প্রেমরোগ পর্ব -১৯+২০

#প্রেমরোগ-১৯
#তাসনিম_তামান্না

নতুন একটি দিন কারোর জন্য খুশির আবার কারোর জন্য দুঃখের। চৌধুরী বাড়ির সকলের ছন্ন ছাড়া অবস্থা। নাওয়া খাওয়া সব ভুলে বসে আছে। ড্রাইংরুম সকলে মনমরা হয়ে বসে ছিল। তিশা বলল
” এভাবে হলে চলবে কি ভাবে? তোরা তো ম রে যাবি। বাঁচতে হবে তো তোদের। ওরা কি ওদেরকে এভাবে দেখে খুব ভালো আছে? খাওয়া দাওয়া না চল সকালে কেউ খাস নি ”
কুশান তিশার কথায় কুয়াশা, মেঘা, মেঘ, পাখি কে ধ ম কে খাওয়াতে বসালো। খেতে বসে কারোরই গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কুশান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” মৃ ত্যু অনিবার্য। আমাদের সবাইকে একদিন না একদিন ছেড়ে চলে যেতে হবে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। তাই বলে কি এভাবে থেমে ভেঙে পড়লে চলবে? আব্বু আম্মু মামনি বাবাই আমাদের এভাবে কখনো দেখতে চাইতো না। তারা আমাদের কে এভাবে দেখে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা তারা ভালো থাকবে। আমরা এভাবে থাকলে তারা কিভাবে থাকবে? আমাদের ভাগ্যে এমন ছিল তাই এমনটা হয়েছে। তাই ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে আমাদের এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ”
কেউ একটা কথাও বলল না কুশান সবার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো
” কাল থেকে যে যার কাজে যাবি কাউ বাসায় থাকবি না কাজের মধ্যে থাকলে ভালো লাগবে। মেঘ কাল থেকে অফিসে যাবি। কুয়াশা মেঘা কাল থেকে ইউনিভার্সিটিতে যাবি সামনে এক্সাম ভালো ভাবে দিতে হবে না হলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম আব্বু বাবাই কষ্ট পাবে কথাটা মাথায় রাখিস ”
মেঘা বলল ” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া সবাইকে খুব মিস করছি। আম্মু বকা দিকে রাগ হতো এখন খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া ”
কুশান মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
” সবটা মেনে নিতে হবে বোনু ”
তুষার রা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। দিন যায় নতুন একটি দিন আসে…এই মাস শেষে রোজা শুরু পাখি আর তুতুল কাজে হাত লাগিয়েছে। আগের রোজা গুলোই সবটা শাশুড়িরা গুছিয়ে রাখতো বাসার বা রান্নার কাজ তেমন করতো না পাখি। তুতুল শাশুড়ীদের তেমন কাছে পেলো না। এখন তুতুল আর পাখির ই সংসার ওরা না গোছালে কে করবে। কুয়াশা মেঘা নিজেদের ঘরবন্দী করে রাখেছে। কেউ তেমন কারোর সাথে কথা বলে না। আগের মতো হাসি মাজ হয় না আর এ বাড়িতে। মানুষগুলোর সাথে যেনো সব কিছু হারিয়ে গেছে।
পাখির মা পাখিকে কাজ করতে দেখে বলল
” এই তুই কাজ করছিস কেনো? এই অবস্থায় ”
পাখি মোলায়েম কন্ঠে বলল ” কিছু হবে না তুমি গিয়ে রেস্ট নাও ”
” তুই এই অবস্থায় কাজ করবি কেনো? তোর ধিং গি ননদ দুইটা কর। নবাবের বেটির মতো ঘরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে? আর আমার মেয়ে এই অবস্থায় খেটে ম র বে? এসে তো কাজ করে দিতে পারে না-কি? ”
পাখি রেগে গেলো ” কি বলছ এগুলা? ওরা ছোট্ট কি করবে? আর আমি কেনো ওরা কাজ করবে? ”
” ছোট্ট ওরা? কুয়াশার বিয়ে হয়ে গেছে তবুও কেনো ও এখানে থাকে? আমার মেয়ের হাড় মাস জ্বালাতে? মেঘার ও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে এতোদিনে বিয়ে হলে ওদের বাচ্চা কাচ্চা হয়ে যেতো! আর তুই কি না ওদের ছোট বলছিস ”
পাখি তার মায়ের কথায় বিরক্ত হচ্ছে খুব বিরক্তি নিয়ে বলল
” তুমি আমার সংসারে নাক গলাতে এসো না মা। আমার টা আমাকে বুঝতে দাও। আর তুমি এসেছ ঘুরবে, খাবে, চলে যাবে তুমি কেনো এসব নিয়ে কথা বলবে? ”
কুয়াশা সিরিতে দাড়িয়ে পাখির মায়ের বলা প্রতিটা কথা শুনলো। চোখ ছলছল করে উঠলো। নিজেকে সামলিয়ে কিচেনে এসে। একটা কথাও প্রতি উত্তর করলো না বলল
” ভাবিপু তুমি গিয়ে রেস্ট করো আমি দেখছি তুতুল ভাবিপু তো আছেই ”
পাখি রেগে মায়ের দিকে একবার তাকালো পাখির মা মুখ বেকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। পাখি বলল
” তুই তুতুল তো কিছু ই পারিস না আমি করছি তো ”
পাখির মা বলে উঠলো ” পারে না তো শিখবে না? ওরা কি সংসার করবে না? তুই সারাজীবন এভাবে সবার জন্য গাধার খাটুনি খাটে যাবি? ”
” আহ মা তুমি যাও তো আমাদের মধ্যে কেনো কথা বলছো তুমি ”
” আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি। এভাবে করতে থাকলে সকলে মাথায় উঠে বসবে ”
” তোমাকে আমার ভালো করতে বলছি আমি। উল্টো তুমি আমার সংসার ভেঙে দিচ্ছো। আমার সংসারে আ গু ন লাগাচ্ছো! ”
পাখির মা রেগে বলল ” তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি? মা’রা কখনো ছেলেমেয়েদের খারাপ চাই? আমি তোর ভালোর জন্য ব… ”
পাখি তার মাকে থামিয়ে বলল
” ব্যাস বললাম না আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না আমাকে আমারটা বুঝতে দাও ”
পাখির মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। পাখি বলল ” মার কথায় কিছু মনে করিস না আসলে মা একটু… আমি মার হয়ে ক্ষমা চাইছি ”
তুতুল এতোক্ষণ চুপ ছিল। পাখির কথায় তুতুল কুয়াশা একসাথে বলল ” এমন ভাবে বলো না ভাবিপু ”
কুয়াশা বলল ” তুমি গিয়ে রেস্ট করো আমরা সামলাচ্ছি ”
পাখি বলল ” মার কথায় রাগ করেছিস? ”
তুতুল বলল ” রাগ করবো কেনো? ওনি তো ঠিকি বলেছেন। আমাদের ও তো শিখতে হবে না-কি সব কি তুমি করবে না-কি? ”
” আমি করে নিবো। তোদের হাত কে টে বা পু ড়ে গেলে ব্যথা পাবি ”
কুয়াশা বলল ” কিছু হবে না তুমি যাও তো আমরা আজ তিনজন মিলে রান্না করবো ভালো না হলেও খেতে হবে বলে দিলাম ”
পাখিকে একপ্রকার জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলো। তুতুল কুয়াশাকে বলল
” কুয়াশা মন খারাপ করো না। আন্টি একটু অন্য রকম ”
” আরে ওসব বাদ দাও তো কি রান্না করবে সেটা বলো দাঁড়াও মেঘা কেও ডাকি ”
তুতুল, কুয়াশা, আর মেঘা মিলে ইউটিউব দেখে একপ্রকার যুদ্ধ করে আলুভাজি, বেগুন, গরুর মাংস রান্না করলো। পাখি রুমে বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না। বার বার রান্নাঘরে এসে দেখে যাচ্ছে। ওরা সকলে মানা করলেও শুনলো না। দুপুরে সকলে খেতে বাসায় আসলে পাখি বলল
” খেয়ে বলো কেমন হয়েছে আজ কিন্তু তুতুল, কুয়শা, মেঘা মিলে রান্না করেছে ”
মেঘ বলল ” তাই না-কি বাহ! তাহলে তো এ খাবার খাওয়ায় যাবে না ”
কুয়াশা মেঘা বা তুতুল কেউ কোনো প্রতিউত্তর করলো না। কুশান খেয়ে বলল ” ভালো হয়েছে। কিন্তু তোদের রান্না করার দরকার নাই আমি কাল থেকে বুয়া আসতে বলেছি ”
কুয়াশা বলল
” তার কোনো দরকার নেই ভাইয়া আমরাই করে নিবো ”
” সেটা আমাকে বুঝতে দে ”
পাখির মা বলল ” কুশান বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ”
কুশান বলল ” জী বলুন ”
” আমি পাখি কে আমার কাছে নিয়ে যেতে চাই সামনে রোজার পড়ছে। আমি থাকতে পারবো না আর এই সময় মেয়েদের মায়ের দরকার হয় ”
ঘরভর্তি সকলের মুখে বিস্ময়। পাখি প্রতিবাদ করে বলল ” আমি আমার সংসার ছেড়ে যাচ্ছি না মা তোমার যাওয়ার হলে তুমি যাও ”
” তোকে নিয়ে যাবো আমি ”
” বললাম না যাবো না ”
” কুশান বাবা তুমি কিছু বলো ”
” পাখি যেহেতু যেতে চাইছে না জোর না করায় ভালো। তাছাড়া বাসার সবাই আছে ওকে দেখে রাখবো। আপনি চিন্তা করবেন না ”
পাখির মা রাগে মনে মনে গজগজ করতে লাগলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রেমরোগ-২০
#তাসনিম_তামান্না

সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য থেমে থাকে না। তারা নিজের আপন গতিতে চলে। দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে গেলো। রোজার প্রায় শেষের দিকে চারিদিকে ঈদের রং লেগেছে। হইহই করছে। ধুমছে শপিং চলছে। সারা মার্কেট জুড়ে। কুয়াশা এবার ঈদে শপিং করে নি। কুশান তবুও সকলের জন্য যা পেরেছে কিনে এনেছে। চারজনের মৃ ত্যু তে সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছিল। একটু একটু করে সকলে স্বাভাবিক হলেও মনে ক্ষ ত রয়ে গেছে। আগের মতো জমজমাট নেই বাড়িটা। তুষার কুয়াশার তেমন একটা দেখা বা কথা হয় না। কুয়াশার সামনে এক্সাম ঈদের একমাস পরেই ও মন দিয়ে পড়ছে। মনে মনে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে। তুষারদের আজ কুয়াশাদের বাসায় ইফতারে দাওয়াত ছিল।
ইফতারে সব আয়োজন তুতুল, মেঘা, কুয়াশা মিলে করেছে। এই ক দিনে ওরা অনেক রান্নায় শিখে গেছে। এটা শুনে তিশা অনেক অবাক হলেন। মেয়েগুলো হুট করে বড় হয়ে গেছে।
” এতো কিছু তোরা করেছিস? আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। ”
তুতুল প্লেট ইফতারি দিতে দিতে বলল
” বিশ্বাস না করার কি আছে আম্মু। আমরা তো এখন আর ছোট নেই বড় হয়ে গেছি ”
” কিন্তু মা-বাবার কাছে তোরা সবসময় ছোট-ই থাকবি ”
কুয়াশা পানিতে চিনি দিয়ে ট্যাক মিক্স করছে। মেঘা বেগুনি ভাজছে। একটু পর একে একে সকলে এসে টেবিলে বসলো। ইফতারি শেষে নামাজ পরতে গেলো সকলে। কুয়াশা নামাজ শেষ করে ছাদে গেলো। আকাশে চাঁদ নেই। চারিদিকে কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। তুষার নামাজ পরে এসে বাসার সমানে দাড়িয়ে দেখলো ছাদে কালো আবয়ব দেখে বুঝে গেলো এটা কুয়াশা। দৌড়ে ছাদে আসলো কুয়াশা তখন দোলনায় বসেছে। কারোর ধুপধাপ পায়ে আসায় একটু চমাকলো তুষারকে দেখে কিছু বলল না। তুষার কুয়াশার পাশে বসে বলল
” এখনো মন খারাপ করে আছো? এবার তো একটু নরমাল হও ”
কুয়াশা তুষারের কথার উত্তর না দিয়ে বলল
” আপনি না-কি চলে যাবেন? ”
” হ্যাঁ ঈদের ১ সপ্তাহ পর… ”
” ওহ। কেনো আরও যে একমাস ছুটি ছিল ”
” ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ পড়ে গেছে অফিস থেকে ফোন দিচ্ছে আমাকে ছাড়া কাজটা হবে না ”
” ও ”
” তোমার তো সামনে এক্সাম প্রিপারেশন কেমন? ”
” মোটামোটি ভালোই ”
” ঈদের দিন রেডি থেকো ”
” কেনো? ”
” তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসবো। তুমি তো তেমন বাসা থেকে বের হও না ”
” আমি কোথাও যাবো না। ”
” কাম ওন কুয়াশা ভাগ্য কে মেনে নিতে শিখ। মুভ অন করো ঘুরাঘুরি করলে ভালো লাগবে ”
” বললাম না যাবো না ”
” এক সপ্তাহ পর চলে যাবো তখন আমাকে চাইলেও পাবে না ”
কুয়াশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ” কোথায় যাবেন?
” গেলেই দেখতে পাবে”
ঈদের দিন চৌধুরী বাড়িতে কোনো আনন্দ নেই তবুও আজ ঈদ। লাচ্চা, সেমাই, নবাবি সেমায়, পাস্তা, নুডলস, ফালুদা, পুডিং…. রান্না করেছে ওরা তিনজন মিলে পাখিকে কোনো কাজে হাত দিতে দেয় এখন আর ওরা। আজ রিদ এসেছে সকলে শাওয়ার নিচ্ছে কুশান, মেঘ এখনো ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে নি বাবা-মায়ের ক ব রের জিয়ারত করতে গেছে। মেঘা আগেই শাওয়ার নিয়ে ছিল। কালিংবেল বাঝতেই দরজা খুলে রিদ কে দেখে অবাক হলো না রিদ প্রতি ঈদেই ওদের বাসায় আসে। বাবা-মায়ের মৃ”ত্যু দিন রিদ ছিল কিন্তু কথা হয় নি। তারপর আরো কয়েকবার রিদ এসেছিলো সকলের সামনে কথা বলে নি না সুযোগ পাই নি মেঘা ই সুযোগ দেই নি বলতে গেলে।
রিদ হাসি মুখে বলল ” কেমন আছো? ”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি? ”
” হুম ভালোই। ”
” বসুন ভাইয়ারা এখনো ফিরে নি। ”
” ওহ। তুমি কেমন শুকিয়ে গেছো! ”
” হয়ত! ”
” ফোন দাও নি কেনো আর? ”
” আপনি বিরক্ত হন যে… ”
” আমি দিয়েছিলাম ধরো নি কেনো? ”
” ইচ্ছে হয় নি ”
মেঘার কথার পিঠে কি করবে রিদ আর খুঁজে পেলো না। মেঘা চলে গেলো। ট্রে-তে করে খাবার আনলো। রিদ বলল
” ঈদের কোনো প্লান নেই? ”
” নাহ্ ”
” কেনো? ”
” ইচ্ছে করে নি ”
” তুমি ঠিক আছো মেঘা তোমাকে কেমন অচেনা লাগছে ”
” বদলেছি যে তাই ”
” হুম দেখছি বড্ড বদলে গেছো। ভালোবাসা রং ও কি বদলে ফিকে হয়ে গেছে ”
” যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে রং কোথা থেকে আসবে? ”
” সত্যি কি নেই? ”
” আপনিই ভালো জানেন ”
” বাহ! কথা শিখে গেছো দেখছি ”
” তা তো বটেই ”
কুশান মেঘ চলে আসলো। রিদের সাথে গল্প জুড়ে দিলো। বিকাল বেলা তুষার আসলো কুয়াশা কে নিয়ে বের হবে বলে। তুতুল, মেঘা কেও ওদের সাথে যেতে বলল গেলো না। কুয়াশা তুষার রিকশা করে আসেপাশে ঘুড়লো। ফুচকা খেলো। দুজনে নির্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি সাই-সাই করে চলে যাচ্ছে। কুয়াশার নিজেকে হালকা অনুভব করলো। মাথার ওপর থেকে যেনো ভারি বস্তু নেমে গেলো। তুষার কুয়াশার হাত আঙ্গুলে ফাঁকে হাত গলিয়ে আকরে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল
” কেমন ফিল হচ্ছে? ”
” নিজেকে হালকা লাগছে ”
” বলেছিলাম না ঘুরাঘুরি করলে ভালে লাগবে। মন খারাপ হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। ঘুরাঘুরি করবে ”
” হুম ফ্রেন্ডরা অনেকবার বলেছিল যেতে ইচ্ছে করেনি ”
তারপর চোখের পলকে একসপ্তাহ কেটে গেলো তুষার চলে গেলো। কুয়াশা মেঘা ফুল দমে পড়াশোনা শুরু করলো এক্সামের জন্য। দিন যায় দিন আসে…
দেখতে দেখতে কুয়াশা মেঘার পরিক্ষা শেষ। কুয়াশা তুষারের ফোন আলাপ হয় খুব কম দুজনেই দুই দিক থেকে ব্যস্ত। রিদ এখন মাঝেমধ্যে মেঘার কাছে ফোন দেয় টুকটাক দুজনের কথা হয়। মাঝেমধ্যে আবার কথা বলতে বলতে রাত পেরিয়ে যায়। ঈশান নতুন ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। ঈশান উমার বাড়ির থেকে কেউ ওদের বিয়ে মেনে নেয় নি। ওরা দুজনের সংসার পেতেছে সুখেই আছে। কুরবানির ঈদ চলে গেলো তুষার ১৫ দিনের জন্য এসেছিল কিন্ত ব্যস্ত থাকার কারণে কুয়াশার সাথে তেমন কথা হয় নি। পাখির ডেলিভারি ডেট এগিয়ে আসছে। পাখিকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো। পাখির মা এসেছে। তিনি যে কুয়াশাকে পছন্দ করে না কুয়াশা বেশ বুঝতে পেরে পাখির মার থেকে দূরে দূরে থাকে। আগে তিনি এমন ছিল না কি মিষ্টি করে কথা বলত আর এখন কথায় বলে না যখন তাকাই কেমন কঠোর সে চাহনি।
” ভাবিপু রিলাক্স থাকো কিছু হবে না। আমাদের চ্যাম্পরা সুস্থ ভাবে আসবে আর তুমিও ”
পাখি হাসার চেষ্টা করলো তবুও মনে মনে ভয় করছে। কুশান পাখিকে চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলেও মনে মনে তার ও ভয় করছে।
পাখি কুশানের দুইটা জমজ ছেলে হয়েছে। মা বেবিরা সুস্থ আছে। অনেক দিন পর বাড়িতে আনন্দ বন্যা বয়ে গেলো খুশি যেনো ধরে না। ওদের আকিকা দিয়ে নাম রাখা হলো কুশ আর শান। দুজনই বাবা-মার মিক্স কার্বনকপি হয়েছে।
তার আরও একমাস পর কুয়াশা নিজে নিজে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তার কার্যক্রম ও শেষ। কুয়াশা কুশান কে বলল
” ভাইয়া আমি তুষারের কাছে যেতে চাই ”
কুশান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে কি বলছে তার বোন।
” কি বলছিস তুই? ”
” আমি ঠিকি বলছি। আমার পার্টসপোট ভিসা করা সব শেষ আমি কাল ই যেতে চাই ”
কুশান হতভম্ব হয়ে বলল
” তুই কবে এতো বড় হয়ে গেলি বোন? কিভাবে এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি? ”
পাখি রুমে ছিলো না। রুমে ডুকার আছে কুয়াশার কথা শুনে আঁতকে ওঠে বলল
” কি বলছিস কুয়াশা এগুলো? তুই আমাদের ছাড়া থাকতে পারবি? না আমরা পারবো? ”
” মানুষ অভ্যসের দাস তাই অভ্যস হয়ে যাবে। তাই এসব নিয়ে ভেবো না? ”
” হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলি? ”
” আমার বিয়ে হয়ে গেছে ভাইয়া বাপের বাড়ি থাকাটা শোভা পায় না। ”
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here