নোনাজলের শহর পর্ব ১

“দেদেদেখুন আআআমাকে এএএকদম ছোয়ার চেএএষ্টা করবেন না,আআআমি কি কিন্তু চিৎকার দি..দিব”
মুমু আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আদিব তার ঠোঁট জোড়া বন্ধ করে দিলো।মুমু হাজার চেষ্টা করেও যখন আদিবকে সরাতে পারলোনা,তখন সে কাঁদতে শুরু করে। আদিবের গালে মুমুর চোখের জলের ছোয়া পেয়েতেই সে মুমুর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে চোখের জল মুছে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “কেন বুঝিস না তোকে কতটা ভালোবাসি আমি”।

আর কিছু বলার আগেই মুমু দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে। আর আদিব চেয়ে থাকে ওর যাওয়ার দিকে।মুমু হলো আদিবের বেস্ট ফ্রেন্ড মিমন এর একমাত্র আদরের বোন, সবারই আদরের সে।বাড়ির একমাত্র মেয়ে বলে কথা।গ্রামের যৌথ পরিবারের মা-বাবা, কাকু-কাকি একমাত্র মেয়ে আর দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন সে।মামাদেরও চোখের মনি সে।সবে ক্লাস টেনে পা রেখেছে মুমু।বাইরের জগৎ সম্পর্কে খুবই কম জানে। পরিবারই তার জগৎ। গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করে সে।খুব সুন্দরী সে নয় তবে তার শ্যাম বর্ণে মায়াবী চেহারা আার লম্বা চুল ই যথেষ্ট তার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যায়।আর আদিব এই মায়াবী কে চাই তার প্রতি নিশ্বাসে।

আর আদিব হলো বাবা-মায়ের হলো ছোটো ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোন নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। হঠাৎ মায়ের মৃত্যুতে বাবার নতুন সংসার সব এলোমেলো করে দিয়েছিল তার পরিবারকে।তারপর থেকেই পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে নিজের মত থাকে। ভার্সিটিতে উঠে মিমন এর সাথে বন্ধুত্ব হয় আদিবের। মিমন আদিবের সবকিছু জানে তাই ছুটিতে আদিবকে সাথে নিয়ে আসে সব সময়। মিমনের মা-বাবা আদিবকে খুবই পছন্দ করেন। করারই কথা, আদিব দেখতে হ্যান্ডসাম, লম্বা, ফর্সা,মুখে খোচাখোচা দাড়ি,ঠোঁট দুটো লাল, অনেকে বলে মেয়ে হতে গিয়ে ছেলে হয়ে গেছে। অনার্স ২য় বর্ষের গরমের ছুটিতে মিমন জোর করে নিয়ে আসে আদিবকে, আসতে রাত হওয়ায় কারো সাথেই দেখা হয়নি ওদের। সকালে দরজায় ঠকঠক শব্দে আর ভাইয়া উঠ বলে দরজা ভাঙ্গার উপক্রম হওয়াকালীন আদিব দরজা খুলে দেয় আর হুরপার করে ফ্লোরে পরে যায় মুমু।ডাকতে ডাকতে মুমু দরজাতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিল তার পরিণতি হিসেবে সে ফ্লোরে।আর আদিব তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফ্লোরে পরে থাকা দুই কাঁধে লম্বা বেণি করা,মুখে ব্রাশ পুড়া চোখ দুটো ছলছল করা ছোট্ট মেয়েটার দিকে। ততক্ষণে মিমন মুমুর পড়ে যাওয়ার শব্দে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি মুমুর কাছে এসে ধরে ” মনি পড়লি কী করে,ব্যাথা পেয়েছিস,লেগেছে কোথাও দেখি। ” মিমন মুমুকে বেডে বসিয়ে বলল, কিরে বল ব্যাথা পাইছিস। মুমু মাথা নেড়ে জবাব দেয় লাগেনি।মিমন মুমুর মুখ থেকে ব্রাশটা বের করে বলল,” যা আগে মুখ ধুয়ে আই”। মুমু লক্ষি মেয়ের মতো ভাইয়ের ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে আসে আর মিমন ডয়ার থেকে ওয়েন্টমেনট বের করে তার পাশে বসে হাতের কনুই তে ওয়েন্টমেনট লাগিয়ে দিয়ে একটু রেগে বলে,” কতবার বলেছি ব্যাথা পেলে লুকাবিনা আমি কি রাগ করি।” মুমু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল ” এই যে রাগ ই তো করছিস”। আদিব এতখনে কথা বলল, ” আরে বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারেনি ছেড়ে দে “। মুমু এতখনে সামনে তাকালো, মিমন বলল ” ও বুঝতে পারলেও বলে না মা বকবে সেই ভয়ে, ভীতুর ডিম “। মুমু অসহায় লুক নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায় যেন ভাইয়া অপরিচিত ছেলেটাকে তার সম্পর্কে কিছু না বলে। সেটাই ছিল মুমুর সাথে আদিবের প্রথম দেখা।

সেই থেকে মুমু লজ্জায় আর আদিবের সামনে আসতো না, লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতো। ততদিনে মায়ের সঙ্গে আদিবের মা-ছেলে সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। তাই মা মুমুকে আদিবের কাছেই ম্যাথ পড়তে দেন। মুমুও বাধ্য হয়ে পড়তে যায়। মুমু বাড়িতে চঞ্চলতা করলেও বাইরের সকলের সামনে সে ভেজা বিড়াল।চৌদ্দ বছরের সেই মুমুর প্রেমে পড়েছিল আদিব।কখন কীভাবে সে নিজেও জানতে পারেনি। আজ এক বছর পরে তার সেই প্রেম কে সে পেতে চলেছে। কিন্তু মুমু এখনো অনেক ইমম্যাচুউর, সে তো বিয়েটা করতে চাই না।হ্যা মুমুর পরিবার আদিবকে মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজেদের কাছে রাখতে চাই।মুমু শ্যাম বর্ণের মেয়ে তাই বাবা মা চায় না আদিবের মতো জামাই হাত ছাড়া হোক। তারা আদিবকে নিজেদের কাছে রেখে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তাই এত অল্প বয়সে মুমুকে বিয়ে দিতে চায়। গ্রামের মানুষ হিসেবে মুমুর পরিবার অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়াকে কিছুই মনে করছে না। আদিবও না করেনি নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার লোভে। মিমন এ বিয়েতে কোনো ভাবেই রাজি নয় তাই বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে। মুমুর মামারাও রাজি নই। মুমুকে কেউ রাজি করাতে পারে নি। মা তাকে বকে মেরে আদিবের খাবার হাতে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে ছিল। মুমু আদিবকে জমের মতো ভয় পায়। সে চুপিচুপি খাবার রেখে আসছিল কিন্তু তার আগেই আদিব চলে আসে আর মুমুকে ধরে নেয়।

চলবে

নোনাজলের শহর
লেখিকাঃ হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here