প্রিয়দর্শিনী,পর্ব:১৪+১৫

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৪
🍁
প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে কোলাহলপূর্ণ রাস্তায় ভীতু চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যূথী।তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না নিশান তাঁকে এভাবে ফেলে রেখে চলে গেল!একটুও দয়া-মায়া নেই উনার মনে?এখন সে এই অচেনা অজানা রাস্তায় কি করবে!আজ মনীষাও আসলো না সাথে।সে থাকলে তো কোনো সমস্যাই হত না।

যূথী একবার ভাবল নীলুফা চাচীর কাছে কল দিবে কিন্তু তাঁর তো এই রোডের নাম জানা নেই।তাঁর মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল।আজ বোধ হয় নিশান ভাইয়াকে সে অনেক রাগিয়ে দিয়েছে।কেনো যে এত প্রশ্ন করতে গেল!ওই পাথর মানবের মনে জায়গা করে নেওয়া সহজ হবে না।শুরুতেই যদি এভাবে হুটহাট রাগিয়ে দেয় তাহলে তো উনি তাঁর থেকে আরো দূরে সরে যাবে।এমনিতেই নিশান ভাইয়া তাঁকে বিরক্তিকর মনে করে।এখন থেকে আর উনাকে জ্বালাতন করা যাবে না।

‘ কি ম্যাডাম! কাউকে খুঁজছেন নাকি?’

পাশ থেকে ফ্যাসফ্যাসে গলার আওয়াজ পেতে সেদিকে তাকাল যূথী।লম্বা হ্যাংলা ধরনের একটা ছেলে দাঁত বের করে হাসছে।চেহারা দেখলেই বুঝা যায় বখাটে ছেলে এটা।যূথী মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফিরল।
কিন্তু ছেলেটা আবার বলল,

‘ তখন গাড়িতে ওইটা আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিল নাকি?ঝগড়া হয়েছে?দূর থেকে দেখলাম হুমকি ধমকি দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল!’

যূথী মুখ ভেঙচিয়ে বলল,

‘ ভালো করেছে হুমকি ধামকি দিয়েছে।এতে আপনার সমস্যা কোথায়?’

‘ না মানে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম।আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই রোডটা আপনি চেনেন না।তো বলুন কোথায় যাবেন।আমি সাহায্য করি।’

‘ আমি কি আপনার থেকে সাহায্য চেয়েছি?একটু পর আমার হাসবেন্ড নিতে আসবে আমাকে।যান ফুটেন এখান থেকে।’

‘ ম্যাডাম মনে হচ্ছে তেজ দেখাচ্ছেন বেশি?এই এলাকা টা কিন্তু আমার।এখানে আমার কথাই শেষ কথা।’

যূথী বিরক্তমুখে বলল,

‘ আরে ভাই আমি কখন বললাম এটা আমার এলাকা?কেনো শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে গীত গাইছেন?আপনার মুখ থেকে প্রচুর বাজে গন্ধ বের হচ্ছে। দুইহাত দূরে দাঁড়িয়েও গন্ধ আমার নাকে লাগছে।পচা পানি খেয়েছেন নাকি?যান গিয়ে নিজের কাজ করুন।এমনিতেই আমার মাথা গরম হয়ে আছে।’

ছেলেটি মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইল।এই মেয়েটি এমন সহজ সাবলীল ভাষায় তাঁকে অপমান করে গেল এর উত্তরে সে কেনো জানি কিছুই বলতে পারছে না।

এমন সময় হঠাৎ যূথীর সামনে একটা হোয়াইট প্রাইভেট কার এসে থামল যা দেখে হাসি ফুটল যূথীর মুখে।
ফুল এটিটিউড নিয়ে নিশান বেরিয়ে এসে বলল,

‘ গাড়িতে উঠো যূথী।’

যূথী কিছুটা অবাক হলেও বখাটে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

‘ বললাম না আমার হাসবন্ড চলে আসবে!আপনি জানেন উনি কে?উনার পরিচয় জানলে এক্ষুনি লেজ গুটিয়ে পালাবেন।’

হাসবেন্ড শব্দটা শুনে নিশান ধাক্কার মত খেল।কিন্তু পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে কিছু বলল না যূথীকে।
যূথী মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে উঠল।বাকি রাস্তায় সে টু শব্দও করেনি।
কলেজের সামনে গাড়ি পৌঁছতে যূথী নামতে যাবে এমন সময় নিশান বলল,

‘ এটা তোমার গ্রাম নয়।এখানে যারতার সাথে রাস্তাঘাটে আলাপ না জমানোই ভালো।’

যূথী নিশানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলল,

‘ আপনিও মনে রাখবেন এটা গ্রাম নয় যে যখন তখন যেখানে সেখানে আমাকে ফেলে চলে গেলে আমি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি পৌঁছে যাব।’

_________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে যূথী জানতে পারল আজ বিদীষার জন্মদিন। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ায় তাঁর জন্মদিন প্রতি বছরই হৈচৈ করে সেলিব্রেট করা হয়।তাই এবারও হবে।
ঘুম থেকে উঠার পরই বিদীষা সারা বাড়ি নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে। জন্মদিন সেলিব্রেট করা হবে এই খুশির চেয়ে জন্মদিনে গিফট পাওয়া নিয়ে সে বেশি উত্তেজিত।

অন্যদিকে যূথী উপরতলা নিচতলা ঘুরঘুর করে যাচ্ছে যদি একবার কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখা যায়।আজ তো ছুটির দিন।তাহলে বাড়িতেই থাকার কথা।কিন্তু সে তো লোকটার ছায়াও খুঁজে পাচ্ছে না।
ভেবেছিল ডাইনিং টেবিলে দেখা পাবে।কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হলো।

মনীষা যূথীর ছটফটানি ভাব লক্ষ্য করে বলল,

‘ কি ব্যাপার যূথী? তুমি কাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছো?’

যূথী নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিল,
‘ কাকে আবার তোমার ভাইকে।মিস্টার নিশান ব্রো কে।’

‘ তাই?কোনো জরুরি দরকার নাকি?’

যূথী চোখের কোণা দিয়ে মনীষার দিকে তাকাল।মনীষার চেহারায় সন্দিহান দৃষ্টি।
যূথী আমতাআমতা করে বলল,

‘ আসলে গতকাল কলেজ থেকে আসার সময় একটা ছেলে রাস্তায় আমাকে বাজে কথা বলেছিল।তাই নিশান ভাইয়াকে দিয়ে ওই বজ্জাতটার হাড় গুড়ো করার কথা ভাবছিলাম। ‘

যূথী মনে মনে বিরক্ত হলো।আবারো একটা মিথ্যা বলতে হলো তাঁকে।কেনো যে মুখ ফসকে বলে ফেলল নিশান ভাইয়াকে খুঁজছে।এখন থেকে আরো সাবধান থাকতে হবে।এই দুবোন তো এমনিতে ভালো কিন্তু সত্যি কথাটা জানতে পারলে যদি ঢোল পিটিয়ে বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দেয়?

.

সন্ধ্যা হতে বাড়ির হলরুমে বার্থডে সেলিব্রেশনের আমেজ শুরু হয়ে গেল।বিদীষার বন্ধু-বান্ধবে মুখরিত হয়ে আছে আশপাশ।
যূথী জুসের গ্লাস হাতে মনীষার সাথে এককোনায় বসে আছে।বিগত এক ঘন্টা ধরে তাঁর দৃষ্টি মেইনডোরের দিকে। মনীষা টুকটাক কথা বলছে তাঁর সাথে।

‘ যূথী কালো ড্রেসে তোমাকে দারুণ লাগছে কিন্তু। তবে জন্মদিনে কালো ড্রেস কেনো পড়লে?কেমন যেন শোক দিবসের মত লাগছে।’

‘ আরে তেমন কিছু না।কালো আমার পছন্দের রঙ।তুমি খেয়াল করলে দেখবে আমার ব্যবহৃত বেশিরভাগ জিনিস কালো।’

‘ এত রঙ থাকতে কালো রঙ কেনো পছন্দ তোমার?’

‘ আমি কি করে বলব বলো। আমার ব্রেইন যে রঙে ভালোলাগার সিগন্যাল দেয় সেই রঙই তো পছন্দ হবে নাকি!’

যূথীর কথায় হাসল মনীষা।

.

বসে থাকতে থাকতে একসময় বিরক্ত হয়ে গেল যূথী।ওই লোক কি আজ বাড়ি ফিরবে না?এতই ব্যস্ত উনি?মনে মনে নিশানের উদ্দেশ্যে কয়েকটা গালি ছাড়ল যূথী।হাতের গ্লাস রেখে উঠতে যাবে এমন সময় দেখল তাঁর প্রিয় মানুষটি ভেতরে প্রবেশ করেছে।বিরক্তি ভরা মনটা মুহূর্তেই আনন্দে ছেঁয়ে গেল।কিন্তু যখন দেখল নিশানের পিছন পিছন অতি মাত্রার সুন্দরী একটি মেয়েও হাজির হয়েছে সাথে সাথে নিভে গেল সে।প্রথমে বিষয়টাকে পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেল।কারণ নিশান সেই হাইহিল পড়া মর্ডাণ মেয়েটার সাথে মুচকি হেসে কথা বলছে।কই তাঁর সাথে তো কখনো হেসে কথা বলে না।উল্টে রেগে বোম্ব হয়ে যায়।

যূথী মনীষাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,
‘ দেখোতো ওই মেয়েটা কে?ওই যে নিশান ভাইয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে!’

‘ ওটা তো সামিরা আপু।ভাইয়াদের ডিপার্টমেন্টে জব করে।দাঁড়াও আপুর সাথে আমি একটু কথা বলে আসি।আমাকে খুব ভালোবাসে।’

মনীষা চলে গেল নিশানদের কাছে।যূথীর মনের ভেতর এবার আঁধার নেমে এল।হঠাৎ করে কেনো জানি খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। চারিদকে যে যার মত হাসাহাসিতে মশগুল।একমাত্র যূথীই একা।এই বিষয়টা তাঁর সবচেয়ে খারাপ লাগছে।নিশানের দিকে একঝলক তাকিয়ে চলে গেল নিজের রুমে।

চলবে…

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৫
🍁
ঘর কাঁপিয়ে মোবাইল বেজে উঠার রিংটোনে ধ্যান ভাঙলো যূথীর।এতক্ষণ রুম অন্ধকার করে বসেছিল।ফোনের স্ক্রিনে মনীষা নামটা দেখে রিসিভ করল সে।

‘ হ্যাঁ মনীষা বলো।’

‘ যূথী তোমাকে নিচে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?কোথায় তুমি?এখনি কেক কাটবে।জলদি আসো।’

‘ মনীষা আমার ভালো লাগছে না।মাথা ধরেছে খুব।আমি কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে এরপর আসব কেমন?’

‘ মাথা ধরেছে মেডিসিন নাও।তুমি কি নিজের রুমে আছো?আমি আসছি দাঁড়াও।’

‘ না না।ওষুধ লাগবে না।একটু ঘুমিয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ আর ইউ সিউর?’

‘ একদম।’

.

প্রায় আধাঘন্টার মত বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে উঠে পরল যূথী।এখন মনে হচ্ছে নিচে হলরুমে থাকলেই ভালো হত।রুমে থাকতে খুবই বোরিং লাগছে।নিশান ভাইয়া নিশ্চয়ই নিচে আছেন। সাথে ওই হাইহিল পড়া রমণী।ওদের একটু নজরে নজরে রাখা উচিত।বলা তো যায় না ওই রমণী যদি তাঁর নিশান ভাইয়াকে জাদু টোনা করে নিজের জালে ফাঁসিয়ে নেয়!

গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসল যূথী।মোবাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে।উপরে দাঁড়িয়েই নিচতলায় উঁকি মারল।নিশান এবং সামিরাকে কোথাও দেখা গেল না।সবাই এখন খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিশানকে ডাইনিং টেবিলেও নজরে আসলো না।নীলুফা চৌধুরী যূথীকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়িয়ে ডাকলেন।যূথী মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল ‘আসছি’।

‘ গ্রামের মেয়ে আমার পছন্দ না। ‘

করিডোর দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ এমন একটা কথা শুনে যূথীর পা থেমে গেল। সাথে সাথে দুই ভ্রু কুঁচকে এল।কারণ উক্ত কথাটি নিশান বলেছে।নিশানের রুম থেকে হাসাহাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যূথী আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে নিশানের রুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়াল।দরজা হালকা খোলা থাকায় ভেতরের কথাবার্তা সব শুনতে পাচ্ছে সে।

সামিরা নামের মেয়েটি হাসতে হাসতে বলছে,
‘ নিশান তুমি বলেছিলে শহরের মেয়েদের তোমার ভালো লাগে না।ওঁরা নাকি মেকাপের আস্তরণে নিজেদের ঢেকে রাখে।তো গ্রামের মেয়ে কি দোষ করল বলো তো?ওঁরা তো শহরের মেয়েদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।’

দরজার পাশে দাঁড়ানো যূথীর বুক ধুকপুক করছে।নিশানের উত্তর শোনার জন্য আরেকটু চেপে এল দরজার কাছে।

নিশান গুরুগম্ভীর গলায় বলল,
‘ স্টপ সামিরা।ইউ নো আমার এই টপিক নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।’

‘ বললেই হলো?বিয়েসাদী করবে না নাকি?আমি কত করে বলেছিলাম বিয়ে করে নাও আমাকে।কিন্তু তুমি সরাসরি আমায় রিজেক্ট করে দিলে।আমি কি দেখতে খারাপ ছিলাম?’

কথাটা বলেই সামিরা উচ্চ শব্দে হাসতে লাগল।যূথীর পা দুটো অসাড় হয়ে আসছে।নিশান ভাইয়ার গ্রামের মেয়ে পছন্দ নয় এজন্যই তাঁকে দেখলে বিরক্তি বোধ করে। তাঁর থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে চায়।এখন নিশ্চয়ই সামিরা মেয়েটাকে বিয়ে করে নিবে উনি।দুজনের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক মনে হচ্ছে। নিশান ভাইয়াকে তো আর কারো সাথে এমন হেসে কথা বলতে দেখা যায় না কখনো।

যূথীর ছোট্ট দুনিয়া আষাঢ়ের মেঘের মত কালো হয়ে আসলো।মাথার ভেতর কে যেন হাতুড়িপেটা করছে।তাঁর ইচ্ছে করছে একটান দিয়ে মাথাটা খুলে দূরে কোথাও ঢিল মেরে ফেলে দেয়।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।সিড়ি দিকে না গিয়ে সে আবার ফিরতি পথে রুমের দিকে রওনা হলো।

.

ড্রয়িংরুমের আশেপাশে যূথীর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে মনীষা বিদীষাকে ডেকে বলল,

‘ চল্ তো দেখে আসি যূথী রুমে কি করছে।আমার মনে হচ্ছে ও কোনো কারণে নিচে আসতে চাইছে না।মাথা ব্যথার বাহানা দিয়ে রুমের ভেতর বসে আছে।’

দুবোন কথা বলতে বলতে হাজির হলো যূথীর রুমে।বেশ অবাক হয়ে গেল ওঁরা। পুরো বাড়ি আলোয় আলোকিত হয়ে আছে আর যূথীর রুম অন্ধকার। বিদীষা দেয়াল হাতড়ে সুইচ খুঁজে পেতে জ্বালিয়ে দিল।যূথীর রুম ফাঁকা।
মনীষা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ ওই যে বারান্দায় বসে আছে।আমি এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি। ‘

দুবোন বারান্দায় গিয়ে হতবাক হয়ে গেল।যূথী হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।ওঁরা কিছুই বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হয়ে গেল মেয়েটার।
বিদীষা যূথীর পাশাপাশি বসে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,

‘ কি হয়েছে আপু?খুব বেশি মাথা ব্যথা করছে?’

যূথী কোনো উত্তর না দিয়ে আগের মতই নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
মনীষা এবার বলল,

‘ মাথা ব্যথা নয়।ওর অন্য কারণে মন খারাপ। নিশ্চয়ই বিরাট কোনো কারণ।যূথী তুমি আমাদেরকে নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো।আমরা কাউকে বলব না।’

মনীষার কথা শুনে যূথী ইতস্তত করতে লাগল বলবে কি বলবে না।যদি ওঁরা তিল থেকে তাল বানিয়ে পুরো বাড়ি রটিয়ে দেয়!

‘ বলো যূথী।আই প্রমিজ আমরা সব সিক্রেট রাখব।’

যূথী হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল।কোমড় সমান দেয়ালের উপর দুই হাত রেখে বলল,

‘ আমি নিশান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি মনীষা।জানি এটা তোমাদের কাছে একটা অপ্রত্যাশিত ব্যাপার।তবুও এটাই সত্যি। আমি ভালোবাসি ওই পাথর মানবকে।’

যূথীর কথা শুনে বারান্দার পরিবেশ নীরব হয়ে গেল।যূথী পেছন ফিরে মনীষার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।কে জানে দুবোনের চেহারার রিয়্যাকশন কেমন হয়ে আছে।ওঁরা বোধ হয় এখন তাঁকে নানা অপমানসূচক কথা শুনিয়ে ছাড়বে।

একসময় কাঁধে নরম হাতের স্পর্শ পেতে ঘুরে দাঁড়াল যূথী।

‘ আমরা আগেই বুঝতে পেরেছি তোমার মনে নিশান ভাইয়াকে নিয়ে কিছু একটা আছে।’

মনীষার কথা শুনে চকিতেই যূথী মাথা তুলল।মনীষা মুচকি হেসে বলল,

‘ ভাইয়া যখন তোমার সামনে থাকত তখন তোমার চোখেমুখে একধরনের উজ্জ্বল আভা দেখতে পেতাম।ভাইয়া যখন বাড়িতে থাকত না তখনও তোমার দুচোখ কাউকে খুঁজে বেড়ায়।কারণে অকারণে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া লাগার চেষ্টা করতে।এগুলো আমরা কিছুদিন আগেই খেয়াল করেছি।কিন্তু তোমাকে কিছু বুঝতে দেই নি।কারণ আমরা দুবোন তোমার এই ছোট ছোট পাগলামি গুলো বেশ উপভোগ করতাম।’

এবার যূথীর মুখে শুষ্ক হাসি দেখা গেল।যাক এই দুবোন তাহলে তাঁর অনুকূলেই আছে।
হাসি থামিয়ে যূথী শুকনো মুখ করে বলল,

‘ তোমাদের ভাই সামিরা মেয়েটাকে বিয়ে করবে তাই না?তখন দেখলাম দুজনায় খুব হাসাহাসি করছে।’

‘ কাম অন যূথী।সামিরা আপু ম্যারিড।উনাকে নিশান ভাইয়ার সাথে জড়াচ্ছো কেনো?আপুর আরো তিনবছর আগে বিয়ে হয়ে গেছে।’

বিদীষার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল যূথী।একটা বিবাহিত মেয়ের সাথে তাঁর প্রিয় মানুষটাকে মিলিয়ে দিচ্ছিল।ইস্!

মনীষা বড়দের মতো গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ এখন সর্বপ্রথম যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো তুমি তোমার মনের কথা ভাইয়াকে বলে দাও।তোমাকে নীলু চাচীও বেশ পছন্দ করে।তাই কোনো ঝামেলা হবার কথা নয়।’

যূথী রাতের আকাশের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করল।আনমনা হয়ে বলল,

‘ আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তবে নিশান ভাইয়া সব জানে।এমনকি তোমাদের অনেক আগেই জানে।’

‘ ও মাই গড! সত্যি বলছো যূথী?’

‘ হ্যাঁ।কিন্তু উনি তো গ্রামের মেয়ে পছন্দ করেন না।এই বিশেষ খবরটি আমি কিছুক্ষণ আগেই জানতে পারলাম।’

যূথী চোখদুটো আবার ছলছল করে উঠল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here