প্রিয়দর্শিনী,পর্ব:১২+১৩

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১২
🍁
হোস্টেলের মূল গেইটের সামনে লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে যূথী।এখান থেকে দেখতে পাচ্ছে নিশান বড় বড় কদম ফেলে গাড়ির দিকে ফিরে যাচ্ছে। নিজেকে তাঁর বড্ড অসহায় লাগছে।অবাধ্য মনটা চাইছে ছুটে গিয়ে নিশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ প্লিজ আমাকে এখানে রেখে যাবেন না।এখানে আমি ভালো থাকব না।আপনাকে না দেখে আমি কি করে ভালো থাকব!’

মনের কথাগুলো আর বলা হয়ে উঠল না।নিশান ধোঁয়া উড়িয়ে গাড়ি নিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেল।
আজ সকালে যখন ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েছিল তখন তাঁর চোখদুটো ছলছল করে উঠছিল বারেবারে। আসার সময় গাড়িতে আড়ালে আবডালে নিশানের দিকে তাকিয়ে ছিল অপলক।কিন্তু নিশান ভুলেও তাঁর দিকে দৃষ্টি দেয় নি।এমন ভাব করে গেছে যেন পাশে কোনো জনপ্রাণী নেই।

লাগেজ নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করল যূথী।ছিমছাম দুটো কামরা।খোলা জানালা দিয়ে কড়কড়ে রোদ প্রবেশ করছে।সামনের রুমে তাঁর বয়সী একটা মেয়ে বসে ছিল। সে এগিয়ে এসে বলল,

‘ হাই আমি বিপাশা।তুমি আমার সাথেই থাকবে।ওই যে পাশের রুমটা তোমার।যাও গিয়ে দেখে নাও।’

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বিপাশার সাথে যূথীর ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল।আজ আর কলেজ যেতে ইচ্ছে করেনি কারোই।তাই সবটা দিন ওঁরা গল্পগুজব করেই কাটিয়ে দিল।
রাতে বালিশে মাথা রাখতেই যূথীর মন আবার কালো মেঘে ঢেকে গেল।চোখ থেকে ঘুমের রেশ কোথায় যেন উবে গেল।তাঁর পক্ষে এই হোস্টেলে থাকা সম্ভব নয়।কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।সারাক্ষণ এভাবে মন ভার করে থাকতে নিজেরও ভালো লাগছে না।এত সহজে হার মানলে তো হবে না তাঁকে।যে করেই হোক ওই বাড়িতে আবার প্রবেশ করতে হবে।শুধুমাত্র নিশান ভাইয়ার জন্য।
কিছু একটা ভাবতেই যূথীর ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠল বাঁকা হাসির রেখা।যার অর্থ একমাত্র সে-ই জানে।

________________________

কেটে গেছে দুটো দিন।নিশানদের বাড়ির সবকিছুই আগের মত চলছে। নিশানের মা নীলুফা চৌধুরী এই দুইদিনে যূথীকে বেশ কয়েকবার কল দিয়ে সুবিধা অসুবিধার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন।এমনিতে কলেজে মনীষার সাথে যূথীর দেখা হয়।মনীষা বলেছে যূথী নাকি প্রায়ই মন খারাপ করে থাকে।এটা নিয়েই তিনি কিছুটা চিন্তিত।কে জানে মেয়েটা কোনো সমস্যায় ভুগছে কিনা।আগামীকাল সময় করে একবার হোস্টেলে খবর নিয়ে আসবেন।

.

প্রতিদিনের অভ্যাসমতো আজও ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ছয়ের ঘরে আসতে নীলুফা চৌধুরী ঘুম থেকে উঠে পড়লেন।বাড়িতে তিনিই সকলের আগে জাগেন।শরীরে ডায়াবেটিস থাকার কারণে সকালে বাগানের খোলা জায়গায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন।তারপর ফিরে আসেন নাস্তা বানাতে।

হাতমুখ ধুয়ে নীলুফা চৌধুরী একতলায় নামলেন।আজ তাড়াতাড়ি মর্নিং ওয়াক শেষ করে কিচেনে ঢুকতে হবে।নিশানের নাকি খুব তাড়া আজ।গতকাল রাতে বলে রেখেছে আটটা বাজতেই যেন টেবিলে নাস্তা পায়।

মেইনডোর খুলে নীলুফা চৌধুরী বাগানে আসলেন।বাগানের পশ্চিম কোনায় নজর দিতে তিনি এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন।গোলাপ গাছগুলোর পাশে পাতা লোহার বেঞ্চির উপর কেউ একজন গুটিশুটি মেরে বসে আছে।দূর থেকে চোহারা ভালো দেখাচ্ছে না।নীলুফা চৌধুরীর বুকটা ধক করে উঠল।এমন নির্জন সময়ে বাগানে কে বসে থাকবে?দারোয়ান কি মনে করে ঢুকতে দিল!কোনো চোর টোর নয়তো আবার।
সন্দিহান চোখে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে তিনি সেই ব্যক্তিটির সামনে হাজির হলেন।মুহুর্তেই তাঁর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

‘ একি যূথী তুই এখানে?’

নীলুফা চৌধুরীর কর্কশ চিৎকারে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল যূথী।বসে থাকতে থাকতে কখন যে তাঁর চোখটা লেগে এসেছিল বুঝতে পারে নি।লাগেজ হাতে নিয়ে সে এবার উঠে দাঁড়াল।নীলুফা চৌধুরী কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছেন।যূথী কাঁদকাঁদ হয়ে বলল,

‘ আমি হোস্টেল থেকে চলে এসেছি নীলু চাচী।ওখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।ওখানে থাকলে আমি নির্ঘাত মারা যাব।’

‘ সেকি! কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?তার আগে এটা বল এই সাতসকালে তুই এখানে কিভাবে এলি।’

‘ বিরাট কাহিনী চাচী।এসো এখানে বসো তারপর বলছি।’

যূথী নীলুফা চৌধুরীর হাত টেনে বেঞ্চে বসিয়ে দিল।নীলুফা চৌধুরীর বুক এখনো ধকধক করছে।কোনো অঘটন ঘটল কিনা কে জানে!

‘ জানো চাচী গত দুইরাত ধরে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি।এই দেখো আমার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।আমার মুখ বির্বণ হয়ে আছে।আমি যখনই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি তখন মনে হয় আমার রুমে কেউ হাঁটাহাঁটি করছে।স্যান্ডেল পায়ে হাঁটলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন।আমি তাড়াতাড়ি করে লাইট জ্বালিয়ে দেই কিন্তু কাউকে দেখি না।গতকাল রাতে রুমের দেয়ালে কারো ছায়া দেখেছি।ভয়ের চোটে আমার হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাবার জোগাড়। তাই ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে আমি বাক্সপেটরা নিয়ে এখানে হাজির হয়েছি।’

নীলুফা চৌধুরী হতভম্ব হয়ে রইলেন।কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাঁর হাসি চেপে আসছে।তিনি ভেবেছিলেন যূথীর বোধ হয় অন্য সমস্যা।কিন্তু এই মেয়ে ভূতের ভয়ে সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছে।

তিনি মুচকি হেসে বললেন,
‘ খুব ভালো করেছিস তুই।এখন থেকে এখানেই থাকবি।তোকে তো যাওয়ার সময়ও বলেছিলাম হোস্টেলে যাস না।যাই হোক তোর চাচীকে আমি ফোনে সব বলে দেব কেমন! এখন চল ভেতরে।’

যূথী বিজয়ের হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াল। আনন্দে আটখানা হয়ে তাঁর লাফাতে ইচ্ছে করছে।নিশান ভাইয়া তাঁকে এখানে দেখলে রিয়্যাকশন কেমন দেখাবে সেটা ভাবছে শুধু।কিন্তু এতগুলো মিথ্যা বলার জন্য মনে মনে তওবা কাটছে।যাই হোক এসব ভেবে এখন লাভ নেই।তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল এ বাড়িতে ঢোকা। যেহেতু প্ল্যান সাকসেসফুল তাই সত্য মিথ্যা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।

যূথী মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,
‘ মিস্টার সিআইডি অফিসার! আমি আবার চলে এসেছি।’

বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে নীলুফা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন,

‘ তুই বাগানে কেনো বসে ছিলি?আমাকে কল দেওয়া যেত না?’

‘ যেত।কিন্তু আমি ভাবলাম শুধু শুধু তোমার ঘুমে ডিস্টার্ব করে কি লাভ।এটা ভেবেই বসে ছিলাম।’

____________________________

সকালে নাস্তা করতে এসে ডাইনিং টেবিলে যূথীকে বসে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিশান।হোস্টেল গেছে এখনো তিনদিন সম্পূর্ণ হয়নি এরমধ্যেই আবার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে গেল?
যূথী সকলের আড়ালে নিশানের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল মাখা হাসি হাসল।এর বদলে নিশান যূথীকে চোখ রাঙানো উপহার দিল।

নীলুফা চৌধুরী ছেলের প্লেটে অমলেট তুলে দিয়ে বললেন,

‘ যূথী আজ থেকে এ বাড়িতে থাকবে নিশান।ওর হোস্টেলে মন টিকে নি।তুই অফিসে যাওয়ার সময় মনীষা আর যূথীকে একটু কলেজে নামিয়ে দিস তো!নাহলে ওদের আবার অটো ধরে যেতে হবে।’

নিশান কোনো উত্তর দিল না।কাটা চামচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ তুলে নাস্তা খেতে লাগল।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ল নিশান।এটা দেখে মনীষা বলল,

‘ ভাইয়া একটু ওয়েট করো গাড়িতে।আমরা ব্যাগ নিয়ে আসছি।’

মনীষা যূথী দৌড়ে উপরে চলে গেল ব্যাগ আনতে।দুজন এক সেকেন্ডও দেরি না করে আবারো দৌড়ে চলে এল বাইরে।কিন্তু কোথায় ওদের নিশান ভাইয়া?নিশান নেই নিশানের গাড়িও নেই।সে ওদেরকে না নিয়েই চলে গেছে।

‘ দেখলে যূথী ভাইয়া কি করল এটা?বোধ হয় ওর মুড আজ ভালো নেই।আচ্ছা চলো আমরা অটো ভাড়া করে নিব।’

মনীষার কথায় যূথী প্রতিত্তোর করল না।তাঁর মুখ চুপসে আছে।সে জানে ওই হিটলার লোকটি ইচ্ছে করেই এই কাজটা করেছে।ঠিক আছে এর শোধ তুলবে সে।সিআইডি অফিসার এখনো যূথীকে চিনতে পারে নি।

চলবে…

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৩
🍁
বিকেলে মনীষা এবং বিদীষার সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে যূথী।যূথীর মন আজ ভীষণ ভালো।তাই সে স্বভাবসুলভ আচরণে ফিরে এসেছে।অর্থাৎ ননস্টপ কথা বলে বলে বাকি দুজনের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।তবে শ্রোতারা কেউই বিরক্ত না হয়ে বরং হাসিতে ফেটে পড়ছে।

একপর্যায়ে মনীষা জিজ্ঞেস করল,
‘ কি ব্যাপার যূথী ফুল আজ মনে হচ্ছে বেজায় খুশি?কলেজে গিয়ে কাউকে মনে ধরেছে নাকি?’

যূথী ঠোঁট কামড়ে হাসল।

‘ মনীষা আপু দেখো যূথী আপু হাসছে।তারমানে তুমি যা অনুমান করছো সেটাই ঠিক।’

যূথী দূরের বড় বিল্ডিংয়ে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
‘ মনে তো ধরেছে কাউকে।তবে কলেজে গিয়ে নয়।কলেজে মনমতো ছেলে পাওয়া যায় নাকি?সব হল চ্যাংড়াদের দল।’

‘ চ্যাংড়া হোক আর হ্যাংলা হোক।আমরা আর সেদিকে না যাই।এখন ঝটপট বলে ফেলো তো তোমার মনের মানুষটি কে?কে সেই জেন্টেলম্যান যে যূথীর মত দুরন্ত মেয়েকে এভাবে ফাঁসিয়ে নিল!’

মনীষার কথায় যূথী আবারো হাসল।হঠাৎ নিচের দিকে নজর পড়তে যূথী চোখদুটো আনন্দে চকচক করে উঠল।এত ভালো একটা সুযোগ তাঁর সামনে রয়েছে ভাবাই যাচ্ছে না।এটা কাজে না লাগালে পড়ে কপাল চাপড়াতে হবে।যা করার এই মুহূর্তেই করতে হবে।এক্ষুনি!

যূথী মনীষাকে বলল,

‘ এই যে মনী যোগ ষা ইকুয়েল টু মনীষা।তোমার বারান্দার টবের গাছগুলো তো শুকিয়ে আছে।পানি দাও না নাকি?’

যূথীর কথা শুনে দুবোন ভ্রু কুঁচকে ফেলল।যূথী হঠাৎ এক টপিক থেকে লাফ দিয়ে অন্য টপিকে চলে গেল কেনো!

‘ আরে বেহেনা তোমরা চুপ করে আছো কেনো?ওয়াটারিং ক্যান কোথায় রেখেছো বলো।আমিই পানি দিব।’

মনীষা প্রশ্নমাখা চেহারা নিয়ে বলল,
‘ ওই যে ওখানে।কিন্তু পানি দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো করছো কেনো?পরে দিলেও তো হবে নাকি!’

যূথী কোনো উত্তর না দিয়ে ঝটপট ওয়াটারিং ক্যান তুলে বারান্দার দেয়ালের উপর রাখা টবগুলোতে পানি দিতে লাগল।

যূথী যেখানে দাঁড়িয়ে পানি দিচ্ছিল ঠিক সেই বরাবর নিচে নিশান কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল।হঠাৎ করে শরীরে পানির স্পর্শ পেতে চারদিকে ভালোভাবে নজর দিল।এখনো তো চকচকে সোনালি রোদ্দুর তাহলে বৃষ্টি আসবে কোত্থেকে। ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে নিজের অবস্থান বদলে সে আবার কথায় মনযোগী হলো।কিন্তু সেই একই ঘটনা।এবার বিরক্ত হয়ে উপরে তাকাতে তাঁর মুখে অজস্র রাগ হানা দিল।
বারান্দা থেকে যূথী গাছে পানি দিচ্ছে। সেই পানি এসে তাঁর গায়ে লাগছে।
ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটিকে বলল,

‘ আই উইল কল ইউ লেটার।বায়।’

পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে সে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল।কোনো বলা কওয়া ছাড়া উপস্থিত হলো বারান্দায়।
যূথী এতক্ষণ হাসতে হাসতে মনীষাদের সাথে গল্প করছিল।দুবোন একটুও বুঝতে পারেনি যূথী তাঁদের আড়ালে এমন কূটবুদ্ধি প্রয়োগ করে ফেলেছে।তাই নিশানকে রাগান্বিত চেহারা নিয়ে বারান্দায় উপস্থিত দেখে ওরা কিছুটা ভয় পেল।কিন্তু যূথীর চোখে দুষ্টুমির ছাপ!

নিশান যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে যূথীকে বলল,

‘ পানি ফেলেছো কেনো আমার উপর?’

মনীষা বিদীষা কিছু বুঝতে না পেরে অবুঝের মত তাকিয়ে রইল।কিন্তু এটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে যে নিশানের গায়ের খয়েরী টি-শার্টে পানির কণা ছিটিয়ে আছে।

যূথী হাসি চেপে ইনোসেন্ট চেহারা বানিয়ে বলল,

‘ আপনার উপর পানি পড়েছে ভাইয়া? ইস..আমি একটুও খেয়াল করিনি।এখন থেকে সবসময় উপর নিচে ভালোভাবে চেক করে তারপর গাছে পানি দেব।’

নিশান রাগে দাঁত কটমট করে উঠল।
‘ সাট আপ! তুমি কাজটা ইচ্ছে করেই করেছো তা আমি ভালোই জানি।নাউ টেল মি কেনো করেছো এটা?ফাজলামো পেয়েছো?’

‘ হ্যাঁ ইচ্ছে করেই করেছি।কারণ সকালে আপনি আমাদের কলেজে পৌঁছে না দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে গেছেন।আমি খুবই অপমানিত বোধ করেছি।’

যূথী কাঠ কাঠ কথা শুনে নিশান রাগে ফুঁসে উঠল।যূথীর দিকে আঙুল তুলে বলল,

‘ আমার গাড়ি আমার বাড়ি আমি যা ইচ্ছা করব।নেক্সট টাইম আমার সাথে লাগতে আসবে না।নাহলে ফল খুব খারাপ হবে।’

‘ এই আপনি আবার আমায় অপমান করলেন?আমার বাড়ি আমার ঘর এই শব্দগুলো দ্বারা কি বুঝাচ্ছেন আপনি?আর আপনার সাথে লাগতে আসলে কি হবে?আপনি কি গোলাপ গাছের কাটা যে লাগতে গেলে শরীরে ক্ষত হবে!’

নিশান চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে যূথীর দিকে।তাঁর মন চাইছে এই বাচাল ঝগড়াটে মেয়েটাকে একটা পাঞ্চ মেরে বারান্দা থেকে ফেলে দেয়।যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন মেয়েটার শয়তানি বুদ্ধি গুলো প্রকাশ পাচ্ছে।
যূথীকে চোখ দিয়ে শাসিয়ে নিশান বের হয়ে গেল রুম থেকে।মনীষা বিদীষা এতক্ষণ হা হয়ে ওদের তর্ক যুদ্ধ দেখছিল।এইমাত্র যেন রুমের ভেতর ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ বয়ে গেল।বাপরেহ্!

‘ তুমি সত্যিই ভাইয়ার গায়ে পানি দিয়েছো যূথী?এ কারণেই এত তাড়াহুড়ো করে ওয়ারারিং ক্যান খুঁজছিলে?’

‘ হ্যাঁ সকালের ঘটনা আমি এখনো ভুলিনি।নীলু চাচী বলার পরও আমাদের ফেলে চলে গেছিল।কতবড় হিটলার লোক!’

মনীষা বিদীষা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দাঁড়িয়ে রইল।

_____________________________

সকালে নিজের সময়মতো ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করতে এসেছে নিশান।চেয়ারে বসার আগে চারদিকে ভালোকরে সূক্ষ্ম নজর বুলিয়ে নিল।নাহ্ বাচাল মেয়েটা কোথাও নেই।যূথীর উপস্থিতি সে চায় না কখনোই।কিন্তু তা আর হচ্ছে কই।মেয়েটা থেকে যতই দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছে মেয়েটা ততই নানা বাহানায় কাছে চলে আসছে।আর এসব সে ইচ্ছে করেই করছে।

মোবাইলে সময় দেখে খাওয়ায় মনযোগ দিল নিশান।নীলুফা চৌধুরী পাশে দাঁড়িয়ে সকলের খাওয়ার তদারকি করছিলেন।
গ্লাসে জুস ঢালতে ঢালতে বললেন,

‘ নিশান আজ যূথীকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসবি।মনীষা আজ কলেজ যাবে না।যূথী একা কি করে কলেজে যাবে।তাই তুই ওকে সাথে করে নিয়ে যাস।’

গতদিনের মতই নিশান চুপ করে রইল।যূথীর আসা যাওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তাঁর।সে কিছুতেই ওই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে না।তাই চটপট নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে পড়ল।
গাড়িতে বসে ফ্রেশ মাইন্ড নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল।মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছে আজ কোন কাজটা আগে শুরু করবে।তার আগে হিমেশের সাথে জরুরি কিছু কথা বলতে হবে।মোবাইল হাতে নিয়ে কল করতে যাবে ঠিক এমন সময় পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

‘ নিশান ভাইয়া কলেজে লেট হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করুন না!’

নিশান হতভম্ব হয়ে পেছনে ফিরল।যূথী কলেজের ব্যাগ হাতে পরিপাটি হয়ে বসে আছে পেছনের সিটে।মুহূর্তেই নিশানের সতেজ মনটা বিরক্তি তে ছেঁয়ে গেল।

চেহারায় রাগ ফুটিয়ে বলল,

‘ তুমি এখানে কি করছো?’

‘ আমি বসে আছি।’

‘ বসে থাকতে কে বলেছে?এক্ষুনি নেমে যাও।অটো ভাড়া করে চলে যাও কলেজে।’

যূথী মুখ বেঁকিয়ে বলল,
‘ আমি কি রাস্তাঘাট চিনি যে অটোতে চলে যাব?আর আপনার এই বিশাল গাড়ি থাকতে আমি কেনো পায়ে হেঁটে যাব বলুন তো!’

নিশান দাঁত কটমট করে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল।আজ বোধ হয় পুরো দিনটাই তাঁর মাটি হয়ে গেল।

গাড়ি চলছে নিজের গতিতে।পেছনের সিটে বসে গুনগুন করে গান গাইছে যূথী।নিশান নামক পাথরটাকে হেনস্তা করতে পেরে শান্তি লাগছে তাঁর।নিশানের রাগে ফুলে উঠা চেহারা দেখে সে অনাবিল সুখ পাচ্ছে মনে।ভাগ্যিস আজ তাড়াতাড়ি নাস্তা করে আগেভাগেই গাড়িতে লুকিয়ে বসে ছিল নাহলে এই লোকটা আজকেও তাঁকে না নিয়ে চলে যেত।

যূথী এবার গলা পরিষ্কার করে বলল,

‘ আচ্ছা নিশান ভাইয়া এই যে আমি আপনার গাড়িতে এভাবে ঘাপটি মেরে বসে ছিলাম, ধরুন আমার জায়গায় যদি কোনো ক্রিমিনাল হত তখন কি করতেন?আপনাকে যদি পেছন থেকে আক্রমণ করত? ‘

নিশান মুখ শক্ত করে গাড়ি চালাতে লাগল।যূথীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না সে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলেজে নামিয়ে দিতে পারলেই মুক্তি।

নিশানকে নিরুত্তর দেখে যূথী চুপ করে গেল।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার বলল,

‘ আপনার অস্ত্রটা কোথায় নিশান ভাইয়া!শুনেছি আপনার রিভলবারে নাকি বুলেট থাকে!আমাকে একটু দেখান না!’

এবারও নিশান কোনো রেসপন্স করল না।

‘ নিশান ভাইয়া আপনি রাগ করেছেন? ‘

‘ নিশান ভাইয়া আপনি আমাকে কেনো সহ্য করতে পারেন না?’

‘ নিশান ভাইয়া কথা বলুন না!’

নিশান প্রচন্ড জোরে ব্রেক কষল।টাল সমালাতে না পেরে সামনের সিটটাকে খামচে ধরল যূথী।
নিশান তড়িৎ গতিতে বাইরে এসে যূথীর পাশের দরজা খুলে দিয়ে বলল,

‘ বের হও।’

যূথী প্রশ্নমাখা চোখে তাকিয়ে আছে।নিশানের লাল চোখ গুলো দিয়ে যেন আগুনের হলকা বের হচ্ছে।

‘ গেট আউট অফ মাই কার!’

নিশানের প্রচন্ড ধমকে কেঁপে উঠল যূথী।কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসল।আশেপাশের মানুষ গুলো উৎসুক চোখে দেখছে তাঁকে।এবার তাঁর অস্বস্তি লাগছে খুব।
নিচু গলায় বলল,

‘ এখানে কেনো নামিয়ে দিলেন।এটা কোন রাস্তা?’

নিশান শুনতেই পায়নি এমন ভাব নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।যূথী এবার খুব ভয় পেয়ে গেল।জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির কন্ঠে বলতে লাগল,

‘ আপনি চলে যাচ্ছেন কেনো?এটা কোথায় নামিয়ে দিলেন আমায়?আমি তো রাস্তা চিনি না।আমি সরি ভাইয়া।প্লিজ একা ফেলে যাবেন না!’

নিশান চোখে সানগ্লাস গলিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।যূথীর সরি অনুরোধ এসব কিছুই তাঁর কানে ঢুকছে না।

যূথী এবার কাঁদকাঁদ হয়ে বলল,
‘ আর এমন করব না আমি সত্যি বলছি।প্লিজ আমাকে ফেলে রেখে যাবেন না।আমি রাস্তা চিনি না।’

যূথীকে মাঝরাস্তায় ফেলে রেখে নিশান ধুলো উড়িয়ে চলে গেল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here