পরিসংখ্যান পর্ব ১

“এতোদিন আমার সাথে রিলেশন করে আমার বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে ব্যপারটা কি তোমার কাছে খুব স্বাভাবিক লাগছে? তোমার মা আমার জায়গায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে পছন্দ করেছে তোমার কি মনে হচ্ছে না ব্যাপারটা আমার জন্য কতটা অপমানজনক?”
রাহিয়া শাফিনের কলার ধরে কথাগুলো বলছে।

আশেপাশের মানুষ সবাই ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।এটা নিয়ে যেনো তার কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।কিন্তু শাফিনের খুব অস্বস্তি লাগছে।

“তোমার মনে হয়না তুমি একটু বেশি রিয়াক্ট করছো।আর আমাদের বিয়ে ঠিক হয়নি মা শুধু বলেছে।তুমি ভাবলে কি করে আমি তরিকে বিয়ে করবো।আর তরির উপরও কি তোমার ভরসা নেই নাকি।এমন সিন ক্রিয়েট কেনো করছো?”

সাফিনের কথা শুনে রাহিয়ার রাগ আরো বেড়ে গেলো।
“কি বললে তুমি আমি সিন ক্রিয়েট করছি? তোমার মা আমাকে অপমান করেছে সেটা কিছুনা।আর তরির প্রতি দেখি তোমার খুব বিশ্বাস। আমার তো এখন তোমাদের সন্দেহ হচ্ছে।বলো ওর সাথে তোমার কি চলে?”

“উফ তুমি জাস্ট একটা হেডেক।তোমার মন মানষিকতা এতটা নিচ? আমার সাথে না হয় তোমার ৩ বছরের সম্পর্ক কিন্তু তরি ও তো তোমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড।”খুব বিরক্ত নিয়ে বললো শাফিন।

রাহিয়া কিছু বলতে যাবে তখনি শাফিনের ফোনে একটা কল এলো।

“হ্যালো”
ওপাশথেকে…
“ওকে আমি আসছি।”

“দেখো আমার এখন যেতে হবে।তুমি প্লিজ বাসায় যাও আমি সবটা ম্যানেজ করছি।” রাহিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শাফিন সেখান থেকে চলে গেলো।

রাহিয়া এখনো ঠাই দাড়িয়ে আছে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।এত বড় অপমান তার হজম হচ্ছে না।মনে হচ্ছে সব কটাকে কেটে কুচি কুচি করতে।এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে রিকশা নিলো।

“কই জাবেন আফা?”
“জাহান্নামে।”
বেচারা রিকশাওয়ালা এমন জবাবে বেক্কেল হয়ে গেলো।

“আরে চলো তো মামা।”
রিকশাওয়ালা কিছু না বুঝেই মাথা নাড়লো।

রাহিয়ার বিরক্তি কোনোভাবেই কমছে না।আগে না হয় তরির কাছে গেলে সব সমাধান হয়ে যেতো।কিন্তু ঐদিনের পর থেকে তরিকেও খুব বিরক্ত লাগছে তার।

বাসার কাছে এসে ভাড়া মিটিয়ে শিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো রাহিয়া।

“আরে রাহিয়ে যে। কেমন আছো?”সাহের জিজ্ঞেস করলো।
সাহের রাহিয়াদের বাড়িওয়ালার ছেলে।রাহিয়ার থেকে দু বছরের বড়।
” এইতো ভাইয়া ভালো।আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।আচ্ছা পরে কথা হবে।এখন বাই”।
” বাই।”

রাহিয়ার দরজার কাছে রাখা জুতাজোড়া দেখে বিরক্তি আরো বেড়ে গেলো। এমনিতে কি বিপদ কম যে আরেক আপদ এসে জুটেছে।

কলিং বেল বাজাতেই রিমন দরজা খুলে রাহিয়াকে দেখে ৩২ টা দাঁত বেড় করে হেসে দিলো।এই হাসি দেখে রাহিয়ার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।এই ছেলেটাকে একদম পছন্দ না তার।কেন পছন্দ না সে নিজেও জানে না।

রাহিয়া কিছু না বলে রিমনকে পাশ কাটিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দরজা ঠাস করে আটকে দিলো।

“কি হয়েছে বাবা এই মেয়ে এমন চেতে কেন আছে বলোতো?” রাহিয়ার মা রুবি বেগম জিজ্ঞেস করলেন।

“কি জানি খালামনি তোমার মেয়ের আবার মাথার কোন তার টা ছিড়েছে।আমার তো সন্দেহ হয় এই মেয়ের মাথায় তার আছে নাকি।!”

দুজনেই হেসে দিলো।
“আচ্ছা তুই দেখ ওর কি হয়েছে।আমার দ্বারা এই মেয়েকে সামলানো একদম সম্ভব না।”

রিমন রাহিয়ার ঘরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।
“রাহি বেভি যতই রাগ দেখাও যাই করো তুমি তো আমার হবেই।এতো বছরের ভালোবাসা তুমি আমার।এতো সহজে যেতে দিবোনাকি!” রিমন মনে মনে বললো।

তাহিয়া হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বেরুলো।রিমনকে দেখেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
তাহিয়া রাহিয়ার ছোট বোন।

“আরে পিচ্চি তুই আর কত ঘুমাবি বল তো? জানিস সেই কখন এসেছি?”
“তুমি আমাকে ডাক দিবে না! আর আমি একদম পিচ্চি না।আর দুদিন বাদে কলেজে উঠবো। হুহ” তাহিয়া অভিমান করে বললো।

“আচ্ছা আপনি অনেক বড় হয়ে গিয়েছেন।এবার হয়েছে? রুমে চলেন আপনার জন্য গিফট এনেছি।”
গিফটের কথা শুনে তাহিয়া খুশিতে লাফাতে৷ লাগলো।

তাহিয়া রিমনের পিছু পিছু রুমে গেলো।
“এই নে তোর পার্স।এটাই তো পছন্দ হয়েছিলো তোর তাইনা।? ”

“ওয়াও।” খুশিতে তাহিয়া রিমনকে জড়িয়ে ধরলো। তখনি তার চোখ পড়লো ব্যাগে রাখা আরেকটা গিফটের দিকে।

“ঐইটা কার জন্য এনেছো?”
রিমন কোনো রকম গিফটা আড়াল করে
“আরে এক ফ্রেন্ড।আচ্ছা এখন যা আমি রেস্ট নিবো।”

তাহিয়ার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।কতক্ষন ধরে ওয়েট করে বসে ছিলো সে।এমনকি ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো। আজ এক মাস পর সে বাসায় এসেছে কই ভাবলাম মন খুলে কথা বলবো।আর এখন নাকি সে তাকে রুম থেকেই বের করে দিচ্ছে। রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তাহিয়া।

“এখন আবার তোর কি হয়েছে এমন গাল ফুলিয়ে আছিস কেন? ” রুবি বেগম জিজ্ঞেস করলেন।

“কিছুনা মা ভালো লাগছেনা।”বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।

” এই দুই মেয়েকে নিয়ে আমার যত জ্বালা।এদের মন খারাপ হতেও সময় লাগে না আবার ভালো হতেও।”

এইদিকে রাহিয়া রাগে ফুসছে।তার রাগে এখন কান্না পাচ্ছে।সে শাফিনকে কতটা ভালোবাসে এটা কি কেউ বুঝবেনা।আজ শাফিনও তার সাথে খারাপ বিহেভ করেছে।

সেদিন শাফিন তরি আর রাহিয়াকে তার বাসায় নিয়ে গেলো তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।প্রথম প্রথম সব ঠিক ঠাক লাগলেও হঠাৎ শাফিনের মা বলে বসলেন,
“আমার কিন্তু তরিকে খুব পছন্দ হয়েছে।শাফিনের সাথে বেশ মানাবে।”
এটা শুনার পর সবার মাথায় যেনো বাজ পরলো।একজন আরেকজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।রাহিয়া আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে একাই বেড়িয়ে গেলো।

আচ্ছা কোন মেয়ের টলারেট হবে যে তার ভালোবাসার মানুষটির মা তার বেস্টফ্রেন্ডকে তার ছেলের জন্য পছন্দ করেছে।
নাহ আর ভাবতে পারছে না রাহিয়া।ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।শাফিন তাকে একটা কলও দেয়নি এটা দেখে সে রীতিমত আশ্চর্য হচ্ছে।

দরজায় নক করার আওয়াজ পেয়ে খুব বিরক্ত লাগলো তার।সে খুব ভালো করে জানে কে এসেছে। তাই দরজা না খুলে সে সোজা শাওয়ার নিতে চলে গেলো।এমনিতে মাথা ব্যাথা তার উপর ঐ বজ্জাতটাকে দেখলে মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে যাবে।

এইদিকে শাফিন বাসায় পৌঁছে
“কি হয়েছে মা এতো আর্জেন্টলি কেন ডাকলে?”

“তুই আবার ঐ মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি তাইনা? আমি তোকে বলেছিনা আমার তরি পছন্দ। আর তোর বিয়ে হলে তরির সাথে হবে নাইলে অন্য কারো সাথে।ঐ রাহিয়াকে আমি নিজের ছেলের বউ হিসেবে কোনোদিন মানবোনা।মেয়েটার গায়ের রং এমনিতে চাপা।” শাফিনের মা বললেন।

“উফ মা তুমি আবার শুরু করেছো।আমাকে একটু একা থাকতে দাও তো। প্লিজ।” বলেই শাফিন নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

শাফিন পড়নে টিশার্ট টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো।রুমে থাকা ইজি চেয়ারটায় গিয়ে বসলো।তার সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। কদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারলে তার ভালো লাগবে।
যেই ভাবা সেই কাজ সাথে সাথে সে তার চোট বেলার বন্ধু মাহিদকে ফোন দিলো।

এইদিকে তাহিয়া ছাদে যাচ্ছে।তার কেন যেনো কান্না পাচ্ছে।এতো কান্না যে তার কই থেকে আসে সে নিজেও জানেনা।আর এক হচ্ছে রাহিয়া যার চোখে পানি বলতে কিছু আছে নাকি সন্দেহ।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার হাতে টান অনুভব করলো।হ্যাচকা টানে সে কারো উপরে গিয়ে পরলো।সামনের মানুষটাকে দেখে সে চমকে গেলো।

“আপনি”

#পরিসংখ্যান
পর্ব-১
#tani_tass_ritt

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here