বিষাক্ত বাঁধন পর্ব -১৬+১৭

#বিষাক্ত_বাঁধন
#পর্ব ১৬
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন ।

নিজের বিয়েতে বর রূপে তাসিন কে দেখে চমকে গেল তাহিয়া।যার সাথে মাত্র কয়েক দিন এর পরিচয় তার সাথে ওর বিয়ে কিন্তু বাবার বন্ধুর ছেলের কি হল?ওর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিছুই বুঝতে পারছেনা তাহিয়া।শুধুই ডেবডেব করে তাসিন এর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর রিয়্যাকশন দেখে তাসিন এর হাসি পেলেও তা চেপে রেখে সবার অগোচরে ওর কেনের কাছে মুখ নিয়ে বলল,বিয়ের দিনই বর এইভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন মানুষজন কি বলবে?

ওর এমন কৌতুকপূর্ন কথাতে তাহিয়া থতমত খেয়ে গেলো প্রথমে বুঝতে পারে নি কি বলেছে তাসিন। পরে বুঝতে পেরে দাতে দাত চেপে ফের আবার তাকালো তাসিন এর দিকে।ওকে আরো রাগ্তে এইবার তাসিন লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বলল, এইভাবে তাকিয়ো না আমার বুঝি লজ্জা করে না।

তাহিয়ার ইচ্ছে করছে তাসিন এর মাথা ফাটিয়ে দিতে কিন্তু নিজেকে সংযত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।আর তাসিন মনমতো তাহিয়াকে খোচাতে লাগল।তাহিয়া মনে মনে বলল,দিন আমার ও আসবে তখন দেখাবো মজা।এই বলে নিজের মনকে শান্তনা দিল।

এইদিকে জাহাঙ্গীর আলম হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, বন্ধ করো এই বিয়ে। আমার ছেলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এই মেয়ের কিন্তু তার জায়গায় অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে!এইটা আমি কিছুতেই হতে দেবো না।আর সোয়াইব(তাহিয়ার বাবার নাম) তুমি এটা কি করে করতে পারো?আমার সমাজে একটা মানসম্মান আছে আজ আমার ছেলের সাথে বিয়ে হবে বলে অন্য একজন এর সাথে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো?এই তোমার বন্ধুত্বের নমুনা?

বন্ধুর কথার জবাবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা তাহিয়ার বাবা মূলত তার স্ত্রী এসে বলেছে এই ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক আছে আর দুজন দুজনকে ভালোবাসে সেহেতু বিয়ে টা করিয়ে দেওয়াই ভাল। তা ছাড়া তার মেয়ে নাকি প্রেগনেন্ট ।এইসব শোনার পর মেয়ের ওপর প্রচন্ড রাগ হলেও এই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো শোয়াইব।কেনোনা এর সাথে একটা নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ জরিয়ে আছে।এতক্ষণ এইটাই চিন্তা করছিলেন যে বন্ধুকে কীভাবে মুখ দেখাবেন? কি বলবেন?সত্যি সত্যিই হাজির হয়ে গেছে জাহাঙ্গীর আলম। তোতলাতে তোতলাতে কোনো মতে বলতে চাইলো দ,,,দেক্ ,,,
তখনই হঠাৎ আইরিন বলল, ভাইজান কারন টা আমি আফনাকে ভালো ভাবে বলতে পারবো একটু এইদিকে আসেন ।বলেই ওনাকে টেনে মানুষ থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে বলল,আরে ভালো হয়েছে এমন একটা মেয়ে আপনার বাড়ির বও হয় নাই।

ওকে জাহাঙ্গীর আলম ওকে জিজ্ঞেস করে বসল যে কেন এমন বলছেন তিনি?
আইরিন একটু বেশি অভিনয় করে বললেন আগে ওয়াদা করেন কাওরে বলবেন না কিছু!

ওনি ওয়াদা করে বললেন ঠিক আছে করলাম এখন বলো।

আইরিন তকক্ষণাৎ বলল,আরে এই মেয়ের তো একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। ওই যে দেখছেন ওর পাশে যার সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে সেই।আর ও,,ও,,

জাহাঙ্গীর আলম বললেন ও কী?

ও প্রেগনন্ট এই বলে অচল দিয়ে মুখ ঢেকে অভিনয় করতেছে আইরিন।

জাহাঙ্গীর আলম সেটাকে বিশ্বাস করে বলল,সত্যি নাকী?
জবাবে আইরিন বলল, তা নয়তো কী?তাইতো আমি ওর সাথেই ধরে বেধে বিয়ে দিচ্ছি।আর আপনার সংসার টা বাঁচিয়ে দিলাম।

জাহাঙ্গীর আলম বললেন,অপেক ভালো করেছেন আপা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যাই আমি তাহলে ,এই বলে উনি চলে গেলো।

সবার নজর আইরিন দিকে যেনো চোখের ইশারায় সবাই জানতে চায় যে কি এমন বলল লোকটা সাথে সাথেই চলে গেলো।যে লোক এসে এত চিৎকার চেঁচামেচি করছিল ছেলের বিয়ে ভাঙ্গা নিয়ে সেই ব্যক্তি কিছু না বলেই চলে গেলো।

আইরিন সবার তাকানো লক্ষ্য করে বললেন, এত তাকানোর কিছু নেই।সবাই এসেছেন খেয়ে দেয়ে যাবেন আমরা কার সাথে মেয়ের বিয়ে দেবো সেটা আমাদের বিষয়।

ওর এইসব কাজ কেও না বুঝলেও তাসিন ঠিকি বুঝতে পারছে।মিট মিটিয়ে হাসছে ও আর বলছে,অনেক ভালো কপাল আমার শাশুড়ি পেয়েছি একটা 😅।

তাহিয়া চোখ রাঙিয়ে ওকে চুপ থাকতে বলছে যেনো।ওর এই বিষয়টায় তাসিন খুব মজা পায়।

🌸🌸🌸

অনেক দিন পর নিজেকে হালকা মনে আরিয়ান এর। যেই অনুভূতি গুলো ওকে ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল তা কিছুটা হলেও প্রকাশ করতে পেরে ভালো লাগছে।

কিছুক্ষণ আগে,,,,,
তুসির মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল সরিয়ে দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আরিয়ান। হঠাৎ মন বলে উঠল,ও তোর স্ত্রী ওকে ভালোবাসার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোর।নিজেকে নিজে সেই আধিকার থেকে বজ্ঞিত করিস না ।আরিয়ান সত্যি অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল এই মন আর মস্তিষ্কর যুদ্ধে।কি করা উচিত আর কি না তা যেন বিচার করার বুদ্ধি এই মুহূর্তে হারিয়ে ফেলেছে। কেমন একটা ঘরে চলে গিয়েছিল শেষে ওর মন মস্তিষ্কের মধ্যে মনই জয় হলো আর প্রথম বারের মতো তুসির কপালে,আর দু গালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।এর পর সরে এসে আবার নিজের বালিশে মাথা রেখে তাকিয়ে রইল ওর দিকে তুসি শুধু একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো।

বর্তমানে,,,,
আরিয়ান বার বার সেই ক্ষণ মনে করছে আর হাসছে ।সত্যি অসাধারন এক অনুভূতির দেখা পেয়েছে ও ।যা আগে কখনো না দেখেছে আর না কখনো অনুভব করেছে ।

আচ্ছা তুসি কি কখনো মেনে নেবে এই বিয়েটা। ও কি কোন অন্যায় করছে মেয়েটার সাথে ওর কাজটা শেষ হলেইতো মুক্তি দেবো বলেছিল তুসি কে।তবে একন কেনো ওর সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে ।এইটা কি কোনো সুখের অগ্রিম আশংকা নাকি কোনো _বিষাক্ত_বাঁধন এর বিষাক্ত অনুভূতি হতে চলেছে সেটা এখন সময়ই বলে দিতে পারবে।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।#বিষাক্ত_বাঁধন
#পর্ব_১৭
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন।

অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হলো তাসিন আর তাহিয়ার। এখন বিদায়ের পালা তবে তাসিন চিন্তিত তাহিয়াকে কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে।কেননা পরিস্থিতির চাপে পড়ে আর তাহিয়ার লাইফটা বরবাদ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই বিয়েটা করেছে। তবে ওর পরিবার এর কেউ জানে না।আর এমন বিয়ে করেছে যে নিজের সাথী হিসেবে কাওকেই আনতে পারেনি।আর অথচ তাহিয়ার মা বাবার এই নিয়ে কোনো আপত্তিও নেই ।থাকবে কি করে তারা তো তাদের বোঝা নামলেই বাঁচে।তাসিন এর খুব মায়া হচ্ছে তাহিয়ার জন্য। জীবনে কীভাবে এতগুলো দিন এইঘরে কাটিয়েছে তার কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে ও। ও তাহিয়ার মতামত নিয়েই যা করার করবে পরে এখন আপাদত এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে।

তাহিয়ার অশ্রু বাঁধ মানছেনা।আজ যদি তার মা থাকত তাহলে কখনোই এমন ভাবে নিজের মেয়ে কে বিয়ে দিতে পারতো?না পারতোনা কেননা ওর মা ওকে অনেক ভালোবাসতো।শেষে তাহিয়াকে তাসিন এর হাতে তুলে দিল ওর বাবা ।

গাড়ি তে পাশাপাশি বসে আছে।তাহিয়া আর তাসিন। তাসিন ড্রাইভিং সিটে আর তাহিয়া ওর পাশে ।এইটা হয়তো একমাত্র বিয়ে যেখানে বর নিজেই ড্রাইভিং করে তার বউ কে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন চিন্তা কেবল একটাই তাহিয়াকে কোথায় নিয়ে যাবে বাবার কাছে নাকি আরিয়ান দের বাড়িতে ?আরিয়ান রা এখন ঘরে নেই ওরা তো বেড়াতে গিয়েছে ।একদিন কোনো একটা হোটেলে থেকে পরের দিন আরিয়ান এর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হবে। আর ততক্ষণে ওরাও বাড়িতে চলে আসবে। উফফফ্ অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা শান্তির নিশ্বাস ত্যাগ করে পাশের সিটে তাকিয়ে দেখে তাহিয়া সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দুই দিনের দুর্বল শরীর নিয়ে তাসিন কে আর কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি তাহিয়া তার উপর কান্না করার ফলে আরো খারাট লাগতে শুরু করেছে তাই সিটে হেলান দিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেলো বুঝতেই পারেনি।

তাসিন গাড়ি রাস্তার একপাশে থামিয়ে তাহিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আর ভাবছে,ওকে দেখলে বোঝাই যায় না যে এত কষ্ট মনের ভেতর পুষে রেখেছে।দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল।উদ্দেশ্যে কোন হোটেলে যাওয়া।

প্রায় এক ঘন্টা পর একটা হোটেল সামনে আসতেই গাড়ি থামিয়ে দিল তাসিন।সাথে সাথে তাহিয়াও ওঠে গেলো ।আর বলল, আমরা কোথায় এসেছি?
ওর কথার জবাবে তাসিন বলল,এইখানে আজ রাত থাকবো।

কেন?
এমনেই।
আচ্ছা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
শুনবো সব কথা আগে চলো খাবার ব্যবস্থা করি আর পেটেও কিছু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here