তোর নামেই এই শহর পর্ব -০৫

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_০৫

(১২)
গরম গরম চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে আয়েশ করে পত্রিকা পড়ছেন ইশরাক ইহতেসাম। সকলটা তার চা আর পত্রিকার সাথেই কাঁটে। রোজ সকালে এক কাপ চা আর সাথে পত্রিকা না হলে দিনটা তার খুব একটা ভালো যায় না। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা জায়গায় এসে তার চোখ আটকে গিয়ে মুহুর্তেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন।ই শরাক ইহতেসাম এর এমন চিৎকার শুনে রান্না ঘর থেকে ছুটে মেহেরিমা মেহের। হঠাৎ স্বামীর চিৎকারে তার প্রান যেনো বেড়িয়ে যাবার জোগাড় হলো।

মেহেরিমা মেহেরকে দেখে ইশরাক ইহতেসাম যেনো আরো প্রফুল্লিত হয়ে উঠলেন। স্বামীর প্রফুল্ল হয়ে উঠার কারন বুঝতে পেরে রাগে ফুঁসে উঠলেন মেহেরিমা। হুংকার ছেড়ে বললেন,

“আবার শুরু করলে তুমি? পত্রিকার ভাগ্য রাশিফল দেখে কেউ এমন করতে আমার বাবার জন্মে দেখিনি। এত জোড়ে চেঁচিয়ে কি পাড়া এক করে ফেলবে? কি না কি হলো ভেবে তো আমার প্রান বেড়িয়ে যাবার জোগাড় হয়েছে।”
মেহেরিমার কথা কর্ণপাত না করে তিনি উৎফুল্ল হয়ে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ইয়েস ইয়েস করে চেঁচাতে শুরু করলেন।
“সকাল সকাল এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেটা কে মামি মা।”
হাই তুলতে তুলতে উপর থেকে নিচে নেমে এলো তিয়াশা।
মেহেরিমা মেহের চোখ দিয়ে ইশারা করে স্বামীকে দেখিয়ে বললেন,
“তোর মামার বুড়ো বয়সে নাচানাচি করার স্বাদ হয়েছে। দেখ দেখ কেমন লাফাচ্ছে দেখ।”
তিয়াশা তার মামার দিকে তাঁকিয়ে মুখে বিরক্তিভাব ফুটিয়ে পানির বোতল খুলে ঢকঢক করে পানি খেতে শুরু করলো। নাবাদ কোথা থেকে এসে পিছন হতে তিয়াশার মাথায় চাটি মারতেই মুখ থেকে পানিয়ে বেড়িয়ে চারদিকে ছিটকে পড়লো। তিয়াশা বিষম খেয়ে কেঁশে উঠলো। নাবাদের এমন কাজে আরো ক্ষেপে গেলেন মেহেরিমা।
“তুই কি কোনো দিন মানুষ হবি না নাবাদ। মেয়েটা পানি খাচ্ছিলো তার মধ্যেও ওকে না জ্বালালে শান্তি হচ্ছিলো না তোর। দেখছিস মেয়েটা কাশছে।যেমন বাবা তেমনি ছেলে। দেখো বুড়ো এখনো কেমন ষাঁড়ের মতো লাফিয়ে যাচ্ছে।”
“একি বাবা তুমি এমন করছো কেনো?”
“কেনো করছে বুঝতে পাড়ছিস না, নিশ্চই রাশিফল ভালো পেয়েছে তাই।”
এতোক্ষণ পর ইশরাক ইহতেসাম কথা বললেন।অনেক টা খুশি হয়ে নাবাদের দিকে এগিয়ে গেলে তার দুই কাঁধ ঝাপটে ধরে বললেন,
“আই এম সো হ্যাপি মাই সন। আজকের দিনটার মতো ভালো দিন আমার জন্য আর হতে পারে না।”
ইশরাক ইহতেসাম এর কথায় তিয়াশা মেহেরিমা দুজনি উভয়ের দিকে হতাশ ভঙিতে তাঁকালেন।
“উফ বাবা কি হয়েছে সেটা বলবে তো।”
“ইয়াদকে তাড়াতাড়ি ফোন লাগা আর সুখবর টা দে যে আমাদের বিজনেস রাইবাল গ্রুপ কোম্পানির মালিক মি.সেলিম এহসান যে টেন্ডার টা পাওয়ার কথা ছিলো সেটা তিনি পায়ন নি।”
“পান নি? তার মানে?”
“ইয়েস নাবাদ ইয়েস ট্রেন্ডার টা মি.মেহেবুব পেয়েছেন। আমাদের বিজনেসের জন্য এটা যে কত বড় সুখবর ভাবতে পারছিস?”
“কি বলছো মামা মি.সেলিম এহসান টেন্ডার টা পান নি পেয়েছেন মি.মেহেবুব? ”
“তবে আর কি বলছি তিয়াশা। এত বড় খবর পেয়ে তো আমার নাচতে ইচ্ছা করছে।”
“নাবাদ তুমি ইয়াদকে ফোন দিয়ে খবরটা এক্ষুনি জানাও?”
“ওকে ওয়েট আমি ভাইয়াকে বলছি।”
নাবাদ কল করার আগে ইয়াদ তাকে কল করে বসলো। নাবাদ সবাইকে ফোন দেখিয়ে বলল,
“ভাইয়া নিজেই কল করেচগে।”
“তাড়াতাড়ি ধরে বল গুড নিউজ টা।”
কল ধরতেই ইয়াদ ফোনের অপর পাশ থেকে বলল,
“এট লাস্ট অনেক চেষ্টা করেও টেন্ডার টা মি.এহসান ধরে রাখতে পারেন নি। পেয়ে যাওয়া টেন্ডার কিভাবে হাত ছাড়া হয়ে যায় সেটা এবার তিনি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। বাই দ্যা ওয়ে বাবা জেনেছে সব?”

“হ্যাঁ। মাত্রই তোমায় কল করতে যাচ্ছিলাম তার আগেই তুমি দিলে।”
“এর জন্য মি মেহেবুব এর কাছ থেকে একটা ধন্যবাদ আশা তো আমি করতেই পারি কি বলিস নাবাদ।”
“ধন্যবাদ?”
খুব অবাক হয়ে বলল নাবাদ।
“ইয়েস বিকজ মি.মেহেবুব টেন্ডার পাওয়ার পিছনে ইয়াদ ইহতেসাম এর নিরলস বুদ্ধি কাজ করেছে।”
“তবে তো আমাদের কাজটা আরো সহজ হয়ে গেলো।”
“এক রকম তাই।”
“ঠিক আছে তুমি বাবার সাথে কথা বলো।”

“কেমন আছো ইয়াদ।”
“আই এম ফাইন বাবা।”
“সকাল সকাল যে এমন একটা সুখবর পাবো ভাবতে পারি নি।”
“এটা তো হওয়ার ই ছিলো। যাই হোক এইবার সবাই মিলে গ্রামে এসে পড়ো এই দিকটা এইবার পুরোপুরিভাবে দেখতে হবে যে।”
“সেটার জন্য তো তুমি আছো ইয়াদ।”
” এমনটা বললে হবে না বাবা। আমি সব ঠিক করে রাখছি তোমরা কবে আসছো জানিয়ে দিও।”

“যেহেতু যেতেই হবে বলছো তবে আর দেরি করে কাজ নেই খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে আমাদের।”

“ওকে বাবা। বাই দ্যা ওয়ে মা কেমন আছে?”
“তোর মা আবার কেমন থাকবে আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে সারাদিন।”

“তোমাদের ঝগড়ার শেষ কোথায় আল্লাহই ভাল্প জানেন। ঠিক আছে মাকে আমার সালাম জানেবে রাখছি।”
ফোন রেখে ইয়াদ খোলা বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নিলো। তার এত দিনের প্রচেষ্টা এইবার সফলতা পাচ্ছে। নিজেকে আজ অনেকটা মুক্ত আর স্বাধীন বলে মনে হচ্ছে। অজান্তেই মনের মধ্যে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেলো। গায়ে ফুরফুরে হাওয়া লাগিয়ে ধুলো উঠা রাস্তায় আনমনে হেঁটে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো সে।

সকালের মিষ্টি রোদ পুরো উঠান জুড়ে পড়েছে।গায়ে রোদ লাগাতে বই হাতে করে উঠানের এক পাশে এসে বসে আছে হুরায়রা। বইয়ে মুখ গুজে পড়ায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সময় পার হওয়ার পরো পড়ায় খুব একটা মনোযোগ বসাতে পারল না সে। কিছুতেই মন বসছে না। গত রাতের দেখা দৃশ্যটা আদৌ সত্যি ছিলো নাকি তার মনের বিভ্রম ছিলো সেটা কিছুতেই মেলাতে পারছে না সে। শেষ রাত থেকে মাথাটাও বেশ ধরে আছে। রাতে খুব একটা ভালো ঘুম হয়নি তার। সারা রাত ছটপট করেই কাটিয়েছে সে।

বই থেকে মাঝে মাঝে মুখ তুলে ইতিউতি তাকিয়ে দেখছে হুরায়রা কোথাও ইয়াদকে দেখা যায় কিনা। সকাল থেকে ইয়াদকে কোথাও দেখতে পায় নি সে। কোথায় গেছে সেটাও জানে না। তার চিন্তিত মন বার বার ইয়াদের কাছেই ছুটে যাচ্ছে। মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা বিরাজ করছে।

“সকাল থেকেই উনাকে বাড়িতে দেখছি না। কোথায় গেছে কে জানে।”
গালে হাত রেখে ভিড়ভিড় করে বলল হুরায়রা।হঠাৎ কোথাও একটা থেকে হুমাশা ছুটে এসে হাফাতে শুরু করলো। হুমাশাকে হাফাতে দেখে ভ্রুকচকে নিলো হুরায়রা। বলল,
“এইভাবে ছুটে এলি যে?”
“এই মেজদি আম বাগানে যাবে? লিরা আর প্রিয়া আপুও এসেছে সব্বাই সেখানে খুব মজা করছে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে চলো যাই।”

আমবাগানের কথা শুনে গলা শুকিয়ে এলো হুরায়রার। আমবাগানে যাওয়ার জন্য ইয়াদ তাকে দুবার শাস্তি দিয়েছে। শাস্তির কথা মনে পড়তেই দমে গেলো সে। আর যাই হোক ভুলেও ওই আম বাগানের মুখো হবে না সে বলে কত দিব্যি কেঁটেছিল সেদিন।
“কি হলো মেজদি তাড়াতাড়ি চলো।”
হুরায়রা ক্ষণকাল নিশ্চুপ থেকে বলল,
“হ্যাঁরে হুমাশা ইয়াদ ভাইকে দেখেছিস কোথাও”
“উঁহু।”
“কোথাও দেখিস নি?”
“নারে বাবা দেখি নি কোথাও। এখন চলো তো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

কথা শেষ করে হুরায়রার হাত ধরে টানতে শুরু করলো হুমাশা। হুরায়রার সেদিকে একেবারেই মন নেই। হুমাশাও ইয়াদকে দেখতে পায় নি শুনে মনটা মুহূর্তের ভার হয়ে উঠলো তার। অনমনে অনিচ্ছা জানিয়ে বলল,
“আমি যাবো না হুমাশা তুই একাই যা।”
হ উত্তর পেয়ে আর এক মুহুর্ত দেরি করলো না হুমাশা ছুটে উঠান পেরিয়ে আমা বাগানের দিকে চলে গেলো। হুরায়রা মন খারাপ করে বইয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে। বুকটা কেমন চিন চিন করতে শুরু করেছে। ইয়াদ নামক ব্যাক্তিটা তার রোজ কার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যাকে না দেখে সে দু-দন্ড শান্তিতে থাকতে পারে না দম আঁটকে আসতে চায়। পুরো পৃথিবীটাই থমকে যেতে চায়।
“বেশ সুবুদ্ধি হয়েছে তোর। এই যাত্রায় শাস্তির হাত হতে বেঁচে গেছিস।”
ইয়াদের গলার স্বর কর্ণকুহর হতেই চমকায় হুরায়রা। বই থেকে মুখ না তুলেই সে সসরাসরি জিজ্ঞাস করলো,
“আপনি সকাল থেকে কোথায় ছিলেন?”
“আমি কোথায় ছিলাম সেটা কি তোর জানা আবশ্যক?”
“আপনি আমাকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলেন।”
হুরায়রার কথা ভ্রুকুঞ্চিত করে ফেললো ইয়াদ।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
“তুই আমার কোন জন্মের মা ছিলি যে কোথাও গেলে তোকে বলে যেতে হবে?”
“ছিঃ কি অশ্লীল।”
হুরায়রার কথায় ইয়াদ ডেব ডেব করে তাঁকালো। বলল,
“এই হুরমতি আজকাল দেখছি তুই খুব বেশি কথা বলতে শিখেছিস। তা সব যখন শিখেছিস এটা শিখিস নি যে রাতের বেলায় ঘরের দরজা লক করে ঘুমাতে হয়?”
ইয়াদের এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে।তার মানে কাল রাতে সে স্বপ্ন দেখে নি ইয়াদ সত্যি তার ঘরে গিয়েছিল।
“ওরে ছেরি এখনো এইখানে বই নিয়া বইসা আছোস। আমার ইয়াদ কখন এক মগ কফি চাইয়া গেলো আর তুই এখনো বইসা বইসা তামাশা করছ?”
দাদীর ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে ভাবনার জগৎ হতে বেড়িয়ে এলো হুরায়রা। সামনে তাঁকিয়ে দেখলো ইয়াদ সেখানে নেই অনেক্ষণ আগেই চলে গেছে। যাবার সময় হুরায়রাকে এক মগ কফি ঘরে দিয়ে যেতে বলে গেছে যেটা হুরায়রার কান অবধি পৌঁছায়নি।

ইয়াদ হুরায়রাকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে বলল,
“নানী তাকে জিজ্ঞাস করো সেকি আমার কফিটা দিয়ে যাবে নাকি আমি তাকে,,,।”
তার কথা শেষ করার পূর্বেই হুরায়রা ধপ করে উঠে দাঁড়াল, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

“দাদি তোমার গুনোদর নাতীকে বলে দাও আমি তার জন্য কফি নিয়ে যাচ্ছি না।”
“নানী তোমার নাতনীকে বলো তোমার নাতী তার হাতের কফি না পেলে ফল খুব ভালো হবে না।”
“দাদী তোমার নাতীকে বল তার যখন তখন যে কোনো আবদার মিটানোর গোলাম আমি নয়। সে নিশ্চই ভুলে গেছে যে কারো উপর অধিকার কিংবা জোর খাটানো পূর্বে তার প্রতি কিছুটা হলেও সহানুভূতি থাকা প্রয়োজন পরে যেটা তোমার নাতীর মধ্যে নেই।”
হুরায়রার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই রাহেলা বেগম আরেক দপা খেঁকিয়ে উঠলেন। বললেন,
“কি কইলি তুই? এ কেমন তোর কথার ছিরি। ওমা!এই রকম কথা তুই কোনখান থেইকা শিখলি হুর?”
“কেনো শিখতে হবে কেনো? আমি কি কিছু জানি না নাকি?”
“এই হুর তুই দেখি মুখে মুখে তর্ক করতাছোস, আয়হায় এইসব তো ভালা লক্ষণ না কি কয় এই মাইয়া।”

“নানি তোমার নাতনীকে জিজ্ঞাস করো সে আমার কফি নিয়ে ঘরে আসবে কিনা।”
রাহেলা বেগম একবার ইয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করে পরোক্ষণে আবার হুরায়রাকে কিছু বলতে গেলে দেখলো হুরায়রা হনহন করে হেঁটে উঠান পেরিয়ে পুকুরে ঘাটের দিকে চলে গেছে। রাহেলা বেগম পিছন থেকে চিল্লাচিল্লি করলেও কোনো লাভ হলো না হুরায়রা সেদিকে কর্ণপাত করলো না।

(১৩)

মুখ কালো করে নতমস্তকে ইয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হুরায়রা। বাম হাতের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে তার। পোড়া জায়গা অনেকটা লাল হয়ে আছে। হুরায়রার ফর্সা হাতে সেটা আরো ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
গরম কফিতে চুমুক বসিয়ে এক পলক হুরায়রার দিকে তাঁকালো ইয়াদ। নাহ এই মুহুর্তে হুরায়রার প্রতি তার বিশেষ কোনো দয়া হচ্ছে না। কথার পিঠে কথা বলাটা স্বভাবে পরিনত হয়েছে হুরায়রার যেটা তার একেবারেই পছন্দ নয়।
ছলছল চোখে হাতের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কান্না চাপিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হুরায়রা। হাতে বিষণ যন্ত্রনা হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে সেটা দমিয়ে রাখার মিথ্যা চেষ্টা করছে সে।
পুরো কফি শেষ করে লেফটপের উপর নজর দিলো ইয়াদ। হুরায়রার প্রতি তেমন কোনো মায়া দেখাচ্ছে না সে।
সকালে ইয়াদ যখন কফি চেয়েছিলো তখন হুরায়রা বেশ কড়া করে তাকে কথা শুনিয়েছিল।রাহেলা বেগমকেও সে কথা শুনাতে ছাড়ে নি।ইয়াদের এমন অবহেলাপূর্ণ অধিকার বোধটা সহ্য করতে পারছিলো না সে। একটা মানুষ কতটা হৃদয়হীন আর নির্দয় হতে পারে সেটা হয়তো এই পুরুষটিকে না দেখলে বুঝতে জানা হতো না। ইয়াদের প্রতি ভালোবাসাটা আজ কাল বড্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইয়াদ সেটা বুঝেও যেনো বুঝে না। বারবার অবহেলার বাণ ছুড়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ইয়াদের প্রতি সুপ্ত একটা রাগ মনের কোণে মাথা চারা দিয়ে উঠেছিলো হুরায়রার। যার ফলশ্রুতিতে ইয়াদ কফি চাওয়ার স্বত্বেও তাকে কফি না দিয়ে আম বাগানের চলে গিয়েছিলো সে। একরকম ইয়াদের উপর রাগ করেই সে শাস্তি, নিষেধ সব উপেক্ষা করে আম বাগানের দিকে ছুটে গিয়েছিল। ইয়াদ তখন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রক্তবর্ণ চোখে হুরায়রার চলে যাওয়া দেখছিলো। হুরায়রা যদি তখন একবার পিছন ফিরে তাঁকাতো তবে দ্বিতীয় বার বাড়ির বাহিরে এক কদম পা পেলার সাহস করতো না।

হুরায়রা যখন আম বাগান থেকে ফিরে এলো তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চলছে। হুমাশা বাড়ি ফিরার অনেক পরে সে বাড়িতে ফিরে। হুরায়রা যখন বাড়ি ফিরছিলো তখন তার রাগ অনেকটা প্রশমিত হয়ে গেছে। ইয়াদের কথা মনে পড়তেই মনের কোণে অজানা আতঙ্ক ভর করেছিল হুরায়রার। সে যখন বাড়ি ফিরে এলো ইয়াদ তখনো একিভাবে এক জায়গায় বসে ছিলো। ইয়াদের গম্ভীর মুখের দিকে নজর পড়তেই অন্তর আত্না কেঁপে উঠে হুরায়রার। তিন ঘন্টা যাবত ইয়াদ একিভাবে এক জায়গায় ঠায় বসে ছিলো ভেবেই তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। ভয়ে ভয়ে পা টিপে উঠান ফেরিয়ে রুসুই ঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই ইয়াদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আমার কফি নিয়ে ঘরে আয় হুর।”
ইয়াদের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে একেবারে জমে গিয়েছিল হুরায়রা। বেশ বুঝতে পেরেছিলো আর কিছুসময় বাদে তার সাথে কি ঘটতে চলেছে।

কফি মগ হাতে করে অতি সন্তর্পণে ঘরে ঢুকে ইয়াদের পিছন গিয়ে দাঁড়ায় হুরায়রা। ইয়াদ তখন জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। হুরায়রার উপস্থিতি বুঝতে পেরেও কিছু না বলে একিভাবে জানালার বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। হুরায়রা হয়তো কিছু বলবে সে আশায় সে কিচ্ছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিল অথচ না হুরায়রা তেমন কিছুই করলো না। বরং নতমস্তকে কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। হুরায়রার এমন আচরণ তাকে আরো ক্রুদ্ধ করে তুলল। অচিরেই আবার নিজের রাগ সংবরণ করে ফিরে হুরায়রা দিকে তাকায়। গম্ভীর দৃষ্টিতে হুরায়রাকে কিছুসময় পর্যবেক্ষণ করে হঠাৎ হাত থেকে কফির মগটা একপ্রকার কেড়ে নেয় সে। আচমকা এমন কিছু ঘটতে দেখে চমকে উঠে হুরায়রা। কিছু বুঝে উঠার আগেই ইয়াদ গরম কফি গড়গড় করে তার হাতে ঢেলে দেয়। হুরায়রা চিৎকার করে উঠতে নিলে মুখ চেপে ধরে। প্রচণ্ড জ্বালায় চোখ ছলছল করে উঠে হুরায়রার। ইয়াদ তাতেও খুব একটা মায়া প্রদর্শন করলো না বরং ঝলসে যাওয়া হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চেপে ধরে মুখের চোয়াল শক্ত করে বলল,

“তোর প্রতি অধিকারবোধ টা আমার কতটুকু সেটা হয়তো তোর ধারণার বাহিরে। কারো প্রতি অধিকারবোধ জন্মাতে তার প্রতি সহানুভূতির প্রয়োজন পড়ে না, তুই আমার সহানুভূতি নয় আমার তৃষ্ণাতুর হৃদয়ের এক ফোটা শিশিরজল।”
বলেই হুরায়রকে ঝাঁকি মেরে ছেড়ে দিলো। হুরায়রা ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পড়ে কাঁকিয়ে উঠে। হাতের যন্ত্রনায় আধমরা হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেও সে একবার ফিরে দেখলো না।হুরায়রা অসহায় ভঙ্গিতে তার দিকে তাঁকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো।
এই মুহূর্তে হুরায়রার হাতের যন্ত্রণা থেকে মনের যন্ত্রণাই বেশি পীড়া দিতে লাগলো।

বেশ কিছুটা সময় কেঁটে যাওয়ার পরো ইয়াদের মধ্যে সেইভাবে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না। ইয়াদের এমন আচরন আর নিতে পারল না হুরায়রা। লোকটার এমন হৃদয়হীনতা দেখে অন্তর আত্না যেনো শুকিয়ে এলো তার। কোনো মতে কান্না দমিয়ে রেখে মুখ খুলে বলল,
“আপনার মাঝে কি হৃদয় বলতে কিছুই নেই?”
হুরায়রার কথায় ভ্রুকুঞ্চিত করে তাঁকায় ইয়াদ।ইয়াদের তাঁকানো দেখে মনে মনে আহত হলো হুরায়রা। সে বুঝিতে পারে না ইয়াদ তাকে কষ্ট দিয়ে কি সুখ অনুভব করে।

“হাতে জ্বালা করছে?”
নির্লিপ্ত ভাবে বলল ইয়াদ।
হুরায়রা বিনাবাক্য ব্যায়ে মাথা নাড়লো শুধু।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কয়েক পা এগিয়ে আলমারি থেকে ফাস্ট আইড বক্স বের করে জায়গায় ফিরে এসে হুরায়রাকে বসতে ইশারা করলো। হুরায়রা বিনাবাক্য ব্যায়ে ইয়াদের সামনে এসে বসতেই ইয়াদ বলল,
“হাত দেখা দেখি, কতটা পুড়েছে?”

হুরায়রা ইয়াদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। এতক্ষণ সে যেটা চেপে রেখেছিলো একটু যত্ন পেতেই সেটা হুরহুর করে বেড়িয়ে এলো। খুব কান্না পাচ্ছে তার। হাতের জ্বালাটাও কেমন বাড়ছে সাথে ভিতর থেকে কান্না সব দলা পাঁকিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

ইয়াদ সযত্নে তার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। তাতে যেনো একটু শান্তি ফিরে পেলো হুরায়রা। তবুও তার কান্না বাঁধ মানতে চাইছে না সকল রাগ অভিমান আর ভালোবাসা যেনো কান্না হয়েই বেড়িয়ে আসছে। মুহুর্তেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। আচমকা তাকে কাঁদতেদেখে হতবিহ্বল হয়ে উঠলো ইয়াদ। বলল,
“কি হলো কাঁদছিস কেনো?”
হুরায়রা নাক টেনে টেনে বলল,
“আপনি সব সময় এমন কেনো করেন আমার সাথে?”
“কথার অবাধ্য হওয়া আমার মোটেই পছন্দ না।”
“কই হুমাশা যখন আপনার কথা শুনে না তখন তো আপনি ওকে এমন শাস্তি দিতে যান না তবে আমার সাথেই এমন কেনো?”
হুরায়রার কথার কোনো জবাব করলো না ইয়াদ।চুপচাপ হাতে মলম লাগিয়ে দিলো। বলল,
“এখন জ্বালা কমেছে?”
হুরায়রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাতেই আবার বলল,
“তবে এবার যাহ। আর শুন এটাই তোর জন্য শেষ ওয়ার্নিং এর পর যদি ভুলেও আম বাগানের নাম তোর মুখে শুনেছি তবে গরম কফি আর হাত নয় তোর ঠোঁটে ঢালবো।”

(১৩)
ইশরাক ইহতেসাম এর কেবিন থেকে বের হতেই অরার মুখোমুখি হলো নাবাদ। অরাকে দেখে আজ বেশ খুশি বলে মনে হচ্ছে। নাবাদকে দেখে সে আরো প্রফুল্ল হয়ে উঠলো।
“হাই নাবাদ”
“হ্যালো।”
” নাবাদ নাউ আই এম সো এক্সাইটেড। আই এম সো হ্যাপি।”
অনেকটা খুশি হয়ে বলল অরা। নাবাদ অরার এত খুশি হওয়ার কারন বুঝতে না পেরে মুখে বিরক্তবোধ ফুটিয়ে একটা ফ্যাঁকাসে হাসি দিলো।
“জানো নাবাদ মি.ইয়াদ আজ আমার কল ধরেছে আর কি হয়ছে জানো?”
নাবাদ পুরো বিষয়টা তোতক্ষণে বুঝতে পারলো অরার খুশির পিছনে আসল কারনটা ঠিক কি।

“আই ক্যান নট ভিলিভ দিস যে মি.ইয়াদ আমার ফোন ধরেছে আর বলেছে তোমাদের সবার সাথে যেনো আমিও গ্রামে যাই। উফ উনি যে আমাকে এমন একটা অফার দিবে আমি ভাবতেই পারিনি।”
“ওহহহ আচ্ছা ঠিক আছে। এএএই কি? কোথায় যেতে বলেছে?”
“তোমাদের সাথে গ্রামে যেতে প্রজেক্ট এর কাজের জন্য।”
“ওফ ভাইয়া যে কি একে কেন আবার গ্রামে নিয়ে যেতে বলছে।”
“এই কিছু বললে?”

“না আপনাকে কিছু বলিনি।
“সকাল সকাল এমন একটা সারপ্রাইজ পাবো আমি সত্যি ভাবতে পারি নি। মি.ইয়াদ নিজে আমাকে বলেছে।”
বলেই খুশিতে আত্নহারা হয়ে উঠলো অরা।
“এই মরেছে এখন কি হবে? তিয়াশা কোথায় গেলো।”
নোখ কামড়াতে কামড়াতে এইদিক ওদিক দেখে অরার দিকে তাঁকিয়ে জোড়পূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে স্থান ত্যাগ করলো নাবাদ।

হন্তদন্ত হয়ে তিয়াশার কেবিনে এলো নাবাদ।নাবাদকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে বেশ অবাক হলো তিয়াশা। কিছুটা সন্দিহান হয়ে বলল,
“কিছু হয়েছে নাবাদ।”
“ভাইয়া কি কাজটা জেনে করেছে নাকি না জেনে করেছে বলতে পারো?
“মানে কি হয়েছে।”
“আরে বলছি শুনো।”
“কি হয়েছে না বললে বুঝবো কি করে?”
“ভাইয়া অরাকে আমাদের সাথে গ্রামে নিয়ে যেতে বলেছে।”
“ঠিক বলেছে। এই কি বলেছে? অ-অরাকে নিয়ে গ্রামে?”
“তা আর বলছি কি।”
“কখন বলেছে? কাকে বলেছে এই কথা ইয়াদ?”
“অরাকেই বলেছে।”
“ওহ নো। এই সাইকো অরাকে সেখানে নিয়ে কি বিপদে পড়বো নাকি? ইয়াদকে ফোন করো তাড়াতাড়ি।”
“এ তো ইয়াদ ইয়াদ করে সারাদিন মাথা খেয়ে ফেলে। জানি না গ্রামে গিয়ে ভাইয়াকে পেয়ে কি করবে।”
“কিছুই করবে না মানে ইয়াদকে কল করে বল যে অরা আমাদের সাথে গ্রামে যাচ্ছে না।”
“ওকে। বাট ভাইয়া যদি না মানে?”
“তুমি আগে ওকে ফোনটা তো করো।”

নাবাদ কল করতে ইয়াদের ফোন দুবার বেজে কেঁটে গেলো। ইয়াদকে ফোনে না পেয়ে হতাশ দৃষ্টিতে তিয়াশার দিকে তাঁকালো নাবাদ। তিয়াশা মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে নাবাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আচ্ছা ইয়াদ নিজেই তো অরাকে যেতে বলেছে রাইট।”
“তেমন টাই তো বলল।”
“তাহলে চাপ নিও না।”
“মানে?”
“ইয়াদ যা করে খুব ভেবে চিন্তেই করে সো অরার গ্রামে যাওয়ার ডিসিশনটাও হয়তো খুব ভেবে চিন্তেই নিয়েছে। এর পিছনে কিছু কারন তো অবশ্যই আছে।”
“তুমি ঠিক বলেছো তাছাড়া আরেকটা বিষয় খুব ভাবাচ্ছে।”
“কোন বিষয়ের কথা বলছো তুমি?”
“নিউ প্রোজেক্টের ফাইল টা যেটা অরা হ্যান্ডেল করছিলো।”
“আমি যা ভাবছি তুমিও কি সেটাই ভাবছো?”
“শুধু তোমার কিংবা আমার ভাবনা নয়, এই ব্যাপারটা বাবাকেও ভাবাচ্ছে তবে আমার মনে হয় ভাইয়া বিষয়টা পুরোপুরিভাবে জানে তাই অরাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ডিসিশন নিয়েছে।”
“তা হতে পারে, সেই যাই হোক এবার কি উঠবে?”
“কোথায় যাবে?”
“কোথায় যাবো মানে? বাসায় যাবো কয়টা বাজে খেয়াল আছে?”
নাবাদ ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
“তবে চলো।”

পিচ ঢালা রাস্তা অতিক্রান্ত করে গাড়ি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে বাহিরের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তিয়াশা। শহরের ব্যাস্থময় অলি গলিগুলো মানুষে গিজগিজ করছে।হকাররা ফুটপাত দখল করে সেখানে দোকান খুলে বসেছে। লোকজন যে যার কর্মব্যস্ততায় ছুটে চলছে এদিক থেকে ওদিক। মাঝে মাঝে বিরামহীন শহরটাকে বড্ড প্রাণহীন বলে মনে হয় তিয়াশার।শহরে প্রাচুর্যতার অভাব না থাকলেও সেখানে সজীবতার বড়ই অভাব। মানুষ যেনো আর মানুষ নয় রক্তমাংসে গড়া রোবট হয়ে গেছে। শহরের এই যান্ত্রিকী জীবনে চলতে চলতে হাফিয়ে উঠেছে তিয়াশা। নিজেকেও আজকাল যান্ত্রিক মানব বলে মনে হয় তার। যেখানে কোনো হাসি নেই, নেই কোনো প্রাণচাঞ্চল্যতা। সর্বক্ষণ ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে হাঁফিয়ে উঠে তাবুও ভালো থাকার মুখোশের আড়ালে নিজেকে আড়াল করে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।অকারণেই তিয়াশার মন বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।

দূরে কয়েকটা দাঁড়কাক দেখে তিয়াশা সেদিকে পূর্ণ নজর দিলো। দাঁড়কাক গুলো কারেন্টের তারে এসে উড়ে বসছে। কয়েকটা আবার উড়ে গিয়ে ডাস্টবিনে বসছে খাবারের সন্ধানে। কাকা শব্দে মুখরিত করছে চারপাশ। শহরের মানুষগুলোর মতো দাঁড়কাকগুলোও খাবার সন্ধানে এদিক হতে ওই দিক ছুটোছুটি করছে। খাবার খুঁজতে কতই না ব্যাস্ত তারা। দেখে ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার। ছোট্ট এই জীবনকালে বেঁচে থাকার কত লড়াই চারদিকে। নানান ঘাত প্রতিঘাত আর প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কতই না স্বপ্ন দেখে মানুষ। তবুও কি তারা জয়ী হয়? নাকি জীবনের নিদারুণ সংগ্রামে পরাজীত সৈনিক হয়ে পৃথিবী নামক যুদ্ধময়দান থেকে চিরবিদায় নেয়।
নিজের এই ছোট্ট আয়ুষ্কালে নানান অবিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে তিয়াশা নিজেও। নিজের জীবনেও কম ঝড় ঝাপটা সে সহ্য করে নি সে।বেঁচে থাকার লড়াই সেও করেছিলো প্রতিনিয়ত কিন্তু দিন শেষে কি সে জয়ী হতে পেরেছে? নিজের মনে প্রশ্ন করে একটা লম্বা শ্বাস নিলো সে।

দেখতে দেখতে বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।তিয়াশা এখনো একিভাবে চিন্তামগ্ন। নাবাদ তিয়াশার এমন মূর্তি দেখে বলল,
“কোনো সমস্যা হয়েছে কি তিয়াশা? এই তিয়াশা তোমাকে কিছু বলছি আমি শুনতে পাচ্ছো?”
নাবাদের কথা কর্ণপাত হতেই বাস্তবে ফিরে এলো তিয়াশা।
“আমরা চলে এসেছি?”
“অনেক্ষণ আগেই কিন্তু তোমার কি হয়েছে বলো তো? পুরো রাস্তায় একটা কথাও বললে না আবার এসেছি সেই কখন থেকে তোমায় ডেকে যাচ্ছি কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কি হয়েছে বলো তো?”

নাবাদের করা সকল প্রশ্নের জবাব একটা মলিন হাসির মাধ্যমেই জানিয়ে দিলো তিয়াশা। যার অর্থ নাবাদ বুঝতে পারলো না। তিয়াশা আর সময় নষ্ট না করে গাড়ি হতে বেরিয়ে দ্রুত বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।

চলবে,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here