ভিনদেশী পর্ব ১৫+১৬+১৭

#ভিনদেশী
#পার্ট:১৫
#আদ্রিয়ানা নীলা

তাড়াহুরা করে সিড়ি দিয়ে ওঠার কারণে শ্রুতি একজন সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলে, সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিটি তার কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরল।শ্রুতি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে আছে। সে ভাবছে যে,কেন যে তাড়াহুরা করি? তার কোমড় একটু পরই ভেঙ্গে যাবে৷তারপর কী হবে? তার মা ফোনে চেচিয়ে বলবে বিদেশে পড়তে গিয়ে কী করলি কোমড় ভাঙ্গলি? তোকে এখন কে বিয়ে করবে? বেশ কিছুক্ষণ ন্যাকাকান্না করবে।

হঠাৎ শ্রুতির মনে হলো কেউ যেনো তাকে ডাকছে। শ্রুতি পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে ব্যক্তিটি তার অজ্ঞাত নয়।ব্যক্তিটি হলো জ্যাক। শ্রুতি চোখ বড় বড় তাকালো জ্যাকের দিকে। তার মনে এখন প্রশ্ন জাগছে, জ্যাক এই খানে কী করছে?
জ্যাক শ্রুতিকে এরকম বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলতো হাসলো। শ্রুতি একদৃষ্টিতে জ্যাকের দিকেই তাকিয়ে আছে। জ্যাকের চোখে চঞ্চলতা খেলা করছে। সে বলে উঠল,

–হানি, তুমি ঠিক আছো।

শ্রুতির ধ্যান ভাঙলো। সে দেখলো জ্যাকের হাত তার কোমড়ে। সে একটা ঢোক গিলে কোমড় থেকে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে আবার পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। সে জ্যাকের শার্ট খামচে ধরে পিছনে তাকিয়ে দেখল, সিড়ির একেবারে শেষ প্রান্তে তার পা। এখান থেকে সে গড়িয়ে পরে গেলে আর বাঁচবে না। জ্যাক শ্রুতিকে হেঁচকা টানে সিঁড়ির কাছ থেকে টেনে নিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে৷ শ্রুতির খুব ভয় লাগছে,হাত পা কাঁপছে । তাই সেও জ্যাককে জড়িয়ে ধরলো। আজকে ও না থাকলে, শ্রুতি এখান থেকে পড়লে মরার মতো অবস্থা হতো। মাথা ফেটে যেতো, হাত পা ভেঙে যেতো আরও কত কী হতো? এমনি শ্রুতি রক্ত সহ্য করতে পারে না। রক্ত দেখলেই জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হয়।
এভাবে কতক্ষণ থাকলো তার হিসাব নেই। জ্যাক ও কিছু বলে নি। সে বুঝতে পেরেছে শ্রুতি অনেক ভয় পেয়েছে। তাই সে চুপ থেকেছে। কাঁপা-কাঁপি কমলে জ্যাক শ্রুতির গালে চলতো ভাবে স্পর্শ করে বললো,

–হানি, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। তুমি একদম ঠিক আছো।আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।

শ্রুতির জ্যাকের কথা কর্ণগোচর হতেই শ্রুতি মাথা তুলে আশে পাশে তাকালো। কিছু কিছু মেয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে? শ্রুতি ছিটকে জ্যাককে ছেড়ে দিল। তার প্রচন্ড লজ্জা লাগছে৷ গাল দুটো লাল হওয়া শুরু করেছে৷ সে ভেবে পাচ্ছে না, কয়দিন ধরে তার সাথে কী হচ্ছে? এই রকম দুর্ঘটনা ঘটে কেন ?

জ্যাক শ্রুতির এইরকম আচরণে ভড়কে গেল।সে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বুঝলো মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে। ও বোঝে না, এই মেয়েটা এতো লজ্জা কোথায় পায়?
জ্যাক শ্রুতির হাত ধরে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে বসালো।নিজেও গিয়ে তার পাশে বসলো। জ্যাকের একটু একটু ভয় করছে। তার মনে হচ্ছে যে, এখনি হয়তো শ্রুতি তার গালে একটা চড় মারবে! তারপর বলবে, আমার হাত ধরার সাহস হয় কী করে তোমার? জ্যাকের বারবার কালকের ঘটনা মনে পরছে৷ সে একবার গালে হাত দিচ্ছে একবার শ্রুতির দিকে তাকাচ্ছে। এই একটু পরই হয়তো ধমকানো শুরু করবে। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে সে শান্ত। মাথা নিচু করে বসে আছে৷ কোনো কথা বলছে না।

–তাহলে হানি কি আবার তার উপর রাগ করলো?
জ্যাক নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করলো। শ্রুতির এই নীরবতা কেন যেন তার ভালো লাগছে না। কিন্তু শ্রুতির যে অন্য সমস্যা তা জ্যাক বুঝছে না। নীরবতা ভেঙে জ্যাক বলল,

–হানি তোমার কী ভয় করছে এখনো?

শ্রুতি মাথা নিচু করেই বললো,

–না

শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকাতেই পারছে না। তার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। জ্যাকের দিকে তাকালেই আবার লজ্জা বাড়বে।
এরই মধ্যে জ্যাক বললো,

–হানি তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো?

শ্রুতি ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে? সে কী রাগ করে আছে নাকি নেই?শ্রুতি নিজের মনকে প্রশ্ন করল,

–আমি কী জ্যাকের উপর রেগে আছি?
হুম কালকের জন্য একটু রেগে আছি৷ আর আজকে এই ছেলেটা আমাকে লজ্জায় ফেলেছে।কিন্তু ও তো আমাকে বাঁচিয়েছে?

শ্রুতি জ্যাককে কী বলবে তা মনে মনে ঠিক করতে লাগলো৷ ।সেই মুহূর্তে জ্যাক বললো,

–হানি, ছুটির সময় একটু দাড়িয়ে। তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

কথাটা বলেই জ্যাক ক্যান্টিন থেকে দ্রুত প্রস্থান করল।
জ্যাক ভেবেছে এতক্ষণ শ্রুতি তার কথার উত্তর দেই নি।তার মানে সত্যিই তার উপর এখনো রেগে আছে। তাই সে ভাবছে, কীভাবে তার হানির রাগ ভাঙাবে?

______________

শ্রুতি জ্যাককে অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞেস করছে, যে সে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?কিন্তু জ্যাক কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সে এক মনে গাড়ি ড্রাইভিং করছে।শ্রুতি হাল ছেড়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। বাহিরের পরিবেশ টাকে উপভোগ করতে লাগলো।

শীত প্রায়ই শুরু হয়ে গেছে। আর হ্যালোউইন উত্সব ও চলে এসেছে আর কিছুদিন পরই। কিন্তু এখানে বলতে গেলে অধিকাংশের কাছে হ্যালোউইনের কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। তারা শীতের আগমনী সময়টা বলতে গেলে পুরো অক্টোবর জুড়ে থাকে এই উৎসবের আনন্দ অনুভূতি।এখানে অনেক শীত পরে কেউ কেউ বলেন উত্তর মেরুর চেয়েও আমেরিকায় তীব্র শীত পরে। যদি এই হয় শীতের অবস্থা, তাহলে শীতে এদেশের মানুষ কীভাবে তাদের দিন কাটায়, কীভাবে করে স্বাভাবিক কাজকর্ম, কিংবা কী হয় তাদের বিনোদন?এমন প্রশ্ন শ্রুতির মনে আসে । কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, দেশটা যেমন সুন্দর, তাদের ব্যবস্থাপনাগুলোও তেমনি সুন্দর।এইদেশে ‘উইন্টার ডিপ্রেশন’ বলে একটা রোগও আছে। তখন পরিবেশটাই এমন হয়ে ওঠে যে কিছু ভালো লাগতে চায় না। ফলে কাজেকর্মে গতি কমে আসে বলে অনেকে মনে করেন। এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা ধরনের মানসিক সংকট। শ্রুতির মনে হয় সে এতো শীতে অভ্যস্ত নয়,হয়তো সে প্রথম প্রথম এই উইন্টার ডিপ্রেশনে ভুগবে। তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হবে।

প্রকৃতির বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ যুদ্ধ করে না। তারা প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতাকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেয়।যার ফলে তারা এসবে অভ্যস্ত।এই দেশে শীতকাল মানে উত্সব। শ্রুতি রাস্তার পাশের গাছ গুলোর দিকে তাকালো।গাছগুলো পাতাহীন হয়ে আছে।শ্রুতি এগুলোর মধ্যে অন্যরকম এক ধরনের সৌন্দর্য খুঁজে পেল । সারি সারি পাতাহীন বৃক্ষ দেখতে খারাপ লাগে না। কিছুদিন পরই এই গাছগুলোর উপর তুষার পরবে। সৌন্দর্যের ধারণা এখানে ভিন্ন।

হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো।শ্রুতি আর একটুর জন্য মাথায় আঘাত পায়নি। শ্রুতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বললো,

–এই রকম কী কেউ গাড়ি থামায়?আর একটুর জন্য মাথায় ব্যথা পায় নি৷

–তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি তুমি তো কথাই বলছো না। তাই একইরকম করলাম। এখন নামো গাড়ি থেকে।

শ্রুতি গাড়ি থেকে নেমে সামনে একটা বাড়ি দেখতে পেলো। এতক্ষণ ভাবনায় বিভোর থাকার কারণে তারা কোথায় যাচ্ছে,শ্রুতি কিছুই খেয়াল করে নি। সে নিজের জগতে ছিল। এখন কেনো জানি তার ভয় লাগা শুরু করলো? জ্যাক তাকে এই খানে আনলো কেন? খারাপ কিছু করবে নাতো? মনে মনে আবোল তাবোল বলতে লাগলো।

জ্যাক শ্রুতির চোখ বেঁধে দিতে নিলে শ্রুতি জ্যাকের হাত ধরে আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,

–জ্যাক তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো? আমি বাসায় যাবো। বাসায় নিয়ে চলো। আর এই কালো কাপড়ের টুকরা দিয়ে কী করবা?

জ্যাক বুঝতে পারলো যে, শ্রুতি ভয় পাচ্ছে। তাই শ্রুতিকে আশ্বস্ত করে বললো,

–হানি ভয় পেয়ো না।আমি খারাপ কিছু করবো না। আমাকে বিশ্বাস করো না?

শ্রুতি মাথা নাড়ালো। কেনো জানি এখন তার জ্যাককে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। মন বলছে জ্যাক তার সাথে খারাপ কিছু করবে না।

জ্যাক শ্রুতির চোখ বেঁধে দিলো। তারপর শ্রুতির হাত ধরে ঘরের ভেতরে দিকে নিয়ে গেলো।

জ্যাক শ্রুতিকে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে চোখ খুলে দিলো। নিজের দরজার এক কোনায় দাড়িয়ে রইলো।
শ্রুতি চোখ খুলে দেখে একটা অন্ধকার ঘর। চারপাশে কোনো আলো নেই। শ্রুতির মনের ভিতর ভয় ঢুকে গেলো৷ সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

–জ্যাক,

কোনো শব্দ নেই। শ্রুতি আবার ডাকতে লাগলো ,

–জ্যাক তুমি কোথায়?

কিন্তু এবারও কোনো উত্তর নেই। শ্রুতির এবার খুব ভয় করছে। জ্যাক এরকম কেন করলো তার সাথে? জ্যাক কী তাকে মিথ্যা বললো? তাকে বিশ্বাস করে সে কী ঠকলো? এই অন্ধকার ঘরেই কী তাকে থাকতে হবে?

শ্রুতির ভাবনার মাঝে ঘরের লাইট গুলো সব জ্বলে উঠলো। শ্রুতি টলমল চোখে পুরো ঘরকে অবলোকন করলো। পুরো ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো। সব গুলো বেলুনে লেখা “সরি”।শ্রুতি এসব দেখ প্রচুর অবাক হলো। এখন তার মনে হচ্ছে যে সে বেলুনের জগতে আছে। যেখানে শুধু বেলুন আর বেলুন। শ্রুতি বুঝতে পারলো এসব জ্যাকের কাজ। শ্রুতি দরজার দিকে তাকালো। জ্যাক কান ধরে দাড়িয়ে আছে। যা দেখে শ্রুতি নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলো,হা হা করে হেসে দিল। জ্যাক ঠোঁট উল্টে রেখেছে। দেখতে পুরো ছোট ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে। কিছুক্ষণ পর শ্রুতি হাসি থামিয়ে বললো,

–জ্যাক এসব কী? আর সরি কিসের জন্য?

জ্যাক মাথা নিচু করে বললো,

–তোমার রাগ ভাঙানোর জন্যে করেছি। তুমি তো আমার উপর রেগে ছিলে? তোমার কী এই সব পছন্দ হয়েছে?

–হুম খুব খুব সুন্দর হয়েছে। আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি।

শ্রুতি কেন যেন আর রাগ করে থাকতে পারলো না। সত্যিই তার খুব ভালো লেগেছে। এই দেশের মানুষ এইরকমই। কেউ যদি রাগ করে বা কারো কথায় কষ্ট পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি তাকে গিফট দেয় বা যেকোনো ভাবে তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে। শ্রুতি এইরকম ই শুনেছে৷ আজ নিজেই প্রত্যক্ষ করলো।

জ্যাক শ্রুতির উত্তর শুনে খুব খুশি হলো। সে চায় যাতে শ্রুতি সব সময় হাসি খুশি থাকে।

–চলো কেকটা কাটি।
শ্রুতি টেবিলটার দিকে তাকালো। টেবিলের উপরে একটা ছোট কেক রাখা আছে। তার উপর বড় বড় করে লেখা,

–I am sorry.

জ্যাক বললো,

–হানি জানো এই কেকটা আমি বানিয়েছি তোমার জন্য।

শ্রুতি অবাক হয়ে বলল,

–তুমি কেক বানাতে পারো?

–হুম খুব সোজা। আরও অনেক কিছু পারি। তোমাকে একদিন রান্না করে খাওয়াবো। তোমারও তোমাদের দেশের খাবার রান্না করে খাওয়াতে হবে?

শ্রুতি হেঁসে বললো,

–ওকে

জ্যাক শ্রুতির দিকে একটা চাকু এগিয়ে দিয়ে বললো,

–কেকটা কাটো?

শ্রুতি চাকুটা দিয়ে কেকটা কেটে জ্যাকের মুখের সামনে ধরল৷ জ্যাক হাসি মুখে কেকটা খেলো। শ্রুতির জ্যাকের মুখে একটু ক্রিম লাগিয়ে দিলো। জ্যাক হাসলো। তারপর এক ফাঁকে শ্রুতির মুখেও লাগিয়ে দিল।
#ভিনদেশী
#পার্ট:১৬
#আদ্রিয়ানা নীলা

চারটি ঋতুর দেশ আমেরিকা। শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম আর হেমন্ত—কালের এই সময়গুলোকে চাইলেও উপেক্ষা করা যায় না। প্রতিটি ঋতুর রুপ, রস, গন্ধ আমেজ এত ভিন্ন যে ধরত্রী অশেষ সর্বত্রই।

হ্যালোউইনের উত্সব উপলক্ষে ওয়াশিংটন ভার্সিটি ৭দিন বন্ধ থাকবে।এই সংবাদ শুনে শ্রুতির খুব ভালো লেগেছে। আমেরিকায় শীতের আগমনী সময়টা সে উপভোগ করতে পারবে।

আজকে লুসিদের বাড়ির বাড়ির বাগানে একটা ছোট খাটো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে লুসির ফ্রেন্ড দের নিয়ে। লুসির বাবা নিউইয়র্ক থেকে এসেছেন৷ তাদেরও হ্যালোউইন উত্সব উপলক্ষে কয়দিন অফিস বন্ধ থাকবে। আমেরিকা খ্রিষ্টান প্রধান দেশ হওয়ার কারণে এখানে সবার কাছেই হ্যালোউইন অত্যন্ত জনপ্রিয় উত্সব। অল হ্যালো’স ইভ বা হ্যালোইন উৎসব খ্রিষ্টান দুনিয়ায় অন্যতম প্রধান উৎসব। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী এই উৎসব পালন করলেও উন্নত বিশ্বে এটি একটি সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পরিণতি পেয়েছে।

লুসিদের বাগানে কিছু কাঠে আগুন ধরিয়ে সবাই সেটিকে ঘিরে গোল হয়ে বসেছে। লুসির ফ্রেন্ডদের মধ্যে আছে জ্যাক, এলিশা, লিও, মার্কো, থমাস। সবাই গল্প হাসাহাসি করছে। একপাশে কিছু পানীয়, হুইস্কি, ককটেল রাখা আছে। শ্রুতি এসে বসতে বসতে বললো,

–কী নিয়ে কথা হচ্ছে জানতে পারি আমি?

শ্রুতি এতক্ষণ এখানে ছিলো না ৷ মায়ের সাথে কথা বলছিল।
এলিশা বলল,

–হ্যাঁ অবশ্যই। লিওকে নিয়ে কথা হচ্ছিল।

–কী কথা হচ্ছিল?

লিও বলে উঠলো,

–প্লিজ এলিশা, বলো না।

এলিশা হাসতে হাসতে বলল,

–অবশ্যই বললো। কেনো বলবো না? মেয়েটা তো ওদের ক্লাসেই পড়ে তাই না?

কী গাইস শ্রুতিকে বলবো?

সবাই জোরে বললো, হ্যাঁ।

এলিশা আবার বললো,

–ও জানলে সুবিধা হবে৷ লাইন করিয়ে দিতে পারবে। আমাদের হাবা, গোবা টাইপ ফ্রেন্ড ও রিলেশন করতে পারবে।

শ্রুতির কেনো যেন কী নিয়ে কথা হচ্ছে জানার আগ্রহ বারছে৷ সে আবার এলিশাকে জিজ্ঞেস করল,

–কী হয়েছে বলো প্লিজ?

–শোনো, কালকে লিও ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময়, একটা মেয়ে লিও সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনে মাটিতে পরে গেছে৷ মেয়েটা দৌড়াচ্ছিল। হয়তো ভার্সিটিতে লেইট করে আরছে৷ মেয়েটা যখন লিওর উপর পরেছিল, লিও তখন মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছিল৷ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিল৷ অনেকক্ষণ হয়েছে তখনো ছাড়ছে না। তারপর মেয়েটা লিওকে একটা চড় মারল। আর লিওয়ে হুস ফিরে এলে মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়। আমরা দূর থেকে সব দেখেছিলাম। আমাদের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। আজকে লিও এসে বলে, He is in love।আমরা জিজ্ঞেস করার পরে লিও বললো, কালকের মেয়েটার৷ মেয়েটা প্রথম দিনি থাপ্পড় মেরেছে, মেয়েটাকে যখন বলবে, I love you। তখন কয়টা থাপ্পড় মারবে তা গড জানে।

বলেই এলিশা হাসতে লাগলো। শ্রুতি লিওর দিকে তাকালো।সে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। সবাই হাসছে। কিন্তু শ্রুতির কেন যেনো হাসি পাচ্ছে না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসতেই পারে৷ এতে হাসার কী আছে? এখানে কী ভালোবাসার ও মূল্য নেই?

সবার হাসি থামলে জ্যাক বললো,

–হ্যালো ফ্রেন্ড, লিসেন টু মি। আমি ব্যাঙলা ভাষা শিখছি। আমি চাই লুসি আর শুতি আমাকে হেল্প করুক।

বাংলা উত্চারণ করতে পারে না, সে নাকি বাংলা ভাষা শিখবে। শ্রুতির বিষয়টা ইনটারেস্টিং লাগছে। শ্রুতি জ্যাকের দিকে হয়ে তাকালো। আগুনের উজ্জ্বল শিখার আলোয় তার মুখটাও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে । চোখে মুখে খেলা করছে চঞ্চলতা৷ ঠোঁটে লেগে আছে মৃদু হাসি। হাতে রয়েছে একটি গ্লাসে । ম্যাপল সিরাপ খাচ্ছে। যার দরুণ ঠোঁট দুটো আগের তুলনায় আরও লাল দেখাচ্ছে৷

–আচ্ছা আমি আর শ্রুতি হেল্প করবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।

লুসির কথায় শ্রুতি বাস্তবে ফিরল। নিজের গালে আস্তে আলতো করে একটা চড় মারল । ছেলেটাকে নিয়ে ইদানিং সে বেশি ভাবছে। সে এখানে এসেছে পড়ালেখা করতে, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে। কোনো ছেলেকে নিয়ে ভাবলে তার চলবে না। সে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে সবার সাথে গল্পে মেতে উঠার চেষ্টা করতে লাগলো।

জ্যাক জিজ্ঞেস করলো,

–কী শর্ত? আমি সব মেনে নিতে রাজি।

–ওকে, শ্রুতি এখন একটা বাংলা গান গাইবে। ও গানের এক একটা স্টেপ গাইবে তুমিও ওর সাথে গাবা। যদি গাইতে পারো তাহলে আমরা দুজন তোমাকে বাংলা ভাষা শেখাবো।

শ্রুতি লুসিকে বললো,

–এসবের কী দরকার?

–আরে দেখো ও পারবে না।

জ্যাক হাই তুলতে তুলতে বললো,

–জ্যাকের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব না। এটা অনেক সহজ একটা শর্ত। আর কোনো শর্ত খুঁজে পাওনা লুসি?

লুসি আলতো হেসে বললো,

–এটা করে দেখা তাহলেই হবে।

শ্রুতির কাছে এসব যেমন পাগলামি লাগছে তেমনি বিরক্ত ও লাগছে৷ ভাষা শিখতে চেয়েছে তাতে এসবের কী দরকার? কিন্তু এখন এটা মানা ছাড়া উপায় না।

লুসি শ্রুতিকে বলল,

–শ্রুতি গান স্টাট করো৷

শ্রুতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালি গলায় গাওয়া শুরু করল,

মিলন হবে কত দিনে…
মিলন হবে কত দিনে….
আমার মনের মানুষের সনে
আমার মনের মানুষের সনে..
মিলন হবে কত দিনে…
মিলন হবে কত দিনে…
আমার মনের মানুষের সনে
আমার মনের মানুষের সনে…

এই টুকু বলে শ্রুতি থামলো। এইখানে যারা আছে,লুসি বাদে সবাই শ্রুতির দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে৷ অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে জ্যাক বললো,

–একটা কী গান?
লুসি হেসে বলল,
–হুম এটা লালন গীতি। এবার তুমি গাও।

মেলন হোবা কোটো দিনা
মেলন হোবা কোটো দিনা
আমর মোনের ম্যানুশের সোনা
আমর মোনের ম্যানুশের সোনা
মেলন হোবা কোটো দিনা
মেলন হোবা কোটো দিনা

লুসি হাসতে হাসতে বলল,

–আর বলতে হবে না। তাহলে আমি মরে যাবো।

শ্রুতিও হাসি চেপে রাখতে না পেরে হেসে দিল। লুসি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

__________________________

২দিন পর,

আজকে শ্রুতি আর লুসি সিয়াটল শহরটা ঘুরবে। লুসি তার বাবার কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছে। শ্রুতির খুব ভালো লাগছে৷ সিয়াটল শহরের অনেক কিছুই দেখা হয়নি। আশেপাশের শহর গুলো ঘুরেছে এর মধ্যে বেলেভিউ আর মেডিনা অন্যতম। কিন্তু যেখানে থাকে সেই শহরই দেখা হয় নি। আজকে সুযোগ পেয়েছে। হাতছাড়া করবে না।

বাহিরের মোটামুটি ভালোই ঠান্ডা আছে। শ্রুতি নিজের জ্যাকেট ভালো করে পড়ে নিল। জ্যাকেটের সাথে টুপিটাও মাথায় পরে নিল। সবার প্রথমে তারা যাচ্ছে Space Needle এ। এটা সিয়াটল শহরেই অবস্হিত ১৮৭ মিটার উঁচু একটা টাওয়ার। টপ ফ্লোর ৫১৮ তলা। ১৯৬৯সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। টাওয়ার টা অনেক সুন্দর। এটি সিয়াটলের সবচেয়ে আইকনিক টাওয়ার। শ্রুতি আর লুসি লিফট এ চড়ে ৪১ সেকেন্ড এ অবজারভেশন ডেক এ গেল। এটি মাটি থেকে ১৬০মিটার উঁচুতে। প্রতিবছর ২৩লক্ষ মানুষ এই টাওয়ার দেখতে আসে। আজকেও একটা ভিড় আছে মোটামুটি। অবজারভেশন ডেক কাচের ওয়াল দিয়ে সিয়াটলের ডাউনটাউন স্কাইলাইন, ওলিমপিক এবং ক্যাসকেড মাউন্টেন, মাউন্টেন রেইনার, মাউন্টেন বেকার,ইলিয়ট উপসাগর, পিউগেট সাউন্ড এর বিভিন্ন দ্বীপ দেখলো। অসাধারণ লেগেছে শ্রুতির কাছে । পুরো সিয়াটল শহরটা এখান থেকে দেখা যায়। শ্রুতি ভাবলো,

–যদি সে পৃথিবী ভ্রমণ করতো তাহলে কেমন হতো?

স্পেস নিডেল দেখা শেষ মিউজিয়াম অফ পপ কালচার। স্পেস নিডেল থেকে যেতে মাত্র ৫মিনিট লাগে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠানতা পল অ্যালেন ২০০০সালে। এইখানে শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। সাইন্স ফিকসন এবং ফ্যান্টাসি হলে গিয়ে শ্রুতি অনেক কিছু দেখলো এবং শিখল। জায়গাটা বাইরে থেকে যতো সুন্দর ভিতর থেকে আরও বেশি সুন্দর।

শ্রুতি আর লুসি সারাদিনে আরও কিছু জায়গায় ঘুরল। যেমন, সিয়াটল আর্ট মিউজিয়াম আর সিয়াটল অ্যাকোয়ারিয়াম৷ অ্যাকোয়ারিয়ামের আন্ডারওয়াটার ডোম থেকে শ্রুতি সমুদ্রের মাছ গুলোকে দেখেছে খুব কাছ থেকে। সবকিছু তার কাছে ছবির মতো মনে হয়েছে। যদি সে এখানে না আসতো কখনো এসব জিনিস উপভোগ করতে পারতো না। তার চোখ দুটো সার্থক হলো।

তারা রাত ১০টায় বাসায় আসলো। বাহির থেকেই লান্স,আর ডিনার করেছে। লুসির বাবা প্রচুর রাগরাগি করেছে যে এতো রাত পর্যন্ত বাইরে কী করেছে? লুসি সব বুঝিয়ে বলার পর তার রাগ একটু কমেছে। শ্রুতি রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। সে প্রচুর ক্লান্ত । কিন্তু মনের ভিতর একটা আনন্দ হচ্ছে। অনেক অজানা কিছুকে সে আজকে দেখছে। পৃথিবীটা যে কতো সুন্দর সেটা আজকে সে উপলব্ধি করেছে। আজকের দিনটা তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
#ভিনদেশী
#পার্ট:১৭
#আদ্রিয়ানা নীলা

আজ দুইদিন যাবত্ শ্রুতির জ্বর। সারাদিন শুয়ে, বসে তার দিন কাটাতে হচ্ছে। নতুন পরিবেশ,আবার আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়েছে। কালকে হ্যালোউইন উত্সব গেছে। কিন্তু শ্রুতি কোথাও যেতে পারি নি। সারাদিন শুয়েই কাটিয়ে দিয়েছে৷

সকাল ১০টা,
কপালে কারো ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে শ্রুতির ঘুম ভাঙ্গলো। প্রথমে ভাবলো এটা হয়তো স্বপ্ন আর এখনো তো জ্বর তার শরীরে ৷ সে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু তার সিক্সথ সেন্স বলছে তাকে কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শ্রুতি নিভু নিভু করে চোখ খুলল। শরীর প্রচন্ড দুর্বল তার।হালকা চোখ খুলে সে দেখলো তার সামনে কেউ বসে আছে। মাথায় হাত বুলাচ্ছে। ঝাপসা দেখছে সে।ব্যক্তি টাকে শ্রুতি চেনা মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলে বুঝতে পারলো, জ্যাক এসেছে। শ্রুতি হকচকিয়ে গেল। সে আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করলে। জ্যাক ক্ষীণ কন্ঠে বলল,

–শুতি উঠো না। তোমার শরীর খারাপ। শুয়ে থাকো। আমি আছি।

জ্যাক তাঁকে ধরে আবার শুয়ে দিও।শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকালো।জ্যাকের চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। মুখটাও কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে৷ চুল গুলোও এলোমেলো। শার্টটাও ঠিক ভাবে পড়ে নি। কেমন অগোছালো লাগছে? মনে হচ্ছে রাত্রে ঘুমায় নি।
জ্যাক তাকে কিছু বলছে। কিন্তু কোনো কিছুই শ্রুতির কানে ঢুকছে না। সে জ্যাকের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জ্যাক শ্রুতিকে কোনো কথা না বলতে দেখে গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

–শুতি তুমি ঠিক আছো? আংকেল, আন্টিকে ডাকবো।

শ্রুতি নিভু নিভু চোখে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বলল,

–ঠি, ক আ,ছি।

শ্রুতির কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কথা বলার কোনো শক্তি সে পাচ্ছে না। আগেও শ্রুতির জ্বর হয়েছে। তার বৃষ্টিতে ভেজার স্বভাব আছে। যার কারণে প্রায়ই জ্বর হতো। আর মা বকা দিতো। কিন্তু এবারের জ্বরটা শ্রুতির কাছে ভিন্ন মনে হচ্ছে। খুব দুর্বল লাগছে তার শরীর। শ্রুতির তার মায়ের কথা মনে পড়ল। এখন মা থাকলে তার মাথায় জলপট্টি দিতো৷ একগাদা কথা শুনানো। খাইয়ে দিতো। কিন্তু সে এখন বহুদূর। পৃথিবীর উল্টোপাশে। একটা মানুষ যখন কাছে থাকে আমরা তার গুরুত্ব বুঝি না, দূরে গেলে বোঝা যায় মানুষটা কতো প্রয়োজনীয় ছিলো।

এমন সময় দরজা ঠেলে লুসি ভিতরে ঢুকল৷ সে একটা বাটিতে করে সুপ আর কয়েক পিচ আপেল নিয়ে এসেছে।

লুসি বলল,

–খাবার গুলো খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও৷ একটু ভালো লাগবে। কালকে থেকে তো কিছুই খাচ্ছো না।

জ্যাক বললো,

–দেও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

লুসি আচ্ছা বলেই চলে গেল।

শ্রুতির কেমন যেনো লজ্জা লাগতে শুরু করল। এমনি শ্রুতির কিছুই খেতে ইচ্ছা করছে না আরও একটা ছেলের হাতে খাবে কীভাবে? মুখেও রুচি নেই খাওয়ার। খেলেই মনে হয় বমি করে দেবে এই রকম অবস্থা হয় । জ্যাক শ্রুতিকে আধশোয়া ভাবে বসিয়ে দেয়। শ্রুতি মৃদু স্বরে বলল,

–জ্যাক আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। এগুলো রেখে দেও।

জ্যাক সুপের বাটিটা হাতে নিতে নিতে বলে,

-কিছু না খেলে তাহলে তোমার শরীর আরও খারাপ করবে।খেতেই হবে।

বেশ কিছুক্ষণ জোড়াজুড়ির পর বাধ্য হয়ে শ্রুতি সুপটা খেল। জ্যাক একপিচ আপেল মুখের সামনে ধরলে শ্রুতি বললো,

–আর খেতে পারবো না। পেট ভরে গেছে। রেখে দেও এগুলো।

–এইটা খাও। তারপর ঔষধ খাবে।

জ্যাক শ্রুতিকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দিয়ে আবার ঠিক ভাবে শুয়ে দিল।কম্বলটা দিয়ে শরীর ভালোভাবে ডেকে দিল। শ্রুতি কিছু বলতে নিলে জ্যাক শ্রুতির ঠোঁটে হাত রেখে বলে,

— এখন কোনো কথা নয়। রেস্ট নেও।

বলেই জ্যাক রুম থেকে বের হয়ে গেল। শ্রুতি কিছু বলতে নিলেও পারলো না। সে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল যে সে কখন আরছিল? শ্রুতির আবার লজ্জা লাগছে। শ্রুতি নিজের হাতটা কপালে রাখলো। কেন যেন শ্রুতির মনে হচ্ছে জ্যাক ওকে কিস করেছে।আবার এও মনে হচ্ছে যে এটা স্বপ্ন।শ্রুতি এসব ভাবতে ভাবতে আবার কখন ঘুমিয়ে গেল তার ঠিক নেই।

আজকে শ্রুতিদের ভার্সিটি খুলেছে।এই তিন দিনে শ্রুতি অনেকটাই সুস্হ হয়েছে। তাই আজকে যাবে। ভার্সিটি বন্ধ দিবে না। এই কয়দিনে জ্যাক তাকে ফোন করে করেছে অনেকবার ।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেছে নাকি, ঔষধ খেয়েছে নাকি, ব্লা, ব্লা। শ্রুতি কেন যেনো ভালোই লাগছে তার প্রতি জ্যাকের কেয়ার গুলো।

ভার্সিটিতে গিয়ে শ্রুতি দেখলো এলিশা একা একটা বেঞ্চে বসে আছে। তার ফ্রেন্ডরা কেউ নেই। লুসিও আজকে আসিনি। ভার্সিটিতে নাকি আজকে তাদের জরুরি কোনো ক্লাস নেই। শ্রুতি গিয়ে এলিশার পাশে বসলো। তার ফ্রেন্ডদেরও কাউকে দেখছে না। তাই ক্লাসে যেতে ইচ্ছা করছে না।শ্রুতি ভাবলো,
তাহলে কতক্ষণ এলিশার সাথে গল্প করি। এতক্ষণে সবাই এসে যাবে হয়তো।

শ্রুতি এলিশাকে জিজ্ঞেস করল,

–এলিশা কেমন আছো?

এলিশা চোখ তুলে তাকালো৷ সে এতক্ষণ একটা বই পড়ছিল। একপলক শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আবার বইয়েড দিকে তাকিয়ে বলল,

–ভালো। শুনলাম তোমার নাকি জ্বর হয়েছিল ? এখন কেমন আছো?

–হুম এখন কমেছে।

শ্রুতি আশেপাশে তাকিয়ে বলল,

–এখানে একা একা বসে কী করছো? তোমার ফ্রেন্ডদেরও কাউকে দেখছি না যে?

–ওরা এখনও আসে নি।

–ওহ।

শ্রুতি চুপ করে রইল। দুজনের ভিতরে নীরবতা। এলিশা বই পড়ছে। আর শ্রুতি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। শ্রুতি ঠিক করলো এলিশাকে জ্যাকের ব্যাপারটা বলবে। দেখুক ও কী বলে?অনেক ইতস্তত করে শ্রুতি বলল,

–এলিশা। আমি তোমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। তোমার মতামতটা আমাকে জানাবে। আমি কয়দিন ধরে অনেক চিন্তিত ব্যাপারটা নিয়ে।

এলিশা বইটা বন্ধ করে সিরিয়াস ভাবে শ্রুতির দিকে তাকালো৷ শ্রুতি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,

–এলিশা তুমি কিন্তু কাউকে বলবা না। আমি শুধু তোমার কী মনে হয় সেটা জানতে চাচ্ছি।

এলিশা একটু হেসে বলল,

–আচ্ছা বলবো না। এবার বলো।

শ্রুতি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

–এলিশা আমার মনে হয় কি জ্যাক আমাকে পছন্দ করে?

এলিশার শ্রুতির কথাটা কর্ণকুহর হওয়ার কিছুক্ষণ পর হো হো করে হেসে দিল। শ্রুতি অবাক হলো।এতে হাসার কী আছে সে বুঝছে না। অতঃপর এলিশা বলল,

–জ্যাক আমাদের সাথে যেমন ক্লোজ হয়ে চলে, তোমার সাথে ও রকম কখনো দেখি নি। ওকে তো তোমার সাথে কখনো আলাদাভাবে কিছু বলতে বা কিছু করতেও দেখি নি। পছন্দ হলে এই সব করতো। আর শ্রুতি আর একটা কথা বলি কিছু মনে করবা না।

শ্রুতি মাথা নাড়ালো। মানে সে কিছু মনে করবে না। এলিশা আবার বললো,

–তুমি একটা পুওর কান্ট্রি থেকে এসেছো এখানে পড়াশুনা করতে। পড়াশোনা শেষ হলেই হয়তো এখান থেকে চলে যাবা। এই খামে কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে জ্যাকের পিছনে ঘোরে। ও এই ভার্সিটির ক্রাশ ভয়। হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ। আর ও নাকি তোমাকে পছন্দ করবে। আমি বলছি না যে, তুমি দেখতে খারাপ৷ তুমিও দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। আর আমার মনে হয় জ্যাক এনগেজড।আর ওর বাবা একজন বিরাট ব্যবসায়ী। ওনার ও ইচ্ছা থাকবে একজন ব্যবসায়ী মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া।

শ্রুতি মনটা খারাপ হয়ে গেল। সত্যিই সে আকাশ পাতাল চিন্তা করেছিল। কোথাও ও আর কোথায় জ্যাক। এলিশা শ্রুতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

–তুমি অনেক ভালো মেয়ে। অনেক কিছুতে এক্সপার্ট। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেও।জ্যাকের মতো অনেক ভালো ছেলে পাবে।

শ্রুতি মাথা নিচু করে এলিশার কথা গুলো শুনলো। কিছু ক্ষণ চুপ থাকলো। শ্রুতির ঠিক করলো ক্লাসে যাবে। ভালো লাগছে না তার। সে উঠতে নেবে সেই সময়ে এলিশা বললো,

–এই দেখো জ্যাক এসেছে৷

শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকালো। সে গাড়ি থেকে নামছে। গাড়িতে একটা মেয়েও বসে আছে। জ্যাক মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল৷ মেয়েটা জ্যাক হাত ধরে গাড়ি থেকে নামলো। মেয়েটার পরনে কালো জিন্স, উপরে কালারফুল হাইনেক সোয়েটার, গলায় ম্যাচিং করা একটা মাফলার,আর পায়ে স্টাইলিশ একটা বুট। মেয়েটা জ্যাকের এক হাত ধরে এলিশার দিকে আসতে লাগলো। এলিশা কী হলো শ্রুতি বুঝলো না? সে এক দৌড়ে মেয়েটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে কতো দিন আগের বন্ধুত্ব৷

এদিকে শ্রুতি এসব সহ্য করতে পারলো না। তার খুব কষ্ট হতে লাগলো। কেনো হচ্ছে তার উত্তর শ্রুতির কাছে নেই। কিন্তু সে বুঝতে পেরেছে, এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে সে আরও বেশি কষ্ট পাবে। তাই সে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের ক্যাম্পাসের ক্লাসে চলে গেল।

(,,চলবে)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here