বেলা_শেষে_ফেরা পর্ব ২+৩

#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_২+৩

#Writer_ Suchona Islam

তূর্ণা এবার গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেলো। সে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তন্ময় কি তাহলে তার চাকরি’টা নিয়ে নিবে। তার যে চাকরি’টা খুবই দরকার, তার বাবার দোকান তো নিলামে উঠেছে। তাই তো সে আকিদ তালুকদারের এই বিপদের সময়ে আপদ হয়ে আছে। আর যদি তার বিয়ে হতো তাহলে হয়তো এভাবে তার সাহায্য করা এতো সহজ হতোনা। ভাবতেই চোখ দিয়ে একটু নোনাজল গড়িয়ে পড়লো তূর্ণার। কি করবে, কি উত্তর দিবে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তূর্ণা দাড়িয়ে পড়ল। সেখানে লোকগুলো অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

“তূর্ণাকে কি খুব বেশি বলে ফেলেছি আমি। তাহলে ও এভাবে কাঁদছে কেনো?
ওর চোখের জল এখনো আমার বুকে আঘাত করে বারংবার। কি করবো এখন আমি?” তন্ময় গভীর মনে এসব নিজের সাথে প্রশ্ন করে চলেছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে না সে কি করবে। তার যে তূর্ণাকে কষ্ট দেওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে সে কষ্ট কেনো দিলো, ভাবাচ্ছে তন্ময়কে!

“সসসরি স্যার, আসলে আমি হঠাৎ এমন রিয়েক্ট করবো বুঝতে পারিনি। আই এ্যাম এক্সট্রেমলি সরি ফর দ্যাট!” হঠাৎ সে দাড়িয়ে যাওয়ায় আর লোকেরা তার দিকে এভাবে তাকানো দেখে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যায় তূর্ণা।

তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে, টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে আবার বসে পরেই পানি পান করে নেয়। তূর্ণা এবার একটু ভেবে বলতে শুরু করলো, “আসলে স্যার আমি তো তাকে কখনোই ভালোবাসিনি। সে একাই আমাকে ভালোবেসেছে। আর রইলো কথা সে অনেক বছর পরে এসে আমারই সামনে বসে আছে! তাকে আমি সম্মান করতে পারি তবে ভালোবাসতে নয়। কারণ সে কখনোই আমার ভালোবাসা ছিলোনা তাই!” তূর্ণা এবার হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ভাগ্যিস বুদ্ধি’টা কাজে লাগিয়েছিলো, না হলে কি যে হতো কে জানে!

“এক্সিলেন্ট মিস তূর্ণা!” বলেই তন্ময় একটু হাসির রেশ ফুটিয়ে তুলেছে। তবে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে সে। তূর্ণা কি না তাকে কখনোই ভালোবাসতো না। তাহলে কেনো সে তাকে বলেছিলো সে তন্ময়কে পছন্দ করে। নাকি ও শুধুই তন্ময়ের ফিলিংস নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কি হচ্ছে এসব। তন্ময় কেনো এতো গভীর ভাবে ভাবছে তূর্ণার কথাগুলো, কেনো?
যাই হোক না কেনো তূর্ণাকে সে আপাতোত ছাড়ছে না, এটায় নিশ্চিত সে। তূর্ণার বলা কথা গুলো তন্ময়ের মনের বেশ গভীরতায় পৌঁছে গিয়েছে। সে তূর্ণাকে শাস্তি দিবে, অনেক শাস্তি দিবে। তাই মনে মনেই একটা ডেভিল হাসি দিলো।

………………………
“কিরে ফোন করে ডেকে এনেছিস কিন্তু এখন দেখি মুখে কুলূপও দেওয়া। আরে তোর জন্যে আমার বিএফ চলে যাবে তো। ওকে তো আর প্রতিদিন দেখতে পারি না। তুই সাথে যেদিন থাকিস সেদিনই তো ওর সাথে কথা হয়, দেখা হয়। এখন এমন করে থাকলে দেখিস আমি কিন্তু রাগ করবো তারপর দুই দিন কথা বলবো না। হুহ!” একটু অভিমানের সুরে বললো মুনিয়া কথা গুলো। কিন্তু তাও তূর্ণা সেই একই ভঙ্গিমায় বসে আছে, কোনো প্রভাবই পরছে না ওর উপর। তা দেখে মুনিয়া রাগে একটা ঝাঁকুনি দিলো তূর্ণাকে। ঝাঁকুনিতে হুশ আসলে তূর্ণা এবার কান্না করে দিলো।

কি এমন হলো হঠাৎ যে তূর্ণা কান্নাই করে দিলো তা ভেবে মুনিয়া তূর্ণাকে বললো যে সে মজা করেছে, সে আর এমন করবে না বলেছে। কিন্তু তূর্ণা তাও থামছে না। এবার সে মুনিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো। তারা এখন একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আর তূর্ণার এমন কাণ্ডে মুনিয়া এবার আশেপাশে চোখ পরোখ করলে দেখে যে, তাদের দিকে তিন-চার জন লোক অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। মুনিয়া এবার তূর্ণাকে শান্ত হতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তূর্ণা একটু বেশি কান্না করলেই হেচকি-মেচকি তুলে, নাক টেনে টেনে কথা বলবে। আজও সে নাক টেনে আর হেচকি তুলে কথা বলছে।

“রাক্ষসটা আবার আমার জীবনে চলে এসেছে। আমি আর পারছি না। এইতো মাসও হলো না একটা ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচতে শিখেছি। এবার সে আমাকে টর্চার করার জন্যে তার অফিসে রেখেছে। ভালো কি সে একাই বাসতো আমি কি বাসতাম না তাকে!” বলেই আবার কান্না জুড়ে দিলো। মুনিয়া এখনও বুঝছে না সে কার কথা বলছে। এবার মুনিয়া জিজ্ঞাস করলো তূর্ণাকে, যে সে কার কথা বলছে। তূর্ণার কথা শুনে মিনিট এক থম মেরে বসে রইলো মুনিয়া।
এদিকে তার বিএফ কল করেই যাচ্ছে কিন্তু মুনিয়া মিনিট একের জন্যে ঘোরের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে। পাশে কারো কান্নার আওয়াজে তার জ্ঞান ফিরলো। তারপর ফোন চেক করে বিএফকে ফোন করে বললো আজ আর সে যাবে না সমস্যা আছে। তার বিএফ ও মন খারাপ করে চলে গিয়েছে, মুনিয়ারও মন খারাপ হয়েছে। তবে এবার বাকি ঘটনা শোনার পালা বলে বেশি মন খারাপ করতে পারলো না।

তূর্ণা আজ অফিসের সব ঘটনা একে একে মুনিয়াকে বলেছে। আর মুনিয়া গভীরতর মন দিয়ে ভেবেই যাচ্ছে। তূর্ণার কান্না সেই কখন থেমেছে। কিন্তু মুনিয়া যখন গভীর ভাবে ভাবতে থাকে তখন সে মাথার পিছনে দু’হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এখনও তাই করছে সে। আর তূর্ণা ফ্যালফ্যাল করে মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়।

তারপর তূর্ণার দিকে তাকিয়ে মুনিয়া বলতে শুরু করলো, “দেখ তূর্ণা! তন্ময় তোকে সত্যিকারের ভালোবাসতো। কিন্তু আমি এটা জানতাম না তুইও তাকে ভালোবাসতি। কারণ তোর ভাবটাই ছিলো ছমছমে একটা। যাক সেসব, ও তোর অফিসের এমডি এখন। সে হয়তো ভেবেছে তুই তাকে শুধুই কষ্ট দিসনি, অনেক কষ্ট দিয়েছিস। যার দরুন তুই এখন হারে হারে টের পাবি। আর সবচেয়ে ভাবার বিষয় হলো, ও এতোদিনের রাগ তোকে দেখা মাত্রই কেনো পুষতে চাইছে?
বুঝছি না আমি এবার। মাথা ধরে গেলো। এখন তোর জন্যে বিএফ তো উড়ে চলে গেল আমার। এবার আমাকে ট্রিট দে ছাগলের ঘাস। হুহ!” বলেই ছোট একটা ভেঙ্গচি দিয়ে মুখ অপরপাশে ফিরালো মুনিয়া। তা দেখে এবার তূর্ণার দারুন একটা ক্লোজআপ হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে ট্রিট দিলো। এটা মুনিয়ার পাওনা ছিলো। একে তো তূর্ণার চাকরি হয়েছে আজ আর তার জন্যে মুনিয়ার বিএফ চলে গেলো বলে। তাই সাধ্যমত কিছুটা জমানো টাকা থেকেই খাওয়ালো তূর্ণা মুনিয়াকে।

……………………..
“আপু তুমি কি আর বাবা-মা’র সাথে কথা বলবা না। এখন এভাবে আমাকে দিয়ে মিষ্টি কেনো পাঠাচ্ছো কেনো তুমি!” ছোট ভাই তামিমের কথায় তূর্ণা ফিরে তাকালো ভাইয়ের দিকে। ছোটভাই টা’র মাথায় হাল্কা করে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে তূর্ণা বললো, “আমি কথা বলবো। তবে এখন না, আমার চাকরির বেতনটা আগে আমার হাতে আসুক আমি তখন তাদের সাথে শুধু কথাই না। তাদের সাথে ঘুরবো, খাবো, গল্প করবো এবং সব করবো। তোরাই তো আমার সব। জানিস তামিম, তানভীর ছেলেটা আমাকে ভালোই বাসতো না। সে আমাকে দেখলেই একটা আগলা ভাব নিয়ে থাকতো। তার মায়ের সাথেও কথা বলে যা বুঝলাম, আমার মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েটা তার পছন্দ হয়নি। আর একদিন তানভীর তো বলেই বসলো। তার এক ফ্রেন্ডের বিয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে অনেক উপহার দিয়েছে। তার মানে কি বুঝেছিস?” হাল্কা করে তামিমের চুল এলোমেলো করে দিয়ে একটু হাসি মুখ করে তামিমকে প্রশ্ন করলো তূর্ণা।

“না আপু আমাকে বুঝিয়ে বলো, তাহলেই কিন্তু আমি শিখতে পারবো নতুন কিছু। আর ক্রেডিট’টা কিন্তু তুমিই পাবে। কারণ তুমি আমার পৃথিবীর বেস্ট আপু।” কথা’টা বলেই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো তামিম। তূর্ণা তার ভাইয়ের হাসিটায় সে নিজেও একটু হাসলো। সত্যিই তার ভাইয়ের হাসিটা তার কাছে মজার কিছু মনে হয়, কারণ তামিমের একটা বাঁকা দাঁত আছে। তামিম হাসলেই তূর্ণার হাসি পায়।
“আচ্ছা! শোন তবে। এই যেমন বিয়ে বাড়ির উপহার কিন্তু যৌতুক। আর ছেলেরা এইগুলো’কে আজকাল উপহার বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। আকার-ইঙ্গিতে কিন্তু সে ঠিকই যৌতুক চাইছে, তবে মুখে স্বীকার করছে না। এবার বুঝছিস!” তামিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে তূর্ণা ভারী নিশ্বাস ফেললো। আসলেই সে এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে। না হলে সে আত্নহত্যার পথ বেঁছে নিয়ে সত্যিই মারা যেত। তাই এসব মনে ভাবছে আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে।
“হুমমম বুঝলাম! তবে আমি কিন্তু কোনো বিয়ে করছি না আপু। যখন বাবার সাথে তুমি কথা বলবে তখন কিন্তু তোমাকে আমার এই কথাটাও জানিয়ে দেওয়া লাগবে। আমি কিন্তু বিয়েই করবো না। আর তোমার বিয়েতে কয়েকটা মেয়েকে দেখেছিলাম আমি। জানো ক্লাস ফাইভ’এ পড়া মেয়েটা আমায় প্রপোজাল করেছে। ভাবতেই আমার মস্তিষ্ক কাজ করে না। কেমন বেশরম মেয়ে, তা না হলে যেখানে তার সাথে আমার খেলার বয়স সেখানে সে কি না আমাকে প্রপোজ করলো। যাও বিয়ে কাট্টা আমার, চাই না কোনো বিয়ে টিয়ে আমি।” কথা’টা বলেই কেমন একটা “খান খান” ভাব নিয়ে বসে আছে। আর এদিকে ভাইয়ের কাণ্ডে তূর্ণার হাসি তো থামছেই না।

ছেলেটাকে পড়াতে বসেছিলো। অফিসের প্রথম দিন ভালোই কেটেছে বলে সেই জমানো কিছু টাকা দিয়েই তো আজ হাফ কেজি মিষ্টি বাসায় নিয়ে এসেছে। তামিমকে পড়ানো শেষ করে মিষ্টান্নোর প্যাকেট’টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কথোপকথন করছিলো। কিন্তু ভাইয়ের শেষ বলা কথায় আর একটা খান ভাব নেওয়ায় হাসি যেন থামছেই না। বোনের হাসিতে সে’ও হেসে দিলো।
তামিমটাও বোনের জিরোক্স কপি হয়েছে। কথায়, কাজে দু’টোতেই পটু। তামিম তার বন্ধুদের দেখেছে তাদের বন্ধুদের ভাই-বোনের চুল ছেড়া মারামারি। কিন্তু তার সাথে এমনটা কখনোই হয়নি। সে তার আপু’কে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসে তাই হয়তো এমন কিছুই তাকে স্পর্শ করে নি। অনেক কিছুই সে তার বোনের কাছ থেকে শিখেছে। সে’ও একপ্রকার তার আপু’র বেস্টফ্রেন্ড।

“বাবা আপু এগুলো কিনেছে আজকে তার চাকরির সুবাদে। আর এগুলা তোমাকে দিতে বলেছে। আমি আপু’র ওখান থেকে দু’টো খেয়ে নিয়েছি, খুব ক্ষুদা পেয়েছিলো বলে। আর বাকিগুলো তুমি আর মা খাবে।” তামিম কথাগুলো বলেই তার মা’কে রাতের খাবার দিতে আহবান করছে। আকিদ তালুকদার তো চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারছে না। সে জানে তার মেয়ে চাকরিতে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়া চাকরি হবে সে ভাবতেও পারেনি। অপরদিকে, শ্রাবণী তালুকদারেরও একই পরিহাস। সে’ও ভাবেনি এমন কিছু মেয়ের কাছে পাবে।
রাতে সবার খাবার খাওয়ার পর তূর্ণা একা একা খাবার খায়। মাঝেমাঝে আবার খাবার খায়’ও না। তাই সে পান্তাভাত করে রাতের খাবার’টা মাঝেমধ্যে সকালে খেতো। আজও তার পরিবারের সাথে খাওয়া হচ্ছে না বলে মন খারাপ। এতো খুশির খবর দেওয়ার পরেও সে পারছে না তার বাবা-মা’র সাথে একটু প্রাণ খুলে কথা বলতে। তার বিয়ের সেই ঘটনার পর থেকে তার বাবা-মা কথা বলতে চাইলেই চুপ করে থাকতো, মুখ দিয়ে কোনোই শব্দ বের করতো না। তাই তূর্ণার বাবা-মা আশা ছেড়ে দিয়েছে মেয়ের সাথে কথা বলার। তারা এখন জ্বলে-পুড়ে ছারখার হলেও মুখ ফুঁটে বলতে পারে না কিছু।

………………….

পরদিন রাতের বাসি ভাত পান্তা করে খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তূর্ণা। অফিসে হেটে হেটে যাচ্ছিলো। এমন সময় তন্ময় দেখে একটি মেয়ে হেটে কোথাও যাচ্ছে। পরোক্ষনেই তন্ময়ের মনে হলো এটা তূর্ণা। সে এক মনে তূর্ণার কোমড় ছাড়িয়ে কালো, ঘন চুল মেপে চলেছে। এই চুলের জন্যই তো তূর্ণার উপর তার প্রেমে পড়ার অস্ত্র। তূর্ণার হাটার ভঙ্গিমা’ও তন্ময়ের হৃদের স্পন্দন বাড়িয়ে তুলছে। এবার তূর্ণা একটা বাস স্টোপের সামনে দাড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছে। মায়াবী সেই চোখগুলো তন্ময়ের বুকে ঘায়েল করাই যথেষ্ট। তূর্ণার মুখশ্রী বারবার তন্ময় নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এবারেও তাই হলো। তূর্ণার লম্বা নাক, মায়াবী চোখ, গোলাপি ঠোঁট অবশ্য ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক দেওয়ায় একটু লাল বর্ণের হয়ে আছে। আর আজ সবচেয়ে অবাক করেছে তন্ময়কে যেটা সেটা হলো তূর্ণা আজ কলা পাতার রঙের মতো একটি শাড়ি পরেছে। তূর্ণাকে আগে শাড়ি পরতে তন্ময় দেখেনি তাই একটু বিস্ময় সে। মেয়েটি যাই পরে না কেনো খুব সুন্দর ভাবে তাকে মানিয়ে যায়। এমন একটা মেয়েকে জীবনে পাওয়া বড় সৌভাগ্যের তন্ময় মনে করে। তূর্ণার গায়ের রঙ’টা ধবধবে সাদা না হলেও, হলদে রঙের একটা ভাব আছে।

আজ তূর্ণা একটা সুতির কাপড় পরেছে। এটা তার মা’য়ের কাপড়। কাল পরতে পারে নি বলে আজকে মান-সম্মতের জন্যে কাপড়টা পরেছে। কপালে ছোট কালো টিপ দিয়েছে, আর চোখে কাজল ছাড়া সে আর কিছু দেয় নি। সকালে যখন পান্তাভাত খেতে বসেছিলো তখন সেখানে দেওয়া ঝাল আলুভর্তা খেয়েছিলো। আলুভর্তা তার খুবই প্রিয় খাবার। তূর্ণার মনে হলো ঝাল কম হয়েছে। তাই সে কাঁচামরিচ দু’টি এনে মেখেমাখে সকালের নাস্তা খেয়েছে, আর তাতেই ঝালে ঠোঁট লাল আরেকটু ফুলে’ও গিয়েছিলো। তবে এখন কিছুটা ফুলা ভাব’টা কমেছে। আর তাতেই তন্ময় ভেবেছে লাল লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটে।
হাতে একটা ঘড়ি পরেছে তূর্ণা। বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকায়। কারণ বাস আসার খবরই নেই। তার অফিসের সময়ও চলে যাচ্ছে, কি করবে সে। তন্ময় এতোটাই মগ্ন তূর্ণায় যে, সে তার ড্রাইভার’কে কখন থেকে গাড়ি থামিয়ে রাখতে বলেছে তার হুশই নেই। এবার হুশ ফেরায় ড্রাইভার’কে তূর্ণার সামনে নিয়ে যেতে বলে।

“মিস তূর্ণা, আপনি চাইলে আমার সাথে অফিসে যেতে পারেন। বাস তো আসছে না। আর আপনারও অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমিও আজ এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম আপনাকে দেখলাম, আর গাড়িটা থামালাম। আপনি চাইলে আমি লিফ্ট দিতে প্রস্তুত।” কথা’টা বলেই মুখে হাসির রেশ ফুটিয়ে তুললো তন্ময়।
তাহলে কি তন্ময়ের মাঝে আবারও ভালোবাসার রেশ ফুটেছে নাকি এটাও একটা বদলার পন্থা। এবার তূর্ণার কি হবে?

#ক্রমশ…

#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_৩

#Writer_ Suchona Islam

সামনের গাড়িতে তন্ময়’কে দেখে একটু চমকে উঠে তূর্ণা। পরোক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তূর্ণা বলতে শুরু করলো, “নো স্যার! আমি একাই যেতে পারবো। আর বাস তো কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে। মিরপুর থেকে ধানমন্ডি যেতে বেশি সময় লাগবে না। তবে আপনি বলেছেন আমাকে, এই’ই অনেক স্যার। ধন্যবাদ আপনাকে।” কথা’টি তূর্ণা মুখে বললেও মনে মনে সে তো তন্ময়কে আচার বানিয়ে খেয়েও নিয়েছে।
“খবিশ! আমাকে না জ্বালালে ওর যেন ভালোই লাগে না। আর ও হয়তো নিশ্চয়ই আমায় ফলো করছিলো, তাই তো সে জানলো কি করে আমি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। শয়তান!
“মিস তূর্ণা! আমি আপনাকে লিফ্ট দিতে চেয়েছি, কোথাও বেড়াতে নয়। আর আপনার জেনে রাখা উচিত লেইট আসা ব্যক্তি’কে আমার পছন্দ নয়। আমি মানবিকতার খাতিরে আপনাকে লিফ্ট দিতে চেয়েছি। আমিও তো একই অফিসে যাচ্ছি এবং রাস্তায় আপনাকে দেখতে পেয়ে ভাবলাম একসাথেই যাওয়া যাক। এবার আপনি চটজলদি গাড়িতে উঠে পড়ুন আমি বেশি সময় নিবো না!” কথাগুলো তন্ময় সামনের দিকে তাকিয়ে বলছিলো। বেশ রাগান্বিত গলায় কর্কশ কণ্ঠে।

ড্রাইভার হাবু তো তার মালিক’কে দেখে বিস্ময় হয়ে গিয়েছে। সে কখনোই তার মালিক’কে রাগী গলায় কথা বলতে দেখেনি। তাই অবাক হওয়ার’ই কথা। ড্রাইভার হাবু একবার তার মালিকের দিকে তো একবার তূর্ণার দিকে তাকায়। তূর্ণা তো বেশ বিব্রত পরিস্থিতি’তে পরেছে। ড্রাইভার হাবু’র হ্যাবলা’র মতো তাকিয়ে থাকা দেখে এবং বাস না আসায় তূর্ণা গাড়িতে গিয়ে উঠে পরলো। তন্ময় এবার বিশ্ব জয় করা একটা হাসি দিয়েছে, তা তূর্ণার চোখ এড়ায়নি।

ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো। তন্ময়ের মুখে হাসি দেখে তূর্ণা মনে মনে তন্ময়’কে আচ্ছামতো বকে চলেছে, “হনুমান একটা! আমাকে আজকাল বকতে’ও শুরু করেছে। এখন যদি আমার অফিসের বস না হয়ে আমার জামাই হতো তন্ময়। তা হলে ওকে আমি এতোক্ষনে কিমা বানিয়ে ফেলতাম। পাঁজি হুহ!” মনে মনে তূর্ণা পারে তো তন্ময়ের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে, তবে তন্ময়ের গোষ্ঠী তো এখানে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি বলে তন্ময়’কেই বকে চলেছে তূর্ণা।

সামনের একটা রাস্তায় কয়েকদিন আগে বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে কাজ চলছে। একবার ঝাঁকুনি খেলে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। রাস্তা’টা একটি গলির চৌরাস্তা।
এবার তন্ময় তূর্ণার উপর ঝাপিয়ে পরলো। তন্ময়ের এমন বেহেভিয়ার দেখে তো তূর্ণা ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছে। হঠাৎ ভয় পেলে মানুষের মুখ থেকে তখন অতি সুক্ষ্ম আওয়াজ’ও হারিয়ে যায় তূর্ণা পড়েছিলো একটি উপন্যাসে, আর আজ তা হারে হারে টের পাচ্ছে। আওয়াজ যেন মুখ থেকে বেরই হচ্ছে না। সামনের ড্রাইভার তো গাড়ি চালাতে ব্যস্ত, পেছনে কি হচ্ছে সে তা বুঝতে পারছে না। তার উপর গলি দিয়ে এখন গাড়িটা চালিয়ে নিচ্ছে তাই আর খেয়াল করেনি। তন্ময় তূর্ণাকে সিট বেল্ট পরিয়ে দিচ্ছে দেখে তূর্ণা অল্প হলেও একটু স্বাভাবিক হলো।

“জামাই করার এতোই শখ হলে আমাকে বিয়ে কেনো করছো না। বিয়ের পরে না হয় আমাকে কিমা বানিয়ো। বিয়ের পরে’ও আমি কিন্তু সুদে আসল তুলতে জানি।” বলে’ই একটা ডেভিলমার্কা হাসি সাথে চোখটেপ’ও দিয়েছে। তূর্ণার এবার বেশ লজ্জার সাথে রাগ’ও হচ্ছে। তন্ময় তূর্ণার মনে কথা জানলো কি করে! তূর্ণার তন্ময়কে দেখলে রাগ সাথে লজ্জা লাগবে ভেবে বাইরে তাকিয়ে রইলো।

……………………..
লাঞ্চ শেষে তূর্ণা ভাবলো বাকি কাজ গুলো সেরে নিতে। আজকাল তো তন্ময় তার উপর বেশ রাগ দেখাচ্ছে। তাই হাতের কাজ গুলো শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে’ই যেন একটু শান্তি পাবে তূর্ণা। দু’টো ফাইল তূর্ণা কমপ্লিট করেছে। তাই ভাবলো লাঞ্চ তো তার আগেই শেষ হয়েছে এবং ফাইলগুলো তন্ময়’কে দেখানো উচিত। তাই তন্ময়ের কক্ষের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তূর্ণা।

“মে আই কাম ইন স্যার!”
“সিওর, ইউ মে!”
তূর্ণা ভেতরে প্রবেশ করেই তন্ময়কে দেখতে পেলো। তন্ময় চুপচাপ অপরপাশে ফিরে দাড়িয়ে আছে। তূর্ণা মনে মনে ভাবছে তন্ময়ের কি মন খারাপ নাকি সে তার উপর খুব বেশিই রাগ করে আছে?
“সস্যার! এই ফাইলগুলো আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। আপনি একবার চেক করে দেখুন আমার কোথাও ভুল হয়েছে কি না!” মাথা থেকে তন্ময়ের কথা ঝেড়ে দিয়ে কাজের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পরলো তূর্ণা। তন্ময়ের কথা বেশি ভাবলেই সে তার মায়ায় জড়িয়ে পরবে তাই হয়তো।

“শেষ বেলায়__
শেষ কথাটা যেন হয়
একটু ভালোবাসাময়;
শেষ গানটিও__
সুরেলা, স্মৃতিময়।

শেষ স্পর্শটুকু যেন
জড়িয়ে রাখে মমতায়,
শেষ দৃষ্টিটুকুও
সকাতরে জানাক বিদায়!
নিঃশর্ত ক্ষমায়
মায়াবী দু’টি আঁখির,
নীরব অঙ্গীকারে
সাক্ষ্যে ও নিশ্চয়তায়!”

কবিতা’টি বলে’ই তন্ময় ফিরে তাকায় তূর্ণার দিকে ছলছল নয়নে। তূর্ণা যেন অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছে তন্ময়ের কবিতা শুনে। আজ তূর্ণার নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছে। তন্ময় তাকে আজ’ও ভালোবাসে অনেক বেশি। কিন্তু সে এমন’ই পরিস্থিতি’র চাপে পরে তূর্ণা তার মনের কথা’কে গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের পরিবারের কথা আগে ভেবেছে। এই তন্ময়’টা তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। কিন্তু সে এখন’ও নিরুপায়।

তূর্ণা বসা থেকে তন্ময়ের কবিতা শুনে সে দাড়িয়ে পরেছিলো। তার’ও চোখের কোনে’ও একটু অশ্রুশিক্ত। কিন্তু তন্ময়ের কাছে সেই চোখের জল প্রকাশ করলো না। ঠায় দাড়িয়ে আছে বলে তন্ময় তূর্ণার পাশে এসে’ই তাকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তূর্ণা তো এখন’ও অন্য জগতে তলিয়ে গিয়েছে। তূর্ণা’ও কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে, যেন তূর্ণাকে কেউ হ্যালুসিনেট করেছে। কি করছে ও নিজে’ও বুঝতে পারছে না।
“আমাকে ছেড়ে কেনো গিয়েছিলে তূর্ণা। আমি তোমাকে সত্যিকারের ভালোবাসতাম, এখনো বাসি। তুমি তো আমাকে বলেছিলে তুমি আমাকে পছন্দ করো, তাহলে কাল কেনো সবার সামনে তুমি মিথ্যা বললে। আমি কি তোমার কেউ’ই নই তূর্ণা। জানো তূর্ণা, আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পরে জাপানে চলে যাই আর দেশে যাই নি রাগে-কষ্টে। কিন্তু আমার মন যে ঠায় তোমাতে’ই থাকতো। সেখানে স্যাটেলড হয়েছি, বাবার কফি শপ’টাকে গড়িয়ে নিয়ে আজ আমি এতো বড় ব্যবসায়ী হয়েছি। ভাগ্যিস একটু বুদ্ধি’র উপায় অবলম্বন করেছিলাম বলে’ই আজ আমি এই পর্যন্ত পৌঁছেছি। অফিসের জন্যে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে বলে আমিও সম্মিত জানাই। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো আমার যাচাই করে তারপর লোক নিয়োগ করা উচিত। তাই ম্যানাজার’কে বলে আমি সবার সি.ভি.’টা কালেক্ট করি। আর তখন’ই আমার চোখ আটকে যায় তোমাতে। এর দু’দিন পরেই তো আমি তোমার জন্যে দেশে পাড়ি জমিয়েছি। আর ভাবেছি কখন আমাদের আবার চোখাচোখি হবে এবং আমি তোমার আঁখির অতল গহ্বরে ডুবে যাবো। আমি আর তোমাকে হারাতে চাই না। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড তূর্ণা, আই নিড ইউ এ্যানিথিং এ্যালস্। চার’টে বছর যে আমার কেমন নিঃসঙ্গতায় কেটেছে আমার। ভুলতে পারিনি আজ’ও তোমায়। আমার মন যে তোমার উপরে উপচে পরেছে, সে এই মায়া’র বাঁধন ছেড়ে যাচ্ছে না তূর্ণা।” কথা’টা বলেই তূর্ণাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেই তন্ময়ের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো দু’ফোটা।

এবার তূর্ণা ছিটকে গেলো এবং তন্ময়ের দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে থেকে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলো। আজ আর অফিসে মন বসলো না তূর্ণার তাই সে হঠাৎ’ই বাসায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো।

……………………..
পনে চার’টের দিকে বেড়িয়েছিলো তূর্ণা। এখন সে একটা সরকারী কুয়ার্টারের একটি পুলে’র কাছে বসে আছে, আর তন্ময়ের কথাগুলো ভাবছে। এভাবে আনমনে বসে থাকতে দেখে বৃদ্ধা-বৃদ্ধি এক দম্পতি সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের উপস্থিতি’তে তূর্ণা তাদের দিকে ফিরে তাকায়। তাদের দেখে’ই তূর্ণার মন বেশ কিছু’টা ভালো হয়ে গিয়েছে। দম্পতি’টা এক বাদাম ওয়ালা’র কাছে থেকে বাদাম কিনে এনে পুলে’র পাশে বসে’ই কুটকুট করে বাদাম খাচ্ছে। বৃদ্ধা ছিলে দিচ্ছে বাদামগুলো আর বৃদ্ধি’র সামনের দাঁত গুলো পরে ফোকলা হয়ে গিয়েছে এবং বাদাম খাচ্ছে ফোকলা দাঁত দিয়েই। বাদাম খেতে খেতেই বৃদ্ধি একটু তূর্ণার দিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতের হাসি দিলো। তা দেখে একচিলতে হাসি ফুটলো তূর্ণার। বৃদ্ধা তূর্ণার দিকে ফিরে তূর্ণাকে বাদাম খেতে বলেছিলো। তূর্ণা খাবে না বলেছে, আসলে তার এই দম্পতির মনোরম দৃশ্য’টা অপরূপ লাগছে। বৃদ্ধের যত্ন, আগলে রাখা’টা তূর্ণার মনের এতোক্ষনে বয়ে যাওয়া ঝড়’কে থামিয়ে দিয়েছে। তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হলে’ও তাদের বৃদ্ধ বয়সের ভালোবাসার জগতে থাকায় আর বিরক্ত করলো না তূর্ণা। বৃদ্ধদের দু’জনেরই বয়সে কুঁচকে যাওয়া মুখ’টা তূর্ণার কাছে দু’টো কিউট বাচ্চার মতো মনে হলো। তূর্ণার সাথে কিছু কথা হয়েছে সেই দম্পতির সাথে। তাদের থেকে জানতে পারলো তারা এখানে প্রতিদিন’ই আসে বাদাম হাতে। অপরূপ এই দৃশ্যটা ফোনে আবদ্ধ করে নিলো। যদি হয় কখনো দেখা হবে আবার হয়তো না’ও হতে পারে তাই।

বাসায় সন্ধ্যার কিছু’টা আগে ফিরেছে। বৃদ্ধরা যতক্ষণ সেখানে ছিলে তূর্ণা’ও সেখানে ততোক্ষণ’ই ছিলো। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বিছানায় শরীর’টা এলিয়ে দিলো তূর্ণা। বাসায় আসার আগে মুনিয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো তূর্ণার। তাই মুনিয়া জোর করে তাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যায়। ফুচকা তূর্ণার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। মুনিয়া আজকে ট্রিট দিয়েছে বলে দু প্লেট ফুচকা খেয়ে পেট ভরিয়ে এসেছে। ফুচকা’র ঝাল-টক না খেলে তো তার চলবে’ই না। তাইতো ঝাল-টক খেয়ে পানি খেতে খেতে’ই তার রাতের খাবার কমপ্লিট হয়েছে।

তূর্ণারা মিরপুর-১ এর হসপিটালের পাশাপাশি একটি বাসা’তে থাকে। ভাড়া বাসা’য় থাকে বলে আকিদ তালুকদার দু’তলায় ফ্ল্যাটটি’র উত্তর দিকের রুমটা নেয়। সেখানে দু’টো শোবার ঘর আর শোবার ঘরের সাথে এডজাস্ট করা ওয়াশরুম আছে সাথে দু’টো বারান্দাও, আর আছে একটি রান্নাঘর। রাতে আজকে কিছু’তেই ঘুম আসছে না তূর্ণার। শুধুই তন্ময়ের কথা ভাবছে। ভাবছে কি করে তার জীবনে তন্ময় নামক যুবকের আগমন ঘটে।

………………………….
তখন তূর্ণা অনার্সের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী ছিলো। আর তন্ময় মাস্টার্সের ছাত্র। তারা তখনো পরিচিত হয় নি। ভার্সিটি থেকে বনভোজনে যাবে অনার্স আর মাস্টার্সের ছাত্র-ছাত্রী’রা। আর এখান থেকেই তাদের পরিচয়পর্ব শুরু হবে।

তূর্ণা তো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। মুনিয়ার সাথে তূর্ণার পরিচয়’টা নবম শ্রেণি থেকে, তারপর থেকেই তারা একসাথে কলেজ এবং ভার্সিটি’তেও আছে। নবম শ্রেণির পর থেকেই দু’জন বেস্টফ্রেন্ড। মুনিয়াদের অবস্থান একটু ভালো, বলতে গেলে একটু ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে মুনিয়া। বনভোজনের কথা শুনে দু’জনেই খুব খুশি হয়েছিলো। কিন্তু পরোক্ষনেই তূর্ণার খারাপ লাগলে’ও মুনিয়া তাকে সাহায্য করেছে কিছু’টা।

তূর্ণা এবং মুনিয়া অনেক বুঝিয়ে তূর্ণার বাবা-মা’কে রাজি করিয়ে বনভোজনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তাদের বনভোজন বান্দরবানের, দেবতাখুমে। তূর্ণা প্রকৃতির এই লীলা দেখে প্রকৃতির প্রেমে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাসে করে বনভোজনে যাচ্ছে সবাই। সারা রাস্তায় তূর্ণা প্রকৃতি বিলাস করতে করতে গিয়েছে। স্পটে পৌঁছে’ও তূর্ণার একটু খারাপ লাগা কাজ করছে না বরঞ্চ খুবই ভালো লাগছে।

#ক্রমশ…

(গল্পটি কেমন হচ্ছে আপনাদের মতামত পোষণ করুন। তাহলে আমিও আগ্রহী হয়ে উঠবো গল্প লেখায়। আপনাদের একটি মতামত আমার আগ্রহের শেষ সীমা। সকলেই পাশে থাকুন।
স্ববিনয়ে পড়ুন এবং ধন্যবাদ সকলকেই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here