নেশাটাই তুমিময় পর্ব -০৮+৯

#নেশাটাই_তুমিময়
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)
#পর্বঃ ০৮+০৯

১৭.

– ‘অনেক হয়েছে লুকোচুরি মিস্টার জাহিদ আলি! এবার দেখবেন আসল খেলা!’ অন্ধকারে বাঁকা হেসে বলে উঠল একজন তরুণ।

এতক্ষণ পিছন ফিরে নিজের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পাচারের ব্যাপারে কথা বলছিলো বলে তরুনটির উপস্থিত টের পাইনি জাহিদ আলি। কিন্তু পরিচিত মানুষের কণ্ঠস্বর শোনে ঘাবড়ে গেলো তারা সকলেই। সকলে বন্দুক তাক করলেও জাহিদ আলির ইশারায় নামিয়ে নিলো আবার। মানুষটির দিকে তোতলিয়ে বলে উঠল,

– ‘ক্ ক্ কে তুমি? আ্ আর ক্ কি করবে ত্ তুমি?’

আবারও অধরের কোণে বাঁকা হাসিটা ফোঁটে উঠল ব্যক্তিটির মুখে। কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পুরো ঘরজুড়ে আলোকিত হয়ে উঠল মুহুর্তেই। সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই ভয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলো জাহিদ আলি। বিস্ময় সাথে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,

– ‘র্ র্ রুদ্ধ ত্ তুমি এ্ এখানে!’

– ‘উহু, ভয় পেলেন বুঝি! আপনার মতোন একখান সাহসি মানুষের যদি এতো ভয় থাকে তাহলে আমাদের কি হবে বলুন তো! সো ডোন্ট পেনিক! তা কি কারণে এখানে আসা এতো নামডাকওয়ালা একজন মানুষের? এসে গল্প করছেন তাও দুটাকার কয়েকটা মানুষের সাথে?’ নাক ছিটকালো রুদ্ধ।

রুদ্ধের এহেন নাকছিটকানো আর ভাবলেশহীন কথায় কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেয়ে পরছে চোখের কার্নিশ বেয়ে। রুমাল দিয়ে ভালোমতো মুখটা মুছে নিলো জাহিদ। ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,

– ‘এ্ এই এমনি!’

রেগে গেলো রুদ্ধ! এখানেও মিথ্যে বলা শুরু করেছে। রুদ্ধের এতোটা রাগ আগে কখনও দেখেনি জাহিদ। সোজা এসে কলার চেপে ধরে বলে উঠল,

– ‘ইউ রাস্কেল! কি ভেবেছেন হা? নিজেকে কি বেশি চালাক মনে করেন? জানেন না, অতি চালাকের গলায় দড়ি! ঠিক আজও আপনার গলায় ঝুলবে আপনার চালাকির সেই দড়ি! বুঝলেন মিস্টার জাহিদ আলী ওরফে ব্লাকডগ!’

রুদ্ধের কথা শোনে ভয় যেন খাবলে ধরলো। সে তার গোপন নাম ব্লাকডগ জানলো কেমনে! তার ভাবনার মাঝে রুদ্ধ আবারও তাঁতানো কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘আমায় আমার বাবাইয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ শুনিয়ে আমাদের সম্পর্ক আলাদা করার চেষ্টায় ছিলেন, সফল হলেন না! তারপর নিজের মেয়েকে দিয়ে বাবাইয়ের ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টাও করেছিলেন তাতেও সফল হলেন না! হা সফল হয়েছিলেন আমার বাবাইয়ের একচতুর্থাংশ সম্পদ নিজের নামে করে, কিন্তু আফসোস সেই সম্পদ আবারও আমাদেরই থেকে গেলো। আর সেটার খবর পেয়েই আমার বাবাইকে মারতে লোক লাগিয়ে গুলি করে মারতে চেয়েছিলেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সেটাও হলো না। তার আগে নিজের আপন বড়বোন মানে আমার মা মিসেস হাফসা বেগম যাকে মা বলতেও আমার ঘৃণা হয় এখন সেই মানুষটিকে সকলের চক্ষুআড়াল করে আমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করিয়ে বাবাইয়ের খাবারে স্লো পয়জন মিশাতে সাহায্য করেছিলিস, কিন্তু আমাদের উপর সৃষ্টিকর্তার রহমত ছিলো বলে সেই যাত্রাতেও বাবাই বেছে গেলেন।’

– ‘আর আজ শেষমেশ চৌধুরী বাড়ীর মেয়েকে কিডন্যাপড করেছিস, তাও যাদের খুন করেছিলি আজ থেকে ১৩ বছর আগে একটা মিথ্যে কেস থেকে নিজেকে বাঁচাতে! তাদেরই ছেলে অহনের প্রিয় মানুষটাকে কিডন্যাপড করেছিস পরিকল্পনা মাফিক! কিন্তু দেখ সর্বশেষে কি হলো! পাচার তো দূরে থাক একচুল পরিমাণ কেউ নড়তেই পারবে না। দেখ সর্বক্ষেত্রেই তুই ফেল!’

– ‘অনেক বলে ফেলেছিস। এবার তুই শেষ রুদ্ধ!’ আচমকা রুদ্ধের দিকে বন্দুক তাক করে বলে উঠল জাহিদ আলি।

– ‘আগে নিজেকে তো বাঁচা তারপরই নাহয় আমাকে মারিস, হা হা হা!’ বলে কাউকে ইশারা করলো। সাথে সাথে জন সাতেক RAB এসে ধরে একটা গাড়ীতে তুলল জাহিদ আলি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের। রুদ্ধ চলে এলো সেই ঘরে যেখানে এখন অহন, রতন আর তন্বী রয়েছে সেখানে। সেখানে গিয়ে অহনকে সুযোগ দিয়ে রতনকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

হা তখন নিজের বিবেকের কথা শোনে অনেক কষ্টে রুদ্ধের নম্বরটা সংগ্রহ করেছিল। তারপরই রুদ্ধকে সবটা খুলে বললে সে দ্রুততার সাথে এখানে চলে আসে সাথে তন্বীর একটা ছবিও আনে যেটা রতনকে দেখালে সে বলে তন্বীকে আজ ধরে এনেছিলো তারা জাহিদ আলির কথায়!

১৮.

– ‘এই এই আপনি আমায় ছুঁলেন কে? আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন?’ অহন তন্বীকে ছোঁয়া মাত্রই কথাটা বলে উঠল তন্বী।

– ‘নিজের ভালেবাসাকে জড়িয়ে ধরবো না তো কি কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরবো? মিস এলোকেশী!

কেঁপে উঠল তন্বী। এতোটা কাছে সে কখনও কোনো পুরুষের নিকট যাই নি আজ যতটানা অহনের কাছাকাছি এসেছে সে। জড়ানো কণ্ঠ বলে উঠল,

– ‘এ্ এতোই যখন ভ্ ভালোবাসেন ত্ তাহলে আ্ আমার কিডন্যাপের সময় ক্ কোথায় ছিলেন?’

তন্বীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল অহন। অপরাধীর ন্যায় বলে উঠল,

– ‘স্যরি, এলোকেশী! আমি সত্যিই জানতাম না এই নিকৃষ্ট মানুষগুলোই তোমাকে কিডন্যাপ করবে। এন্ড আই প্রমিজ এই অহন মেহবুব বেঁচে থাকতে তোমাকে কেউ ছুঁতেও পারবে না। কজ, তুমি একান্তই আমার! আই প্রমিজ উইথ ইউ!

অহন মেহবুব নামটা শোনে চমকে উঠল সে। এই তো তার ছোট্টবেলার প্রিয় মানুষটি নাম। তারমানে অনিমার ভাই এসেছে। তার অনিপুর ভাই! এবার বেশ অভিমান হলো তন্বীর! অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘এতোই যখন ভালোবাসেন তাহলে এতগুলো বছর দূরে ছিলেন কেন? আমার কথা কি কখনও মনে পড়ে নি আপনার? সেই কখন দেখেছিলাম আপনাকে।’

– ‘অভিমান হয়েছে না আমার উপর খুব? সবটাই পুষিয়ে দেবো বুঝেছেন ম্যাম?’ শক্তকরেই জড়িয়ে ধরল তন্বীকে।

তন্বীও নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে অহনের বুকে মুখগুজে। কতদিন দিন পর সে তার প্রিয় মানুষের দেখা পেলো। তবে এভাবে পাবে সে ভাবতে পারেনি। সে না এলে আজ হয়তো তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু তার মনে বিরাজ করছে হাজারো প্রশ্ন। অহনের বুকে মুখগোঁজে বলে উঠল,

– ‘অনিমাপুর কাছে যাবেন না? ওনি না ওই বাড়ীতে খুব কষ্টে আছেন। ওইদিন আমিও না বুঝে অপমান করেছিলাম।’ অনিমাকে অপনাম করেছে শোনামাত্রই মাথায় রক্ত উঠে গেলো অহনের। ছিটকে দূরে সরিয়ে দিলো তন্বীকে। আহত দৃষ্টিতে অহনের দিকে তাকালো তন্বী। তার বোনকে অপমান করলো এই মেয়ে! এমনিতেই একটা শক্ডে আছে তাই তার উপর রাগ দেখানো উচিৎ হবে না ভেবে নিজেকে সংযত করলো সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘উঠে পড়ো, বেরুতে হবে। কাজ আছে আমার।’ বলে হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেলো। তন্বীর বুঝা হয়ে গেলো সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে তার অনিমাপুর সাথে। যার ফলে তার ভালোবাসার মানুষটির এতোটা কাছে এসেও আবার! যাক দেখাতো পেলো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির! যত যায়হোক সে আজই ক্ষমা চেয়ে নিবে অনিমার কাছ থেকে। সেও দ্রুত বেড়িয়ে গেলো অহনের পিছুপিছু।

১৯.

নিস্তব্ধতায় চেয়ে আছে পুরো চৌধুরী ম্যানশন। কারো মুখে কোনো হাসি নেই। পুরোবাড়ী জুড়েই চেয়ে আছে নিস্তব্ধ নিরবতা! সকলে বারান্দায় বসে তন্বীর চিন্তায় নিমগ্ন। শুধুমাত্র কলি বেগম ছাড়া। তার মাথাটা বেশ ধরেছে বিকেল থেকে তাই সে রেস্ট নিচ্ছে। এদিকে তুর্যনের শরীর এখন বেশ সুস্থ থাকলেও হাড়ে হাড়ে বেশ ব্যথা অনুভব হচ্ছে। শীতের সময় তাই এই ব্যথাগুলোও বেশ গাঢ় হচ্ছে। তবে তাকে ভাবাচ্ছে এই বিষয়টা যে, তার বোনকে কে কিডন্যাপ করলো? কেনই বা করলো! তাহলে কি তার হাল যে করেছে সেই কি এই জঘন্য কাজটা করেছে? কিন্তু সেই তো এই কাজ করবে না! তাহলে?

হঠাৎ সকলের ধ্যান ভাঙ্গলো গাড়ীর আওয়াজে। চমকে উঠল সকলে। কিন্তু এতোরাতে কে এলো? ইনকিয়াত আনাস চৌধুরী সকলের দিকে একবার তাকালো। সকলের মুখে আতংকের ছাপ! হয়তো সকলে মনে মনে ভাবছে অন্তত পক্ষে খারাপ কিছু যেন না হোক। সকলে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে। সাথে অনিমাও আছে। সে আসতে চাইনি ফারিহা জোড় করেই এনেছে। তুরন এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সামনে অহন, তন্বী আর রুদ্ধকে দেখে চমকে গেলো। অহনকে চিনলেও রুদ্ধকে কেউ চিনে না শুধুমাত্র ইনকিয়াত আনাস ছাড়া। বিশেষ করে অহনকে দেখে সকলে অবাক হলো। সকলে জানতো অহনও তার বাবা মায়ের সাথে পাড়ী জমিয়েছে না ফেরার দেশে। এমনকি অনিমার জানা সেটা। কিন্তু এভাবে তার ভাইকে দেখে অবাকই হলো সে বেশ। তবে অভিমানটা বেশিই হল। সে চলে গেলো ভিতরে। কিন্তু এদিকে আজ যেন সবকিছু লাগামহীন লাগছে সকলের কাছে। তুরন অবাকের ন্যায় বলে উঠল,

– ‘অহন, তুই? হঠাৎ! তাও তন্বীকে নিয়ে?’

তুরনের এমন প্রশ্নের উত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো অহন,

– ‘চমকে গেলি? নাকি আমি এখানে আসাটা বুঝি আশা করিস নি! কোনটা?

ইনকিয়াত আনাস বুঝলো এখানের বিষয়টা হয়তো অন্যদিকে গড়াতে পারে তাই তুরন বলার আগেই সে বলে উঠল,

– ‘তুরন কি হচ্ছে কি? অহন বাবা ভিতরে আয়।’ সকলের উদ্দ্যেশে সে বলে উঠল, ‘কি দেখছো তোমরা হা? তন্বীকে ভিতরে নিয়ে যাও না দেখছো না মেয়েটাকে কেমন শোকনো লাগছে? যাও ওকে ভিতরে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এসো।’

ইনকিয়াত আনাসের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আসমা বেগমের। তন্বী এখনও অহনকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিনি দ্রুত তন্বীকে রুমে নিয়ে গেলেন।

এদিকে অহন আর রুদ্ধ দুইজনেই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তুর্যনও এসেছে এখানে। কিন্তু রুদ্ধকে দেখে তুর্যন বেশ ভয় পেয়ে গেলো। রুদ্ধের চোখের ইশারায় আর একমুহুর্তও দাড়ালো না দ্রুত প্রস্থান করলো সে। ফারিহাও এতক্ষণ সেখানে ছিলো। সে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো। তার উত্তরে রুদ্ধও একই হাসি উপহার দিলো সকলের অগোচরে। কিন্তু সেটা অনিমা খেয়াল করলো। অনিমা ভাবতে লাগল,

– ‘কে এই ছেলে? ফারুপুর সাথে এর সম্পর্ক কি? দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে এমন রহস্যময় হাসি দিলো কেন? তাহলে ফারুপুও তুরন ভাইকে ঠকাচ্ছে? নাকি অন্যকিছু! তবে ছেলেটার চোখদুটো বেশ চেনা চেনা লাগছে আমার! কোথায় যেন দেখেছি! কিন্তু মনে করতে পারছি না কেন।’

হঠাৎ চরের শব্দে চমকে উঠল সকলে। চমকে উঠল অনিমাও! সকলের দৃষ্টি গেলো রান্নাঘরের দরজায়। কারণ কলি বেগম অনিমাকে চড় মেরে তার মা-বাবা নিয়ে সেখানে দাড়িয়ে অসহ্য পরিমাণ গালাগালি করছে। কিন্তু সে জানতো না যে আজ সেখানে অনিমার ভাই সয়ং অহন মেহবুব উপস্থিত আছে। অহন এতক্ষণ তন্বীর নিখোঁজ হওয়ার ঘঠনা সকলকে বলছিলো বিস্তারিত। কিন্তু তার বোনের প্রতি বড়মামির এমন কুৎসিত আচরণে রাগে তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। যে বোনটাকে কোনোদিন তার বাবা মা একটা ফুলের টোকাও দেইনি আজ তার আদুরে বোনটাকে এমনভাবে মারা সে যেন কিছুতেই মানতে পারছে না। সকলে এখন সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নজর দিলো অহনের দিকে। ভয় পেয়ে গেলো সবাই। কারণ, প্রচণ্ড পরিমাণে রেগে গেছে সে। চোখদুটো অসম্ভব পরিমানে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ফারিহার নজর অহনের উপর নয় বরং তার নজর রুদ্ধের দিকে। এদিকে রুদ্ধও নিজেকে কোনো মতে সংযত করতে পারছে না। ইচ্ছে করছে কলি বেগমকে টুকরো করে ফেলতে! কিন্তু অহন নিজেকে আর দমাতে পারলো না। স্বশব্দে চিৎকার করে উঠল সে। তার চিৎকারের পুরো চৌধুরী বাড়ী কেঁপে উঠল,

– ‘এনাফ ইজ এনাফ! মিসেস কলি চৌধুরী, কি পেয়েছেনটা কি? এই পরিবারের বড় বউ বলে নিজের যাই ইচ্ছা তাই করবেন আপনি? নিজের অবস্থানটা এখন কোথায় আপনার সেটা যাচাই করেছেন? আমার আদরের বোনকে মারার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? আন্সার মি, ড্যাম ইট!’ বলে সজোরে আঘাত করলো সামনের কাচের টেবিলটাতে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো সেটা। অহনের এমন রাগ কারও কখনও জানা ছিলো না। হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে প্রচুর পরিমানে। কলি বেগম ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। অহনের এমন রাগ দেখে তার অন্তরাত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। তাহলে তার প্লান কি সঠিক মতোন কাজ করলো না?

অহনের হাত থেকে রক্ত ঝরতে দেখে অনিমা আর নিজের অভিমানটাকে দমাতে পারলো না। দৌড়ে তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে উড়নার ছিড়া অংশ দিয়ে হাত বেধে দিলো অহনের হাতটা। অনেকটা রক্ত বেড়িয়েছে হাত থেকে। অহনের চোখ পড়ল অনিমার পরিহিত কাপড়টার দিকে। অনেক পুরনো কাপড় পড়েছে সে। রাগটা দ্বিগুণ হলো তার। এবার পরিস্থিতি সামলে নিলো রুদ্ধ।

– ‘অহন, কুল ডাউন। অনেক হয়েছে। আর কোনো কিছু করার দরকার নেই। ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি বেরুবো!’ বলে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো অহনকে, যেন এখন আর কোনো ঝামেলা না করে। সবকিছু তো সবে মাত্র শুরু হয়েছে।

– ‘না রুদ্ধ, এখন আর তোর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আজ এখানেই থাকবি কাল একেবারে।’

– ‘কিন্তু, অহন…!’

– ‘নো মোর ওয়ার্ডস রুদ্ধ। প্লীজ দোস্ত আজকের রাত।’ বলে চোখ মারলো রুদ্ধকে। রুদ্ধও মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠল,

– ‘হুম, ওকে।’

– ‘অনুপাখি আমার! ভাইয়ার উপর কি রাগ করেছিস? আ’ন স্যরি রে বোন। সবকিছু সামলিয়ে আসতে লেট হয়ে গেলো। এখন ভাইয়া এসে গেছি সো নো টেনশন।’ বলে কলি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,

– ‘এবার তোকে কেউ কিছু বললে তাকে কি ছাড়বে না এই অহন মেহবুব। কারণ, অহন মেহবুবের কলিজা তুই! এখন তো সব রহস্যের সমাধান হবে। সকল অপরাধী আস্তে আস্তে ধরা পরবে।’

ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠল অনিমা। কতদিন পর সে একটা শান্তির স্থান পেলো। তার ভাইকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ফুঁফিয়ে কেঁদে দিলো সে। কিন্তু অন্য আরেকজন যে সহ্য করতে পারছে না তার প্রেয়সীর কান্না। সে মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে ফিরে রইল। সে যে তার প্রিয়সীকে এই ক্রন্দনরত অবস্থায় কোনোভাবেই মানতে পারছে না।
.
.
.
.
~চলবে ইনশা’আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here