বিষাক্ত প্রেম পর্ব ৭

বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট :৭

জ্ঞান ফিরতেই সেহের নিজেকে এক অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে ।ড্রিম লাইটের আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে সেহের নিজের মাথা চেপে ধরে আছে এখনো মাথা ভনভন করে ঘুরছে ।সেহের বুঝতে পারেনি অল্প একটু ড্রিংক্সের নেশা এতটা হয়ে যাবে নিজের বোকামির জন্য নিজের মাথায় বারি মারতে ইচ্ছে করছে ।হঠাৎ সব মনে পড়তেই চার দিকে নিজের ব্যাগ খুজঁতে লাগে ।পাশের টেবিলে চোখ যেতেই দেখতে পায় টেবিলের উপর তার ব্যাগ রাখা সেহের তারাতারি করে ব্যাগ হাতে নিয়ে ব্যাগের ভিতর সেই ফোন খুজঁতে লাগে ।ফোন পেয়ে তা হাতে নিয়েই তা ঘেটে দেখতে লাগে ,সব কিছু ঠি ক দেখে সেহের বেশ শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে ।
পরক্ষনেই সে এখানে কি করে আসলো তা মনে পরতেই
তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে এগিয়ে যায় ।দরজার কাছে যেতেই কাউকে ফোনে বলতে শুনে “আজ রাতেই ওকে শেষ করবো !”
সেহের তা শুনে ভয়ে কাপঁতে লাগে ।কে বলছে তা দেখার জন্য দরজা আবছা খুলতেই দেখে আরহাম ফোনে কথা বলছে ।সেহের তা দেখে আরো বেশি ভয় পেয়ে যায় তারাতারি করে রুমে এসে তার ব্যাগটা কাধেঁ ঝুলিয়ে জানালার কাছে যায় সেখান থেকে নিচে নামার জন্য যেই জানালা দিয়ে নিচে নামবে হঠাৎ কেউ পিছন থেকে ধরে ফেলে ।সেহের ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরতেই !

ঠাসস করে গালের উপর থাপ্পর পড়তেই মাথা উচুঁ করে তাকালো সেহের ।সাথে সাথে সেহেরের হাত গালে চলে গেল মনে হচ্ছে কোন লোহার পাত দিয়ে কেউ তার গালে সজোরে আগাত করেছে ।
চোখ থেকে সাথে সাথে পানি ঝড়তে লাগে ।সেহের তার এক হাত দিয়ে গাল ডলতে ডলতে সামনে ফিরে তাকায় দেখে আরহাম তার দিকে ভয়ংকর অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
আরহাম বাড়ি কাপিয়ে ধমক দিয়ে বলতে লাগে

-“জানালা দিয়ে কোথায় পালাচ্ছিলে ?
এখন কি হাত পা ভাঙ্গার শখ হয়েছে !”

সেহের নাক টেনে কান্না করতে শুরু করে দেয় ।আরহাম তা দেখে আবারো আরেক ধমক দেয় এবার সেহের আগের চেয়ে আরো জোরে কান্না করতে লাগে ।
আরহামের তা দেখে বেশ খারাপ লাগছে নিজের চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ।তারপর সেহেরের কাছে যেয়ে তার কাঁধে হাত রাখতেই সেহের নিজের কাঁধ থেকে আরহামের হাত সরিয়ে দেয় ।
সেহের রেগে কান্না করতে করতে বলে

-“এত ভারী হাতে এত জোরে থাপ্পর মেরে এখন আল্লাদ দেখানো হচ্ছে ?
আপনি আমাকে শুধু শুধু কেন থাপ্পর মারলেন ”

আরহাম আবার রেগে চিৎকার করে বলে

-“তুমি কেন জানালা দিয়ে পালাচ্ছিলে ?”

-“আমি পালাবোনা তো কি করবো ? আপনি আর ঐ রামিন মিলে আমাকে আটকিয়ে রেখেছেন কিছুক্ষন পর আমার সাথে খারাপ কিছু করে আমাকে খুন করে ফেলে দিবেন তা জানার পর ও আমি কি এখানে বসে বসে কির্তন করবো ?”

এবার আরহামের রাগ যেন চরম পর্যায় পৌছিয়ে গেছে ।মানে এই মেয়েকি পন করে নিয়েছে যে তাকে কোন কালেই বুঝবেনা ?এতটা অবুঝ কেউ কি করে হয় যে রাক্ষন আর রক্ষকের তফাত বুঝে না !
আরহাম রেগে দাতঁ কিটকিট করতে করতে বলে

-“মানে তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি খুন করার জন্য ?
আর ইউ ম্যাড ?”

-“ও হো ও একদম ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করবেন না আমি আপনাকে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছি আপনি বলেছেন খুন করে পানিতে ভাসিয়ে দিবেন ।
আপনি যদি জড়িত না থাকেন তাহলে আপনি কি করে জানলেন যে আমি ঐ হোটেলে আছি ?
ছি: ছি: আরহাম ভাইয়া আমি আপনাকে কত ভালো মনে করেছি আর আপনি কিনা শেষে ঐ রামিনের খারাপ কাজের সাথে জড়িত ?”

-“ও প্লিজ সার্ট আপ !
ডোন্ট কল্ড মি ভাইয়া অকে ?
যা তোমার মাথায় ডুকবে না তা নিয়ে কেন ভাবতে যাও !
তুমি ঐ হোটেল রুমে সেন্সলেস অবস্থায় ছিলে যেখানে পুলিশের রেট পড়েছিলো ।পুলিশ তোমাকে সেখানে এই অবস্থায় দেখে আমাকে কল করেছে আমি সেখানে গিয়ে তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি ।”

সেহের কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলে

-“পুলিশ আমার বাবাকে ফোন না করে আপনাকে কেন ফোন করেছে ?”

আরহাম আমতা আমতা করে নিচু স্বরে বলে

-“কারন সেদিন পার্টিতে আমার সাথে তোমাকে দেখেছে তাই তারা ভেবেছে তুমি হয়তো আমার কোন রিলেটিভ !এটা বলো তুমি ঐ হোটেলে কি করে পৌছালে ?”

সেহের ভয়ে ভয়ে আরহামকে বলতে লাগে

-“আ..আসলে আমার ফ্রেন্ডকে ঐ জানোয়ার ব্লাকমেইল করছিলো ।আমার ফ্রেন্ডের কিছু খারাপ ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো তাই আমি সেই ছবি উদ্ধার করতে ওকে ফাসাতে ঐ হোটেলে ঐ জানোয়ারের কথা মত গিয়েছি কিন্তু আমি নিজেই বাজে ভাবে ফেসে গিয়েছিলাম !”

আরহাম রেগে সেহেরের হাত চেপে ধরে বলতে লাগে

-“মানে নিজেকে কি মনে কর ? জাসির রানি ?
যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তো !”

-“আমি এখন ঠি ক আছি তো !
আর জাসির রানি ভাবার কি আছে আমি জাসির রানি ইই”

আরহাম ছোট ছোট চোখ করে সেহেরের দিকে নিজের অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ।নিজের ফোন বের করে কাউকে ভিতরে খাবার নিয়ে আসতে বলে ।মিনিট পাচেঁক পরই একজন সার্ভেন্ট খাবারের প্লেট নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ।খাবারটা রেখেই সার্ভেন্ট চলে যায় ।আরহাম খাবারের প্লেট নিয়ে সেহেরের সামনে বসে ।সেখান থেকে এক চামচ খাবার নিয়ে সেহেরের দিকে বাড়ায় সেহের খাবার দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।অন্যদিকে তাকিয়ে বলে

-“আমার ক্ষিদে নেই ।
আমি খাবো না !”

আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের জেদ করে বলছে সে খাবেনা ।তাই আরহাম আবার খাবারটা সেহেরের মুখের সামনে ধরে শান্ত স্বরে বলে

-“সেহের জিদ করোনা খাবারটা খেয়ে নেও !”

-“আপনি ভাবলেন কি করে আপনার থাপ্পর খেয়ে এখন আবার আপনার হাতে আমি খাবার খাবো !
মানে আমার কি কোন সেল্ফরিসপেক্ট নেই নাকি ?
আমি বাসায় যাবো আমাকে বাসায় যেতে দিন !”

-“তোমার বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তুমি এখানে আছো ।
ডোন্ট ওয়ারি কাল সকালে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো !”

সেহের বাচ্চাদের মত জিদ করতে শুরু করে দেয়

-“আমি বাসায় যাবো মানে এখনই বাসায় যাবো !
আমি বাসায় যাবো ,আমি বাসায় যাবো ।”

আরহাম এবার সেহেরের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় ।শান্ত স্বরে আরহাম বলতে লাগে

-“তুমি কি খাবারটা খাবে নাকি আমি অন্যকোন পথ অবলম্বন করবো ?”

সেহের মুখ বাকাঁ করে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে

-“আমি আপনার ধমকি তে ভয় পাই না !”

বলেই সেহের যেই উঠে যেতে নেয় আরহাম তার হাত চেপে ধরে তাকে আবার বেডে বসিয়ে সেহেরের কমোড় চেপে ধরে একদম তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ।
আচমকা এমন কিছু হওয়ায় সেহেরের চোখ ভয়ে বড় বড় হয়ে যায় সেহের বড় বড় চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে তার নিশ্বাস খুব দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে ।আরহাম গভীর দৃষ্টিতে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে সেহের আরহামের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ডোক গিলে নেয় ।
আরহাম আগের মত একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিস আওয়াজে বলে

-“আমি তোমার এত কাছে আছি যে কোন সময় যে কোন কিছু করতে পারি !
যে কোন কিছু মানে যে কোন কিছু
ইউ নো হোয়ার্ট আই মিন !
এখন ও কি তুমি ভয় পাচ্ছ না ?”

সেহের আরহামের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বাজা বাজা কন্ঠে বলতে লাগে

-“আ…আমি ভয় পা…পাচ্ছিনা অ..কে
জাস্ট বিকজ আপনি এতটা জোর করছেন তাই আমি খাবার টা খাবো !”

আরহাম বেশ বুঝতে পেরেছে সেহের ভয় পেয়েছে ।আরহাম বাকাঁ হেসে উত্তর দেয়

-“দ্যটস লাইক আ গুড গার্ড “

সেহের মুখ বাকাঁ করে বলে

-“এবার তো আমাকে ছাড়ুন !”

আরহাম সেহেরের দিকে ছোট ছোট চোখ করে নিজের ঠোঁটের কোনে কামড়িয়ে মুচকি হেসে বলে

-“ছাড়তে তো ইচ্ছে করছে না ,এভাবে থাকতে বেশ ভালো লাগছে !”

এবার সেহের রেগে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে

-“আপনি ছাড়বেন নাকি আমি আপনার হাতে কামড় দিবো ?
আমি কিন্তু খুব জোরে কামড় দিতে পারি !”

আরহাম ভয় পাওয়ার নাটক করে বলল

-“আহ !আমি তো ভয়ে পেয়ে গেছি ।
এখন আমার কি হবে !
তোমার এই কামড়ের সাথে আমি অবগত তো আমাকে এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই ।
এখনো তোমার কামড়ে অনেক দাগ আমার হাতে আছে
আমি জানি তুমি জাঙ্গলি বিল্লি !”

আরহাম তার কথা শেষ করে সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহের তার কথা শুনে হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে সবটা যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।এসব কি বলছে আরহাম সে কিছুই বুঝতে পারছেনা ।সে আবার কবে আরহাম কে কামড় দিলো তার তো মনে পড়ছেনা !
সেহের এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলে

-“আমি আবার কখন আপনাকে কামড় দিলাম ।
আমার তো মনে পড়ছেনা !”

আরহাম সেহেরের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সেহেরকে খাবার শেষ করতে বলে সেখান থেকে উঠে চলে যায় ।
সেহের আরহামের যাওয়ার দিকে বেশ কিছুসময় তাকিয়ে থাকে তারপর তারাতারি করে খাবার খেতে লাগে সে আরহামের সাথে জেদ করে খাবেনা বলে দিয়েছিলো কিন্তু সত্য তো এটা যে ক্ষুদায় তার পেটে ইদুঁর হাতি মহিষ দৌড়াচ্ছে ।

ফজরের আযান কিছু সময় আগেই দিয়েছে এখনো বাহিরে ভালো করে আলো ফুটেনি ।আরহাম তার রক্ত ভেজা হাতটা পরিষ্কার করছে আজ আবারো তার হাতে কেউ খুন হয়েছে ।আবারো কেউ তার সেহেরের দিকে হাত বাড়িয়েছে তার দেহ থেকে প্রান বের করে ফেলেছে ।
নিচেই রাফিনের মৃত দেহটা পরে আছে আরহাম তার দিকে একবার তাকিয়ে হিংস্র হাসি দেয় ।
এটা তো রাফিনের প্রাপ্য ছিলো ।আরহামের সেহেরের দিকে যে হাত বাড়িয়েছিলো ।সেহেরের দিকে যে হাত বাড়াবে তার সেই হাত কেটে দিবে যে বাজে চোখে তাকাবে তার চোখ উপড়ে ফেলবে ।
সেহের শুধু আরহামের !
যাকে পুরো দুনিয়া থেকে লুকিয়ে রেখেছে আর সব সময় তাকে আগলে রাখবে ।
আরহাম তার বডি গার্ডদের ইশারা করে ডেড বডিটা ফেলে দিতে ।বডি গার্ডরা তা টেনে নিয়ে যায় ।
আরহাম নিজের হাত পরিষ্কার করে ডেসআপ ঠি ক করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় ।
রুমের প্রবেশ করতেই দেখে সেহের অগোছালো ভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ।তা দেখেই আরহামের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে ।এই দুনিয়ায় তাকে এই একটাই তো জিনিস যা পাগল করে দেয় অগোছালো করে দেয় ।এই মেয়েটাই তো তার বাচাঁর সবচেয়ে বড় অবলম্বন !
যাকে দেখে তার মনে নতুন করে বাচাঁর স্বাদ জাগে ।
আস্তে আস্তে এক পা এক পা করে সেহেরের কাছে এগোতে লাগে ।
এখনো সেই আগের মত সেই ১৫ বছরের বাচ্চা মেয়েটি রয়ে গেছে আগের মতই ঘুমায় আগের মতই বাচ্চামো স্বাভাব পাচঁটা বছর কেটে গেছে তার সব স্মৃতি মুছে গেছে কিন্তু অভ্যাস সেই আগের মতই রয়ে গেছে ।
কতই না তার এই ছোট্ট হুরকে নিজের বাহুডোরে জরিয়ে সারারাত তাকে দেখে কাটিয়েছে ।রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে শুধু তাকে দেখে গেছে ।কিন্তু আজ নিজের সেই অধিকার থাকার স্বর্থেও কোন অধিকার খাটাতে পারছেনা ।নিজের ভালোবাসাকে দূর থেকে দেখতে হচ্ছে ছুয়েঁ দেখার অধিকার পর্যন্ত তার নেই ।
এসব ভাবতে ভাবতে আরহাম একটা দির্ঘ্য নিশ্বাস নেয় ।
আরহাম জানে সেহেরের এখন ঘুম ভাঙ্গবেনা ।সেহেরের প্রত্যেকটা স্বভাব আচরন থেকে খুব ভালো ভাবে সে পরিচিত ।
সেহেরকে ঠি ক ভাবে শুয়িয়ে তার পাশে বালিশ নিয়ে শুয়ে পরে ।সেহেরকে গভীর ভাবে দেখতে লাগে যেন পলক ফেললেই সে কোথাও হারিয়ে যাবে ।তার চুলে নিজের হাত বুলিয়ে দিতে ।
আরহাম সেহেরের ঠোঁটে নিজের আঙ্গুল দ্বারা স্পর্শ করতে করতে বলে
-“খুব বেশিদিন তোমাকে নিজের থেকে দূরে রাখবোনা !
খুব তারাতারি তোমাকে তোমার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনবো ।
ভালোবাসি আমার হুর !”

চলবে…….❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

আপনারা ঠি ক মত রেসপন্স না করলে লিখতে ভালো লাগেনা তাই মাঝে মাঝে গল্প দিতে দেরী হয় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here