তোর নামেই এই শহর পর্ব -১০

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_১০

৩৪)

আসরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়েই ইয়াদের মুখোমুখি হলো সামির। ইয়াদকে দেখে সে ঠোঁট প্রসারিত করে কয়েক এগিয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে বলল,

“হ্যালো মি.ইয়াদ।”

“পাকাপাকিভাবে গ্রামে থাকার প্লান আছে নাকি?”
সামির আরেকবার ঠোঁট প্রসারিত করে দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

“একরকম তাই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি অলরেডি প্লান সাকসেসফুল করে ফেলেছেন।”
ইয়াদ বিনিময়ে মুখে লম্বা হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,

“ইতি মধ্যে তাহলে নিউজ পেয়েই গেছেন।”

“হোয়াই নট মি.ইয়াদ। বাই দ্যা ওয়ে শুনলাম আপনার পার্সোনাল সেক্রেটারি মিস অরাও নাকি আসছে?”
“সেটাও মনে হচ্ছে আপনার অজানা নয়। এত কিছুর খবর যখন রেখেন এটাও পেয়েছেন নিশ্চই।”

“তা অবশ্যই ঠিক। নামাজ পড়েছেন?”

“জামায়েতেই পড়েছি।”

“চলুন সামনে যাওয়া যাক।”

পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে হুরায়রাদের বাড়ির রাস্তার কাছে এসে পৌঁছালো দুজন।সামির বার কয়েক এদিক সেদিক তাঁকিয়ে ইয়াদের উদ্দেশ্যে বলল,

“মি.ইয়াদ আপনি তাহলে প্রজেক্ট হাত ছাড়া করছেন না?”

“প্রশ্নই উঠছে না।”

“আপনি কি নিয়ে খেলা করছেন বুঝতে পারছেন তো?”

“সেটা বুঝার বিশেষ কোনো আবশ্যতা আছে বলে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে না।”

“আপনি বড্ড জেদি।”

“সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”

“ওয়েল ডান মি.ইয়াদ ইহতেসাম। বাই দ্যা ওয়ে আগামিকাল আমি একটা নিউ প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছি। আর সেটা নিয়ে একটা ছোটো খাটো পার্টির থ্রো করছি আশা করছি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সাথে মি.ইশরাক এবং মি. নাবাদকে নিতে ভুলবেন না।”

“অবশ্যই।”

“ওকে আজ আসছি আগামী কাল তাহলে দেখা হচ্ছে।”

“বাই সী ইউ।”

সামির চলে গেলে ইয়াদ পুকুর ঘাটে এসে আয়েশি ভঙ্গিতে বসল কিছুক্ষণ। সেখানে বসে ইনান আর হুমাশাসহ আরো দুজন শ ক্যারাম খেলছে। ইয়াদকে দেখে হুমাশা খুশী হয়ে বলল,

“তুমি আমার হয়ে খেলবে ইয়াদ ভাই?”

“খেলা যায় তবে?”

“তবে কি?”

“যদি খেলি আমায় কিন্তু পেয়ারার ভাগ দিতে হবে।”
ইয়াদ বলার সাথে সাথে হুমাশা রাজী হয়ে গেলো।
পুকুর পাড়ে ক্যারাম খেলা বেশ জমে উঠেছে। ইনান ক্যারাম খেলায় বেশ পাকা। হুমাশা আর ইয়াদ একদিকে ইনান আর পাশের বাড়ির ফায়াজ এক দিকে।

হাতে গরম গরম শিঙারা নিয়ে হুরায়রা পুকুর ঘাটের দিকেই এগিয়ে আসছিলো। ইয়াদকে সেখানে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। ইয়াদ তার জায়গা দখল করে বসেছে। ব্যাপারটা তার মোটেই পছন্দ হলো না। ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে এসে একেবারে ইয়াদের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল সে। বলল,
“আপনি আমার জায়গা নিয়েছেন কেনো?”
ইয়াদ হুরায়রার দিকে না তাঁকিয়ে খেলায় গভীর মনোযোগ রেখে বলল,
“জায়গায় কি তোর নাম লিখা ছিলো? কই আমি তো দেখতে পাই নি।”

“এখানে আমি বসেছিলাম, একটুখানি উঠে যেতেই আপনি এসে জায়গাটা নিয়ে নিলেন?”

“উফ মেজদি এমন করছো কেনো ইয়াদ ভাই আমার দলের হয়ে খেলছে তোমার চেয়ে ভালো খেলছে দেখবে আজ আমরাই জিতবো।”

“এহহহ কুচুটে মেয়ে কোথাকার তোকে তো আমি,,,।”

“মেজদি যা তো আমাদের খলতে দে।”

“শয়তান মেয়ে এর পর আসিস আর আমার কাছে কিছুর জন্য কচুটা দিবো মনে রাখিস।”
বলে হুরায়রা রাগে গজরাতে গজরাতে সেখান থেকে চলে গেলো।
ইয়াদ খেলা থেকে মুখ তুলে একবার দেখলো হুরায়রাকে। ইতিমধ্যে সে অঞ্চল ছেড়ে গেছে। হুরায়রা চলে গেলে ইয়াদ ইনানকে বলল,
“তোর বোন বড্ড জেদি বুঝেছিস তো ইনান। এই মেয়ের জেদ দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে।”

(৩৫)

হুরায়রা মুখভার করে হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের উত্তর কোণে এসে দাঁড়ালো। এখান থেকে ইয়াদকে বেশ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। ইয়াদের গাম্ভীর্যপূর্ণ চেহারায় দাম্ভিকতার ছাপ স্পষ্ট।হুরায়রা সে দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আজকাল ইয়াদের প্রতি দুর্বলতা একটু বেশিই অনুভব করছে সে। ব্যাকুল হৃদয় বারবার ইয়াদের মনের দোরগোড়ায় গিয়ে থমকে দাঁড়ায় ভেতরে প্রবেশ করার অনুমুতি কিংবা অধিকার টুকুও সে পায় না। ইয়াদের মনের গভীরতায় প্রবেশ করার সাহস বা শক্তি কোনটাই তার নেক। যে মানুষ তার মনের দোরগোড়ায় পাথরের বিরাট পাঁচিল তুলে রাখে সে পাঁচিল ভাঙবে এমন সাধ্যই বা কার।

ইয়াদের দিকে অপলকে চেয়ে আছে হুরায়রা। তার তৃষ্ণাত্ব মন একবিন্দু ভালোবাসার ছোঁয়া পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে উঠছে। প্রেমাসক্ত মন অবাধ্য হয়ে উঠেছে একরত্তি উষ্ণ প্রণয়ের আবেশ পেতে। কিন্তু কোথায় পাবে? যার প্রণয়ে সে টালমাটাল সে তো তার অনুভুতি অনুভব করতে জানে না বরং পরিহাসের মতো হাজারটা বিশাক্ত কাঁটার আঘাতে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে।

চৈত্রের গরম বিকেল। চারপাশে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।পুকুরের উত্তর কোণে বাতাসের প্রবলতা একটু বেশি থাকে সব সময়। হুরায়রা সেখানে পাতানো বাঁশের টুলের উপর বসে বাঁধা চুল খুলে দিলো। প্রচণ্ড বাতাসে সেগুলো এলোমেলো হয়ে বারবার তার মুখের দিকটায় এসে পড়ছে। হুরায়রা জানে না তার অবাধ্য চুলের এমন ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা অন্য কারো মনে প্রবল ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। তার স্থির চোখ আর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মিষ্টি হাসিটা কারো শান্ত মনটাকে অশান্ত করে তুলছে।

সামির ভাবতেও পারেনি এই পথ দিয়ে যেতে সেদিনের সেই ষোড়শীটির দেখা মিলবে। কয়েক মুহূর্ত হুরায়রার দিকে তাঁকিয়ে থেকে শেষে চোখ সরিয়ে নেয়। মনে মনে কিঞ্চিৎ হাসে সে। নিজের বেহায়া চোখ দুটিকে শান্ত করতে বলে,
“দূর কি করছি কি আমি? পাগল হয়ে গেছি নাকি এত বাচ্ছা একটা মেয়ে আর আমি কিনা?”

আরো কিছুটা পথ চলতে চলতে পুকুরের একেবারে কাছাকাছি এসে দাড়িয়েছে সামির। হুরায়রা তখনো বাতাসে নিজের চুল উড়িয়ে চোখ বুজে বসে আছে। সামির আনমনে হাসলো। বঙ্গনারীর এত রুপ সে বোধ করি আগে কখনো দেখে নি।

“এই যে আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিলেন এমন কেন?”

হঠাৎ নারী কণ্ঠস্বর শুনে চমকে তাঁকায় সামির। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে পনেরো কি ষোলো বছর বয়সী একটি মেয়ে। মেয়েটি তার ভ্রু যুগল কপালে তুলে আবারো জিজ্ঞাস করলো। বলল,
“কথা বলছেন না যে? কে আপনি আর এখানে দাড়িয়েই বা কি করছেন?”
আকস্মিক প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সামির। কি বলবে বুঝে উঠার আগেই দেখলো মেয়েটি তার দিকে ভ্রুকুঞ্চিত করে রাগী রাগী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটির এমন চাহনি সামিরের মনে আরো একবার কম্পন ধরিয়ে দিলো। সহসা সে জবাব দিতে পারলো না।

“কে আপনি? আপনাকে তো এর আগে কখনো দেখি নি এখানে।”

সামির এইবার নিজেকে সামলে নিলো। নিজের মাঝে স্বাভাবিকতা এনে বলল,

“না দেখাটাই স্বাভাবিক কারন আমি এখানে থাকি না, এই তো মাত্র কয় দিন হলো গ্রামে এসেছি।”

“এখানে থাকেন না?”
আবারো ভ্রুকুটি করে বলল হুরায়রা।

“না পিচ্চি থাকি না।”

“এই যে আপনি আমাকে পিচ্ছি বলছেন কেনো? আমাকে দেখে কি আপনার পিচ্ছি মনে হচ্ছে?”
ঠোঁট বাকিয়ে বলল হুরায়রা।
হুরায়রার কথার ধরন দেখে হেসে ফেললো সামির। সামিরকে হাসতে দেখে হুরায়রা আবার বলল,
“কি ব্যাপার আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
“না তা বলো নি।”
“তবে হাসছেন কেনো?”
“এমনি ই হাসলাম।”
“আপনি ওই দিকে এমন করে কি দেখছিলেন?”
“এই যে পিচ্ছি বাচ্ছা তুমি তো দেখছি বেশ প্রশ্ন করো?”
“করবো না? আমি আপনাকে চিনি না আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে ওইদিকে কেনো তাঁকিয়ে ছিলেন?”

হুরায়রা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে গেলো। সামির সেগুলো শুনছে ঠিকই কিন্তু উত্তর দিতে পারছে না। হুরায়রা তাকে বলার সুযোগ না দিয়ে এক নাগাড়ে প্রশ্ন করে গেলো।
“এই যে বাচ্ছা মেয়ে তোমার প্রশ্ন করা শেষ হয়েছে?
সামিরের কথায় হুরায়রা গাল ফুলিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
“হু।
“তবে এইবার আমি উত্তর দেই?”
হুরায়রা কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লো।
“এই তো গুড গার্ল, তাহলে শুনো আমি সামির এহসান এই গ্রামেরই ছেলে। তবে গ্রামে খুব একটা আসা হয় না। প্রায় অনেক বছর পর এসেছি তাও একটা বিজনেস প্রজেক্টের ব্যাপারে। তুমি হয় তো আমাকে চিনবে না তবে তোমার বাড়ির একজন সদস্য আছেন যে আমাকে খুব ভালো করে চিনেন।”

হুরায়রা কিছু বলতে যাবে তার মাঝেই হুমাশা কোথায় থেকে ছুটে এলো। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
“মেজদি তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজে এসেছি জানো?”
হুরায়রা কিছু জিজ্ঞাস করতে গেলে হুমাশা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ইয়াদ ভাই তোমাকে ডাকছে এক্ষুনি যেতে বলেছে।”
“কেনো ডাকছেন আমায় তিনি।”
“আমি জানি না বলেছে এক্ষুনি যেতে।”
কথা শেষ করে আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না হুমাশা ছুটে বাড়ির দিকে চলে গেলো।
হুরায়রা সামিরের দিকে তাকালো একবার। মাথা থেকে পা পর্যন্ত কিছু পরখ করে দেখে বলল,
“আচ্ছা আমি আসছি।”
“ওকে যাও।”
হুরায়রা চলে যেতে নিলে সামির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এই যে বাচ্ছা তোমার নাম তো বললে না।
“হুরায়রা।”

হুরায়রা চলে গেলে সামির আরো কিচ্ছুক্ষণ একিভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির রাস্তা ধরলো।

(৩৬)
পর পর দুটো গাড়ি এসে হুরায়রাদের বাড়ির উঠোনে থামলো।রাহেলা বেগম উঠানের একপাশে দাঁড়িয়ে রাজিয়াকে দিয়ে লাউ কাঁটিয়ে নিচ্ছিলেন, বাড়ির উঠোনে দুটো গাড়ি এসে থামতে তিনি কাজ ফেলে এগিয়ে এলেন। খুশিতে আত্নহারা হয়ে বললেন,
“ওমা আমার বাড়িতে এরা কারা হ্যাঁ। বড় বউ, ছোটো বউ,ইয়াদ কই গেলা সবাই? ওরা আইসা পড়ছে জলদি আসো তোমরা।”
নাবাদ গাড়ির জানালা দিয়ে মাথাটা বের করে বলল,
“ডার্লিং মাই সুইট হার্ট আই এম কামিং।”

“ওমা আমার নাবাদ নানু ভাই,ওরে তোরা কই গেলি সবাই?”
“আসসালামু আলাইকু মা কেমন আছো?”
বলেই মেহেরিমা মেহের গিয়ে রাহেলা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি ভালো আছি তোমরা কেমন আছো আইতে কোনো সমস্যা হয় নি তো। জামাই বাবা কই?”

“এই যে মা আমি এইখানে, এইবার কিন্তু চলেই এলাম।”
বলে ইশরাক ইহতেসাম এসে শ্বাশুড়ির পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। ইতিমধ্যে সেখানে বাড়ির সকলে এসে উপস্থিত হলো। তিয়াশা গাড়ির ভেতরেই ছিলো নেমে এসে রাহেলা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“নানীজান তুমি দেখছি তোমার মেয়ে আর জামাইকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেছো।”
“ওমা তিয়াশা যে আসো নানুভী আসো তোমারে আমি কেমনে ভুলি কও তো? আর এই যে আমার নাবাদ নানুভাই ওরে নিয়া ঘরে যা এত দূর থেইকা আসছো তোমরা চলো চলো সবাই ঘরে চলো। ও বড় বউ যাও তুমি ওদের নিয়া ঘরে যাও।”
“জ্বী মা যাচ্ছি।”

ইয়াদ বাড়ি ছিলো না, সবে মাত্র এসেছে। তাকে বাড়ি ডুকতে দেখে তিয়াশা তার দিকে এগিয়ে গেলো। বলল,
“কোথায় ছিলে তুমি। বাড়ি এসে সবাইকে দেখছিলাম শুধু তুমিই ছিলে না।”
“পুকুরপাড় ছিলাম। একটু কাজ ছিলো। আসতে তেমন সমস্যা হয় নি তো?
“একেবারেই নয়,বরং অনেক এইনজয় করেই এসেছি,কি বলো নাবাদ।”
“তা ঠিক।”
“বাই দ্যা ওয়ে মিস অরা আসেন নি? উনার তো আসার কথা ছিলো।”

ইয়াদের কথায় তিয়াশা একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে গাড়ির দিকে ইশারা করলো। ইয়াদ সে দিকে তাঁকিয়ে দেখলো অরা তার মেক আপ ঠিক করতে ব্যাস্থ।
“এই মেয়ে গাড়িতে পার্লার খুলে বসেছে। সেই কখন থেকে সেজেই চলেছে এখনো সেটা চলছে।”
বলেই হাসলো নাবাদ।

ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে বাবা মাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক দিন পর তাদের দেখা হয়েছে। ছেলেকে দেখে মেহেরিমা এক প্রকার কেঁদেই ফেললেন। ইয়াদ তাকে শান্ত করতে বলল,
“কাঁদছ কেন মা। এসেই তো পড়েছো এখন থেকে রোজই দেখতে পাবে তোমার ছেলেকে।”
মেহেরিমা আঁচলে চোখ মুছে হাসার চেষ্টা করলেন। বললেন,
“একদম শুকিয়ে গেছিস। খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিক করে?”
“কে বলল তোমায় শুকিয়েছি। তাছাড়া তুমি এভাবে বললে বাড়ির সবাই কষ্ট পাবে ভাববে তারা আমার যত্ন করতে পারেন নি।”
“হ, তোমার পোলারে তো আমরা খাওন দেই নাই মা। তা ছাড়া হগল মায়ের কাছেই নিজের পোলা মাইয়া এমনই হয়। যেমন আমার মনে হইতাছে জামাই তোরে দেইখা শুইনা রাখে না তাই এমন কালা মতো দেখতে হইয়া গেছস।”
রাহেলা বেগমের কথায় উপস্থিত সকলে হাসলেন। বাবা মায়ের কাছে সন্তান যতই বড় কিংবা স্বাস্থ্যবানই হোক না কেনো বহুদিন পর দেখা হলে তারা এই কথাটিই বলেন। তারা বিশ্বাস করেন সন্তানরা বাহিরে গেলে খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করে এই যেন বহুকালের চিরাচরিত প্রথা।

অরা এতোসময় ধরে মেক -আপ নিয়ে এত ব্যাস্থ ছিলো যে কতক্ষণ আগে এসে পৌঁছেছে সেটা লক্ষ্য করে নি। হঠাৎ ইয়াদকে দেখে সে আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠলো। মুহূর্তেই গাড়ি থেকে নেমে ইয়াদের দিকে ছুটে এসে বলল,

“ওহ ওয়াও আমরা চলে এসেছি ওহ মি.ইয়াদ? ”

অরাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে বাড়ির সকলে তার দিকে হা হয়ে তাঁকিয়ে রইলো। বিশেষ করে রাহেলা বেগমের তাঁকানোর ভঙ্গিটা আলাদা ছিলো। তিনি অরার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার পরখ করে দেখে ভ্রু নাচিয়ে মুখ বাকিয়ে বললেন,
“ইয়া আল্লাহ এইডা কি মাইয়া মানুষ? কি পড়ছে এই মাইয়া?কে এইডা মেহেরিমা? ও জামাই এইডা তোমরা কারে নিয়া আইসো আমার বাড়িতে। এই মাইয়া এইরাম জামা পড়ছে ক্যান? ও আল্লাহ এই মাইয়ার দেখি লজ্জা শরম কিছুই নাই কেমন হাটু দেখাইয়া সিনা দেখাই জামা পড়ছে?”
রাহেলা বেগমের কথায় মুখ বাকিয়ে নিলো অরা। সাথে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“হু ইজ সী?সো ব্যাকডেটেড।”
ইয়াদ এতোক্ষণ ধরে কোনো কথা না বললেও এইবার সে অরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মিস.অরা আপনার কি কোনো সেন্স নেই? কোথায় কিভাবে চলতে হয় অতটুকু বুঝার বুদ্ধিও কি আপনার নেই?”
“ওহ মি. ইয়াদ আপনার মুখে এমন একটা কথা আমি মোটেই আশা করি নি।”
রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো ইয়াদ। অরার এমন বাড়াবাড়ি তার মোটেই পছন্দ নয় বিশেষ করে তার ড্রেস আপ।
“আপনার বুঝার উচিত ছিলো এটা কোনো হাই সোসাইটি কিংবা কোনো পার্ট নয় এটা গ্রাম।”
“তাতে কি আমি এটাতেই কমফোর্টেবল।”
ইয়াদ কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। নাবাদ আর তিয়াশা এক পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অরার মুখ দেখে নাবাদ হেসে বলল,
“কি বলেছিলাম তিয়াশা?”
“ইয়াদের রিয়েকশনটা মনে হয় মিস অরা এখনো বুঝতে পারে নি।”
“আরে দেখো না কি হয়।”
“হুম। আচ্ছা সবাইকে দেখতে পেলাম অথচ হুরায়রাকে তো কোথাও দেখছি না?”
“ভিতরে গেলে হয় তো দেখা হবে।”
“নাবাদ ভাইই?”
বলে হুমাশা পুকুর ঘাটের দিক থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে এলো। নাবাদ হুমাশাকে ছুটে আসতে দেখে বলল,
“ওরে আমার পাকনা বুড়ি কই ছিলি এতোক্ষণ? ”
“মেজদিকে ডাকতে গেছি, কখন এলে তোমরা?”
“এই তো কিছুক্ষণ, হুর কোথায়? আর ইনান?”
“আছে আছে ভিতরে চলো আগে।”
“হ্যাঁ এইবার যাওয়া যাক সবাই তো ভিতরে চলে গেলো।”
“চলো তিয়াশা আপু তুমি আমার সাথে চলো।”
“ওলে বুড়িটা চলো যাই।”

ঘরের দিকে ফিরতেই হুমাশার নজর পড়লো অরার উপর।অরাকে দেখেই পিক করে হেসে ফেলল সে। হুমাশাকে হাসতে দেখে রেগে কটমট করে তাঁকালো অরা। এমনিতেই আসতে না আসতে তার মোড খারাপ করে দিয়েছে সবাই এর মাঝে হুমাশাকে এইভাবে মুখটিপে হাসতে দেখে আরো রেগে গেলো। বলল,
“এই মেয়ে এমন হাসছো কেনো হ্যাঁ?”
“উফ মিস অরা তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে আসবে।”
নাবাদের কথায় মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তাদের পিছন পিছন চলল সে।
“বাহ মি.নাবাদ এটা গ্রাম হলেও বাড়িটা তো অনেক সুন্দর।”
“কেনো তুমি কি ভেবেছিলে অরা?”
“আমি তো ভেবেছিলাম বোধহয় ব্যাকডেটেড টাইপের ওই যে তোমার গ্রেন্ডমাদারের মতো।”

নাবাদ আর কিছু না বলে মাথা দুলিয়ে চলে গেলো। কারন এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে অরার বক বক শুনতেই হবে।
চলবে,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here