দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ পর্ব ১

“আমার শর্ত একটাই, আমি আপনাকে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করতে চাই,উইল ইউ মেরি মি?

হোয়াট,আপনি এটা কি বলছেন মিস্টার চৌধুরী।কিনারা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করলো ।কারণ কিনারা ওর নিজের ভাইয়ের চিকিৎসার বিনিময়ে এরকম কিছু একেবারেই আশা করেনি।পুরো ঘটনাটাই কিনারার প্রত্যাশার এক্কেবারে বাইরে ছিলো।

সাদিত খুব শান্তভাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—এ জগতে কেউ কারোর জন্য এমনি এমনি কিছু করেনা।মাইন্ড ইট। কিছু পেতে গেলে তাকে কিছু দেওয়াও প্রয়োজন পড়ে।মিস কিনারা আমি আপনার ভাইয়ের অপারেশনে জন্য আপনাকে সব দিক দিয়ে হেল্প করতে পারি।তার জন্য আপনাকে আমার এই শর্ত মানতে হবে।

কিনারা বুঝে উঠতে পারলো না যে এই মুহূর্তে ওর ঠিক কি করা উচিত। কিনারা মনে মনে বার বার নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।সাদিত চৌধুরীর মুখ থেকে যা শুনছি তা কি সত্যি, কোনো স্বপ্ন দেখছি না তো।নাকি আমার মতিভ্রম ঘটেছে। কি হচ্ছে এসব।কিনারা হতবাক হয়ে গেলো। ওর চোখে মুখে কোনো প্রতিক্রিয়ার ভাব দেখা গেলো না।কিনারা মুখে কিছু না বলে নিরবে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো।৷কিনারার ভিতরে ভিতরে অদ্ভুত এক দোলাচল কাজ করলো।ওকে যে আজ এভাবে অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনতে হবে তা কিনারা একদমই ধারণা করতে পারেনি।একটা মুহুর্ত টানা চুপচাপ বসে থাকার পরও কিনারা তখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলো না।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে ঠিক কি বলা উচিত,কি না বলা উচিত তা বুঝে উঠতে পারলো না। তাও সে কোনো রকম সাহস জুগিয়ে বলল–মিস্টার চৌধুরী আপনি কি সিরিয়াস, আপনি ঠিক আছেন তো।আপনি কি বলছেন সেটা আপনি বুঝতে পারছেন।

সাদিত কিনারার দিকে অদ্ভুতভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, এবং জানালো—আপনার কি মনে হচ্ছে। আমি এখানে আপনার সাথে ঠাট্টা, মজা করছি।

কিনারা ভাবলো — কিন্তু কেন মিস্টার সাদিত চৌধুরীর মতো হাই প্রোফাইলের মানুষ, তার এতো যোগ্যতা,তা শর্তেও তিনি নিজের জন্য কোনো সুপাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না।এতোজন থাকতে আমি কেন।তিনি এমন কাউকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন যাকে উনি আজ প্রথমবার দেখেছেন। যার সাথে আগে থেকে কোনো আলাপ পরিচয় নেই। এটা কি করে সম্ভব। কিনারা এই ভাবতে ভাবতে খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। কিনারা এটাও ভাবলো এর পিছনে কি কোনো রকম রহস্য লুকিয়ে আছে।যার জন্য মিস্টার চৌধুরী এভাবে ডেস্পারেটলী বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছে। কি এমন রহস্য আছে যেটা উনি প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। এ সমস্ত কথা ভেবে কিনারার আর তখন সাদিতের দিকে তাকাতে ইচ্ছা কাজ করলো না।

কিন্তু অন্যদিকে সাদিত একদৃষ্টিতে কিনারার দিকে তাকিয়ে রইলো।সাদিত,, কিনারাকে বেশ কিছুক্ষন নোটিশ করে বুঝতে পারলো, কিনারা ওর বলা কথা গুলো খুব মনযোগ দিয়ে ভাবছে।এসব ভাবতে ভাবতে ওর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে।সাদিত এক মুহূর্ত দেরি না করে কিনারার কাছে গেলো।কিনারার হাত দুটোকে নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে, ওকে কাছে টেনে আনতেই কিনারা ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো।সাদিত এতোটাই জোরে ওকে নিজের কাছে টেনে আনলো,যে কিনারার মাথাটা সাদিতের বুকে এসে সজোরে ধাক্কা৷ মারলো।

কিনারার মনে হলো সে যেনো কোনো শক্ত পাথরের সাথে ধাক্কা খেলো।আর সে ধাক্কাটা খাওয়ার পরই সঙ্গে সঙ্গে কিনারার নাক লাল হয়ে উঠলো।

কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগেই সাদিত কিনারার হাত দুটো টেনে নিচের দিকে নামিয়ে চেপে ধরলো।তারপর সাদিত নিজের মুখটাকে কিনারার মুখের একেবারে সামনে নিয়ে গিয়ে, কিনারার চোখে নিজের চোখ রাখলো,ওই গম্ভীর্যপূর্ন অ্যাডিক্টেড গলায় বলল মিস কিনারা আপনি একদম এ ব্যাপারে চিন্তা করবেন না,যে আমি আমাদের বিয়ের পর আপনাকে দূরে সরিয়ে দিবো বা কাছে আসতে দিবো না আমি সবর্দা আপনার পাশে থাকবো।আর আপনার মাথায় যদি এ বিষয়ে কোনো ধারনা কাজ করে থাকে তাহলে আপনি আমাকে এখনি এই মুহূর্তে পরখ করে দেখে নিতে পারেন।

এ শুনে কিনারা লজ্জায় পড়ে গেলো।ইতস্তবোধ কাজ করতেই মাথাটা হেট করে নিলো।তারপর নিচু হয়েই বলল — মিস্টার চৌধুরী প্লিজ আমি আপনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি।প্লিজ নিজের রেসপেক্টটা নিজের কাছে রাখুন।আমি আপনাকে এতোদিন অন্য চোখে দেখতাম।আমি হাত জোর করছি আপনি দয়া করে নিজেকে আমার সামনে তুলে ধরবেন না।

কিনারার মেনে নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো যে কিছুক্ষন আগেই নিজের চোখে দেখা এরকম শান্ত-স্নিগ্ধ এবং আভিজাত্য মানুষটা হঠাৎ নিজের রুপ বদলে ফেলে কিনারার উপর এভাবে বল প্রয়োগ করে ওকে নিজের কাছে টেনে নিতে চাইছে। কিনারা অবাক হয়ে সাদিতের ওই গভীর চোখে তাকিয়ে থাকলো।কিনারা সাদিতের সামনে লজ্জায় গুটিয়ে গেলো।তারপর ভয়ে ঘরের এক কোণে সেটে যেতে চাইলো।কিনারা এতো কিছু মেনে নিতে না পেয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।একদিকে ওর ভাইয়ের জীবন অন্যদিকে নিজের জীবন। কিছুক্ষন একটানা নিজের চোখের পানি ফেলার পর কিনারার মুখখানা লাল হয়ে গেলো।

সাদিত খুব অদ্ভুতভাবে কিনারার দিকে তাকিয়ে রইলো।কিনারা সাদিতের দিকে তাকাতেই হার্টবিটের পারদ আচমকাই বেড়ে গেলো এবং কিনারা পেনিক করতে শুরু করলো।যেহেতু সাদিত কিনারাকে ততক্ষণে নিজের কথায় আবদ্ধ করে নিয়েছে। সে সাদিতের চোখে এক অদ্ভুত চাহিদার ছাপ দেখতে পেলো।কিনারা যেনে একটা হ্যালুসিনেশন মধ্যে হারিয়ে গেলো।

হঠাৎ কিনারা দেখলো সাদিত ওর হাত দুটো আঁকড়ে ধরে রয়েছে।এবং তারা পরস্পরে খুবই কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।

কিনারা বলে উঠলো,মিস্টার চৌধুরী —-কথাটা বলে কিনারা নিজের ঠোঁট দুটি আলতোভাবে চেপে ধরে কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।পরোমুহুর্তে কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল — আমি আপনার জন্য অন্য যেকোনো৷ কিছু করতে রাজি আছি।কিন্তু আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

কথাটা শেষ না হতেই সাদিত গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো–তাহলে আমাদের মধ্যে আর কোনো কথা না বলাই বেটার।আপনি আসতে পারেন।আই ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম এনিমোর।

কিনারা সাদিতের মুখ থেকে কথাটা শুনে রেগে নিজের হাত মুঠো করে ধরলো।কিনারা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কিছুক্ষন নিজের জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

সাদিত সে মুহূর্তে কিনারাকে আর কিছুই বলল না।তারা দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো, যেনো দুজনেই কোনো কিছুর জন্য নিরবতা পালন করছে।

কিছুটা সময় কাটার পর কিনারা একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে তার কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
যদি আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়, আপনি কি আমার ভাইয়ের সার্জারী করতে সাহায্য করবেন।

সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো–আপনি কি তাহলে রাজি।

কিনারা একটা তিক্ত হেসে বলল — আপনি তো এটাই চান।তাই না মিস্টার চৌধুরী। আপনি কায়ানকে বাঁচাতে সাহায্য করেন।তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। আমার ভাইয়ের জীবন সবচেয়ে আগে।

কিনারার ঠোঁটে তিক্ত হাসিটা যখন সাদিতের চোখে পড়লো, সাদিতের চোখে মুখে এক বিরক্তির ছাপ প্রকাশ পেলো।সাদিত কিনার দিকে ক্রমশ এগিয়ে গেলো।কিনারা সামনে একদম এগিয়ে এসে, কিনারার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে, কিনারাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো।সে মুহূর্তে সাদিতের মুখের অভিব্যক্তি দেখে বুঝা গেলো, সাদিত এ বিষয়টা খুবই এপরিসিয়েট করছে।সাদিত খুব স্পষ্ট কথায় কিনারাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলল–আমাকে বিয়ে করে আপনি রিককিয়েট করবেন না —- আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ।
আ আপনাকে খুশি রাখার জন্য আমার কাছে যা চাইবেন,
আমি আপনাকে তাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।সেটা যেভাবেই হোক। একজন হাসবেন্ড হিসেবে আপনাকে খুশি রাখা আমার কর্তব্য।আমরা নিজেদের ব্যাপারে এক এক করে সব শেয়ার করার চেষ্টা করবো,যাতে আমাদের মধ্যে কোনো কিছু গোপন না থাকে।এভাবে হোপফুলি আমরা আমাদের মাঝে কোনো দুরত্ব আসতে দিবো না।

তারপর বেশি দেরি না করে দুজনেই কাজি অফিসের দিকে রওনা দিলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here