নেশাটাই তুমিময় পর্ব -১০

#নেশাটাই_তুমিময়
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)
#পর্বঃ ১০

২০.

শীতের সন্ধ্যায় পাখিরা সব ফিরে যায় আপন নীড়ে!অন্ধকারের শুরুতেই কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় চারদিকটা। শিশিরে ভিজে যায় তৃষ্ণার্ত প্রকৃতি! সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য শীতের বিকেলবেলা! সূর্যের অস্ত যাওয়া মুহুর্তের সময়টা। রক্ত লাল হয়ে উঠে পশ্চিমা আকাশ! আর সবচেয়ে লোভনীয় শীতের এই রাতখানা! যেথায় একদিকে কিছু মানুষ প্রিয়জনের সাথে সেরা মুহুর্তগুলো কাটানোর স্বপ্নে বিভোর হয়! অন্যদিকে কিছু মানুষ খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেয়! গভীর নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে চারিপাশ। দূর দিগন্তে শুধু চাঁদ আর তারার মেলা। রাতের গভীরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ছুটে আসছে দিগন্তে ভোরের প্রহর। পুরোটা শহর এখন নিস্তব্ধতায় পরিণত হয়েছে। শুধু একজোড়া চোখে নেই কোনো ঘুম। সেই চক্ষুজোড়া চেয়ে আছে একজন ঘুমন্ত মায়াবতীর পানে। যে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে অন্যকারোর ঘুম কেড়ে নিয়ে। সেই চক্ষুজোড়া যেন হাজার বছরের তৃষ্ণা মিঠিয়ে নিচ্ছে। সেই মানুষটি আর কেউ নয় সয়ং রুদ্ধ! সে নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো অনিমার রুমে। ভাগ্যবশত তার রুমের ঠিক বিপরীত পাশেই রুদ্ধের রুম। হয়তো এটা সৃষ্টিকর্তার লীলাকমল! রুদ্ধ এগিয়ে এসে বসল অনিমার মাথার ঠিক পাশে। দুহাত দিয়ে মুখখানা ধরে ধীর কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘তোমার দিকে হাজার বছর ধরে চেয়ে থাকলেও তার তৃষ্ণা ফুরাবে না গো ফুলপরি। কারণ, তুমি আমার নেশা। আমার নেশাটাই তুমিময়!যা অন্যকোনো নেশা মতোন নয় যে কয়েকমুহুর্তে কেটে যাবে! আমি যে তোমার ভালোবাসা নামক অসুখে আক্রান্ত হয়েছি। আমি বারংবার তোমার এই ভালোবাসা নামক অসুখে আক্রান্ত হতে চাই গো আমার মায়াবতী!’

মুখে কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠল অনিমা। তবে তীব্র ঘুমের কারণে চোখ খুলতে পারলো না সে। তা দেখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল রুদ্ধের মুখে। এই মেয়েটা সত্যিই তাকে ঘায়েল করবেই। অনিমার কপালে সরে আসা ছোট্ট বেবিহেয়ার গুলো খুব সতর্কতার সাথে সরিয়ে দিলো। অতঃপর কপালে ভালোবাসার উষ্ণ প্রতিকিটা দিয়ে উঠে আসতেই বা হাতটা আকঁড়ে ধরল অনিমা। রুদ্ধ ভেবেছে ঘুমের ঘোড়ে ধরেছে হয়তো। কিন্তু পিছনে ফিরতেই চমকে গেলো। কারণ, অনিমা বিছানায় বসা আর ছোট ছোট চোখ করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘাবড়ে গেলো রুদ্ধ যদি চিৎকার করে! কিন্তু রুদ্ধকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠল,

– ‘অসভ্যের মতোন আমার রুমে এলেন কেন আপনি? আর আমাকে চুমু কেন খেলেন?’

– ‘ক্ কই! তোমার মনের ভুল হয়তো!’

– ‘আমার সাথে মিথ্যে বলছেন মিস্টার রুদ্ধ ওরফে মিস্টার অসভ্য? কি ভেবেছেন আমি কিছু বুঝি না? সবকিছু শোনেছি আমি হা!’

– ‘ ক্ কি শুনেছ? আমি অসভ্য কেন হবো? যাও ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে!’

– ‘তাহলে এতোদিন মেসেজকারী মানুষটি তাহলে আপনি? তাই না মিস্টার?’ অনিমার কথায় যেন ফেসে গেলো রুদ্ধ।

– ‘কি যে বলো না! আমি তোমার নম্বর পাবো কোথায়? তাছাড়া আজই তোমায় দেখলাম প্রথম। সো, বাজে না বকে ঘুমিয়ে পড়ো।’

– ‘আমাকে যাস্ট ফুলপরী বলে সেই মেসেজকারিই ডাকতো যা স্পষ্ট কিছুক্ষণ আগে আপনার ডাকার মতোনই!’

– ‘আই থিং এটা তোমার মনের ভুল। গুড নাইট, এখন আসি কেমন!’ বলে চলে আসতে নিলে অনিমা রুদ্ধের ধরা হাতটাকে স্বজোরে নিজের দিকে টান মারলো। ফলে যা হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি কিছু ঘঠল। রুদ্ধ টাল সালমাতে না পেরে সোজা অনিমার উপরে। নিজের কান্ডেই নিজে হতবিহ্বল হয়ে গেলো অনিমা। এদিকে অনিমার এহেন কান্ডেই চক্ষুজোড়া গোল গোল হয়ে গেলো রুদ্ধের!

– ‘উ্ উঠুন, আ্ আমার উপর থেকে!’

– ‘আমি পারবো না। নিজেই ফেলেছো নিজেই তুলবে।’

বেশ অবাক হলো অনিমা।

– ‘আপনি এতো ভারি কেন? উফস্ কি মোটা আপনি! উঠুন না প্লীজ।’ অনিমার বাচ্চামার্কা কণ্ঠে রুদ্ধ কি হাসবে নাকি কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছে না হ্যাবলার মতো অনিমার দিকে তাকিয়ে রইল।

– ‘এই যে মিস্টার অসভ্য! আপনি কি উঠবেন?’

– ‘প্রেয়সীর জন্যই একটু নাহয় অসভ্য হলাম! কি বলো ফুলপরী?’ বলে অনিমার দুচোখের পাতায় চুমু খেয়ে চলে গেলো রুদ্ধ। অনিমা যাস্ট রুদ্ধের এমন কান্ডে অবাক হয়ে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল।

আর মনে মনে বকা দিতো লাগল রুদ্ধকে, ‘ব্যটা অসভ্য! প্রেয়সী! হুহ, তোর প্রেয়সী হতে আমার বয়েই গেছে! খাটাশ একটা! বলে কিনা প্রেয়সীর জন্যই একটু অসভ্য হলাম!’ আওড়াতে আওড়াতে ঘুমিয়ে পড়ল সে।

এদিকে রুদ্ধকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে। অবশেষে সে বলেই ফেললো অনিমা যে তার প্রেয়সী!

– ‘যাক, অবশেষে প্রেয়সী আজ জেনেই গেলো সে তার অসভ্য মানুষটার! থ্যাংক গড! আজ অহন না বললে হয়তো থাকতেই পারতাম না বলা তো দুরে থাক, থ্যাংকস শালাবাবু!’ বলতে বলতে সে ও শোয়ে পড়ল। তবে ঘুমানোর আগে তার বাবাইকে খবরটা দিয়ে দিল যে, সে আজ বিজি তাই ফিরতে কাল হবে।

২১.

শীতের সকালের শোভা অতি অনুপম, ভোরের আলো যখন স্পর্শ করে পৃথিবীতে ঘন কুয়াশার আবরণে গাছপালা অস্পষ্ট মনে হয়, গোটা পৃথিবীটা যেন এক রূপকথার মায়াপুরী! এক ধূসর স্বপ্নের বেশ, অপূর্ব তার রূপ মাধুরী অনিন্দ্য সুন্দর সেই পরিবেশ। রৌদ্রতাপ মৃদু, শিশির ঝরা রাত আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলা চারিদিক,
ধোঁয়ার মতন বাষ্পকণা উড্ডীন নদী ও পুকুরের জল হতে,
পাতা ঝরা মরশুম যে কড়া নাড়ে দ্বারে আর জানান দিয়ে যায়, উদাসী সন্ন্যাসীর বেশে শীত এসেছে যেন আজ প্রকৃতিকে রিক্ত করতে। এই রৌদ্রের প্রথম তাপ যেন এসে পড়ল অনিমার মুখশ্রীতে, ভেঙ্গে গেলো ঘুমখানি। সোজা ফ্রেশ হয়ে নিচের রান্নাঘরে চলে এলো।

সকাল হতেই চৌধুরী বাড়ীর সকলে এক হয়েছে ড্রয়িংরুমে। পরিবারের প্রতিটা মেম্বার্সই উপস্থিত হয়েছে সেখানে। কিন্তু অনিমাকে রান্নাঘরে দেখে ধমক দিলো অহন।

– ‘অনু রান্নাঘরে কেন তুই?’

ভাইয়ের ধমকে কেঁপে উঠল সে! মাথা নিচু করে আমতা আমতা স্বরে বলে উঠল,

– ‘আ্ আসলে ভ্ ভাইয়া স্ সবার চা টা বানিয়ে নিতাম আরকি?

– ‘বাড়ীতে কি চাকরের অভাব পরেছে? নেক্সট টাইমে যেন তোকে রান্নাঘরে না দেখি। চল আমার সাথে, একটা সাউন্ডও করবি না। চুপচাপ চল।’ বলে অনিমাকে সাথে করে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো অহন।

এসেই তার বড়মামার উদ্দ্যেশে বলে উঠল, ‘বড়মামা, বাড়ীতে কি সার্ভেন্টসদের অভাব?’

অহন এহেন কথায় চমকে গেলো সবাই, কারণ সকাল সকাল অহন প্রচুর পরিমানে রেগে আছে। ইনকিয়াত আনাস বলে উঠল,

– ‘না তো, কেন বলছিস এই কথা হঠাৎ?’

– ‘তাহলে, আমার বোনটাকে দিয়ে কেন রান্নাঘরের সবকাজ করাও হে? সে কি এই বাড়ীর চাকর?’

কলি বেগম আমতা আমতা করে বলল, ‘আসলে অহন বাবা, ও তো নিজ থেকেই ওখানে যায়।’

কলি বেগমের পর পর মিথ্যা কথা যেন অহনে রাগের আগুনে ঘি দেয়ার মতোন কাজ করলো। তেঁতে উঠল সে,

– ‘মিথ্যে বলছে কেন মামি? তোমার গতকালের করা ব্যবহারটাই তো সবটার প্রমাণ করে।’ মাথা নিচু করে নিলো কলি বেগম। কিছুই বলার আর অবশিষ্ঠ নেই যে! ইনকিয়াত আনাস পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠল,

– ‘অনি মা, আজ এখন থেকে তুই আর কোনো কাজ করবি না। কেউ তোকে কিছু বললে সোজা আমায় এসে বলবি কেমন? এতোদিন তো তোর মামি বলতো রান্নার সকল কাজ সেই করে তাই কিছু বলতাম না, বিশ্বাস করেছি তাকে কিন্তু এতবড় মিথ্যে সে বলবে ভাবতেই আমার গা ঘিনঘিন করে উঠছে।’

অনিমা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো। মানে সে করবে মানবে কথাগুলো। কিছুক্ষণ আগেই তন্বী ক্ষমা চেয়ে নিলো অনিমার কাছ থেকে। সেও ক্ষমা করে দিলো কারণ, ছোট মানুষ সে। হয়তো অজান্তেই সেদিন কথাগুলো বলেছিল।

২২.

– ‘র্ রুদ্ধ ভাইয়া, ক্ কি করছেন কি ছাড়ুন।’

– ‘হুসস, নো সাউন্ড! আমার কাজ আমায় করতে দাও ফুলপরী।’ বলে অনিমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরও কাছে টেনে নিলো রুদ্ধ। রুদ্ধের এমন ঘোরলাগা কণ্ঠে চমকে গেলো অনিমা। রুদ্ধের তপ্তশ্বাসে বারবার কেঁপে উঠছে সে।

– ‘ক্ কেউ আসতে পারে। প্লীজ ছাড়ুন আমায়।’

– ‘নো মোর ওয়ার্ডস! আর একটাও কথা বলবে না।’ বলে অনিমার কাঁপাকাঁপা নরম পেলব ওষ্ঠদ্বয় নিজ আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আবেশে চক্ষুজোড়া বন্ধ করে নিলো অনিমা।

কতক্ষণ ছিলো জানে না তারা। কারণ, রুদ্ধ তার প্রেয়সীর ছোঁয়া পেয়ে চারপাশ ভুলে গেলো। অনিমাও এখন নিজের মধ্যেই নেই। হঠাৎ কারো আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো তাদের। দুজনের এমন রোমান্সের দিকে তাকাতেই বিস্ময় এসে ভর করলো সামনের মানুষটির। চিৎকারে করে উঠল সে,

– ‘আমি কিছু দেখিনি, আমি কিছু দেখিনি।’

মুহুর্তেই দুজন ছিটকে দূরে সরে পড়লো। রুদ্ধ সামনে মানুষটিকে দেখেও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু অনিমা লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতেই পারছে না। সাহস করে তাকাতেই আবারও একরাশ লজ্জা এসে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরল তাকে। কারণ সামনে …….
.
.
.
.
~চলবে ইনশা’আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here