বিষাক্ত প্রেম পর্ব ৩

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩

বাড়িতে ফিরার পর থেকেই কোন ভাবে শান্ত হতে পারছিনা বার বার উনার সেই গান সেই সুর কানে বাজছে বার বার চোখের সামনে তার চেহারা ভেসে উঠছে ।চোখ বুঝলেও তাকে দেখি আরো কাছে অনুভব করি ।আমার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝচ্ছিনাল।
কেন আমি বার বার আরহামের কথা ভেবে যাচ্ছি ?
কি সম্পর্ক আমার উনার সাথে ?
কেন আমি তার কথা বার বার ভেবে এমন পাগল হচ্ছি ?
কেন আমার এমন অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে !
কেন এক সেকেন্ডের জন্যও তাকে ভুলতে পারছি না !
তবে কি সে আমার কাছের কেউ ?

সন্ধ্যায় পার্টির জন্য রেডি হচ্ছি ।পড়নে রয়েল ব্লু কালারের ফ্লাপি স্কার্ট আর শর্ট টপস কমড়ে স্টোনের ব্লাক কালারের বেল্ট হালকা মেকওভার আর চুল গুলো ছেড়ে কার্ল করা ।
আয়নাতে নিজেকে একবার দেখে নিলাম না খারাপ লাগছেনা বেশ ভালোই লাগছে ।
মায়ের মুখে শুনেছি ছোট থেকেই আমার নাকি সাজগোজ বেশ পছন্দ ছিলো মায়ের কাছে প্রতিদিন বায়না করতাম বউ সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ।
হঠাৎ নিলাদ্রির ডাকে আমার ধ্রান ভাঙ্গে ।পিছনে তাকিয়ে দেখি নিলাদ্রি পুরোপুরি ভাবে রেডি তাকে বেশ সুন্দর লাগছে ।আমার দিকে ডেব-ডেব করে তাকিয়ে আছে ।আমি চোখের ইশারায় কি হয়েছে তা জিগাসা করতেই নিলাদ্রি উৎসুক স্বরে বলল
-“ওহহ সেহের তোকে যা লাগছে না !
আজ তোকে যে দেখবে ঘায়েল হবে ।আজ যে তোর কত আশিক আহত নিহত হবে তোর রূপের আগুনে উপরওয়ালা মালুম ।”
আমি হেসে বলি
-“হয়েছে হয়েছে আর আমাকে পাম দিতে হবে না এমনিতেই অনেক ফুলে গেছি এবার নিচে চল না হয় মায়ের কাছ থেকে নির্ঘাত বকুনি খেতে হবে !”
আমার কথা শুনে নিলাদ্রি বলল
-“যা বলেছিস এবার সত্যি সত্যি বকা খেতে হবে বড় মায়ের কাছ থেকে ।আমাকে তো তোকে ডাকতে পাছিয়েছে আর আমি কিনা গল্প জুড়ে দিয়েছি ।
তারাতারি নিচে চল !”
দুজন তারাতারি করে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াই ।সিড়ি দিয়ে নামার সময় লক্ষ করি বাড়িতে গেস্ট আসতে শুরু হয়ে গেছে পুরো বাড়ি বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে ।

অন্যদিকে মনযোগ দিয়ে যেই সিড়ি দিয়ে নামছিলাম হঠাৎ পায়ে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নেই সাথে সাথে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলি কিছুসময় পর অনুভব করলাম আমি শূন্যে ভাসছি !
আমি কোথায় আছি তা দেখার জন্য চোখ খুলতেই দেখতে পাই আমি আরহামের বাহুডোরে রয়েছি ।এটা সত্য নাকি মিথ্যা তা বোঝার জন্য আমি আবার চোখ বন্ধ করে খুলি দেখি না উনি সত্যিই আছে উনার হাত আমার কমোড়ে আর উনি মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আসে পাশের কোন কিছুর খেয়াল নেই তার ।আমার হার্ট বিট খুব দ্রুত গতিতে চলছে আমি ঢোক গিলে আসে পাশে তাকাই দেখি পার্টির সবাই আমাদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এর মাঝেই কেউ কানাকানি শুরু করে দিয়েছে আমি তা দেখে সরাসরি দাড়িয়ে পড়ি মাথা নিচু করে কাপাঁকাপাঁ গলায় “সরি “বলে তাকে কিছু বলার সুযোগ না গিয়ে সেখান থেকে দ্রুত পায়ে চলে যাই ।
একবারের জন্যও পিছনে ফিরে তাকাই না !

পুরো পার্টিতে একবারের জন্য ও আর উনার দিকে তাকাইনি ।কিন্তু কনক আর আফিয়া আমাকে বেশ ক্ষেপাচ্ছিলো এই বলে যে আরহাম নাকি বেশ কিছুসময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো ।আমিও তাদের কথা শুনে আড় চোখে উনার দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে লক্ষ করি যে উনি আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে ।
কিন্তু কেন ? উনি তো অন্যকাউ কে পছন্দ করে তাহলে আমার দিকে উনার এমন দৃষ্টি কেন ? কেমন জানো মাতাল করা দৃষ্টি !
আমি আফিয়া নিলাদ্রি কনকের সাথে গল্প করছিলাম এমন সময়ই বাবা আমাকে উনার কাছে ডাকে ।আমিও বাবার কাছে যাই সেখানে মা বাবার সাথে এক মধ্যেবয়স্ক মহিলা আর পুরুষ ছিলেন দেখেই মনে হচ্ছে বেশ উচ্চ পরিবারের ড্রেসআপ ও বেশ ভদ্র ।
আমি বাবা কাছে যেতেই বাবা বলেন
-“আম্মি উনাদের সাথে পরিচয় হও উনি এমপি মেহতাব সাহেব আর উনি উনার স্ত্রী ।”
আমি উনাদের দিকে ফিরে মুচকি হেসে সালাম দেই ভদ্রমহিলা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার থুতনিতে হাত রেখে বলে
-“কেমন আছ মা ?”
আমি মুচকি হেসে উত্তর দেই
-“জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো !
আপনি কেমন আছেন ?”
-“আমিও ভালো আছি ।
আজ কতটা বছর পর তোমাকে দেখছি আগের চেয়ে আরো বেশি মিষ্টি হয়েছে আমাদের মা টা ।”
আমি উত্তরে শুধু মুচকি হাসি ।আংকেল আন্টির সাথে টুকটাক কথা বলছিলাম এমন সময়ই আরহাম আন্টির পাশে দাড়ায় উনাকে দেখতেই আমার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে যায় উনি যেন আমার ভয় পাওয়াটা বেশ উপভোগ করছে মুচকি হেসে ।
হঠাৎ আন্টি আরহামকে ইঙ্গিত করে আমাকে বলে
-“এই হলো আমার ছেলে আরহাম !”
আমি আন্টির কথায় আরেক দফা শক খাই মানে আরহাম আন্টির ছেলে !
ভাবতেই অবাক লাগে আন্টি কত সুইট আর কিউট আর উনার ছেলে গার্লফ্রেন্ড থাকার শর্তেও মেয়ের সাথে ফ্লাট করে বেড়ায় !
আমি কোন মতে সেখান থেকে আন্টিকে বাহানা দিয়ে চলে আসি ।
পিছন দিকে তাকিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই একটি ছেলের সাথে ঢাক্কা খাই ছেলেটির গ্লাসের ড্রিংস সব আমার স্কার্ট পড়ে যায় ।ছেলেটি সরি বলতে বলতে তা পরিষ্কার করার জন্য হাত বাড়ায় ।আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে ইটস অকে বলে দূরে সরিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নেই ।
পিছনে থেকে শুনতে পাই সেই ছেলেটি তার পাশের লোককে বলছে
-“ভাই কি চিজ !
পুরাই একটা ম**।”
ইচ্ছে করছিলো ছেলেটিকে ঠাটিয়ে কয়েকটা দেই কিন্তু পরে বাবার সম্মানের কথা ভেবে চুপ হয়ে সোজা সেখান থেকে চলে যাই নিজের রুমে ।যেই ওয়াশরুম থেকে জামা পরিষ্কার করে বের হবো হঠাৎই কেউ আমাকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয় পুরো রুম অন্ধকার আচ্ছন্ন কিছু বোঝা যাচ্ছেনা ।বাহিরের মরিচ বাতির আলোতে বুঝা যাচ্ছে কোন এক পুরুষ কিন্তু তার চেহারা বোঝা যাচ্ছেনা ।আমার দু হাত তার এক হাতে বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে অন্যহাতে আমার কমোড় !
আমি ভয়ে কাপাঁকাপিঁ করছি কিছু বলতে যাবো তার আগেই লোকটি তার ঠোঁটজোড়া দ্বারা আমার ঠোঁট জোড়া বেশ শক্ত ভাবে চেপে ধরে তার স্বাদ নিতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে আমি ছাড়া পাবার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা আমার নিশ্বাস আটকিয়ে আসছে চোখ থেকে অঝোরে জল ঝোড়ছে ।তার স্পর্শগুলো ছিলো ভয়ংকর যেন সে অতি রাগে এমনটা করছে নিজের জ্বেদ কমানোর জন্য ।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে !
এটা যে সেই কিডন্যপারটা তা আর বুঝতে বাকি রইলোনা ।বেশ কিছু সময় পর ঐ লোকটা আমাকে ছেড়ে দেয় আমার হাতের বাধঁন আলতো করে দেয় আমি তাকে দূরে ঢাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কান্না করতে করতে নিচে বসে পরি ।
আমি কান্না করতে করতে বলি
-“কেন আমার সাথে আপনি এমন করছেন ?
আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি আমার পিছনে কেন পড়ে আছেন !
আমাকে মুক্তি দিন প্লিজ আমার পিছু ছাড়েন !”
লোকটি আমার কথাগুলো শুনে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে কোন শব্দ করছেনা আমি চিৎকার করে কান্না করছি আমার কান্না যেন ঐ রাক্ষস কে আঘাত করছে ।
আমার কাছে এসে আমাকে তার কাছে টেনে নিতে চায় আমি ঝাড়ি দিয়ে তাকে সরিয়ে দেই উনি আবার আমার কাছে আসে এবার ও আমি তাকে ঢাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই তৃতীয় বারের বেলায় তিনি জোর করেই আমার কাছে আসে আমার গালে উনি নিজের দু হাতে স্পর্শ করে করে আলতো স্বরে বলে
-“প্লিজ জান ডোন্ট ক্রাই !
আমি তোমার কান্না সয্য করতে পারিনা ।”
আমি রেগে মুখ ফিরিয়ে নেই ।লোকটি আবার বলে
-“কেন আমাকে এতটা রাগিয়ে দেও বলো তো ?
আমি যে তোমাকে অন্যকারো কাছে সয্য করতে পারিনা !
তোমার কাছে অন্য কেউ আসলেই তো আমি আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা ।
তুমি কেন বুঝনা ?
আমি ছাড়া তোমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা ।
তোমার সৌন্দর্য তোমার সবকিছু শুধুই আমার !
তোমাকে স্পর্শ করার শাস্তি তো সে পাবেই ।”
আমি চুপ করে বসে থাকি লোকটি আমার কাছে এসে আমার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সেখানে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দেয় ।তারপর আস্তে আস্তে অন্ধকার সাথে লোকটি মিশে যায় ।
এই লোক আমার বাড়ি পর্যন্ত পৌছিয়ে গেছে তাহলে কি আমি আমার বাড়িতেও সেফ না ?
এর জন্যই কি বাবা এতটা বছর আমাকে কানাডা রেখেছে !
সবকিছু ভেবে আমি বেশ কিছুসময় কান্না করে নিজেকে হালকা করে চোখ মুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবীক করে নিচে চলে যাই ।
সবাই আমার চোখ মুখ দেখে বার বার জিগাসা করে কি হয়েছে ?
উত্তরে শুধু বলি -“কিছুনা ”
পার্টিতে ফিরার পর দেখি আরহামের চোখ রক্তলাল রং ধারন করেছে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো ।
আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই ।
আমি পার্টি শেষ হওয়ার একটু আগেই নিজের রুমে চলে আসি সব বিরক্ত লাগছিলো ।
পার্টি শেষ হতেই এক এক করে সবাই চলে যেতে লাগে ।আমি সে সময় বারান্ধায় দাড়িয়ে ছিলাম ঠান্ডা হাওয়া বইছে হঠাৎ এমন কিছু দেখলাম যা দেখে আমার চোখ কপালে চলে যায় ।
যেই ছেলেটা আমার গায়ে ড্রিংক্স ফেলেছিলো পার্টিতে সেই ছেলেকে কয়েকজন কালো কাপড় পড়া লোক জোর করে টেনে মাইক্রো তে উঠাচ্ছে আমি তা দেখে তারাতারি করে নিচে যেতেই দেখি মাইক্রো গায়েব ।চলে গেছে !

অন্যদিকে ছেলেটি মাইক্রোতে উঠে হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে তাকে মারতে মারতে এক অন্ধকার বাড়িতে নিয়ে যায় ।পুরো বাড়ি অন্ধকার আচ্ছন্ন ।
ছেলেটিকে এক চেয়ারে হাত পা বেধেঁ বসানো হয় ।
হঠাৎ লাইট অন করতেই ছেলেটি নিজের চোখের সামনে বসে থাকা লোকটিকে দেখে অস্পষ্ট স্বরে বলে
-“আরহাম খানঁ আপনি ?”
আরহামের ঠোঁটের কোন রহস্যময় আর হিংস্র হাসি ফুটে উঠে !

চলবে……….❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here