প্রেমাসক্তি পর্ব ৮

#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__০৮
#অদ্রিতা_জান্নাত

হেঁটে হেঁটে চারপাশটা দেখছি আমি ৷ আজ ঢাকায় এসেছি ইশানের সাথে ইশানের বাড়িতে ৷ বাড়িটাই ঘুরে ঘুরে দেখছি আমি ৷ এখানে আসার পর ইশান আমাকে ওর বাবা আর ভাইয়ার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছে ৷ তাদের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছি লোকগুলো বেশ হাসি খুশি আর মিশুকে ৷ তারা আমাকে দেখে একটা টু শব্দও করে নি ৷ বিরক্ত বা রাগও হয়নি ৷ হেসে হেসে আমার সাথে কথা বলেছে ৷ এটা মনেই হয়নি যে তারা আমাকে আজই প্রথম দেখলো ৷ আপুকে এখনো জানাই নি যে আমি এখানে এসেছি ৷ মনটা বারবার খচখচ করছে ৷

এসব ভেবেই করিডোর দিয়ে হাঁটছি ৷ হঠাৎ কেউ আমার হাত টেনে ধরে একটা রুমে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো ৷ ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম আমি ৷ কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখি ইশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ সেটা দেখে বললাম,,,,,,,,

ইশিতা : এভাবে কি দেখছো? ছাড়ো আমাকে ৷

ইশান আমার সামনে আরেকটু ঝুঁকে বললো,,,,,,,,,

ইশান : কেন?

ইশিতা : সরো প্লিজ কেউ এসে যাবে ৷

ইশান : তো? এটা তো আমার রুম ৷

ইশিতা : তো তোমার রুমে তুমি থাকো ৷ আমাকে যেতে দাও ৷

ইশান : উফফ বাবা কেন এরকম করছো? আমার রুম তো তোমারও রুম নাকি?

ইশিতা : এখনো হয় নি তো ৷ তোমার বাবা কি মেনে নিবে আমাকে?

ইশান : কথা বলে বোঝো নি? মানবে নাকি মানবে না? আমি পাপাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলেছি পাপা না করে নি ৷

ইশিতা : আমাকে যদি পচ্ছন্দ না হয়?

ইশান : সেটা নিজেই দেখো ৷ যদি অপচ্ছন্দ হতো তো তোমার সাথে কথা বলতো নাকি বলো? সে সব ছাড়ো তো ৷

বলেই ইশান আমাকে কোলে তুলে নিল ৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,

ইশিতা : কি করছো এটা?

ইশান হেসে সামনে এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে নামিয়ে দিল আমাকে ৷ আয়নার দিকে তাকিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে হাতে হাত রাখলো ৷ ইশান ওর হাতের মুঠো থেকে একটা রিং বের করলো ৷ তারপর আমার বাম হাত টা একটু উঁচু করে আমার হাতের অনামিকা আঙ্গুলে একটা রিং পরিয়ে দিলো ৷ হাতটা উপরে তুলে ওর মুখের সামনে নিয়ে শব্দ করে একটা চুমু খেল ৷ তারপর হাতে হাত গুজে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বলতে লাগল,,,,,,,,

ইশান : কেমন হয়েছে ইশুপাখি? পচ্ছন্দ হয়েছে তো?

ইশিতা : তুমি পচ্ছন্দ করে দিয়েছো পচ্ছন্দ না হওয়ার কি আছে এতে?

ইশান আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে গলায় দুই হাত বেঁধে বলতে লাগল,,,,,,,,

ইশান : তাই বুঝি?

ইশিতা : জ্বী ৷ এখন তুমি আমাকে কিছু তো দিলে ৷ এবার আমি কি দিব? আমার কাছে তো কিছুই নেই ৷ আবার বাহিরেও যেতে পারবো না ৷

ইশান : তুমি আছো তো ৷ দেয়ার মতো আর কি লাগে?

ইশিতা : তবুও ৷ কখনো পারলে এর থেকেও বড় কিছু দেয়ার চেষ্টা করবো ৷

ইশান : পরে কেন? এখনি দাও ৷

ইশিতা : কি দিব? আমার কাছে তো কিছুই নেই ৷

ইশান : আছে তো ৷

ইশিতা : কি? (ভ্রু কুচকে)

ইশান : কিস ৷

ইশিতা চোখ বড় বড় করে চিল্লিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : কিইইইই??

ইশান : আরে বাবা আস্তে ৷ কানটা ফাটায় দিলা তুমি ৷

ইশিতা : খুব ভালো করেছি ৷ ছাড়ো তো আমায় ৷ ছাড়ো৷

ইশান : ছাড়াতে পারলে ছাড়াও ৷ আমি তো ছাড়ছি না ৷ যেটা বলেছি সেটা দিয়ে যাও ৷

ইশিতা : উফ এতো অসভ্য কবে হলে? ছাড়ো ৷

ইশান : কি অসভ্যতামি করেছি?

ইশিতা : অনেক কিছু ৷ তুমি ছাড়বে কি ছাড়বে না?

ইশান আমাকে আরো কাছে টেনে বললো,,,,,,

ইশান : ছাড়বো না ৷

ইশিতা : ঠিক তো?

ইশান : একদম ৷

ইশিতা ইশানের গলা জড়িয়ে ধরে হেসে দাঁড়ালো ৷ ইশান সেই হাসি দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো ৷ ইশিতা কিছুক্ষন এভাবে থেকে ইশানের পেটে সুড়সুড়ি দিতে লাগল ৷ এতক্ষন ইশানের খেয়াল ছিল না ৷ পেটে সুড়সুড়ি পেয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগল ইশান ৷ হাসতে হাসতে বলতে লাগল,,,,,,,,

ইশান : থামো থামো প্লিজ আর পারছি নাহ ৷

ইশিতা : ছেলে মানুষের এতো সুড়সুড়ি? কেমনে কি?

বলেই হাসতে লাগল ইশিতা ৷ ইশান এক টান মেরে ইশিতাকে বিছানায় ফেলে ওর দিকে ঝুকে বললো,,,,,,,

ইশান : হুম হাসো এবার ৷

ইশিতা একটা ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বলতে লাগল,,,,,,,,,,

ইশিতা : হ্যাঁ হ্যাঁ হাসবো তো ৷ ততুমি ছাড়ো আগে তারপর ৷

ইশান ইশিতার মুখের উপরের চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশান : দূরে দূরে থাকতে চাইছো আমার থেকে?

ইশিতা : সেটা কখন বললাম?

ইশান : কখনো দূরে যাওয়ার চেষ্টা করো না প্লিজ ৷ মরে যাবো আমি ৷

ইশিতা : ইশান চুপ করো ৷ এরকম কথা বলো না প্লিজ ৷ আমি তো চাই না তোমার থেকে দূরে যেতে ৷ কিন্তু পরিস্থিতিই যদি আমাদের আলাদা করে দেয় তখন? ভয় হচ্ছে প্রচুর ৷ মনটা বারবার খচখচ করছে আমার ৷ কি রকম যে লাগছে যেটা বলতে পারছি না ৷

ইশান : পরিস্থিতি হোক অথবা অন্য কিছু তুমি আমাকে দূর করে না দিলে আমরা কখনোই আলাদা হবো না ৷

ইশিতা : আমি তোমাকে দূরে করে দিব সেটা তোমার মনে হয়?

ইশান : জানি কখনোই আমার ইশুপাখি এরকমটা করবে না ৷

তখনি ইশানের ফোন বেজে উঠলো ৷ বিছানা থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিলে ইশিতা বলে উঠলো,,,,,,,

ইশিতা : কে ফোন করেছে?

ইশান : জানিনা আননৌউন নাম্বার ৷

ইশিতা : রিসিভ করে দেখো ৷

ইশান : লাভ হবে না ৷ ওপাশের জন কিছু বলে না চুপ করে থাকে ৷ এর আগেও এরকম কল এসেছে অনেক বার ৷ বাট কোনো রেসপন্স করে না ৷

ইশিতা : কি? কথা বলে না অথচ কল দেয়? কে হতে পারে?

ইশান : জানিনা ৷ কয়েকমাস যাবত এই কলটা আসছে ৷ কল না ধরলে ডিস্টার্ব করতে থাকে বারবার তাই ফোন অফ করে রাখি আমি মাঝেমাঝে ৷

ইশিতা : ওহ ৷

ইশান : ওসব বাদ দাও তো ৷ দেখা যাবে পরে ৷

ইশিতা : হুম তুমি দেখো আমি বরং যাই হ্যাঁ?

বলেই ইশিতা দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল ৷ ইশান ওরদিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিল ৷
রুমে এসে বিছানায় বসে ফোন হাতে নিতেই দেখি উপরে মিসড কল লেখা উঠেছে ৷ কললিস্টে গিয়ে দেখি আপু প্রায় ৪ বারের মতো কল দিয়েছে ৷ সেটা দেখে কল ব্যাক করলাম আমি ৷ দুবার রিং হওয়ার পরই ওপাশ থেকে ভেসে এলো,,,,,,

—- কি রে ঠিক আছিস তো তুই? কোথায় ছিলি ফোন কেন ধরিস নি?

ইশিতা : আরে আপুই আমি রুমে ছিলাম না ৷ তাই ধরতে পারি নি ৷ কোনো সমস্যা হয়েছে ওখানে?

—- না রে কাল তো কথা বলতে পারি নি তাই ৷ তুই ভালো আছিস তো? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?

ইশিতা : নাহ ৷ আম্মু বাপি কেমন আছে আপুই?

—- ভালো আছে ৷

ইশিতা : তুই মিথ্যা বলছিস না? বাপি আম্মুকে কিছু বলেছে? আম্মু ঠিক আছে তো?

—- হ্যাঁ ঠিক আছে ৷ কি হবে আবার? তুই ঠিক আছিস?

ইশিতা : আপুই আমি না ঢাকায় এসেছি ৷

—- কিই? ইশিতা কি বলছিস এসব? তোকে বলেছি না এখানে আসতে না ৷ তবুও তুই? বাপি জানলে কি হবে ভাবতে পারছিস?

ইশিতা : জানি আপুই ৷ কিন্তু আমার একা ওখানে থাকতে ভালো লাগছিল না ৷

—- কোথায় তুই এখন?

ইশিতা : রাগ করেছিস?

—- রাগ করবো না? তুই আগে বলতে পারলি না এটা? ঢাকায় আসার আগে অন্তত কথা বলে নিবি তো আমার সাথে ৷ জানাবি তো নাকি?

ইশিতা : সরি ৷

—- এখন সরি বলে কি হবে বল? তুই কোথায়?

ইশিতা : আপুই আমি জায়গাটার নাম জানি না ৷

—- ঢাকায় একা গিয়েছিস?

ইশিতা : না ৷ আমি একটা ছেলের সাথে এখানে ওর বাড়িতে উঠেছি ৷

—- ইশিতা তুই কি বাচ্চা হয়ে গিয়েছিস? অচেনা একটা ছেলেকে…

ইশিতা : ছেলেটাকে ভালোবাসি আমি আপুই ৷

ইতিকে বলতে না দিয়ে ওর কথার মাঝেই ইশিতা বলে দিল ৷ ওপাশে ইতি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে লাগল,,,,,,,

—- ইশিতা? তুই? আমি বুঝতে পারছি না এখানে কি বলা উচিত আমার? তুই জানিস বাপি জানলে তোদের কি করবে? ইশিতা বোন আমার তুই ফিরে যা ৷ আর ওই ছেলেটাকে ভুলে যা ৷

ইশিতা : আপুই তুই এসব বলছিস? তুইও তো ভালোবেসেছিলি ভুলতে পেরেছিলে কি?

ইশিতার কথায় ইতি চুপ হয়ে গেল ৷ ওর চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি ঝরতে লাগল ৷ ইশিতা বলতে লাগল,,,,,,,

ইশিতা : আমি এতোটাও ভালো না আপুই ৷ আমি তোর মতো নিজের ভালোবাসাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারবো না ৷ তুই তো জানিস অন্তত যে ভালোবাসার মানুষকে ভুলা যায় না কখনোই ৷ হয়তো নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করা যায় ৷ কিন্তু ভোলা যায় না ৷ সেটা আমার থেকে ভালো তুই ই বুঝবি ৷ রাখছি এখন ৷

বলেই ফোন রেখে দিলাম ৷ জানি আপু এখন কাঁদবে ৷ আর আমি সেটা কখনোই শুনতে পারবো না ৷

_____________

ইতি বিছানায় বসে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে দিল ৷ সত্যি তো ভালোবাসার কষ্ট ও ছাড়া আর কে বুঝবে? এতো কষ্টের পরও ও ভাবছে যদি ওর বোনটাও ওর মতো তার থেকেও বেশি কষ্ট পায় তখন কি করবে ও? যেই কষ্টের সাথে ও পরিচিত সেই কষ্ট কীভাবে ও ইশিতাকে পেতে দেখতে পারবে? ফোনটার দিকে তাকিয়ে একটা পুরোনো ছবি বের করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,,,,,,,,

—- দেখেছেন স্যার ৷ আজ আমি কতটা ভালো আছি ৷ ভালো থাকারও চেষ্টা করি ৷ শুধু শুধু আপনাকে মনে রেখে লাভ কি? কিন্তু মন তো এখনো আপনার কাছেই আছে ৷ আমার মনটা নিজের কাছে নিয়ে নিজে তো বেশ আছেন ৷ মাঝখান থেকে আমি একা হয়ে গেলাম ৷ কি ভেবেছিলেন নিজের স্বার্থের জন্য চলে গিয়েছি ৷ একবারও কি এই স্বার্থপর মেয়েটার মনের ভাষা বুঝতে পারলেন না? সেটাই আমাকে আরো কষ্ট দেয় ৷

বলেই কাঁদতে লাগলো ইতি ৷

★★★
পরেরদিন সকালবেলা একটা মধ্যবয়স্ক লোক আমার রুমে চা দিয়ে যেতে যেতে বললো,,,,,,,,,

—- বড় সাহেব ডাকছে আপনারে ৷

ইশিতা : ইশানের বাবা?

—- জ্বী ৷

ইশিতা : কেন?

—- সেটা তো জানি না মা ৷

ইশিতা : আচ্ছা চাচা আপনি যান ৷ আমি দেখছি ৷

লোকটা চলে গেলে আমি চা’ টা শেষ করে নিচে চলে গেলাম ৷ জানি না হঠাৎ কীসের জন্য ডাকলো আমায়?
নিচে গিয়ে দেখি সবাই সোফায় বসে টুকটাক কথা বলছে ৷ ইশানও আছে ৷ আমাকে দেখে ইশানের বাবা বসতে বললেন ৷ আমি একটু হেসে তাদের সামনের সোফায় বসলাম ৷ ইশানের বাবা বলতে লাগলেন,,,,,,,,

—- আসলে কি বলো তো একটু কথা জানার ছিল তাই ৷

ইশিতা : জ্বী আঙ্কেল বলুন ৷

—- দেখো মা ইশান তোমাদের ব্যাপারে সব বলেছে আমায় ৷ কিন্তু আমি তোমার সম্পর্কে আরেকটু জানতে চাই ৷ তারপর নাহয় বিয়ের ডেট ফিক্সড করা যাবে ৷

আমি ইশানের দিকে তাকালে ও আমায় ভরসা দিল ৷ কি জানবে ইশানের বাবা? সেটাই বুঝতে পারছি না ৷ ইশানের বাবা বললেন,,,,,,

—- বেশি কিছু না ৷ শুধু টুকটাক কথা ৷ না জানলেও সমস্যা নেই ৷ তবে জানা দরকার ৷

ইশিতা : জ্বী আঙ্কেল কি বলবো বলুন ৷

—- তোমার পড়াশুনা কতদূর ৷

ইশিতা : আমি এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট ৷

—- ওহ তো তোমার বাড়িতে কে কে আছে?

ইশিতা : আম্মু, আপু, বাপি, আর জিজু মানে আমার বোনের স্বামী ৷

—- ও তো তোমার বোন বিবাহিত ৷ আর সে তোমার বড়?

ইশিতা : জ্বী ৷

—- তোমাদের ফ্যামিলীতে প্রোপোজাল নিয়ে গেলে কি হবে?

ইশিতা : আসলে আঙ্কেল আপনি হয়তো জানেন বিয়ের আসর থেকে বাড়ি থেকে পালিয়েছি আমি ৷ আর তার জন্য বাপি রেগে আছে আমার উপর ৷ সেখানে আমার পচ্ছন্দ কখনোই মেনে নিবে না সে ৷

—- নাম কি তোমার বাবার?

ইশিতা একটু থেমে বললো,,,,,,

ইশিতা : আরমান চৌধুরি ৷

ইশানের বাবা বসে থাকা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইশিতার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে জোরে জোরে বলতে লাগলেন,,,,,,,,

—- কিইহ?? তুমি আরমান চৌধুরির মেয়ে?””

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here