ভালোবাসার পরিনতি পর্ব ১৪

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৪

“কে কল করেছে? তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে? ”
“কি ভাবে যে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছি না? ”
“কোনো খারাপ খবর আছে?”
“কথাটা শুনে তুমি সহ্য করবে পারবে না, তোমার মনে হবে,,,,,, ”
“যতো খারাপ খবর হোক, তুমি বলো?”
তিহান আমার দু’গালে হাত দিয়ে বললো,
“তোমার জব হয়ে গেছে, সামনের মাসের এক তারিখ জয়েন করতে পারবে হাহাহাহ্”
“সত্যি জব হয়ে গেছে ইয়য়য়ে ” বেশি খুশিতে তিহানকে জড়িয়ে ধরলাম।
“খুশির খবরে যদি এভাবে জড়িয়ে ধরো তহলে রোজ খুশির খবর দিবো ”

তিহানের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে ফুপিকে খবরটা বললাম, শুনে তো খুশি হলো আর বললো রাতের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবে। বাবা-মাকে কল করে জানিয়েছি তারাও অনেক খুশি। সবাই আমাকে ভালো রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। অনেক ভাগ্য করে শ্বশুর বাড়ি, বাবার বাড়ি পেয়েছি। সমাজের যেসব ডিভোর্সি মেয়ে আছে তাদের ভাগ্য আল্লাহ যদি আমার মতো করে দিতো তাহলে তাদের কোনো কষ্ট থাকতো না।

বিকেল বেলা তিহান,ইশান ঘুমাচ্ছে আর আমি, রাফিসা, ফুপি ছাদে গল্প করছি এবং অনেক গাছ আছে সেগুলোর পরিচর্যা করছি। রাফিসা হঠাৎ বলে উঠলো,
-আম্মু দেখো এই মেয়েটা কতো কিছু কিনে এনেছে, আজ আমার বাবা থাকলে আমাকেও অনেক কিছু কিনে দিতো

আমি ওর এমন কথার উওর কি দিবো বুঝতে পারছি না বাবা মায়ের অভাব তো কেউ পূরণ করতে পারে না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ফুপি বললো,
-আমার মিষ্টি দাদুর কি লাগবে বলো, আমি কিনে এনে দিবো?
-আমি এই মেয়েটার মতো নিজে দোকানে গিয়ে আমার যা পছন্দ তাই কিনবো
-আচ্ছা আমি তোমাকে দোকানে নিয়ে যাবো
-সত্যি নানু তুমি নিয়ে যাবে?
-হুম তবে আমাকে দাদু বলবে নো নানু ওক্কে।
-ওক্কে।

এর মধ্যে তিহান ইশানকে কোলে নিয়ে এসে বললো,
-এই যে আপনার আরেক নাতি যে ঘুম থেকে উঠে গেছে তার কি খেয়াল আছে?
-হ্যাঁ আমার দুই নাতি-নাতনীদের আদর করতে হবে তো দে আমার কাছে।
-এই নেও।

তিহান আমার কাছে এসে বললো,
-কি তেমার মন খারাপ?
-না
-না তুমি মিথ্যে বলছো, মুখ দেখলে বুঝা যায় তোমার মন খারাপ?
-চা খাবে, এনে দিবো?
-কথা না ঘুরিয়ে সত্যি বলো?
-রাফিসা ওর বাবার কথা বলেছে, কোনোদিনও ওর বাবার অভাব পূরণ হওয়ার না।
-তুমি চিন্তা করো না একদিন ঠিক আমি ওর বাবার জায়গা নিতে পারবো।
-হলে ভালো ।
-ফুসকা খাবে?
-না তোমার এখন বাইরে যেতে হবে না৷
-আরে ওই দেখো রাস্তার ওখানে ফুসকার দোকান এসেছে।
-থাক অন্য একদিন খাবো।
-কেনো?তুমি কি আমার কাছে সুখ খুঁজে পাও না?আমি কি তোমাকে ভালো রাখার যোগ্য না?
-এসব বলো না, তোমার সবাই ছিলে বলে আমি নতুন সুখের ঠিকানা পেয়েছি
-তাহলে আমাকে ভালোবাসো প্লিজ?
-কি সব বলছো, এখানে মা আছে বাচ্চারা আছে তোমার কোনো লজ্জা সরম নেই?
-নাহ্ বউয়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা?
-ধ্যাত, যাও ফুসকা নিয়ে আসো।
-হুহ

কিছুদিন পরে আমি জব জয়েন করি। সকালে উঠে নাস্তা রেডি করে খেয়ে স্কুলে যাই বাকি সব কাজ ফুপি করে। স্কুল থেকে এসে যতটুকু কাজ থাকে তা আমি করি। ইশানও ফুপির কাছে ভালো থাকে। ফুপি মায়ের অংশে কম না সবদিকে সে আগলে রেখেছে।
রাফিসাও স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওর বাবার নামের জায়গায় তিহানের নাম দেওয়া আছে।

নিশিতা রাগের বসে এবোয়শন করিয়ে খুব পস্তাচ্ছে। এখন মনে করে রোহান যদি কখনো বাচ্চার হাহাকারে নিশিতাকে ছেড়ে দিলে কি করবে? এত সম্পত্তি দিয়ে কি করবে যদি বাচ্চা না থাকে? নিশিতা মন মরা হয়ে থাকে বেশির সময়। পাঁচ বছর কেটে যায় তাও নিশিতার কোনো বেবি হয় না। নিশিতা বেবির জন্য পাগল হয়ে যায় তাই ঠিক করে যেভাবে হোক ইভার বেবি আনবে। উকিলের সাথে কথা বলে, যতো টাকা লাগুক তাই দিবে তাও আইনের মাধ্যমে বাচ্চা আনবে কারন রোহান বাচ্চাদের বাবা ওর অধিকার আছে।

পাঁচ বছরে ইভা, তিহানের সম্পর্ক আগের মতো নেই। ইভাও তিহানকে ভালোবাসে।
-ও বউ, বউ
-কি হয়েছে কি?এতো চিৎকার করে ডাকছো কেনো?
-একটা গুড নিউজ আছে।
-কি
-আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা রেডি। কবে টিকিট কাটবো সেটা বলো?
-সবাই ছেড়ে আমার ইচ্ছে করছে না।
-কয়েক বছর পর পর দেশে আসবো তো।
-তাও ভালো লাগবে না।
-আমরা আরও দুটো পুচকে সোনা লাগবে তাহলে তোমারও ভালো লাগবে।
-ইসসসস্, এখান বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে।
– ওতো টাও বড় হয় নি।
-উফফফ্ এখন হঠাৎ করে,,,,,,
-চুপ। বলে তিহান আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দুজনে পবিত্র ভালোবাসায় আবদ্ধ হলাম।

সকালে গোসল করে খেয়ে বাচ্চাদের রেডি করিয়ে দিলাম স্কুলের যাওয়ার জন্য। রাফিসা এখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে আর ইশান এবার প্রথম শ্রেনীতে পড়ে।
বাইরে শুনছি তিহানের সাথে কারো কথা কাটাকাটি হচ্ছে তাই আমি এগিয়ে দেখলাম সেই ছয় বছর আগের মানুষটি যে আমাকে ঠকিয়েছে

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here