পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ২

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ০২

ক্লান্ত পশুগুলোর একজন সাদিয়াকে গাড়ি থেকে টেনে নামালো আরেকজন একটা পথর এনে যেই ওর মুখের উপর মারতে যাবে তখনি “না……না বলে চেঁচিয়ে উঠলো সাদিয়া। রায়হান মাত্র কেবিনে ডাক্তারকে নিয়ে ঢুকছিল সাদিয়ার চেঁচানো শুনে রায়হান ছুটে ওর কাছে আসে। রায়হান ওর কাছে যেতেই সাদিয়া ওকে জরিয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে।
রায়হান আজ ওকে শান্তনা দিবে না আর শান্তনা দিবে-ই বা কিভাবে ওর মুখ দিয়ে যে কোন কথা বের হচ্ছে না। শান্তনা দিতে গিয়ে নিজেই কেঁদে দিবে তারচেয়ে ভালো কাঁদুক কেঁদে নিজের মনকে একটু হালকা করুক।

আধ ঘন্টা হয়ে গেছে সাদিয়া এখনো কেঁদেই চলছে। ওর চোখের জ্বলে রায়হানের শার্ট ভিজে একাকার। সাদিয়া ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে একটু একটু করে কান্নার শোর কমে যাচ্ছে ওর। হঠাৎ সাদিয়ার রায়হানকে ছেড়ে দেয়। রায়হান ওর পাশে গিয়ে বসে, পাশে বসতে দেখে সাদিয়া করুন দৃষ্টিতে তাকায়। রায়হান বলে,
— আমি ওই কুত্তার বাচ্চাদের ধরতে পারি নি, পারি নি ধরতে সাদিয়া। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ওদের প্রতেকটাকে খুজে বের করে নিজের হাতে শাস্তি দিব। ওদের কাউকে ছাড়বো না আমি।
— আমার জীবনটা ওরা শেষ করে দিল, একেবারে শেষ করে দিল। আ…আ….আমাকে ন…
— ( সাদিয়ার মুখে হাত রেখে ) কি বলছি কি তুমি এসব, চুপ কর।
— এখন থেকে তো চুপ করেই থাকতে হবে, সমাজের লোকের নানান কথা শুনে মুখ বন্ধ কররে থাকতে হবে। আচ্ছা আমার এসব জানার পরও কি আপনি আমায় বিয়ে করবেন?? করবেন না তাই তো।
— কি বলছো কি তুমি এসব। একটু চুপ করো তোমার এখন রেস্ট নেয়ার প্রয়োজন, রেস্ট নাও।
— কথার উত্তরটা দিলেন না তো, এড়িয়ে গেলেন। এটা দিয়েই বুঝে নিন আগামি দিনগুলো আমার কেমন কাটবে!
— তুমি আমাকে ভুল বুঝছো সাদিয়া।
— হুম ভুল…..আমার নিজেকে নোংরা লাগছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই যেন চলে গেছে। আত্মহত্যা মহাপাপ তা না হলে….
রায়হার ওকে আর কিছু বলতে দিল না সাদিয়াকে বুকে জরিয়ে ধরে বললো ” এসব কথা বলো না সাদিয়া, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকবো। আমি যে তোমাকে খুব, খুব ভালোবাসি সাদিয়া। ” কথাগুলো বলার সময় ওর দু’চোখ থেকে দুফোটা জ্বল গড়িয়ে পরলো যা, সাদিয়ার থেকে সে আড়াল করে ফেলল। ভিতরে কারো ঢুকার শব্দ পাওয়া গেল রায়হান সাদিয়াকে ছেড়ে একটু দুরে সরে দাঁড়ালো তখনি ভেজানো দরজা ঠেলে সাদিয়ার বাবা মোক্তার হোসেন ও সাদিয়ার সৎ মা সালমা বেগম ভিতরে ঢুকলো। সাদিয়া মুখের আঁচড় গলায় কামড়ের চিহ্ন দেখলো তারা। মেয়ের এ অসস্থা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলল মোক্তার হোসেন। বড় ধরনের সক্ট পায়ে দাঁড়ানো থেকে পরে যাচ্ছিলেন তিনি রায়হান এসে তাকে ধরে ফেলল তারপর তাকে ধরে ধরে সাদিয়ার কাছে নিয়ে গেল। সাদিয়ার বাবার মেয়ের মাথায় হাত রেখে অস্পষ্ট শোরে বলল, ” কি করে এসব হলো মা আমার? ” সাদিয়া বাবার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না, তাকে জরিয়ে ধরে শুধু কাঁদলো। তাদের দুজনকে এভাবে কাদতে দেখে রায়হানের চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পরছে। বাবা- মেয়েকে কাঁদতে দেখে সাদিয়ার সৎ মা সালমা বেগম কুটুক্তি করে বলল,
– ন্যাকা, এখন কাঁদছিস কেন. হতভাগী? উুহ দরদ, টাকা ছাড়া ছত্রী পড়ানো । এত দরদ দেখালে এমনই হয়। একদম ঠিক হয়েছে…
সাদিয়ার সৎ বোন ভেঙ্গচি কেটে বলল,
— হুহ্, এত যে আমায় বলিস আমি ছোট ছোট জামা আর টপস, জিন্স পরি কেন আমার পর্দা করা উচিত। তুই তো পর্দা করিস, তাহলে তোর সাথে কেন এমন হলো ? পর্দা করে লাভ আছে কি ?
তাদের দুজনের কথা শুনে রায়হান রেগে গেল, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— আর একটাও বাজে কথা আমি সাদিয়ার নামে শুনতে চাই না। আর একটাবার ওর সম্পর্কে বাজে কথা বললে আমি আপনাদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারবো না। আপনাদের কথা শোনাতে বাদ্ধ করবেন না। আংকেল উনাদের এখান থেকে চলে যেতে বলুন।
— তোমরা মা ময়ে কি থামবে। ( মোক্তার হোসেন )
— হুহ ঢং দেখলে বাঁচি না। তুমি চুপ করো। আর তুমি এত দরদ দেখাচ্ছে যে বিয়ে করবে কি ওকে? সেবেলায় তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। যত্তসব
— মা চলো তো কারো কথা শুনে বেহায়াদের মত এখানে থাকার ইচ্ছে নেই।
— হুম চল, তুমি কি আমাদের সাথে যাবে? নাকি আবার এ মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাবে ভাবছো এটা যদি ভেবে থাকো তাহলে শুনে রাখো কোন ধর্ষিতা, নষ্টা মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে জায়গা দিব না।
কথাটা শুনা মাত্রই মোক্তার হোসেন রেগে ” সালমা” বলে চেঁচিয়ে তার গায়ে হাত তুলতে যায় তখনি তার হাতটা ধরে ফেলে সাদিয়ার সৎ বোন। বলে, ” বাবা তোমার সাহস তো কম না তুমি সবার সামনে মায়ের গয়ে হাত তুলতে চাইছো ” কথাটা শুনতেই উনার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হতে শুরু করে আর উনি ফ্লোরে পরে যায়। সাদিয়া ” বাবা ” বলে একটা চিৎকার দিয়ে ধপাশ করে ফ্লোরে বসে পরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ডাক্তার এসে চেকআপ করে বলে তিনি স্ট্রোক করেছেন তকে কিছুদিন হস্পিটালে ভর্তি থাকতে হবে। নিজের করুণ অবস্থার মধ্যে সাদিয়া বড়-সর একটা ধাক্কা খায়।
সাদিয়ার ব্যপারটা পুলিশকে জানানো দরকার ভেবে থানায় একটা এফ.আই.আর লিখানোর কথা ভাবে রায়হান। হস্পিটাল থেকে বের হবার সময় ওর নিজের মা বাবার সাথে দেখা হয়। রায়হানকে দেখে রায়হানের আম্মু বলে,
— এই তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস আর সাদিয়া কোথায়? এই সময়ে ২৪ ঘন্টাই তোকে ওর সাথে থাকা উচিত।
— হুম মা জানি, আমি এখন একটু থানায় যাবো।
— তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই মেয়েটার সাথে থাক ওকে সাহস দে, ভরসা দে।
— আরেহ তুমি বুঝবে না ওর থানায় গিয়ে এফ.আই.আর লিখানোটা দরকার। আমরা আছি তো সাদিয়ার খেয়াল রাখবো। সাদিয়াকে কোন কেবিনে রাখা হয়েছে।
— চার তলার ৪০২ নাম্বার কেবিনে। আব্বু – আম্মু তোমরা ওর সাথে ওই ব্যাপারে কোন কথা বলো না, আংকেলও স্ট্রোক করেছে কিছুক্ষণ আগে। ও এমনিতেই অনেক মানসিক চাপে আছে। ওহ বাবা,একটা কথা মনে পরেছে; তুমি কাজি সাহেবকে ফোন করে আমাদের বাসায় আসতে বলো আর সাদিয়াকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে যাও। আমি থানা হয়ে বাসায় আসছি। আজিই আমি সাদিয়াকে বিয়ে করবো।
— আজই কেন, মেয়েটা এসব থেকে বেরিয়ে আসুক…
— আহা..তুমি থামো তো। তুই যা বাবা, আমি কাজিকে ফোন করে আসতে বলছি।
” আচ্ছা ” বলে রায়হান চলে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যেই থানায় পৌছে গেল রায়হান, গড়িটা পার্ক করে রোড ক্রস করে থানার ওপাশে যাওয়ার সময় দেখতে পেল একটা বৃদ্ধ লোক বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পার হচ্ছে একটা পিকআপ দ্রুত গতিতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটাকে সাবধান করার জন্য রায়হান তাকে কয়েকটি ডাক দিল কিন্তু সে শুনতে পেল না। অবশেষে অনেক বড় ঝুকি নিয়ে তাকে বাঁচাতে হলো রায়হানকে। রায়হান তাকে রাস্তার পাশের দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, সে অমন বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পার হচ্ছিল কেন? লোকটি কেঁদে দিল। বলল,
— একমাস ধরে এই থানার পিছনে ঘুরছি কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না। আমার মেয়ের ধর্ষক ও খুনিদের তো তারা ধরছে নাই তার উপর আমার মেয়ের নামে কত খারাপ কিছু বলে দিল আমার মেয়ের নাকি চিরীত্রে দোষ ছিল। ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি ওর শারীরিক সম্পর্ক ছিল আর সেই ছেলে ওকে ছেড়ে দিছে বলে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। থানায় আজ আসি তো বলে কাল আসতে কাল আসলে বলে পরশু এভাবেই ঘুরাচ্ছে।
রায়হান ভাবলো, ” এফ.আই.আর লিখাবে কিন্ত এসব শুুনে আর ইচ্ছে করছে না। হয়তো উনার আমাকেও ঘুরাবে নয়তো ওনার মেয়ের ব্যাপারে যা বলছে তা সাদিয়ার ব্যাপারেও বলবে যা আমি সহ্য করতে পারবো না, হয়তো হাত উথে যাবে আর হাত উঠে গেলে জেলে যেতে হবে । আমি জেলে চলেগেলে সাদিয়াকে কে সামলাবে? ”
ভাবনা থেকে বেরিয়ে রায়হান বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলো ঘটনাটা কবে, কখন ঘটেছে??
বৃদ্ধ জায়গাটির নাম বলতেই রায়হান চমকে উঠে।মনে মনে ভাবল, এটাতো সাদিয়াদের পাশের এলাকার, তারমানে এই ধর্ষনগুলো যে বা যারা করেছে তারা সবাই এক?

— আমার মেয়ের মত কত মেয়ে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আইনি ব্যবস্থা কোন জাস্টিস তাদের দিতে পারছে না, পুলিশ টাকা খেয়ে পুরো ব্যপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিবে, নয়তো ধর্ষিত হওয়া মেয়েটির উপরই উল্টো অভিযোগ সৃষ্টি করবে। আমাদের মত মধ্যবিত্ত, গরিবরা কি এর বিচার পাবে না? কে দিবে আবার ন্যায় বিচার?
লোকটার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো রায়হান। “লোকটার কথাগুলো বাস্তব সত্যি। সত্যিই তো কত মেয়ের জীবন প্রতিদিন এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা আমি কি পারি না তাদের বিচার পাইয়ে দিতে। হুম, আমি পারবো। আমি লড়বো আমার ভালোবাসার জন্য, প্রতিটি অসহায় মেয়ের জন্য।” — ভাবছে রায়হান।

দড়জার লক খুলে সাদিয়াকে নিয়ে আমজাদ চৌধুরি এবং রেহানা বেগম বাসায় ঢুকে। তারা সাদিয়াকে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকতেই দেখে রায়হানের ছোট ভাই হৃদয় কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে আছে। সাদিয়াকে দেখে চমকে তাকিয়ে আবার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “মা, বাবা কি ? তোমরা এই মেয়েকে এ বাড়িতে নিয়ে আসছো কেন ?”
আমজাদ চৌধুরি ওর হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলল, “কি বলছিস কি তুই? মেয়েটা তোর কথায় কষ্ট পাবে।” হৃদয় “আরে ছাড়ো তো” বলে ওর বাবার ধরে রাখা হাতটা ঝাঁরি মেরে ছুটিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, এই নষ্টা মেয়েকে এ বাড়িতে আমি থাকে দিব না।
রেহানা বেগম ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল, ” হৃদয়, তুই তোর বাবাকে ধাক্কা মারলি? ছিঃ। আর ও তোর হবু ভাবি মুখ সমলে কথা বল নয়তো জুতা মারবো তোর মুখে ”
— চুপ কুত্তার বাচ্চা, বেশি কথা বললে খবর আছে। আর তুই কি বলছিলি যেন কিসের হবু ভাবি, তোর হবু ভাবির গুষ্টি কিলাই। এসব ধর্ষিতা, নষ্টা মেয়ের এ বাড়িতে কোন জায়গা নেই। আর তুই এখানে এখনো কি করিস যা বেরো এ বাড়ি থেকে নষ্টা মেয়ে কোথাকার।

রায়হান মাত্র বাসায় ঢুকছিল হৃদয়ের মুখে এসব কথা শুনে রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো ভিতরে ঢুকেই চার পাঁচটা চড় বসিয়ে দিল ওর গালে।
— তুই আমার ভাই? যে একটা অসহায় মেয়ের ব্যপারে এমন কথা বলে, যেখানে সেই মেয়েটার কোন দোষই নেই সে আর যাই হোক আমার ভাই কখনো হতে পারে না। সদিয়াকে এ কথা বলে ও তো ধর্ষকদের সাপোর্টার হয়ে গেল মা। তুই এখনো আমার সমনে দাড়িয়ে আছিস? ( বলে একটা ধাক্কা মারলো হৃদায়কে ) বাবা ওকে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বলো নাহলে আমি কেন অঘটন ঘটিয়ে ফেলবো।

— ভাইয়া তুই এবার বাড়াবারি করছিস। এতগুলো থাপ্পর মারলি ধাক্কা মারলি। কিছু বললাম না খালি
— কিছু বললি না খালি মানে, ওই
— তুই তো ওর ছোট তোকে শাসন করতেই পারে। তুই যে একটু আগে তোর বাবাকে ধাক্কা মারলি, সেটা।
— কিহহহহ? ও বাবাকে ধাক্কা দিছে ? বাবা? বলে বাবার দিকে তাকাতেই দেখলো তার চোখে পানি। এমনিতেই রেগে আছে রায়হান, মাথা গরম তার উপর এ কথা শুনে যেন পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল ওর? এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল ক্রিকেট খেলার বেট নিয়ে এসেই এলোপাথাড়ি বারি শুরু করলো। রাহানকে থামানের চেষ্টা করছে ওর মা, বাবা ওর হাত থেকে বেট নেয়ার চেষ্টা করছে, সাদিয়ার এই সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ি মনে হচ্ছে, সাদিয়াও রায়হানকে থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো। সাদিয়া ফ্লোরে বসে পড়লো ওর পায়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল, প্লিজ ছেড়ে দিন ওনাকে, এ সব কিছু আমার জন্য হচ্ছে আমি এখানে না আসলে এসব কিছুই হতো না। আল্লাহর দোহাই লাগে ছেড়ে দিন।

সাদিয়ার আকুতি শুনে রায়হান বেটটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিল তারপর ফ্লুরে বসে কান্নারত সাদিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, “তুমি এসবের জন্য কোন ভাবেই দায়ি নও। ওর ভেতরের মোখশটা আমার সামনে চলে এলো। উঠ ” বলে সাদিয়াকে ধরে উঠালো। তারপর হৃদয়কে দাঁড় করিয়ে বলল, ” বেরো তুই এ বাড়ি থেকে, যা বেরো। ” হৃদয় চুপ করে মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে সাদিয়া হৃদয়ের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিল।বলল, “এটা আপনার বাড়ি আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আমিই চলে যাচ্ছি।” কথাটা বলে বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। রায়হানের বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে লাগল। ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় জাগল মনে।
রায়হান কাছে গিয়ে “সাদিয়া” বলে ডেকে সাদিয়ার হাত ধরে এক টান দিয়ে বুকে নিয়ে নেয়। বলে, তুমি কোথায় যাচ্ছ সাদিয়া? আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?
— যেখানে দু’চোখ যায় সেখানে। দেখবেন আমাকে ছাড়া থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যাবে। এত বছর তো একাই ছিলেন।
— এভাবে বলো না সাদিয়া। আমি যে তোমায় খুব ভালোবাসি।
— ধর্ষিতাকে ভালো বাসতে নেই।
— ভালোবাসা এসব কিছুই দেখে না সাদিয়া। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার ধার্মিকতাকে ভালোবাসি।
— আমার কারণে আপনাদের পরিবারে সমস্যা হচ্ছে। আপনাদের পরিবারটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। আপনি নিজের ভাইকে এভাবে…..
— আমার পরিবার তোমার কারনে ভাঙ্গছে না, তুমি আমাকে ফেলে চলে গেলে হয়তো আমার পরবিবার আমাকে হারাবে, তখন পরিবারটা ভাঙ্গবে।
— কি বলতে বোঝাতে চাইছেন আপনি?
— যেটা সবসময় বলে আসছি সেটাই। তমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, মরে যাবো।
— আল্লাহ মাফ করুণ। এসব কথা বলবেন না।
— তুমি তো সেটাই চাইছো যে আমি মরে যাই
— আমি কখনো কারো মৃত্যু কমনা করি না।
— মৃত্যু কামনা না করলেও মেরে ফেলার মতই কাজ করছিলে। তুমি আমায় ফেলে চলে গেলে আমি তো মারাই যাবো।
— আমি নামাজ পরবো ( বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো )
— হ্যা পরবে তো। হেই , তুমি কাঁদছো কেন ??
— আ…আ…আমার এ অপবিত্র শরীরে নামাজ আদায় করলে কি আল্লাহ তা কবুল করবে।
— নিশ্চই করবে । আর হ্যা তুমি অপবিত্র নও। তোমার মন পবিত্র। নমাজ পরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো যাতে তোমার মত কোন মেয়ের সাথে এমনটা না হয়।
সাদিয়ার কান্নার শোর আরো বেড়ে গেল। ও শক্ত করে রায়হানকে জরিয়ে ধরে বলল,
— কেন, কেন হলো আমার সাথে এরকম? কি দোষ করেছিলাম আমি? যার শাস্তি আল্লাহ আমায় এভাবে দিল।
— আল্লাহ হয়তো তোমার পরীক্ষা নিচ্ছে, সে তার মুমিন বান্দারের মাঝে মঝে পরিক্ষায় ফেলে দেখে তারা সেই দুস্বময়ে আল্লাহকে ভুলে যায় কি না। তাই এই সময়ে আরো বেশি বেশি তাকে স্বরণ করতে হবে। বুঝলে?
— হুম।
— মা-বাবা আমাদের এভাবে কথা বলতে দেখে ঘরে চলে গেছে। চলো…
— কোথায়?
— আমার রুমে
বলে ওকে নিজের রুমে নিয়ে গেল রায়হান।
ঘরে গিয়ে সাদিয়াকে বলল, ” আমি বুঝতে পারছি তুমি গোসল করতে চাইছো। ”
— কিভাবে বুঝলেন?
— ওই যে তখন বললাম ভালোবাসি তোমাকে। আর ভালোবাসার মানুষটির সব কিছু বুঝতে পারা যায়।
— ওদের ছোয়া এখনো আমার শীরিরে লেগে আছে।
বলে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে আঁচড় দিতে লাগলো। গলায়, মুখে আঁচড় দিতে লাগলো। ঠোট ঘষতে লাগলো । রায়হানের এ সব দেখে চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। নিজেকে সামলে চোখের পানি মুছে ওর হাত দুটো সক্ত করে ধরে ফেলল রায়হান। বলল, ” কি করছো এসব? এমন করলে কেটে রক্ত বের হয়ে যাবে তো। গোসল করলেই দেখবে ভালো ফিল করবে। আর আমাকে কথা দাও এখন যা করলে তা আর পূর্ণবিত্তী ঘটাবে না। সাদিয়া, কথা দাও?
— হুম।
— আশা করি কথা রাখবে। কথা দিয়ে কথা না রাখা ব্যক্তি মুনাফিকের খাতায় নাম লিখায়। নিশ্চই মুনাফিককে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না।
সাদিয়া কিছু বললো না, চুপ করে চলে গেল ওয়াশ রুমে। রায়হান গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেল মার্কেটে, দু’ঘন্টা ঘুরে সাদিয়ার জন্য বেশ কিছু জামা ও একটা বেনারসি শাড়ি নিয়ে বাসায় রওনা হলো। সাদিয়া এখনো গোসল করছে, দু’ঘন্টা মেয়েটা গোসল করছে ভেবে রায়হানের মা ওয়াশ রুমেয় বাইরে থেকে সাদিয়াকে নক করে বললো “সাদিয়া যেন তাড়াতারি বেরিয়ে আসে।” সাদিয়ার যেন বেরোতে ইচ্ছাই করছে না ওই বাজে লোকগুলোর ছোঁয়া এখনো ওর শরীরে আছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু রেহানা বেগম বেরোতে বলে গেছে বেরোতে হবে। হ্যাংগার থেকে টাওয়াল নিতে যাবে তখনি ও দেখলো, ও তো জামা-কাপড় না নিয়েই ভিতরে ঢুকে গেছিল। এখন কিভাবে বের হবে। তখনি বাইরে থেকে একটা ছেলে কন্ঠ ভেসে উঠলো। বলল,
— সাদিয়া শুনছো ? তুমি তো কোন জামা না নিয়েই ভিতরে ঢুকে গেছ। তোমার জন্য এই শাড়িটা এনেছি, বাইরে রেখে গেলাম পরে নিও ।
— জ্বি আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পর রায়হান ঘড়ে এসে দেখলো সাদিয়া লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরে বসে আছে ড্রেসিংটেবিল এর সমানে মুখ, গলা, হাতে আঁচড়ের দাঁগগুলো দেখছে। ভেজা খোলা চুলে, লাল টুকটুকে শাড়িতে অপূর্ব লাগছে ওকে। আয়নাতে রায়হানকে দেখেই চমকে উঠে সাদিয়া। পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল,
— শড়িটা?
— হুম, তোমার জন্য কিনে এনেছি।
— কিনে এনেছেনই যেহেতু এই বেনারসি কেন। আমি থ্রিপিস পরতে কমফোর্টেবল।
— হুম, জানি। থ্রিপিস ও এনেছি সাথে।
— তাহলে বেনারসি কেন দিলেন তখন?
— বিয়েতে মানুষ বেনারসিই তো পরে।
— জ্বি বুঝলাম না?
— বাইরে গেলেই বুঝবে।
” চলো ” বলেই ওর হাত ধরে টেনে ওকে বাইরে নিয়ে গেল।

রায়হানের বাবা-মা কাজি আর রায়হানের কিছু আত্মীয় বসে আছে ডাইনিং রুমে। সাদিয়া রাজি হচ্ছে না এ বিয়েতে। ও চায়না ওকে বিয়ে করে পরে পস্তায় রায়হান। ওকে বিয়ে করলে ওদের পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হবে। তারচেয়ে বড় কথা ও মনে করছে রায়হান ওর উপর সহানুভূতি দেখাচ্ছে।

— আমি বুঝতে চাইছি না কেন আপনি আমার নরক হয়ে যাওয়া জীবনে নিজেকে জরতে চান। আমার প্রতি এতটা সহানুভূতি না দেখালেও চলবে।
— আমি সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। আমি তোমাকে ভালেবাসি। একটু বোঝার চেষ্টা করো।
” সবার সামনে ভালোবাসি কথাটা বলাতে সাদিয়া একটু অবাক হলো। ” রায়হান কি করবে কিছুই ভাবতে পারছে না। সাদিয়া যদি সত্যি ওকে ছেড়ে চলে যায়? বুকে প্রচন্ড রকমের ব্যথা অনুভব হচ্ছে ওর। রায়হানের কখনো এ অবস্থায় পরবে ভাবেনি। বুক ফেটে কান্না বের হচ্ছে ওর। রায়হান প্রায় কেঁদে দিয়ে বলল, “তুমি কি এখন এ বিয়েটা করবে না ??” সাদিয়া এই প্রথম রায়হানকে কাঁদতে দেখছে আজ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে উত্তর দিল ” না ” রায়হান আর কিছু ভেবে উঠতে পারলো না। সেখান থেকে উঠে টি টেবিল এর উপরে থেকে ধারালো ছুড়ি এনে সাদিয়ার সামনে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো। সবাই ওর এরূপ কাজ দেখে ভয় পেয়ে গেল। রায়হান অস্পষ্ট শোরে বলল, তুমি এটাই দেখতে চাইছিলে তাই না? ” সাদিয়া খেয়াল করলো চাকুটা বেয়ে রক্ত পরছে। ” কি হলো উত্তর দাও? ” বলে রায়হান ছুঁড়িটাকে আরেকটু চাপ দিতেই সাদিয়া কেঁদে উঠে বলল, ” আমি বিয়েতে রাজি, রাজি আমি বিয়েতে। ”

চলবে…….
[ বিঃদ্র : ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। গঠবমূলক মন্তব্য করবেন যাতে করে আমার ভুল- ত্রুটি সংশোধন করতে সাহায্য হবে আর লিখার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
ধন্যবাদ😊 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here