#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
নুডুলস বানিয়ে তিথির(ছোট ননদ)জন্য নিয়ে এসেছে তৃধা।
” তিথি তোমার নুডুলস।”
” টেবিলে রেখে দাও।” মোবাইল দেখতে দেখতে বলে তিথি।
বাটিটা টেবিলে রেখে তৃধা তিথির দিকে তাকাই।
” কি করছো তিথি?”
” দেখছো না কাজ করছি।” বিরক্তি নিয়ে বলে তিথি।তৃধা বুঝতে পেরেছে তিথি তার সাথে কথা বলতে বিরক্তবোধ করছে তবে সে চাইছে তিথির সাথে ইজি হতে।
” আপুর বাসায় তোমার দিন কেমন কাটলো তিথি।”
” সেটা জেনে তুমি কি করবে?তোমার কাজ নেই নাকি?যাও না গিয়ে নিজের কাজ করোনা।দেখছো যে আমি একটা কাজ করছি।”
তিথির কথা শুনে তৃধা খুব কষ্ট পাই।সে তিথি নিজের ছোটবোনের মতো ভাবে কিন্তু তিথি কেন যেন তার সাথে বেশি কথা বলে না বললেও তা দায়সারা।তৃধা চলে যেতে নিবে তখন তিথি বলে উঠে,
” ভাবী শোন।”
” হ্যাঁ বলো তিথি।”
” পরেরবার রুমে ডুকার আগে নক করে ঢুকবে।ভুলে যেওনা আমি কোন ছোট বাচ্চা নয়।এবার আসতে পারো।”
তিথির কথা শুনে তৃধা খুব অপমানবোধ করে আর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘরের কাজ শেষ করে অফিসের কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসেছে তৃধা।এরই মধ্যে নন্দিনী নক না করে রুমে মধ্যে ডুকে পড়ে।
” কি করছো গো তুমি?”
হঠাৎ করো আওয়াজ শুনে চমকে যায় তৃধা।
” কি গো এভাবে চমকে গেলে যে?খারাপ কিছু বা লুকিয়ে কিছু করছিলে বুঝি?”
” আরে না না আপু সেরকম কিছু না আসলে হঠাৎ করে আপনার আওয়াজ শুনলাম তো তাই ভয় পেয়ে গিয়েছি।”
” তা কি করছিলে শুনি?”
” ও কিছুনা আপু,অফিসের কয়েকটা ফাইল দেখছিলাম।আপনি কি কিছু বলবেন আপু?”
” ও হ্যাঁ যা বলতে এসেছিলাম,আমার না একটু পায়েস খেতে ইচ্ছে করছিলো।আমার জন্য একটু পায়েস রান্না করো তো।রাতে খাবার পরে খাবো।”
” কিন্তু আপু সব রান্না তো শেষ।চুলাও বন্ধ করে দিয়েছি।”
” চুলা বন্ধ করেছো তো কি হয়েছে?আবার চুলা জ্বালাবে।এখন এতো বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি পায়েস বানানোর জন্য যাও তো দেখি।”
তৃধার বড় ননদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তৃধা ফাইলগুলো গুছিয়ে রেখে নিজের শাশুড়ীর রুমের দিকে পা বাড়ায়।
” মা আসবো।”
ফাতেমা বেগম তখন টিভি দেখছিলেন,তৃধাকে এই অসময়ে দেখে ফাতেমা বেগমের ভ্রু-কুচকে যায়।
” এসো।বলো কি বলবে?”
” মা আপু বলেছেন যে উনি রাতে পায়েস খাবেন।”
” তো কি?নন্দু খাবে তো তুমি না বানিয়ে আমার কাছে কেন এসেছো?”
” আসলে মা ফ্রিজে এখন বেশি দুধ নেই।এখন পায়েস বানালে কাল সকালে চায়ের জন্য দুধ থাকবেনা।”
” পরশুই না বাবু দুখ আনলো।”
” মা ওটাতো মাত্র এক লিটারের একটা প্যাকেট।৩ কাপের মতো ব্যবহার করা হয়েছে।এখন যা আছে পায়েস বানালে তা সব শেষ হয়ে যাবে।”
” আমি জানিনা কিছু।নন্দুর জন্য তুমি পায়েস বানাও।কিভাবে কি করবে তা তুমিই জানো।”
তৃধা চিন্তিত হয়ে ফাতেমা বেগমের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এখন অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে,না হলে তৃধা বের হয়ে নিজেই দুধ নিয়ে আসতো।আর এখন তৃধা বের হলে ঘরে আরেকটা অশান্তি হবে।অনেক ভেবে তৃধা তেজবীনকে ফোন দেয়।প্রথমবার তেজবীন ফোন রিসিভ করলো না দেখে আবারো ফোন দেয় তৃধা।এবার ফোন ধরে তেজবীন রাগী কন্ঠে তৃধাকে বলে,
” কি সমস্যা কি তোমার?এতোবার ফোন দিচ্ছো কেন?”
” আসলে একটা দুধের প্যাকেট লাগতো।আসার সময় নিয়ে এসো।”
” পরশুই না একটা আনলাম।ওটা শেষ নাকি?”
” না ওটার এখনো কিছুটা আছে।”
” তাহলে আরেকটা দিয়ে কি করবে?”
” আসলে আপু নাকি রাতে পায়েস খাবেন।এখন যা আছে তা পায়েস বানাতেই চলে যাবে।সকালে চায়ের জন্য থাকবে না।তাই আরেকটা আনতে বলেছি।”
তেজবীন আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দেয়।
চুলার মধ্যে পায়েসের জন্য যা লাগবে সময় কিছু মিশিয়ে চুলোর উপর তুলে দেয় তৃধা।এরমধ্যেই সেই শুনতে পাই তার ফোন বাজছে।চুলার আঁচ ছোট করে দিয়ে তৃধা নিজের রুমে আসে।কিন্তু রুমে এসে তৃধা দেখে নন্দিনীর হাতে তৃধার ফোন।তৃধা তাড়াতাড়ি এসে নন্দিনীর হাত থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে নেয়।
” আপু আপনি এখানে কি করছেন?আর আমার ফোন আপনার কাছে কেন?”
” ও আসলে…ফোন বাজছিল,ভাবলাম তোমাকে দিয়ে আসি।কিন্তু তার আগেই তুমি চলে এলে।আচ্ছা আমি যাই হ্যাঁ।”
নন্দিনী চলে যায়।ততক্ষণে তৃধার ফোনটাও কেটে গিয়েছে।নন্দিনী যাই বলুক না কেন,তৃধা ঠিকই বুঝতে পারছে আসলে নন্দিনী তার ফোন নিয়ে ঘটাঘাটি করছিল।এরমধ্যে তৃধার ফোনটা আবারো বেজে উঠে।তৃধা দেখে তার মা ফোন করেছে।
” হ্যালো মা।”
” কেমন আছিস অনি?(আনিশা)”
” এইতো মা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
” আমিও ভালো আছি।”
” বাবা কেমন আছে মা?”
” তোর বাবাও আছে ভালো।কিন্তু মারে তোর বাবার যে এ মাসের ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছে।”
” কবে শেষ হয়েছে মা?আর তুমি আমাকে এতোদিনে বলছো কেন?”
” আমি ভেবেছিলাম কয়েকদিন না খেলে কিছু হবেনা।কিন্তু এখন দেখলাম ওষুধ না খাওয়ার ফলে ওনার শরীর খারাপ করছে তাই না পেরে তোকে ফোন দিলাম।”
” মা তুমি চিন্তা করোনা।আজকের রাতটা একটু বাবাকে সহ্য করতে বলো।আমি কালকের মধ্যে বাবার ওষুধ পাঠিয়ে দেবো।”
” আচ্ছা মা ভালো থাকিস।জামাই কেমন আছে রে?আর তোর শাশুড়ী,ননদরা কেমন আছে?”
” হুম ভালো আছে সবাই।আচ্ছা মা রাখি এখন আমি চুলায় রান্না বসিয়ে এসেছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।সাবধানে থাকিস।”
তৃধা ফোন কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।তার নিজের উপর এখন প্রচুর রাগ হচ্ছে।সে কি করে এতোটা কেয়ারলেস হলো,তার বাবা ওষুধ শেষ কিন্তু সে জানেই না।
পরেরদিন,
আজ শনিবার বিদায় তৃধার অফিস দুপুরেই ছুটি হয়ে গিয়েছে।অফিস থেকে তৃধা সোজা ব্যাংকে চলে আসে বেতন তোলার জন্য।বেতন তুলে তৃধা প্রথমে নিজের বাবার জন্য ওষুধ কিনে তারপর ওনাদের জন্য কিছু ফলমূল কিনে আবারো রিকশায় উঠে বসে তৃধা।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তৃধা।ছোট একটা ফ্ল্যাটে থাকেন তৃধার বাবা-মা।তৃধার এখন কোন ভাই-বোন নেই।এখন নেই মানে তার একটা বড় ভাই ছিল।কিন্তু তৃধা যখন ক্লাস টেনে ছিল তখন একটা এক্সিডেন্টে তৃধার ভাই মারা যায়।তৃধার বাবা একজন রিটায়ার্ড স্কুল টিচার আর মা হচ্ছে এখন গৃহিণী।তৃধার বাবা-মায়ের এখন তৃধাকে ছাড়া আর কেউ নেই।এই ফ্ল্যাটাও তৃধাই টাকা জমিয়ে ওনাদের কিনে দিয়েছে।
এতো সবকিছু ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে যায়।
” আরে অনি মা তুমি এসেছিস।আয় আয় ভেতরে আয়।আজ কত দিন পর এলি।”
” এই নাও না বাজারগুলো রেখে এসো।আর এই নাও বাবার ওষুধ।সময় মতো খাওয়াবে কিন্তু।”
” ওসব তুই চিন্তা করিস না।দেখি তুই একটু বসতো।অফিস থেকে এতো দূর এলি।দাঁড়া আমি তোর জন্য একটু শরবত করে আনি।”
” আরে মা এতো ব্যস্ত হতে হবেনা।আমি ঠিক আছি।তুমি বরং এই বাজারগুলো রেখে এসো।আমি বাবার সাথে দেখা করে আসছি।”
রুমে এসে তৃধা দেখে তার বাবা শুয়ে আছে।তৃধার বাবা একজন হার্টের পেশেন্ট,তাই ওনাকে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়।এছাড়াও আরো বেশি কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে ওনার শরীরে।যার কারণে উনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
তৃধা তার বাবার পাশে বসে।ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম স্বরে ওনাকে ডাকে তৃধা।
” বাবা,বাবা।দেখে আমি এসেছি।একটু উঠে বসো।”
” মা এসেছিস তুই।এতোদিনে তোর এই অভাগা বাবাটার কথা মনে পড়লো বুঝি।” তৃধার তার বাবাকে উঠে বসতে সাহায্য করে।
” মনে তো সবসময় পড়ে বাবা কিন্তু কি করবো বলো চাইলেই তো আর আসা যায় না।”
” তা কেমন আছিস মা তুই?”
” আমি ভালো আছি বাবা।শোন তোমার ওষুধ আমি নিয়ে এসেছি।নিয়ম করে খাবে।এখন আমি আসছি।পরে আবার আসবো।”
” এইমাত্রই তো এলি।দুপুরের খাবারটা অন্তত খেয়ে যায়।” রুমে ডুকতে ডুকতে বলেন তৃধার মা।
” না মা এমনিতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছে।আর থাকলে দেরি হয়ে যাবে।বাড়িতে অনেক কাজ আছে।তোমরা খেয়ে নাও আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবে।আমি আজ আসছি সাবধানে থেকো।”
তৃধা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়।বেশি দেরি হলে আবার তার শাশুড়ী তাকে কথা শোনানোর থেকে বাদ যাবেন না।তৃধার মা অসহায় দৃষ্টিতে তৃধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি মনে মনে ভাবছেন না জানি মেয়েটার সাথে আবার কত দিন পর দেখা হবে।
চলবে…….