তোর নামেই এই শহর পর্ব -০৮

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_০৮

২৯)
আজ ঘুম ভাংতে অনেকটা দেরি হয়ে গেলো ইয়াদের। বিছানা ছেড়ে উঠে আড়মোড়া দিয়ে ঘর হতে বেড়িয়ে বাহিরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে। আজকের সকাল প্রতিদিনের চেয়ে কিছুটা ব্যাতিক্রম বলে মনে হলো তার। ঘড়িতে তখন নয়টা বাজলেও আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। হাই তুলতে তুলতে সে নিজের মনে বলল,

“আকাশটা এত মেঘলা মনে হচ্ছে এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে। আর কুয়াশাটাও যেনো একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে।”

রাহেলা বেগম বাড়ির পিছনের দিক থেকে আসতেই ইয়াদের দিকে নজর পড়লো। ইয়াদ তখন নির্লিপ্তভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহেলা বেগম ইয়াদের দিকে কিছুটা সময় তাঁকিয়ে থেকে হঠাৎ খেঁকিয়ে উঠে বললেন,
“হ্যাঁরে ইয়াদ তোর কি আক্কেল জ্ঞান সব গেছে?”

নানীর এমন কর্কশ কণ্ঠস্বর শুনে গাড় ফিরিয়ে তাঁকায় ইয়াদ।রাহেলা বেগম আরেকবার হুংকার ছেড়ে বললেন,

“তুই নাকি নাবাদরে কল কইরা কইছোস আমি নাকি সারা দিন চেঁচাইয়া বাড়ি মাথায় করে রাখি? বলি তুই কোন দিন আবার এই সব কওয়া শুরু করছোস? তুই তো এমন কথা কওনের পোলা না।”
রাহেলা বেগমের কথা শুনে ইয়াদ যেনো সপ্তম আকাশ হতে পড়লো। সে কখন নাবাদকে এমন কথা বলেছে ভেবে পেলো না।
“হ্যাঁরে ইয়াদ তুই সত্যিই আমারে নিয়া এমন কথা কইতে পারলি?”

” নানী আমি এমন কথা নাবাদকে কেনো বলতে যাবো?”

“তাহলে হুরায়রা যে কইলো তুই নাকি কাইল রাইতে নাবাদরে ভিডু কলে এইসব কইছোস?”

রাহেলা বেগমের কথা ভ্রুকুঞ্চিত করে ফেললো ইয়াদ। বলল,
“কে বলেছে এসব তোমাকে?”

“কে কইবো আমার কলিজার টুকরায় কইছে,,আরে হুরায়রা।”

“হ্যাঁ শুধু কলিজার টুকরা না নানী তোমার গোটা কলিজাটা একদিন খাবে এই মেয়ে মনে রেখো।”

“ওমা এসব কেমন কথা কস তুই ইয়াদ।”

ইয়াদ আর কোনো কথা না বলে বাহিরে পা বাড়ালো। পেছন হতে রাহেলা বেগম অনবরত বকে যাচ্ছেন। ইয়াদ সে দিকে কর্ণপাত না করে পুকুর ঘাটের দিকে হাঁটা ধরলো।

হুরায়রা এখনো একিভাবে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।টলমলে স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে বেশ লাগছে তার।ইয়াদ আলস ভঙ্গিতে এসে তার পাশে বসল। বলল,

“নানীর কাছে আবল তাবল কথা বলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তোর তাই না।”
হুরায়রা ইয়াদের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। ইয়াদ দু হাত পিছনে রেখে তাতে ভর দিয়ে আয়েশ করে বসলো। তারপর হুরায়রার উদ্দেশ্যে নির্লিপ্তভাবে বলল,

“জানিস তো হুর প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে যার গন্ডি পেরিয়ে সে মানুষটির আর কিছুই করার থাকে না। প্রতিটা সীমাবদ্ধতা তাকে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে যে তুই তার বাহিরে এক পা দিলেই ধরনীর সব নিয়ম ভঙ্গ করা শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে।”

ইয়াদের এমন কঠিন কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকালো হুরায়রা। ইয়াদকে দেখে কেমন যেনো ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত মনে হলো তার। মুখে মলিনতার ছাপ তবুও কি অনিন্দ্য লাগছে দেখতে। হুরায়রা অনিমেষ নয়নে ইয়াদের অবসন্ন মুখপানে তাঁকিয়ে রইলো। ইয়াদ উদাসভাব নিয়ে হুরায়রাকে এক নজর দেখলো তারপর নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“মানুষের মনটাকে কেনো সৃষ্টিকর্তা এত বেহায়া করে বানিয়েছে বলতে পারিস?”
হুরায়রা মাথা দোলাতেই ইয়াদ আবার বলল,

“মন জানে যে সে যা চাইছে তা কখনো পাওয়ার নয় তবুও সে বার বার তারই পানে ওই না পাওয়ার পিছনেই ছুটে চলে, অন্ধকারেও যদি একচিলতে আলোর দিশা খুঁজে পায় সেই আশায়। মন জিনিসটা সৃষ্টি কর্তার অশীম দান যার উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না তবুও সৃষ্টকর্তা এই মন দ্বারা মানুষকে বার বার পরাস্ত করে।”

“আপনি এমন কঠিক কথা কেনো বলছেন?”

ইয়াদ বিনিময়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে হুরায়রার প্রশ্নের জবাব দিলো। ইয়াদের হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকা জবাবটা হুরায়রা বুঝতে পারলো না। আর বুঝার কথাও না। পৃথিবীতে হাসিই হলো সেই অমোঘ অস্ত্র যা মানুষকে অতিসত্বর ঘায়েল করতে জানে আবার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কথার জবাবও দিতে পারে।

ঘাটের সিঁড়িতে দুজন চুপচাপ বসে আছে। হুরায়রার ডুবন্ত পায়ের কিছু অংশ পানিতে ভাসছে। ইয়াদ সে দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি হাসলো আর মনে মনে বলল,

“পৃথিবীর সব সৌন্দর্য বিধাতা নারীকেই দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু সব নারীতে তো সব পুরুষের মোহ কিংবা ভালোবাসা জাগে না, জাগে শুধু একটি নারীতে যাকে পুরুষ তার হৃদয়ের সবটা দিয়ে প্রণয়ে আবদ্ধ করে নেয়। আচ্ছা ওই একটি নারীতেই কেনো পুরুষ তার সর্বস্ব হারায়, হারায় তার হৃদস্পন্দন?বিধাতা কি সেই একটিমাত্র নারীর জন্যই তার ভালোবাসা নির্ধারণ করে রেখেছেন? যদি তাই হয় তবে সমাজে এমন অনিয়ম কেনো হয় যখন পুরুষ তার প্রেয়সীকে ছেড়ে অন্য নারীতে সুখ খুঁজে বেড়ায়?”

এইসব ভাবনার কোনো কূল কিনারা পেলো না ইয়াদ।অচিরেই সে আবার হুরায়রার ভাবনায় ডুব দিলো।

“বিধাতা কি মনুষ্যজাতির সকলকেই মন নামক বস্তুটি দান করেছেন?

“কেনো তোর কি মনে হয়?”

“আমার মনে হয় তিনি আপনাকে সেটা দিতে ভুলে গেছেন।”

“এমনটা কেনো মনে হলো তোর?”

“নয় তো কি? আপনার মত হৃদয়হীন লোক পৃথিবীতে দুটো হয় কি না আমার জানা নেই।”

“মোর হৃদয় খানি করেছি বন্ধি রুদ্ধদ্বারের ওপাশ, চাইলে সে পায় দেখা রুদ্ধদ্বারের এপাশ।”

“কোন কবি লিখেছেন এই চরণ দুটি?”

“কেনো তোর সমুখে যে বসে আছে সে।”

“আপনি কি নিজেকে কবি বলে দাবি করছেন?’

“যে কবি তাকে কবি বলে আলাদাভাবে দাবি করতে হয় না রে পাগলী।”

“আপনি আর যাই হোন না কেনো কখনো কবি হতে পারবেন না, কবি হতে গেলে প্রশস্ত হৃদয় লাগে যেটা আপনার মাঝে অনুপস্থিত।”

“হৃদয়হীন সকলে হতে পারে না তাই এটার মাহাত্ম্য ও যে কেউ দেখতে পায় না।”

“আপনার হৃদয়হীনতা যে অন্য কারো হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ করে সেটা কি বুঝেন আপনি।”

হুরায়রার কথা ইয়াদের ভাবান্তর হলো না। তার মুখের দিকে তাঁকিয়ে চোয়াল শক্ত বলল হুরায়রা,

“আপনি কি আমার চোখে কিছুই দেখতে পান না?”

ইয়াদ হুরায়রার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

“তোর চোখ কি টিভির পর্দা যে সেখানে সব দেখা যাবে?”

“টিভির পর্দা তো নয়, মনের পর্দা।”

“বাহ আজকাল খুব কথা শিখেছিস।”

” আপনাকে ভালোবাসি কতবার বলবো? আপনি কেনো বুঝেও বুঝেন না সেটা।”
ছলছল চোখে ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল হুরায়রা।

“তোর মনে আমার জন্য যে অনুভূতি রয়েছে তাকে কোনো ভাবেই ভালোবাসা বলা চলে না সেটা তোর ভালোলাগা কিংবা ক্ষনিকের মোহ মাত্র। এই বয়সে এমন হয় রে পাগলী। যখন তুই আরেকটু বড় হবি তখন দেখবি আমার জন্য তোর মনে সে সুপ্ত অনুভূতিটা রয়েছে সেটা আর থাকছে না।”

হুরায়রা ছলছল নয়নে তাকিয়ে ইয়াদের কথাগুলো শ্রবন করে যাচ্ছে। সে কিছুতেই ইয়াদকে বুঝাতে পারছে না তার মনে ইয়াদের প্রতি যে সুপ্ত অনুভূতিটা আছে সেটা নিচক ভালোলাগা কিংবা ক্ষনিকের মোহ নয় সেটা শুধুই ভালোবাসা। কিন্তু যে অবুঝ তাকে বুঝিয়ে বুঝান যায় আর যে বুঝেও অবুঝ তাকে বুঝাবে কি প্রকারে?

“বিশ্বাস করুন আপনার প্রতি আমার ভালোলাগা আছে কিন্তু সেটা ক্ষনিকের মোহ থেকে নয় ভালোবাসা থেকে।”

“তুই বড্ড অবুঝ হয়ে উঠছিস হুর, তোকে আমি কি করে বুঝাই।”

“আমি বুঝতে চাই না সেসব, আপনি কি আমাকে একটু ভালোবাসতে পারেন না? পারেন না আমাকে নিজের করে নিতে?”
বলেই ব্যাথিত হৃদয় আকুল হয়ে ইয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো হুরায়রা।
“আমার বয়স কত জানিস হুর? ছাব্বিশ আর তোর বয়স কত বল?”
“ষোলো বছর।”

“আমি তোর থেকে এইইইই দশ বছরের বড়, তুই যখন জন্ম নিয়েছিস তখন আমি তোকে পুতুলের মত করে আগলে রেখেছিলাম তোকে কত কোলে নিয়েছি। আর তুই আমার কোলে কতবার ইয়েও করেছিস জানিস? এখন তুই কিনা বলছিস তুই আমার প্রেমে পড়েছিস?
বলেই হোহো করে হাসলো ইয়াদ।

ইয়াদের এমন হাসি দেখে হুরায়রা ভগ্ন হৃদয় যেনো আরো ভেঙে গেলো। ইয়াদ আজ তার অনুভূতিগুলো নিয়ে এইভাবে মজা করছে হয়তো একদিন সে তার অনুভুতির পিছনে লুকিয়ে থাকে যন্ত্রণা কি তা বুঝবে কিন্তু ততো দিনে তার মন এমন শ্রাবনের টলটলে ভরা নদী মতো থাকবে তো নাকি সেই নদী ততো দিনে শুকিয়ে রুক্ষতা ধারন করবে।

হুরায়রা ইয়াদের সামনে আর বসে থাকতে পারছে না। তার তপ্তহৃদয় যেনো দিশাহারা হয়ে উঠেছে। তার তৃষ্ণাত্ব হৃদয় একফোঁটা ভালোবাসার শুন্যতায় হাহাকার করে উঠলো। এইমূহুর্তে ইয়াদের কাছাকাছি বসে থাকার মত ক্ষমতা তার নেই, অচিরেই বসা থেকে উঠে সে। পানি থেকে পা তুলে সামনে বাড়াতে হঠাৎ পা পিছলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদ তাকে শক্ত হাতে ধরে ফেললো। এক ঝটকায় হুরায়রাকে কাছে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,

“প্রেমে পড়েছিস পড় পানিতে পড়িস না যেনো।”

হুরায়রা নিজেকে ইয়াদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গটগট করে পা চালিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। ইয়াদ হুরায়রার চলে যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে ভিড়ভিড় করে বলল,

“তোর জন্য মনে প্রেম জাগে তবু ভালোবাসা জাগে না। প্রেম আর ভালোবাসা যে এক নয় পাগলি দুটো মুদ্রার এপিঠ ওপিট।”

৩০)

সকাল হতেই বাড়িতে আয়োজনের একপ্রকার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হুমায়রা সকালের নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে রেখে আবার রসুই ঘরের দিকে ছুটে গেলো। আজ তার কাজের শেষ নেই। পুরো পরিবারের সকল দায়িত্ব তাকে একা হাতে সামলাতে হয়। বাড়ির বড় বউ হিসেবে সংসারের দায়িত্ববোধটা তার একটু বেশিই।
মালিহা রান্নাঘরে গরম গরম পরোটা ভেজে তুলছে তার পাশে বসেই রাজিয়া তাকে পরটা বেলে দিচ্ছে। সকালের নাস্তাটা আজ মালিহা ই তৈরী করছে আর তাকে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে রাজিয়া। রাজিয়া এই বাড়ির পুরাতন কাজের লোক। বয়স প্রায় চল্লিশ এর কোঠায় পড়েছে। রাহেলা বেগমের অতি বিশ্বস্ত জন হলেন রাজিয়া। রাহেলা বেগমের সকল কাজে তাকেই চাই। এই বাড়ির আর সব সদস্যের মতো সেও এই বাড়ির এক জন হয়ে উঠেছে এত বছরে। হুমায়রা এবং মালিহা দুজন জা হলেও তাদের মাঝে ভাব ভালোবাসাটা একেবারে বোনের মতো। মালিহার সকল আদর আবদার সব হুমায়রার কাছে অথচ মালিহাকে দেখলে বুঝার উপায় নেই সে তিন সন্তানের মা এমনকি বড় মেয়ের বিয়েও দিয়েছে বছর খানেক আগে।

হুমায়রা রান্নাঘরে ঢুকে মালিহাকে তাড়া দিয়ে বললেন,

“হ্যাঁরে ছোটো তোর হলো? সবাই খাবার টেবিলে হাজির হবে এক্ষুনি।”

“এই তো বুবু হয়ে এলো আর কয়টা।”

“শুন ছোটো ইয়াদ কিন্তু তেলে ভাজা পরোটা খায় না ওর জন্য তেল ছাড়া রুটি করে দে তাড়াতাড়ি।”

“এই নাও বুবু ইয়াদের খাবার আগেই করে রেখেছি। আর রাজিয়া খালা নিন তো ইয়াদের সবজি আর সালাদের বাটিগুলো এই দিকে বাড়িয়ে দিন।”

রাজিয়ার হাত থেকে খাবার নিয়ে হুমায়রা আবার ঘরের দিকে ছুটলো। ততক্ষণে ইয়াদ, ইনান,জাফর আহমেদ খাবারের টেবিলে উপস্থিত হলেন। হুমায়রা একে একে সকলের খাবার সামনে দিয়ে শ্বাশুড়ির খাবার আনতে আবার রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই রাহেলা বেগম তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার জন্য এত জলদি কিছু করন লাগবো না বড় বউ, আমি এখন কিছু খামু না।”

“কি ব্যাপার আম্মা আপনার কি শরীর খারাপ করছে?”

“আহা আমি কখন ওইডা কইলাম, আমি কইলাম আমি এখন খামু না।”

“আচ্ছা আম্মা।”

“শুনো বউ হুরায়রা কই গেলো এখনো যে খাইতে আইলো না?”

“হুমাশা গেছে ডেকে আনতে এক্ষুনি আসবে।”

“শুনো বউ মাইয়ার দিকে একটু চোখ কান দিয়া নজর রাইখো আইজ কাইল হুরায়রার মতি গতি আমার কিন্তু সুবিধার মনে হইতাছে না।”

শ্বাশুড়ির এহেন কথায় কিছুটা অবাক হলো হুমায়রা।অবিলম্বে আবার শ্বাশুড়িকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

“কিন্তু আম্মা,,।”

“শুনো বউ তোমরা খালি সংসার সামলানোর জন্য এই বাড়ির বউ হইয়া আসো নাই বাড়ির পোলা মাইয়াগো দিকে একটু ভালো কইরা নজর দিয়ো বুঝছো,আমার হুরায়রার মন মানসিকতা যে ভালা না সে খেয়াল কি তোমাগো আছে?”

শ্বাশুড়ির এই কথাটা হুমায়রাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুললো।ব্যাপারটা যে তার চোখ এড়িয়ে গেছে এমনটাও না। বেশ কিছুদিন ধরেই হুরায়রার মাঝে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন তিনি। আগের মতো তেমন একটা ঘর থেকে বের হয় না সে।আবার সবার সাথে খাবার খেতে ডাকলেও নানান অজুহাতে এড়িয়ে যায়। যখন সবার খাবার শেষ হয়ে যায় তখনই এসে মায়ের কাছ থেকে খাবার চেয়ে খায়। মাঝে মাঝে আবার বায়না করে মায়ের হাতে খাবে বলে।

“আহা মা তুমি এত চিন্তা করো না তো সামনে পরিক্ষা তো তাই পড়াশুনা নিয়ে একটু চিন্তিত হয়তো।”

“শুন জাফর তুই কি তোর মাইয়ারে আমার থেইকা বেশি চিনছ?”

“মা মেয়েটা বড় হচ্ছে, সামনে পরীক্ষা এই সময় এইসব কথা কি না বললেই হয় না?”
বলতে বলতে মুনতাসির এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন।

“হ্যাঁ এই পড়ালেখা পড়ালেখা কইরাই মেয়েটার মাথা তোরা খাইয়া দিলি,মেয়ে মানুষের এত পড়া লেখা কইরা কি হইবো শুনি?”

রাহেলা বেগমের কথায় মুনতাসির আহমেদ কিছু বলতে গেলে জাফর আহমেদ তাকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলেন।

“দেখো মা মেয়েটা আমার বড় হচ্ছে। আর এই সময় ওর সামনে এমন কিছু বলো না যেটা ওর মনে দাগ কাঁটতে পারে।ও এখন যে বয়সটা অতিক্রান্ত করছে সেটার দিকেও আমাদের নজর দেয়া দরকার। এই বয়সে ছেলে মেয়েদের এমন একটু আধটু মন খারাপ হয় এতে তাদের সাথে কড়া ব্যাবহার কিংবা কড়া কথা না বলে বন্ধুর মতো মেশা দরকার যাতে করে তারা সব সমস্যা আমাদের খুলে বলতে পারে।তাছাড়া ওকে একটু সময় দেয়া দরকার হয় তো পড়াশুনা নিয়ে চাপে আছে। এই সময় মেয়েটাকে নিয়ে এমন কিছু বলো না।”

“শুন জাফর পোলা মাইয়া শুধু তোমরাই জন্ম দাও নাই আমিও দিছি।তোমাগো সবাই রে লালন পালন কইরা বড় করছি তাই আমারে এসব শিখাইবার আইসো না। মেয়ে বড় হইতাছে তাই বিয়া সাধি দেওন যায় কিভাবে হেইডা দেখো।”

“আম্মা হুরায়রা এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে। এসব আপনি কি বলেন?”

“দেখো ছোট বউ তুমি এর মধ্যে থাইকো না আর আমি যা কইতাছি তা হুরায়রার ভালোর জন্যই কইতাছি।”

“দেখো মা হুরায়রার বিয়ে নিয়ে এখন এত কিছু ভাবার দরকার নেই।মেয়েটা পড়ছে পড়তে দাও এসব নিয়ে পড়ে আলোচনা করা যাবে।”

“পরে আর কি আলোচনা করবা?একখান কিছু ঘটলে তখন বুঝবা এই বুড়ি ভুল কিছু কয় নাই।”

ইয়াদ এতোসময় ধরে সবার সব কথা শুনেও কিছু বললো না চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো। হুরায়রার বিষয়টা যে তার নজরে পড়েনি এমনটা নয়। তবুও সে একপ্রকার গা ছাড়া ভাব নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। হুরায়রার এমন পাগলামীর কারন সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু তাতে সে বিন্দু পরিমাণ সায় দিবে না বলে মনস্থির করলো। হুরায়রা বয়স কম। এখন সে যা করছে সবটা তার আবেগ। এখনো সে বুঝে না কোনটা তার জন্য ঠিক আর কোনটা বেঠিক। বাস্তবতা কি সে জানে না তাই সে চায় না হুরায়রা এমন একটা বয়সে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিক। হুরায়রাকে বড় হতে হবে বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।যেটা হবার নয় সেটা জোর করে হওয়ানো যায় না তাকে সেটা বুঝতে হবে আর তার জন্য যদি ইয়াদকে আরো কঠিন হতে হয় তবে সে তাই হবে।

কথায় বলে বাল্যপ্রেম অতি ভয়ংকর। যৌবনে পদার্পণ করার পূর্বে যে প্রেমের সূচনালগ্ন তা অবিনশ্বর।
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here