ভিনদেশী পর্ব ১০+১১

#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ১০
#আদ্রিয়ানা নিলা

জ্যাক শ্রুতির কোনো কথা না শুনে না। শ্রুতির হাত ধরে ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে আসে। শ্রুতি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জ্যাক ছাড়ছে না। আশে পাশে সবাই ডেন্স করছে৷ ওদের দিকে কারো খেয়াল নেই। গান চলছে একটা ইংরেজি গান।

Do you recall, not long ago
We would walk on the sidewalk
Innocent, remember?
All we did was care for each other

But the night was warm
We were bold and young
All around the wind blows
We would only hold on to let go

Blow a kiss, fire a gun
We need someone to lean on
Blow a kiss, fire a gun
All we need is somebody to lean on

Blow a kiss, fire a gun
We need someone to lean on
Blow a kiss, fire a gun
All we need is somebody to lean on,,,,,,,,,

জ্যাকের হাতের বাঁধন আলগা হতেই শ্রুতি যেতে নিলে জ্যাক হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। জ্যাকের এক হাত শ্রুতির কোমড়ে রাখে আর এক হাত শ্রুতির হাতের উপর। ঘটনাটা এতো দ্রুত হওয়ার কারণে শ্রুতি কিছুই বুঝতে পারছিলো না। ও জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাক ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। শ্রুতি জ্যাকের স্বচ্ছ নীল মণির চোখের দিকে তাকালো। জ্যাক তার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই নীল মণির চোখে তাকালে যে কেউ হারিয়ে যাবে। শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর মনে মনে ভাবলো,

–জ্যাক কী তাকে ভালোবাসে নাকি? তাহলে এই রকম তাকিয়ে আছে কেন?
না না, এ সম্ভব না। ও আমাকে ভালোবাসবে কীভাবে?এতো সহজে কী কাউকে ভালোবাসা যায়?একদিনেই কী কাউকে ভালোবাসা যায়। আর একদিকে এইসব কমন৷ আর আমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যাই হোক এটা আমার কাছে দৃষ্টি কটু।
আর সে তো সাদাফকে ভালোবাসে। আর কাউকে তো ও ভালোবাসতে পারবে না।সাদাফকে সে কতো ভালোবেসে ছিলো। কিন্তু কোথায় গেলো সেই ভালোবাসা?
মানুষের মূল্য খুবই সামান্য হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। নিজের দশ হাজার হারিয়ে গেলে বিশ বছর পরেও সেই টাকার শোক মানুষকে কাতর করে। কিন্তু কোনো মানুষ হারিয়ে গেলে আমরা মোটামুটি কুড়িদিনেই তাকে ভুলে যাই। হায়রে দুনিয়া!

শ্রুতির ছটপট আরও বারতে লাগলো।চোখে পানি টলমল করছে। জ্যাকের হাত কোমর থেকে সরিয়ে দৌড়ে ক্লাব থেকে বেড়িয়ে গেল। ক্লাবের পিছন দিকে একটা ফাঁকা জায়গায় হাটু মুড়ে বসে কাঁদতে লাগলো। তার এখন আবার সাদাফের কথা খুব মনে পড়ছে। কয়দিন হলো তাকে সে দেখেনি। সাদাফের কথা যেন মনে না পরে তাই সে নিজেকে ব্যস্ত রাখার যথাস্বাদ্ধ চেষ্টা করে। কিন্তু রাতে সাদাফের সাথে কাটানো মূহুর্ত মনে পরে। তার সাথে ভালোবাসা নিয়ে বেইমানি করার কথা গুলো মনে পরে। আর এগুলো তাকে পীড়া দেয়।দিনের বেলা যেকোনো কষ্টকেই মোহনীয় মনে হয়। কিন্তু রাত ভিন্ন ব্যাপার। রাতের নিস্বব্ধতার সাথে সাথে মানুষের জীবনের সকল কষ্ট গুলো দফায় দফায় মানুষকে স্মরণ করিয়ে যেনো ঘুমটাই কেড়ে নেয়। তাই হয়তো মানুষের জীবনের কিছু কিছু রাতকে কালো রাত বলা হয়। জগতে কোনো কষ্টই কম না। ছোট, বড়, সব কষ্টই সমান।কিন্তু শ্রুতি সাদাফকে ভুলতে চায়। কিন্তু তার করা বেইমানি শ্রুতি ভুলতে পারে না। সে তাকে ঘৃণা করতে চায়। নিজের জীবনটাকে আবার সাজাতে চায়। কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে কী এতো সহজে ঘৃণা করা যায়। সে যতো অন্যায় করুক না কেন?আমরা জীবনে যেটা বেশি করে চাই সেটাই পাইনা। পেলেও আবার হারিয়ে ফেলি। পাইনা বলেই পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা টা সারা জীবনই থেকে যায়। না পাওয়ার আক্ষেপটা সারা জীবন থাকে বলেই ভালোবাসাটাও থাকে।

ভালোবাসা চিরদিনই বেঁচে থাকে,
কখনো কবিতা হয়ে , কখনো গল্প হয়ে
কখনো স্মৃতি হয়ে, আবার কখনো চোখের অশ্রু হয়ে

শ্রুতির ও না হয় স্মৃতি হয়ে থাকুক৷ তার জীবনের সবচেয়ে বিষাক্ত স্মৃতি হয়ে। একটা কালো অধ্যায় হয়ে।

জ্যাক শ্রুতিকে খুজতে খুজতে ক্লাবের পিছন দিকে আসলো। জায়গাটায় তেমন কেউ নেই । অন্য জায়গার সাপেক্ষে জায়গাটা অন্ধকার। জ্যাক শ্রুতিকে দুর থেকে হাটু মুড়ে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে গেল। শ্রুতির সামনে গিয়ে বসে বলল,

–হানি তোমার কী হয়েছে? এইভাবে চলে আসলে কেন?আর এই অন্ধকারে বসে আসো কেন?

শ্রুতির কারো কথা কর্ণগোচর হতেই শ্রুতি সামনে তাকালো। জ্যাক তাকে কিছু বলছে। কিন্তু শ্রুতির কানে কিছুই ডুকছে না। সে একদৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে থাকলো।অন্ধকারে ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না। আবছা আবছা।

–হানি তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন? রাগ করেছো।

কোনো উত্তর নেই।শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকিয়েই আছে। জ্যাক শ্রুতির গালে হাত দিলো, তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে সে ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বালালো। শ্রুতির মুখের উপর ধরে দেখে শ্রুতি কাঁদছে৷ জ্যাক চমকে উঠল। সে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠ বলল,

–হানি তুমি কাঁদছো কেন? আমি কী কিছু করেছি?তোমার কথা শুনি নি, বলে কান্না করছো? সরি,আর কখনো জোর করবো না? এই দেখো কান ধরেছি।

শ্রুতির চোখে আলো পড়তেই সে চোখ কুঁচকে জ্যাকের দিকে তাকালো৷ জ্যাক কে কান ধরতে দেখে শ্রুতির খুব হাসি পেলো।কিন্তু নিজের হাসি আটকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

–কিছু না।

জ্যাক স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো। এতক্ষণ তার জান যায় যায় বলে মনে হচ্ছিল। সে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,

–হানি, তুমি কাঁদছিলে কেন?

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতির মুখটা মলিন হয়ে গেল।
জ্যাক শ্রুতির মলিন হওয়া চেহারা দেখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।সে মনে মনে ভাবলো,

–এখন হানিকে এই কথা জিজ্ঞেস করলে আবার কষ্ট পাবে। পরে জিজ্ঞাসা করবো।

পুনরায় শ্রুতিকে বললো,

–হানি, তুমি কী বাসায় যাবে? শরীর খারাপ লাগছে?

শ্রুতি দাড়িয়ে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে মৃদু স্বরে বললো,

–হ্যাঁ, আমি বাসায় যাবো। শরীরটা বেশি ভালো লাগছে না। কিন্তু লুসিকে তো দেখছি না।

— আমার মনে হয় ও আরিচ এর সাথে আছে। দাঁড়াও আমি কল দিচ্ছি৷

জ্যাক লুসির সাথে কথা বলে শ্রুতিকে বলল,

–ও এখানে নেই। আরিচের সাথে ঘুরতে গেছে। তুমি আসো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসছি।

শ্রুতি আর কোনো কথা বাড়ালো না। কান্না করার ফলে তার মাথা ব্যথা করছে আর মুখের অবস্হাও হয়েছে বেহাল। তাই তার বাসায় যাওয়াই ঠিক। শ্রুতি জ্যাকের পিছন পিছন গাড়িতে গিয়ে বসলো।

লুসিরদের বাসার সামনে গাড়ি থামালো জ্যাক। শ্রুতি গাড়ি থেকে নামল ।হঠাৎ শ্রুতি তার হাতে টান অনুভব করলো। হাতের দিকে তাকাতে দেখে জ্যাক তার হাত ধরে আছে। শ্রুতি জ্যাক দিকে না তাকিয়েই তীক্ষ্ণ গলায় বলল,

–জ্যাক হাত ছাড়ো। আমি বাসায় যাবো।

জ্যাক অভিমানী কন্ঠে বলল,

–হানি, আই’ম সরি। আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। প্লিজ ক্ষমা করে দেও। আর কখনো জোর করবো না তোমাকে৷

–জ্যাক আমি তোমাকে কিছুই বলি নি। তাই ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

–তাহলে তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন?

–কারণ আমার শরীরটা ভালো না৷

শ্রুতি জ্যাকের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে ভিতরে চলে গেলো৷ জ্যাকও গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

———————————

শ্রুতি ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো তার মাথা ব্যথার মেডিসিন আছে নাকি।কিন্তু নেই। তাই শ্রুতি ভাবলো ঔষধ নেই। তাই ঘুমাতে হবে। এই দুইদিন ঠিক মতো ঘুম হয়নি তার। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে চোখের কপাট বন্ধ করল। নিমিষেই তলিয়ে গেল ঘুমের অতল গহীনে।

______________________

১দিন পর,

নতুন একটি সকাল৷ শ্রুতি আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে। আজকে তার ভার্সিটি প্রথম দিন। আজকে থেকে তার নতুন জীবনের সূচনা হবে, নতুন এক দেশে,নতুন এক শহরে।শ্রুতির ঘড়ির দিকে তাকালো ৬ঃ৩০টা বেজেছে। শ্রুতি উঠে বারান্দায় গেল। লুসি বাগানে ব্যায়াম করছে। লুসি প্রতিদিনই ব্যায়াম করে। শ্রুতি ভাবলো, ও আজকে থেকে করবে৷ কালকে লুসিকে সে বলেছে। ব্যায়াম করলে শরীরটা ভালো থাকে। শ্রুতি রুমে এসে ঝটপট নিজের ড্রেসটা চেঞ্জ করে বাগানে গেল। লুসি শ্রুতির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে ব্যায়াম শুরু করল।

সকালে ব্রেকফাস্ট করে শ্রুতি আর লুসি বের হলো। রাস্তার পাশে পাশে সারি সারি গাছ গাছালি।গাড়িটা মাঝারি গতিতে চলছে। রোডের দুপাশে গাছের লাল পাতার ফাকে ফাকে সূর্যটা উকি দিচ্ছে৷ রাস্তার পাশে গাছগাছালি গুলোর মধ্যে লাল ম্যাপল গাছের সংখ্যাই বেশি৷ লাল ম্যাপল পূর্ব উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি পরিমানে জন্ম নেয় এমন গাছগুলির মধ্যে একটি।ফ্লোরিডাতে যে কোন গাছের তুলনায় লাল ম্যাপেল ছড়িয়ে আছে উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূল বরাবর বৃহত্তম পরিসীমা জুড়ে।ওয়াশিংটন শহরটি আটলান্টিককের উপকূলে হওয়ার কারণে এখানে লাল ম্যাপল গাছের সংখ্যা বেশি। এই গাছ শরত্কালে তার উজ্জ্বল গভীর লাল রঙের জন্য পরিচিত। কানাডার অন্টারিওতে এর সংখ্যার আমেরিকার থেকেও বেশি তাইতো কানাডাকে ম্যাপল পাতার দেশ বলা হয়।

শ্রুতি কালো জিন্সের সাথে ফতুয়া পড়েছে আর স্কার্ফ টা গলায় পেচিয়েছে।আর চুল গুলো খোলাই দিয়েছে।পিছনের ব্যাক প্যাকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়েছে৷ লুসি ভার্সিটির ড্রেস পড়েছে।

লুসি গাড়িটা ভার্সিটির সামনে থামিয়ে নামতে বললো। সে গাড়িটা পার্ক করে আসবে। শ্রুতির গাড়ি থেকে নামলো। দূর থেকে ভার্সিটিটাকে দেখলে কোনো রাজ মহলের থেকে কম মনে হবে না৷ শ্রুতি চারপাশে তাকালো। বেশির ভাগ স্টুডেন্টই ভার্সিটির পোশাক পড়া।
একটা চমৎকার পরিবেশ। শ্রুতির মনটা ভরে উঠলো। এরকম একটা প্রতিষ্ঠানে পড়বে বলে সে গর্ববোধ করছে।

শ্রুতির ভাবনা ছেদ হলো লুসির ডাকে। লুসি বললো,

–চলো, এখানেই কী দাড়িয়ে থাকবে নাকি?

শ্রুতি লুসির পিছন পিছন গেল। লুসি শ্রুতিকে তার ক্যাম্পাসটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল৷ শ্রুতি অবাক হয়ে দেখছে সব কিছু। অনেক বড়ো বড়ো একেকটা ক্যাম্পাস। লুসির ক্যাম্পাসটা অন্যদিকে৷ শ্রুতি শুধু হা করে সব কিছু দেখতেছে। এতো সব সৌন্দর্য্য একসাথে হজম করতে শ্রুতির কষ্ট হচ্ছে।
#ভিনদেশী
#পাট:১১
#আদ্রিয়ানা নিলা

লুসি শ্রুতির ক্যাম্পাসটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল। শ্রুতি অবাক হয়ে দেখছে সব কিছু। অনেক বড়ো বড়ো একেকটা ক্যাম্পাস। লুসির ক্যাম্পাসটা অন্যদিকে৷ শ্রুতির ক্যাম্পাসে ঢোকার গ্যাটের উপরে বড় বড় করে লেখা,

Michael G.Foster School of Business Campus

. Established 1927

শ্রুতি ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকল।বিজনেস স্কুলটার অধিনে ৬টি আলাদা আলাদা বিল্ডিং আছে ।বিল্ডিং গুলোতে আবার আলাদা আলাদা হল আছে। লুসি শ্রুতিকে ওর হলটা দেখিয়ে দিয়ে গেছে।শ্রুতি “পাকার হল” টার দিকে এগোতে লাগলো। পাকার হলটা ২০১০ সালে খোলা হয়েছে। হলটা ২টা বিল্ডিং এর সমন্বয়ে গঠিত। ডেনি ইয়ার্ডে(প্রাঙ্গণ) সবুজ ঘাসে কিছু শিক্ষার্থী বসে আছে। শ্রুতি শুধু হা করে সব কিছু দেখতেছে। এতো সব সৌন্দর্য্য একসাথে হজম করতে শ্রুতির কষ্ট হচ্ছে। শ্রুতি নিজের ক্লাসের দিকে যেতে লাগল চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে করতে।পাকার হলে ২৫০ সিট বিশিষ্ট একটা অডিটোরিয়াম,স্টুডেন্ট ব্রেকআউট রুম, একটা ক্যাফে, ল্যাব, ২৮ স্টুডেন্ট টিম রুম, বোর্ডরুম, লাউঞ্জ (খেলাধুলা করার কক্ষ)আছে। এছাড়াও এই হলের অধীনে Arthur W.Buerk Center for Entrepreneurship আছে। শ্রুতির ক্লাস এই সেন্টারে। হঠাৎ শ্রুতি একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলে মেয়েটি তার হাত ধরল।শ্রুতি এতক্ষণ এইসব এতো গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কারণে সামনের দিকে আর তাকানো হয়নি। যার দরুন ধাক্কা লেগেছে। শ্রুতি মনে মনে বলল,

–আল্লাহ, বেঁচে গেলাম নাকি? নাহলে আমার কোমড়টা অকালে শেষ হয়ে যাবে।

শ্রুতি পিটপিট করে চোখ খুলল। দেখে একটা সাদা চামড়ার মেয়ে তার হাত ধরে আছে। শ্রুতি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। মেয়েটার গায়ের রঙ পুরোই ফর্সা, ব্রাউন কালার চুল।গায়ে গোলাপি কালার শার্ট আর জিন্স পড়া।

মেয়েটি শ্রুতিকে এইরকম তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

–এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আর তুমি কী ব্যথা পেয়েছে?

শ্রুতি মাথা নাড়িয়ে না বলল।

–দেখে শুনে হাটবে। নাহলে এরকম এক্সিডেন্ট হতেই থাকবে।

শ্রুতি বিড়বিড় করে বলল,

–হুম, যেদিন থেকে আরছি এই খানে সেইদিন থেকেই এক্সিডেন্ট। বুঝতেছি না এই দেশটাকি আমরা সাথে রাগ করল, নাকি অভিশাপ দিল।

–এই মেয়ে কী বিড়বিড় করছো?

শ্রুতি থতমত খেয়ে বলে,

— কই কিছুই না তো।

–ওহ,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি নতুন,?

–হুম, আমি নতুন।

মেয়েটা উচ্ছাস নিয়ে বলে,

–রিয়্যালি?আমিও নতুন। তুমি কোন সেন্টারে?

–Entrepreneurship(শিল্পোদ্যোগ) তুমি?

মেয়েটা উচ্ছাস নিয়ে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–সেম আমিও।
এই রকম একটা অপরিচিত মেয়ে জড়িয়ে ধরার কারণে শ্রুতির বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্ত শ্রুতি না পারছে বলতে না পারছে বুঝতে । এইদেশের মানুষ কী জড়াজড়ি ছাড়া কিছুই বোঝে না।

মেয়েটি শ্রুতিকে ছেড়ে বলে,

–চলো যাওয়া যাক। তোমার আর আমার ক্লাস তো সেম। ক্লাস শুরু হবে কিছুক্ষণ পর।

মেয়েটা শ্রুতির হাত ধরে গেল ক্লাসে। ক্লাস বেশ বড় ও চমৎকার। মেয়েটা শ্রুতিকে নিজের পাশে বসালো ।শ্রুতি কিছুই বলল না। কারণ এই অপরিচিত জায়গায় তার একজন বন্ধু প্রয়োজন। যদি মেয়েটা বন্ধু হয়ে তাহলে তো ভালোই হলো। বাট মেয়েটা একটু বেশি কথা বলে।বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর, শ্রুতি জানতে পারলো মেয়েটার নাম আলিয়া। এই খানেই থাকে ছোটবেলা থেকে৷ এইখানকার নাগরিক। আলিয়া শ্রুতিকে বলল,

–Can we be friends?

শ্রুতিও নির্দ্বিধায় উত্তর দিল,

–ওকে সিউর৷

আলিয়া খুব খুশি হলো। শ্রুতিও মনে মনে খুশি হলো,একজন বন্ধু পেয়ে।

এই মধ্যেই ক্লাসে শিক্ষক এলো। দুইজন কথা বলা বন্ধ করে, স্যারের দিকে মনোযোগ।
স্যার ক্লাসের সবাইকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে (উদ্বোধনী ক্লাস বা প্রথম ক্লাস) যেতে বলল।শ্রুতি আলিশার সাথেই ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে গেল। ওরিয়েন্টেশন ক্লাস টা চমৎকার করে সাজানো হয়েছে। আলিশা শ্রুতি পাশাপাশি বসলো।শ্রুতির ভার্সিটির বিভিন্ন কিছু সম্পর্কে জানতে পারলো৷ কয়েকজন শিক্ষক ও ক্লাসের মোটামুটি সবার সাথেই পরিচয় হলো।

ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম শেষ হলো। স্যার সবাইকে বই, রুটিন, সংগ্রহ করতে বলেছে। কিন্তু শ্রুতি ভাবছে কী করবে সে? যারা এই দেশের বাহির থেকে স্কলারশিপ নিয়ে আরছে তাদের কিছু ফর্মালিটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় বই নিতে হবে। এদিকে লুসিদের তো এখনো ছুটি দেয়নি । আলিশা শ্রুতি এইভাবে গালে হাত দিয়ে কিছু ভাবতে দেখে বলে,

–কী ভাবছো শুতি?তুমি বই আনতে যাবে না?

–আমি একা কীভাবে যাবো? লুসির তো এখনো ছুটি হয়নি। ও তো এইখানের স্যারদের সাথে পরিচিত। ও হলে ভালো হতো। তাই ভাবছি কী করবো?

অতঃপর আলিশা ভাবুক হয়ে ভাবতে লাগলো,

–চলো আমরা ক্যাম্পাশ গুলো ঘুরে দেখি। এখানে ক্যাম্পাশ গুলো অনেক বড় বড়। ঘুরে দেখলে যেমন সময় পার হবে তেমনি দেখাও হবে সব কিছু। আমিও আগে এই ভার্সিটি আশি নি। আমার বাসা এইখান থেকে একটু দূরে।

শ্রুতি মনে মনে ভাবলো,

–হুম প্রস্তাবটা মন্দ না। ভার্সিটি সত্যিই সুন্দর। দেখলে কাজে লাগবে।
শ্রুতি একবার আলিশার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

–গুড আইডিয়া। তুমি আমার নাম ঠিক মতো না বলতে পারলেও বুদ্ধিতো দিতে পারবে।

আলিশা ও হেসে বলল,

–চলো।

আলিশা ও শ্রুতি তাদের ক্যাম্পাসের পিছনের দিকে গেলো। ক্যাম্পাসের পিছনের দিকে অনেক জায়গা। বিভিন্ন রকমের গাছ গুলো সারিসারি করে লাগানো। গাছের পাতা গুলোর কালার কোনটায় লাল, কোনটায় সাদা, কোনটায় হালকা হলুদ, আবার কোননায় হালকা গোলাপি । কিছু কিছু গাছের পাতা গুলো নিচে ঝড়ে পড়েছে। সবুজ ঘাসে ভরা পুরো জায়গাটা। বসার জন্য কিছু গাছের পাশে কিছু বেঞ্চ রাখা ৷ এইখানে তেমন স্টুডেন্ট নেই। যারা আছে তারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। কেউ বই পড়ছে বা কেউ নোট করছে। যার যার কাজ করছে।

এইদিকে শ্রুতি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত৷ জায়গাটা ছবির মতো সুন্দর। হয়তো কেউ ড্রইং করেছে বলে মনে হচ্ছে।

শ্রুতি আলিশাকে ডাকলো। দুইজনে কয়েকটা ছবি তুললো। শ্রুতি এগুলো ফেসবুকে পোস্ট করবে তাই তুলল। বিদেশে আরছে ছবি তুলবে না তা কি হয়?

প্রায় ১ঃ৩০ঘন্টা নিজেদের ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করল। মোটামুটি সবই চেনা হয়েছে শ্রুতির ক্যাম্পাসে।কিন্তু পুরো ভার্সিটি ঘুরে দেখতে হয়তো কয়েকদিন লেগে যাবে। এতো বিশাল ভার্সিটিটা। হঠাৎ আলিশা শ্রুতিকে বলল,

–শুতি চল ক্যাফেতে যাই , এককাপ কোল্ড কফি খেয়ে আসি।

শ্রুতিও সম্মতি জানালো। একটু টেস্ট করুক এখানের খাবার।

২ঘন্টা পর শ্রুতি আর আলিশা নিজেদের ক্যাম্পাস থেকে বের হলো। ভার্সিটির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠ ও সবুজ ঘাসে আবৃত। শিক্ষার্থীর আনাগোনা বেশি এখানে।
শ্রুতি লুসিকে খুঁজতে খুজতে ভার্সিটির সামনের দিকে আসলো। লুসি একটা বেঞ্জ এর উপর বসা। তার সাথে আছে আরিচ, জ্যাক, এলিসা৷জ্যাক দেখে শ্রুতির হৃদপিণ্ডে প্রবল স্পন্দনের শব্দ হলো। শ্রুতি বুঝতে পারলো না এরকম কেনো হলো। তবুও এইসব একপাশে রেখে জ্যাকের দিকে একপলক তাকালো৷ জ্যাক এখনো তাকে দেখেনি। গল্পে মগ্ন৷ শ্রুতি আলিশার হাত ধরে লুসির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,

–লুসি আমি তোমাকে খুঁজছি আর তুমি এখানে চিল মুডে বসে আছো?

লুসি শ্রুতির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

–তুমি এখনও বাসায় যাও নি?

শ্রুতি কোমরে হাত দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,

–আমার কিছু ফর্মালিটি পূরণ করতে হবে এবং বই নিতে হবে । আমি যাবো কীভাবে?

লুসি দাড়িয়ে সকলের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,

–আমাকে একটু শ্রুতির সাথে অফিসরুমে যেতে হবে।
তাই সবাই বাই। কালকে আবার দেখা হবে।

লুসি এই কথা বলে যেতে নিবে তার মধ্যে জ্যাক বলে উঠলো,
— আমিও যাবো।

লুসি হাঁটা থামিয়ে জ্যাকের দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,

–তুই গিয়ে কী করবি? তোর কোনো কাজ আছে?

জ্যাক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

–না, মানে এমনি যাবো।

জ্যাকের কথা মাঝে শ্রুতি আলিশাকে বলল,

–আলিশা তুমি বাসায় যাও। তোমার বাসা তো দূরে। আমার সাথে থেকে আর কী করবে? আর আমার যেতে দেরি হবে?

আলিশা শ্রুতির গাল টেনে বলল,
–ওকে বিউটিফুল, বাই।

আলিশা যেতেই লুসি শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করে,

–মেয়েটা কে শ্রুতি?

–আমার ফ্রেন্ড। এক ক্লাসেই আমরা।

–ওহ

বলেই লুসি শ্রুতির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শ্রুতি পিছনে তাকিয়ে দেখে জ্যাকও ওদের পিছন পিছন আসছে।

শ্রুতি প্রফেসর রিচার্ড এর সহায়তায় সব ফর্মালিটি গুলো পূরণ করে প্রয়োজনীয় বই, নোট, রুটিন গুলো সংগ্রহ করলো। প্রফেসর রিচার্ডের শ্রুতিদের ক্লাস টিচার আর লুসির ও পরিচিত হওয়ার কারণে সব কিছু তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করে বাসায় আসলো।

,(, চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here