“ফেমাস_বর🙈 পার্ট_১১

#ফেমাস_বর🙈
#পার্ট_১১
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা

আদনান হসপিটালে থেকে বের হয়ে সোজা তমার ঐ চাচাতো ভাইয়ের বাসায় চলে গেলো।ওদের বাসার সামনে এসে আদনানের গাড়ি থামল।আদনান গাড়ি থেকে নেমে সোজা ওদের বাসায় ঢুকে গেল।

আরে,আরে!এই ছেলে কে তুমি?(নিশানের মা বলে উঠল)

সবাই আদনানকে নানান কথা জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু আদনানের কানে যেন কিছুই ঢুকছেনা।

আদনান-কই?নিশান কুত্তারবাচ্চটা কই?আপনাদের বড় ছেলে কই হ্যাঁ?ডাকেন,ডাকেন ঐ শালা রে!ডাকেন!(চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলল)

এদিকে উপরে👉🏼
আরে বেবি,এতো টেনশন করো না।খুব সুনই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে!(নিশান কথাটা বলল)

কথাটা বলে সাথে সাথে ফোন কেটে দিল নিশান।

নিশান-নিচ থেকে এতো শব্দ আসছে কীসের?গিয়ে দেখি তো ব্যাপারটা!

আদনান-ওই কুত্তারবাচ্চা নামস না কেন?নাকি ভয়ে নামতেসিস না।শালা যদি না নামোস,তাইলে আমি নিজেই তোরে নামাবো!আর,আমি নামালে তোর কপালে অশেষ দু্র্ভোগ আছে!তাই বলতেসি,তুই নামবি?নাকি আমি নামাবো?(রাগে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে বলল কথাগুলো)

আদনান খুবই রেগে আছে।এতোই রেগে আছে যে তার নিজের কন্ট্রোলের বাইরে সবকিছু।সে নিজেও জানেনা আজকে সে কী করে ফেলবে!

এদিকে নিশানকে সিঁড়ির দিয়ে নামতে দেখে আদনান আর কিছু না দেখে নিশান কে মারা শুরু করল!

আদনান নিশানকে বেধরাম মারছে।কেউ তাকে থামাতে পারছেনা।চাইলেও কেউ পারছেনা থামাতে।

আদনান-শালা,তোর সাহস কী করে হলে আমার বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার?বল,সাহস কী করে হলো?
আচ্ছা,আমার বউ-ও বাদ দে।ও তোর চাচাতো বোন।আমার থেকেও ওর সাথে তোর রক্তের টান বেশি,তাও কীভাবে পারলি তুই এটা করতে?বল,বল(এমন একটা গালি দিল যা****)খুব ইচ্ছা না তোর নষ্টামি করার?খুব?তো শালা তুই কোনো পতিতালয়ে যাস না কেন?ফুলের মতো একটা পবিত্র মেয়ের মান-সম্মান নিয়ে খেলতে তোর এক ফুটাও মনে বাধল না,তাই নারে?আজকে তমু কিছু না করেও তোর মা-চাচিদের কাছে হাজার কথা শুনলো।কিছু না করেও আজ তমু দোষী হলো।অথচ যে দোষ করল তাকে নিয়ে সবাই মেতে উঠল।আজ শুধু মাত্র তোর জন্য তমু মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।আজ যদি তমুর কুিছু হয়ে যায় তাহলে তোকে আমি ছাড়বোনা।তোর আর তোর এই ফ্যামিলিকে শেষ করে দিব।তমার কিছু হয়ে গেলে আমি তোরে আর তোর এই গুষ্টিরে যদি জেলের ভাত না খাওয়াইসি তো আমার নামও আদনান হাসিব না।শালা!(মারতে মারতে চিৎকার করে কথাগুলো বলল)

সবাই এতোক্ষন আদনানের কথাগুলো শুনছিল।হঠাৎ আদনান মারা থামিয়ে নিশানের মায়ের কাছে গেলো।

আদনান-খুব আজকে তমুকে বলে আসছিলেন না যে তমুকে কী শিক্ষা দিয়ে বড় করা হয়েছে?তমুর কোনো লজ্জ্বা নেই?তমুর সাহস কী করে হয় আপনার এই কুলাঙ্গার ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার?বলেছিলেন না?
একটিবার আপনার নিজের ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন তো যে তাকে কী শিক্ষা দিয়ে বড় করসেন?শুনুন,আপনার এই কুলাঙ্গার ছেলে নিজের আপন চাচাতো বোনের সাথে আজকে..(যা হয়েছিল সব বলল)

সব শুনে নিশানের মাসহ সবাই অবাক চোখে নিশানের দিকে তাকালো।

নিশান-নাহ,মম।এসব মিথ্যা।তমার আমার বোন,আমি কেন ওর সাথে..(নিশান কথা শেষ করতে পারলনা,এর আগেই কেউ তার গালে চড় বসিয়ে দিলো)

এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি তোকে?এই শিক্ষা দিয়ে?ছি:,আমার তো ভাবতেই লজ্জ্বা লাগছে!আমার ছেলে হয়ে তুই এমন একটা কাজ করতে পারলি কী করে?তোর একেবারো মনে বাধল না এমন একটা কাজ করতে?(কথাটা মিস্টার কাবির অর্থ্যাৎ নিশানের বাবা হলে উঠলেন)

নিশানের ছোট চাচি-এখন এসব কথা থাক।সবাই মিলে এখন হসপিটালে চলুন।বাবা(আদনানকে বলল)তুমিও চলো।

আদনান আর কিছু না বলে শুধু একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে ওরে সাবধান করে চলে গেল।

অন্যদিকে,
বাইরে সবাই ও.টির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সবার মনেই এক আতংক।

এদিকে নিশানের পুরো ফ্যামিলিকে আসতে দেখে তুরিনের রাগ উঠে গেল।

তুরিন-কেনো আসছেন আপনারা এখানে?কেন আসছেন?লজ্জ্বা করেনা আপনাদের?আর এই যে আপনি(নিশানের মাকে)সকালে তো আমার বোন কে হাজার কথা শুনিয়ে গেলেন।তো এখন যখন আমার বোন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে তো আপনারা কেন এসেছেন এখানে?কেন এসেছেন?আমার বোনকে আরো কথা শোনাতে?(তুরিন আর কিছু বলতে পারলনা,অজ্ঞান হয়ে গেলো)

সবাই-তুরিন,তুরিন!!!

এদিকে ডক্টর ও.টি থেকে বের হলো।

ডক্টর-এভ্রিথিং ইজ ফাইন।শি’ইজ নাও আউট অফ ডেন্জার।উনি এখন ঘুমাচ্ছেন।ঘুম ভাঙলে উনাকে রিলিজ দিয়ে দিবো।

সবাই-উফ,আলহামদুলিল্লাহ।(প্রশান্তির নি:শ্বাস ফেলে বলল)

আদনান-রিলিজ মানে?ডক্টর,অপারেশন তো আজকেই হলো।আর আপনি কিনা আজই রিলিজের কথা বলছেন?আই’মিন ইজ ইট সেফ?

ডক্টর-কোনো প্রব্লেম নেই।বরংচ যদি বাসায় থাকেন তাহলে কমফর্টেবিলি সবকিছু করতে পারবেন।আর আপনারাও ভালো মতন উনার যত্ন করবেন,খেয়াল রাখবেন,তাহলেই হবে।

হঠাৎ একটা নার্স এসে বলে গেল যে তমার জ্ঞান ফিরেছে।তাই একে একে সবাই দেখা করতে গেল।শুধু আদনান বাদে।আদনানের তমার সাথে বোঝাপড়া আছে যে সে কেন কিছু না বলে এরকম একটা কাজ করল।কেন?

সবার দেখা করা শেষ হলে তমাকে নিয়ে সবাই গাড়িতে উঠল।গাড়িতে যেভাবে সবাই এসেছিল সেভাবেই সবাই গেল।অর্থ্যাৎ আদনান আর তমা এক গাড়িতে এবং বাকিরা অন্য গাড়িতে।

গাড়িতে তমা এবং আদনান কেউ কারোর সাথে কোনো কথা বলছেনা।আদনান তো তমার দিকে একবার তাকাওনি পর্যন্ত।

তমা-এবার শেষ আমি।এবার একদম শেষ।সুইসাইড করতে গিয়ে বেঁচে ফিরসি ঠিকই কিন্তু আদনান ভাইয়ের হাত থেকে এবার আর বাঁচার কোনো উপায় নাই।আল্লাহ,যা করতে নিসিলাম।আল্লাহ মাফ করে দিও।এখন সবার কাছে যে কী করে মুখ দেখাবো।(মনে মনে)

তমা দেখছে যে আদনান শুধু গাড়িই চালাচ্ছে।তমাকে কিছুই বলছেনা।হঠাৎ তমা আদনানের শার্টে রক্ত দেখলো,যা কারোর নজরে পড়েনি।

(রক্তের কিছুটা হচ্ছে তমার গা থেকে লেগেছে,আর কিছুটা নিশানকে মারতে গিয়ে)

তমা-একি,আপনার গায়ে রক্ত এলো কী করে?আপনি…(হাল্কা চিল্লিয়ে বলতে নিল)
(কিন্তু তমা আর কিছু বলল না,কেননা সে ভাবল যে হয়তো তার হাত থেকে লেগেছে)

কিন্তু পরক্ষনেই তমার মনে হলো যে সে তো আরো অনেক আগের কথা।রক্ত দেখে তো মনে হচ্ছে খুব বেশি সময় হয়নি লেগেছে যে।তাই তমা আবার বলে উঠল,

তমা-আদনান ভাই,রক্ত লাগল কী করে?(কাঁদো কাঁদো গলায়)

আদনানের তমার কান্না দেখে আরো রাগ উঠে গেল।কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো।

তমা আদনানকে আর কিছু বলতে যেয়েও পারল না।নিশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগল।আর ভাবতে লাগল যে বাসায় তার জন্য কী অপেক্ষা করছে?নিশ্চয় সবাই খুব রাগ করে আছে তার উপর!হয়তো কেউই তার সাথে কোনো কথা বলবেনা।

তমাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামল।আদনান সুন্দর মতো গাড়ি থেকে নেমে তমাকে ধরে নামালো।সবাই তমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল।

মানিতা কাবির-অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তাইনা?অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস?এরকম একটা কাজ করতে তোর একবারো বুকে বাঁধল না?বুকে বাঁধল নারে,তাইনা রে?(কাঁদতে কাঁদতে বলল)

তমা-বলতে তো চেয়েছিলামই,কিন্তু তোমরা কী শুনতে চেয়েছিলে?চাওনি শুনতে।কিছু না করেও আমি দোষী হয়েছি।নির্লজ্জ,চরিত্রহীনের মতো অপবাদও লেগেছে আমার গায়ে।অথচ যে দোষ করল কই সে তো কিছুর শিকার হলোনা।উল্টে সে সকলের কাছে মহান হয়ে গেলো।(তাচ্ছিল্যের সুরে বলল)

তমার কথায় সবাই অনেক লজ্জ্বা পেল।বিশেষ করে মানিতা কাবির।সত্যিই তো আজ যদি তারা একটিবার তমার কথা শুনত তাহলে হয়তো এসবকিছু হতো না।

আয়েশা-আচ্ছা যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে।এখন সবাই প্লিজ ভিতরে ঢুকে যে যার ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।দেখো,তুরিন কতোটা উইক হয়ে গেছে।খালামনি,কিছু একটা আনো তো তুরিন কে খাইয়ে দিই।বেচারি সেই সকালের পর কিছুই খাইনি।

আবরার-আমরা কেউই কিছু খাইনি।

মানিতা কাবির-আমি টেবিলে খাবার দিতে বলছি।

এদিকে আদনান তমাকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।চলে যেতে নিলে তমা অনেকবার আদনানকে ডাকল কিন্তু আদনান শুনেও না শুনার ভান করে চলে গেলো।

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাচ্ছে।

আদনান-তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার আছে আমার।

সবাই আদনানের দিকে তাকালো।

আদনান-আমি তমুকে ভালোবাসি।

সবাই-কী?(অবাক হয়ে)

আফসানা হাসিব-কী বলতেসিস তুই এইসব,আদি?তমা জানে?নাকি তোর আর তমা দুজনেরই মত এটা?

আদনান-তমু কিছু জানেনা।ওকে তোমরা কিছু আস্ক করোনা অর বলোনা।ওহ কিছুই জানেনা এ ব্যাপারে।
মানিন,আমি তমুকে এই উইকের মধ্যেই বিয়ে করব।আর দেরি করাটা উচিত হবেনা।তমু ওর পড়াশোনা চালিয়ে যাক আবরারের মতন।আমি ওকে শুধু বিয়ে করে রাখবো যেন এরপরে কেউ ওরদিকে আঙ্গুল অবধি তুলতে না পারে।

মানিতা কাবির-কিন্তু এটা কী ঠিক হবে?না মানে,তুরিনের বাবার সাথে তো একবার কথা বলে নিতে হবে।আর তাছাড়া এতো তারাতারি কী করে সবকিছু হবে?

আফসানা হাসিব-আর তাছাড়াও,তমা কী রাজি হবে?

আদনান-তমুর ব্যাপারে তোমাদের না ভাবলেও চলবে।আর খালুর সাথে কথা তো।খালুকে তোমাদের আগে আমি এসবকিছু বলেছি।আর উনি কী বলেছেন জানো?

এই বলে আদনান তমার বাবাকে ফোন করল।

আদনান-খালু,আপনি সবাইকে বলে দিন তো আমাকে আপনার মেয়ের জামাই বানাতে আপনার কোনো আপত্তি আছে কিনা?

মিস্টার কাবির-নাহ,আমার কোনো আপত্তি নেই।পরিচিত কারোর হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে পারছি,এতো আমার জন্য আরো ভালো হলো।এখন আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।তুরিনের আম্মু,তুমি বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও।আমি আজকালের মাঝে চলে আসবো।

সবাই অনেক অবাক হলো মিস্টার কাবিরের কথা শুনে।

আদনান-সো,আই হোপ এখন আর কোনো সমস্যা নেই কারোর।

আফসানা হাসিব-তোমার ডেডকে তো কিছু জানানো হলোনা!তার মতামত নেওয়াটাও তো জরুরি তাইনা?

মার্জান হাসিব(আদনানের বাবা)-আরে আমি তো ২ পায়ে রাজি।আমার ছেলের বউই হবে তমু।

আবরার-মম,মানিন বিয়ের আয়োজন তাহলে শুরু করে দাও।(নাচতে নাচতে বলল)

“নাচবালিয়ে”😜❤️

কী?বিয়া কী দিয়া দিমু নাকি?

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here