু দেয়নি তাই তো আমার মুখের কথা এত তেতো স্বাদের।”
ইয়াদের কথায় আরেকবার চমকায় হুরায়রা।
“আমি মনে মনে কি বলল সেটা উনি কি করে জানলো?

“কারন আমি তোর মনের কথা শুনতে পাই। তোর নিশ্বাসের সাথে মিশে কথাগুলো ভেসে আসে, তোর প্রতিটা নিশ্বাসে শব্দ আমি বুঝি, অনুভব করি প্রতিনিয়ত।”
“তবে এটা বুঝেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“ভালোবাসা বলতে জগতে কিছু হয় নারে পাগলি যা হয় তা শুধু ক্ষনিকের মোহ।”

হুরায়রা আর কোনো কথা বলল না। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তারপর সেখান থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইয়াদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“এখনো পড়নের কাপড়টা সামলাতে পারিস না আবার বলছিস ভালোবাসি। এই নে কাপড় সামলা না হয় বাড়ি যেতে যেতে অর্ধন/গ্ন হয়ে যাবি। পড়ে আবার আমায় দোষ দিবি আমি কেন দেখেছি।”
“ইস লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।”
বলে হুরায়রা নিজের দিকে তাঁকিয়ে জিভে কামড় দিলো। সত্যি তার পড়নের শাড়িটা প্রায় খুলে গিয়েছে। আর কিছুক্ষণ এমন থাকলে যে কি হতো সেটা ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো সে।

(৮)

ফুল ভলিউমে মিউজিক ছেড়ে পুশ আপ দিচ্ছে নাবাদ। মিউজিক এর শব্দে পুরো ঘর কেঁপে উঠছে। রোজ সকালে জোরে মিউজিক ছেড়ে ব্যায়াম করাটা তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটলো না।

ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে তিয়াশা। রোজ রোজ ভোর বেলায় নাবাদের এই মিউজিক যুক্ত ব্যায়ামের অত্যাচার অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সকাল হলে যে আর দুচোখের পাতা এক করবে সে সুযোগ নেই। নিজের রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে তিয়াশা বলল,
“এই যে মি. নাবাদ ইবতিদা আপনি কি দয়া করে প্রতিদিনের এই শব্দদূষনের অত্যাচার হতে অসহায় মেয়েটিকে রেহাই দিবেন?”

তিয়াশার কথাগুলো নাবাদের কান অবধি পৌঁছালো কিনা কে জানে। সে নিজের মতোই ব্যায়াম করে যাচ্ছে। তিয়াশা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবারো দুই একটা কথা শুনিয়ে দিলো কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো ফল হয়েছে বলে মনে হলো না তার মিউজিকের শব্দ তরঙ্গের সাথে কথাগুলো ভেসে জানালা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

নাবাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তিয়াশার রাগ মাথায় চড়ে গেলো। হনহনিয়ে ঘরে ঢুকে মিউজিক বন্ধ করে দিলো সে। মিউজিক বন্ধ হতেই নাবাদ পুশ আপ দেয়া ছেড়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো তিয়াশা তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে। তিয়াশার এমন রাগী মূর্তি দেখে নাবাদ একটা ফ্যাঁকাসে হাসি দিলো। তারপর শুকনো একটা ঢোঁক গিলে উঠে দাঁড়াল। নাবাদ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে পরবর্তী মুহূর্তে ঠিক কি ঘটতে চলেছে তাই সে আগে থেকে পুর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তিয়াশা এখনো একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। নাবাদ তার মুখের দিকে তাঁকিয়ে একটা মলিন হাসি দিলো। তারপর
“ওরে বাবারে “বলে চিৎকার করে ঘর থেকে ছুঁটে পালালো। তিয়াশা ও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়।হাতের কাছে যেটা পেয়েছে সেটা নিয়ে নাবাদের পিছু পিছু দৌড়ে গেলো।

এই নিয়ে সতেরো বার হলো নাবাদ তিয়াশার কাছে তাড়া খেয়েছে। রোজ সকালেই তার আর তিয়াশার মধ্যে তুমুলঝগড়া বাঁধে। সকাল সকাল মিউজিকের উচ্চ শব্দে তিয়াশার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এই নিয়ে সে নাবাদকে বারবার বলার পরো কোনো বিশেষ ফল হয় নি দেখেই সাপ্তাহে দুই দিন নাবাদকে তার কাছে দৌঁড়ানি খেতে হয়।

বাগানের শেষ সীমানায় পৌঁছে হাঁফাতে লাগলো নাবাদ। হাঁফাতে হাঁফাতে যেনো তার দম বেড়িয়ে আসতে চায়। পিছনের দিকে একবার তাঁকিয়ে কপালে আংগুল ঘষতে ঘষতে বলল,

“উফ কি শয়তান মেয়েরে বাবাহ। একটুর জন্য বেঁচে গেছি না হয় ওই ডাইনীর রাক্ষসীর হাতে মারা পড়ছিলাম।”

“কি বললে তুমি আমি ডাইনী রাক্ষসী? ”

“এই না না একদম না। আমি কখন তা বলাম?”

“তবে রে বজ্জাত ছেলে দাঁড়া আজ তোকে আমি দেখে নিবো।”
বলেই আবার দুজনে ছুটতে থাকে।

নাবাদ দৌড়ে ড্রয়িংরুম এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সাথে তিয়াশাও। পায়ের উপর পা তুলে ডিভানে বসে আছে অরা। তাকে দেখে তিয়াশার রাগ আবার সপ্তম আকাশে চড়ে গেলো। নাবাদকে দেখে অরা পুলকিত হয়ে উঠলো। মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলল,
“হ্যালো মি নাবাদ। গুড মর্নিং।
“মর্নিং অরা। আপনি এত সকাল এখানে?”
“স্যার আসতে বলেছেন তাই এসেছি। বাই দ্যা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো হ্যান্ডসাম। ”
“মিস অরা আপনি নিশ্চই এইসব বলতে আসেন নি এখানে।”
“ওহ নো মিস তিয়াশা আমি তো,,,। ”
“বুঝিতে পেরেছি আপনি বসুন আমি মামুকে ডেকে দিচ্ছি।”

তিয়াশা চলে গেলে নাবাদ সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। অরাকে একবার পর্যবেক্ষণ করে দেখে শেষে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। নাবাদকে চলে দেখে অরা তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“মি ইয়াদকে অনেক বার কল করেছি কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না আপনি কি জানেন তিনি কেনো আমার ফোন তুলছেন না?”

“মিস অরা আপনি ভালো করেই জানেন ভাইয়া অপ্রয়োজনে সবার ফোন তুলেন না।”

“উনার এমন কড়া এটিটিউট কেনো বলতে পারেন? বাই দ্যা ওয়ে উনি কবে আসছেন এখানে আপনারা যেই যাই বলুন মি ইয়াদ এইভাবে গ্রামে পড়ে থাকাটা মানায় না।”

“ইয়াদকে কি মানায় আর মানায় না সেটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না অরা। তোমার সাথে আমার কিছু প্রয়োজন ছিলো তাই ডেকেছি কাম হেয়ার। ”

ইশরাক ইহতেসাম এর কথায় বেশ বিরক্ত হলো অরা। সে যখনই ইয়াদকে নিয়ে কিছু বলে তখনি কেউ না কেউ এসে তাকে বাঁধা দেয়। তাই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়েও মুখে হাসি ফুঁটিয়ে ফিরে এসে ইশরাক ইহতেসাম এর সামনে গিয়ে বসে পড়লো।

“অরা ইয়াদ কিছুদিন আগে তোমাকে একটা ফাইল রেডি করতে বলেছিলো।”

“জ্বী স্যার ফাইল তো রেডি।”

“গুড।তবে,,,।”

“তবে কি স্যার?”

“ফাইলটা এখন তোমার কাছে আছে?”

“ইয়েস অফ কোর্স আমি দেখাবো আপনাকে?”

“ওকে ফাইলটা দেখাও।”

অরা কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে ইশরাক ইহতেসাম এর সামনে ধরলো। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচণ্ড ঘাবড়ে আছে। মুখে একরকম চিন্তার ছাপ। অরার এমন অবস্থা দেখে ইশারাক ইহতেসাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“অ্যানি প্রবলেম অরা?”

“ন-নো স্যার আমি ওকে আছি।”
ইশরাক ইহতেসাম ফাইল ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে অরাকে বললেন,
“মিস অরা ফাইলটা আফাতত এখানেই থাকুক তিয়াশা ব্যাপারটা দেখবে।”
“কি-কিন্তু স্যার,,।”
“তুমি এখন আসতে পারো অরা। অফিসে দেখা হচ্ছে।”
“ওকে স্যার আমি আসছি।”

অরা চলে গেলে ইশরাক ইহতেসাম আরো কিছু সময় একিভাবে বসে রইলেন।নাবাদ পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করে এগিয়ে এসে বাবার পাশে বসলো। তারপর ফাইলটা হাতে তুলে নিয়ে বলল,
“আমাদের সন্দেহ টাই কি ঠিক? মিস.অরার মুখ দেখে মনে হলো বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।”
“সন্দেহ ঠিক হতে পারে নাবাদ। তবে তার ব্যাতিক্রমও ঘটতে পারে।”
নাবাদ কিছু না বলে বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাল।

(৯)

উঠানের একপাশে বসে রাহেলা বেগম আর হুমাশা বরই আচার শুকাতে দিচ্ছিলো। হুরায়রাকে সে সময় বাড়ির দিকে ঢুকতে দেখে রাহেলা বেগম গর্জন করে উঠলেন। হুরায়রা প্রথমে দাদীর গর্জে উঠার কারন বুঝতে না পারলেও পরে হুমাশার ইশারায় বুঝতে পারলো দাদী তার উপর বেশ চটে আছেন। কিন্তু কি নিয়ে চটে আছেন তা সে ধারনা করতে পারলো না তাই হুমাশার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকাতেই দেখলো ইয়াদ তার দাদীর পিছনে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। ইয়াদকে দেখেই হুরায়রার গলা শুকিয়ে গেলো। এতক্ষণে সে দাদীর গর্জে উঠার আসল কারন ধরতে পেরেছে।

ইয়াদ নিশ্চই কয়লা চুরির ব্যাপারটা তার দাদীকে বলে দিয়েছে যার কারনে রাহেলা বেগম তার উপর এমন চটে আছেন ভেবেই হুরায়রার ভয় হতে লাগলো। কিন্তু হুরায়রা একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে ইয়াদ তার আগে বাড়ি কি করে পোঁছাল। সে যখন বাড়ি ফিরছিলো ইয়াদ তখনো পুকুর ঘাটে নির্লিপ্তভাবে বসে ছিলো তবে সে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো কি করে ভাবতে ভাবতে ভ্রুকুটি করে মাথা চুলকাতে লাগলো।

“ওই ছেরি তুই এহনো এইখানে খাড়ায়া আছোস বলি তোর কি কোনো লজ্জা শরম নাই সব কি হারাই বইসা আছোস?”

দাদীর কড়া কথায় হুস ফিরলো হুরায়রার। রাহেলা বেগম এখনো একিভাবে হুরায়রাকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন। ইয়াদ একবার আড় চোখে হুরায়রাকে দেখে আবার নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো।

“কি হইলো তোর? আমার কথা কি তোর কান দিয়ে ঢুকে না? কাপড় খানা ভিজাইয়া আসছোস আর এখনো এইখানে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া তামাশা করছ।বলি এত বড় হইলি এখনো কি তোর হুশ জ্ঞান হইলো না সকাল সকাল ঘাটে যাইয়া গতরখাকি ভিজাইয়া বাড়ি ফিরছিস।”

এতোক্ষণে হুরায়রা দাদীর চটে যাওয়ার আসল কারন বুঝতে পারলো আর বুঝে মনে মনে একটা শান্তির নিশ্বাস নিলো।

“যাক বাবা উনি তাহলে কয়লা চুরির ব্যাপাটা দাদীকে বলেন নি। না হয় দাদী আজ আমাকে খেয়েই ফেলতো। আমি তো ভেবেছিলাম উনি বোধ হয় দাদীকে সব বলেই দিয়েছেন।”

“তোর ভাবনায় একবালতি পানি ঢেলে বলছি আমি নানিকে কিছুই বলি নি। তবে যে বলবো না তার কোনো নিশ্চয়তা এখনো দিচ্ছি না। আর শুন এর পর যদি কখনো দেখেছি পুকুর ঘাটে গিয়ে শরীর ভিজিয়ে এসেছিস তবে তোর শরীরের চামড়া তুলে আমি তোর জন্য জুতা গড়িয়ে দিবো।”

কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে কথাটা বলে হুরায়রার পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলো ইয়াদ। হুরায়রা কাঁদোকাঁদো মুখে ইয়াদের চলে যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে পরে আবার গাল ফুলিয়ে নিজেই মনে মনে বলতে লাগলো,

“এই মানুষটা এমন কেনো? তিনি কি বুঝেন না যে ষোড়শী তার চরণে নিজের প্রানটাই উৎসর্গ করতে সদাসর্বদা প্রস্তুত তাকে যতোই মরনবাণ দাও না কেনো তাতে তার বিন্দু পরিমাণ পীড়াবোধ হয় না।তার কাছে আপনার উচ্চারিত প্রতিটা শব্দই আজ্ঞা স্বরুপ। আলাদা করে তাকে ভীতিপ্রদর্শন করার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু ভালোবেসে একটিবার বললেই হয়।”

“এই মেজদি কি ভাবছো তাড়াতাড়ি যাও না হয় আরো কথা শুনতে হবে।”
হুমাশার কথায় ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো হুরায়রা। তারপর চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

(৯)
তিয়াশা নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে প্রোজেক্ট তৈরী করছিলো। তার থেকে কিছুটা দূরেই কাউচে বসে ইয়াদের সাথে ভিডিও কলে এ কথা বলছে নাবাদ। ইয়াদ তাকে গ্রামের প্রজেক্টের কাজ কত দূর এগিয়েছে সেটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। নাবাদ সেটা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখলো তারপর বলল,
“কাজ তাহলে ভালোই চলছে ভাইয়া। কোনো প্রবপ্লেম হচ্ছে না তাহলে।”
“নো এভরিথীং ইজ ফাইন। বাই দ্যা ওয়ে বাবা মা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ দুজনি ভালো আছেন। তোমার কি অবস্থা সেটা বলো আর আমার সুইট ডার্লিং কেমন আছে?”
“তোর সুইট ডার্লিং আজ খুব খেপেছে বুঝলি তো।”
“কেনো কেনো?”
“হুরমতির উপর খুব চটেছেন আজ।”
“ওহ নো হুর আবার কি করেছে?”
“বিশেষ কিছু নয় তবে আবার কম কিছুও করে নি।আচ্ছা তিয়াশা কোথায়? ”

নাবাদ ফোন ঘুড়িয়ে তিয়াশার দিকে করলো।
“হ্যালো তিয়াশা সব ঠিক চলছে?”

“হাইইই ইয়াদ কেমন আছো?”

“আমি বেশ আছি তোমার কি খবর? সব ঠিক ঠাক তো?”
“নো ব্রো নো কিছুই ঠিক নেই, তুমি গ্রামে যাওয়ার পর থেকে ওই শয়তান নাবাদের মিউজিক যুক্ত ব্যায়ামের টর্চার ক্রমেক্রমে বেড়ে যাচ্ছে।”
“তাই নাকি নাবাদ তিয়াশা যা বলছে তা কি ঠিক।”
“উফ ভাইয়া তুমি ওর কথা বাদ দাও তো ও এসব বুঝে নাকি মুটি মেয়ে কোথাকার।”
“এই তুমি কি বললে আমি মুটি?”
“অবশ্যই তুমি মুটি বোরিং একটা মেয়ে।”

“একদম ঠিক বলেছ মনাবাদ। সি ইজ সো বোরিং।”
অরা কেবিনে ঢুকে তাদের কথার মাঝে কথা বলে বসলো। তিয়াশা অরার দিকে তাকিয়ে রুক্ষমূর্তি ধারণ করে জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বলল,
“মিস অরা আপনি নিশ্চই ভুলে গেছেন যে এটা আপনার কেবিন নয়। অন্যের কেবিনে ঢুকতে যে তার অনুমুতি নিতে হয় সেটা নিশ্চই আপনার জানার কথা।”

তিয়াশার কথায় মুখ বাঁকিয়ে নিলো অরা। তারপর নাবাদের দিকে এগিয়ে আসতেই লেফটপের স্ক্রিনে ইয়াদকে দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্নহারা হয়ে উঠলো। অরার দিকে একবার তাঁকিয়ে তিয়াশা আবার নিজের কাজে মন দিলো।

“হাই মি.ইয়াদ আপনি আমার কল কেনো ধরছেন না বলুন তো। আপনি জানেন আমি আপনার জন্য কতটা চিন্তিত?”

“মিস.অরা আমার মনে হয় আমার জন্য চিন্তা করার জন্য আমার পরিবার আছে অহেতুক আপনি চিন্তা করে নিজের স্বাস্থ্য নষ্ট করবেন না।”

“ওহ মি.ইয়াদ আপনি আমার স্বাস্থ্য নিয়ে এত চিন্তা করেন ভাবতেই আমার খুব ভালো লাগছে।”

অরার কথা শুনে নাবাদ আর তিয়াশা হেসে উঠলো। তাদের হাসতে দেখে অরা ভ্রুকুঞ্চিত করে বলল,

“আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”

“নো নো একদমই না।”
বলে নাবাদ আবার মুখ টিপে হাসতে শুরু করলো।

“বাই দ্যা ওয়ে আপনি কবে গ্রাম থেকে ব্যাক করবেন বলুন তো? গ্রামের ওয়েদার আপনার জন্য একদম ঠিক নয়।”

অরার কথায় প্রচণ্ড বিরক্তবোধ করলো ইয়াদ।মেয়েটা বড্ড বেশি গায়ে পড়া স্বভাবের যেটা সে মোটেই পছন্দ করে না। গায়ে পড়া মেয়েরা যে খুব বেশি সুবিধার হয় না সেটা খুব ভালো করেই জানে সে। এরা শুধু শুধু যার তার গায়ে ঢুলে পড়ে না। খুব ভেবেচিন্তে টোপ বিছিয়ে কাজে নেমে পড়ে। এই ধরনের মেয়েরা আসলে টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না এরা যার টাকা আছে তাকেই নিজের রুপ যৌবন আর দেহ দিয়ে আকৃষ্ট করতে চায়। তবে অরার ব্যাপারটা ইয়াদ পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত নয়।
অরা আর কিছু বলতে গেলে নাবাদ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“মিস অরা আপনি নিশ্চই এখানে গল্প করতে আসেন নি?”

নাবাদের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে অরা ইয়াদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। এটা দেখে তিয়াশা প্রচণ্ড রেগে উঠলো। অরার এমন বেহায়াপনা মেনে নেয়া যায় না।
বেশকিছু সময় পর ইয়াদ বিরক্ত হয়ে লাইন কেঁটে দিলো। অরা তখনো কথা বলে যাচ্ছে। নাবাদ অরার পিছনে দাঁড়িয়ে বাহুতে হাত গুঁজে বলল,

“তুমি কার সাথে এখনো কথা বলছো?”

“কেনো মি.ইয়াদ এর সাথে।”
বলে মোবাইলের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখলো ইয়াদ অনেক্ষণ আগেই কল কেঁটে দিয়েছে।
নাবাদ হাত ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে কিছুটা বাকা হেসে বলল,
“ভাইয়া লাইনে নেই সো শুধু শুধু বক বক না করে নিজের কাজে মন দিন।”
সে মুহুর্তে অরার মুখের অভিব্যক্তি এমন হলো যে নাবাদ ছড়া সেখানে আর কেউ থাকলে হেসে গড়াগড়ি খেতো।

চলবে,,,
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here