প্রণয়স্পর্শী পর্ব ২৮+২৯

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#আটাশতম_পর্ব

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব পরছে মেঘলা, এর পাশেই আলমারির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে দেখছে প্রেয়সীকে সাদা জামা পরেছে শোভনই এনেছিলো কালই শাড়ির সাথে এনেছিলো সাদা হিজাব৷
শোভনকে এমন এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘলার অস্বস্তি হচ্ছে সাথে বিরক্ত ও, এমন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে কোনো কাজ করে যায়? এমন তাকিয়ে আছে তাই হিজাবটা ঠিক মত পরতেই পারছে না যার কারনে বার বার খুলতে হচ্ছে৷
মেঘলা এবার বিরক্ত নিয়ে শোভনকে বলে,
— ” এই ডাক্তার? সরুন এখান থেকে এতো জ্বালাচ্ছেন কেন বলুন তো? আপনার জন্য আমি হিজাবটা ঠিক মতো পরতে পারছি না৷ ”
মেঘলার কথায় শোভন বোকা বনে গেলো, ও জ্বালাচ্ছে কোথায়? চুপ- চাপ শুধু দাড়িয়েই তো ছিলো কথাও তো বলে নি?
শোভন ব্রু কুচকে বলে,
— ” আমি?
আমি কখন জ্বালালাম তোমায়? আমি তো দাঁড়িয়ে আছি শুধু মাত্র, কথাও বলিনি দুষ্টুমিও করিনি৷ ”

— ” হ্যাঁ কিছু করেন নি কিছু করলে তাও আমি আমার কাজ ঠিক মত করতে পারি, এমন করে তাকিয়ে থাকলে কেউ মন দিয়ে কাজ করতে পারে? আপনি তো আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন আমি হিজাবটা পরবো কি করে? ”
রাগী রাগী কন্ঠে বললো মেঘলা, ওর এখন রাগ হচ্ছে একটা কাজ ঠিক মত করতে না পারলে তো রাগ হবেই? তা কি এই ছেলে বুঝবে নাকি?
শোভন বাকা হেসে বলে,
— ” ওমা তাই? তাহলে তুমি কি চাও আমি কিছু করি? নো প্রব্লেম বউ৷ ”
বলে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷
মেঘলা শোভনের এহেন কাজে হকচকিয়ে যায়, ছেলেটা পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? নির্লজ্জটা কি বলে কি করে বোঝা বড় দায়৷
মেঘলা থম থমে কন্ঠে বলে,
— ” সরে দাড়ান বলছি, প্লিজ সরুন এখন আপনার ফ্লাইট মিস হবে না? ”
পরক্ষনে মনে পরলো শোভনের দশটায় তো ফ্লাইট আছে ঢাকা গিয়েই হসপিটালে যেতে হবে তাই আর দুষ্টুমি না করে মেঘলার গালে আলতো ঠোঁট ছুইয়ে বলে,
— ” আজ ছেড়ে দিলাম অন্য কোনো দিন ছাড়বো না বলে দিলাম৷ ”
বলে সরে গেলো৷ মেঘলা চোখ খিচে বন্ধ করে আছে ওর বুক ধক ধক করছে৷ এই ছেলের রোমেন্টিক অত্যাচারে নিশ্চিত একদিন মেঘলা আক্কা পাবে৷
মেঘলাকে এমন চোখ বন্ধ দেখে হাসলো শোভন, বাকা হাসলো প্রেয়সীকে একটু একটু করে গলতে দেখে ওর আনন্দ হচ্ছে এ মেয়ে যে ভারি শক্ত তা বুঝে গেছে তাই জোর না করে আস্তে আস্তেই আবার নিজের করতে হবে৷
শোভন গলা খাকারি দিয়ে ঠিক হয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” তোমার লজ্জা পাওয়ার ড্রামা শেষ হয়ে গেলে বাকি কাজ শুরু করতে পারো আদারওয়াইজ আমি আবার কিছু করে বসবো আশা করি তুমি তা চাও না বউ৷ ”
শোভনের কথা শুনেই ফট করে চোখ খুলে মেঘলা, তা দেখে ঠোঁট চেপে হেসে অন্য-দিকে চলে যায়৷


সন্ধ্যে নেমে এসেছে শোভন মেঘলা সেই এগারোটা বাজেই ঢাকা এসেই হসপিটালে জয়েন করেছে শোভন, মেঘলাকে শোভন আনতে চায়নি মেঘলাই জোর করে এসেছে৷
মেঘলা একটা ওয়ার্ডে রোগীদের চেক করছিলো তখনি রনি সেই ওয়ার্ডে ওর পেশেন্ট দের চেকআপ এ আসে মেঘলাকে অনেক দিন পর দেখতে পেয়ে খুশি হয় রনি, অনেক কথা আছে মেঘলার সাথে ভাবছে আজই ওর মনের কথা বলে দিবে৷
নিজের ভাবনা মতই কাজ করার জন্য রনি মেঘলার সামনে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” মিস মেঘলা এখানে কাজ শেষ হলে আমার জন্য একটু দাঁড়াবেন বাইরে প্লিজ কথা আছে৷ ”
মেঘলার এমনি বিরক্ত লাগছিলো আবার এ এসেছে বিরক্ত করতে, শোভন যেমন ওর বন্ধু গুলোও এক৷
মেঘলা কিছু বললো না রনির দিকে তাকালো ও না তাই রনি আবার বলে,
— ” কি ভাবছেন? দাঁড়াবেন তো? প্লিজ খুব জরুরি কথা আছে৷ ”
মেঘলা বিরক্ত নিয়ে রনির দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” জ্বি স্যার শুনেছি, দাড়াবো৷ ”
মেঘলার কথা শুনে রনির মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে, সে যেন এখনি কিছু পেয়ে গেছে৷
মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে তারাহুরা করে রোগী দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরে৷ আজ মেঘলাকে একে-বারে বিয়ের কথাই বলবে ভাবছে, তারপর বাড়িতে গিয়ে মাকে জানাবে৷ রনি জানে মেঘলা একাই থাকে কেউ নেই তাই তার আরো সুবিধা মেঘলা রাজি না হলে দরকার পরে শোভনকে বলে রাজি করাবে৷ শোভনের কথা নিশ্চয়ই ফেলতে পারবে না? রনির যে মেঘলা কে খুব মনে ধরেছে, এবার তাহলে বিয়েটা করেই ফেলবে৷
মেয়েটা খুব সুন্দর করে হাসে কথা-বার্তাও সুশীল আর সুন্দর, চাল-চলন ও নম্র ভদ্র যে কেউ মেঘলাকে পছন্দ করবে৷ রনি কয়েক-দিন ধরেই মেঘলাকে খুজছিলো এমন কি হসপিটাল থেকে নাম্বারও জোগার করেছে কিন্তু ফোন অফ ছিলো ভেবে ছিলো শোভনকে জিগ্যেস করবে কিন্তু শোভনও ছিলো না৷ আহানাকেও বাড়িতে গিয়ে পায়নি আজ পেয়েছে আজ রনির শান্তি শান্তি লাগছে৷
এমন মেয়ে কয় জন না চায়? তা ছাড়া এতিম ও বাবা মা নেই সবাই তো চায় নিজের একটা সংসার হোক নিশ্চিয়ই মেঘলাও চায়? ভাবলো রনি৷
রনির মন গহিনে মেঘলাকে নিয়ে হাজার কথা ততক্ষনে মেঘলা বেরিয়ে গেছে, রনি দু জন রোগীকে চেক-আপ করে পাশ ফিরতেই দেখে মেঘলা নেই৷ রনি তারাতারি আরেক জন এর প্রেশার চেক করে গলায় স্টেথোস্কোপটা ঝুলিয়ে চুলটা ঠিক করে বেরিয়ে যায় ওয়ার্ড থেকে আজ একটু তারাতারি করেছে সব কিছু রনিকে এভাবে ছুটে যেতে দেখে ওর সহকারি নার্স বোকাবনে গেলো৷
মেঘলা করিডরে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে এক তো এতো ধকল গেছে দু দিন যাবৎ তারপর আজ শোভনের না বলা শর্তেও হসপিটালে এসেছিলো এখন মাথা ব্যাথা করছে৷ সকালে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত শোভন এর সাথে দেখা করতে যায় নি দু’দু বার খবর পাঠিয়েছিলো লাঞ্চের সময়ও ডেকে ছিলো যায়নি মেঘলা,কখন আবার ওই ছেলে এসে রাগ দেখায় কে জানে? আবার আহানার সাথেও এখন পর্যন্ত কথা বলেনি মেয়েটা নিশ্চয়ই রেগে আছে অনেক? আবার এই রনি ছেলেটা আস্ত একটা ঝামেলা৷ আবার যদি শোভন রনির সাথে ওকে দেখে নিশ্চিত কাচা চিবিয়ে খাবে মেঘলাকে৷
রনি এসে মেঘলার সামনে দাড়ালো মেঘলা তারাহুরো করে বলে,
— ” স্যার কি যেন বলবেন বলছিলেন? বলুন কাজ আছে আমার৷ ”
রনি বলে,
— ” তোমাকে এতো দিন খুজেছি পাইনি কোথায় ছিলে বলোতো? তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে৷ মেঘলা আজ আমি তোমায় আমার মনের কথা বলতে চাই৷ ”
— ” ভাবিকে কেউ নাম ধরে ডাকে? তা ছাড়া বন্ধুর বউ এর সাথে তোর আবার কিসের মনের কথা রে রনি? ”
হঠাৎই গম্ভীর চেনা পুরুষালী কন্ঠে দুজনেই পিছনে তাকিয়ে দেখে শোভন দাঁড়িয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে৷ মেঘলা শোভনের অগোচরে শুকনো ঢোক গিললো ইসস এই ভয়টাই পেয়েছিলো৷ বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় ব্যাপারটা এমনি হলো৷
শোভনের কথা শুনে রনি ব্রু কুচকে বলে,
— ” ভাবি? কে ভাবি আর কে বন্ধুর বউ? ”
শোভন বাকা হেসে মেঘলার সামনে এসে এক হাতে বাহু জড়িয়ে বলে,
— ” কেন? জানিস না মেঘলা আমার বউ? ”
শোভনের কথা শুনে মেঘলা বিষম খায় আর রনি হতভম্ব দৃষ্টিতে দু জনের দিকে তাকায়, মেঘলা শোভনের বউ?
শোভন একবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে তারপর রনির দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” ও আমার বউ দু মাস আগে বিয়ে হয়েছে, আর জিগ্যেস করছিলি না এতো দিন কোথায় ছিলাম? হানিমুনে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম, আজ সকালেই এসেছি বিশ্বাস না করলে খবর নিয়ে দেখতে পারিস৷
আসছি কথা আছে আমাদের, বাড়িতে আসিস একদিন ভাবির হাতের রান্না খেয়ে ভাবির সাথে মনের সুখ-দুঃখের কথা বলে যাস আমিও থাকবো৷ ”
বলে মেঘলাকে নিয়ে হাটা দেয়৷ শোভনের এহেন জবাবে মেঘলা আর রনি দুজনেই হতভম্ব৷ এ ছেলে সত্যি আস্ত একটা নির্লজ্জ
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafaia_Meghla
#উনত্রিশতম_পর্ব

কাচুমাচু খেয়ে শোভনের চেম্বারে শোভন এর চেয়ারে বসে আছে মেঘলা পাশেই আরেকটা চেয়ার টেনে মেঘলার মুখোমুখি বসে আছে শোভন৷ মেঘলার চোখে মুখে ভয়ের চিহ্ন পর পর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলেছে৷ আজ গলা দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না আজ নিজ থেকেই মনে হচ্ছে বেশি বক বক করে দু একটা থাপ্পড় খাওয়া থেকে মৌনতাই শ্রেয়৷ আজ না হয় দু একটা কথা শুনেই নিলো এই ছেলের রাগ সম্পর্কে মেঘলা খুব ভালো ভাবে অবগত কখন আবার কি করে দেয় বলা যায় না৷ আগেও একদিন এই রনির সাথে কথা বলা নিয়ে বকা খেয়ে ছিলো কিছুক্ষন আগে ঠিক এই ভয়টাই পেয়ে ছিলো৷
এখন মেঘলার ইচ্ছে করছে ওই রনিকে হসপিটালের ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিতে, ওই ছেলের জন্য কি কি জানি এখন সহ্য করতে হবে এই বদ রাগী ডাক্তার এর৷
মেঘলা মাথা নিচু করে বসে বসে এসব কথা ভাবছে তখন শোভন শক্ত গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ” কেন ওই রনির সাথে কথা বলতে গিয়ে ছিলে? না করে ছিলাম না? বলে ছিলাম না ওই ছেলের আশে পাশেও যাবে না? তাহলে করিডরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে কেন? আমি যা বলেছিলাম ভুলে গিয়েছিলে? ”
শোভনের শক্ত কন্ঠ শুনে আবারো শুকনো ঢোক গিলে মেঘলা৷ এ ছেলে নির্ঘাত ওকে আজকে ধমকাতে ধমকাতেই মারবে৷ এমন কেন ও? ঠিক করেও তো বলা যায় তাই না? এমন ধমকানো টা কি জরুরি?
মেঘলাকে চুপ করতে দেখে শোভন চেচিয়ে শক্ত রাগী কন্ঠে বলে,
— ” বলে ছিলাম আমি? চুপ করে আছো কেন? কিছু বলছি তো উত্তর দাও? ”
মেঘলা কেঁপে উঠে শোভনের ধমকে৷
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— ” বলে ছিলেন, আর আমার যা ইচ্ছে করবো যার সাথে কথা বলার ইচ্ছে বলবো তাতে আপনার কি? ”
মেঘলার কথা শুনে শোভন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো৷ আরো রেগে গেলো, এ মেয়ে সব সময় সব কিছুর মধ্যেই এমন করে৷
শোভনের ইচ্ছে করছে মেঘলাকে থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিতে কিন্তু না তা এখন করলে মেঘলা আরো চটে যাবে যতটুকুও নিয়ন্ত্রণে এনেছে ততটুকুও বাইরে চলে যাবে৷
তাই নিজেকে শান্ত রেখে শান্ত গলায় বলে,
— ” আমি যা বলেছি তাই আমার শেষ কথা ওর সামনে তুমি যাবে না আর ওকে আমি দেখে নিচ্ছি৷ ”
মেঘলা কিছু বললো না উঠে যেতে নিবে তখনি আবার শোভন হাত টান দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের কাছে এনে বসিয়ে মেঘলার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” জান আমাকে রাগিও না আমাকে আমার মাঝে থাকতে দাও আমি রেগে গেলে তোমার জন্য ভালো হবে না এটা নিশ্চয়ই এতোদিনে বোধগম্য হয়েছে তোমার? ”
মেঘলা কেঁপে উঠছে অস্বস্তিতে পরে যাচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে আর পারছে না এই ছেলে তো ওকে আগুন হয়ে মোমের মতো গলিয়ে দিচ্ছে৷
না এতো তারাতারি তো গললে হবে না, মেঘলা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে আগের চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে ফেললো৷
জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেঘলা যা দেখে শোভন বাকা হাসলো, তার প্রেয়সী নিজেকে নিয়ন্ত্রন করছে নিজের ভালোবাসা আবেগ অনুভূতি গুলো নিয়ন্ত্রন করছে৷

রাত আটটায় বাড়ি ফিরলো মেঘলা আর শোভন, শোভন জোর করেই মেঘলাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে এই মেয়েকে আরো একা রাখার রিস্কও নিবে না৷ এ মেয়ে বড্ড চঞ্চল আবার কোথায় চলে যাবে৷
আহানাও এ বাড়িতেই আছে মেঘলা আসতেই আহানা কিছু না বলেই উপরে চলে যায়, মেঘলা অসহায় দৃষ্টিতে সে দিকে তাকায়৷ শোভনের মা এসে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
— ” এমন কেউ করে? চিন্তা হয়তো নাকি? আমার এই বদ রাগী ছেলেটাকেও নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছো ভাবা যায়৷ ”
বলেই হাসলো শোভনের মা৷ মেঘলা বেশ অবাক হলো ভেবে ছিলো মেঘলার হয়তো কটু কথা শুনতে হবে কিন্তু না সবাই ভিন্ন৷
সে আবার মেঘলার সামনে এসে হাতটা মাথায় রেখে মায়াভরা কন্ঠে বলে,
— ” আমার ছেলেটা একটু বদ রাগী মানিয়ে নিও, আমাদের সামনে ইতস্ত হওয়ার কিছু নেই৷ আর কিছুদিন এর মাঝেই পারিবারিক নিয়মে তোমাদের আবার বিয়ে দিবো৷ ”
মেঘলা বেশ অবাক হলো, একটা পরিবার পরিচয় ছাড়া মেয়েকে আপন করতে পারে এমন পরিবার খুব কমই আছে৷
বেশ যত্নশীল শোভনের মা মেঘলার প্রতি, মেঘলার বেশ ভালো লাগছে৷ কিন্তু আহানার সাথে এ পরিবারের কি সম্পর্ক বুঝতে পারছে না, আহানার কথা মনে পরতে সবাইকে বলে উপরের দিকে যায় মেয়েটা এখনো বেশ রেগে আছে৷
আহানার রুমে নক না করেই ঢুকলো মেঘলা, রুমে ঢুকে বেশ অবাক হচ্ছে মেঘলা কারন এ ঘরটায় আহানার বেশ বড় একটা ছবি টাঙানো আর ছবিটি দেখে বুঝাই যাচ্ছে অনেক আগের৷ এখন পুরো পুরি শিউর হলো আহানা কিছু হয় শোভনের কিন্তু কি হয়? আর কিছু হলেও এমন আলাদা থাকে কেন?
সামনে তাকিয়ে দেখে সেল্ফ এর কাছে বই পরছে আহানা এখানে বেশ বড় একটা বুক সেল্ফ আছে আর অনেক গুলো বই৷
মেঘলা আহার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মিহি কন্ঠে বলে,
— ” রেগে আছো? ”
আহানা উত্তর দিলো না নরেচরে দাড়ালো৷ মেঘলা আবার বলে,
— ” সরি ভুল হয়ে গেছে আমার তোমাকে বলে যাওয়া উচিৎ ছিলো৷ ”
আহানা এখনো চুপ মেঘলা আহানাকে জড়িয়ে ধরে আবার বলে,
— ” সরি বলছিতো কথা বলছোনা কেন? ”
আহানা এখনো উত্তর দিলো না, এখন দু জনের মাঝেই নিরবতা হঠাৎ আহানা বিষন্ন কন্ঠে বলে উঠে,
— ” শোভন তোকে খুব ভালোবাসেরে মেঘু, ওকে আর ছেড়ে কোথাও যাস না৷ ভালোবাসা খুবই মূল্যবান একটা জিনিস কেউ দিতে চাইলে তাকে অবহেলা করে ফেলে রাখিস না, তা নিয়ে হৃদ-গহীনে আগলে রাখ তার গন্ধ সুভাষ এবং তীব্র ভালোবাসা তোর জীবনটা আলোকিত করে দিবে৷ ”
আহানার কথায় কেঁপে উঠলো মেঘলা ভিতরটা নরে উঠলো হৃদস্ফন্দর তীব্র তাই মুখ থেকে কোনো কথায় এলো না কিছু বলতেও পারলো না মেঘলা৷ আহানা আবার বলে,
— ” ভুল মানুষ মাত্রই ও নাহয় ভুল করেছে, কিন্তু তুই ও তো ওকে তোর অনুভূতির কথা জানাসনি ও কিন্তু তোর ভালোবাসা হেলায় ফেলেনি যত্ন করে রেখেছে৷ ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা কেউ দিলে তা ফেলে রাখতে নেই পিঞ্জিরাবদ্ধ করে মন গহীনে রাখতে হয়৷ আশা করি আমার কথা বঝতে পারছিস? আমি তোর উপর রেগে নেই তুই যা করেছিস তাতে ওর শাস্তি হয়েছে এখন মানিয়েনে৷ ”
মেঘলা কিছু বললো না বিনা বাক্যে বেরিয়ে এলো রুম থেকে৷

রাত এগারোটা ছাদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা মনে হাজার ভাবনার ভির অতীত বর্তমান কি করবে ও বুঝিতে পারছে না৷
হঠাৎই কোমরে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে যায় মেঘলা পরক্ষনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে শোভন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে ওর কাধে শোভনের থুতনি৷ কিছু বললো না আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো৷
শোভন মিহি কন্ঠে বলে,
— ” এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? আর শাড়ি পরে এতো রাতে ছাদে কেন তুমি? আমার মাথা পাগল করে দিয়ে শান্তি হও নি? এখন এসেছো এসেছো দিনে শাড়ি পরবে না তুমি পরতে ইচ্ছে হলে আমার সামনে পরবে৷
আমি চাইনা আমার রুপ মহিনীর রুপে কেউ মহীত হোক৷ এ রুপে একা আমিই হরন হয়ে তোমায় হৃদহরনী করতে চাই যে৷ ভালোবাসি প্রাননাশিনী, ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি৷ ”
শোভনের কথায় কিছু বললো না মেঘলা বিনা বাক্যে সামনের দিকে ঘুরে নিজ থেকেই মিশে রইলো শোভনের বক্ষস্থলে৷ তা দেখে হাসলো শোভন অদ্ভুত এক তৃপ্তি মাখা হাসি যে হাসিতে লুকিয়ে আছে প্রেয়সীকে পাওয়ার আনন্দ আর আনন্দ, শোভন এর অগোচরে মেঘলাও হাসলো মিষ্টি হাসি, প্রণয় প্রাপ্তির হাসি৷৷

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here