নিশীথচিত্র পর্ব ৪০+৪১

‘নিশীথচিত্র'(৪০)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

ঔদাস্য চোখ দুটো বাইরের দিকেই পরে আছে রিনির।মাঝে মাঝে টুপ টুপ করে চোখের বৃষ্টি হচ্ছে।তবে স্বল্প।সন্তপর্ণে মুছেও নিচ্ছে সে।এদিকে অপরাধ বোধ দিহানের মাথা চিবুচ্ছে।অন্যকেউ দোষারোপ করলেও হয়তো এতো বিশ্রি অনুভূতি হতোনা তার, যতটা না নিজেকে নিজের দোষারোপ করে লাগছে।নিজেই যখন নিজের কাছে ক্ষণে ক্ষণে লাঞ্চিত তখন আর অন্যের লাঞ্চনার খুব একটা দরকার পরে না।বিবেকসম্পন্ন মানুষের জন্য নিজেই যথেষ্ট।

রেহানা আর মুনির হোসেন রুমে প্রবেশ করলো।দীপ্তি দিহান দুজনেই নড়েচড়ে বসলো।। নড়ন নেই রিনির মাঝে।দৃষ্টি তার বহুদূর।মুনির রেহানা নিস্তব্ধ থাকায় পরিবেশ আরও গুমোট ভাব ধরলো যেন।কিছু সময় বাদে কেশে ওঠে রেহানা। নিজেই বলা শুরু করে

–“তুমি যেহেতু আমার মেয়েকে পছন্দ করতে তাই মেনে নিলাম তোমার কথা। তবে তার আগে নিজের বাসায় খোলাসা করো তাদের সাথে কথা বলো।”

চাপা আনন্দময় উত্তেজনায় রমরমা হয়ে গেলো পরিবেশ।বাইরে প্রকাশ পেলো শুধু দীপ্তির হাসি।তবে রিনি মনের সাথে পেরে উঠছে না। এমন না কথা শুনে খুশি হয় নি কিন্তু বর্তমান তার উপর দিয়ে যা গেছে তাই সে নির্বিকার।
–“আমি কথা বলে নেবো কাকা চিন্তা করবেন না। ”

মুনির ফোস করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো
–“মুখ থাকলে আমরা নিজেরাই কথা বলতাম।”

দিহান গলা ঝেড়ে নেয়।বলে
–“কাকা যদি সত্যিই মেনে নেন তাহলে আমি তার পিঠে কিছু কথা রাখতে চাই যদি অনুমতি দেন।”

–“হুম বলো।”

–“কাকা বিয়ে হলে আমি তাহলে থাকবো না এখানে।অনত্র বাসা ভাড়া নেবো।আর আমি রিনিকে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চালাবো।কারো সাহায্য ছাড়া। ”

দিহান অল্প শব্দেই কথা সারছে। তার বেশি কথা বলতে মন চাচ্ছে না।মুনির অত্যন্ত খুশি হলেন দিহানের কথা শুনে।অবশ্য ভেবেছিলেন দিহান এভাবেই বলবে।এই ছেলে কোনো পদক্ষেপে সে ভুল ধরতে পারে না একদমই।

দিহান আবার বললো
–“কাকা আপনারা কি এতে রাজি?”

–“হ্যা অবশ্যই তবে বাসা না পাওয়া অব্দি এখানেই থাকো কেমন?বাইরের ঘরে না।দীপ্তিও এখানে থাকবে।আর হ্যা বিয়েটা তাহলে আজই হবে দেরি করবো না আমি।তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলো।”

রিনি এবার চোখ তুলে বাবা মায়ের দিকে তাকালো। কিছু বললো না।মুনির হোসেন দিহানকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন।রেহানা রিনির পাশে বসলো।রাগী গলায় ফিসফিস করে বললো
–“একদম পালানোর চেষ্টা করবি না।এই ছেলে ভাগ্যে জুটেছে এই অবস্থায় এই তো ঢের।কপাল আমার এখন এমন পরিবারেও মেয়ে দিতে হচ্ছে।”

রিনি চকিতে চোখ তুলে তাকায় মায়ের দিকে।অবাক না হয়ে পারে না।তার মা যে দিহানকে কতোটা ছোট চোখে দেখে বেশ আন্দাজ করতে পারে সে।হয়তো তার বাবাও এই দৃষ্টিকোণের মানুষ।শুধু নিরুপায় বলে তারা আজ ব্যবহার করছে দিহানকে আর দিহান বুঝেও ব্যবহার হতে দিচ্ছে নিজেকে। কারণ এ ছাড়া দিহানও আজ নিরুপায়।দিহানের ভয় ভুল ছিলো না তাহলে এক অক্ষরও।তার থেকে দিহানই তাহলে তার বাবা মা কে বেশি চিনতো?তার মা বাবা সুপার হিরো নয়?রিনিই ভুল তবে?এভাবে বলতে তার মায়ের একটুও বাধলো না?তাদের দৃষ্টিতে দিহানের এগিয়ে আশাটা মূল্যহীন।শুধু নিরুপায় বলে লুফে নিয়েছে সুযোগ।সুযোগবাদী মানুষ তার বাবা মা।রিনির বাজে অনুভূতি হলো।দীপ্তি শুনলো কিনা বোঝার চেষ্টা করলো রিনি।রেহানা বললো
–“দীপ্তি রিনির পাশে বসে থাকো।উঠবে না একদম।আর ওর ফোনটা কই দাও তো।”

রেহানা ফোন নিয়ে চলে গেলেন।দীপ্তির হাসি পেলো।এই পরিস্থিতিতে হাসা বা হাসি পাওয়াও বিশাল অন্যায়।সে নিজেকে সংযত করলো।রেহানা যেতেই দীপ্তি দরজার সামনে এসে দেখে নিলো আশেপাশে কেউ আছে কিনা।নাহ নেই।দীপ্তি এসে রিনির পাশে বসলো হাতটা চেপে ধরলো শক্ত করে।সামান্য ভরসা আর সাহস জোগানোর চেষ্টা করছে সে।নয়তো এতো খুশির সংবাদে মেয়েটার লাফানো উচিত সে আজ মিয়িয়ে পরে আছে।কেমন নিষ্প্রাণ। এই মুহুর্তে পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিপন্ন চেহারা সে মোটেই ধরে রাখতে পারছে না।তবুও রাখতে হবে।ফোন হাতে নিয়ে দিহানকে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো, রিনির ফোন ওর মায়ের কাছে।কোনো প্রয়োজনে যেনো ভুলেও রিনিকে মেসেজ না করে।

রিনির হেলদোল নেই একদমই।রেহানা খাবার দিয়ে গেলো।দীপ্তি কয় লোকমা খাওয়াতে পারলেও বেশি পারে নি খাওয়াতে।রিনিকে ঠেলে ঠুলে গোসলে পাঠায়।শরীরে জায়গায় জায়গায় দড়ির মতো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।দীপ্তি হাতে ক্রিম লাগিয়ে দেয়।রিনির জন্য সেটুকুও ঠিক মতো পারছে না।দিপ্তী অবশ্য একবার জিজ্ঞেস করেছিলো, “কিভাবে হলো এসব”।রিনি কোনো উত্তর দেয় নি।রিনি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঘুমিয়ে পরে সে।রেহানা দশ মিনিট অন্তর অন্তর দেখে যাচ্ছে।মেয়ে পালিয়ে না যায় আবার,বিষও খেতে পারে।রুম ভালো ভাবে চেক করে সে।নানান ভয় তার মনে।রেহানা দিহানকে মানতেও পারছে না আর না মেনেও উপায় নেই।আগামীতে ছেলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল এটা ভেবেই বার বার নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে।নানান পদ রান্না করছে সে একা হাতে ।কাজের মহিলাকে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।আপাতত বিয়ের কথা কাউকে জানাতে চায় না তারা।

____________

দিহানকে নিয়ে এবার ঢুকলো জামা কাপড়ের দোকানে।জোরাজোরি করে পাঞ্জাবী কিনে দিলো।রিনি দীপ্তির জন্য লেহেঙ্গা কিনলো মুনির। মোটামুটি ভাবে একটা ব্যবস্থা করেছে সে।সন্ধ্যার দিকে কাজী আসে। দিহানের বন্ধুমহলেও কাউকে ডাকতেও না করে দিয়েছে তারা।দিহানও ডাকে নি।দীপ্তি রিনিকে সাজিয়ে দিলো রিনি না ও করলো না হ্যা ও করলো না।সে চুপচাপ। কাজী বিয়ে পরানো শুরু করলো।দিহান নিচের দিকে তাকানো। এখনও দেখে নি তার মায়াবতীকে।দেখবে নিজের করা হয়ে গেলেই দেখবে।তার আগে নয়।কবুল বলতে বললে দিহান দেরি করে না।রিনি একটু সময় নেয় অবশ্য।দিহানের সাধ্যমতোই দেনমোহর দেয়।নিজের কাছে জমা ছিলো আর বাড়ি থেকে তার বাবাও পাঠিয়েছে।হাফসা ফিরোজ ছেলের কান্নায় অবাক হয়ে গিয়েছিলো।সব ঘটনা শুনে রাগ হলেও কিছু করার নেই।দিহানের কথা মতোই সব হয়।ছেলের অনুশোচনা হচ্ছে এই বা কম কি।তবুও মনে মনে নারাজি থেকে গেছে তাদের।

বিয়ে পড়ানো হলে মিষ্টি মুখ করে কাজী চলে যায়।পরাপরই খাবারের আয়োজনটাও সেরে ফেলে রেহানা।রুমে যায় সবাই।দীপ্তি কিছুক্ষণ থাকে ওদের সাথে তারপর রেহানার ডাকে চলে যায়।রিনিকে কানে কানে ধমকে ধমকে অনেক কিছুই বুঝিয়ে যায় রেহানা।সবাই চলে যেতে দিহান বিশাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এতো প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাস কখনও ছেড়েছিলো কিনা তার মনে নেই।এই দীর্ঘশ্বাসে যে কতো অনুভূতির মিশ্রণ আছে তার ইয়াত্তা নেই।চঞ্চল রিনিটাও আজ কেমন মিয়িয়ে আছে।বিছানার একপাশে গুটিসুটি দিয়ে পরে আছে রিনি সাদা বেডসিটের উপরে গোলাপের ছড়াছোড়ি।রুমের বিভিন্ন জায়গায় রঙিন ফ্লাওয়ার পটে রজনীগন্ধার আর গোলাপ সজ্জিত। অল্পের মধ্যে যতটুকু সম্ভব।রজনীগন্ধার সুঘ্রাণ বড্ড নাকে লাগছে দুজনের।কড়া মিষ্টি ঘ্রাণ।

দিহান উঠে দাড়ায়। পাঞ্জাবি টেনে টুনে ওয়াসরুমে চলে যায়।বের হয়ে দেখে রিনি তোয়ালে নিয়ে দাঁড়িয়ে। দিহান রিনির দিকে অনিমেষ চেয়ে রইলো।ঘোর কাটে তখন টের পায় রিনি নিজেই দিহানের মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে আলতো করে।”তার বউ” কথা মনে আসতেই মৃদু হাসি লেগে যায় ঠোঁটের কোণে।দিহান বলে

–“যাও ওযু করে এসো।অনেক চাওয়ার বাকি, অনেক মাফ চাওয়ার বাকী আল্লাহর কাছে।”

রিনি তাই করে।নামাজে দাঁড়িয়ে যায় দুজন।রিনির হু হু করে করা কান্না কানে লাগছে দিহানের।অবশ্য চোখের জল তারও গড়াচ্ছে নীরবে।নফল নামাজ আদায় করে উঠে চলে যায় ব্যালকুনিতে।রিনি কান্না করছে এখনও নামজের পাটিতে।সারাদিন থম মেরে ছিলো তারই অবসান হলো।চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে নামাজের পাটিতে।বেশবকিছুক্ষণ বাদে রিনি পাশে দাড়ায় দিহানের।ভেজা হাওয়া গলিয়ে যায় শরীরে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বাইরে।ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেলো।হালকা বৃষ্টির ছাট গায়ে মাখছে দুজনই।রিনি হাত প্রসারিত করে বৃষ্টি ধরার চেষ্টা করলো।মনের বিপন্ন ভাবটা বৃষ্টি শুষে নিচ্ছে যেনো।নামাজ আদায় করে মনটা অনেক হালকা লাগছিলো।এখন বৃষ্টি, পাশে প্রিয় মানুষটা।রিনির মুখ ফুটে হাসির ঝিলিক দেখা দিলো।দিহানের নাক টানার শব্দ পাওয়া গেলো।কান্না করলে যেভাবে নাক টানে সেভাবে।রিনি চকিতে কাধে হাত দেয় দিহানের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দিহান।নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।রিনির ঘাড়ে মুখ গুজে হু হু করে কান্না করতে থাকে।দিহানের কান্নায় রিনিরও চোখ ভিজে আসে।

–“আমাকে অনেক ছোট ভাবছো তাই না রিনি?আমি নিজেকে মহৎ বানালাম আর তোমায় বানালাম দয়ার পাত্রী।”

কান্নারত অবস্থায়ও স্বাভাবিক গলায় নিজেকে তুচ্ছ করে কথা বলছে দিহান।রিনি আশ্চর্য হয়।

–“আপনি নিজেই ভাবছেন দিহান ভাই আমি এমন কিছুই ভাবছি না।এসব ভাবা বন্ধ করেন প্লিজ।”

–“এটাই তোমার দোষ রিনি তুমি আমার দোষ দেখতে পাও না কিছুতেই।আমি জানি আমি কতোটা ছোট মনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছি।আমার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই রিনি আর না আছে চরিত্র।আমি ঠাসা ঠাসা মিথ্যা বলে নিজেকে বড় বানালাম ভাবতে পারো?নিজেকে ঘৃণা হচ্ছে আমার।তোমার হচ্ছে না?”দিহানের গলা কাপছে।

রিনি ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে।বলে
–“দিহান ভাই আমি তো চিনি আমার বাবা মা কে,এমন অবস্থায় ওসব কথা না বললে কখনোই আপনার সাথে এখন দাড়ানো হতো না আমার।মা বাবাকে একবার সত্যি বললে কি হতো আমি ভাবতেও পারছি না।আর দোষ তো দেন নি আমাকে আপনি। মানলাম মিথ্যে বলছেন কিন্তু আপনার কথা গুলোয় আমায় কোনো দোষারোপ তো করেন নি। আরও আমাকে দুধের বাচ্চার মতো অবুঝ বলেছেন। আমি নাকি সব কিছু না বুঝে করেছি।”রিনি তাচ্ছিল্য হাসলো।
আবার বললো”এক্সিডেন্ট ছিলো মানলাম।কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে ছিলাম আমি। আপনি অনেকবার পেছানোর চেষ্টা করেছিলেন আমার জন্যই পারেন নি।এখন যদি আপনি সত্যিও মহৎ সাজতেন আমি দোষ দিতাম না। কিন্তু আপনি আজ পরিস্থিতি সাপেক্ষেই বলেছেন মহৎ সাজতে না।আমাকে সম্মান দিতেই বলেছেন, আমার সন্তানের নামের কলঙ্ক ঘুচতেই বলেছেন আর আমি এও জানি আপনি একদিন স্বীকার করে নিবেন সবার কাছে।”রিনি থামলো,মিয়িয়ে পরা গলায় আবার বললো” সেদিন রাতে আমিই বেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলাম দিহান ভাই ,প্রথম ওমন অনুভূতি থেকে কিছুতেই মুখ ফেরাতে না পারছিলাম, না চাচ্ছিলাম।এরপর আমার বোকামিবশত আজ আপনি ফাসতে যাচ্ছিলেন আরও।সেদিন ঔষধটা খেলে আজ এমন পরিস্থিতি হতো? হতোনা।সবটাই আমার বোকামি।আমার আফসোস নেই দিহান ভাই।আর আপনি আপনার পরিবারকে নিশ্চয়ই সব সত্যিটাই বলেছেন?”রিনি হতাশ স্বরে বলে,”আজ আমার জন্য আপনার পরিবারের কাছে আপনি কতোটা ছোট হয়েছেন।আমি ক্ষমাপ্রার্থী দিহান ভাই।আমি.. ”

থামিয়ে দেয় দিহান।মেয়েটার কথায় বুকের তোলপার থামলেও আত্মতুষ্টিটা নিজ থেকে আসছে না ঠিক।
–“ক্লান্ত তুমি অনেক বলেছো। চুপ করো।আমি আমাকে চিনে ফেলেছি।”

রিনি দিহানকে বুকে আদুরে ভঙ্গিতে মুখ ঘষে বলে।

–“আমিও আপনাকে চিনে ফেলেছি।এর থেকে ভালো মানুষ আমার জীবনে আর দরকার নেই।এই পঁচা মানুষটা হয়ে আজীবন থাকবেন আমার সাথে?”

দিহানের চোখ ভেজে ওঠে।দুইহাতে রিনির গাল ধরে কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে রাখে।শুদ্ধতম স্পর্শ।

রিনি হেসে বলে
–“আজ থেকে আপনাকে ছুলে আর পাপ নেই তাই না?”

বলেই হাত পা নাড়িয়ে বেতের সোফায় বসে।দিহান হেসে ফেলে।বাচ্চামো বুঝি শুরু হলো।দিহানও বসে।রিনি দিহানের আঙুল ধরে টেনে টেনে দেয়।গলায় একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে

–“এখন প্রেম করলে কতো ভালো হতো।গিয়ে ছুয়ে চুমু খেয়ে চলে আসতাম।কিছু বলতে পারতেন না।না সরিয়ে দিতে পারতেন।”

দিহান ডান ভ্রু উচিয়ে বলে
–“কেন এখন চুমু খেয়ে মজা পাওয়া যাবে না?”

–“উহু যায়।কিন্তু বিয়ের আগে মজা আলাদা।”

দিহান হেসে বলে
–“হ্যা পাপে তো মজা পাবাই।”

রিনি দুষ্ট চোখে বলে
–“এখন একটু পাই?”

–“কি?”

–“শুধতম পাপবিহীন মজা।”

দিহানের দৃষ্টি মোহনীয় হয়ে গেলো খানিকেই।কন্ঠে রিনি অবাক হয়।দিহান বলে

–“পেতে না চাইলেও পাবে।”

রিনি বিস্ময় কাটে না।এটা তার দিহান ভাই?

চলবে।
‘নিশীথচিত্র'(৪১)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

দমকা হাওয়ায় বৃষ্টির মোটা মোটা পানি গায়ে ছিটকে আসে।দিহান সেভাবেই তাকানো। মুহুর্তেই উঠে দাড়ালো সে।কোলে উঠিয়ে রুমের দিকে হাটে রিনিকে নিয়ে।

নেতিয়ে পরা গলায় বলে,
–“বাপরে দুইজনকে কোলে নিলাম।অনেক শক্তি আমার।মা মেয়েকে একসাথে কোলে নেয়ে চাট্টিখানি কথা?”

রিনির বিস্ময় কাটে না।দিহানের গলা জড়িয়ে ধরে থাকে।মেয়ে হবে কি নিশ্চিত ভাবে বলছে।মনে হচ্ছে যেন তার জানা মেয়েই আসছে তাদের।দিহান বিছানার পাশে বসায় রিনিকে।

–“এই তুমি কবুল বলতে দেরি কেন করছিলে?আমি কতো কি ভাবলাম।”
ঠোঁট উল্টায় দিহান।রিনি হেসে ফেলে। বলে
–” আমি ভুল বুঝেছি আপনাকে এটা ভেবে আপনি যে পাংসু মুখ করে রেখেছিলেন তা দেখার ভাগ্য হলো আমার।এটা ভালো নয় কি?”

দিহান অসম্মতি প্রকাশ করে,
–“মোটেই ভালো না।”

–“আচ্ছা আমি না চাইলেও ভালোবাসাটা শুরু হবার কথা ছিলো সেটা শুরু হবে না?”বলেই লজ্জায় মাথা নিচু করে রিনি।

–“ধৈর্য্য ধৈর্য্য। ”
বলেই দিহান হেসে ফেলে।উঠে দাড়ায় সে কিছু একটা নিয়ে আবার ফিরে আসে।রিনির হাতে দেয়।

রিনি চকিতে প্রশ্ন করে
–“এটা কি?”

–“তোমার বেমানান স্বামীর অল্প সামর্থ্যের মধুচন্দ্রিমার উপহার।”

ভেঙে ভেঙে কথাগুলো বলে দিহান।রিনির চোখে মুখে দেখে যায় চমকালো উচ্ছ্বাস। কিসের বেমানান তার কাছে এই ই হীরের থেকে বেশি মূল্যবান।রিনির জ্বলজ্বল করা চোখ মুখ দেখে দিহান চোখের প্রশান্তি পায়।সারাজীবন মেয়েটা এমনই থাকবে তো?নাকি দিহানের বিপদের দিন এলেই হাত ছেড়ে দিবে?মানিয়ে চলবে না আর। চলতে চাইবে না।বয়স কম সামনে কতো কিছু হাত ছানি দিয়ে ডাকবে।তখনও কি এই বাচ্চা মেয়েটা আমার বুকেই শান্তি খুজবে?ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে দিহান।আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়।
বাচ্চা একটা মেয়ের হাসির ঝিলিকে ক্রমশই কাবু সে।মেয়েটা শুধু তাকে কাবু করতেই জানে।
রিনি প্যাকেটে খুলে দেখতে পায় কালো খয়েরী শাড়ি।শাড়ি পাড়ে ডিজাইন আছে অবশ্য।শাড়িটা জড়িয়ে ধরে বলে,
–“আমি এটা এখন পরি?”

–“তো তুলে রাখতে দিয়েছি?”

–“তাহলে তো পড়বোই।কিন্তু শাড়ি কিসের সাথে পরবো?”

–“ম্যাচিং পেটিকোট ব্লাউজ নেই?”

রিনি মুখ ভোতা করে বলে
–“নাহ।”

–“অন্য কালারের নেই সেগুলো পরো?”

রিনি বিস্ময়ে ইয়া বড় হা করে বললো
–“কি? আপনার দেয়া শাড়ির সাথে আমি পুরোনো ব্লাউজ পরবো?”

দিহান বিছানার পাশে বালিশ এলান দিয়ে রেখে নিজে তাকে গা এলিয়ে বসে।সাবলীল ভাবে বলে
–“আমার দেয়া শাড়ি বলে পরা যাবে আগের কোনো কিছুর সাথে এমন কিন্তু না। যাইহোক তাহলে পরো না।দরকার নেই তো।”

–“কি বলেন শাড়ি পরবো না? আমি শাড়ি পরবোই।”

–“শাড়ি না পরতে চাইলেও পরাতাম।আমি বলছি ব্লাউজ না থাকলে পরার খুব একটা দরকার নেই তো।ওগুলো ছাড়াই আমার চলবে।”

দিহানের মিটিমিটি হাসি মিশ্রিত কথায় রিনি লজ্জা পায় ভীষণ। বলে
–“আপনার চলবে, আমার কিভাবে চলবে?”

দিহান রিনি দিকে ঝুকে বলে
–“আমার চললেই সব চলবে।”

চোখ টিপে দিহান।আজ রিনি ভারী লজ্জা পায় অথচ সে এই দিহানের সামনে লজ্জা পেতেই চাইতো না।লজ্জাকে তোয়াক্কাই করতে চাইতো না।কিন্তু আজ?…..আজ দিহানের নেশাক্ত চোখও বারে বারে লজ্জায় ফেলছে তাকে।

–“রিনি ম্যাডাম লজ্জাও পায় নাকি?”

–“উহ সেদিনও পেয়েছিলাম।”

–“অন্ধকারে আর লজ্জা দেখা হলো কই?”দিহানের কণ্ঠে একরাশ আফসোস ।কি মহামূল্যবান বিষয় মিস করে ফেলেছে যেনো সে।রিনি আবার লজ্জা পায়।

–“যাও যাও পরে এসো।”

–“কিভাবে পরবো?”

–“আমি কি জানি তবে ইউটিউব ঘেটে ট্রাই করতে পারো।৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ এর বেশি সময় দেয়া অসম্ভব। আর হ্যা ফেসটা সুন্দর করে ধুয়ে আসবে প্রসাধনী মুখে না থাকে। আর হ্যা চুলটা খোলা থাকবে।আর হ্যা চোখে কাজল।”

রিনি লজ্জায় আর কিছু বলে না।লোকটা এতো ধৈর্য্য হারা ভাবে কথা বলছে কেন কে জানে।লজ্জা না পাওয়ার হরতাল করতে করতে এতো লজ্জা আজ পাওয়ার ছিলো বুঝি?গুটি গুটি পায়ে হেটে যায় রিনি।

ঘন্টা পেরিয়েছে। দিহান বাথরুমের সামনে পায়চারি করছে।চাপা আওয়াজে ডেকে জিজ্ঞেস করছে বার বার “আর কতোক্ষণ?”

বেডিয়ে আসে রিনি।ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে তাকে দিহান।কোলে নিয়ে বিছানায় বসায়।ছোট্ট বক্সটা মেলে ধরে।

ছোট্ট সাদা নাকের টপ।হীরের নিশ্চয়ই।হাতে নেয় রিনি বলে,

–“আমার তো নাক ফোরানো নেই।”

–“কালই ফুটাবা।”

রিনি বক্সটা টেবিয়ে রাখে।খাটের উপর গুটিসুটি মেরে বসে।দিহানও বসে।চিবুকে চুমু খায়।রিনি অস্ফুটস্বরে বলে
–“তুমি ভালোবাসি বলবেন না?”
হেসে ফেলে দিহান।অধরে শক্ত চুমু খেয়ে বলে
–“প্রিন্সেসের মা ভালোবাসাবাসির জন্য এতো কিছু করলো তাকে কি যেন তেন ভাবে ভালোবাসি বলা যায়?ইনশাআল্লাহ তার এতো ধৈর্য্যের প্রাপ্য দিয়েই ভালোবাসি বলা হবে।সারপ্রাইজ। ”

–“আমার কিছু চাই না দিহান ভাই। আপনি প্লিজ এখন একবার বলেন?”

–“বলবোনা।মানুষের ডায়েরি চুরি করে পড়ার শাস্তি এটা।তাই অপেক্ষা করো।”

রিনির চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেলো।মানুষটা জানলো কিভাবে?নিশ্চয়ই দীপ্তি।দীপ্তির চুল টেনে দিতে মন চাইলো রিনির।দিহানের চোখ অধিক নেশাক্ত হলো । রিনি আবার হিম হয়ে যায়।দিহানের ঘনিষ্ঠ ছোয়ায় মাতম হয়ে যাচ্ছে সে।অস্ফুটস্বরে বললো
–“সেদিনের মতো ভালোবাসবেন?”

দিহানের কাজে ব্যাঘাত ঘটলো বোকা প্রশ্নে।এই বোকা মেয়েকে কিভাবে বোঝায় এখন?তবুও বলে

–“না সেদিনের মতো সব ভালোবাসা তো হবে না।আমাদের যে অনাগত প্রিন্সেস আসছে। সে আসলে চাইছে না তার বাবা তার মাকে সব ভালোবাসা দিক।তার জন্য ক্ষতিকর সেটা।তার জন্য যা ক্ষতিকর তা নিশ্চয়ই প্রিন্সেসের মাও চাইবে না।”

রিনি ছোট্ট করে বলে
–“বুঝেছি।”

ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় দুজন।রিনির শরীরে মারের দাগ দেখে দপ করে উঠে বসে দিহান।দড়ির মতো কালচে হয়ে আছে।রাগে গায়ে কাপন ধরে শরীরে ।রিনিকে টেনে আবার বুকে মিশিয়ে নেয়।কম্পিত আওয়াজে বলে
–“এতো কেন কষ্ট সহ্য করলি?বলে দিতি আমার নাম।”

রিনি দিহানের বুকের সাথে মিলে যায়।চকিতে বলে
–“কাদছেন আপনি দিহান ভাই?”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here