পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ১৭+১৮

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১৭

সবার অনুপস্থিতে হৃদয় মিমের ঘরে প্রবেশ করতেই ; তা দেখে মিম বলে উঠল, ” আমিও তো একজন ধর্ষিতা আর আপনি তো ধর্ষিতাদের ঘৃনা করেন। আমি ধর্ষিতা জানার পরও বিয়ে করবেন আমাকে? ”

মিমের কথা শুনে হৃদয়ের মাথায় যেন ব্রজপাত ঘটল। সে দু কদম পিছিয়ে গেল। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। তার ভালোবাসা তার সবকিছু যে মানুষটা তার সাথেও এমন জঘন্য একটা ঘটনা ঘটেছে আর সে এসব কিছু থেকে অজানা।

হৃদয়কে দু’কদম পিছিয়ে যেতে দেখে মিম হেসে বলল,
—“দেখেছেন সত্যটা জানার পর আপনি কেমন পিছিয়ে গেলেন। বিয়ে নিয়ে কত কিছু করছিলেন আর এখন সেটা থেকেও পিছিয়ে যাবেন নিশ্চই। এখন বুঝতে পারছেন তো আপনাকে কেন বিয়ে করতে আমি রাজি হইনি? ”

হৃদয় মিমের একেবারে কছে চলে গেল। মিমের দুই হাত ধরে বলল,
—” আমাকে তুমি ভুল বুঝছো মিম। আমি এখনো তোমাকে বিয়ে করতে রাজি। ”

“এটা তো আপনার মুখের কথা মনের কথা নয় ” কথাটা মনে মনে রাখলো মিম। হৃদয়ের হত থেকে নিজের হাতটা একটু জোর করেই ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
—” আপনাকে বলেছি না যখন তখন চপনি এভাবে আমাকে ছোঁবেন না। এখন দেখছি আপনার ক্যারেক্টার টাও লুস। আর হ্যাঁ আমি আপনাকে ভুল বনা ঠিকই বুঝেছি।”

—” মিম?” কাতর শোরে বলল হৃদয়। হৃদয়ের কাতর শোরে যেন মিমকে ভিতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছি। প্রতেক বার ওর সাথে এমনই হয় এই হৃদয় নামের লোকটার সাথে যত শক্ত থাকার চেষ্টা করে ততই ভিতর থেকে ভেঙ্গে গুরিয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে কঠোর-শোরে বলল,

—” সবার অনুপস্থিতি তে আপনি আমার ঘরে কেন? এক্ষুনি চলে যান। ”

—“তোমার জন্য কিছু….”

—” আমার ঘুম পেয়েছে আমি এখন ঘুমাব। আপনি এখন চলে যান। ”

হৃদয় এক হাতে পিঠের পিছনে লুকিয়ে রাখা শারীর প্যাকেটটা এবার ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নিস্চুপে বেরিয়ে গেল।

হৃদয় চলে যাওয়ার পরপর শাড়ীর প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় গরীয়ে পরল মিম। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল যেন ওর কান্নার আওয়াজ ঘরের বাইরে না যায়।


সকাল সকাল রায়হান বায়না ধরে বসল আজ সে সাদিয়ার গরুর মাংসের বিরিয়ানি খাবে। সাদিয়া ভেবেছিল শশুড় মশাইয়ের পচ্ছন্দের কালা ভুনা রান্না করবে আজ তার মধ্যে রায়হান এমন আবদার। সাদিয়া কি করবে বুঝতে না পেরে বলল,

–“আজই রান্না করতে হবে? ” সাদিয়া হাত থেকে চিরুনীটা ড্রেসিংটেবিল এর উপর রেখে রায়হানের সামনে দাড়াল।
রাহয়হান শোয়া থেকে একবার সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বালিশে মুখ গুঁজলো। সাদিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু-কুচকে সেদিকে তাকাল। রায়হান এবার বালিশ থেকে মাতা তুলে বা-দিকে ফিরে সাদিয়াকে একপলক দেখে বলল,

—“কেন? আজ করলে কি হয়? খুব খেতে ইচ্ছে করছে। করো না আজ আর তুমি তো জানোই আমি বিরিয়ানি কতটা পছন্দ করি ”

—” ইচ্ছে তো করবেই। বিয়িয়ানি খেকো একটা। এত বিরিয়ানি মানুষ কিভাবে খায়। সপ্তাহে একদিন দুইদিন হলে বুঝতাম প্রতি সপ্তাহ ভরে কেউ বিরিয়ানি খেতে পারে। ” বিরবির করে কথা বললেও রায়হানকে বলল,

—” মা বলল আপনি যা মাংশ এনেছিলেন তা শেষ প্রায় । আমি ভেবেছিলাম যতটুকু আছে তা দিয়ে বা…..সাদির কথা শেষ না হতেই রায়হান বলে উঠল,

—” যতটুকু আছে তা দিয়েই করো এখন আমাকে একটু ঘুমাতে দাও। প্লিজ জান। ” বলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমাতে চাইল।

সাদিয়া এবার রেগে গেল বলল,
—” ধুরর আমার কথাটা তো শেষ করতে দিন। যতটুকু মাংস আছে তা দিয়ে বাবার জন্য কালাভূনা রান্না করবো। আপনি এখন বাজার থেকে মাংস এনে দিলে বিরিয়ানি হবে নয়তো হবে না। ”

রায়হান এবার খাটে আধশোয়া হয়ে বসল। সাদিয়ার হাত ধরে একটানে খাটে বসিয়ে দিল ওকে। পিছন থেকে কোমড় জরিয়ে ধরে বলল,

—” আমাকে একটু ঘুমাতেও দিবে না তুমি? এখন বাজারে পাঠিয়েই ছাড়বে? দারাও তোমারও ঘুম হারাম করার ব্যবস্থা করতে হবে জলদি। ”

সাদিয়া ভ্রু-কুচকে রায়হানের দিকে তাকালো রায়হানের হাতদুটো কোমড় থেকে সরানোর বৃথা চেষ্টা করে বলল,
—” কিভাবে শুনি? ”

—” একটা বাচ্চা পৃথিবীতে এনে। হাহা! ও সারারাত কান্না করবে আর তুমি জেগে থাকবে। আর আমি আরামসে ঘুমাবো। ”

—” কি খারাপ, হুহ। ”

—” আজকে জানলে? ”

—” হুম। আচ্ছা আপনি নাকি ছোটবাবু খুব পছন্দ করেন? মা বলেছে। ”

—” সত্যি বলতে, হ্যা করি। আমি চাই আমাদের একটা ফুটফুটে মেয়েবাবু হোক। আমি খুব খুব খুব আদর করবো ওকে। কোলে নিয়ে ঘুরবো। তবে জানো কি ছোটবাবু আমি একদমই কোলে নিতে জানি না।”

—” হিহি। ছোট বাবু এত ভালোলাগে আর এখনো কোলেই নিতে জানেন না আপনি। ”

—“কিভাবে জানব সাদিয়া তুমি তো….! ”

—” আমি তো কি? ”

রায়হান এবার অন্য জগতে হারিয়ে গেল। পিছন থেকে সাদিয়ার চুলগুলো সযত্নে সামনে ঠেলে দিয়ে ঘাড়ে ঠোঁট স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠল সাদিয়া। সাদিয়ার কাঁপুনি উত্তেজিত করে তোলল রায়হানকে। রায়হান ওর ঘাড় থেকে কানের কাছে মাথা উঠিয়ে ধিরে বলল,
—“আজ একটা জিনিস চাইবো দেবে কি আমায়? সাদিয়া? আমি একটা বাবু চাই সুধু একটা বাবু। ”

রায়হানের ভাড়ি নিশ্বাস এসে সাদিয়ার গলা ছুয়ে যাচ্ছে।
সাদিয়া কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। হৃদয়ের কম্পন যেন কয়েক শত গুন বেড়িয়ে দিচ্ছে সেই রায়হানেট ভাড়ি নিশ্বাস।
রায়হান সাদিয়ার ঘারে দ্বিতীয় বারের মত ঠোঁট স্পর্শ করতেই সাদিয়া আলতো ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে উঠে কিছুটা দূরে সরে দারায়। রায়হান মৃদু হেসে খাট থেকে নেমে সাদিয়ার পিছন এসে দারায়। নিজের দু’হাত দিয়ে পেছন থেকে সাদিয়ার দু হাত ধরতেই…..
দরজায় হৃদয়ের গলা শোনা যায় সাথে পুরুষালী কন্ঠে কেউ, “আমু ভাইজান। ” বলে ভিতরে আসার অনুমতি চায়। সাদিয়া রায়হাকে ধাক্কা দিয়ে; দৌড়ে বারান্দায় চলে যায়। আচমকা সাদিয়ার ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে খাটের উপর আছড়ে পরে রায়হান। হৃদয় “ভাইয়া, ভিতরে আসবো” বলতেই রায়হান ভিতরে আসতে বলে।

হৃদয় রায়হানকে ফেরিওয়ালা লোকটির কথা বলল। রায়হান তাকে দেখে খুব খুশি হলো এবং তাকে বসতে বলল। হৃদয় অচেনা লোকটির জানতে চেয়ে বড় ভাই রায়হানকে প্রশ্ন করল,
—” ভাইয়া উনাকে তো চিনলাম না। কে উনি? ”

রায়হান কিছু বলার আগেই ফেরিওয়ালা লোকটি সরল মনে গতকাল রাতের সব ঘটনা খুলে বলল। কিভাবে রায়হান তার ছোট্ট ছেলেটির মন রাখতে অতগুলো বেলুন কিনে নিল, তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি আর তাকে একটা কাজ দিবে বলেছিল; সেই সব ঘটনা খুলে বলল।

হৃদয়, রায়হান লোকটির সরলতা দেখে মুগ্ধ হলো। এমনি বারান্দায় দারিয়ে সাদিয়াও লোকটির কথাবার্তায় কিছুটা চমকে উঠল।
সাদিয়া রায়হানকে যতই দেখছে ততই ওর প্রেমে পরে যাচ্ছে। রায়হানের বউ হয়ে ওর সত্যিই নিজকে আজ ভাগ্যবতি মনে হচ্ছে। একজন ধর্ষিতাকে যে এতটা ভালোবাসে সে কত মহান, ভালো একটা লোক হতে পারে তা আগে থেকেই জানা সাদিয়ার। তবে আজকে গতরাতের ঘটনাটা শুনে রায়হানের প্রতি শ্রদ্ধাটা বেরে গেল ওর।

রায়হান হৃদয়কে চা-নাস্তা দিয়ে যাবার কথা বলতেই হৃদয় চলে গেল। রায়হান লোকটিকে বলতে শুরু করল,
—” আমাদের বাড়িতে সিকিউরিটির জন্য একজন দারোয়ান দরকার । বর্তমানের অবস্থা খুবই করুন তাই বিশেষ করে প্রয়োজন আরকি। অবশ্য একজন আছে সে এখন ছুটিতে। আপনি দারোয়ানের কাজটা করতে পারবেন? বেতন নিয়ে ভাববেন না। ”

ফেরিওয়ালা লোকটি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রায়হানের কথা শুনছি। ছুটিরত দারোয়ানের জায়গায় কিছুদিন কাজ করতে হবে ভেবে সে ম্লান রায়হানের দিকে তাকায়। যা দেখে রায়হান বলে,
—” আপনি কি ভাবছেন আমাদের দারোয়ানের অবর্তমানে আপনাকে কিছুদিনের জন্য দারোয়ান কাজে রাখছি?”

লোকটি ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়লো। তা দেখে রায়হান হেসে দিল। বলল,
—” তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আমাদের দারোয়ান ছুটি কাটিয়ে আসার পরও আপনি দারোয়ানের চাকুরী করবেন। আমাদের দুইজন দারোয়ান এর প্রয়োজন একজন আপনি আরেকজন সে। ”

লোকটি অনেক খুশি হলো তবে কিছু একটা ভেবে মূহুর্তেই মুখটা মিলিন হয়ে গেল। সে বলল,
—” আইচ্ছা, কিন্তু আমার পোলাডা….”

—” আমি স্কুলে কথা বলেছি ভর্তির ব্যাপারে। কাল আপনি আপনার ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের বাসয় চলে আসবেন। আপনি কাল সকাল থেকেই আপনার ডিউটিতে লেগে যাবেন আর আমার স্ত্রী সাদিয়া আপনার ছেলে আর স্ত্রীকে নিলে স্কুলে চলে যাবে। সাদিয়া আপনার ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। ”

লোকটির খুব খুব খুব খুশি হলো । তার মুখের মধ্যেই সেই খুশির চমক চোখে পরল রায়হানের। লোকটি রায়হানের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে নিজ বাসায় রওনা হলো।

রায়হান বাজার থেকে সাদিয়াকে মাংস এনে দিয়ে অফিসের কাগজপত্র নিয়ে বসল। তেমন কোন কাজ নেই বলে রায়হান অফিসে যায়নি আজ। ঘন্টাখানেক পর সাদিয়া রায়হানকে খাবারের টেবিলে ডাকো বিরিয়ানি রান্না হয়েছে বলে। বিরিয়ানির কথা শুনতেই হাতের কাজ রেখে রায়হান ছুটলো ডাইনিং রুমে। কাজের চেয়ে বেশি ওর কাছে বিরিয়ানি তার উপর সেটা যদি হয় বউয়ের হাতের রান্না তাহতো আর কোন কথাই নেই।

ঘন্টা খানেক পর! রায়হান সাদিয়াকে নিয়ে দারোয়ানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় আধঘন্টার বেশি সময় লেগে গেল। রায়হান সাদিয়াকে দেখে দারোয়ান খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। সে কি রেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। রায়হান তার কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত হয়ে বসার জন্য অনুরোধ করল। এমত অবস্থায় দারোয়ান স্ত্রী আঁখিমনি সাদিয়াকে অবয়া খুলে ফ্যানের নিচে বসতে বলল। দারোয়ানের সামনে অবয়া খুলতে সাদিয়ার ইতস্তত করতে দেখে আঁখিমনি স্বামি জাহিদ হোসেনকে ইশারা করতেই জাহিদ হোসেন বুঝতে পেরে রায়হানকে নিয়ে অন্যরুমে আসতে চাইল। রায়হান আঁখিনিকে কুশলাদি জিগ্যেস করে জাহিদ হোসেনের সাথে অন্য রুমে চলে গেল। রায়হান দারোয়ান জাহিদের সাথে আলাপ শেষে ; মিমকে অপহরণ করতে চাওয়া লোকগুলোর ব্যাপারে জানতে চেয়ে তাকে প্রশ্ন করল,
—“তুমি কাল আমাদের বাড়িত বলেছিলে মিমকে যারা অপহরণ করতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে তুমি দুইজনকে চিনো। একজন ফাহিম একজন মুন্না। আমি মুন্নার বিষয়ে কিছু জানতে চাই। ”

মুন্না আর ফাহিমের নাম শুনে জাহিদ ঘাবড়ে গেল সাথে কিছুটা ভয়ও পেল। সে আমতা আমতা করে বলল,
—” মুন্না! ফাহিম! শুনেছি ফাহিমকে কেউ খুব খারাপ ভাবে খুন করেছে। আর মুন্নার বিষয়ে কি বলবো। ”

—” হ্যা আমিও ফাহিমের ব্যাপারটা শুনেছি তাই আর ফাহিমের কথা জিগ্যাস করিনি। মুন্নার কি কি বেআইনি কাজকর্ম করে? আমি যতটুকু জানি মেয়ে পাচার করে ওরা। আচ্ছা, ও কোথায় থাকে? সব কিছু জানাতে চাই। ”

—” ফাহিমের বাড়িতে আমি কাজ করতাম। প্রতিদিন রাতে নিত্য নতুন ময়েদের সাথে রাত কাটাত। একদিন ওরা সব বন্ধুরা ফাহিমের বাসায় আড্ডা দেয়ার জন্য এসেছিল। সেইদিন বাসায় আসা নতুন কাজের মেয়েটাকে ওরা সবাি মিলে ধর্ষন করে। মেয়েটার আর্তচিৎকার শুনে আমি বাসার ভিতরে গিয়ে ওদের…… ছিঃ সেই মেয়েটি সেইদিন ওদের অত্যাচারে মারা যায়। আমি কিছুই করতে পারি নি। ”

বলে জাহিদ হোসেন কাঁদতে লাগল। রায়হানের রাগে দুঃখে নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। বাকি ধর্ষকগুলোকে যদি এখন সামনে পেত নিশ্চিত কুপিয়ে হত্যা করত।
—” মুন্নার বাসা কোথায়? কোথায় থাকে ও?”

—” ফাহিম আমাকে মুন্নার বাসায় দারোয়ানে চকুররীর জন্য পাঠাতে চাইছিল তাই তার বাসার ঠিকানাটা তো আমার কাছে আছে তবে সেখানে কেউই থাকে না এখন। ঢাকা, ****** ”

” যাইহোক ওইখানে গেলে কিছু না কিছু তো ঠিকই জানতে পারবো। মুন্না কোথায় থাকে সেটা তো কেউ নস কেউ জানবে সেখানে। এই মুন্নার রক্ততে গোসলের আগে আমার শান্তি নেই। ” কথা মনে মনে বলে পাশের ঘরে পা বাড়ালো রায়হান। যে করেই হোক আজ মুন্নাকে খুজে বের করবে।

চলবে…..
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১৮

দুই দিনের ছোট্ট বাচ্চাটা নিজের মায়ের আঙুল ধরে ঘুমিয়ে আছে। আঁখিমনির কোলে থাকা সেই বাচ্চাটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সাদিয়া। কি মায়াবী সেই বাচ্চাটার মুখ। ইচ্ছে করছে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে, বুকের সাথে জরিয়ে ধরে গালে চুমু খেতে। তবে ছোট বাবু কোলে নিতে না পারায় সে ইচ্ছেটা মাটিচাপা দতে হলো সাদিয়াকে। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে বাচ্চাটাকে কোলে নিতে। এসব ভাবতে ভাবতে আঁখিমনির কাছে বাচ্চাটার নাম জানতে চাইল।

রায়হান পাশের রুম থেকে এসেই দেখে, সাদিয়া অপলকভাবে তাকিয়ে বাচ্চাটাকে দেখছে। সেই চাহনিতে বাচ্চাটার প্রতি সাদিয়ার ভালোলাগাটা দেখতে বাকি নেই রায়হানের।

একদিন আমাদের ঘরের একটা ছোট্টা বাবু আসবে সাদিয়া। ও আমাদের সংসারটা খুশিতে ভরে তুলবে। তুমি ওকে পেয়ে তোমার সব অতীত ভুলে যাবে। তার আগে আমি তোমার ধর্ষকদের শেষ করবো। — রায়হান এসব ভাবছিল ঠিক তখনি আঁখিমনি বলে উঠল,
—” এখনো কোন নাম ঠিক করি নি। মাত্র দুইদিন হলো ওর পৃথিবীতে আগমন। ”

আঁখিমনির কথায় রায়হানের হুঁশ ফিরল। তখনি রায়হানের পিছন থেকে জাহিদ হোসেন এসে বলল, ” মানাফ! আমি ওর নাম ঠিক করেছি মানাফ। ”

জাহিদ হোসেনকে দেখে নিজের হিজাব ঠিক আছে কিনা তা দেখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল সাদিয়া। রায়হান দরজার কাছ থেকে এগিয়ে গিয়ে আঁখিমনির কাছ থেকে বাচ্চাটেকে কোলে নিয়ে বলল, ” মানাফ। খুব সুন্দর নাম। ”
রায়হানের কথার শব্দে বাচ্চাটা মিটমিট করে তাকালো। চারিদিকে একবার চোখ বুলালো। মাকে দেখার করণে হয়তো কেঁদে দিল। দুই দিনের বাচ্চাটাও নিজের মাকে কেমন চিনে ফেলেছে, অবাক রায়হান। মানাফকে রায়হান শান্ত করার চেষ্টা করে বলল, “এই যে, মানাফ। মানাফ! এইদিকে তাকাও।”

রায়হানের হাসিভরা মুখ, ওর কথায় বাচ্চাটি কান্না থামিয়ে শান্ত হয়ে গেল। রায়হানের দিকে তাকিয়ে হসতে লাগল। রায়হানও ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগল।

রায়হান মানাফকে কিভাবে ইজিলি কোলে নিয়ে রেখেছে। মানাফের কান্না মূহুর্তেই কিভাবে থামিয়ে দিল। রায়হানের দিকে তাকিয়ে কত সুন্দর করে খেলা করছে মানাফ । এসব বিস্মিত চোখে দেখছে সাদিয়া।

হঠাৎ! রায়হানের সাদিয়ার উপর চোখ পড়তেই দেখলো সাদিয়া ওদের দিকে কেমন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে রায়হান পা টিপে টিপে সাদিয়া কাছে এগিয়ে গেল। মানাফকে সাদিয়ার কোলে দেয়ার জন্য কিছুটা এগিয়ে ধরে বলল,
—“কোলে নিবে ওকে? ”

সাদিয়া ডেবডেবে চোখে তাকাল রায়হানের দিকে। কি করে ওর মনের কথা এই লোকটা বুঝতে পারে তা জানা নেই সাদিয়ার। সেই কখন থেকে চাইছিল বাবুটাকে কোলে নিতে। কেউ যদি ঠিকভাবে ওর কোলে বাবুটাকে দিতে পারত। রায়হানের প্রস্তাবটা পেয়ে সোজা রাজি হয়ে গেল। রায়হান স্বযত্নে বাবুটাকে সাদিয়ার কোলে তুলে দিল।
খুশিতে কাঁদতে ইচ্ছে করছে সাদিয়ার। সাদিয়া বাবুটাকে আঁদর করতে লগল, কোলে দোল খাওয়াতে লাগল। আর সেই দোলে কিছু না খেয়েই আবার ঘুমিয়ে গেল ছোট্ট মানাফ।

রায়হান অপলহীন চেয়ে রইল সাদিয়ার দিকে। আজ অনেকদিন পর সাদিয়াকে এত খুশি দেখছে রায়হান। সেইদিনের পর থেকে মনখুলে একবারের জন্যও হাসতে দেখেনি সাদিয়াকে। এখানে এসে খুব ভালো হয়েছে। এখানে আসার কথাটা ভাবতেই মনে পড়ল এখানে আসার মূল করণটা।
রায়হান সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—” সাদিয়া আমি বাইরে তুমি মানাফকে দিয়ে আসো।”
—“এখনি চলে যাবেন দাদাবাবু?”
—” হ্যাঁ, কিছু কাজ আছে। তুমি আমার সাথে বাইরে চলো কিছু কথা আছে।”
—” আচ্ছা।”

যেতে যেতে রায়হান জাহিদ হোসেনকে বলল,
—“এই একমাস তোমার কাজে আসার প্রয়োজন নেই। নিজের পরিবারকে সময় দাও। বিষেস করে ছেলেটাকে। বেত নিয়ে ভেবো না। ঠিক সময়ে পেয়ে যাবে। ”
দারোয়ান জাহিদ হোসেন কি রেখে কি করবেন ভেবে পাচ্ছে না। কৃতজ্ঞতায় তার চোখে পানি চলে আসলো। আজকালর দিনে ছেলে নিজের মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় সেই যায়গায় বাড়ির একজন সামান্য কর্মীচারি, দারোয়ানের জন্য এতটা কোন ব্যক্তি করে বলে মনে হয় না”
—” দাদাবাবু!”
রায়হান তারে চোখে জ্বল দেখে কথা ঘুড়িয়ে জিগ্যেস করল,
—” আচ্ছা। ফাহিমের বাড়িতে কাজ করা মেয়েটার নাম কি ছিল? ”
—” রুমা। ”

সাদিয়া কোল থেকে ঘুমন্ত মানাফকে ওর মায়ের কোলে তুলে দিল। আঁখিমনির কাছ থেকে বিদায় নিতে চাইলো। কিন্তু সেই কথার পরিপেক্ষিতে আঁকিমনি বলল,
—” বাচ্চা নিচ্ছো না কেন বোন? একটা বাচ্চা নিয়ে নাও। ”
আঁখিমনির কথা শুনে সাদিয়া কিছুটা লজ্জা পেল। মুহূর্তে রায়হানের আবদারটা মনে পড়ল! একটা বাবু চাওয়ার আবদার।

—“তোমার বর এর চোখে একটা বাচ্চার প্রতি স্নেহ দেখেছি, গভির ভালোবাসা দেখেছি। তোমার মধ্যেও মায়ের মমতা দেখেছি। দুজন যদি এতই একটা বচ্চাকে অনুভব করে থাকো ভালোবেসে থাকো তাহলে একটা বাচ্চা নিয়ে নিচ্ছ না কেন? ”

সাদিয়া উত্তরে কিছু না বলে বলল,
—“আসছি। আমাদের বাসায় মানাফকে নিয়ে যাবেন। ”
—” আচ্ছা। আর কথাটা মনে থাকে যেন। ”
সাদিয়া “হ্যাঁ” সূচক মাথা দুলিয়ে চলে আসল।

সাদিয়াকে সাবধানে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রায়হান ছুটলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। মুন্নার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। মুন্না এখন কোথায় থাকে।



কাল রাত থেকে হৃদয়ে কোন দেখা পায়নি মিম। আর সময় কোন না কোন বাহানায় দিনে কতবার এই ঘরে আসে তার হিসাব নেই। কাল রতে সত্যিই বেশি হার্ট করে ফেলেছে হৃদয়কে। ওর প্রিয় বোন সাদিয়া যে কিনা ওর মায়ের মত তাকে যাচ্ছেতাই বলেছে সুধু মাত্র সে একজন ধর্ষিতা বলো এটা মেনি নিতে পারেনি মিম। তাই মিথ্যে বলেছে কাল হৃদয়কে। ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে।
মিম এসব ভাবছিল ঠিক তখনি রায়হানের মায়ের চিৎকার ভেসে আসে। দৌড়ে সেখানে পৌছেই শুনতে পায় হৃদয় সুইসাইড এটেন্ড করেছে। দৌড়ে হৃদয়ের কাছে যাওয়ার সময় ফ্লোরে স্লিপ কেটে পরে যায় মিম। ফ্লোরের সাথে মাথার সংঘর্ষে মাথা ফেটে যায়, রক্তে ভেসে যায় ফ্লোর।



গন্তব্যে পৌছাতে পৌছাতে রায়হানের দুই ঘন্টা সময় লেগে যায়। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল যে করণে এত দোড়ি হয়ে গেছে ওর। রায়হন ঘড়িতে একবার তাকাতেই দেখল বিকাল ৪টা ৫০ বাজে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির আসেপাশে কাউকে দেখতে পাল না রায়হান। এই জায়গাটায় তেমন গাড়িও চলাচল করে না বলে মনে হলো রায়হানের। রাস্তা থেকে অনেক ভিতর বাড়িটা তাছাড়া আসে পাশে ঘন গাছপালা ছাড়া কোন বাসত-বড়িও নেই। বাড়িটার পিছনে এক বিরাট পুকুর দেখতে পেল রায়হান। রায়হান বাড়িটার কাছে এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে একটা গাড়ি ওকে ক্রস করে বাড়ির গেটের সামনে চলে গেল। তা দেখে রায়হান মোবাইলে ব্যাস্ত হলো তবে আড়চোখে সেই গাড়িটাকেই দেখছে ও।

গড়ির হর্ণ শুনে গেট খুলে একটা লোক হতে ব্যাগ নিয়ে সেই গাড়িটার কাছে পৌছাল। গাড়ির গ্লাস নামাতেই লোকটা হাতে থাকা ব্যাগটা ঠেলে গাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে দিল। তারপর আবার গেটের ভিতর চলে গেল।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল। রায়হান পুকুর পাড়ে বসে আছে। হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ ভেসে এল। রায়হান উঠে দাড়িয়ে বাড়ির পেছন দিকটা থেকে সামনে এলো,দু’জন লোক দেখে গাছেড় আড়ালে চলে গেল। একজন লোক অপরজন উদ্দেশ্য করে বলল,
—” মুন্না ভাই তোমার এমন নির্জন একটা বাড়ি থাকতে বনে জঙ্গলে আমাদের কাজ সারতে হয় এটা কি ঠিক বলো?”
—” তুই কি বলতে চাস আমরা আমার বাড়িতে মেয়ে ধরে এনে ভোগ করি?”
—” তো কি হয়েছে? এখানেই তো কোন রিক্স নেই?”
—” ধুর বেটা, নিজ বাড়িতে কিছু করলে কেউ যদি টের পায় তবে সবাই ফাঁসবো। তুই আমাদের সাথে মাত্র যোগ দিলি আস্তে আস্তে সব বুঝবি। ”
—“এই পর্যন্ত তোমাদের সাথে থেকে তিনটার মেয়ের মজা নিলাম আর এখন বলছো মাত্র যোগ দিলাম।”

রায়হান এবার ভালোমত মুন্নাকে চিনতে পারল। তার সাথে আরেকটা ধর্ষককেও। দুজনের কাউকে ছাড়বে না আজ রায়হান।

মুন্না গাড়ি পার্কিং করার সময় গাড়ির আলো গিয়ে পড়ল গাছের পিছনে থাকা রায়হানের উপর। মুন্না গাড়ি থেকে নেমে “কে রে ওইখানে” বলে সহযোগীকে নিয়ে সামনে এগোল। হাতে নিয়ে ধারালো চাকু…..

চলবে……

[আজ খুব তাড়াহুড়ো করে লিখেছি ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।]
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here