দ্বিতীয় বাসর পর্ব ২+৩

দ্বিতীয় বাসর (গল্প)পর্ব-২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

বিয়ের কিছুদিন পূর্বে দেখা করতে চান মিতুর আর্মি অফিসার পাত্র বন্ধন আহমেদ।মিতুর সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ সারতে চান।মিতুর সাথে এসময় তার ছোটমামার মেয়ে পারুল থাকছে সেতারার অনুরোধে।পারুল ফ্যাশন ডিসাইনিং এ পড়ছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে।তাছাড়া পার্লারের কাজও জানে।নামীদামী বিউটিপার্লার আর ফ্যাশন হাউসের মালিক হবে সে স্বপ্ন দেখে। মেয়েটা মামীর মতোই চালাক চতুর হয়েছে তবে মনটা অনেক ভালো।মিতুকে সে অনেক পছন্দ করে।বিয়ের একমাস আগে থেকে মোহাম্মাদপুর বাসায় এসে থাকছে।যদিও ছোটমামী রাজী ছিলেন না।কিন্তু অসম্ভব বাকপটু।
“আমার বোনের বিয়ে আমি থাকবো না তা হয়?আর এখন আমাকে ওর লাগবে।তাছাড়া আমি ওর যত্ন নিতে পারলে বুঝব আমি কতটা কাজ শিখেছি।’
তার হবু দুলাভাই মিতুর সাথে দেখা করতে চায় শুনে পারুল তো আল্লাদে আটখানা।বোনকে কিভাবে সাজাবে সে নিজেই ভারী অস্থির।
“আপু শুনো এমন ভাবে আমি তোমাকে দুলাভাই এর সামনে প্রেজেন্ট করবো,ঐদিনই দেখবা তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাবে!’
“আমি কি অনেক সাজগোজ করবো নাকি?আমার এত মেইকআপ ভাল লাগে না।’মিতুর জবাব।
“আরে বোকা মেইকআপ দিবা কেন?তোমারে স্পেশাল ফেসিয়াল করাবো, কমপ্লিট প্যাকেজ একদম হুর পরী হয়ে যাবা।’পারুলের আত্মবিশ্বাসী জবাব।
সেতারাও সায় দেয়, প্রশ্ন করে,”এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ের তো এখনো এক মাস?’
“হুম তোমরা আসলে কিচ্ছু বুঝনা,আপুকে প্রথমবার ডেটিং এ নিয়ে যাবে দুলাভাই ফার্স্ট ইমপ্রেশনটা সেরকমই হওয়া উচিত।’
মিতু পারুলের পাগলামীতে প্রায় অতিষ্ঠ।মিতুর জন্য নিজের হাতে কতগুলো ফ্যাশনেবল ড্রেস অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনে।সাথে নানা রকম এক্সেসরিজ।
“এত টাকা কেন খরচ করছে পারুল?’মিতু,সেতারা,মুহিন খুব অবাক হয় মামাতো এই বোনের পাগলামী দেখে।বড়লোক ছোট মামার মেয়ে।মামা এখনি মেয়েকে বুটিকস সপ করে দিয়েছে ধানমন্ডিতে।পারুলের ড্রেসগুলি নিজেই ডিজাইন করার চেষ্টা করে।ইন্ডিয়ায় যায় মামীকে নিয়ে দুদিন পর পর।এছাড়া ডিলার,কাষ্টমারদের সাথেও ভাল খাতির করা শিখে গেছে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া সুন্দরী পারুল।স্মার্টও হয়েছে আগের চাইতে।মামাও আগে ওমন করতো।বোনের বাসায় বেড়াতে আসলেই ভাগ্নে-ভাগ্নী, বোন, দুলাভাই সবার জন্য উপহার আনত।সেই মামা এখন বদলে গেছে।সেখানে এখন পারুল নিজের পয়সা খরচ করতে চাইছে মিতুর জন্য।মামী এটা নিশ্চুই মানবেনা।শেষ পর্যন্ত পারুলকেও হারাতে হবে মামার মতো।সেতারা পারুলকে বারণ করে,
“দেখ পারুল এভাবে পয়সা খরচা করিস না।মিতুকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে দিবি ওর বিয়ের আগে আর কিচ্ছু লাগবে না।’
পারুল এবার যেন রেগে যায়,”ও আচ্ছা তোমরা আমাকে আপন বোন ভাবনা তাই আমার দেয়া উপহার নিয়ে এসব বল?'”আরে বোকা মেয়ে তা হবে কেন?’সেতারা পারুলের হাতটা ধরে জবাব দেয়।”আচ্ছা তোর কত বয়স বলতো?তোকে তো আমাদেরই উপহার দেয়া উচিত।বড় বোন বলে আজ বলছি এভাবে খরচা করিস না যখন লাগবে তোর কাছ থেকে চেয়ে নিব। এভাবে তোর কাছ থেকে নিতে থাকলে অভ্যাসে পরিণত হবে।বুঝিস না কেন?’
“হুম বুঝলাম ‘বলে কোমড়ে হাত দেয় মুরব্বীদের মতো।আবার কাপড়ের লাগেজ খুলে কিছু নতুন পোশাক বের করে।ড্রেসগুলি দেখে মিতুর চোখ তো ছানাবড়া।পাগলীটা করেছে কি মিতুর জন্য সব ওয়েষ্টার্ন ড্রেস এনেছে?সারাজীবন যে সালওয়ার কামিজ,ওড়না হিজাব আর শাড়ী পড়েছে তাকে বলছে এসব পোশাক পড়ে বন্ধন আহমেদের সাথে দেখা করতে?মিতু ভীষন আঁতকে ওঠে,
“আমি এইসব ড্রেস পড়ব?আমি কি কখনো ওয়েষ্টার্ন ড্রেস পড়েছি?’দ্বিতীয় বাসর(গল্প)পর্ব-৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

“পড় নাই পড়বা?’পারুলের এক কথা।
মিতু সেতারার দিকে তাকায়।সেতারা, মিতু দুজনেই অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে পারুলের বকবকানি শুনে।
“শুনো আপু সব ছেলেরাই মেয়েদেরকে একটু স্পেশাল ভাবে দেখতে চায়।আর দুলাভাই তো আর্মি অফিসার নানান অকেশন থাকবে।আর এখন থেকে এসব ওয়েষ্টার্ন ড্রেস পড়া শিখলে পরে ইজি হয়ে এসব পড়তে পারবে।’
“হুম চিনি না জানি না ঠিক মতো তার কাছে আমি হব স্পেশাল? কি অদ্ভুত পারুলের যুক্তি?’মনে মনে ভাবে মিতু।
মিতু কিছুতেই পড়বে না এসব পোশাক।তাছাড়া সেই সেভেন এইট থেকে যে মেয়ে তার শখের স্কার্ট,ফ্রক পড়া ছেড়ে সালোয়ারকামিজ ধরেছে সে একজন পুরুষের সামনে কিভাবে এসব পড়বে? সেতারা এবার বোনের চিবুকটা ধরে বলে,”আচ্ছা তোর যা পড়তে ইচ্ছে করে তাই পড়ে যা,পারুলের কথা ছাড় ও তো বাচ্চা মেয়ে তোর বিয়ে নিয়ে বোধহয় একটু বেশী আহলাদে আছে।’
পারুল লাগেজে করে অনেক জামা কাপড়,শাড়ীও নিয়ে এসেছে।ছোট মামার একমাত্র মেয়ে পারুল।মিতুর নানীর বাড়ীতে সবাই যখন একসাথে হতো তখন পারুলকে সেতারা ও মিতুই বেশী কোলে কোলে রাখত।তাই তাদের প্রতি দরদটাও অন্যরকম।
অবশেষে ঠিক হলো মিতু শাড়ী পড়বে।পারুলের সেই কাপড়ের ব্যাগ থেকেই বের করে নিল।মিতুই পছন্দ করল,হালকা গোলাপী আর সবুজ টিয়া পার।হালকা সাজলো।
যেদিন দেখা করবে সেদিনটা হালকা বৃষ্টি আর মৃদুমন্দ বাতাস।মিতুর খুব পছন্দ মেঘলা দিন।মিতু বরাবরই হালকা সাজতে পছন্দ করে।কানে ও গলায় ছোট ছোট মুক্তোর জুয়েলারি। যদিও পরার ইচ্ছে ছিল না ইমিটিশন দিয়ে চালিয়ে দেয়া যেত তবে পারুলটা তো এখন সবটাতেই বাড়াবাড়ি করছে।বাঁধা দিলেই ইমোশনাল ব্লাকমেইল।
মামাতো ভাই হীমেলের সাথে সম্পর্কের সব পাট চুকে যাবার পর ভালোবাসা বা ভালোলাগার প্রতি আত্মবিশ্বাস একেবারেই কমে গেছে মিতুর।নিজেকে যত সুন্দরই লাগুক না কেন, কোন পুরুষ মানুষের কাছ থেকে সেভাবে যেন আশাও করতে পারে না সে।দেখা করার দিনটাও ঘটল তেমন।ধানমন্ডি কোন এক রেঁস্তোরায় দেখা হল তাদের।
বন্ধন আহমেদ সেদিন,সোজাসাপ্টা কিছু জানিয়ে দিল মিতুকে।
“আমি বিয়ে করছি শুধু বাবাই ও নানুর জন্য।কারন নানু আপনাকে খুবই পছন্দ করেছেন।আর আমার ব্যাপারে বলব,আমি আমার স্ত্রীকে এখনো ভালোবাসি।তাই তার জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবো না।সরি মনে কষ্ট পাবেন না।আমি সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করি।যদি আপনার এতে কোন আপত্তি না থাকে তাহলে এ বিয়ে হবে।অথবা চাইলে এখনো না করে দিতে পারেন আপনি?’
মিতু চুপচাপ ভদ্রলোকের কথাগুলো কর্নপাত করে গেল।
“কি অদ্ভুত মানুষের আচরন,নিঃসঙ্কোচে এ কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেল্ল।আর্মি অফিসার তাই বুঝি কোন আড়ষ্টতা নেই?’
মিতু মাথা নীচু করে রইল।স্যুপ খাচ্ছিল তারা দুজন।হঠাৎ মিতু স্যুপ খাওয়া বন্ধ করে বাটির ভিতর চামিচ দিয়ে নাড়তে লাগল।এটা তার স্বভাব।তারপর রেষ্টুরেন্টের বড় জানলার গ্লাসের ফাঁকে বাইরে তাকালো।বাইরে তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তা দেখে নেয় মিতু। তারপর আবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।কি বলবে বা কি বলা উচিত, সে যেন বুঝতে পারে না।তার মনে হচ্ছিল বড়লোকের এই স্বভাব ঘরে ডেকে এনে অপমান।অর্থাৎ রেষ্টুরেন্টে খেতে ডেকে এনে ভদ্রলোক যেন তাকে যেঁচে অপমান করছেন।আর এখন বেচারীর মজা নিচ্ছেন।
হঠাৎ ভদ্রলোক টিস্যু বাড়িয়ে দেন মিতুর দিকে।
“জ্বী এটা কেন?’মিতুর কৌতুহল।
“আপনার মুখের কোনাটায় স্যুপ লেগে আছে,মুছে ফেলুন।’
হঠাৎ হীমেলের কথা মনে হয় মিতুর।খাবার খেলে মিতুর মুখে লেগে থাকাও ওর স্বভাব এটা নিয়ে হীমেল বহুদিন তাকে ক্ষেপিয়েছে।
“ও আচ্ছা।’
ভদ্রলোক ফের বল্লেন,”সরি আমি বোধহয় অজান্তে বেশী কথা বলে ফেলেছি।আপনি বোধ হয় মাইন্ড করেছেন।’
“না মাইন্ড করিনি।মাইন্ড কেন করবো?’মিতুর পাল্টা জবাব।
“ঠিক আছে এখন বাসায় যান,সিদ্ধান্ত পরে জানালেও হবে।’
মিতু কিছু না ভেবেই বল্ল,”সিদ্ধান্তের কিছু নেই।আমি আপনার প্রস্তাবে রাজী।’
বন্ধন আহমেদ খুশী হলেন না বিরক্ত কিছুই বোঝা গেল না।মিতু উঠে দাঁড়ায়,যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।বন্ধন এবার বলেন,”আচ্ছা আমি আপনাকে আপনার বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসি?’
মিতু হেসে প্রতুত্ত্যর করে,
“জ্বী ধন্যবাদ। তা আর দরকার হবে না।’বন্ধন ফের জীজ্ঞেস করেন,”আপনি একা যেতে পারবেন তো?’
“হ্যাঁ কেন পারবো না? একাই তো আসলাম।’
বন্ধন সাহেব এবার তার ওয়ালেট বের করলেন মিতুর হাতে টাকা দিতে চাইলেন।”এটা প্লিজ রাখুন।’
“আরে কি অদ্ভুত আমি কি তার বউ হয়েছি না গার্লফ্রেন্ড?বল্ল ভালোবাসবে না আবার কেয়ার নিতে চায়?এটা কেমন আচরন তাহলে?’
মনে মনে বিড়বিড় করে মিতু।সম্ভবত মিতুর যাতায়াত ভাড়া একহাজার টাকার একটা নোট মিতুর দিকে বাড়ায় বন্ধন আহমেদ।।মিতুর প্রচণ্ড আপত্তি,”না না এটা কেন দিচ্ছেন আপনি?’
বন্ধন,”দেখুন না করবেন না,আমি জানি এখন আপনি আমার গাড়ীতে উঠতে চাইবেন না,তবে এটা রাখলে আমি খুশী হবো প্লিজ। ‘
মিতুর পেরশানী, “আচ্ছা জ্বালা তো?’
হঠাৎ বন্ধন মিতুর ডানহাতটা স্পর্শ করে টাকাটা গুজে দেয় তার হাতে।
“আচ্ছা আসি। ‘ বলে বিদায় নেন বন্ধন সাহেব।
মিতু খুবই অবাক হয়,গোবেচারা লোকটার কান্ড দেখে।(চলবে)(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here