প্রেম সায়রের ছন্দপাত পর্ব ৫

#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন

পর্ব—৫

—— তোমার বিধবা আইডি টারে রঙ্গিন করে দিলাম মামা!
—- কিহ!
ছো মেরে সাগরের হাত থেকে ফোনটি নিয়ে নেই ইরশাদ! তারপর অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রই সে, কিছুসময় ফোনের স্কিনের দিকে! তারপর নাক ফুলিয়ে বলে
—– কর্ণফুলীর কালা পানি, এগুলো করলি টা কি তুই?
—– আমার নাম সাগর কতোবার বলবো তোকে।
মুখ কালো করে বলল সাগর। কিন্তু ইরশাদের যেন কোন ভাবাবেগ হলো না এতে। সে একইভাবেই তাকিয়ে রইলো সাগরের দিকে!
এবার সাগর ক্যাবলার মতো হাসি দিল! সে জানে ইরশাদ এখন প্রচন্ড রেগে আছে। তাই সে আমতাআমতা করে বলল,
—– আরে ইয়ার, তোর ফেইসবুকটা কেমন নিরামিষ নিরামিষ লাগছিল। শুধু ফ্রেন্ড, রিলেটিভস। তাই আর কি.
—- তাই তুই সেইটাকে আমিষ বানালি! তা এখন কি তুই খাবি এইটা? ভাতের সাথে মিশিয়ে দি। গপাগপ করে গিল।

সাগর পরপর ঢোক গিলল। মনে মনে ভাবলো,
“ইশ রে পাগলা খেপেছে!” তারপর মুখে মেকি হাসি ঝুঁলিয়ে হাসতে হাসতে বলল
—- দেখনা, তোর আইডিতে কোন পিক দিসনা তুই।তার ওপর তিনশটা রিকোয়েস্ট, সব ঝুলিয়ে রেখেছিস।তাই আর কি আমি, এক্সেপ্ট অল দিয়ে সব এড করে নিলাম।

কোমড়ে হাত গুঁজে হতাশাজনক ভাবে নিশ্বাস ফেলল ইরশাদ। তারপর বলল,
—- তুই জানিস, আমি এফ বি ইউস করি আব্বা জানেন না। আমি যখন প্রথম আইডি খুললাম, আব্বা তখনই রিকুয়েষ্ট পাঠালো আমাকে।আমিও উৎফুল্ল হয়ে আব্বাকে এড করে নিলাম। তারপরই আমার জিবনটা পাবলিক টয়লেটের মতো বেদনাদায়ক বানিয়ে রেখে দিলেন তিনি!.
—- কিহ্! কিভাবে
—- এই যে ক্লাস টাইমে নেট অন কেন, এতো রাতে না ঘুমিয়ে কি করো? এতো পোস্ট কেন করো? পড়াশোনা না করে দেবদাসের মতো কবিতা লিখছো কেন!
—- দেবদাস কি কবিতা লিখে নাকি!.
—- ঐটা আমার আব্বার থেকে জিগাইয়া আয়।
সাগর তাড়াতাড়ি নিজেকে সংযত করে নিল।তারপর উৎসুক হয়ে বলল
—- তো কি করলি?
—- ব্লক করেছি। আসলে ব্লক করে শান্তি লাগে নি। ইচ্ছা হচ্ছিল আইডিটাকে রিপোর্ট মেরে তারপর ব্লক করি তাকে আমি।
—- রিপোর্ট মারলে অপশনে কারন কি লিখতি?
—- সে একজন ডিস্টার্ব পাবলিক। অহেতুক কোমল মনের ছেলেদের বিরক্ত করে

সাগর অবাক হয়ে তাকাই। সে জানে ইরশাদ মোটেও মজা করছে না! কারন তার কাজগুলো তার মতোই অদ্ভুত! সুতরাং সে এইটাই করতো

________
রাত নয়টা, পড়ার ফাঁকে ফেইসবুকের নিউজফিডে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইরশাদ।হঠাৎ একটি পোস্টে চোখ আঁটকে গেল তার!

” আমি নবম শ্রেনীতে পড়ি, আর আমার ফোন নাম্বার, ০১********* ”

ইরশাদ ব্রু কুঁচকে অাইডির নামটি পড়লো ” স্বপ্নের ছন্দপাত”৷ হঠাৎ কি মনে করে আইডিটির ভেতরটা দেখলো সে। যা ভেবেছিল তাই, আইডিটি একদমই নতুন। সে আবার পোস্টটির কমেন্টবক্স চেক করলো। অনেকে বাজে কথা বলছে মেয়েটিকে! খারাপ।ইঙ্গিত ও দিচ্ছে। অন্যদিকে পুরো পোস্টজুড়ে রয়েছে হাহা ময়! যেন আজ হাহা দিবস!
ইরশাদের হুট করে মনে হলো, মেয়েটিকে ইনফর্ম করা উচিত তার। কিন্তু আবার এইটাও মনে হলো,
” আজকালকার যুগে কারো ভালো করতে নেই, মানুষ ভালোর উল্টোটা বুঝে।আর তাছাড়া মেয়েটির বন্ধু বান্ধবী ও তো বলে দিতে পারে তাকে তার ভূলটি ”
আনমনে এইসব ভেবে ফোনটি রেখে আবার পড়ায় মন দিল সে।

থরথরিয়ে কাঁপছে আরশী! কান্না বেগ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, আঁখিযুগল থেকে! সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাতে রাখা ফোনটির দিকে!
এই তো কিছুসময় আগে, কিছু অসভ্য মানুষ কল করে প্রেমের আলাপ করতে চেয়েছে তার সাথে! তাদের বলা কথাগুলো যেন এখনো কানে বাঝছে তার। আর অন্যদিকে ভয়ে আত্মা ও কাপছে এখনো ! মানুষগুলো তার নাম্বার কোথা থেকে পেল ভাবতেই কলিজা শুঁকিয়ে আসছে তার। বারবার আঁড়চোখে বাবা মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আরশী! নিজেকে নিজের মারতে ইচ্চে করছে এখন তার ।

“কেনই বা সে ফেইসবুক নিয়ে কৌতুহল দেখালো আর কেনইবা নিজের নাম্বার দিল! ”
এইসব ভাবতে গিয়ে,অজানা ভয়ে বুকটা দুরদুর করছে তার! “ইশ কেউ জানলে কি হবে, কোন প্রতিবেশী বা কোন রিলেটিভ”!
আর ভাবতে পারছে না আরশী। কাঁপা কাঁপা হাতে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টায় নেমে গেল সে। কিন্তু বারবার মা ও যে এসে দেখে যাচ্ছে তাকে! আর এই কারনেই কিছুই বুঝতে উঠতে পারছেনা সে। আনমনে ভাবলো আরশী
” ইয়া আল্লাহ সব বিপদ একসাথে কেন দাও”
ফোনের ব্যালেন্সটাও শেষ আজকে তার।আর নেটে, প্রিয়াকে কয়েকটা এসএমএস পাঠালেও ওপাশ থেকে কোন উত্তরই এলো না! অতিরিক্ত অস্হির লাগছে এখন আরশীর । প্রিয়াটাও নেটে আসছে না কেন আজ!

হঠাৎ টুন করে ম্যাসেজের শব্দ হতেই তাড়াতাড়ি ফোনের সাউন কমিয়ে দিল আরশী। প্রিয়ার মেসেজ ভেবে, বুক ভরা আশা নিয়ে মেসেজটি চেক করতেই চরম ভয় পেয়ে গেল সে! মেসেজে লিখা,

” দুঘন্টা ধরে নিজের নাম্বারটি পাবলিক করে রেখেছেন কেন? মানুষের বলা কথাগুলো কি একদমই গায়ে লাগছে না? ভালো লাগছে?

আরশীর যেন হার্টফেল হওয়ার দশা। ভয়ে পরপর শুঁকনো ঢোক গিলল সে। এই মানুষটি কিভাবে জানলো তাকে অন্যছেলেরা কল দিয়ে কথা শুনাচ্ছে! মানুষটি কি তাকে দেখছে!
ভয়ে আধমরা হওয়ার জোগাড় আরশীর এখন , ঠিক তখনি আরেকটি মেসেজ এলো তার ফোনে! হড়বড়িয়ে মেসেজে টিপ দিতে গিয়ে ছেলেটির প্রোফাইল পিকচারেই ক্লিক করে বসলো সে।
একটি ক্যাপ পড়া ছেলের ছবি। মুখে রুমাল বাঁধা, চোখগুলোও ভয়ংকর!
আরশী যেন আজ ভয়ে যায় যায় অবস্হা। মানুষটি আবার এসএমএস করলো,
” আমি কি কোন হেল্প করবো?”

আরশী তাড়াতাড়ি ফোনটি বন্ধ করে দিল। তারপর গুটিশুটি মেরে মায়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আজ আর একদমই ফোন ধরবে না সে।মনে মনে ভেবে নিল সে!

খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই, সেই আইডিটির কথা মনে পড়ে গেল ইরশাদের।আনমনে কিছু ভেবে আবার ডুকলো সে আইডিটিতে।!এবার মেজাজটা অতিরিক্ত বিগড়ে গেল তার।আর রাগের মাথায় এসএমএসও করে বসলো সে একটি! হঠাৎ মনে হলো ভূল করছে সে! অপরিচিত কাউকে এইভাবে বলার অধিকার নেই তার৷ কিন্তু পরবর্তী মেসেজেরও কোন রিপ্লাই দিল না মেয়েটি! কেবল সিন করলো! এবার নিজের ওপর পছন্ড বিরক্তিবোধ হলো ইরশাদের।
” ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানোকেই আহাম্মক ইরশাদ বলে”
মনে মনে এইসব ভেবে, কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো সে।

_________
ভোরের আলো ফুলতেই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেয় আরশী। প্রিয়ার সাথে দেখা করাটা যে খুব জরুরি তার। কিন্তু ক্লাসে ডুকেই কয়েকজনের বিদ্রুপের শিকার হয় সে!
—- কিরে, কোন বন্ধু পাচ্ছিস না নাকি? ফোন নাম্বার জনগনের উদ্দেশ্যে বিলিয়ে দিচ্ছিস?
এইবলেই ক্লাসের কয়েকজন একজন অন্যজনের সাথে ক্ল্যাপ করে, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো।আর আরশী হতাশ হয়ে তাকালো তাদের দিকে।
“ইশ প্রিয়ারে কোথায় তুই জানু”!

চলবে

( সরি রিভিশন দেওয়া হয় নি।
কেমন লাগলো।জানাবেন। ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here