বিষাক্ত প্রেম পর্ব ৩

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৪

আরহামের ঠোঁটের কোনে রহস্যময় আর হিংস্র হাসি ।ছেলেটির সামনাসামনি বসে নিজের হাতের ছুড়িটা ঘুরাচ্ছে ।চোখে মুখে ভয়ংকর হিংস্রতা ফুটে আছে ।ছেলেটি নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বলছে
-“আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?
আমি কি করেছি ?”
আরহাম ছেলেরটির দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে তার হাতের মধ্যে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে গরগর করে রক্ত ঝোড়ছে ।
ছেলেটি “আহহহ “ বলে জোরে চিৎকার করে ।
তা দেখে আরহামের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ।
ছেলেটি এবার কান্না করতে করতে বলে
-“আমি কি করেছি ?
আমাকে কেন এইভাবে টর্চার করছেন !”
আরহাম আরেক বার ছেলেটিকে ছুড়ি আঘাত করে ছেলেটির কাছে যেয়ে তার চুল গুলো মুঠিতে নিয়ে জোরে চেপে ধরে ।চিৎকার করে বলে
-“তুই কিছু করিস না ?
তোর সাহস কি করে হয় সেহেরের দিকে তাকানোর ওকে স্পর্শ করার !
কি জানো বলছিলি ?
ম** !
তোর সাহস কি করে ওকে বলার এর শাস্তি তো পেতে হবে ।
ওরে বিরক্ত উত্তাক্ত করার শাস্তি তোকে অবশ্যই পেতে হবে !”
ছেলেটি ভয়ে ভয়ে কান্না করতে করতে বলে
-“আপনি ওর কে হন ?
আপনি শাস্তি দেওয়ার কে !”
আরহাম আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাশে থাকা রড হাতে নিয়ে ছেলেটির পায়ে বাড়ি মেরে দেয় ।
ছেলেটি ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করতে লাগে আরহাম রাগে ফুসতে ফুসতে বলে
-“জানতে চাস তো সেহের আমার কি হয় ?
ও আমার বউ হয়
আমার জান প্রান আমার পুরো দুনিয়া আমার সেহের !
ওর জন্য সব পারি মারতে ও পারি মরতেও পারি ।
তুই আমার বউয়ের দিকে চোখ দেওয়ার সাহস করেছিস আরহাম খানের বউয়ের দিকে চোখ দিয়েছি এর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে ।”
বলেই বডি গার্ডদের ইশারা করে মারার জন্য বডি গার্ডরা ছেলেটিকে মারতে শুরু করে ।
আরহামের চোখ রক্ত বর্ন কোন কিছুতেই যেন তার রাগ পাগলামো থামছেনা ।রাগে মাথা চেপে ধরে আছে তার পাগলামো হিংস্রতা আরো বাড়ছে আর এই পাগলামোকে নিয়ন্ত্রন করার একটাই উপায় তার নেশা তার আসক্তি তার সেহেরররর !
আর এক সেকেন্ড ও দেরী করে না আরহাম তারাতারি করে ছুটে যায় সেই অন্ধকার কক্ষে যেখানে তার সেহেরকে তার ভালোবাসা অনুভূতি তার হৃদমাঝারের রানি কে বিভিন্ন রুপে বিভিন্ন ভাবে নিজের মনের সবটা দিয়ে ক্যানভাসে একেঁ বন্ধি করে রেখেছে !
তার পাগলামো তার জনুন সবটা জুড়ে শুধুই তার সেহেররর

ঘড়িতে রাত ১ টা বাজতে চলছে চারদিক অন্ধকার আচ্ছন্ন ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে কেউ কালো কাপড় আর মাস্ক পড়ে বাড়ির পিছনের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে গেটের সামনে বাধাঁ কুকুর গুলো দড়ি থেকে ছাড়া পাবার জন্য ঘেউ ঘেউ করছে ।কালো কাপড় পড়া ব্যক্তিটা অতি সাবধানতার সাথে বাধাঁ কুকুর গুলোর শরীরে বিষাক্ত ইন্জেকশন পুশ করে মিনিট খানিকের মধ্যেই কুকুর গুলো মাটিতে ছটফট করতে করতে মারা যায় ।তা দেখে মাস্ক পড়া ব্যক্তির ঠোঁটের কোনে হিংস্র হাসি ফুটে উঠে ।
আস্তে আস্তে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে ।বারান্ধায় উঠে আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ।
অন্ধকার আচ্ছন্ন রুমে ফেইরী লাইটের আবছা আলোকীত তেমন স্পষ্ট দেখা না গেলেও আবছা আলোয় অনেকটাই আলোকীত ।
সেহের বেডের উপর ঘুমে আছন্ন ।ব্যক্তিটি বেডের পাশে বসে হালকা আওয়াজে ফিসফিস করে বলে
-“বলেছিলাম না সেহের আজকের রাত তোমার জীবনের শেষ রাত হবে ।এই দেখ আমি ঠি ক আমার ওয়াদা রাখতে চলে এসেছি তোমাকে উপরে পাঠাতে হবে তো তাই না ?
আই জাস্ট হেট ইউ সেহের
তোমার প্রতি অনেক বছরের ঘৃনা জমে আছে ,আজ তোমার মৃত্যুর সাথে সাথে আমার প্রতিশোধ আর ঘৃনার অবসান ঘটবে ।
তোমাকে যে মরতেই হবে সেহের ।
তোমাকে বেশি কষ্ট দিবোনা সেহের তাই তো ঘুমের মধ্যে তোমাকে উপরে পাঠাবো
গুড বায় সেহের ”
কথা শেষ করেই আস্তে আস্তে পাশের বালিশটা হাতে নিয়ে নিজের সব শক্তি দিয়ে সেহেরের মুখের উপর চেপে ধরে নিশ্বাস আটকিয়ে যাওয়ায় সাথে সাথে সেহের নিজের চোখ খুলে হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগে সেহের যতটা ছাড়া পাবার চেষ্টা করে মাস্ক পড়া ব্যক্তিটা বালিশ তত জোরে চেপে ধরে ।সেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে হাত পা অবশ হয়ে আসছে চোখ থেকে পানি ঝড়ছে ।
হঠাৎ বাহিরে দাড়োয়ানদের বাশিঁর ফু সেহেরের কানে ভেসে আসছে ।রুমের বাহিরেও হাটা চলার শব্দ আসছে তা শুনেই মাস্ক পড়া ব্যক্তিটা কিছুটা ঘাবড়িয়ে যায় আসে পাশে তাকিয়ে দেখতে লাগে ।চেপে ধরা বলিশ কিছুটা হালকা হতেই সেহের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের পা উচুঁ করে সেই ব্যক্তি পেটে নিজের শরীরের সব জোর দিয়ে লাথ্থি মারে ।মাস্ক পড়া ব্যক্তিটি দেয়ালের সাথে বারি খায় তারপর আবার সেহেরের কাছে এসে নিজের পকেট থেকে ছুড়ি বের করে সেহেরের পেটে আঘাত করতে নেয় সেহের সাথে সাথে কিছুটা সরে যাওয়া তে ছুড়িটা হাতের বাজুতে লাগে ।সেহের সাথে সাথে গলগল করে রক্ত ঝোড়তে লাগে সেহের ব্যথায় “আহহহ” করে চিৎকার করে উঠে ।যেই সেই ব্যক্তিটি দ্বিতীয় বার আঘাত করতে যাবে সেহের পাশে থাকা ফুলদানীটা হাতে নিয়ে সজোরে আঘাত করে সাথে সাথে ব্যক্তিটা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে ।সেহের এই সুযোগে তারাতারি করে দরজা খুলে চিৎকার করে কান্না করতে করতে বাহিরে চলে যায় ।
সেহেরের কান্নার শব্দশুনে পুরো বাড়ির লোক ড্রইং রুমে জড় হয় সেহের তার বাবাকে দেখতেই তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে দেয় ।তার শরীর থরথর করে কাপছে হাতের বাজু থেকে রক্ত ঝোড়ছে ।তা দেখে বাড়ির সবাই ব্যস্থ হয়ে পড়ে ।সেহেরের মেজ চাচা তারাতারি করে ডক্টোর কে ফোন করে ।
সেহেরর বাবা তাকে সোফায় বসিয়ে হাতে পানির গ্লাসটা নিয়ে সেহেরের মুখের সামনে ধরে সেহের এক নিশ্বাসে পুরোটা পানি শেষ করে ফেলে ।সেহেরের বাবা মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে বেশ ভীত হয়ে গেছে চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ।সেহেরের বাবা সেহেরর হাতের রক্ত ঝড়া বন্ধ করার চেষ্টা করে রেগে বলতে লাগে
-“আম্মি এসব কি করে হলো ?
কে করেছে এসব !”
সেহের কাপঁতে কাপঁতে বলে
-“বা…বা ঐ লোক আমার ঘরে ছিলো ,সে আমাকে মা…মারতে চায় আ…আমার মুখে বালিশ চেপে ধরেছে ।
ও আমাকে ছাড়বেনা মেরে ফে…ফেলবে ।”
এতটুকু শেষ করেই বাবাকে আবার জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে ।
সেহেরের বাবা আর মেয়েকে কিছু জিগাসা করে না ।সেহেরের মা মুখে কাপড় চেপে কান্না করছে ।
নিজের মেয়ের এমন অবস্থা সয্য করতে পারছেনা ।এতটা বছর পর মেয়েটা দেশে ফিরে শান্তি পাচ্ছে না বার বার তাকে মৃত্যুর মুখমুখি হতে হচ্ছে কবে এই সবের অবসান হবে ?
কবে তাদের মেয়ে আর পাচঁটা মেয়ের মত স্বাভাবীক জীবন যাপন করতে পারবে !
পরে ডাক্টার এসে বেন্ডেজ করে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে যায় ।
সেই রাতের মত সেহের তার মায়ের সাথে থাকে সারা রাত কিছু সময় পর পর ভয়ে চিৎকার করে উঠে পুরো বাড়ির মানুষ কারোরই আর সেই রাতে ঘুম হয় না ।

কিছুসময় পূর্বেই ফযরের আজান দিয়েছে শীতের সকাল চারদির পুরোপুরি আলোকীত না হলেও হালকা আলো বাহিরে ছরিয়েছে চারদিকে হালকা কুয়াশা হাড় কাপা শীত না হলেও বেশ ঠান্ডা পরিবেশ ।
সেহেরকে ঘুমের ইন্জেশন দেওয়া হয়েছে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ।পাশেই কেউ হাত ধরে বসে আছে চোখ দুটো সেহেরের ঘুমন্ত চেহারার দিকে ।শান্ত দৃষ্টিতে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে তার রক্ত লাল চোখ দুটো আস্তে আস্তে শান্ত হচ্ছে ।
আলতো করে তার ঠোঁট দ্বারা সেহেরের কাপাল গাল হাত ঠোঁট ছুয়ে দিচ্ছে ।এখন জানো বুকের ভিতরের অস্থিরতা আস্তে আস্তে কমছে ।
কারো স্পর্শ পেয়ে সেহের আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে নিজের ঘুম ঘুম চোখে কারো আকৃতি দেখতে পারছে আরো ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখতেই তার ঘোলা ঘোলা চোখে আরহামকে দেখতে পায় সাদা পান্জাবীর উপর কালো শাল জড়ানো ভীত চোখ ।সেই সুন্দর চোখে দুটো লাল হয়ে আছে ফুলে আছে গভীর ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে
সেহের অস্পষ্ট স্বরে বলে
-“আ..আরহামমমমম !”
বলেই আবার তার ঘুম ঘুম চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যায় ।

নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এই মৃত্যুর মুখে দেখে যেন কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিলো ।মানুষ সব কিছু সয্য করতে পারে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোটা সয্য করতে পারেনা ।
প্রায় দু ঘন্টা যাবত এই একই দৃষ্টিতে তার প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে আছে ।

হঠাৎ ঘরে কেউ প্রবেশ করতেই আরহাম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সেহেরের বাবা এসেছে আরহাম ঘাড় ঘুরিয়ে আবার আগের মত বসে শান্ত কন্ঠে বলে
-“এসব কে করেছে ?”
সেহেরের বাবা মাথা নিচুর দিকে দিয়ে বলে
-“জানি না !”
আরহাম এবার রেগে ঘুরে চিৎকার দিয়ে বলে
-“জানিনা মানে কি ?
আমার এত এত গার্ড থাকার স্বর্থেও এই বাড়িতে সেহেরের উপর কেউ কি করে আক্রমন করতে পারে ?
আপনারা কোথায় ছিলেন ?
আর আমি কি বলেছিলাম যে প্রতিটা সেকেন্ড কেউ না কেউ জানো সেহেরের সাথে থাকে এক সেকেন্ডের জন্যে ও যেন তাকে একা না ছাড়া হয় !
পাচঁটা বছর আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছেন তার জন্য ক্ষমা করলেও আমার সেহেরের কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বোনা ।
মাইন্ড ইট
খুব দ্রুত আমি আমার সেহেরকে সারাজীবনের জন্যে নিতে আসবো তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন ।”
বলেই হুরহুর করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।দরজার বাহির থেকে সেহেরের মা সবটা শুনেছে ।আরহাম যেতেই সেহেরের মা রুমে প্রবেশ করে ।সেহেরের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে
-“এবার আমাদের সেহেরকে সবটা জানানো উচিত !
আমাদের মেয়েকে আর কতটা অন্ধকারে রাখবেন ।সত্য জানলে ভবিষত্যের জন্য সত্যের মুখমুখি হবার জন্য অন্ততো প্রস্ততি নিতে পারবে !”
সেহেরের বাবা দির্ঘ্যনিশ্বাস নিয়ে বলে
-“আমি সত্য বলে নিজের মেয়ের মরা মুখ দেখার মত শক্তি আমার মধ্যে নেই !”

আরহাম নিজের রুমের বেডে বসে আছে বাহিরের শীতল বাতাসে জানালার পর্দা গুলো দুলছে ।আরহামের চোখ জোড়া তার ফোনের স্কিনের ভেসে থাকা মেয়েটার ছবির দিকে ।আর তার হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলটা সেই ছবিতে ঠোঁটের উপর রেখে বুলাচ্ছে তার চোখের আর মনের তৃপ্তি মিটাচ্ছে সে ,এটা যেন তার নেশা !
আরহাম আলতো স্বরে বলে
-“তুমি চাইলে ও আমাকে ভুলতে পারবেনা সেহের !
আমি শুধু তোমার স্মৃতি না তোমার মন প্রান অন্তর জুড়ে আছি ।
হোক তা ভালোবাসার বা ভয়ের তোমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে তো শুধু আমারই বসবাস ।
তোমার স্মৃতি থেকে মুছে গেলেও তোমার ‌অন্তর জুড়ে ঠি-কই আছি তাই তো আজ আমার কাছে ছুটে এসেছো ।
তুমি আমাকে ঘৃনা কর বা ভালোবাসো তোমার অস্তিত্ব জুড়ে তো শুধু আমিই থাকবো তোমাকে আপস করে না পেলে পুরো দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনবো !”

চলবে…….❤️

❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here