মনের_গভীরে_তুমি পর্ব ২

#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_০২
#M_Marufa_Yasmin

অন্ধকার ঘরে হালকা ড্রিম লাইট।তার ওপর চাঁদের আলো এসে টিপ এর মুখে পড়ছে।টিপের গয়না গুলো চাঁদের আলোতে ঝলমল করছে।খুব ঘুম আসছে টিপ এর।কিন্তু ভয়ে ঘুমাচ্ছে না।যদি আরাভ আবার ওকে চিৎকার করে বকে।ওই জন্য।আরাভ এর ঘুমটা ভেঙে গেলো।তাকিয়ে দেখে টিপ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আরাভ ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বলল

—“কিছু বলবে?
—“খুব ঘুম আসছে ঘুমাবো?
—“আজ আমার অনেক গায়ে হাতে ব্যাথা করছে একটু টিপে দাও ।বিয়েতে কত কাজ করতে হয়েছে ।ওখানে দেখো তেল আছে নিয়ে এসো দিয়ে মালিশ করে দাও ।

টিপ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো নিজের রাগ কেন।দিয়ে তেল নিয়ে এসে আরাভের পায়ে মালিশ করতে লাগল।টিপ বিড়বিড় করে বলছে

—” কোন দুঃখে যে বিয়েটা ভাঙ্গাতে গেলাম আল্লাহ জানে।নিজের জালে নিজেই জড়িয়ে গেলাম ধ্যাত।আর এই রাক্ষস শয়তানটা এত রাতে আমাকে ঘুমাতে না দিয়ে তেল মালিস করাচ্ছে।উফফ এত কষ্ট আমি কাকে দেখাবো।

আরাভ এক ভাবে টিপ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ……

—“এই কি বিড়বিড় করছো?
—” কিছু না।by the way সব কথা আমি আপনাকে কেনো বলতে যাবো হু?
—“সব কথা আমাকেই বলতে হবে হু।
—“বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ।
—“কম বাড়াবাড়ি হয়েছে বেশি হলে থাক আর বললাম না ।বকবক না করে ভালো করে মালিশ করো ।
—“করছি তো ।হাত নাকি অন্যকিছু ।

আরাভ আর কিছু বলল না চুপ করে থাকলো টিপ রেগে গিয়ে দুই একবার খুব জ্বরে করে মালিশ দিচ্ছে আর আরাভ চেঁচিয়ে উঠছে আহহ
টিপের বেশ মজা লাগছে।
টিপ বিড়বিড় করে বলছে।

—“কেনো যে বিয়ে ভাঙ্গাতে গেলাম।আমি।আমি এখন নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।উফফ ভালো লাগছে না হু হু হু।

আরাভ হঠাত ভ্রু কুঁচকে বলল
—“আচ্ছা তুমি আমার বিয়ে ভাঙ্গালে কেনো?
টিপ কান্নার শুরু নিয়ে বলল ।।।

—“অফিসে আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন ওই জন্য 😕।

—” এত কুবুদ্ধি আসে কোথা থেকে?

—” একদম চুপ করুন হ্যা আপনাকে তো এমনই তেই কেও বিয়ে করতো না ।আমি ভাগ্যবান যে আমাকে বউ হিসাবে পেয়েছেন ।জানেন আমার পেছনে কত ছেলে ঘুরাঘুরি করে আমি কেও কে পাত্তা দিয় না ।হু ।

—“যারা ঘোরাঘুরি করে তারা নিশ্চয়ই মাতাল না হলে পাগল।তাছাড়া ভালো কেও তোমার পেছনে ঘুরাঘুরি করবে না হাহা ।

টিপ ভাব নিয়ে বলল …
—“শুনুন আমি চাইলেই সবাই কে পটিয়ে ফেলতে পারি।আমি চাইলে ড্রোনাল ট্রাম্প কেও পটিয়ে ফেলতে পারি বুঝেছেন ফিল্মি হিরো দের কে এক মিনিটে পটিয়ে ফেলতে পারি 😎।

—“আর কাওকে পেলে না শেষ পর্যন্ত ড্রোনাল ট্রাম্প হাহা।ওকে আমরা কিছুদিন পর আমেরিকা যাচ্ছি তখন দেখবো কিভাবে তুমি ড্রোনাল ট্রাম্প কে পটাও।

টিপ কিছু একটা ভেবে বলল ।।
—“না না এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ।মানে একটা বর আছে আর চাই না ।আপনি তো আছেন।বিয়ে না হলে দেখা যেতো ।

—“ও তুমি আমাকে তোমার বর ভাবো তাহলে ।
—“বিয়ে হয়েছে বর ভাববো না তো নানা ভাববো আজব মানুষ ।

—“আচ্ছা ভালো করে মালিশ করো ।
টিপ নিজেই নিজেকে বলছে ।

আস্ত গাধা তুই টিপ সব সময়ই নিজের জালে নিজে ফেঁসে যাস কেনো বলতো উফফ ।এই শয়তানের কাছে সাবধানে থাকতে হবে ।
সত্যি টিপ ভালোই নিজের জালে ফেঁসেছে।রাত দুইটা বাজে।এখনও টিপ মালিশ করছে।
যত রাত বাড়ছে চাঁদের আলো ততই ঝলমলে লাগছে।।আরাভ একটু নড়েচড়ে উঠলো টিপ চুপিচুপি আরাভের মুখের কাছে মুখ এনে দেখলো আরাভ গভীর ঘুমে ।টিপ গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।
চাঁদের আলোতে লাল ঝলমলে পাথর বসানো লেহেঙ্গাটা ঝলমল করছে কি সুন্দর লাগছে টিপ কে মনে হচ্ছে রাতের আকাশে কোনো পরি ধরিত্রীর বুকে নেমে এসেছে।জোছনা রাতে দৃশ্য উপভোগ করতে ।। বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিপ ভাবছে।

—” কি জানি আমার ভাইটা কি করছে।একবার ফোন করবো ওকে? না থাক সকালে করবো।এখন ঘুমাচ্ছে হয়তো ।কিন্তু আমি ঘুম না পাড়িযে দিলে তো ঘুমায় না ও কি যে করছে আমার জানটা।

অন্যদিকে দূর থেকে কেও টিপ কে দেখছে।টিপকে দেখে জেনো সে পাগল হয়ে গেলো।হা করে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে।এক ভাবে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের মনে বলছেন তিনি …..

—“wow just amazing কে হতে পারে এটা এই অপরূপা কে ।যেনো কোনো পরি।যেনো চাঁদের একটা টুকরো একটা গোলাপের পাপড়ি ।কে তুমি অপরুপা তুমি যে আমার এই বুকে এসে আঘাত করলে।আল্লাহ তোমাকে সত্যি অনেক যত্নে তৈরি করেছেন।তোমার চোখ দুটো চাঁদের আলো তে আরো সুন্দর লাগছে যদি পারতাম একবার তোমায় ছুঁতে ।আমি কি স্বপ্ন দেখছি না সত্যি ।এ যে সত্যি পরি।আমার স্বপ্নের পরি।
তুমি আমার।খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে কাছে থেকে দেখতে চাই।তোমার ওই রেশমি খোলা চুল গুলো চাঁদ তার আলো দিয়ে আরও ঝলমলে করে দিয়েছে।

আরাভ চোখ খুলে দেখে টিপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আরাভ বিছানা থেকে উঠে ।টিপের কাছে গিয়ে বলল।

—“তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? যাও ভেতরে ।ঘুমাও ।
টিপের চোখে পানি ছিলো।আরাভ কে লুকিয়ে চোখের পানিটা মুছে বলল ।।
—“কিছু না স্যার এমনি দাড়িয়ে ছিলাম।
আরাভ টিপের দিকে তাকিয়ে বলল
—“শোনো !
—“বলুন?
—“তুমি কাঁদছিলে?
—“কই না তো ।আমার ঘুম আসছে ।আমি ঘুমাতে গেলাম।
—“আচ্ছা শোনো কাল কোথাও যাবে না ওকে কাল বউ ভাত অনেক লোকজন আসবে।সকাল সকাল উঠে যেও ।
টিপ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো।তারপর সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ।

আরাভ ও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
এতখন ওদের কথা বললাম।নিশ্চয় পরিচয় নিয়ে খুব প্রবলেম হচ্ছে চলুন পরিচয়টাই দিয়।
আমাদের নায়িকা হলো টিপ তার কোনো টাইটেল নেয় ।কারন সে নিজেই জানে না সে কে।ছোট্ট থেকে একজন ভদ্রলোক এর কাছে বড়ো হয়েছে।নাম রহমান মল্লিক।সেই সূত্রে টিপ নিজের নামে এর সাথে মল্লিক শব্দটা যোগ করেছে।টিপের রহমান কাকা আর বেঁচে নেয়।বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন।
তার ছোট্ট একটা ভাই আছে আবির।ক্লাস 11 পরে।ব্যাস টিপের পরিবারে আর কেও নেয়।
আর আমাদের নায়ক আরাভ চৌধুরী! ইশরাত চৌধুরী ও ইমরান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে ।আরাভ এর দুটো বোন আছে।ইশমা আর কেয়া।কেয়ার বিয়ে হয়ে গেছে তাও বাবার বাড়ি বর নিয়ে থাকে।ইশমা ক্লাস 11 এ পড়ে।
বাকি সব গল্পের মধ্যে জানতে পারবেন।

সকাল বেলা🌞

খোলা জানালা দিয়ে সূর্যের আলো এসে আরাভের মুখে পড়তেই !আরাভ নড়েচড়ে উঠে হাত দিয়ে আলোটাকে আড়াল করলো।তারপর ফোনটা হতে নিয়ে দেখলো নয়টা বাজে।আরাভ ফোনটা বিছানায় রেখে দিয়ে উঠে টিপ কে খুঁজে কিন্তু কোথায় নেয় টিপ ।আরাভ ভাবলো হয়তো বাথরুমে! এই মেয়ের তো আবার বাথরুমে থাকার অভ্যাস।আরাভ বাথরুমের দিকে তাকিয়ে বলল

—“টিপ, টিপ তুমি কি বাথরুমে এই টিপ দেখো বাইরে এসো আমি রেডি হবো।

কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে বাথরুমের দরজার কাছে যায়।দেখে দরজা লাগানো নেয়।তার মানে ও বাথরুমে নেয়।আরাভ পুনরায় ভাবলো হয়তো নিচে আছে ।তাই ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে ইশরা কে বলল ……..

—” ইশরা টিপ কইরে?

ইশরা কাজ করছিলো আরাভের কথায় পেছন ফিরে বলল …
—” কই আমি তো দেখিনি ভাবি কে।

আরাভ বেশ চিন্তায় পড়ে বিড়বিড় করে বলল
—“তাহলে গেলো কোথায় মেয়েটা।আজব তো।

ইশরা সন্দেহ নিয়ে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলল
—“দা কি হয়েছে বলতো? Any problems? আমি কি তোর কোন সাহায্য করতে পারি?

—” না না কোনো প্রবলেম নেয় তুই কাজ কর।আমি দেখি তোর ভাবি কোথায় ।

আরাভ বাড়ির বাইরে যায় ।বাগানটা ভালো করে খুঁজে দেখে কোথাও নেয়।ব্যার্থ হয়ে বাড়ির ভেতরে এসে ওর মা কে জিজ্ঞেস করলো, ,,

—“মা তুমি টিপকে দেখেছো?

ইশরাত চৌধুরী রান্না করছিলেন ছেলের কোথায় পেছন ফিরে তাকালেন আর বললেন

—“আমি কি করে জানবো কোথায় গেছে ।আমাকে কি বলে গেছে নাকি ।আর নতুন বউ বাড়ির কাওকে না বলে কোথায় গেলো?শোন আরাভ কিছুক্ষন পর লোকজন চলে আসবে ।তাড়াতাড়ি তোর বউকে খুঁজে নিয়ে আয় ।
আরাভ আর ওর মাকে কিছু না বলে চলে গেলো ।
*
*
*
*
বাকি

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here