“ফেমাস_বর🙈 পার্ট_১৩

#ফেমাস_বর🙈
#পার্ট_১৩
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা

তো পিছনে পিছনে এতোকিছু?(কেউ একজন তালি দিতে দিতে কথাটা বলে উঠল!

কথাটা বলে উঠল দিনা।

আয়েশা-আরে দিনা তুমি?এতোক্ষন কোথায় ছিলে?আমরা কত মজা করলাম এতোক্ষন,তুমি তো সব মিস করে গেলা।

দিনা-এসব ফালতু জিনিস কী করে মজার হতে পারে ভাবিমনি?আর জান্টুস এসব কী শুনছি?তুমি তমাকে বিয়ে করবে?কেন জান্টুস?পৃথিবীতে কী মেয়ের অভাব পরেছে?তুমি কী তমার মতো মেয়েকে ডিসার্ভ করো জান্টুস?তুমি তমার চেয়েও হাজার গুণে স্মার্ট,সুন্দর মেয়ে ডিসার্ভ করো।তুম…

দিনাকে থামিয়ে দিয়ে আদনান বলে উঠল,

আদনান-এনাফ দিনা!অনেক বলেছ,থাম এবার!আমার জন্য তমুই পারফেক্ট।আর কী বললে?হাজার গুনে স্মার্ট,সুন্দরী?এভাবে অশ্লীল টাইপ ড্রেস পরে চলাকে যদি তোমার স্মার্টনেস মনে হয় তাহলে ফাইন,আমার এখনের তমুই একদম পারফেক্ট আছে।তোমার কথা অনুযায়ী এরকম সো কল্ড স্মার্ট হওয়ার তার দরকার নেই।গট ইট?আর লিসেন দিনা,ফর দ্যা লাস্ট টাইম আ’ম ওয়ার্নিং ইউ,আর একটাদিনও তমুকে নিয়ে আমি যেন তোমার মুখ থেকে একটা কথাও না শুনি।আর বিয়ে সংক্রান্ত তো আরো নয়। ভুলে যেওনা যে তমু আমার উড বি ওয়াইফ।সো ওকে নিয়ে কিছু বললে কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে দিবোনা। তোমার যদি ইচ্ছা হয়,তাহলে তুমি এই বিয়েতে এটেন্ড করো আর নাহলে গো টু হ্যাল।ডিস্গাস্টিং পিপেল’স।

এই বলে আদনান ওখান থেকে চলে এলো আর দিনা দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ডেভিল লুক দিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,

দিনা-দাঁড়াও,মিস্টার আদনান হাসিব।তোমার বিয়ে হওয়াচ্ছি ঐ ফকিন্নির সাথে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।(মনে মনে)

আদনান ঘর থেকে বের হয়ে সোজা তমার ঘরে গেল দেখতে যে তমা কী করছে।আদনান দেখলো তমা রুমে নেই।তাই সে বারান্দায় গেলো।গিয়ে দেখলো তমা আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলছে।

তমা-কেন আমার এতো খারাপ লাগছে?কেন?আদনান ভাইয়ের বিয়ে হলেও কী নাহলেও কী?কিন্তু আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন?কেন(আস্তে আস্তে বলল)

বলতে গিয়ে তমার চোখ দিয়ে দু-ফোঁটা জল বেয়ে পরল।

তবে কথাটা আস্তে আস্তে বললেও আদনান তা ঠিকই শুনতে পেল।

আদনান বুকের বা পাশে হাত রেখে “আহহহহ”বলে উঠল।যেন পৃথিবার সকল সুখ আজ তারই কাছে।

তমা এখনো আকাশের পানে চেয়েই রয়েছে।তার আর কোনোদিকে কোনো হুসজ্ঞান নেই।

আদনান আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা।

আদনান-কীরে,আকাশের পানে তাকিয়ে কার কথা ভাবছিলি হুম?

তমা তারাতারি করে চোখ মুছে নিল।

তমা-কই কিছুনা তো।এমনিতেই রুমে ভালো লাগছিলনা,তাই আরকি।

আদনান-আমার সাথে শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে কী লাভ তমু!তুই কী করছিলি তা আমার ভালো করেই জানা আছে(মনে মনে)
ওহ,তো জানিস তো না?আমার যে এ সপ্তাহে বিয়ে!

তমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল আদনানের মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে।তমার খুবই কষ্ট হচ্ছে।অনেক কষ্টে তমা কান্না আটকিয়ে রেখেছে।

তমা-হুম,শুনেছি।মামার কোন কলেগির মেয়ের সাথে জানি।ভালো হবে,দোয়া করি আপনি সুখী হন।(ধরা গলায় বলল)

তমা আর কিছু বলতে পারলনা।আর কিছু বলতে গেলে তার পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হবেনা।

আদনান-বাহ,অনেককিছুই জানি দেখছিস।যাক ভালো।আচ্ছা তুই থাক,আমি দেখে আসি ওখানে বিয়ের কাজকর্ম কেমন হচ্ছে।

তমা আর কিছু বলল না।আদনান বলল ঠিকিই চলে যাবে কিন্তু চলে গিয়েও সে গেলনা।পর্দার পিছনে লুকিয়ে থাকল তমা কী করে তা দেখানোর জন্য।

আদনান চলে গেছে ভেবে তমা ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলল।

তমা-কেন,কেন আমার এতো খারাপ লাগছে?আদনান ভাইয়ের বিয়ে হোক বা না হোক তাতে আমার কী আসে-যায়!উনার বিয়ে তো কখনো না কখনো হবেই।সেটা মামার অফিসের কলিগের সাথেই হোক বা অন্য কারোর।কিন্তু আমার এতো খারাপ লাগছে কেন?(হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল)

আদনান তমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে অনেক অবাক হলো।একটা মেয়ে,তাও আবার তার নিজের আপন ফুফাতো বোন তাকে এতো ভালোবাসে,অথচ সে জানতে পারলনা?

আদনান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা।বারান্দায় ঢুকে গেল আবার।কিন্তু তমা তা দেখতে পেলনা।কেননা,তমা কাঁদতে কাঁদতে একদম নিচে বসে পরেছিল,যার কারণে আদনানকে দেখতে পেলোনা।

আদনান আর কিছু না ভেবে নিচে বসেই তমাকে জড়িয়ে ধরল।

তমা কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলো আদনান তাকে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।তাই তমা সাথে সাথে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।

তমা-এসব কী আদনান ভাই?আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরছেন কেন?আপনি কী ভুলে গেছেন যে দুদিন পর আপনার বিয়ে?আপনার বউ যদি কখনো জানতে পারে যে আপনি এভাবে অন্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন তা..(তমা একটা কিছু ভেবে চুপ হয়ে গেল,আর সেই একটা কিছু হচ্ছে আদনান তো তাকে ভাই হিসেবে জড়িয়ে ধরেছে!তাতে আর কে কী ভাববে!)

আদনান-কী হলো থেমে গেলি কেন?বল কী বলছিলি?

তমা-কিছুনা,সরি!আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরতেই পারেন।আপনি আমার ভাই হন,আমি শুধু শুধুই আপনাকে এতোগুলো কথা শুনালাম।সরি!

আদনান আর কিছু না বলে অট্টহাসিতে ফেটে পরল।

আদনান এতোই হাসছে যে আর কথা বলতে পারছেনা।আর তমা মুগ্ধ হয়ে আদনানের হাসির দিকে চেয়ে রয়েছে।কিন্তু খানিকবাদেই তমা চোখ সরিয়ে নিল আর মনে মনে বলতে লাগল,

তমা-ছি:ছি:ছি:।এটা আমি কী করছি?অন্যের বরের দিকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি?

আদনান কোনোমতে হাসি থামিয়ে তমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।আর তমা আদনানের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল।

অন্যদিকে,
নাহ,নাহ,নাহ!এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।এটা ইম্পসিবল।মম কেন তোমরা এসবে রাজি হলে?কেন তোমরা না করলেনা?

কথাটা বলে উঠল দিনা।দিনার কথা শুনে মাফিয়া হক(দিনার আম্মু)অবাক হলেও আয়েশা অবাক হলোনা।কেননা সে কয়েকদিন ধরেই দেখছে যে দিনা তমাকে সহ্যই করতে পারছেনা।

মাফিয়া হক(দিনার আম্মু)-কেন দিনা?এখানে সমস্যার কী আছে?আদনানের এবং তমার কারোরই কোন সমস্যা নেই আর না ওদের পরিবারের কারোর।তো যাদের বিয়ে তাদের সমস্যা না থাকলে তোর এতো সমস্যা হচ্ছে কেন?

দিনা-মম,তুমি বোধহয় একটা জিনিস জানোনা যে তোমার মেয়ে আদনানকে পছন্দ করে।তুমি…(দিনা কথা শেষ করার আগেই কেউ একজন দিনার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো)

ঠাসঠাস!!!!!

আর সেই কেউ একজনটা হচ্ছে মাফিয়া হক।

মাফিয়া হক-ছি:ছি:ছি:।এই তোর লজ্জ্বা করেনা নারে?তোর লজ্জ্বা করেনা?দুদিন বাদে তমা আর আদনানের বিয়ে আর আজ কিনা তুই এই কথা বলছিস?আর এই তোর সাহস হয় কী করে রে?তোর সাহস হয় কী করে তোর মা-ভাবির সামনে দাঁড়িয়ে এধরনের একটা কথা বলার?বল!আর শোন তুই আদনানকে পছন্দ করলেও কী?আদনান তো আর তোকে পছন্দ করেনা।আদনান পছন্দ করে তমাকে,তাও আবার শুধু পছন্দ না ভলোওবাসে।

দিনা-জাস্ট শ্যাট আপ!ভালোবাসা না?ভালোবাসা ইন মাই ফুট!ঐ থার্ড ক্লাসের সাথে জান্টুসের বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দিবোনা।কিছুতেই না।প্রয়োজন পরলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো কিন্তু তাও আমি তমার জান্টুসের সাথে বিয়ে হতে দিবোনা।

এই বলে দিনা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আয়েশা এবং মাফিয়া হক খুব ভালো মতনই বুঝতে পারছেন যে তমার এবং আদনানের নতুন জীবনে পা দেওয়ার আগেই একটা কিছু বিপদ ঘটবেই।

আয়েশা-আম্মু,এখন কী করব বলতো!দিনা তো চলে গেল,আর যেভাবে বলে গেল তাতে তো মনে হলো যে দিনা আসলেও একটা কেলেঙ্কারি করেই ছাড়বে।(ভয়ার্ত কন্ঠে বলল)

মাফিয়া হক-জানিনা কী হবে।আমি শুধু ভাবছি কী করে তমার এবং আদনানের এতো বড় বিপদটা হওয়া থেকে ওদের বাঁচাবো।আচ্ছা,শোন আয়েশা তুই সবসময় দিনাকে চোখে চোখে রাখবি।দেখে-শুনে রাখবি যে দিনা কী করে সারাক্ষন।

আয়েশা-আচ্ছা,আম্মু!

এদিকে,,,,,আদনানের অফিসে,

লিসেন এভ্রিওয়ান,এই ফ্রাইডে থেকে নেক্সট ফ্রাইডে অবধি আমি অফিসের সবকিছু দেখে শুনে রাখতে পারবনা।এই ওয়ান উইক অফিসকে সুন্দর মতো দেখে রাখার দায়িত্ব হলো আহসান সাহেব এবং রিমির।গট ইট?

সবাই-ইয়েস স্যার!

পিউু-বাট,স্যার কেন আপনি এই ওয়ান ইউক অফিসে আসতে পারবেননা,আ’ই মিন সেটা কী বলা যাবে?

আদনান-ওয়েল,এই উইকে আমার বিয়ে।সো বিয়ের সব ফাংশনে এটেন্ড করার জন্য আমি আসতে পারবনা।আমার বিয়ে হচ্ছে নেক্সট ফ্রাইডে।ঐদিন আপনারা সবাই ইনভাইটেড।এভ্রিবডি ক্লিয়ার?

বাকিরা-কনগ্রেচুলেশন স্যার!

আদনান-থ্যাংকিউ!

এভাবে সবাই আদনানকে একের পর এক কনগ্রেচুলেশন জানালো।শুধু পিউু বাদে।পিউু তো কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছেনা

পিউু-হোয়াট দ্যা হ্যাল।এটা হচ্ছেটা কী?আর তাছাড়া কার সাথেই বা বিয়েটা হচ্ছে?হু’স দিস ওয়ানাবি!আমাকে জানতেই হবে কার সাথে বিয়েটা হচ্ছে।আমাকে জানতেই হবে।

আদনানের নিজস্ব কেবিনে,

পিউু-মে আই কামিন স্যার?

আদনান-ইয়েস,কামিং!

পিউু-স্যার,কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কুয়েশটেন করতাম!

আদনান একবার পিউুর দিকে তাকালো।তারপর চোখ নামিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।

আদনান-লিসেন পিউু,এসব মিনিংলেসটাইপ ড্রামা আমার সামনে করবেনা।যা বলার তা স্পষ্ট বলবে!গট ইট?

পিউু-সরি স্যার।স্যার,আমার কুয়েশটেন ছিলো যে আপনি কাকে বিয়ে করছেন?আই মিন হু ইজ ইউর উড’বি?

আদনানের এবার রাগ উঠে গেল।এটা একান্তই তার পার্সোনাল ব্যাপার।এটার জন্য কী তার এখন জবাবদিহি করতে হবে নাকি!

আদনান-দ্যাট’স নন অফ ইউর বিজনেস।আর লিসেন,এই রিলেটেড আমি আর কোনো কথা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাইনা।নাউ গেট লস্ট।

পিউু আর কিছু বলতে গিয়েও পারলোনা।বের হয়ে গেল আদনানের কেবিন থেকে।

পিউু-কে আপনার উডবি তা তো আমি জানতেই পারবো স্যার!জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!(মনে মনে)

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here