তোর নামেই এই শহর পর্ব -১৪

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_১৪

(৪৪)

রসুইঘরে রান্নার তোরজোড় চলছে। মালিহার হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে রাজিয়া। মেহেরিমা মেহের পাশে বসে তরকারি কাটছেন। হুমায়রা রসুইঘরে ঢুকে মেহেরিমার পাশে বসে তরকারি চুপচাপ কাটায় হাত লাগালেন। মুখে কাল বৈশাখীর আধার ঘনিয়েছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় আছেন। মালিহা চুলায় মাংস চাপিয়ে রাজিয়াকে সেটা দেখতে বলে হুমায়রার পাশে গিয়ে বসলো। হুমায়রার বিষণ্ণ মুখটা আর কারো নজরে না পড়লেও মালিহার নজরে ঠিকই পড়েছে। বুঝতে বাকি নেই তিনি কিছু একটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। মালিহা পিঠে আলতো করে হাত রাখতেই চমকে গেলেন তিনি। ফিরে একটু জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
“ও তুই। আমি ভাবলাম কি না কি। কিছু বলবি।”
মালিহা হুমায়রা মুখ দেখে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো। মেহেরিমা আছেন দেখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলল,
“চুলায় মাংস চাপিয়েছি। একবার দেখো না সব ঠিক ঠাক হয়েছে কিনা।”
“ওমা এটা আবার আমায় দেখতে হবে কেনো? তুই কি কম ভালো রাঁধতে জানিস নাকি।”
“না সকলে খাবে তো তাই বলছিলাম যদি একটু দেখতে এসে।”
“আমায় দেখতে হবে না ছোট। তুই করেছিস তো সব ঠিক ঠাকই হবে।”
মালিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে আবার চুলার কাছে গিয়ে বসলো। মেহেরিমা তরকারি কাটা শেষ করে বললেন,
“ভাবী তরকারি কাটা শেষ আমি একটু মায়ের কাছে যাই। কিছু লাগলে আমায় বলো।”
“যাও বুবু। তোমায় কত করে বারণ করলাম করতে হবে না তুমি তো শুনলে না কথা।”
“হয়েছে হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। কাটলামই এই টুকু তরকারি বাকি তো তুমি আর ছোট বউ ই করছো।”
হুমায়রা মৃদু হেসে আবার নিজের কাজে মন দিলেন। মেহেরিমা চলে গেলে মালিহা আবার উঠে এসে হুমায়রার পাশে বসে। আশপাশে একবার নজর বুলিয়ে গলা নিচু করে বললেন,
“বুবু তুমি কি কিছু নিয়া চিন্তা করতেছো? তোমারে যেন কেমন দেখাইতেছে।”
“নারে ছোট কিছু হয় নি। তুই রান্নাটা দেখ আমি একটু আসছি।”
হুমায়রা উঠে যেতে নিলে মালিহা তার হাত চেপে ধরে। বলল,
“তুমি সবাইরে ফাঁকি দিতে পারো বুবু কিন্তু আমার চোখে তা পারবা না। কি হইছে আমারে বলন যায় না?”
হুমায়রা উঠতে নিয়েও আর উঠলেন না। জায়গায় বসে প্রশস্ত শ্বাস ফেলে বললেন,
“হুরায়রা মতিগতি আমার কাছে ঠিক লাগছে না ছোট। সকালে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে ইয়াদের ঘর থেইকা বাহির হয়ে আসতে। আজকাল ইয়াদের মতিগতিও বুঝতে পারি না আমি। কি চলছে দুজনের মধ্যে?”
“তুমি ইয়াদরে সন্দেহ করতেছো বুবু! তুমি জানো না ইয়াদ কেমন ছেলে।”
“আমি জানি ছোট। ইয়াদের উপর আমার বিশ্বাস আছে বলেই তাকে আমি ভরসা করি কিন্তু আমার মেয়ে?”
“তুমি শুধু শুধু হুরায়রারে নিয়া চিন্তা করতাছো। এমন কিছুই না ইয়াদ শুধু ওরে একটু শাসন করে।”
“শাসন করা খারাপ না, তবে হুরায়রার চোখে আজকাল আমি অন্য কিছু দেখতেছি।”
মালিহা এবার প্রশস্ত শ্বাস ফেললো। হুমায়রার হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“বয়স টা খারাপ বুবু। তবে ইয়াদ বিচক্ষণ ছেলে সে কখনো এমন কিছুতে সায় দিবে না।”
হুমায়রা মালিহার জবাবে কিছু বলল না। তবে মালিহার কথাটাও নেহাত মিথ্যা নয়। ইয়াদ অন্তত পক্ষে হুরায়রার ছেলে মানুষীতে সায় দিবে না তবুও মায়ের মন এত সহজে কি সব মেনে নিতে পারে।

জাফর আহমেদ বাজার থেকে ফিরে হুরায়রা, হুমাশা এবং তিয়াশাকে পুকুরপাড়ে ডেকে পাঠালেন। পুকুরে আজ জাল ফেলা হবে। মুনতাসির, নাবাদ, ইশরাক ইহতেসাম মাছ ধরতে পুকুরে নেমেছেন।
তিয়াশাকে সঙ্গে করে হুমাশা অনেক আগেই সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। ঘাটের একেবারে উপরের সিঁড়িতে বসেছে তাড়া। এক্ষুনি জাল টানার লোকেরা নামবে। নাবাদ কোমর সমান পানিতে নেমে তিয়াশাকে ডেকে বলল,
“তোমরা দুজন এখানে আছো আরেক জন কোথায়?”
তিয়াশা আশপাশ দেখে হুমাশাকে বলল,
“হুরায়রাকে যে দেখছি না। ও কোথায়?”
“মেজদিকে তো দেখেছি ইনান ভাইয়ের সাথে কোথাও একটা গেলো।”
“কোথায় গেছে কিছু জানো তুমি?”
“উঁহু। ওরা দুটোতে খুব ভাব, শুধু ভাবই নয় মারামারিও করে কিন্তু বেশিক্ষণ রাগা করে থাকতে পারে না আবার মিল হয়ে যায়। যত আকাম কুকাম আছে সব সময় দুটো মিলে এক সাথে করে কিন্তু আমাকে ওদের মাঝে রাখে না জানো।”
“আহারে বেচারি। থাক মন খারাপ করো না।”
“আমার আবার ইয়াদ ভাইয়ের সাথে বেশ ভাব। সেটা আবার মেজদি সহ্য করতে পারে না জানো তো। ইয়াদ ভাই ওকে খুব শাস্তি দেয়।”
হুমাশার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো তিয়াশা। হুরায়রার প্রতি ইয়াদের অধিকারবোধ মাঝে মাঝে তাকে অবাক করে। একটা পুরুষ মানুষ কখন একটা কিশোরী মেয়ের উপর নিজের অধিকার খাটায়? তবে কি ইয়াদ হুরায়রাকে ভালোবাসে? কিন্তু তা কি করে হয় ওদের মধ্যে তো বয়সের অনেক ব্যবধান। এত ব্যবধানে আজকালকের দিনে কি কোন সম্পর্ক গড়ে উঠে?
তিয়াশার ভাবনা এলোমেলো হয়ে আসছে। ভালোবাসা বস্তুটাই হয় তো এমন যেখানে বয়স, জাত, বর্ণ, পরিচয় কংবা শত্রু, মিত্রতা মানে না। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোন কারণ লাগে না। যে কেউ যে কোন সময় যে কোন ব্যাক্তির প্রেমে পড়তে পারে। ইয়াদও হয় তো হুরায়রার প্রেমে পড়েছে। তাছাড়া সে নিজেও কি জানে বুঝে প্রেমে পড়েছিলো। যার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর কথা ভাবলেও পাপ বেহায়া মন বার বার তার প্রেমেই পড়ে কেন? সে তো একদিন ভালোবেসেছিলো। ভালোবেসে নিঃশেষ হয়েছিলো অথচ তখন কি জানতো যে মানুষটাকে সে ভালোবাসেছে তাকেই ছাড়তে হবে প্রিয়জনের মুখ চেয়ে।

সামিরকে ভালোবাসা যাবে না জেনেও সে তাকেই ভালোবেসেছিলো। কোন কারণ ছাড়াই ভালোবেসেছিলো। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ কিংবা সাধ্য কোনটাই তার ছিলো না। আর যাই হোক ইয়াদ যাকে শত্রু মনে করে তার পুরো পরিবার যাকে ঘৃণা করে তার সাথে আর যাই হোক ভালোবেসে সম্পর্ক গড়া যায় না অন্ততপক্ষে সে সেটা পারবে না। ভালোবাসা জিনিসটা সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত। যেটাকে সে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। একমাত্র নাবাদ ছাড়া কাউকে সেটা ঘুণাক্ষরে জানতে দেয় নি কখনো আর দিবেও না। নিজের বাবা মাকে হারিয়ে যে মামা মামির কাছে সে পরম যত্নে বড় হয়েছে তাদের সাথে আর যাই হোক ভালোবাসার জন্য বেইমানি করতে পারবে না। তাছাড়া ইয়াদ যেখানে সামিরকে সহ্য করতে পারে না সেখানে সে কি করে সামিরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবে। এমন কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারে না তিয়াশা। ইয়াদ তার সবচেয়ে কাছের, প্রিয়জন তার বন্ধু। তাকে অন্ততপক্ষে কষ্ট দিতে পারবে না সে।

ইনানের পিছু পিছু হুরায়রাও ঘাটের সিঁড়িতে এসে তিয়াশার পাশে বসলো। হুরায়রাকে বসতে দেখে তিয়াশার ধ্যান ভঙ্গ হলো। বলল,
“কোথায় ছিলে তুমি হুর তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিলাম হুমাশাকে।”
“নবনী আপুর বাড়ি গেছিলাম। একটু কাজ ছিলো।”
“এই নবনীটা কে?”
“তুমি চিনবে না আমাদের পাশের দুটা বাড়ি পরে তাদের বাড়ি।
বলেই হুরায়রা মাছ ধরা দেখা মন দিলো। তিয়াশা ইতিউতি দেখে আবার বলল,
“ইয়াদকে দেখছি না সকাল থেকে তুমি দেখেছো হুরায়রা?”
ইয়াদের নাম কর্ণকুহর হতেই হুরায়রার দুকান গরম হয়ে উঠলো। সকালের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় গাল দুটো গোলাপ রাঙা হয়ে উঠেছে। ইশ ইয়াদ এমন একটা কাজ করে বসবে সেটা ভাবতেই পারে নি সে। কেমন একটা পাগল করা অনুভূতি হচ্ছে তার। ভাবলেই লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে ইচ্ছা হয় তার।
হুরায়রাকে জবাব দিতে না দেখে তিয়াশা সবার প্রশ্ন করলো। বলল,
“দেখেছো কোথাও?”
“উঁহু দেখি নি তো। তাছাড়া উনার ন্যাকা ষষ্ঠী পিএস টাও তো নেই কোথাও। ”
“তাই তো অরা কেউ তো দেখছি না অনেক্ষণ। কোথায় গেলো দুজন? আচ্ছা দাঁড়াও ইয়াদকে কল করছি।”
“তাকে কল দিয়ে কি হবে তিয়াশা আপু। উনি এখন ওই শাঁকচুন্নিটাকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন।”
হুরায়রা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো তিয়াশা। অরার নামটা অবশ্য ভালোই দিয়েছে। শাঁকচুন্নি থেকে কোন অংশে সে কম নয়।

পুকুরে জাল ফেলে বড় বড় মাছ তুলা হয়েছে। হুরায়রা সেগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কতক্ষণ। সকালে এমন বড় বড় মাছ সামির বড়শিতে তুলেছে। আচ্ছা লোকটা বড়শিতে এত বড় মাছ কি করে ধরলো? হুরায়রার ইচ্ছা হলো বড়শি দিয়ে মাছ ধরার। তাই সে মনে মনে ঠিক করলো রাতে বাবাকে বলে একটা বড়শি কিনে আনাবে আর সেটা দিয়ে সে মাছ ধরা শিখবে।

ইনান সহ একটা বড় মাছ ধরাধরি করে উপরে তুলে আনছে নাবাদ। মাছটা বেশ বড়। এর আগে হুরায়রা এত বড় মাছ ধরতে দেখে নি। এটাই তাদের পুকুরের সব থেকে বড় মাছ। নাবাদ মাছটাকে ঘাটের উপরে রেখে হাঁফিয়ে বলল,
“এই মাছটা দিয়ে রাতে ফিস বারবিকিউ পার্টি হবে বুঝলি তো হুর।”
ইনান সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“বেশ হবে তাহলে। মাছটা দেখেছো কত বড় বারো কেজি তো হবেই।”
“তা হবে।”
হুরায়রা বেশ খানিকটা সময় মাছটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“এই একটা মাছ তোমরা দুজনে ধরে আনতে হলো? একটা কাজ করলে পারতে ওই যে শাঁকচুন্নিটা আছে ওটাকে দিয়ে তুলে আনালে হতো। বেশ গায়ে পড়ে পড়ে কথা বলে উনার সাথে। দেখলেই গা জ্বলে যায়।”
“আমার তো মনে হয় মাছটা এখন তোকে দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত নেয়া উচিৎ।”
পেছন থেকে ইয়াদের কথা শুনে ঘাড় ফিরে তাঁকায় হুরায়রা। ইয়াদ এতক্ষণ বাড়ি ছিলো না এক্ষুনি অরাকে সহ ফিরলো। ইয়াদের সঙ্গে অরাকে দেখে তার গা জ্বলে গেলো। ফোঁস করে বলল,
“আমাকে আপনার জেলে বলে মনে হয়।”
“না জেলেনি মনে হয়।”
“সেটা আবার কি?”
“কেনো জেলের ফিমেইল ভার্সন জেলেনি।”
ইয়াদের কথায় সায় দিয়ে অরা খিলখিল শব্দ করে হাসলো। অরাকে হাসতে দেখে হুরায়রা তার নাক উঁচু করে বলল,
“আপনার পিএস কে বলুন দাঁত বন্ধ করে হাসতে নয়তে রাত্রি বেলা দেখবে ছাতিমডালে পা ঝুলিয়ে বসা পেত্নীটা দাঁত খুলে নিয়ে গেছে।”
হুরায়রার কথায় সঙ্গে সঙ্গে হাসি মিলিয়ে গেলো অরার। গতরাতে তিয়াশাও একি কথা বলেছে জানালার বাহিরের ছাতিমগাছে একটা পেত্নী থাকে। ইয়াদের সাথে সেই পেত্নীর খুব ভাব। কে জানে কখন এসে তার ঘাড় মটকে দেয়।

(৪৪)

সন্ধের পর উঠোনে মাদুর বিছিয়ে সেখানে গল্প করতে বসলো সকলে। হুরায়রা, ইনান, নাবাদ তিয়াশা এবং হুমাশা মিলে গল্প জমিয়ে তুলেছে। চাঁদনী রাত। আকাশে বেশ বড় চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় সারা উঠোন আলোকিত। ইয়াদ আর অরা একটু দূরে চেয়ারে বসে প্রোজেক্টের কাজ করছে। হুরায়রা কথার মাঝে মাঝে দুএকবার তাদেরকে আড়চোখে দেখলো। অরার সাথে বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে ইয়াদ। অরা সে তো পারছে না ইয়াদের কোলে গিয়ে বসতে দেখেই হুরায়রা রক্ত গরম হয়ে উঠছে। মেয়েটা যে শুধু বেহায়া নয় একেবারে লুচি নাম্বার ওয়ান এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

“তোমারা একে এখানে কেনো নিয়ে এলে নাবাদ ভাই।”
হুরায়রার কথায় তিয়াশা নাবাদ দুজনি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। হুরায়রা আবার বলল,
“এই মেয়ে দেখছি আচ্ছা একটা লুচি।”
“লুচি?”
“আরে বুঝলে না লু/চুর ফিমেইল ভার্সন আর কি।”
তিয়াশা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এর স্বভাবই এমন। ওতে তুমি চোখ দিতে যেও না। সামনে তোমার এস এস সি পরীক্ষা পড়াশুনায় মনোযোগ দাও।”
“তা দিচ্ছি তিয়াশা আপু। কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখলেই কেমন রাগ হয়। দাদী মার ঘরটাকে একেবারে দখল করে বসেছে।”
“ভাবিস না এত দেখবি ঠিক হয়ে যাবে। নানীজানের সাথে থেকে পোষাকে পরিবর্তন হয়েছে দেখছিস না।”
“এই মেয়ের মাথায় কি চলছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না নাবাদ। সামির গ্রামে আছে এইদিকে ইয়াদ অরাকেও নিয়ে এসেছে। কি করতে চাইছে ইয়াদ?”
তিয়াশার মুখে সামিরের নাম শুনে অবাক হলো হুরায়রা। বলল,
“তোমরাও উনাকে চিনো।”
“কেনো তুই চিনিস নাকি সামির কে।”
“হু আজ সকালেও কথা হয়েছে। লোকটাকে দেখে ভালো বলে মনে হয়েছিলো আমার। দুদিনের পরিচয়ে কেমন সহজ হয়ে কথা বলছিলেন।”
হুরায়রার কথা শেষ হতে পারলো না তিয়াশা সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। নাবাদ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে তিয়াশার ব্যাথাটা কিন্তু কি বা করার আছে তার। যে নিজেই চায় না তা অনুভূতি গুলো ওই মানুষটার কাছে প্রকাশ করুক তাকে তো আর জোর করা যায় না।

তিয়াশা চলে গেলে হুরায়রা নাবাদকে জিজ্ঞাস করলো,
“তিয়াশা আপু ওভাবে চলে গেলো কেনো?”
“জানি না। হয় তো ভালো লাগছে না।”
হুরায়রা কিঞ্চিৎ গাল ফুলালো। ইয়াদের দিকে যতবার চোখ যাচ্ছে ততই তার বিরক্তির মাত্রা বাড়ছে। সে যে একটা মানুষ এতক্ষণ এখানে বসে আছে তাতে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই ইয়াদের। সে নিজের আলোচনা নিয়ে ব্যাস্ত। হুরায়রা কিছুক্ষণ বসে থেকে শেষে উঠে ঘরে চলে গেলো। এখানে বসে থাকতে তার একটুও ভালো লাগছে না।

ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে হুরায়রা। বড্ড কান্না পাচ্ছে তার। সকালের ঘটনা মনে হতেই সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। যখন ইচ্ছা হয়েছে কাছে টেনে নিয়েছে আর এখন এমন ভাব করছে ইয়াদ যেনো সে কেউই নয়। অবহেলা করবে যখন দরদ দেখিয়েছিলো কেনো। সে তো চায় নি তবে কেন এমনটা করলো ইয়াদ।
“আচ্ছা উনি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন না? বুঝেন আমাকে, এতটা অবুঝ তো উনি নয় তবে কেন এর উপেক্ষা করছেন আমায়। আমাকে ভালোভাসেন না কিন্তু কেউ আমাকে ভালোবাসলে তিনি সেটাও সহ্য করতে পারেন না। এত হৃদয় হীন কি করে হতে পারেন। আমিও দেখবো তিনি আমাকে কত উপেক্ষা করতে পারেন। যাবো না আর উনার কাছে। নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে নিবো। দেখি উনার মধ্যে আমার জন্য কতটুকু জায়গা অবশিষ্ট আছে।”
বলেই হাতের উলটো পিঠে চোখ মুছলো সে। সেদিন রাজিবের সাথে কথা বলেছিলো বলে তাকে শাস্তি দিয়েছিলো অথচ আজ সে সামিরের সাথে কথা বলেছে দেখেও কিছু বলল না হঠাৎ ভাবনাটা মাথায় আসতেই শোয়া থেকে উঠে বসে হুরায়রা। সত্যিই তো ইয়াদ সব জেনেও তাকে কিচ্ছু বলল না? ব্যাপারটা সারাদিন তার মাথায় আসে নি। তাছাড়া সামিরের কথা বলাতে তিয়াশা এভাবে উঠে চলে গেলো কি আছে তাদের মাঝে। এরা সব কিছুতে এত রহস্য কেন করে হুরায়রা বুঝে উঠতে পারলো না। তবে যাই হোক সামির খুব একটা খারাপ নয়। তার সাথে কথা বলতে বেশ লেগেছে হুরারার।

চলবে,,,,।

লোডশেডিং এর জন্য গল্প দিতে দেরি হয়েছে। আশা করি বুঝতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here