নোনাজলের শহর পর্ব ২

নোনাজলের শহর
লেখিকাঃ হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-২
গতকাল রাত থেকে মুমুর ভীষণ জ্বর,দুপুরে ডাক্তার এসে দেখে গেছেন কিন্তু জ্বর কমেনি।অন্যদিকে আদিবও বেশ অসুস্থ, গতকাল বিকেলে মুমুর ছোট মামা তাকে মুমদের বাড়িতে এসে মেরেছে। ছোট মামার কলিজা মুমু, আর সেই মুমুকে বিয়ে করার জন্য কোথাকার কে এসে বসে আছে! মুমুর কাকু প্রবাসী, বাবা ব্যবসায়ী সারা দিন বাড়ির বাইরে থাকেন,মুমুর মা গেছিলেন পাশের বাড়িতে কোনো কাজে, মুমু বসেছিল কাকির সাথে, আর আদিব বাইরে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল এমন সময় ছোট মামা তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে এসে আদিবকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। মুমুর কাকি বাধা দিলেও আদিবকে মারধর থেকে বাচাতে পারেনি।অন্যদিকে মুমু ভয়ে কাঁদতে শুরু করে।মুমুর মা আসার আগেই ছোট মামা বের হয়ে যায়। মা এসে আদিবের অবস্থা দেখে মুমুকে প্রচুর মারেন।মায়ের ধারণা মুমু তার মামাকে আদিবকে মারার জন্য বলেছে।

ভয়ে ও মায়ের মার খেয়ে রাতে মুমুর জ্বর এসে গেছে। আদিবকে আগেই ডাক্তার দেখে গেছেন সে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু মুমুর মারার কথা শুনে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে। মুমুকে একবার দেখতে গেছিল আদিব চোখের কোণে পানি, লম্বা চুল গুলো এলোমেলো করে বিছানায় কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল। মুমুকে দেখার পর আদিব বিয়ের জন্য না করে দেয়। সেদিন ই আদিব হলে ফিরে যাই।কিছুদিনের মধ্যে মুমুও সুস্থ হয়ে ওঠে। মা মুমুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তার কিছুদিন পরেই মুমুর বাবা মিমনকে বাসায় আসতে বলেন জরুরি ভাবে, মিমন বাসায় আসলে বাবা তাকে মুমু ও আদিবের বিয়ের কথা বলে কিন্তু মিমন রাজি হয়না।বাবা রেগে মিমনকে থাপ্পড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আর মুমুকে বলেন বিয়ে না করলে মিমনকে আর বাড়িতে উঠতে দিবে না এবং পড়াশোনাও করতে দেবে না।পনেরো বছরের ছোটো মুমু তখন কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায় ভাইয়ার জন্য। সেদিন রাতেই আদিবকে নিয়ে আসে বাবা, সাদাসিধা ভাবেই কাজী ডেকে বিয়ে দিয়ে দেন আদিব আর মুমুর।
বিয়ে শেষে রাতে মুমু যখন কাকির কাছে বসে ছিলো মিমন বাড়িতে এসেই মুমুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিল আর বলেছিল,” আমি তোকে বাচাতে পারলাম না মুমু, তোর জীবন টা শেষ করে দিলো আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না রে”।মুমুও কেঁদেছিল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে।

টুপ করে দু ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো ডায়েরি টার উপর, মুমু চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে সময় দেখে নিলো সময় 2:37am.ডায়েরি টা বন্ধ করে বিছানার দিকে পা বাড়ালো মুমু। বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে প্রয়া।মুমুর বেঁচে থাকার ঔষধ। কাথাটা ভালো ভাবে প্রয়ার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো মুমু। সকাল নয়টাতে অফিস ঘুম দরকার কিন্তু ঘুম তো আসছে না। ইচ্ছে করছে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

ভোর 5:40 ফোনের রিংটোনে মুমুর ঘুম ভেঙে গেল, হাতড়ে টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে মুমু।

মিমন ব্যস্ত ভাবে বলে উঠলো ” মুমুমনি তুই ঠিক আসছি তো, তুই কি একবার বাড়িতে আসবি,খুব দেখতে ইচ্ছে করছে “।

সকাল সকাল ভাইয়ের ফোন পেয়ে ভালো লাগলেও কথা শুনে রেগে মিমনকে বলল,” ভাইয়া গতকাল সকালে বাড়ি থেকে এসেছি আমি আর তুই ২৪ ঘন্টা হওয়ার আগেই আবার বাড়ি যেতে বলছিস। তুই কী ভুলে গেছিস আমার অফিস আছে “।

মিমন নরম কন্ঠে বলল ” রাতে তোকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছি তাই বলছিলাম…….. “।

কথা শেষ হওয়ার আগেই মুমু বলল “ভাইয়া আমি ভালো আছি আর আমি বড় হয়ে গেছি এক বাচ্চার মা এখন প্লিজ আমাকে নিয়ে ভাবনা কমা। আর নিজে আসার কথা চিন্তাও কারবি না।”

“আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস আর প্রয়াকে দেখে রাখিস ” বলে চিন্তিতভাবে মিমন ফোন রেখে দেয়।

মুমুর আর ঘুম হবে না, তাই উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা করতে গেল। নাস্তা তৈরি করে মুমু মায়ের ঘরে যায়। মা কোরআন পড়েছে দেখে মুমু নিজের ঘরে যেয়ে প্রয়াকে তুলে ফ্রেশ করিয়ে নাস্তা করাতে আসে, ততক্ষণে মুমুর মা মরিয়ম বেগম এসে গেছেন। প্রয়াকে মায়ের কোলে দিয়ে মুমু রেডি হয়ে আসে।

মুমু এসে দেখে প্রয়া সারা মুখে খাবার লাগিয়ে সামনের দুটো দাঁত বের করে হাসছে। মুমু প্রয়াকে দেখে বলল ” মাম মাম কি করেছো তুমি সারা মুখে খাবার কেন? ”

প্রয়া দ্বিগুণ হাসি দিয়ে বলল,” মাম মাম দেতো আমি মিম (ডিম) থেয়েচি (খেয়েছি)”

মুমুর মা বলল ” দেখ মুমু তোর মেয়ের কাজ, নিজে নিজে খাবে বলে কি অবস্থা করেছে। এখন পরিষ্কার করতে গেলে আমাকে ভিজিয়ে ছাড়বে।”

মুমু মেয়েকে কোলে নিয়ে টিসু দিয়ে মুখ মুছে নাকে একটা চুমু দিয়ে মায়ের কোলে বসিয়ে বলল ” দুষ্টুমি করবে না মাম মাম নানুমনির কষ্ট হবে, একদম গুডগার্ল হয়ে থাকবে”

প্রয়া নানু মনির গলা জড়িয়ে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলল ” আমিতো দুদ দাল তাইনা নানু”।

মরিয়ম বেগম হেসে নাতনীর কপালে চুমু দিয়ে বললেন ” হুম আমার পাকা গুডগার্ল”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here