প্রণয়স্পর্শী পর্ব ৩০+৩১

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#ত্রিশতম_পর্ব

নতুন এক দিনের সুচনা, নতুন এক ভোরের সূচনা হলো আজ৷ আজ ভোরের আলো বড্ড ঝমকালো, নাকি মেঘলার কাছেই এমন চকমকে লাগছে? হয়তো ওর কাছেই এমন চকমকে লাগছে৷ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে মেঘলা, দু ঘন্টা যাবত এখানেই বসে আছে নামাজ পড়ার পর আর শোয়নি শোভন ঘুমাচ্ছে শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে ওর চোখ মুখেও আজ স্নিগ্ধতা বিরাজমান৷
নতুন করে আবার সব কিছু শুরু করতে চায় মেঘলা, কিন্তু ওর ভাবনার মতো ও কি চলতে পারবে? নতুন করে শুরু করলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? যার ভয়ে এতো দূর এসেছে সে যদি কোনো কিছু যেনে যায় তাহলে?
তখন ক শোভন ওকে ভুল বুঝবে? তখন শোভন ওকে দূরে ঠেলে দিবে না তো? এসব আপাদত ভাবতে চায় না, এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে মেঘলা ক্লান্ত নিজেকে এসব থেকে দূরে রেখে একটু ভালো থাকতে চায়৷
শোভন কে নিয়ে ভালো থাকতে চায়, হঠাৎই উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে মেঘলা তারপর মৃধু হাসলো৷ এ ক’দিনে ওর স্পর্শ চেনা হয়ে গেছে৷
শোভন মেঘলাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
— ” এতো সকালে উঠলে যে? ”
মুচকি হেসে মিহি কন্ঠে বলে,
— ” নামাজ পরে আর ঘুমাইনি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি৷ ”
শোভন আবারো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
— ” উমম তোমার জন্য আমার ঘুম টা ভেঙে গেলো, আচ্ছা সাওয়ার নিয়েছো কেন আমার জানা মতে আমি তো রাতে কিছুই করিনি৷ বাই এনি চান্স তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করে দাও নি তো? ”
শোভনের এহেন প্রশ্নে বিরক্ত নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে শোভনের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতেই কনুই দিয়ে শোভনের পেটে খোচা দিয়ে সরে আসে তারপর রুমে যেতে যেতে বলে,
— ” সাধে কি আপনাকে আমি অসভ্য বলি? হসপিটালে যাবো তাই সাওয়ার নিয়েছি তা ছাড়া আমি সব সময়ই হসপিটালে যাওয়ার আগে সকালে সাওয়ার নেই৷ সত্যি আস্ত একটা অসভ্য বেত্তমিজ আপনি৷ যখন যা মুখে আসে তাই বলা চাই তাই না? ”
মেঘলার কথা শুনতেই শোভন শব্দ করে হেসে দেয়৷
শোভনের হাসি দেখে মেঘলা আরো বিরক্ত হয় চোখ রাঙিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে যায়৷
মেঘলা যেতেই শোভন বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মুক্ত শ্বাস নেয়, আজ ওর শান্তি লাগছে পরম শান্তি তার প্রান পাখি কে অবশেষে তার পিঞ্জিরাবদ্ধ করতে পেরেছে তো৷ এর থেকে মহা শান্তি আর কি হতে পারে? ভালোবাসার মানুষ টা পাশে থাকলে আর কি লাগে? প্রথম যাকে সহ্যই করতে পারতো না আজ তাকে পাশে না পেলে না দেখলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে সত্যি মেয়েটা জাদু যানে নয়তো কি শোভন কে কি করে দিলো? ও নিজের করা আগের আচরন গুলো আর এখন আচরন গুলো নিয়ে ভাবলে বর্তমান সময়ের নিজেকে দেখে বেশ অবাক লাগছে৷ ভালোবাসা কি না পারে? শোভন যে ভালোবাসে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে মেঘলা কে৷

আজ শোভনের হসপিটালে কাজ আছে বিকেলে সার্জারিও আছে তাই সকাল সকালি বের হবে আজকে যাওয়ার পথে ডিএমসি তে ও কাজ আছে তাই তারাহুরো করে বের হচ্ছে কিন্তু আধ ঘন্টা যাবত মেঘলা কে ডাকতে ডাকতেই গলা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে, ওর মায়ের সাথে খুব ভাব জমেছে মেঘলার তা লক্ষ্য করেছে শোভন৷ ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগছে যাক মেয়ে টা সবার সাথে খোলাসা হতে পারছে দেখে বেশ ভালো লাগছে শোভনের৷
অবশেষে মেঘলা রুমে এলো সবে মেঘলা কে রুমে ঢুকতে দেখে শোভন গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ” আসার প্রয়জন ছিলো কি? নাই আসতে এখন তো আমাকে সময় দেওয়াই হচ্ছে না৷ ”
শোভনের অভিমানি কথা শুনে ঠোট চেপে হাসলো মেঘলা৷ তা শোভনের আড়ালে হাসলেও শোভনের চোখ এরায়নি হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,
— “হাসছো তুমি? মজা পাচ্ছো খুব? আমিও এর শোধ নিবো রাতে আসি তারপর৷ ”
মেঘলা ছাড়াতে ছাড়াতে শোভন কে বলে,
— ” ছারুন সব সময় খালি চিপকে থাকার ধান্দা না? ছারুন রেডি হতে হবে তো? ”
শোভন মেঘলার কপালে আলতো ঠোঁট ছুইয়ে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে থেলে ঘড়ি নিয়ে পরতে পরতে বলে,
— ” কোথায় যাবে তুমি? ”
মেঘলা বলে,
— ” কেন হসপিটালে৷ ”
শোভন এপ্রোন পরে স্টেথোস্কোপ টা গলায় জুলিয়ে চশমা ঠিক করতে করতে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ” নো আজ থেকে হসপিটালে যাচ্ছো না তুমি, আর রনির ব্যাপার টা দেখছি আমি আজ৷ ”
মেঘলা বলে,
— ” আরে কিন্তু,,,৷ ”
মেঘলাকে মাঝ পথে থামিয়ে আবারো সেই একি ভাবে গম্ভীর হয়ে বলে,
— ” আমি যা বলেছি তাই, আমার তর্ক পছন্দ না৷ আমি আসছি রাতে হয়তো দেরি হতে পারে ফিরতে বাড়ি থেকে বের হবে না আর বিছানার উপর ফোন রাখা আছে আমি ফোন করলে যে ধরা হয়৷ ”
বলে আবারো মেঘলা কে কোমর জরিয়ে নিজের কাছে এনে কপালে গালে আলতো ঠোঁট ছুইয়ে চাবি নিয়ে বের হয়ে যায়৷ সেখানে দাঁড়িয়ে আপন মনে হাসলো, ভাবা যায় বদ রাগী ডাক্তার টা ওকে ভালোবাসে আর শোভন যে মেঘলা কে ভালোবাসে এটা মেঘলা এ ক’ দিনে গভীর ভাবে বুঝতে পেরেছে৷ এক দিন বলেছিলো মেঘলা, শোভন ও ওকে ভালোবাসবে চলে যাওয়ার পর মেগজলা তো ভেবে ছিলো আর ফিরবেই না শোভন বোধহয় ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবে কিন্তু না পাগল টা যে এতো কিছু করবে তা মেঘলার বোধগম্যের ভাইরে ছিলো মেঘলা এ ও ভেবে ছিলো তখন শোভন বোধহয় ডাইরি পরে দয়া দেখিয়ে ভালোবাসি বলে ছিলো কিন্তু না বদ রাগী ডাক্তার টা যে সত্যি ওকে ভালোবাসে আর শোভনের ভালোবাসার মাঝে আছে এক রাশ পাগলামি মেঘলা রাজি না হলেও ওর কাছেই জোর করে রাখতো৷ এমন পাগটাটে প্রেমিকের কাছ থেকে কত দিন আর দূরে থাকা যায়? তাই তো মেঘলা ও অবশেষে ধরা দিলো৷ পরবর্তীতে আর যাই হোক শোভন যে মেঘলাকে কোনো কিছুতেই কাছ ছাড়া করবে না তাও বোঝা হয়ে গেছে৷ ও যে এই পাগল টাকে আগের থেকে অনেক বেশি ভালোবাসে আর যাই হোক দূরে যেতে চায় না৷ নতুন করে সব টা শুরু করতে চায়৷

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পরেছে, কমলা বর্ন ধারন করেছে সূর্যটা অদ্ভুত মুগ্ধতা বিরাজমান৷ আকাশি বর্ন আকাশটার মাঝে সাদা সাদা তুলোর ন্যায় মেঘের ভেলা এখন রক্তিম আকার ধারন করেছে, শীতল বাতাস মন একেবারে জুরিয়ে দেয়৷
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ চলছে তাই আবহাওয়া শীতল শীতল লাগছে সারাদিন গরম লাগলে ও বিকেল টা হিমেল হাওয়ায় ঘেরা থাকে৷ ছাদে মাঝখানে বসে আছে আহানা আর মেঘলা আহানার ব্যাপারটা বিকেলেই খোলাসা হয়েছে আজ মেঘলার কাছে৷ আহানা বিকেলে যখন বাড়ি থেকে বের হতে চাইছিলো তখন শোভনের ছোট চাচা আহানা কে আটকায় তখনি জানতে পারে আহানা শোভনের চাচাতো বোন৷ আহানার মা মারা যাওয়ার দু মাসের তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলো এবং তার সাথে আগে থেকেই আহানার বাবার সম্পর্ক ছিলো এসব জানার পরই আহানার মা অসুস্থ হয়ে মারা যায়৷ আহানা দেশের বাইরে পরতে গিয়েছিলো তখন আর আহানা যখন সব কিছু জানে ওর বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছিলো এর পর থেকেই আহানা বাড়িতে যায় না আর ফ্লাট টা শোভনই কিনে দিয়েছিলো তখন থেকে সেখানেই থাকে৷ আজ শোভনের মা জোর করে রেখেছে৷
হঠাৎই ফোনের আওয়াজে ভাবনার জগত থেকে বের হয় মেঘলা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শোভন ফোন দিয়েছে মৃধু হেসে ফোন টা তুলে ছাদের এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায়৷
ওপাশ থেকে শোভন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
— ” কি করা হচ্ছে ম্যাডাম? এতোখন যাবত রিং হচ্ছে রিসিভ করতে এতোখন লাগে?”
এবার বেশ বিরক্ত হলো মেঘলা এতোখন কোথায় লেগেছে? রিং দেওয়ার সাথে সাথেই তো ধরলো?
কিছু বললো না মেঘলা চুপ করেই রইলো এ ছেলের সাথে কথা বাড়ালেই হয়তো ধমক খেতে হবে? কি আর করবে ভালো তো বাসে এই বদ রাগী ডাক্তার টার সাথেই তো থাকতে হবে তাই সব কিছু অভ্যাস করে নেওয়াই শ্রেয়৷
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#একত্রিশতম_পর্ব

রাত একটা বাজে প্রায়, বাইরে তখন তুমুল ঝড় হচ্ছে তীব্র বাতাসে ঘরের পর্দা গুলো উলট পালট হয়ে নরছে৷ মেঘলা জানালার গ্রিল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে মাথায় হাজার চিন্তা উকি দিচ্ছে, শোভন এখনো ফিরেনি লোকটা মেঘলাকে কেয়ারলেস বলে মেঘলা কি ষ্টুপিড বলে অথচো নিজেই বড় স্টুপিডিটির প্রমান দিচ্ছে৷ এতো রাত হয়ে গেছে একটা ফোন করে জানালো ও না আবার ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছে৷
আচ্ছা শোভন কি বুঝে না মেঘলার ও চিন্তা হয়? এমনিতে হলে চিন্তা হচ্ছে না বাইরে ঝরের মাঝে তো চিন্তা হবেই৷
বদ রাগী ডাক্তারটা নিজের বেলায় ষোলো আনা, ফোন যদি অফ হয়েও যায় হসপিটালের কোনো ফোন দিয়ে তো ফোন করে জানাতে পারে নাকি? এক ঘন্টা যাবৎ ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন অফই পাচ্ছে৷
দেরটা বাজতেই বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে শোভনের গাড়ি ঢুকলো, মেঘলা ভাবলো এ ছেলের সাথে আজ কথাই বলবে না৷ সারাদিন এতো এতো ফোন করেছে রাতে একটা বার জানাতে পারলো না?
বারান্দায় দোলনাটায় বসে দোলনাটা আজই দিয়ে গেছে মেঘলার জন্যই আনিয়েছে শোভন সেখানে বসে হুমায়ুন আহমেদ এর ” মীরার গ্রামের বাড়ী” উপন্যাসটি নিয়ে মধ্য পাতায় মুখ গুজলো মেঘলা ৷ আজ দরকার হয় রুমেই যাবে না৷
শোভন আধ ভিজে শরীরে রুমে ঢুকলো, মাথা ভেজা শার্ট অর্ধ ভিজে গেছে রুমে ঢুকেই মেঘলাকে পেলো না৷
কোথায় গেলো আবার মেয়েটা ভাবলো শোভন, আলমারি থেকে আরেকটা শার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো৷ মেঘলা উকি মেরে দেখলো তখন, শোভন বেশ খানেকক্ষন পর বের হয়েও পেলো না বারান্দায় না দেখেই বের হলো আহানার রুমের উদ্দেশ্যে ভাবলো ওর চড়ুই পাখিটা বুঝি সেখানেই গেছে৷ ওই মেয়ে তো আবার দু দন্ড কথা ছাড়া থাকতেই পারে না চড়ুই পাখির মতই সারাদিন কিচির মিচির করে আহানার রুমে গিয়ে দেখে আহানা ল্যাপটপে কাজ করছে ডিম লাইট জ্বলানো আহানার রুমে ঢুকে বলে,
— ” তুই একা? মেঘলা কোথায় রে? ”
আহানা ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে শোভনের দিকে তাকিয়ে হেসে মিহি কন্ঠে বলে,
— ” আরে ভাই তুই? এখন এলি বুঝি? ”
শোভন আবারো এদিক ওদিক তাকালো তারপর বলে,
— ” হ্যাঁ মাত্রই এলাম, মেঘলা কোথায়? তোর রুমে তো নেই কোথায় গেলো? মায়ের কাছে নাকি? ”
আহানা হাসলো, ওর ভাইটা বউ পাগল যে হয়েছে তা দেখাই যাচ্ছে৷ এ ছেলে এতো রাগী কে বলবে? যে এই মেয়েকে দেখে বিরক্ত হচ্ছে আজ ওই মেয়েকে-ই চোখে হারাচ্ছে? ভাবা যায় এগূলো?
আহানা দূষ্টু হেসে বলে,
— ” কেন রে ভাই? বউ কে চোখে হারাচ্ছিস নাকি? কাকি মনি (শোভনের মা) তো ভাবছে কাল থেকে বিয়ের ক’দিন তোর ধারে কাছেও আসতে দেবে না মেঘলাকে তখন কি করবি? ”
আহানার কথায় বিরক্ত হলো শোভন৷ মেঘলার সাথে থাকতে থাকতে ওর মা বোন ও একই হয়ে গেছে বেশি কথা বলছে৷
বিরক্ত কন্ঠে বলে,
— ” আহহ আহান এতো কথা বলছিস কেন? একটা সিম্পল কোশ্চেন করলাম বলবি তুই ওই চড়ুই পাখিটা কই? ”
আহানা শব্দ করে হেসে দিলো৷ হাসতে হাসতে বলে,
— ” ও তো একটু আগে রুমেই গেলো তবে তোর উপর ক্ষেপেছে অনেক, কত গুলো ফোন দিয়েছে বল তো? ধরছিলি না কেন? ”
শোভন শুকনো ঢোক গিললো এ মেয়ের রাগ ভাঙাতে না জানি আজ সারা রাত পার হয়ে যায়? কিছু না বলে রুম থেকে বের হতে নিয়েও ঘাড় ঘুড়িয়ে বলে,
— ” শুন কি জানি বলছিলি? ও হ্যাঁ বিয়ের ক’ দিন আমার থেকে দূরে রাখবে? তুই তোর কাকি মনি মানে আমার মা কে বলে দিস আমার বউকে আমার থেকে দূরে রাখার কথা যেন না ভাবে৷ ”
বলে গট গট করে রুম থেকে বের হয়ে যায়, শোভনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহানা শব্দ করে হেসে দেয় এ বদ রাগো ছেলে সত্যি সত্যি বউ পাগল হয়ে গেছে৷
বড় বড় পা ফেলে রুমে ঢুকলো শোভন ওর মায়ের ঘরে খুজেও পেলো না কপালে তাই চিন্তার ভাজ, হঠাৎই বারান্দায় লাইট জ্বালানো দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো এই মেয়ে বারান্দায় বসে আছে আর ও সারা বাড়ি খুজলো৷ ও নিজেই ষ্টুপিড এর মত কাজ করলো বিরবির করতে করতে বারান্দায় উকি দিলো তখন মেঘলাও উকি দিচ্ছিলো আর তখনি দুজনের চোখা-চোখি হয়ে যায় মেঘলা মুখ ফুলিয়ে চোখ ঘুড়িয়ে ফেলে তা দেখে শোভন বাকা হাসলো৷ ওর বউ সত্যি ক্ষেপেছে৷
গিয়ে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ” আমি মহারানীকে সারা বাড়ি খুজছি আর মহারানী এখানে বসে আছে? বাহ এই তুমি আমার আসার আওয়াজ পাওনি? ”
মেঘলা কিছু বললো না মুখ ফুলিয়ে উঠে রুমে দিকে পা বাড়াবে তখনি শোভন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— ” আরে রাগ করছো কেন? আমার ফোন অফ হয়ে গিয়ে ছিলো আর আমি তখন ড্রাইভিং করছিলাম, এতো ঝড় তাই মাঝ রাস্তায় এসেই গাড়ি সাইড করে রেখে ছিলাম৷ সরি এমন ভুল আর হবে না৷ ”
মেঘলা এবারো কিছু বললো না শোভন নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে মেঘলার গালে উষ্ট ছোয়ালো৷ তারপর কানে মুখ নিয়ে বলে,
— ” এখনো কি রাগ কমেনি? ”
মেঘলা কিছু বললো না এবারো, সামনে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো শোভন ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
— ” ভালোবাসি৷ ”
মেঘলা ও মিহি কন্ঠে বলনো,
— ” ভালোবাসি৷ ”
হাসলো শোভন তৃপ্তি মাখা হাসি৷

বিকেল প্রায় সারে চারটা বাজে, আজ সারাটা দিনয়ই ঘুমে ঘুমে কাটিয়েছে মেঘলার, শোভন আজ তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিলো৷ আজও নাকি ফিরতে দেরি হবে হঠাৎই মেঘলার কিছু একটা ভেবে আহানার রুমে ছুটে যায়৷
আহানা কারো সাথে কথা বলছিলো ফোন রাখতেই মেঘলা বায়না ধরে বলে,
— ” চলো না আপু একটু ঘুড়ে আসি সেই ঝিলের পারে৷ ”
মেঘলার কথায় নাকোচ করে বলে,
— ” আজ নয় শোভনের সাথে অন্য একদিন, আজ তোকে নিয়ে একা বের হয়েছি জানলে আমাকেই দু চারটে দিয়ে বসবে৷ ”
মেঘলা অভিমানি কন্ঠে বলে,
— ” চলো না আপু, একা একদমই ভালো লাগছে না৷ তা ছাড়া ওনাকে না হয় বলবো না আমরা৷ ”
আহানা অসহায় ভাবে বলে,
— ” প্লিজ বাচ্চামো করিস না ও জানলে কপালে দূঃখ আছে৷ ”
কার কথা শুনে কে? আহানা শত বার না বলা শর্তেও মেঘলা জোর করে আহানাকে রেডি হতে পাঠায়৷ আহানার ও আর কি করার এ মেয়ের সাথে পারবেই না, স্বামী যেমন বউ একি রকম জেদি কারো থেকে কেউ কম না৷
অতি জোরাজোরীর পর আহানা রেডি হলো মেঘলার কথায় আজও শাড়ি পড়েছে আহানা হাল্কা মিষ্টি রঙ এর শাড়ী পরেছে মেঘলা নীল রঙ এর শাড়ি পরেছে হাত ভর্তি চুড়ি৷
শোভনকে বললে কখনই শাড়ী পড়িয়ে নিয়ে আসতো না, আর শাড়ি পরতে মেঘলার খুব পছন্দ তাই শোভনকে না জানিয়েই এলো৷
সেদিন এর তুলনায় আজ আরো বেশি কাশফুল ভর্তি এখানে কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়ে আজ আকাশ ঝকঝকে চকমকে এখানে খুব একটা মানুষ নেই৷ আহানা আর মেঘলাই হাটছে শোভন এখন পর্যন্ত ফোন দেয়নি নয়তো মিথ্যে বলতে হতো ওই ছেলে যা জানলে আস্ত চিবিয়ে খাবে৷
ঝিলের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলের মৃদু হাওয়া অনুভব করছে মেঘলা আর আহানা কি সুন্দর চারোপাশটা মনোরম শোভন পাশে থাকলে ভালোই হতো সময়টা আরো মহোনীয় হয়ে উঠতো৷
— ” এবার তবে পাখিকে পেলাম হাতের মুঠোয়৷ ”
হঠাৎই চেনা পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে কেঁপে উঠে মেঘলা, হাত পা অনবরত কাঁপছে যার কন্ঠ শুনলো ঠিক শুনেছে তো? নাকি ভ্রম? ভ্রমই যেন হয় আর যেন তার সম্মুখীন হয়ে না হয় ভাবতে ভাবতেই পেছলে ফিরে যাকে দেখলো নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না লুটিয়ে পরলো নিচে জ্ঞান হারালো৷ চোখ বন্ধ করতে করতে আহানার কথা অবাক কন্ঠ কর্ন কূহরে এলো মেঘলার আহানা বলছে,
— ” রাজ তুই? ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here