প্রণয়ের ত্রিভুবন পর্ব ২

#প্রণয়ের_ত্রিভুবন
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ০২

প্রতিদিন নতুন গল্প সবার আগে পেতে গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং গল্পের শহর চ্যানেলের community চেক করুন)

আবছা আলোময় সন্ধ্যের সময় ক্লান্ত বেশে বাসায় ফিরলো শুভ্রিলা। পরনের সাদা সূতির কামিজটায় ঘাম লেগে সিক্ত বেশ ধারন করেছে। ছেড়ে দেওয়া ঘন কালো চুলগুলো পিঠের সাথে লেগে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। কোনোরকম বাসার দরজাটা ভিজিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে শুভ্রিলা। পাশেই রান্নাঘরে কাজ করছিলেন শুভ্রিলার মা মিসেস.শোভা। তিনি মেয়েকে দেখামাত্র তার কাছে যান। ঠোঁটের এক চিলেতে হাসি ফুটিয়ে বলেন,
-‘তাহলে এতোক্ষণে এলি! আচ্ছা ভার্সিটির প্রথম দিন কেমন ছিলো বল তো? ‘

–‘দারুন ছিলো৷ এককথায় বেস্ট এভার বলা চলে। আজকে আমি আমার স্বপ্নের….
কথাটা পূর্ণ না করেই থেমে যায় শুভ্রিলা। এতোক্ষণ তার ধ্যানই ছিলো না কার সামনে কি বলছে। নিজের মুখ হাতদ্বয় দিয়ে চেপে ধরেই মিসেস. শোভার দিকে তাকায়। তার মা তার আকষ্মিক কান্ডে থতমত খেয়ে গেছে। নিজেকে বাঁচাতে সেখান থেকে ছুটে নিজের রুমে চলে যায় শুভ্রিলা। নিজের অবাক করা কান্ডের জন্য মনে মনে অনুতপ্ত ফিলিংস আসছে।

————-
–‘হ্যালো! কোথায় তুই? তোকে যে এহমার না কি নাম ছেলেটার ফোন নম্বর ম্যানেজ করতে বলেছিলাম? ‘ (শুভ্রিলা)

–‘ ওহ, সরি দোস্ত ম্যানেজ করা পসিবল হয় নি। ছেলেটা কারো সাথে কথা না বলেই সোজা হনহনিয়ে বাসায় চলে গেলো। জিজ্ঞেস করার কোনো স্কোপ থাকলো? আর তুই ই আমাকে গ্যারান্টি দে ও কি কখনোই আমাকে নম্বর দিতো? ‘

পিহুর কথায় সত্যতা খুঁজে নিয়ে সম্মতিসূচক মাথা দোলায় শুভ্রিলা। খারাপ কিছু বলে নি পিহু। এমনিতেই এহমার যেরকম ভীতু,কাউকে নম্বর দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না!
লাইনটা কেটে দিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে ব্যালকোনির দিকে সূক্ষ্ণ চাহনি দেয় শুভ্রিলা। সারাক্ষণ মনে সেই একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে এহমার তার থেকে রেগে যায় নি তো? নাহ, কালকে যে করেই হোক ভার্সিটিতে যেয়ে সরি বলতে হবে। তার জন্যই এহমার ট্রলের শিকার হলো।
.
.
সেই সাকালে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে শুভ্রিলা। মুখে উত্তেজনার ছাপ। অন্যান্য দিনের ন্যায় আজকে ঘুম আসছে না উত্তেজনার ঠেলায়!
মেয়ের এতো উত্তেজনা দেখে মি.আভাস বলেই ফেললেন, –‘কি রে মা, আজকে এতো তাড়াহুড়ো করছিস ক্যান? সব ঠিকঠাক আছে তো! ‘
চুলে এতোক্ষণ চিরুনি চালান করছিলো শুভ্রিলা হঠাৎ বাবার এমন কথায় আচানক ভরকে যায়। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,

–‘আ__জ্বি বাবা, সব ঠিকঠাক আছে। তুমি টেনশান নিও না।’
মি. আভাসের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। আবারও মন দেন পেপার এ।
নীল রঙের নিপুনভাবে কাজ করা একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে শুভ্রিলা। এই কামিজটা তাকে দারুনভাবে মানায়। চুলগুলোতে সুন্দরভাবে বেণি করে ডান পাশে ঝুলিয়ে রাখে। লাল টকটকে লিপস্টিকটা হালকাভাবে ঠোঁটযুগলে পাউট করে নেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের শেষ লুকটা দেখে নেয়। বরাবরের মতোই অপরূপা লাগছে তাকে। ফোনটা নিয়ে আর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় শুভ্রিলা।
.
.
–‘হ্যারে শুভ্রিলা ক্যাম্পাসটা জোস্ না? কতো দিন আসায় ছিলাম এরকম ক্যাম্পাসটা ঘুরে ঘুরে দেখবো!’

–‘হুম’ ছোট করে উত্তর দেয় শুভ্রিলা। তার মন এসবে নেই। চোক্ষুজোড়া এদিক ওদিক করে এহমারকে খুঁজতে ব্যস্ত। না জানি কখন আসবে ছেলেটা। এক সময় শুভ্রিলার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এসে পড়ে এহমার। শুভ্রিলার চোখ সেখানে আটকে যায়। সাদা রঙের একটা শার্ট পড়ে আছে এহমার। হাতগুলো গোটানো। সিএনজির চালকে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছে। ভার্সিটিতে প্রবেশ করেই পূর্বের ন্যায় এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা সামনের দিকে চলে যায়। এহমারের কান্ডে খানিকটা রাগ লাগে শুভ্রিলার। সেও ফটাফট পিহুর হাত ধরে টেনে টেনে হলে নিয়ে যায়। পিহুকেও বাধ্য হয়ে তার সাথে ছুটে যেতে হয়। হলের ভেতরে যেয়ে শুভ্রিলা দেখে কালকের মতো লাস্টের দিকের একটা বেঞ্চে বসে আছে এহমার। শুভ্রিলা প্রবেশ করতেই হুট করে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে । শুভ্রিলাকে দেখা মাত্রই অন্যদিকে মাথা ঘোরায় এহমার। যেনো শুভ্রিলার মাঝে কোনো আগ্রহই খুঁজে পেলো না! এতে বেশ রাগ লাগে শুভ্রিলার। আজ অব্দি কোনো ছেলে তাকে এভাবে ইগ্নোর করে নি। আর এই ছেলেটা ব্যতিক্রম। রেগেমেগে শুভ্রিলা তার ব্যাগটা ধরে নিয়ে যেয়ে এহমারের পেছন বেঞ্চটায় খুব শব্দ করে রাখে। তবে, এসবে পাত্তা দিচ্ছে না এহমার। সে আপনা ধ্যানেই বিস্মৃতপ্রায়!
রেগে গজগজ করতে করতে শুভ্রিলা বলে,
‘এই যে লোক এদিকে একটু তাকান! আ’ম এক্সট্রেইমলি সরি!’
শুভ্রিলার দিকে তাকাতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় এহমার। কিছু বুঝে না ওঠেই বলে,
–‘সরি মানে? কি করেছেন আপনি? ‘
–‘দেখেন আপনার উপর এমনিই রেগে আছি, অযথা নিকুচি করবেন না। কালকে যে আমার জন্য আপনাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা করলো তাই সরি বলছি!’
শুভ্রিলার কথায় হাসি পেয়ে যায় এহমারের। হাসি ধরে রাখতে না পেরে হাসতে হাসতে বলে,
–‘কি যে বলছেন! আমি রাগ করবো কেনো? এতে আপনার কোনো দোষ নেই।’

এহমারের কথায় মনে শান্তি ফিরে আসে শুভ্রিলার। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে সে। এহমারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময়….

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here