পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব -১০

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_১০

রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেই। মুহুর্তেই সব তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছিলো। এতো গুলো বছর অপেক্ষার পর যখন ঈশার মুখে অন্য ছেলের কথা শুনলাম নিজেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। ঈশা সামনে ছিলো বলে চুপচাপ দাড়িয়ে শুনছিলাম। নয়তো আমি নিজেও জানি না সেদিন কি করতাম। এরপর ঈশা আবারও বলতে শুরু করে,

– আমি আমার মধ্যে নেই সিদ্ধাত ভাইয়া। আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছি। এই জীবন টা আমি চাই না। আমি আগের মত হতে চাই। আমি খুব বিরক্ত এই জীবনে। আবারও সবার সাথে মিশতে চাই। আবারও হাসতে চাই। আজ দেখো সিদ্ধাত ভাইয়া আমি সেজেছি। অনেক দিন পর সেজেছি। আমি চেষ্টা করছি এসব থেকে বের হওয়ার। আমার পাশে তুমি থাকবে তো?

– আমি সব সময় তোর পাশে আছি।

রাগ কন্ট্রোল করে ঈশার হাত ধরে বললাম কথা টা। সাথে সাথে ঈশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। ওই ফাস্ট ঈশা আমার এতো কাছে ছিলো। আমাদের প্রথম জড়িয়ে ধরা। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। ঈশা কে সামলে নেই কোনো ভাবে। সেদিন থেকে ঈশার প্রতি আমার অনুভূতি টা বেড়ে গিয়েছিলো। প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়ার অনুভূতি সত্যি অন্য রকম। যতটা না রাগ হয়েছিলো ঈশার স্পর্শে যেন তা মিলিয়ে গেল।সেদিন থেকে আমি ঈশার সাথে ফ্রি হতে শুরু করি। একদম ফ্রেন্ডের মত মিশতাম। আস্তে আস্তে দেখলাম ঈশা বেশ হালকা হচ্ছে। এবং একটা সময় পর ঈশা পুরোপুরি ভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসে আর আমার প্রতি দুর্বল হতে থাকে। আমি বুঝতে পারতাম ঈশা হয়তো দুর্বল হচ্ছে। আর ঈশার বাচ্চামি গুলো বাড়তে থাকে। তবে সেটা সবার সাথে নয়। ওর কাছের মানুষের সাথে এমন আচরণ। বাকি সবার সাথে খুব চুপচাপ। তেমন কথাও বলে না।

সিফাত: কিন্তু মেঘের কাহিনী টা

– ওই শালা আর কি মেঘের কাহিনী শুনবি? বললাম না
– মানে এটুকুই?
– হ্যাঁ এটুকুই। মেঘ ঈশা কে ধোকা দেয়।
-হুম বুঝলাম
– আচ্ছা তুই এখানে জাস্ট দুই মিনিট ওয়েট কর আমি এই যাবো আর এই আসবো
– কোথায় যাবি?
– আসছি

সিফাত কে রুমে রেখে বেরিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য ঈশার কাছে যাবো। চুপিচুপি পায়ে ঈশার ঘরে চলেও এলাম। আসার সময় লক্ষ্য করছিলাম কেউ আবার দেখে না নেয়। মায়াবীনী ঘুমাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে ঈশার পাশে বসলাম। ওকে দেখছি। কি সুন্দর লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায়। মায়ায় পড়ে যাই বার বার। ঈশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম। একটু কেপে উঠলো। আবারও ঘুমিয়ে গেলো। আমি আবারও ওর দুই গালে ঠোঁট ছোয়াতেই ঈশা উঠে পড়ে আর উঠেই আমার টি-শার্ট দুহাতে খামচি দিয়ে ধরে বলে,

– ওই রাক্ষস আমি ঠিক জানতাম তুই আসবি।
– মানে কি? বরের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? ছাড় বলছি ছাড়
– কেন এসেছো?
– ঘুমাবো
-এটা কি ঘুমানোর জায়গা?
– তো?
– নিজের রুমে যাও
-ওখানে সিফাত ঘুমাচ্ছে
– তাহলে তুমি সিফাত ভাইয়ার রুমে যাও
– না। এখানে ঘুমাবো
– আমি নোভার রুমে যাই?
– সারাদিন নোভা নোভা না করে সিদ্ধাত সিদ্ধাত তো করতে পারিস
– 😒
-আমি জানি তুইও চাস আমি এখানে ঘুমাই
– কচু জানো
– তাই না? তাহলে আজ কেন বলেছিলি ওই কথা টা
– কি বলেছি? কখন বলেছি? আমি কিছু বলি নি। তুমি ভুল শুনেছো
– ভুল শুনেছি? দাড়া দেখাচ্ছি মজা

কথা বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমায় জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রতি বারের মতো এবার ও ছটফট করছি। আমার ছটফটানি বন্ধ করতে সিদ্ধাত ভাইয়া আমার ওপর উঠে শক্ত করে চেপে ধরলো

-উফফ। মেরে ফেলবা নাকি
– হ্যাঁ মেরেই ফেলবো আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে
– যাচ্ছি নাকি?
– তাহলে এমন লাফালাফি করছিস কেন
– আমি তো আমাকে ছাড়ানো চেষ্টা করছিলাম ( ঠোঁট উল্টিয়ে)
– আমি বলছি নিজেকে ছাড়িয়ে নে
– তুমি বলবা তাই? আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
– চুপ। আর একটা কথাও বলবি তো
– তো কি?
– বলেই দেখ।

আমি চুপ হয়ে গেলাম। কারন এখন বেশি কথা বলা আমার জন্য একদম ভালো হবে না। কিছুক্ষনের মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া ওভাবেই ঘুমিয়ে গেলো। আমি আজও সিদ্ধাত ভাইয়া কে দেখছি। একটু পর নিজেও পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

☆☆ সকালে ঘুম ভেঙে দেখি মায়াবীনী আমার বুকের ওপর পরম সুখে ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। কপালে আবারও একটা গভীর চুমু দিয়ে চলে এলাম নিজের রুমে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখি সিফাত সত্যি সত্যি আমার ঘরে ঘুমিয়ে গেছে। মনে হয় দুই মিনিট শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।ওকে দেখে খুব হাসি পেলো। আমি ফ্রেস হয়ে বের হতেই সিফাত উঠে আমাকে চড় লাথি ঘুসি সবই দিয়ে যাচ্ছে।

– আরে আরে কি করছিস? মারছিস কেন?
– শালা লম্পট। কই ছিলি তুই? তোর দুই মিনিট শেষ হলো এখন?
– তাই বলে মারবি?
– মারবো না? কোথায় ছিলি? নিশ্চয় ঈশার ঘরে? তাই না?
– হুম
– লম্পট আর দুটো দিন তর সয়ছে না? এখন বুঝলাম আগে আগে কেন বিয়ে করলি
– আরে এমন কিছু না। জাস্ট দেখতে গিয়েছিলাম পরে ঘুমিয়ে গিয়েছি
– আমাকে বোকা পেয়েছিস? বউ এর ঘরে রাত দুপুরে যাবি আর তুই ঘুমাবি? এটা বিশ্বাস করতে হবে?
– আরে সত্যি ঘুমিয়েছি
– চুপ শালা
– আরে ভাই বিশ্বাস কর সত্যি ঘুমিয়েছি।কসম ঘুমিয়েছি।
– রাখ তোর সত্যি। তুই একটা লম্পট। বাসর করে আসলি আর এখন সাধু সাজা হচ্ছে
– আরে ভাই রে বিশ্বাস কর এমন কিচ্ছু না। কসম করে কি মিথ্যা বলবো নাকি
– ঠিক আছে যা বিশ্বাস করলাম
-উফফ। খালি খালি মারলি। এখন সর। টায়ার্ড লাগছে
– হ্যাঁ তা তো লাগবেই
– 😒
-হাহাহা
– কিছুই হয় নাই
– আমি কি কিছু বলেছি?
– তুই তো অন্য কিছু ইঙ্গিত করছিস
– তুই আমার কথায় অন্য কিছু ভাবছিস। সত্যি করে বল তো তোর টায়ার্ড কেন লাগছে?
-সিফাআআআত! তুই কি যাবি নাকি লাথি খাবি?
– বুঝি বুঝি
– বুঝেই থাক। আর সর এখন না হলে দিলাম কিন্তু

লাথি উচু করতেই দৌড়ে পালিয়ে যায় সিফাত। সিফাত চলে যাওয়ার পর আমি কয়েক টা পুশআপ দিলাম। আসলে ছুটি তে থাকলে শরীরে অলসতা বাসা বাধে। এমনি তে তো প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তবে শরীর টা তখন বেশ চাঙ্গা থাকে। আর এখন ঘুম থেকে উঠেই টায়ার্ড লাগছে। পুশআপ দেওয়ায় শরীরে বেশ এনার্জি পাচ্ছি। ভালো লাগছে। ভাবছি সকালের নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়বো। আমাদের বাড়িতে এখনো অনেক কাজ আছে। তো যেই ভাবনা সেই কাজ। নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঈশা কে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঈশা কে না দেখে কিভাবে থাকবো। ঈশা কে ছাড়া তো আমার একটা মুহুর্ত ও চলে না। কিছুই করার নেই, আমাকে আবার আসতেই হবে আমার ঈশার কাছে। আসার সময় পাগলী টা জড়িয়ে ধরে কাদছিলো খুব। কে জানে এখনো কাদছে কি না। বোকা মেয়ে। কি যে করছে

এদিকে আমাকে রেখে রাক্ষস রাজা চলে গেল। কিভাবে থাকবো এখন। উনি কি জানে না তাকে ছাড়া থাকতে পারি না। এ বাড়ি থেকে বিয়ে হলে কি হতো। এতো দিন থাকা গেল আর কয়েক টা দিন থাকা গেল না। কথাই বলবো না আর।বেলকানি তে বসে বসে চোখের জল ফেলছি আর একলা মনে সিদ্ধাত ভাইয়ার কথা ভাবছি। তখনই আমার খোঁজে আসে ইতি আর নোভা।

ইতি: কি রে একা একা কি করছিস এখানে
আমি: কিছু না
নোভা: এর মধ্যেই কেদে চোখ মুখ ফুলিয়েছিস?
আমি: ভালো করেছি এখন যা এখান থেকে
ইতি: আরে বাবা ভাইয়া তো আবার আসবে আর এবার তো তোকেই নিতে আসবে।
নোভা: আর বর তো বিয়ের দিন ই আসে। আগে আসে নাকি
আমি: কিছু ভালো লাগছে না রে। সিদ্ধাত ভাইয়া কেমন জানি খুব আপন হয়ে উঠেছে। একটা মুহুর্ত ও থাকতে পারছি না।
নোভা: বুঝেছি বুঝেছি ম্যাডাম আপনি প্রেমে পড়েছেন হিহি
আমি: সত্যি কি আমি সিদ্ধাত ভাইয়া কে ভালোবাসি? মেঘ ছাড়া আমার জীবনে অন্য কেউ। আমি মেঘের জায়গায় অন্য কাউ কে ভালোবাসি?
ইতি: উফফ ওই প্লে বয় মেঘের কথা আর বলিস না তো। বিরক্ত লাগে। অসহ্য একটা ছেলে।
আমি: ইতি! ( ধমক দিয়ে)
ইতি: দেখ ঈশা শুধু শুধু ধমকাস না। তুই কি অস্বীকার করিস এগুলো? মেঘ কি ভালো ছেলে?
আমি: জানি না। মেঘ যেমন ই হোক ওর জন্য একটা ফিলিংস আমার মনে থাকবেই।
নোভা: তাহলে সিদ্ধাত ভাইয়া কে বিয়ে করছিস কেন?
আমি: কারণ আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে থাকতে চাই। আমি ভালো থাকি উনার সাথে। আমি ভালোবাসি কি না জানি না তবে উনি আমাকে খুব ভালোবাসে। আর আমিও অনেক ভালো থাকি সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে। আমি সব সময় উনাকে আমার কাছাকাছি চাই। চাই না উনি দূরে থাকুক।
ইতি: আমার আর কিছুই বলার নেই
নোভা: আমারও না
আমি: জানিস আমি যখন খুব অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম তখন সিদ্ধাত ভাইয়া আমার সাথে ছিলো। আমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করতো। আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতো, আমার পছন্দের আইসক্রিম, চকলেট আমি যা যা পছন্দ করি সব এনে দিতো। অনেক অনেক চেষ্টা করেছে উনি আমাকে ভালো রাখার। আমি তখনই বুঝেছিলাম সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে কতটা ভালোবাসে। সব সময় হাসি খুশি রাখতো আমাকে। একটু একটু করে সিদ্ধাত ভাইয়ার প্রতি আমার একটা মায়া আসে। উনার কথা বলার স্টাইল, উনার অ‍্যাটিটিউড, উনার পারসোনালিটি সব কিছু আকৃষ্ট করছিলো আমাকে। তার পর আমি উনাকে ভালো করে খেয়াল করি। উনার চোখ গুলোতে একটা মায়া আছে। চোখের দিকে তাকালেই কোথায় যেন হারিয়ে যাই। আর উনার হাসি টা ভীষন সুন্দর। সব দিক দিয়ে একদম পারফেক্ট।
নোভা: ইতি রে একটা চিমটি দে তো। এটা কি আদৌ ঈশা? ঈশার মুখে এইভাবে কোনো ছেলের বর্ণনা এই প্রথম বার।
ইতি: আমি যা শুনলাম তুইও কি তাই শুনলি নোভা?
আমি : 😒
নোভা: ও সত্যি প্রেমে পড়েছে
ইতি: আমারও তাই মনে হয়
আমি: তোদের মনে হওয়াচ্ছি দাড়া
নোভা: ভুল কি বললাম?
ইতি: যে প্রেম করছে তাতে সমস্যা নেই আর আমরা বললেই দোষ।
আমি: আমি প্রেম করছি না
নোভা: থাক আর বলতে হবে না
আমি: তোরা বেশি বুঝিস।
ইতি: প্রেম করলে একটু কম বুঝতাম
আমি: আজকে তোরা শেষ।

বলেই দুটো কে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছি পুরো বাড়ি। আজকে ধরতে পারলে ওদের একদিন কি আমার এক দিন। আমাকে নিয়ে মজা করছে। কত্ত বড় সাহস। খুব বাড় বেড়েছে দুটো।
.
.
.
.
.
.
.
.
#চলবে_কি?

( নেক্সট নেক্সট না করে গল্প টা কেমন হচ্ছে সেটা বলুন😒
গঠনমূলক মন্তব্য করুন🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here