নীল দিগন্তে পর্ব ১৫

#নীল_দিগন্তে
পর্ব- ১৫
লেখা- নীলাদ্রি নীরা

খুশবু মেয়েকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেন। মেয়েটার হাসি হাসি ভাবটা চেহারায় একদমই নেই। চোখের নিচে কালি পড়ায় বড্ড রোগা রোগা লাগছে মেয়েটাকে। বড় আদরের মেয়ে উনার। কখনো গায়ে হাত তুলতে পারেন নি মেয়েটার। যদি গায়ে দাগ পড়ে যায়? ছোট বেলা যখন খুশবু রাত্রিকে গোসল করিয়ে ড্রেস পরিয়ে চুলটা আঁচড়ে দিতেন তখন উনার মনে হতো এই মেয়েটা কোনো সাধারণ মেয়ে না। এই মেয়ে পুরো একটা প্রিন্সেস। এই মেয়েটা বড় হয়ে পৃথিবীর সেরা সুন্দরীদের একজন হবে। একটা প্রিন্স আসবে ঘোড়ায় চড়ে। তারপর প্রিন্স চার্লস বা প্রিন্স হেনরির মতো কোনো এক প্রিন্স এই প্রিন্সেসকে তার কুইন করে নিয়ে যাবে তার রাজপ্রাসাদে। মেয়ের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে আসলেন খুশবু। কে জানতো এই মেয়েটাই বড় হয়ে মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করে প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে থাকবে। ছি ছি।
অবশ্য বড় ভাবী সোহেলী একদিন বলেছিলেন তাকে যে রাত্রির পেটটা দিন দিন বড় হচ্ছে কেন। ব্যাপার কি? সে তো এমন না যে সারাদিন খায়। বোকার মতো খুশবু বলেছিলেন, পেটে কৃমি হয়েছে হয়তো। কৃমিনাশক খেলেই কমে যাবে। কতটা বোকা তিনি! আর মেয়েটা এত বোকার মতো কাজ করে কেন? আর ওই ছেলেটাই বা কোথায়? বলা নেই কওয়া নেই নিকাহ্ নামা দেখিয়ে রাতে থেকে গেলো। কি হচ্ছে এসব? এখন সে কোথায়? থাপড়ে কান লাল করে দেয়া দরকার। বখাটে ছেলেপুলে দিয়ে দেশটা নষ্ট হয়ে গেল।
খুশবু তাকিয়ে দেখলেন ছোট ভাবী জাহানারা বেশ হাসি হাসি ভাব নিয়ে রাত্রির কেবিনের দিকে যাচ্ছেন। তার হাতে ফেব্রিকের ব্যাগ ঝুলছে। ব্যাগের মধ্যে হটপট হয়তো। মেয়েটা কিছুই খেতে পারছে না। বারবার বমি করছে শুধু। স্যালাইন চলছে। এখন আবার কি নিয়ে এসেছে কে জানে! স্যালাইন না শেষ হলে খাবে কিভাবে? পাগলের কাজকারবার!
.
পুষ্পর মেজাজটা বেজায় খারাপ। একটা শোরুম থেকে অর্ডারের জন্য লাখখানেক টাকা এডভান্স করেছিল। সেই টাকা পুষ্প হ্যান্ড ব্যাগের ভিতরে ছোট একটা ব্যাগে রেখেছিল। বাসে ওর কেন যেন বারবার মনে হচ্ছিল টাকাটা খোয়া গিয়েছে। বাস থেকে নেমে রিকশায় উঠে চেক করেই দেখে টাকা নেই। তন্নতন্ন করে খুজেও পাওয়া গেল না। টাকাটার জন্য অনেক বিপদে পড়তে হবে তার। এত টাকা কিভাবে সে ব্যাক করবে? কি করবে না করবে কিছুই মাথায় আসছে না পুষ্পর। লিফট কর্নারের দিকে এগিয়ে গেল সে। ওর সামনেই রাত্রি আর খুশবু লিফটে ঢুকলো। লিফটেই সামনাসামনি দেখা হলো ওদের। খুশবু তিক্ত মেজাজ নিয়ে লিফটের এক কোনায় দাড়িয়ে আছেন। বড় চাচার এক বিশ্বস্ত মহুরী ও লিফটে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে। রাত্রিকে দেখেই পুষ্প হালকা চিৎকার করে বলল,
-” কিরে কি হয়েছে? ”
রাত্রি কথা বলার অবস্থায় নেই। শরীরটা ভীষণ দূর্বল। ঠিকভাবে দাড়াতেও পারছে না। আবারও বমি পাচ্ছে ওর। পুষ্প এক হাত দিয়ে রাত্রির কাধ ধরলো। খুশবুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” ফুফু কি হয়েছে ওর?”
খুশবু কিছু বললেন না। আজকাল উনার কিছুই সহ্য হয় না। উনার কোথাও চলে যেতে খুব ইচ্ছে করে। যেখানে কোনো ঝামেলা নেই, কোনো দুঃখ কষ্ট নেই এমন কোনো জায়গায়। বাপ মেয়ে মিলে উনার জীবনটাকে নরক করে দিয়েছে। এত দুশ্চিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকা যায়না।
তখনই লিফট এসে থামলো। রাত্রি বাসায় ঢুকেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। খুশবু কতক্ষণ সময় মেয়ের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন। পুষ্পর নিজের ও ভালো লাগছে না। টাকাটার জন্য ভীষণ দুঃশ্চিতা হচ্ছে। কিভাবে জোগাড় করবে? রাজীবকে কি একবার বলে দেখবে? এই ফেমিলির যে কারো কাছেই লাখ টাকা মানে হাতের মোয়া। কিন্তু কারো কাছে হাত পাতার মতো মেয়ে পুষ্প না। সে ধুকে ধুকে মরবে তবু কাউকে কিচ্ছু বলবে না। এই জীবনে পুষ্প কখনো সাধ আহ্লাদ মিটিয়েছে? কখনোই না। ছোট বেলা থেকে মা বলতো, আমরা এই পরিবারে আশ্রিতা। এত শখ আহ্লাদ কিসের আবার? তিনবেলা ভালো মন্দ খেতে পারছে এই অনেক। কেউই বাড়তি ঝামেলা পছন্দ করে না। এখানে তাও ওরা শান্তিতে আছে। আর কিসের এতো শখ?
সোহেলী পুষ্পর প্রতি খুব বিরক্ত হলেন৷ রাত্রি যে প্রেগন্যান্ট সেটা আগেই তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন। এখন তো সবটা সত্যি হলো! এগুলোই বলছিলেন তিনি পুষ্পকে। এ বাসায় উনার সুখ দুঃখের গল্প করার মতো লোক শুধু পুষ্পই। রাজীব ও আছে তবে তার সাথে কি আর সব শেয়ার করা যায়?
সোহেলীর কথা শুনে পুষ্পর কোনো ভাবান্তর নেই। বরাবরের মতোই কথাটা শুনে সে বলেছে হুম। সোহেলী খাতুন বললেন,
-” তোর কি শরীর খারাপ?”
-” না”
-” মন খারাপ? কিছু হয়েছে সংঘটনে? ঝামেলা হয়েছে?
-” উহু না”
-” তাহলে এত হু হু করছিস কেন?”
পুষ্প বলল,
-” তো কি বলব? রাত্রি খুব বাজে কাজ করেছে? চাচী শোন ও একটা ম্যাচিউরড মেয়ে। যা ভালো বুঝেছে তাই করেছে।”
সোহেলী খাতুনের ইচ্ছে করছে পুষ্পকে ঠাস ঠাস কর‍তে দুটি থাপ্পড় দিতে। বাজে কাজ না করলেও কি ভালো করেছে নাকি? বিয়ে করে বাচ্চাও পয়দা করে দিচ্ছে! আশ্চর্য একটা মেয়ে। নিজের মেয়ে হলে তিনি পুষ্পকে ঠিকই চড় লাগাতেন। ছেলের বউয়ের গায়ে হাত তুলে অমানুষরা। তিনি অমানুষ নন। সোহেলী পুষ্পর হাত থেকে চায়ের মগটা নিয়ে চলে গেলেন। পুষ্প এতেও অবাক হলো না। ওর মনে চলছে অন্যকিছু।
.
সময় দ্রুত যাচ্ছে। ঘড়িতে বাজে সাড়ে তিনটা। কলিংবেল বাজছে। সিকিউরিটি গার্ড নিশ্চয়ই জানিয়েছে বাসায় ফোন করে। এলাও করা হয়েছে বলেই তো বাসায় ঢুকতে দিয়েছে। সেটা নিয়ে পুষ্পর মাথা না ঘামালেও চলবে। পুষ্পর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে উপুর হয়ে আধশোয়া হয়ে একমনে কত কি ভেবে চলেছে। কালকে ইউনিভার্সিটিতে ওদের বিদায়ী ব্যাচের ফেয়ারওয়েল। ভেবেছিল শেষ বারের মতো সবাই একসাথে হবে। গল্প,আড্ডা হবে। সব মেয়েরা শাড়ি পড়বে, আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। পুষ্প ভেবেছিল পড়বে কালো আর ছাই কালারের কম্বিনেশনে একটা হাফ সিল্কের শাড়ি।কালো এবং ছাহ রঙ দুটোই রাজীবের পছন্দ। এজন্যই সে পড়বে। কিন্তু পুষ্পর এখনই প্রোগ্রামে যেতে মন চাচ্ছে না। এত দুশ্চিন্তা নিয়ে থাকা যায়?
পুষ্প লক্ষ্য করলো পিছন থেকে কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। পুষ্প প্রথমে ভাবলো ওর মনের ভুল। রুমে তো কেউ থাকার কথা না। এ বাসায় ও এরকম কেউ নেই। রাত্রিও এরকম ফান করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে আরও চেপে ধরছে। কে সে? পুষ্প নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। সে এতো শক্ত করে ধরেছে যে, পুষ্প ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেও পারছে না। পুষ্প তার হাতের দিকে তাকালো। ছেলে মানুষের হাত! ওহ মাই গড! পুষ্প চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিলো,
-” আআআআআআআ ভুউউউউউউউউউউত ভুউউউউউউউউউউউউউত।”
রাজীব সাথে সাথেই ধাক্কা দিয়ে পুষ্পকে সরিয়ে দিলো। এত জোরে চিৎকার করে কেউ? কান ফাটিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। পুষ্প রাজীবকে দেখেই হতভম্ব! এত রাতে সে এখানে কিভাবে? সে তো বলে নি আসবে। নির্ঘাত ভুত। হ্যা ভুতই এটা। পুষ্প আবার চিৎকার করলো,
-” মাআআআআআআ! চাচা চাচী! বাঁচাও। ভুউউত ভুউউত”
রাজীব হেসে ফেললো। শরীর কাঁপিয়ে হাসছে সে। শারমিনের গলা শুনা গেলো,
-” আফাগো কি হইসে আফা? দরজা খুলেন আফা। আমিও এই বাসায় বহুত দিন ভুত দেখছি। আফা দরজাটা খুলেন আপনে। ডরাইয়েন না শুধু। চার কুল, আর আল্লাহু দুয়া পইড়া বুকে ফু দেন আফা। ও আফা কথা বলেন না ক্যান?”
রাজীব বলল,
-” শারমিন তুই যা তো। ভুত এসেছে আবার চলে গিয়েছে। গেট লস্ট”
-” আফা কই? সে কথা বলতেসে না ক্যান?”
সোহেলী খাতুনের গলা শোনা গেল।
-” পুষ্প ভুত ভুত করছিস কেন? রাজীব দরজাটা খুল তো বাবা।”
পুষ্প নিজের হাতে না দিয়ে রাজীবের হাতেই চিমটি দিলো। আশ্চর্য! এটা সত্যি নাকি! পুষ্প চোখ বড় বড় করে বলল,
-” তুমি সত্যি এসেছো?”
-” না ভুত এসেছে তোকে খেতে”
রাজীব গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শারমিন হুরমুড় করে রুমে ঢুকে গেল। তার হাতে ঝাড়।
-” ভাইজান কই ভুত? কই পালাইলো সে?”
পুষ্প নখ কামড়াচ্ছে। পুরো ব্যাপারটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। সোহেলী পুষ্পর কাছে গিয়ে বললেন,
-” কিরে এভাবে ভুত ভুত করে চিৎকার করলি কেন? আশ্চর্য!”
পুষ্প বলল,
-” আমি কি জানতাম নাকি তোমার ছেলে এসেছে। হুট করে রুমে ঢুকে এভাবে চেপে ধরলে তো ভুতই মনে করব।”
সোহেলী বিরক্ত হয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। রাজীবের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। কান্ডজ্ঞানহীন একটা মেয়ে। সে তো যাস্ট একটু জড়িয়েই ধরেছে। অন্যকিছু তো করে নি। এই মেয়ের সাথে থাকা যাবে না। দেখা যাবে ওদের মধ্যে কি হচ্ছে না হচ্ছে সব মাইকিং করে বেড়াবে।
সোহেলী বললেন,
-” কি যে করিস তুই। মাঝরাতে এভাবে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছিস৷ মানুষ কি মনে করবে? আশ্চর্য ছেলেমেয়ে সবকয়টা!”
পুষ্প বলল,
-” হ্যা এখন সব দোষ আমার।”
সোহেলী কিছু না বলেই চলে গেলেন। শুধু শুধু কথা বাড়ানোর মানেই হয় না। শারমিন পুষ্পর কাছে এসে চুপিচুপি বলল,
-” আফা গো। শরমের কথা কি কমু। স্বামী স্ত্রীর আদর সোহাগের কথা অন্য কাউরে কইতে নাই। ভাইজান তো আপনেরে আদর করে ধরছে শুধু।”
পুষ্প চোখ রাঙিয়ে বলল,
-” এই শারমিন আপা। যাও তো এখান থেকে। এক্ষুনি বিদেয় হওওও!”
.
রাজীব ছাদে এসে দেখলো মেয়েলি কেউ একজন রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। এত রাতে রাত্রি ছাড়া আর কেউ ছাদে থাকবে না সেটা রাজীব নিঃসন্দেহে বলতে পারবে। ফকফকা আকাশ। তারকাবাজি দৃশ্যমান। আবছা আবছা আলো। রাত্রির দৃষ্টি তারার দিকে। রাত্রি পিছন না ফিরেই বলল,
-” কখন এসেছো ভাইয়া?”
রাজীব হেসে বলল,
-” আধঘণ্টার মত হবে। তার বেশিও হতে পারে।”
রাত্রি পিছন ফেরেনি। ওর চোখ ভেজা সে চায় না এটা রাজীব ভাইয়া দেখুক। যদিও আবছা আলো তাও বুঝা যাবে যে রাত্রি কান্না করেছে। রাজীব ভাইয়া খুব ট্যালেন্টেড। এমনি এমনি কি আর সে ক্যাডার হয়েছে!
-” আচ্ছা রাত্রি তুই কিভাবে বুঝে যাস যে আমিই রাতে ছাদে আসি?”
-” যেভাবে তুমি বুঝে যাও যে এত রাতে কোনো মেয়ে ছাদে থাকলে সেটা আমিই।”
-” তুই যথেষ্ট ইন্টিলিজেন্ট রাত্রি। আমার মনে হয় আমার বদলে তুই এএসপি হলে বেটার হতো।
রাত্রি হাসার চেষ্টা করলো। রাজীব আবার বলল,
– “আর তুই বলেছিলি তুই সত্যিই মন পড়তে জানিস। এটা ভুল কথা। তুই আমার হাটার শব্দ পেয়েছিস। আর তুই জানিস যে আমি মাঝরাতে ছাদে আসি। ছোটবেলা থেকেই আমার এই স্বভাব। এটা কোনো কো ইন্সিডেন্স না। ঠিক বলেছি? আর এই দিক থেকে তোর আর আমার মিল আছে। ”
-” হ্যা। তোমার জয়েনিং কবে?”
-” চৌদ্দ দিন ছয় ঘন্টা পর থেকে।”
-” বাবারে। তুমি তো পুরোই প্রফেশনাল হয়ে গেছ।”
-” তুই ও তো হয়েছিস।”
-” কিরকম? ”
-” বিবাহিত মেয়েদের মতো লাগছে তোকে।”
-” বিবাহিত মেয়েরা কেমন হয়?”
-” কেমন জানি। বিয়ের পর মেয়েরা কেমন জানি চুপ হয়ে যায়। আই ক্যান্ট এক্সপ্লেইন প্রপারলি।”
-” মোটেও না। আমি বিয়ে করেছি শুনেই তুমি এসব বলছ।”
-” আরে না। সত্যি এটাই মনে হচ্ছে। তুই এখন আগের মতো ভঙ্গিমা করছিস না। আগে প্রচন্ড হাসাহাসি করতিস, ফাজলামো করতিস। অথচ এখন যন্ত্রের মতো শান্ত ভাবে কথা বলছিস। ম্যারেজ ক্যান চেঞ্জ আ ওইম্যান রেপিডলি।”
-” হতে পারে। তোমার বউ ও তো হয়েছে।”
রাজীব মনে মনে বলল, কচু হয়েছে। কিচ্ছু বদলায় নি। গাধীর গাধী। একদিন চুমো খেয়েছি বলে কাঁদতে শুরু করেছিল। আর আজকে একটু জড়িয়ে ধরতেই পুরো দুনিয়া জাহির করে ফেলেছে। ছাগী কোথাকার। এই ছাগীটাকে কেন আমার গলায় ঝুলিয়েছে বাবা মা? একে বস্তার বস্তার ঘাস খাওয়াতে হবে। তবু যদি বুদ্ধি হয়। বলদী একটা।
রাত্রির ভেজা চোখ মুখ শুকিয়েছে। সে রাজীবের দিকে তাকালো। ট্রেনিং করে বেচারা শুকিয়ে গিয়েছে। তার উপর ভাইয়ার চোখে মুখে বিরক্তি। আহারে। এত বিরক্ত কেন ভাইয়া?
-” ভাইয়া”
-” বল”
-” আমার ধারণা রাহাত ভাইয়ার খবর তুমি জানো। বড় মামা খুব দুশ্চিন্তা করছেন। ভাইয়াকে বাসায় আনছো না কেন? বড়মামী প্রতিদিন ভাইয়ার জন্য কান্নাকাটি করেন। আবার তার জন্যই বড়মামা তোমার আর পুষ্পর রিসিপশনের ডেট ফিক্সড করতে পারছেন না। এক ছেলে নিরুদ্দেশ হয়েছে, এই সময়ে কি ঘটা করে অন্যছেলের রিসিপশন করা যায়?”
-” শুধু আমার আর পুষ্পর কেন? তোদের ও তো।”
-” কিভাবে জানলে?”
-” মা বলেছে। আর শোন রাত্রি, রাহাতের খবর আমি জানিনা।”
-” ভাইয়া আমাকে নিয়ে লোকে হাসাহাসি করবে। আমি কনসিভ করেছি টুয়েন্টি ফাইভ উইকস রানিং। বুঝতেই পারছো ব্যাপারটা কতটা খারাপভাবে নিবে লোকে।”
-” ওহ রাত্রি তোকে একটা কথা বলা হয় নি।”
-” কি কথা?”
-” ইউর বেলি লুকস লাইক আ ফুটবল। আই থিংক তুই আমার ফুটবলটাকে ফুটো করে দিয়েছিলিস না? ওই ফুটবলের অভিশাপই লেগেছে তোর।”
রাজীব গা দুলিয়ে উচ্চস্বরে হাসছে। আশ্চর্যজনকভাবে রাত্রি আগের মতই দাড়িয়ে আছে। অথচ অন্যসময় হলে সে এতক্ষণে হেসে গড়াগড়ি খেতে শুরু করতো। সময় কি সবকিছু বদলে দেয়? সময় কেন বদলাবে? বদলেছে তো পরিস্থিতি। পরিস্থিতি তো বদলেছে সময়ের সাথেই।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here