প্রেমের খেয়া পর্ব ৭

#প্রেমের_খেয়া
#লেখিকা_জান্নাতুল_মীর
#পর্ব_৭

বিশাল বড় হল রুমে বসে আছে সামরান।আশে পাশে কালো পোশাক পরিহিত ১২জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।তাদের মাঝখানেই বিশাল বড় রাজকীয় চেয়ারে বসে আছে সামরান। সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে সব অস্ত্র। মালেশিয়া থেকে আজই বাংলাদেশে পা রেখেছে এসব অস্ত্র।সামরান এক হাত এগিয়ে অস্ত্র গুলো স্পর্শ করে।প্রতিটি অস্ত্রে হাত বুলাতে থাকে।হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে উপরে তাকালো সামরান। লম্বা পা ফেলে এগিয়ে আসছে প্রণয় খান।মুখে শয়তানি হাসি তো আছেই।সামরান সোজা হয়ে বসে। প্রণয় খান এগিয়ে এসে সামরানের সামনে দাঁড়ায়। সামরান চোখ দিয়ে ইশারা দিতেই বসে পড়ে প্রণয় খান।
“-কি পছন্দ হয়েছে? অস্ত্রের দিকে তাকিয়ে সামরান কে জিজ্ঞেস করে প্রণয় খান।
“-এখনো ট্রাই করিনি।তাই ভালো বা খারাপ কিছুই বলতে পারছিনা। গম্ভীর কন্ঠে বলে সামরান।
“-করে নাও!! করতে কতক্ষণ। আশাকরি তোমার ভালো লাগবে। সব নাম করা অস্ত্র।
“-হুম ট্রাই করে দেখি।
“-তোমার জন্য একটি গিফট আছে আমার কাছে!!হাসি মুখে বলে সামরান।
“-কি? ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে সামরান।
প্রণয় খান একটি ছবি সামরানের সামনে রাখে। ছবিটি দেখে সামরান ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
“-এখানে একটা টুইস্ট আছে।গিফট এর সন্ধান আমি তোমাকে দেবো।উদ্ধার তোমাকে করতে হবে।এই যে মেয়ে দেখছো।ছবিতে দেখো এই মেয়ে কত সুন্দরী।না জানি বাস্তবে কত সুন্দর হবে।এর জন্য হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা ফেলে দিতে এক পায়ে রাজি। বাজারে এর দাম অনেক।ঝলসে দেওয়ার মত রুপ এই মেয়ের।আমারই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।উফফ!!বলেই প্রণয় খান চোখ বন্ধ করে নিলো।

এক হাতের আঙুলের ফাকে অপরহাতের আঙুল ভাজ করে সামরান থুতনিতে ঠেকিয়ে রেখেছে।তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া প্রণয় খানের দিকেই স্থির করে রেখেছে।
প্রণয় খান আবারো বলে উঠে,
“-তবে কথা দিচ্ছি ফার্স্ট তুমি ইউজ করবে।তোমার আগে এর গায়ে কেউ হাত দেবেনা।তুমি শুধু ওকে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। তোমার যত ইচ্ছে নিজের কাছে রাখো তারপর বাকিদের….প্রণয় খান আর বলতে পারলো না।
সামনে থাকা সেন্টার টেবিল থেকে একটি রিভলবার তুলে সামরান এক দমে শুট করে দিলো প্রণয় খান কে।উপস্থিতি সবাই ভড়কে গেলো।বুলেট গিয়ে সোজা প্রণয় খানের বুক বরাবর বিধেঁছে।তারপর হাতে থাকা রিভলবারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সামরান। শান্ত কন্ঠে বলে,
“-ভালোই।নট ব্যাড!!বলেই হাতের রিভলবার ছুড়ে সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়। প্রণয় খান কিছু বলতে পারেনা।চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সামরান উঠে দাঁড়ায়। ছবিটি হাতে তুলে নেয়।ছবিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবিতে থাকা মেয়েটির মুখের হাসি, চোখ সামরানের চেনা।সে যে আর কেউ নয় সামরানেরই অলকানন্দা। তারই চেনা, তারই মায়া।ছবিটি হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ে সামরান।শান্ত কন্ঠে বলে,
“-আপনি আমার অলকানন্দা। আপনার নাম যে মুখে উচ্চারণ করবে তার জিহ্বা আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো।আপনার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ আমি তুলে নেবো। আপনার দিকে যে হাত বাড়াবে তার হাত আমি কেটে টুকরো টুকরো করে নেবো। যেই কালো জগতের নোংরা মন মানসিকতার মানুষেরা আপনার দিকে তাকাবে সেই জগতের বাদশা আমি। আর আপনি? অধর কোণে হাসলো সামরান।তারপর মৃদু স্বরে বললো,
“-আপনি তো রানি অলকানন্দা। আমার রানি। প্রজারা আপনার দিকে তাকানোর মত দুঃসাহস দেখাবেনা।
আপনি পবিত্র!!আর আমি নোংরা। আপনার সামান্য কথাতে আমি আটকে গেলাম আপনার মাঝে।থিংক ওয়ান্স পুরো আপনিটা আমার কি হাল করবে। আমারই তৈরী করা নোংরা জগতের নোংরা দৃষ্টি আমি আপনার উপর পড়তে দেবো না। আপনি পবিত্র!! পবিত্রই থাকবেন।আমি নাহয় একটু নোংরাই থাকলাম। খুব একটা মন্দ হবে না বলুন!!ছবিতে থাকা মায়ার হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে হাসলো সামরান।

কলেজে এসেছে মায়া।ক্লাসে এসে বসতেই পাশের সিটের একটি মেয়ে মায়াকে দেখে মুচকি হাসলো।মায়াও মৃদু হেসে পাশে বসে পড়ে।মেয়েটি হাসি মুখে মায়ার সাথে কথা বলা শুরু করে,
“-কি নাম তোমার?
“-আমার নাম মায়া!!তোমার নাম কি?
“-ফাইজা আমার নাম।
“-ওহহ!!হালকা হাসলো মায়া।
“-আমি কিন্তু তোমার চেয়ে সিনিয়র তাও ৩বছরের।
মায়া অবাক হয়ে তাকালো।
“-মানে বুঝলাম না।
“-মানে এটাই যে আমি তোমার ৩ব্যাচ আগে এসএসসি দিয়েছি।
“-ওহহ!!অনেক সিনিয়র তুমি সরি আপনি।
“-আরেহ তুমিই বলো সমস্যা নেই।হালকা হেসে বলে ফাইজা।
“-কিন্তু এখন কেন এডমিশন নিয়েছো।মানে এতদিন স্টাডি করো নি?
মেয়েটি একটু চুপ করে থাকে।তারপর বলে,
“-একটু প্রবলেম এর জন্য পড়া টা হয়নি।এখন আবার শুরু করেছি।
“-ওহহ ভালোই হলো।
“-আজ থেকে তুমি আমার ফ্রেন্ড ওকে!!বলেই ফাইজা হাত বাড়িয়ে দিলো।মায়া হেসে হ্যান্ডশেক করলো।

কলেজ শেষ হতেই মায়া বেরিয়ে পড়ে।কলেজের সামনে রাহাদ কে দেখে অবাক হলো মায়া।
“-তুমি এখানে?
“-তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
“-ওহহ। বলে আসবে তো।আমার একটু তাড়া আছে বাড়ি ফিরতে হবে।
“-ওহহ চলো আমি পৌঁছে দিই।
“-না না আমি যেতে পারবো।
“-উফফ তুমিও না।কিছু হবেনা এসো আমি এগিয়ে দিই।
“-না রাহাদ আমি রিকশা করে চলে যাবো।তুমি প্লিজ ঝামেলা পোহাতে এসো না।
“-আচ্ছা রিকশা তো ডেকে দিই।
“-আচ্ছা।
হাসলো রাহাদ।মায়ার হাত ধরে রাস্তা পার করে।দূর থেকে অজ্ঞাত এক ব্যাক্তি এই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্ধী করে নেয়।ক্যামেরায় মায়া আর রাহাদ স্পষ্ট দৃশ্যমান।

ডিভানে বসে টিভি দেখছে সিমি। হাতে থাকা রিমোট এর শেষাংশ মাঝে মাঝে দাতঁ দিয়ে কামড়াচ্ছে। মনোযোগ সহকারে টিভিতে কার্টুন দেখছে সিমি। হঠাৎ ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সিমি।হাত থেকে রিমোট পরে যায়। অস্ফুটস্বরে বলে উঠে,
“-শেহের!!
সিমির চুল একপাশে সরিয়ে ঘাড়ে চুমু দিলো শেহেরজাদ।সিমির মুখে নিজের নাম শুনে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো শেহেরজাদের। সামনে এসে সিমিকে টেনে শুইয়ে দেয় তারপর ডিভানে দুহাতের ভর দিয়ে সিমির উপর একটু ঝুকে বলে,
“-একা একা কি করছিলে?
“-আ আপনি কখ কখন এলেন?
“-মাত্র!!
“-আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবার দিচ্ছি।বলেই সিমি উঠতে চাইলে শেহেরজাদ উঠতে দিলো না। একটু ঝুকে সিমির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
“-হোয়াই ইউ কন্টাক্টেড বাংলাদেশ এগেইন..?

শেহেরজাদের এমন কথা শুনে সিমির ভেতর কেঁপে উঠলো।পাশ ফিরে শেহেরজাদের মুখ দেখার বৃথা চেষ্টা করলো সিমি।শেহেরজাদ উঠে বসে পড়ে।সিমি পাশে বসে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
“-আস আসলে অন অনেক দিন পর ও ফোন ক করেছিলো তাই….
শেহেরজাদ শার্টের হাতের বাটন খুলে শার্টের হাতা ভাজ করে নিলো।টাই খুলে ফেলে।শার্টের উপরের ৩টি বাটন খুলে দিয়ে শার্ট পেছনের দিকে টেনে দিয়ে সিমির দিকে তাকালো।
উঠে দাঁড়িয়ে কোমরের বেল্ট খুলে সিমির হাত শক্ত করে বেধে দিলো।সিমি বাধা দিতে চেয়েও পারলো না। সিমির চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত। সিমি জানে এবার শেহেরজাদ কি করবে।শেহেরজাদের রাগ সামাল দেওয়া খুবই কষ্টের। সিমির ফোন নিয়ে শেহেরজাদ ফ্লোরে রেখে পা দিয়ে চাপ দিতেই ফোনের স্ক্রিন ফেটে যায়।দুই তিন বার চাপ দেওয়াতে ফোনের বেহাল দশা হয়ে যায়।চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে শেহেরজাদের। ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে এসেছে। কাচের সেন্টার টেবিলে জোরে আঘাত করতেই কাচ ভেঙে যায়।নিজেকে আঘাত করতে থাকে। সিমি ডিভানে বসে ছটফট করতে থাকে।
“-প্লিজ নিজেকে আঘাত করবেন না।শেহের প্লিজ শান্ত হোন।প্লিজ!!আঘাত করবেন না।আমাকে শাস্তি দিন।আমি দোষ করেছি আপনি প্লিজ নিজেকে কষ্ট দেবেন না।কাদঁতে কাদঁতে বলে সিমি। উঠে গিয়ে শেহেরজাদের সামনে দাঁড়িয়ে যায় সিমি।শেহেরজাদ সিমির বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। দাতেঁদাতঁ চেপে বলে,

“-ওই মেয়ের সাথে তুমি কেন কথা বললে?ওই মেয়ের জন্য আমি আজ নিজের সবকিছু ছেড়ে এখানে চলে এসেছি।ওই মেয়ের জন্যই আমি আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি হারিয়েছি। বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও তুমি কেন ওই মেয়ের সাথে কন্টাক্ট করো।কেন??হোয়াই সিমি?? হোয়াই?? সিমি অনবরত কাদঁতে থাকে। শেহেরজাদের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।সিমি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
“-আমার ভুল হয়ে গেছে শেহের।আমি আর কখ কখনো কথা বলবো না।আপনি প্লিজ শান্ত হোন।প্লিজজজজ!!
সিমিকে ছেড়ে দূরে সরে যায় শেহেরজাদ।ফুলের ভাস ছুড়ে ফেলে দেয়।ঘরের সব জিনিস ভাঙচুর করতে থাকে। সিমি বার বার বলা সত্ত্বের শেহেরজাদ থামেনা।
“-আপনি প্লিজ থামুন!!শেহের প্লিজ থামুননন!! প্লিজজজ!আই লাভ ইউ শেহের……
সিমির মুখের শেষ কথা শুনে শেহেরজাদ থেমে গেলো রক্তবর্ণ চোখ জোড়া নিয়ে সিমির দিকে তাকালো।মুহুর্তেই যেন শান্ত হয়ে গেলো শেহেরজাদ। একটু এগিয়ে এসে বলে,
“-কি বললে তুমি?
সিমি নিজেও অবাক।কি বলে ফেললো ও।শেহেরজাদ কে আই লাভ ইউ বলে ফেললো।দৃষ্টি এলোমেলো সিমির। কখনো এদিক তো কখনো ওদিক তাকাচ্ছে।নিঃশ্বাসের গতি যেন বেড়ে যায় মুহুর্তে।বিয়ের পর এই প্রথম সিমি শেহেরজাদকে আবারো আই লাভ ইউ বললো।এর আগে শেহেরজাদ হাজারো চেষ্টা করে সিমিকে বলাতে পারেনি।
এগিয়ে এসে সিমির সামনে দাড়ায় শেহেরজাদ,
“-আবার বলোনা কি বললে?
“-সিমি অশ্রুসিক্ত নয়নে শেহেরজাদের দিকে তাকালো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না দমন করতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।শেহেরজাদ সিমির গালের দুপাশে হাত রেখে কাছে এসে বলে,
“-বলোনা আবার?কি বললে তুমি?
“-আ আই লা লাভ ইউহহ!!!বলেই সিমি চোখ বন্ধ করে নিলো।সাথে সাথে কয়েকফোটা চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
শেহেরজাদ সিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। চোখ মুখে উপচে পড়া খুশির আভাস জানান দিচ্ছে। মৃদুস্বরে বললো,
“-আই লাভ ইউ টু জান!!

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here