বিকেলে ভোরের ফুল পর্ব ১

চোখে পানির ঝাপটা পড়তেই আস্তে আস্তে চোখ খুলল ফুল। ক্লোরোফমের ডোজটাও অনেকটা কেটে গেছে। চোখ খুলে নিজেকে ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেল। হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধা পা দুটো ও বাঁধা। ফুলের নিঃশ্বাসে ফ্লোরের ধুলো উড়ছে। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে কারণ ওর মুখটা‌ টেপ দিয়ে আটকানো। চোখে ঝাপসা দেখতেছে হঠাৎ কেউ এসে ওকে ধরে উঠে বসালো। ফুল কোনরকমে বসে আছে মাথাটা নীচু করে মাথা খাড়া করার শক্তি নেই। এখানে কিভাবে আসল ফুল তা ও নিজেও জানে না। ওর শরীর থেকে কাঁচা ফুল আর কাঁচা হলুদের গন্ধ আসছে। দুগালে হলুদ মাখানো সেখান থেকেই হলুদের গন্ধ আসছে। আর গা ভর্তি কাঁচা ফুলের গয়না। পরনে একটা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা। ফুল গতকালের কথা মনে করার চেষ্টা করছে। গতকাল তো ওর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। ও স্টেজে বসে ছিল আর সবাই ওকে হলুদ মেখে ভুত বানিয়ে দিয়েছিল কত সুন্দর সবাই আনন্দ করছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পুরো বাড়ির সব আলো নিভে যায়। তারপর আর কিছু মনে নেই ফুলের। শুধু এটুকু মনে আছে কেউ একজন ওর মুখে রুমাল চেপে ধরে আর ও জ্ঞান হারায়। তারপর জ্ঞান ফিরে নিজেকে এই অর্ধ অন্ধকার রুমে দেখতে পেল।

বসে বসে ফুল ঢুলছে। ফুলের মতোই নরম শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে। পাশে দাঁড়ানো লোকদুটো কথা বলছে কি বলছে তা ফুলের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না ওর দৃষ্টি মেঝের ওপর। এভাবে কিছুক্ষণ পার হয়ে যায়। চেয়ার টানার শব্দে চমকে যায় ফুল তবুও মাথা তুলতে পারে না কারণ মাথাটা ওর ভিষন ভার হয়ে আছে। কিন্তু ও এটা বুঝতে পারছে ওর সামনে কেউ একজন চেয়ার টেনে বসেছে তার পা দুটোই দেখছে। ফুলের কোন রেসপন্স না পেয়ে ওর সামনে বসে থাকা লোকটা পাশের টেবিল থেকে পানির বোতল টা নিয়ে ফুলের মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। খুব জোরে মুখের উপর পানির ঝাপটা পড়তেই ফুল চোখ বন্ধ করে নিলো। তবুও ফুল কোন রেসপন্স করলো না। সামনে বসে থাকা লোকটা গার্ড দুজনকে ইশারা করতেই ওরা ফুলের হাত পা ও মুখের বাঁধন খুলে দিলো।

বাঁধন খুলে দিতেই ফুল জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলো। নিজেকে এখন স্বাধীন মনে হচ্ছে। এতক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল কতকাল ধরে এভাবে আটকে ছিল। কিন্তু মূহুর্তেই ওর খুশিটা দমে গেল সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে। লোকটা মাস্ক পড়া। ফুলের পিছনে থাকা বাতির আলোয় লোকটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আলোর বিপরীতে থাকায় লোকটা ফুলের মুখ এখনো দেখতে পাচ্ছে না। লোকটা চেয়ারে বসা অবস্থায় সামান্য ঝুঁকে ফুলের গাল চেপে ধরে। ফুল ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে তবে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না। লোকটা গার্ড দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“কি রে সঠিক মেয়েকেই তুলে এনেছিস তো??”

–“ইয়েস বস। এটাই আজমল চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে গতকাল মেয়েটার গায়ে হলুদ ছিল। কড়া গার্ড আর পুলিশের নজর এড়িয়ে মেয়েটাকে কিডন্যাপ করেছি।”

লোকটা স্মিত হেসে ফুলের গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,

–“গুড ভেরি গুড। এবার আজমল চৌধুরীর রিয়াকশন দেখার পালা। টিভি অন কর।”

গার্ড টিভি অন করে নিউজ চ্যানেলে দিলো। ফুল ও সামনে থাকা লোকটার থেকে চোখ সরিয়ে টিভির দিকে তাকালো। টিভিতে ব্রেকিংনিউজের হেডলাইনে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা,”” শিল্পপতি আজমল চৌধুরীর একমাত্র কন্যা হলুদের আসর থেকে উধাও””

একজন সাংবাদিক বলছে,

–“গতকাল রাতে সিলেটের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি আজমল চৌধুরীর একমাত্র কন্যার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। হঠাৎ করে বাড়ির সব আলো নিভে যায় এবং যখন আলো জ্বলে উঠে তখন সবাই দেখতে পায় যে হবু নববধূ হলুদের আসরে নেই। গার্ড এবং পুলিশদের ও অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। সবার ধারণা যে হবু নববধুকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু সময় বলছে অন্যকিছু। বারো ঘন্টা পেরিয়ে গেছে অথচ এখনও আজমল চৌধুরীর কাছে কিডন্যাপাররা কোন মুক্তিপণ দাবি করেনি। তাহলে কি আজমল চৌধুরীর কন্যা কিডন্যাপ হননি??সে কি ইচ্ছে করেই পালিয়েছে??তার কি কোন পছন্দের মানুষ ছিল??যাকে তার বাবা মেনে নেয়নি??সবার মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন। আর এর উত্তর দিতে পারবেন একমাত্র আজমল চৌধুরী,,,,, ইত্যাদী ইত্যাদী,,,,,,”

তখনই পুলিশ স্টেশনে আজমল চৌধুরীর গাড়ি এসে থামল। আজমল চৌধুরী গাড়ি থেকে নামতেই সব সাংবাদিকরা ওনাকে ঘিরে ধরে নানা রকম প্রশ্ন করছে যার কোনটার উওর তিনি দিতে পারছেন না। অবশেষে পুলিশরা এসে ওনাকে সেভলি ভেতরে নিয়ে যায়।

এটা দেখে লোকটা রুম কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। এরকম ভয়ানক হাসি দেখে ফুল ভয়ে গুটিয়ে নিলো নিজেকে। হাত-পা জড়োসড়ো করে বসে বসে কাঁদছে ফুল। লোকটা তার হাসি থামিয়ে বললো,

–“এক্সিলেন্ট এইজন্যই আমার সাংবাদিকদের এতো ভালো লাগে। তিল থেকে তাল করতে এদের এক মিনিট ও টাইম লাগে না। মাঝে মধ্যে ভাবি যে সাংবাদিক হলে ভালো হতো।”

লোকটা আবার এসে ফুলের সামনে বসে। ফুল ভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পিছিয়ে যায়। লোকটা ঘাড় কাত করে ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“বিখ্যাত শিল্পপতি আজমল চৌধুরীর মেয়ের এতো ভয়??ভেরি স্ট্রেন্জ। আমি যতদূর শুনেছি বাড়ির একমাত্র মেয়েরা যথেষ্ট সাহসী আর জেদি হয় বাট তুমি তো দেখছি তার উল্টো। বাই দা ওয়ে টিভিতে এসব কি বলছে তুমি নাকি তোমার পছন্দের মানুষের সাথে পালিয়েছো???”

ফুল কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

–“আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,,,,আমি বাড়ি যাব।”

–“ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো তোমাকে এখানে আনা হয়নি!!তাহলে কি করে ছাড়ি তোমাকে।”

–“আপনি যত টাকা চান সব পেয়ে যাবেন। আমার বাবা টাকা দিয়ে দেবে তবু ও প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।”

ফুলের কথা শুনে লোকটা হেসে বলল,

–“টাকা,,,হুহ,,,যদি টাকাই চাইতাম তাহলে ব্যাংক ডাকাতি করতাম তোমাকে কিডন্যাপ নয়।”

লোকটার এরকম কথায় ফুল ভয় পেয়ে যায়। এরা যখন টাকা চায়না তাহলে ওকে ধরে এনেছে কেন??কি চায় এরা??কোন খারাপ মতলব নেই তো??

–“দেখুন আমার বাবা যদি আপনাকে একবার ধরতে পারে তাহলে আপনাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না ভালোয় ভালোয় আমাকে ছেড়ে দিন তাহলে আপনিও বেঁচে যাবেন।”

একথা শুনে লোকটা ফুলের দিকে ঝুঁকে নিজের মাস্কটা আস্তে আস্তে খুলল। ফুল এবার স্পষ্ট লোকটার মুখ দেখতে পাচ্ছে। ফর্সা মুখে লাল লাল আভা ছড়ানো। ডার্ক রেড কালারের ঠোঁট আর চোখের মণি গাঢ় বাদামী রঙের। দেখে মনে হয় না লোকটা কিডন্যাপার ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হচ্ছে লোকটাকে। এতক্ষণে ফুল লোকটার পুরো চেহারাটা দেখলো। এতক্ষণ ধরে শুধু পরনের সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট আর মুখে মাস্ক পরা এটুকুই দেখছিল ফুল।

–“আর তোমার বাবাও জানে না যে আমি কি জিনিস?? আমাকে ধরা অত সহজ নয়।”

–“আমি কিন্তু চিৎকার করব!!”

–“করো চিৎকার তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। এই রুমের বাইরে পর্যন্ত তোমার গলার আওয়াজ পৌঁছাবে না মনে হয়।”

ফুল জানে ওর চিৎকার করার শক্তি নেই। কিন্তু এই লোকটা জানলো কিভাবে??কাল সকাল থেকে কিছুই খায়নি ফুল। তাই শরীরটা এখন খুব ক্লান্ত লাগছে। লোকে বলে বিয়ের দিন নাকি খিদে পায়না। কিন্তু ফুলের খিদে না পাওয়ায় অভ্যাসটা যে আরও দশ বছর আগে থেকে।

লোকটার ফোন আসতেই বেরিয়ে গেল আর ফুলকে বাঁধতে বলে গেল। গার্ড দুজন আবার ফুলকে বেঁধে দিল এবার চেয়ারের সাথে বাঁধল
বাইরে এসে লোকটা ফোন রিসিভ করল,

–“হ্যা বাবা বলো।”

–“হ্যালো স্পর্শ কোথায় তুই।”

–“সিলেটে আছি”

–“কি???তুই সিলেট কিসের জন্য গিয়েছিস?এখনি ফিরে আয়। তোর মা চিন্তা করতেছে।”

স্পর্শ কথার সঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,

–“আজকের নিউজটা দেখেছো??”

–“হুম” (নিচু স্বরে)

–“আমি তোমাকে বলেছিলাম না পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। আজ সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আজমল চৌধুরী পাপের টাকায় এত সম্মান অর্জন করেছে আর তার মেয়ে এক নিমিষেই সেই সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।”

–“দেখ স্পর্শ আমি অতীতে ফিরে যেতে চাই না বর্তমান নিয়ে থাকতে চাই। তুই ফিরে আয় এতেই হবে।”

–“রিল্যাক্স বাবা। শত্রুর মুখটা আমি টিভিতে দেখে শান্তি পাবো না। সামনাসামনি দেখার মজাই আলাদা। রাখি হ্যা,,,”

স্পর্শ ফোন কেটে দিয়ে আবার ফুলের কাছে আসলো। স্পর্শ ফুলের মুখোমুখি বসে গার্ড দুজনকে বলল,

–“বি কেয়ারফুল এই মেয়েটা যাতে কোনোভাবেই পালাতে না পারে।”

গার্ড দুজন মাথা নাড়ল। ফুল আবার কান্না মাখা কন্ঠে বলল,

–“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি??”

স্পর্শ হালকা হেসে বলল,
–“তুমি কোন ক্ষতি করোনি করেছে তোমার বাবা। আর তার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।”

–“তাহলে আমাকে কেন তুলে এনেছেন?? ছেড়ে দিন প্লিজ।”

বলেই ফুল শব্দ করে কেঁদে উঠলো। এটা দেখে স্পর্শ বিরক্ত হয়ে যায়। মেয়েদের এরকম নেকা কান্না ওর একদম পছন্দ নয়। স্পর্শ একটা ধমক দিয়ে বলল,

–“চুপপপপপ,,,,,না হলে এখনি মেরে লাশ বানিয়ে প্যাকেটে মুড়ে তোমার বাবাকে গিফট করব।”

এটা শুনে ফুলের কান্না আরও বেড়ে গেল। কাঁদার শক্তি নেই তবুও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এবার স্পর্শ ভীষণ রেগে গিয়ে ফুলের গাল চেপে ধরে বলল,

–“আর একবার সাউন্ড করবে তো ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। এভাবে কাঁদছো কেন??”

ফুল কান্নার বেগ কমিয়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
–“দেখুন আপনাকে আমার খুব ভয় লাগছে। আর তাছাড়া আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই এখানে দূরে আলো জ্বলছে আমার খুব ভয় লাগছে।”

বলেই ফুল আবার কান্না করে দিলো। স্পর্শের এবার ভালো লাগছে না এই কান্না মাথা ধরে গেছে। তাই গার্ডকে ইশারায় মাথার উপরের লাইট জ্বালাতে বলল। লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে স্পর্শ ফুলের গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,

–“নাউ হ্যাপি নাকি,,,,,,,,,,”

স্পর্শ আর কিছু বলতে পারলো না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফুলের দিকে। কাঁদার ফলে চোখের কাজল লেপ্টে আছে দুগালে হলুদের ছড়াছড়ি তবুও এতে যেন মেয়েটার সোন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে গেছে। গায়ে থাকা ফুলের গয়নাগুলো নেতিয়ে পড়েছে। ল্যাহেঙ্গাটাও ধুলোবালিতে মাখামাখি হয়ে গেছে। স্পর্শের সেদিকে কোন খেয়াল নেই ও এক ধ্যানে ফুলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওই চোখদুটো যেন ওর চেনা। ঠিক বারো বছর আগের দেখা সেই মেয়েটির মতো। সেই ছোট্ট মেয়েটির টানা টানা হরিণের মতো চোখ ছিল। হাসলে মেয়েটার চোখ জোড়া সামান্য সংকুচিত হতো। তাতে মেয়েটার সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেত। স্পর্শ মনে মনে ভাবল এই কি সেই মেয়ে যাকে ও বারো বছর আগে দেখেছিল। আচ্ছা হাসলে কি ওর গালে আগের মতোই টোল খায়?বারো বছর আগের মতোই কি ও দুষ্টুমি করে?? পুতুল নিয়ে কি এখনো খেলা করে?বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে কি কাগজের নৌকা ভাসায়?? রাস্তায় জমে থাকা কাদা পানিতে কি লাফায়??

স্পর্শ আর কিছু ভাবতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই রাগে ওর চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। স্পর্শ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারে জোরে এক লাথি মারে ফলে চেয়ারটা দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। স্পর্শের এরকম কান্ডে ভয়ে ফুলের গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। হঠাৎ করেই লোকটার হলো কি?? এরকম করছে কেন?? পাগল নাকি??

স্পর্শ দেয়ালে ঘুসি মারল। দেয়ালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মনে মনে নিজেকে বলছে,
–“না স্পর্শ তোর দূর্বল হলে চলবে না। মনে রাখিস তুই প্রতিশোধ নিতে এসেছিস। ওই পরিবারের সবাই তোর শত্রু। সবচেয়ে বড় শত্রু হলো আজমল চৌধুরী। ওই চৌধুরীকে শাস্তি দিতে হবে তোর। ভুলে গেলে চলবে না যে ওই চৌধুরী তোর জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে!!!তোর জীবনের বারোটা বছর কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে তোর ছেলেবেলা। মায়ের থেকে তার স্বামী কেড়ে নিয়েছে। তাই তোকে শক্ত হতে হবে। একটা মেয়ের প্রতি দূর্বল হলে চলবে না। তুই এখন যে মেয়েকে দেখছিস এটা সেই মেয়ে না। সে দশ বছর আগেই মারা গেছে। বি স্ট্রং স্পর্শ বি স্ট্রং।”

চোখ বন্ধ করে আছে স্পর্শ। গার্ড দুজন ও অবাক হঠাৎ করে স্পর্শের হলো কি?? জিজ্ঞেস করতেও ভয় পাচ্ছে যদি রাগ করে। তবু ও একজন জিজ্ঞেস করল,

–“বস এ্যানি প্রবলেম??”

স্পর্শ পিছনে ঘুরে বলল,
–“না। মেয়েটাকে খেতে দে।”

বলেই স্পর্শ বেরিয়ে গেল। একজন গার্ড খাবার আনতে গেল আরেকজন ফুলের পাশে দাঁড়ানো যাতে ফুল পালাতে না পারে। চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ফুল ভাবছে এ কোন বিপদের মুখে পড়লো। ওর সব বিপদের মুল কারন ওর বাবা। ওর বাবার ভুলের জন্য দশটা বছর ধরে মাশুল দিয়ে আসছে। নিজেকে আর পাঁচটা মেয়ের সাথে তুলনা করতে পারে না ফুল। জীবণটা ওর নরক করে দিয়েছে বাবা আর দাদী, এই মানুষ দুটোই ওর জীবনের কাল। ভেবেছিল বিয়েটা হলে এই নরক থেকে ও মুক্তি পাবে। কিন্তু না,এক নরক থেকে আরেক নরকে এসে পড়েছে ও। এরপর ওর সাথে কি হতে চলেছে তা ও নিজেও জানে না।

ফুলের এসব ভাবনার মধ্যেই গার্ড ওর জন্য খাবার নিয়ে এলো। তারপর ফুলের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে খেতে বলল। কিন্তু ফুল জেদ ধরে আছে ও খাবে না। না খেয়ে মরে যাবে তবুও খাবে না। অনেক জোরাজুরি করেও গার্ড দুজন ফুলকে খাওয়াতে পারল না। শেষে স্পর্শকে ফোন করল। স্পর্শ বাইরে গিয়েছিল। ফোন পেয়ে আবার এসেছে। স্পর্শকে দেখেই ফুল ভয় পেয়ে যায়। এটুকু সময় স্পর্শের সাথে থেকে ও বেশ বুঝতে পেরেছে ছেলেটা অসম্ভব ভয়ংকর।

চলবে,,,,,,,

#বিকেলে_ভোরের_ফুল

#পর্ব_১

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

আবার ফিরে এলাম নতুন গল্প নিয়ে। স্পর্শ ফুল নতুন জুটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here