তোর নামেই এই শহর পর্ব -০৪

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_০৪

(১০)

পা টিপে চুপিচাপি ইয়াদের ঘরে ঢুকলো হুরায়রা।পুরোঘর অন্ধকার ছেয়ে আছে। ঘরে ঢুকেই সোজা বালিশের তলা থেকে চাবি নিয়ে আলমারির কাছে চলে গেলো সে। এটাই সুযোগ ইয়াদ এখন ঘরে নেই। ইয়াদের অনুপস্থিতিতে সে আলমারি খুলে নীলাভ ফটো এলবামটা বের করে সরে পড়বে বলে ঠিক করলো। হুমাশার কথা অনুযায়ী ইয়াদ এই ফটো এলবামে কোনো এক মেয়ের ছবি সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে আর সেটা দেখার জন্যই সে এই ভর সন্ধে বেলায় চোরের মতো ইয়াদের ঘরে ঢুকেছে।

তালা খুলে পুরো আলমারি তন্নতন্ন করে খুঁজলো কিন্তু কোথাও এলবামের টিকিটার দেখাও পেলো না। ইয়াদের সেই অমুল্য এলবাম না পেয়ে হতাশ হয়ে নিচে বসে পড়লো হুরায়রা, ইয়াদ যে এলবাম টা এখানে রাখে নি এই ব্যাপারে সে নিশ্চিত। মনে একরাশ হতাশা আর অভিমান নিয়ে আলমারি বন্ধ করে পিছন ফিরতেই দেখলো ইয়াদ তার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাঁকিয়ে আছে। ইয়াদের এমন রাগী মূর্তি দেখে মুহুর্তেই গলা শুকিয়ে গেলো হুরায়রার।

“কি চুরি করতে এসেছিস এখানে?”

“আ-আমি? কই কিছু না তো।”
বলে শুকনো হাসি দিলো সে।
ইয়াদ ঘাড় বাঁকিয়ে আলমারির দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“পুরো আলমারি ঘেঁটে কি এমন ধনরত্ন খুঁজছিলি বল তো।”
“বললাম তো কিছু খুঁজছিলাম না।”
ইয়াদ অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে হুরায়রার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দৃষ্টিপাত করে জোরে একটা শ্বাস ছাড়লো।তারপর হুরায়রার পাশ কাঁটিয়ে আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা নীল রঙের ফটো এলবাম বের করে আনলো। বলল,
“এটা খুঁজছিলি তুই?”
ইয়াদের হাতে এলবাম দেখে তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাঁকালো হুরায়রা। আর অনেকটা অবাক হয়ে বলল,
“এটা আলমারিতেই ছিলো? তাহলে আমি পেলাম না কেনো?”
ভুল করে মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়ে গেছে বুঝতে দাঁতে জিভ কাটলো সে। কিন্তু ইয়াদ কি করে বুঝলো যে এটাই সে খুঁজছিলো?
“তার মানে তুই এটা চুরি করতে এসেছিস হুর?”
“না না মানে হ্যাঁ।
“তোর তো দেখছি আজকাল বড্ড বেশি সাহস বেড়ে গেছে। এই এলবাম এর উপর তোর নজর গেলো কেনো শুনি?”
“আমাকে দিন ওটা? ”
ইয়াদ ভ্রুকুটি করে বলল,
“তোকে দিবো মানে? এটা কি তোর যে চাইলেই দিয়ে দিবো? যা তো এখান থেকে আর শুন যাওয়ার আগে আমার আলমারির যা যেমন ছিলো ঠিক তেমন করে গুছিয়ে দিয়ে যাবি।”

ইয়াদের কথায় বড্ড অভিমান হলো হুরায়রার।অভিমানে চোখ দিয়ে গড়গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে থেকে থেকে নাক টানছে।
ইয়াদ দুই পা এগিয়ে গিয়ে আবার পেছনে ফিরে এলো। হুরায়রা তখনো কেঁদে যাচ্ছে। হুরায়রাকে কাঁদতে দেখে তার কেমন মায়া হলো। বলল,
“কাঁদছিস কেনো তুই, আমি কি কাঁদার মতো কিছু বলেছি?”
এবার হুরায়রার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। গতিক সুবিধার না দেখে ইয়াদ তাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। পরম যত্নে নিজের উষ্ণপাজরে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“এই ভাবে কাঁদতে হয় না পাগলী।”
“আপনি কেনো অন্য মেয়ের ছবি সযত্নে এলবামে লুকিয়ে রেখেছেন?”
“তোকে এটা কে বলল?”
“আমি জানি, তাই তো আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আর আমার ভালোবাসা টাও দেখতে পান না।”
বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো হুরায়রা। ইয়াদ তাকে আরো শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো তারপর নরম স্বরে বলল,
” কাঁদা মাটি দেখেছিস কখনো? তুই আমার কাছে ঠিক কাঁদামাটিরi মতো। কুমোর যেমন মনের অজানতে কাঁদামাটিতে তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়। যেখন যেনন খুশি আকার দেয় আবার ভেঙেচুড়ে গড়ে তুলে তুই আমার কাছে ঠিক কুমোরের প্রিয় কাঁদামাটির মতো। যাকে আমি যেমন খুশি তেমন করে ভেঙেচুড়ে আবার গড়তে জানি, মনের ইচ্ছা মতো সাজিয়ে তুলতে পারি। ”

ইয়াদের এহেন কথার অর্থ বুঝতে পারলো না হুরায়রা। সে শুধু তার প্রেমিকের প্রশস্ত বুকে নিজের প্রশান্তি হাতরে বেড়ালো।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি বড্ড বেশি ভালোবাসি।”
“ভালোবাসা কি মুখের কথায় হয়?”
“আপনি কেনো আমায় বুঝতে চান না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা বুঝার মতো মন কি আপনার নেই?”
বলে দুহাতে ইয়াদের শার্ট আঁকড়ে ধরলো হুরায়রা।ভালোবাসার কাছে আজ নিজেকে খুব অশহায় মনে হচ্ছে তার। ভালোবেসে ভালোবাসা না পাওয়ার বিষাদ যে কতটা বেদনাদায়ক সে শুধু অন্তর্যামীই জানেন। নবযৌবনে পদার্পণকারী রমণী যখন কোন পুরুষের প্রেমে পড়ে তবে সে নিজের সর্বস্ব দিয়েই তার প্রেমে পড়ে। হুরায়রাও এর ব্যাতিক্রম নয়, সেও প্রেমে পড়েছে, কঠিন ভাবে প্রেমে পড়েছে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছে পুরুষটিকে যে কিনা বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে বিষাদের বাণ।

বেশ খানিকটা সময় পেড়িয়ে গেলে ইয়াদ বলল,
“আমাকে ভালোবাসতেই হবে এমন কোনো মাথার দিব্যি আমি তোকে দেই নি, আমার যতদূর মনে পড়ে আমিও তোর কাছে এমন কোনো দিব্যি কাঁটিনি যে তোর পাগলামী গুলোতে সায় দিবো।
তুই অনেক ছোটো হুর। এখনো জীবনটাকে সেভাবে দেখিস নি। বাস্তবতা কি সেটা তোর অজানা তাই ভালোবাসি কথাটা বলাও তোর কাছে অতি সহজ কিন্তু তুই যেটা করছিস সেটায় সায় দেওয়া আমায় মানায় না। জীবনটাকে আগে দেখ বাস্তবতা বুঝতে শেখ দেখবি ক্ষনিকের এই মোহ তোর মাঝে আর থাকবে না।”
ইয়াদের কথায় আরো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো হুরায়রা। ইয়াদ ধীরে ধীরে হাতের বাঁধন আলগা করে নিলো। হুরায়রা বুঝতে পেরে দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। ইয়াদ সেখানে দাঁড়িয়ে হুরায়রার চলে যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে ভিড়ভিড় করে বলল,
“তুই আমার সেই ফুল যার মধু সহস্রবার আস্বাদন করেও শেষ করা যায় না, যার তৃষ্ণায় মৌ হয়ে উড়ে আসি বার বার শতবার। যার জন্য মনে বাসনা জাগলেও কামনা জাগা বারণ। তোর জন্য আমার অনুভুতিগুলো একটা গুন্ডিতেই সীমাবদ্ধ, গুন্ডি পেরিয়ে অনুভূতি গুলো তুই অবধই কখনো পৌঁছাবে না।”

(১১)

খোলা ছাদে ভাবলেশহীন ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইয়াদ। চাঁদের ক্ষীণ আলো এসে তার মুখের এক পাশটায় পড়েছে। এই মুহুর্তের তাকে যে কতটা অনিন্দ্য লাগছে সে ধারনা টুকুও তার নেই। নির্লিপ্তিভাবে নক্ষত্রখচিত আকাশের একমাত্র উপগ্রহটির দিকে তাঁকিয়ে নিকোটিনের দোয়া উড়িয়ে মনের অজান্তেই হেসে ফেললো সে।একয়েক মুহুর্তের জন্য চাঁদটাকে হুরায়রার মুখের প্রতিচ্ছবি বলে মনে হচ্ছে তার।

রাত কতো হলো ধারনা নেই ইয়াদের। রাতের নিস্তব্ধতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ঝিঁঝিঁপোকা ডাক রাতের প্রকৃতিকে আরো গুমোট করে তুলছে। দূর থেকে কয়েকটা শেয়াল একসাথে হাঁক ছাড়ছে। রাতের নিস্তব্ধতায় শেয়ালের হাঁক অতি মধুর হয়ে তার কানে ঠকছে। ইয়াদ চোখ বুজে অনুভব করার চেষ্টা করলো প্রকৃতির অপূর্ব দান। গভীর রাতে শেয়ালের ডাকও যে এতটা শ্রুতিমধুর হয় তাই বা কে জানতো আগে।

ছাদে পায়চারী করতে করতে হঠাৎ বেলি ফুলের তীব্র সুবাস এসে ইয়াদের নাকের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। হঠাৎ সচকিত হয়ে উঠে সে। বেলি ফুলের তীব্র সুবাস ধীরেধীরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। কি মাধকতা উপচে পড়ছে সুবাসে। ইয়াদ ইতিউতি করে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করলো এতো রাতে বেলিফুলের সুবাসটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে কারন আসে পাশে কোথাও বেলিফুলের গাছ নেই সুতারাং গন্ধ আসারও কোনো কারন খুঁজে পেলো না সে। আশপাশটা আরো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো সে, কিন্তু না কোথাও এমন কিছু খুঁজে পেলো না যেটা থেকে বেলিফুলের সুবাস ছড়াতে পারে। অলক্ষিতভাবে তার মনে পড়লো হুমাশার বলা কথাটা।
“গ্রামে রাত্রিবেলায় তেনাদের চলাচল বেড়ে যায়।তেনারা যখন আশেপাশে থাকে তখন কড়া বেলিফুল,চন্দন কাঠের তীব্র সুগন্ধ এবং জয়তুনের সুবাস ছড়ায়।”
তখন হুমাশার কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলেও এই মুহুর্তের সেটাকেই তার সঠিক বলে মনে হচ্ছে। নয়তো এমন নীরব নিস্তব্ধ রাতে এমন কড়া সুবাস আসার কথা নয়। ইয়াদ বেশিক্ষণ আর দেরি না করে ছাদ হতে নেমে এলো।
ভুত প্রেতে বিশ্বাসী না হলেও জ্বীনে বিশ্বাস করে সে। প্রত্যেক মুসলিমই জ্বীন জাতীতে বিশ্বাসী কারন আল্লাহ তার ইবাদাত এর জন্য জ্বীন এবং ইনসান নামে দুইটি জাতী সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তৈরী করলেও জ্বীন জাতীকে অনেক ক্ষমতা আর শক্তির অধিকারী করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাছাড়া পবিত্র কোরানশরিফ এ ও জ্বীন জাতী সম্পর্কে সব স্পষ্টভাবে বলা আছে। ইয়াদ আর কিছু না ভেবে দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির অন্দরের দিকে হাঁটা ধরলো।
ছাদ থেক্র নেমে শেষ সিঁড়ি আসা পর্যন্ত সুবাস তীব্রভাবেই তার নাকে লাগছিলো। সিঁড়ি পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে আসার পর সেটা যেনো হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো তবুও ইয়াদ মনে মনে দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।

ঘড়িতে তখন রাত তিনটা। ওজু সেরে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে তাজ্জুদ নামায আদায় করতে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। প্রায় রাতেই তাজ্জুদের নামাজ আদায় করে ইয়াদ যদিও এখন আর আগের মতো নিয়মিত আদায় করা হয় না। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সর্বদা চেষ্টা করে সে।

ছোটবেলা থেকেই ইয়াদ নামায আদায়ের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা স্কুলে হলেও ধর্মীয় শিক্ষাটা সে তার দাদুর কাছ থেকে ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলো। ইয়াদের দাদু মুবিনুল আহসান খুবই ধর্মভীরু লোক ছিলেন। নামায কলেমার ব্যাপারে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড কড়া প্রকৃতির।
ইয়াদ বেশিরভাগ সময় তার দাদুর হাতেই মানুষ হয়েছে। বৃদ্ধ তার নাতীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন আর ইয়াদও তাকে সর্বোচ্চ সম্মান করতো। তার ভালো এবং খারাপ সময়ের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন মুবিনুল আহসান। যে কোনো পরিস্থিতি সামলে উঠতে ইয়াদকে তিনি সব সময় সাহস যোগাতেন। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজেকে সৎ রেখে টিকে থাকা যায়।ই য়াদ তার দাদুর মতোই প্রচণ্ড কড়া ব্যাক্তিত্বের অধীকারী হয়েছে। সব পরিস্থিতিতে সে নিজেকে অবিচল আর সুস্থির রাখতে অতুলন।

নামায আদায় করে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সে। হঠাৎ দরজার কাছে চোখ পড়তেই কিছু একটা ভেবে সে দিকে এগিয়ে গেলো। এত রাতে হুরায়রার ঘরে আলো জ্বলতে দেখে বেশ অবাক হয়। উভয়ের ঘর পাশাপাশি হওয়ায় খুব সহজেই সে ব্যাপাটা বুঝতে পারলো। হুরায়রার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করে পরে সংশয়হীনভাবে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে ইয়াদ। হাতে বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে হুরায়রা। সামনেই তার এসএসসি পরিক্ষা তাই পড়ার চাপ বেশি হওয়ায় অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশুনা করে। আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটলো না বারংবারের মতো আজও সে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশুনা করছিলো কিন্তু কখন যে তার চোখজোড়া লেগে এসেছিলো বলতে পারবে না। ইয়াদ ঘরে ডুকে অতি সন্তপর্ণে হুরায়রার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। হুরায়রার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাঁকিয়ে অবচেতন মনে মুচকি হাসে সে। মেয়েটা এখনো বড্ড ছেলে মানুষ তবুও কেমন রাতভর দিনভর তার পেছন পেছন ঘুরে ভালোবাসি কথাটা বুঝাতে কতই না বৃথা চেষ্টা করে। তবুও সে তার মনের কাছাকাছি পোঁছাতে পারে না।

ঘুমন্ত হুরায়রাকে সযত্নে শুইয়ে দিয়ে বইটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে পায়ের কাছ থেকে কাঁথা টেনে গায়ে জড়িয়ে মাথার কাছে বসে ইয়াদ। ঘুমন্ত হুরায়রাকে দেখতে বড্ড মায়াবী লাগছে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো রাজ্যের যত প্রশান্তি সব ওই মুখটার মাঝেই উপচে পড়ছে। ইয়াদ হুরায়রা ঘুমন্ত মুখের দিকে একনজরে তাকিয়ে থেকে বলল,

“তোর তৃষ্ণায় আমি বিভোর। তোর টলমলে চোখের চাহনিতে বারবার নিজেকে হারিয়ে ফিরেছি তবুও তোকে ছুতে পারি নি, পারি নি তোর হৃদয়ের গহীনতা অনুভব করতে পেরেছি শুধু তোর মনের গভীরতায় রাজত্ব করতে।”
“আমার মনোসম্রাজ্যের সম্রাট আপনি, সেখানে শুধু আপনারই রাজত্ব চলে।”

হুরায়রা আধোআধো কন্ঠে এমন বুলি শুনে চমকায় ইয়াদ। সে বুঝতে পারে নি হুরায়রার ঘুম এত তাড়াতাড়ি ভেঙে যাবে। ধীরেধীরে উঠে চলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতেই হুরায়রা খুব শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে। হুরায়রা ঘুমঘুম চোখে কাতর হয়ে বলল,
“আপনি কি বুঝেন না আপনার প্রখরতায় নিজেকে কতবার পুড়িয়েছি। আপনি নামক তপ্ত দহনে জ্বলে মরছি হাজারবার। দয়া করুন আমায় এক ফোঁটা শিশির বিন্দুকণা পরিমাণ ভালোবাসা দিয়ে আমার তপ্তহৃদয়ে শ্রাবনের ধারা বইয়ে দিন।”
ইয়াদ লক্ষ্য করলো হুরায়রা ঘুমের ঘোরে কথাগুলো বলছে। তবুও আজ কেন জানি হুরায়রা আধো আধো বুলি গুলো শুনতে বেশ লাগছে।

“তোর জন্য কামনা জাগে তবুও বাসনা জাগে না।কামনা হলেই যে তাকে বাসনায় পরিণত করতে হবে তার কোনো মানে নেই।যে প্রখরতার সান্নিধ্যে আসলে পুড়ে ছাই হতে হয় সেই প্রখরতা থেকে দূরে থাকাই তোর জন্য শ্রেয়।আমার সান্নিধ্য লাভের আশায় নিজেকে জ্বলন্তপিণ্ডে পরিণত করিস না এতে তোর মাধুর্যতাই হারাবে নেহাত আর কিছু নয়।”

ভিড়ভিড় করে বলল ইয়াদ। তারপর সেখানে আর একমুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
ইয়াদ চলে যাওয়ার অচিরেই ঘুম ভেঙে গেলো হুরায়রার। এই হিমশীতল আবহাওয়াতে ও সে প্রচণ্ড ঘেমে গেছে। বুকের ভিতির কেমন ডিব ডিব করছে মনে হলো ইয়াদ এক্ষুনি তার আশে পাশে ছিলো। কিন্তু না তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো পুরো ঘরে পিনপতন অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না সে।

“তবে কি তার অনুভূতি গুলো সব মিথ্যে ছিলো।ইয়াদের গায়ের গন্ধ,স্পর্শ সবই কি শুধু তার নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই ছিলো না?”
মনে মনে ভাবলো হুরায়রা।অচিরেই ভিতরটা কেমন হু হু করে উঠলো।ভালোবাসা নামক যন্ত্রনা যে কতটা বেদনাদায়ক সেটা যে কেউ অনুভব করতে পারে না।ব্যাথা মিশ্রিত এক সুখের নাম ভালোবাসা।সেটা তোমায় জ্বালাবে পোড়াবে আবার ব্যাথার উপশম হয়ে প্রশান্তি এনে দিবে।যার হৃদয়ে ভালোবাসা নেই সে কখনো এই যন্ত্রনাময় সুখের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না।

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here