নিখোঁজ প্রেমের শহরে, পর্ব:১

#নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে (১)

আপনি কি আমাকে চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ে করবেন?
বর্ষা স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো।
পাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে চমকে ওঠা দোষের কিছু নয়। শিহাব চমকে উঠলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ তুলে মেয়েটার দিকে তাকালো। দেখলো, বর্ষাও তার দিকে আগ্রহ ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কি তার সাথে মসকরা করছে নাকি বোঝা দরকার। কিন্তু চোখে মুখে মসকরার কোনো চিহ্ন খুজে পাওয়া গেলো না। শিহাব পকেট থেকে রুমাল বের করে কপাল মুছলো। তারপর হাসিমুখে উত্তর দিলো,
চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ে করা যায় নাকি?
কেনো যাবে না? বিয়ে এক ধরনের সিভিল কন্ট্র্যাক্ট। কন্ট্র্যাক্ট মানে বোঝেন?
জ্বি বুঝি।
বলেন তো কি?
চুক্তি।
তাহলে চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ের চুক্তি করা যাবে না কেনো?
শিহাব অদ্ভুত চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে রইলো। বর্ষার সেদিকে কোনো মনযোগ নেই। সে একনাগারে বলে চলেছে,
সকল নিয়ম বিধি মেনেই আপনি আমাকে বিয়ে করবেন। কাজি সাহেব আপনার হয়ে আমাকে প্রস্তাব দিবে। আমাকে বলবে, বলো মা কবুল। আমি তিনবার কবুল বলবো। সকলে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু কাবিননামায় আলাদাভাবে উল্লেখ থাকবে ‘এই বিবাহের সময়কাল চব্বিশ ঘন্টা’। বুঝেছেন?
শিহাব ঢোক গিলল। অতিরিক্ত ঘাবড়ে গেলে সে ঢোক গিলে। একবার গেলে না। বারবার গেলে।
কাজের মেয়ে আমেনা ট্রে হাতে ছাদে এসেছে। ট্রেতে কয়েক পদের মিষ্টি, চানাচুর, বেলা বিস্কুট সাথে দুই কাপ চা। চায়ের সাথে মিষ্টি খেতে দেওয়ার বিষয়টি বর্ষার পচ্ছন্দ নয়। মিষ্টি জিনিস খাওয়ার পর চা স্বাদহীন লাগে। আবার আরাম করে চা খাওয়ার পর মিষ্টি জিনিস খেতে ভালো লাগে না। তবুও মানুষ মেহমান এলে চায়ের সাথে মিষ্টি পরিবেশন করে।
ছাদের মাঝখানে শ্বেতপাথরের বেদি। আমেনা বেদির ওপর ট্রে রাখলো। কোনো কথা বলল না। মিটমিটে হাসি মুখে নিয়ে চলে গেলো।
বর্ষা এক কাপ চা শিহাবের দিকে এগিয়ে দিলো। শিহাব বলল,
আমি চা খাই না।
তাহলে কি খান?
কফি খাই।
প্রথমত কফি খান না। পান করেন। দ্বিতীয়ত, কফি বিষ্ঠা দিয়ে বানায়। বিষ্ঠা চিনেন? চিনেন না। ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট। কঠিন বাংলা বুঝবেন না। সহজ বাংলায় বিষ্ঠা মানে গু। এর মানে কি দাঁড়ালো? আপনি গু পান করেন?
শিহাবের চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো। সে নিচু স্বরে বলল,
সব কফি এটা থেকে বানায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে এক্সপেনসিভ কফি হলো কোপি লুয়াক। শুধু এই কফিটা ওটা থেকে বানায়।
‘এটা’ ‘ওটা’ এভাবে বলার কি আছে? গু বলতে লজ্জা লাগে?
শিহাব মুখ টিপে দাঁড়িয়ে রইলো।
বর্ষা হাতের কাপ পুনরায় এগিয়ে দিয়ে বলল,
নিন। চা নিন। পাত্রী নিজের থেকে কিছু সাধলে নিতে হয়।
শিহাব চায়ের কাপ হাতে নিলো।
এরপর বলুন, কি সিদ্ধান্ত নিলেন? চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ে করবেন?
শিহাব আবার পকেট থেকে রুমাল বের করলো। কপাল মুছলো।

সন্ধ্যার আগ দিয়ে পাত্রপক্ষ চলে গেলো। বর্ষা তার ঘরে বসে আছে। এ ঘরটা তার একার নয়। তার ছোটবোন ঈর্ষাও এ ঘরে থাকে। বর্ষার বাবা হেফাজত করিম দুই বোনের নাম মিলিয়ে রেখেছেন। তবে ঈর্ষা নামটি নিয়ে বর্ষার ছোটবোনের আক্ষেপের শেষ নেই। ঈর্ষা মানে হলো হিংসা। স্কুলের সবাই তাকে হিংসুটে বলে ডাকে। অথচ সে মোটেও হিংসুটে নয়। ভালো মনের একটি মেয়ে।
বর্ষা জানে এ বিয়েটাও ভেঙ্গে যাবে। পাত্র বাড়ি গিয়ে বলবে, মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে। চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ে করতে চায়। পাত্রের বাবা ফোন দিবেন। ভদ্রতার খাতিরে বলবেন, মেয়েকে আমাদের ভীষণ পচ্ছন্দ হয়েছে। কিন্তু বিয়ে তো ছেলে করবে। ও একটু সময় নিতে চাইছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে জানাবো।
সেই সিদ্ধান্ত আর নেওয়া হবে না।
প্রচন্ড সুন্দরী মেয়েদের কখনো পাত্রের অভাব হয় না। বিয়ে নিয়ে ঝুই ঝামেলা পোহাতে হয় কালো মেয়েদের। বিয়ের বাজারে যে মেয়ের চামড়ার রঙ যত উজ্জ্বল, তার চাহিদা তত বেশি! সে তত সুন্দরী।
আবার প্রচন্ড সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে রাজ্যের গুজব রটে। যাহা রটে তাহার কিছু অংশ হলেও তো বটে!
বর্ষা প্রচন্ড সুন্দরী কেউ না। শ্যামবর্ণের মেয়ে। বিয়ের বাজারে তার দাম চেহারা অনুপাতে নয় বরং বংশের অজুহাতে। পাকিস্তানি আমলে দাদা ফার্স্ট ক্লাস কন্ট্রেকটর ছিলেন। কম টাকায় কাজ এনে দিতেন। ভালো মানুষ হিসেবে গোটা মফস্বল শহরে তার নাম ডাক! সেই পাকিস্তানি আমলে করে আসা ভালো কাজের সম্মানের ভোগ দখল তার ছেলের পরিবার করে আসছে এখন অব্দি। এমন নামী দামী বংশে চুনকালি মাখার জন্য বর্ষার মত দু একজন মেয়ের জন্ম হরহামেশাই হয়ে থাকে।
বর্ষাকে নিয়েও গুজব আছে। ভয়ংকর সব গুজব! প্রথম বিয়েটা অদ্ভুত এক গুজবের জন্য ভেঙ্গে গেলো। বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল। তারিখ ঠিক করাটা বাকি। হঠাত, একদিন রাতে কথা বলার সময় পাত্র জিজ্ঞেস করলো,
আপনার কি আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো?
না তো! হঠাত এমন প্রশ্ন?
না এমনি।
বিয়ে হলে অবশ্যই আমার পরিবার আপনাকে জানাতো।
তা তো অবশ্যই। কিছু মনে করবেন না।
কিছু মনে করি নি।
বর্ষা কিছু মনে না করলেও ছেলে অনেক কিছু মনে করে ফেলেছিলো।
পরেরদিন পাত্রর বাবা ফোন করলো। বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। যদি সে প্রচন্ড সুন্দরী কেউ হতো হয়তো বিয়েটা ভাঙ্গতো না।
এরপর থেকে বিয়ে ভাঙ্গার কাজ বর্ষা নিজেই করে আসছে। কি দরকার পাড়া প্রতিবেশিদের অতিরিক্ত খাটুনি খাটার?

বর্ষা ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে আছে। মাথার যন্ত্রণা বেড়েছে। ঈর্ষা এসে বাতি জ্বালালো।
আপা, বাবা ডাকছে।
বর্ষা চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিলো,
কেনো কি হয়েছে?
জানি না। তুমি আসো। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে।
ছেলের বাবা ফোন করেছিলো?
জানি না। আপা।
বল।
তুমি কি আজকেও ছেলেকে উলটো পালটা কিছু বলেছো?
বর্ষা একথার উত্তর দিলো না। শান্ত গলায় বলল,
বাবাকে বল আমার মাথা ব্যাথা। এখন আসতে পারবো না। আর আমাকে একটা প্যারাসিটামল দিয়ে যা। তোর এঘরে কোনো কাজ আছে?
না।
তাহলে লাইটটা নিভিয়ে দে।
ঈর্ষা লাইট নিভিয়ে দিলো।

আতিয়া আদিবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here