ভিনদেশী পর্ব ৮+৯

#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ৮
#আদ্রিয়ানা নিলা

সোনালি রোদ্দুরে প্রান্তবন্ত হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরটি। রাস্তার পাশের সুউচ্চ ভবন গুলো যেনো, শহরটি সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রুতি গাড়ির কাচটা নামিয়ে দিতেই বাতাস এসে বারি খায় তার চোখ মুখে। শ্রুতি চোখের কপাট বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে দিল। ভিনদেশের এই বাতাস, এই সৌন্দর্য সে উপভোগ করতে চায়।

সোহা শ্রুতিকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,

–শ্রুতি, তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে? আর একটু অপেক্ষা কর। ১০মিনিটেই বাসায় পৌঁছে যাবো।

–হুম।

____________________________________________

লুসি গাড়িটা একটা সুন্দর বাড়ি সামনে থামালো। শ্রুতি গাড়ি থাকে নেমে চারদিকে তাকালো। অসম্ভব সুন্দর বাড়িটি। রাস্তা দিয়ে গেল সবার নজর নিঃসন্দেহে এই বাড়িটা কারতে সক্ষম। বাড়ির সামনে একটা ফাউন্টেন আছে । চারপাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরার বাড়ির চারপাশে ফুলের বাগান। বাগানটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। লুসি গাড়ি থেকে লাগেজ গুলো বের করে বললো,

–এইখানেই কী দাড়িয়ে থাকবে? ভিতরে চলো।

শ্রুতি লুসির পিছন পিছন বাড়ির ভিতর ঢুকল।শ্রুতি চারপাশে চোখ বুলালো। ড্রইংরুমে সব দামি দামি আসবাবপত্র। শ্রুতি খালা এসে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরল। তারপর মিষ্টি গলায় বলল,

–অবশেষে আসলে। কোনো সমস্যা হয় নি তো?

শ্রুতিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বলল,

–হিম, তোমরা থাকলে কী কোনো সমস্যা হতে পারে?

শ্রুতি শারমিন বেগমকে ছেড়ে বলল,

–খালামণি, খালু কোথায়? দেখছি না যে।

–তোর খালু তো এইখানে থাকে না। মাসে একবার আসে। আর বাকি সময় তো নিউইর্য়কেই থাকে। তুই জানো না? তোর আসার খবর শুনে খুব খুশি হইছিলো। সে ছুটি নিয়ে আসতে চাইছিলো। কিন্তু তার বস ছুটি দেয়নি।

লুসির বাবা নিউইয়র্কে একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজার। তাদের প্রেম করেই বিয়ে হয়েছে। পরে এই বিদেশে আরছে খালুর চাকরির কারানে। তার দক্ষতার কারনে ম্যানেজার পোস্টে কয়েকবছর আগে প্রমোশন হয়েছে। আর তাই এইখানেই একেবারে বাড়ি করেছে । আর তারপর থেকে এইখানেই থাকে।

শারমিন বেগম লুসিকে শ্রুতির রুমটা দেখিয়ে দিতে বলেন। শ্রুতিও লুসির পিছন পিছন রুমে গেল। রুমটাও অনেক সুন্দর।শ্রুতির লাগেজ গুলো রেখে লুসি বলল,

–ফ্রেস হয়ে নিচে এসো।

বলেই লুসি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।

শ্রুতি ফ্রেশ হয়ে, মাথার চুল গুলো মুছে তোয়ালেটা বেলকনিতে মিলে নেয়। বেলকনি থেকে লুসিদের বাড়ির বাগান দ্বিগুণ সুন্দর দেখায়।

শ্রুতি নিচে আসল। খাবার টেবিলে লুসি বসা আছে। শারমিন বেগম দুইজনকে খাবার উঠিয়ে দেন। শ্রুতিও আর দ্বিরুক্তি না করে খেতে শুরু করে। হঠাৎ শারমিন বেগম বলে উঠেন,

–শ্রুতি তোমার আম্মু কল দিছিলো যে তুমি পৌঁছেছো নাকি।তোমার সাথে কথা বলতে চায়েছে।

–কিন্তু খালামণি আমার তো এইখানের সিম নেই।

–বিকালে লুসির সাথে মার্কেটে গিয়ে সিম সহ আর যা যা লাগে তা কিনে এনো।

লুসি তখনই খুশি হয়ে বলল,

–শ্রুতি আমরা কেনা কাটা শেষ করে ঘুরবো। ঠিক আছে? অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে এইখানে।

শ্রুতির মা একধমক দিয়ে লুসিকে বললেন,

–মেয়েটা আজকে আসলো তারমধ্যেই তোর ঘোরাঘুরি করার কথা শুরু হয়ে গেল। আজকে ও রেস্ট নিক। কালকে ঘুরতে যাস।

শ্রুতি মুচকি হাসি ব্যাঙ্গ করে বলল,

–আহ খালামণি রাগ করো না। ও ছোট বাচ্চা কিছুই বোঝে না। ধমক দিলে কিনা কেঁদেই দেই।

শারমিন বেগম শ্রুতির কথা শুনে হাসলেন। এদিকে লুসি বলল,

–অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি এখনো আমাকে বাচ্চা বলছে। আল্লাহ আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাও।

লুসির শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আদেশের সুরে বলে,

–শ্রুতি আমি তোমার থেকে দুই বছরের বড়। আমাকে আপু বলে ডাকবে।

শ্রুতি মুচকি হেসে উত্তর দিল।

–মোটেও ২বছর না। তুমি সেকেন্ড ইয়ার এ উঠছো।আর আমি বিবিএ র ফাস্ট ইয়ার। ১বছর শুধু। আমি তোমাকে আপু বলব না, লুসি বলেই ডাকবো, তাই না খালামণি?

শারমিন বেগম ও শ্রুতির সাথে তাল মিলিয়ে বলল,

–হ্যাঁ, ও তোকে লুসি বলেই ডাকবে।

লুসি আর কোনো কথা না বলে বাচ্চাদের মতো ফেস করে খাচ্ছে। এই অবস্থা দেখে শ্রুতি আর শারমিন বেগম দুইজনই হেসে দিলেন।

শ্রুতির নিজের বাসার কথা মনেই পড়ালো না খাওয়ার সময়। তার মনে হলো এইটাই তার নিজের বাসা। খাবার টেবিলে শ্রুতি সোহাকে এটা ওটা বলে ক্ষেপাতো। এখন ক্ষেপায় লুসিকে।

শ্রুতি এইসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রচুর ক্লান্ত সে।

__________________

দেখতে দেখতে ২দিন কেটে গেল।লুসি আর শারমিন বেগম শ্রুতির সাথে মজা করেন, গল্প করেন। শ্রুতির খুব ভালো লেগেছে। বাবা -মার, কথাও তেমন মনে পরে নি।অবসর সময়ে শারমিন আর লুসির সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দেয়। এছাড়াও শ্রুতি ওর বাবা -মা বোনের সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলছে।

শ্রুতি বিছানায় বসে ফেসবুকিং করছে। অনেকদিন ফেসবুক কোনো গান পোস্ট করা হচ্ছে না। শ্রুতির একটা ফেসবুক পেইজ আছে যেখানে ও ৪বা ৫দিন পর পর গান পোস্ট করে। পেইজ ফলোয়ার ও আছে অনেক। প্রায় ২মিলিয়নের কাছাকাছি। তাই শ্রুতি ভাবতেছে আজকে একটা গান পোস্ট করবে। কিন্তু সে জন্য তো গেতে হবে এবং একজনকে তার ভিডিও টা শুট করতে হবে। কিন্তু কে করবে?এখন তো বিকাল। লুসি কি বাসায় আছে? ও তো বিকালে বাসায় থাকে না৷ শ্রুতি ফোনটা রেখে লুসির রুমে গেল।

লুসি তখন বারান্দায় কার সাথে যেন কথা বলছিল। শ্রুতি চুপি চুপি লুসির পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে শোনার চেষ্টা করল, কি বলতেছে?

–বেবি, তুমি কী আজকে বিকালে বের হবা,লুসি জিজ্ঞেস করল।

ওপাশ থেকে কী বলল , তা শ্রুতি শুনতে পেলো না।

–আচ্ছা বেবি। কালকে দেখা হচ্ছে পার্টিতে। উম্মাহ,

–,,,,,,,,

–লাভ ইউ টু।

কলটা কেটে দিয়ে লুসি পিছনে ফিরতেই আতকে উঠল। শ্রুতি কোমরে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি বলল,

—কার সাথে কথা বলছিলে?

–ইয়ে মা,নে একটা ফ্রেন্ড এর সাথে।

–ও তাই বুঝি, আজকাল ফ্রেন্ডকেও কেউ উম্মাহ, আই লাভ ইউ টু বলে?আমি তো জানতাম না।

লুসি মনে মনে ভাবলো তার মানে শ্রুতি শোনছে যা যা বলেছি । এখন কী করবো যদি মাকে বলে দেয়? লুসি এদিক এদিক তাকিয়ে শ্রুতিকে একহাত দিয়ে সরিয়ে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

–এটা এদেশের কালচার তুমি জানবা কীভাবে?

শ্রুতিও পিছন পিছন ঢুকতে বলে,

–হ্যাঁ , তাইতো কতো সুন্দর কালচার।

শ্রুতি লুসির কাধে হাত ঠোট কামড়ে বলল,

–আরে চিন্তা করো না, আমাকে বলতে পারো আমি এসব বিষয় কাউকে বলি না৷

লুসি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

–ইয়ে মানে, ও আমার বয়ফ্রেন্ড এডওয়ার্ড।

–ওহ কয় বছরের রিলেশন ?

–২বছর হবে কয়েকমাস পর।

শ্রুতি ব্যাঙ্গ করে বলে হাই তুলতে তুলতে বলে,

–মাইয়া পাইকা গেছে, খালামণিরে বলা লাগবে বিয়া দিতে।

লুসি শ্রুতির সামনে হাত জোর করতে করতে বলে,

— বলো না প্লিজ। তুমি যা করতে বলবি তাই করবো। আমি আমার ডেড কে খুব ভয় পাই। ডেড শুনলে তো মেরে ফেলবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে, কাউকে বলবো না, কিন্তা একটা শর্ত আছে।

–কী?

–আমাকে ট্রিট দিতে হবে।

লুসি শ্রুতিকে ঝাপিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

–Thank you. তোমার ট্রিট পেয়ে যাবে।

শ্রুতি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

–এখন তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

–কী কাজ করতে হবে বলো? আমি সব করে দিচ্ছি।

–বেশি কিছু না। তোমাকে একটা ভিডিও শুট করতে হবে, পারবা?

–হ্যা, অবশ্যই তা তো খুব সোজা। কিন্তু তা দিয়ে তুমি কী করবে?

–তা দেখবে আনে। আগে আসো আমার সাথে।

শ্রুতি নিজের ঘরে ঢুকে গিটার টা, আর ক্যামেরা নিল। লুসি উত্তেজিত হয়ে বলল,

–ওয়াও, তুমি গান গাবে।

–হুম, বাগানে চল।

–ওকে । আমাকে দেও এইসব।

শ্রুতির হাত থেকে গিটার আর ক্যামেরা নিয়ে বাগানে চলে গেল। শ্রুতিও পিছন পিছন আসলো।

সব কিছু সেট করার পর শ্রুতি গিটার টায় সুর তুলে গান গাওয়া শুরু করল,

-Pal do pal ki hi kyun hai zindagi
Is pyaar ko hai sadiyaan kaafi nahi
to khuda se maang loon
Mohalat main ik nayi
Rehna hai bas yahaan
Ab door tujhse jaana nahi
Jo tu mera humdard hai
Jo tu mera humdard hai
Suhaana har dard hai
Jo tu mera humdard hai

Teri muskurahatein hain taakat meri
Mujh ko inhi se ummeed mili
Chaahe kare koi sitam ye jahaan
In mein hi hai sadaa hifaazat meri
Zindagaani badi khoobsoorat hui
Jannat ab aur kya hogi kahin

Jo tu mera Humdard hai
Jo tu mera Humdard hai
Suhaana har dard hai
Jo tu mera Humdard hai
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

গান শেষ হলে লুসি ক্যামেরাটা ওফ করে শ্রুতিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

–Woderful voice. খুব সুন্দর হয়েছে।

–Thank you for appreciating me .

লুসি শ্রুতিকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

-গান কখন পোস্ট করবে।

–রাতরে।

–আমি তখন আর একবার শুনবো তোমার পেইজ এ গিয়ে।

শ্রুতি হেসে যা কিছু এনেছিল, সব নিয়ে গেল ঘরের ভিতর ঢুকল। শ্রুতি ড্রইংরুমে খালামণিকে দেখল টিভি দেখছে। শ্রুতিকে দেখে টিভি ওফ করে জিজ্ঞেস করল,

–শ্রুতি কোথায় গিয়েছিলে এই সব নিয়ে?

শ্রুতি হেসে জবাব দিল,

–খালামণি বাগানে গিয়েছিলাম, গানের প্রাকটিস করতে।

–তুমি এখনও গান গাও?অনেকদিন হয়েছে শুনিনি।

–হুম, গাই তো। একদিন তোমাকে শোনাবো আনে।

শ্রুতি নিজের রুমে চলে গেল।

——————————————-

পরেরদিন দিন ,
সন্ধ্যার সময় শ্রুতি একটা উপন্যাসের বই পড়ছিল। এমন সময় লুসিকে রুমে ঢুকতে দেখে অবাক হলো। সে বইটা পাশে রেখে শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করল,

–কী ব্যাপার এই সময় তুমি যে?

–তেমন কিছু না তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
শ্রুতি সিরিয়াস হয়ে বসে বলে,

–হুম বলো কী বলবে?

এরপর লুসি যা বললো তাতে শ্রুতি অবাক হয়ে গেল।
#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ৯
#আদ্রিয়ানা নিলা

“আজকে আমরা এক পার্টিতে যাবো। আমরা সব ফ্রেন্ড লা মিলে প্রত্যেক বছর এই পার্টিটা করি। তুমি আমার সাথে যাবে। আর আরিচ(লুসির বয়ফ্রেন্ড এর নাম পরিবর্তন করে এটা রাখা হয়েছে)কেও দেখতে পাবে। ও ওখানে থাকবে,” লুসি বলল।

–না, তোমাদের ফ্রেন্ড দের পার্টিতে আমি যাবো কেন? খারাপ দেখাবে। আমি যাবো না।

লুসি অনুরোধে সুরে বলে,

–প্লিজ শ্রুতি চলো না।

–আচ্ছা যাবো ঠিক আছে, কিন্তু তোমার ফ্রেন্ড রা কী ভাববে? আর খালামণি কী আমাকে যেতে দেবে?

–আমার ফ্রেন্ড কীছুই ভাববে না,আর আম্মুকে আমি বলছি৷ তোমাকে যেতে বলছে। এখানে এসে তো কোথাও যাও নি তাই

–কিন্তু আমার তো কোনো পার্টি ড্রেস নেই।লুসি তুমি যাও আমি যাবো না।

–আরে ড্রেস নেই তো কী হয়েছে? আমার তো আছে, আমি আনতিছি৷ Wait for a moment.

বলেই লুসি নিজের ঘরে দিকে দৌড়ে গেল। এদিকে শ্রুতি ভাবছে যাওয়া কী ঠিক হবে? এই দেশের পরিবেশ,মানুষ কেমন তা তো জানি না৷ খাপ খায়িয়ে নিতে কষ্ট হবে।

শ্রুতি ড্রেস দেখে বিস্ময়ে বলে,

–আমি এই ড্রেস পড়বো না।দেখো পিট পুরো ফাঁকা, হাতা কত ছোট। আর লম্বায় হাঁটুর উপয় পর্যন্ত। এটা আমি পড়বো কীভাবে?

লুসি মৃদু হেসে বলল,

–এটাই তোমাকে পড়তে হবে। আর এটা তো সিমপল। আর পার্টিতে তো এগুলোই পড়ে।

শ্রুতি জেদি কন্ঠে বলে,

–না, না আমি পড়বো না। সবাই পড়বে বলে কী আমাকেও পড়তে হবে নাকি? আমি পার্টিতেই যাবো না।

–তোমাকে যেতেই হবে। আর এটা পড়তেই হবে। আমি কোনো কথা শুনবো না।

লুসি শ্রুতিকে হাত ধরে বাথরুমে ডুকিয়ে দিতে। দরজা বাহিরে পাশ দিয়ে লাগিয়ে চেচিয়ে বলে,

–তুমি যতক্ষণ না ওইটা পড়বা ততক্ষণ না পর্যন্ত দরজা খুলবো না। ওইখানেই তুমি বসে থাকো।

–না লুসি প্লিজ, খোলো। এটা কিন্তু ঠিক না।

লুসি কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গেল, ড্রেস চেঞ্জ করতে।

ড্রেজ চেঞ্জ করে এসে লুসি দেখে শ্রুতি দরজা খুলতে বলছে।লুসি দরজা খুলে দিল, শ্রুতি বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,

–দেখো লুসি এইসব ড্রেস আমার পড়ার অভ্যাস নেই। কেমন জঘন্য লাগতেছে।

লুসির কথার কোনো উত্তর না পেয়ে শ্রুতি পিছনে ঘুরে দেখে লুসি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি এইরকম হা করে তাকিয়ে দেখে থাকতে ভাবে তাকে সত্যি ভালো লাগতেছে না। তাই সে লুসিকে বলে,
–আমি এটা পড়বো না। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আমার আনা ড্রেস পড়ছি।

লুসি তাড়াতাড়ি শ্রুতিকে আটকিয়ে বলে,

–এই না না, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে তাই ওরকম তাকিয়ে ছিলাম। তুমি এইটাই পড়বে।
দেখো আমিও পড়েছি এতো আনইজি ফিল করার কিছুই নেই।

শ্রুতি লুসির দিকে তাকালো সে একটা সর্ট স্কার্ট, আর তার সাথে একটা লেডিস শার্ট পরেছে।

লুসি শ্রুতিকে বলল,

–চল তোমাকে এখন সাজিয়ে দি। জানো আমার না কাউকে সাজাতে খুব ভালো লাগে।

শ্রুতি কোনো কথা না চুপচাপ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল। লুসি সাজাতে আরম্ভ করল।

পাক্কা ১ঘন্টা সাজানোর পর লুসি বলে দেখো নিজেকে।শ্রুতি ঘাড় ব্যথা হয়ে গিয়েছে। এতক্ষণ লাগে কাউকে সাজাতে।
শ্রুতি আয়নার নিজেকে দেখতে পেল। খারাপ লাগতেছে না তাকে ।শ্রুতি অস্ফুটস্বরে বলল,

–বাহ, তুমি তো খুব সুন্দর সাজাতে পারো। Amazing!

লুসি একটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে,

–থ্যাংক ইউ। তুমি বসো আমি একটু সাজি৷

শ্রুতিও মজা করে বলে,

–হ্যাঁ, সাজো সাজো। তোমার বয়ফ্রেন্ড তো আসবে তাই না?

লুসি দৌড়ে এসে শ্রুতির মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,

–আরে কী করছো? আম্মু নিচে আছে।

শ্রুতি লুসির হাত ছাড়িয়ে বলল,

–আমি নিচে যাচ্ছি। তোমার সাজা হলে এসো।

শ্রুতি নিচে চলে গেলো। শ্রুতি খালামণিকে ড্রইংরুমে সোফায় বসে থাকতে দেখে সেও তার পাশে গিয়ে বসে বলল,

–খালামণি আমাকে কেমন লাগছে দেখোতো?

শারমিন বেগম শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলে,

–হুম তোকে বিশ্বসুন্দরী লাগতেছে।

শ্রুতি লজ্জা পেয়ে বলে,

–আহ, খালামণি মজা করো নাতো।

–আরে সত্যিই তোকে অনেক সুন্দর লাগতেছে।

শ্রুতি শারমিন বেগমের সাথে গল্পে মেতে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লুসি এসে শ্রুতির হাত ধরে বলে,

–আমি রেডি চলো।

লুসি শ্রুতির হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসল।

২০মিনিট পরে গাড়ি একটা ক্লাবের সামনে থামলো। লুসি গাড়ি থেকে নেমে শ্রুতির হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।
ক্লাবের ভিতরে মানুষ গিজ গিজ করছে। ভিতরে নানারকম লাইটিং৷কেউ কেউ ড্রিংস করছে। কেউ কেউ গানের তালে তালে নাচছে। সবাই লুসির ক্লাস ফ্রেন্ড। প্রত্যেক বছর নাকি তারা এইরকম পার্টি করে। হঠাৎ শ্রুতি একটা উঁচু টেবিল থেকে হইচই এর আওয়াজ শুনতে পেল। ভিতরে কয়েকজন কে সবাই ঘিরে রেখেছে সবাই । ভিতরে কারা তা দেখা যাচ্ছে না।

লুসি শ্রুতির হাত ধরে সেই খানে নিয়ে গেল। শ্রুতি কিছুই বলল না৷লুসি সেই টেবিলের কাছকাছি গিয়ে চিত্কার করে বলে,

–Hey, guise, look at me.

সবাই লুসির দিকে তাকালো। ফলে টেবিলের যারা বসে ছিলো, তাদের স্পষ্ট দেখালো। শ্রুতি টেবিলে থাকা ছেলেটাকে দেখে, প্রচুর অবাক হলো। ছেলেটা আর কেউ না, জ্যাক।জ্যাক ও তার দিকে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে ছিল। জ্যাকের পাশ থেকে একটা মেয়ে বলল,

–লুসি তোমার সাথে এই কিউট মেয়েটা কে?

শ্রুতির ধ্যান ভাঙলো। লুসি শ্রুতিকে বলল,

–She is my cousin. Her name is Sruti.

জ্যাকের পাশের একটা ছেলের শ্রুতি দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
–Hi, My name is Leo.

লুসি এক ধমকে বলে,

— ওকে আগে বসতে দে তোরা। ম্যানার শিখিস নি। লিও উঠ ও ওখানে বসুক।

অতঃপর লুসি শ্রুতির কানে ফিসফিস করে বলে,

–ওখানে গিয়ে বসো। আর ওই ছেলেটা ও হচ্ছে জ্যাক। ওর পাশে বসলে কেউ কিছু বলার সাহস পাবে না। ওখানে বসো। আমি একটু বাইরে যাবো। আরিচকে একটা কল করবো।

বলেই লুসি বাহিরে চলে গেল। শ্রুতিও চুপচাপ জ্যাকের পাশের জায়গাটায় বসলো। শ্রুতির পাশের একটা মেয়ে বলল,

–Hey, হানি, আমি এলিসা।

শ্রুতি মেয়েটার দিকে তাকালো।মেয়েটা হাঁটু পর্যন্ত একটা প্যান্ট আর একটা শার্ট পড়েছে।বেশি ম্যাকাপ নেই মুখে। সাদা চামড়ার মেয়েটাকে এতেই সুন্দর লাগতেছে। শ্রুতির এতো গুলো অপরিচিত ছেলে মেয়েদের মাঝখানে অস্তিত্ব হলেও হাসি মুখে বলল ,

–আমি শ্রুতি।

–শু,তি

–No, শ্রুতি।

–নামটা অনেক কঠিন। আমরা সবাই তোমাকে হানি বলেই ডাকবো। ওকে গাইস?

সবাই চিত্কার করে বলল, Yes,Hunny .

এরপর এলিসা সবার সাথে এক এক করে পরিচয় করে দিও। মেয়েটা অনেক মিশুক। সব সময় হাসি মুখে থাকে। শ্রুতির প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও এখন আর লাগছে না৷ এলিশা মেয়েটা সবার সাথে পরিচয় করে দিয়েছে। সবাই অনেক ভালো। তার সাথে সবাই কথা বলছে। শ্রুতি আড়চোখে জ্যাকের দিকে অনেক বার তাকিয়েছি। কিন্তু জ্যাক এমন ভাব করতেছে যেন তাকে আগে দেখেনি। শ্রুতি মনে মনে ভাবলো, তাতে আমার কী? মনে হয় ভুলে গেছে। শ্রুতি এ ব্যাপর নিয়ে বেশি ভাবলো না। হঠাৎ একটা ছেলে শ্রুতির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,

–Hey, বার্বিডল। আমি ক্লেভ।

শ্রুতি একবার সবার দিকে তাকালো।সবাই স্বাভাবিক। কিন্তু জ্যাকের মুখে বিরক্তি। আর শ্রুতিও অস্বস্তিতে পড়লো। কারণ এতক্ষণ সবার সাথে পরিচিত হলেও এই ছেলেটা ছিলো না। শ্রুতি এলিশার দিকে তাকালো।এলিশা চোখের এশিরায় হ্যান্ডশেক করতে বলল। শ্রুতি হাতটা বাড়াতে নিলেই জ্যাক শ্রুতির হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,

–ও হচ্ছে হানি। আর কিছু জানা লাগবে তোর।

ক্লেভ ছেলেটা একগাল হেসে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে বলল,,

–ওহ, হানি,, নাইস নেম। বাট জ্যাক ওকি তোর কিছু হয়?আগে তো দেখি নি?

–হ্যাঁ, আমার কিছু হয়।তারপর জ্যাক চেচিয়ে বলল,

–এখানে সবাই দাড়িয়ে কী দেখছো?যাও এখান থেকে।

সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। কারণ জ্যাক তাদের সাথে এরকম বিহেভ করে না। বাট তারা জানে, জ্যাক ক্লেভ কে তেমন দেখতে পারে না। সবাই ভাবছে হয়তো সেই জন্যই ক্লেভ এইরকম বিহেভ করছে। তবুও সবাই এক এক করে চলে গেল।
এদিকে শ্রুতি অবাক। সবাই চলে গেল কেন? আর জ্যাক ই বা এরকম করল কেন? শ্রুতির হাত এখনো জ্যাকের হাতের মুঠোয়।তাই শ্রুতি নিজের হাত দ্রুত ছাড়িয়ে বললো,

–আপনি সবার সাথে এরকম বিহেভ করলেন কেন? সবাই কত হাসি খুশি ছিল।

জ্যাক শ্রুতির দিকে ঘুরে হাসিমুখে বলল,
–সেটা নিয়া তোমার চিন্তা করতে হবে। আচ্ছা সেদিন যে তুমি রাস্তায় তোমার কাজিন এর কথা বললা তাহলে এই লুসিই তোমার কাজিন, রাইট?

–হুম,

–ওহ তার মানে তুমি ব্যাঙলাদেশ থেকে আরছো?

–হুম, আমি পড়াশোনা করতে আরছি এখানে। বাট ওটা ব্যাঙলাদেশ হবে না। বাংলাদেশ হবে।

–হুম বুঝেছি। আমি একবার ডেডের সাথে ব্যাঙলাদেশের কসবাজারে গেছিলাম।আমার বাবার ব্যাঙলাদেশে কোম্পানির শাখা আছে।

নিজের দেশের নাম কারো মুখে এরকম বলতে শুনলে কারোরই ভালো লাগবে না৷ শ্রুতির ও ভালো লাগছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। এটাই মেনে নিতে হবে। শ্রুতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হেসে বললো,
–হুম তাহলে তো ভালোই। পরেরবার গেলে আমাদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাবো। আর আমার চাচাও তোমার বাবার মতো একজন ব্যবসায়ী।

–ওহ, তাহলে তো ভালোই,,,,

শ্রুতি আর জ্যাক অনেকক্ষণ গল্প করলো। জ্যাক তাকে তুমি করে বলতে বলেছে। শ্রুতিও জ্যাকের সাথে অনেকটা ফ্রি হয়েছে । হঠাৎ জ্যাকের একটা কথা শুনে শ্রুতি হো হো করে হেসে দিল।হাসতে হাসতে বলল,
–ওয়াও, ফানি জোকস।
বলেই আবার হাসতে লাগলো।
–হানি তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর।

শ্রুতির কথাটা কর্ণগোচর হতেই হাসি থামিয়ে দিলো। জ্যাকের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সে তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে,

–কি যে বলো না জ্যাক?

–হুম, সত্যিই বলছি। চলো সবাই ডেন্স করছে দেখো। চলো আমরাও ডেন্স করবো।

শ্রুতি জ্যাক কে বলে ,

–আমি ড্যান্স পারি না জ্যাক।

জ্যাক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,

–আমি আছি না।আমি শিখিয়ে দেবো।

জ্যাক শ্রুতির কোনো কথা না শুনে না। শ্রুতির হাত ধরে ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে আসে।

,, (চলবে)
,,(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here