মন_কেমনের_বৃষ্টি পর্ব ৩১+৩২

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩১
#পুষ্পিতা_প্রিমা

পরী ধপ করে বসে পড়ে গেইটের কাছাকাছি। উচ্চস্বরে কান্না করে। মুনা এসে কোলে নেয়। হাত পা ছুড়ে কান্না করে পরী। মুনাকে প্রশ্ন করে,
‘ আমমমা নাই?
মুনা বুকে চেপে ধরে। আদর দেয়। পরী ঘেমে একাকার হয়। বলে, মিননি নাই। রিইইইই নাই। পাপপা নাই। ইশআআ নাই। নাই। নাই।

মুনা ও কেঁদে দেয় তার সাথে। বলে, আছে মা। সবাই আছে। সবাই আসবে। রিইইই আসবে। পাপপা আসবে। ইশআআ আসবে। মিননি ও আসবে।
পরী কাঁদতে কাঁদতে ঢলে পড়ে। নাকের পানি চোখের পানি মুছে দেয় মুনার গায়ে। বলে, আমমমা নাই??

_____

ঘুমের ঔষধ কেন খেয়েছে ডক্টর মেহতাব প্রশ্ন করলে ও তার সঠিক উত্তর দিতে পারল না জহির মিয়া।
‘ ইশা সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। ও সুইসাইড করেনি।

‘ কিন্তু এটা বললে তো হবেনা। পুলিশ তো এটা শুনবে না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তো কখনো এতগুলো ঘুমের ঔষধ খাবেনা। কারণটা কি?

জহির মিয়া বলেন। আপনি পেশেন্টকে জিজ্ঞেস করুন। ও উঠলে তারপর না হয় ওর জবান নেবেন।

_______

চোখের দুটোর নিচে অর্ধচন্দ্রকার কালো ছাপ। চেহারা মলিন,বিবর্ণ, ফ্যাকাসে। মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে । চারপাশ বিষণ্ণ লাগছে ইশার। চোখমেলে তাকানোর আগে চোখে জমে থাকা জলগুলো কানের দিকে গড়াল। পিটপিট করে তাকাতেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের অবয়ব। বাচ্চা মেয়েটি কাঁদছে। নাকের পাটা,গালের দুপাশ,চোখদুটোর আশপাশ ভীষণ লাল। চোখদুটোর পানিগুলো ও বোধহয় লাল। বাচ্চা মেয়েটি ঠোঁটে এলিয়ে হাসার চেষ্টা করল তাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে। ডাকল, আমমমমা।
ইশা অবাক হয়ে দেখল মেয়েটিকে। আদুরে কন্ঠে ডাকল মেয়েটিকে,

‘ মা,,,,

ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি তার ডাক শুনে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তার চোখ। ঠোঁট ফুলিয়ে নিজের চোখের জল দেখিয়ে বলল, “আমমমা দুক্কু।

ইশা হেসে দিল। বলল, আমমমা দুক্কু দিয়েছে?

পরী মাথা নাড়ল দুপাশে। বলল, দুক্কু মিননি। দুক্কু ইশআআ। দুক্কু রিইইইই। দুক্কু পাপপপা।

ইশা হেসে দিল এবার। মেয়েকে বুকের উপর শুইয়ে চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মাকে সবাই দুক্কু দেয়? কেউ পাপ্পি দেয় না? কেউ আদর করেনা?

পরী ইশার বুকের উপর শুইয়ে মিনিমিন করে বলে, নান নান না।
নাই। রিইইইই নাই। নাই নাই।

ইশার বুক কেঁপে উঠে। নাই মানে? পরক্ষণে নিজেকে বুঝ দিল পরী কি না কি বলছে। কিন্তু বেশিক্ষণ নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারল না। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ডাকল জহির মিয়াকে।

‘ মামা…..

পরী তার বুক থেকে মাথা তুলে তাকাল। ইশার মতো করে ডাকল, মামমমমমা…..
ইশা হাসল। বলল, এটা তোমার মামা নয়।আমার মামা।
পরী তার বাম হাত দিয়ে ঠাসস করে চড় মারল ইশার ঠোঁটের উপর। ঠোঁট টেনে বলল,

আমমমাল মামমমা!

ইশা বলল, না আমার।

পরী বলল, নান না আমমমাল।

ইশা আবার ও বলল, আমার মামা। শুধু আমার মামা।

পরী হাত পা ছুড়ে মারল ইশাকে। প্রশ্ন করার মত করে চিকন গলায় বলল, আমমমাল উমম আমমমাল?
ইশা হেসে দিল। বলল, বলেছি না আমার। তোমার না। আমার মামা।
পরী মাথা দিয়ে মারল ইশাকে। ধমক দিয়ে বলল, ইশআআ ভোববব।
ইশা হো হো করে হাসল। বলল, তুমি চুপ। একদম কথা বলবে না।
পরী ইশার মত করে বলার চেষ্টা করল। ‘ ববববেনা। না। না। বববেনা। মাববো।
ইশা হাসতে হাসতে ডাকল,মামা তুমি আছ?
দেখো পরী আমায় মারছে।
পরী যেন বুঝল তার নামে নালিশ দেওয়া হচ্ছে। ইশার গলায় মুখ নিয়ে গিয়ে কামড় দিতে চাইল। কিন্তু চোখ গেল কেবিনের দরজার সামনে।
একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। চোখ সরাচ্ছে না। পরী ভয় পেল। ইশার গলায় মুখ গুজল। মিনমিন করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল, মাববো।

ইশা কিছু না বুঝে বলল, কাকে মাবববেন।

সারাক্ষণ শুধু মাবব মাবব করেন কেন? হাতটা আজকাল বেশি চলছে আপনার।
পরী আবার ও মুখ তুলে তাকাল ছেলেটির দিকে। আবার ও ইশার গলায় মুখ গুজল। কান্নাকন্ঠে ডাকল, মাবববো! মাববো।
ইশা হাসল। বলল, আচ্ছা মারিয়েন। মারছেন না কখন?
পরী তার কথা শুনল না। আড়চোখে তাকাল আবার ছেলেটির দিকে। চোখ রাঙিয়ে তাকাল ছেলেটির দিকে। ছেলেটি ও তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল। পরীর এবার জোরে চেপে গেল ইশার গলায়। এক নিঃশ্বাসে বলল, মাবববো মাববো। পরররী নাই নাই।
ইশা বলল, জানি নাই পরী। এবার সরো ফিপির উপর থেকে, ব্যাথা পাচ্ছি।
পরী ঠাস করে মারল ইশাকে। বলল, না না নান না।
ইশা তাড়াতাড়ি বলল, আচ্ছা, আচ্ছা, ব্যাথা পাচ্ছিনা। ব্যাথা পাচ্ছি না। তুমি থাকো। মা কি ঘুমোবে?
পরী দেখল দরজার পাশটাই। ওমা ছেলেটা গেল কোথায়। পরী হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে লাগল,
‘ নাই। নাই। পরররররী নাই। ইশআ নাই।
কিন্তু পরেই আচমকা ঠোঁট বাঁকাল। ঠোঁট টেনে লম্বা করল। ইশা অবাক হলো। বলল, কি হয়েছে মা?
পরী হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঠোঁট টেনে ভাঙা কন্ঠে বলল,
‘ নাই। রিইইই নাই। পাপপা নাই। নাই। নাই। মিনননি নাই।

ইশার ডাক দিল আবার,

” মামা……

জহির মিয়া আসল। তবে চেহারায় একরাশ বিষণ্ণতা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ইশার। পরীর সাথে হাসে। ইশা চেয়ে থাকে দরজার দিকে।

‘ রিপদা, বড়দা কোথায় মামা? তারা আসেনি? সামান্য কিছুর জন্য আমায় হসপিটালে কেন আনলে?

জহির মিয়া মলিন হাসল। বলল, এখানে তোর ডক্টর নেই। আমি জিজ্ঞেস করেছি অন্যান্য ডক্টরদের। আদি চৌধুরী বেশ কয়েকদিন ধরে ডিউটিতে একটিভ নেই। ইশা মাথা এলিয়ে দিল বালিশে। হাঁফ ছেড়ে বলল,
‘ বিয়ের বলে কথা। ব্যস্ততা ভীষণ।
জহির মিয়া চেয়ে রইল ইশার মুখের দিকে। কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,

‘ ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলি কেন?

ইশা চোখ উপরে তুলে দেখল জহির মিয়াকে।

‘ ঘুম আসছিল না। খারাপ লাগছিল। তাই খেয়েছি। পরীর সাথে একটু ঘুম….

‘ পুরো স্লিপিং ফিলের পাতা খেয়ে নিয়েছিস। তুই কি পাগল ইশু? আজ রিপ থাকলে কি হতো? ছেলেটা শুনলে কি হবে?

ইশা বসে পড়ল। পরীকে কোলে রাখল। জহির মিয়ার দিকে তাকিয়ে একরাশ চিন্তা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ রিপদা থাকলে মানে? কোথায় রিপদা? মামা চুপ থেকোনা। কোথায় রিপদা? রিপদা নেই?
ইশার আওয়াজ বড় হয়। তার উচ্চবাচ্য শুনে পরী ভড়কে গেল। কোল থেকে নেমে দাঁড়াল। তারপর বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে জহির মিয়ার পেছনে পান্জাবী ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।
ইশার গাল ভিজে গেল মুহূর্তে। সে নেমে গেল বেড থেকে। জহির মিয়া আটকাল। কোথায় যাবি তুই। নেই রিপ। চলে গেছে। আমার ছেলেটাকে এবার একটু ভালো থাকতে দে ইশা। ইশা চুপ হয়ে যায়।

‘ রিপদা ভালো ছিল না এতদিন? আমি খারাপ রেখেছি তাকে? আমিই?
জহির মিয়া বলতে পারেনা আসল কথা ছেলের দিয়ে রাখা উদ্ভট শর্তের কারণে। ছেলেটা কি চেয়েছে? শেষমুহুর্তে এসে ও তো মেয়েটা কিছুই বুঝল না।
ইশার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না জহির মিয়া। শুধু চেয়ে রইল নিচের দিকে।
ইশা দৌড়ে গেল কেবিনের বাইরে। মাথার একপাশে হাত দিয়ে এদিকওদিক দেখল। কাউকে দেখল না। কয়েকটা নার্স দৌড়ে এল। ইশা তাদের বারণ শুনল না। দৌড়াতে লাগল হন্য হয়ে। হোঁচট খেয়ে পড়ল আবার হসপিটালের মেঝেতে। হাতে ব্যাথা পেল। নার্স এসে তুলল। ইশার কান্না থামল না। নার্সদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাটুগুজে কাঁদতে লাগল। জহির মিয়া ইশারায় নার্সদের কেবিনে নিয়ে যেতে বলল। সবাই তাই করল। কেবিনে নিয়ে গিয়ে ইশাকে শুইয়ে দিল নার্স। ডক্টর মেহতাব আসলেন। বললেন, তোমার কোথাও যাওয়া চলবে না ইশা। পুলিশ না আসা পর্যন্ত।
ইশা শুনল না কারো কথা। কাঁদতে কাঁদতে মাথা রাখল বালিশে। রিপদা চলে যাওয়ার আগে একটিবার তাকে কেন জানাল না? এতটা পর সে। রিপদা তাকে কেউ মনে করেনা। আবার রিপদাকে দেখবে না সে? রিপদা এটা কেন করল?
কান্না চোখে ঘুম ভর করল। দুচোখ ঝাপসা ঝাপসা হতে হতে সে দেখল ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটিকে। বাচ্চা মেয়েটি তাকে ঘুম যাওয়ার জন্য ইশারা করে বলছে, ইশআআআ তা তা। তা। তা।
তলিয়ে যায় সে ঘুমের দেশে। জহির মিয়া পরীকে শুইয়ে দেয় ইশার পাশে। বলে, দাদাই ঘুমাও। আমি এক্ষুণি। আসছি। মাম্মামের কাছ নিয়ে যাব।
জহির মিয়া বেরোয়। পরী ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ও ঘুম আসে। আজ সোজা মায়ের বুকে শুয়ে পড়ল সে। ঘুম এল দুচোখে। কিন্তু সে নিজেই তা স্থায়ী হতে দিল না। ইশার গালে গাল লাগিয়ে বলল, ইশআআ,, পরী নাই। পরী নাই। নাই। নাই।
হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে বলল,

‘ তা তা। ইশআআআআ তা তা।

পরী বেরিয়ে গেল কেবিনের বাইরে। গুটিগুটি পায়ে হাঁটল। দু একজন নার্স এসে জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যাচ্ছ বাবু। এদিকে এসো। কোলে এসো।
পরী রেগে তাকাল। হাত দেখিয়ে বলল, ভোবব। মাববো।
নার্সগুলো গেল পরীর পিছু পিছু। পরী তাদেরকে পিছু পিছু আসতে দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াল। বলল,
‘ মাববো।
নার্স মেয়েদুটো হাসল। বলল,
‘ তুমি মারতে জানো?
পরী দৌড়ে এল। নার্স মেয়েটির গালে ঠাসস করে চড় বসাল। বলল, মাবববববো।
ছোট্ট মেয়েটি খেয়ালই করল না একটা বাজে ছেলে তার পিছু পিছু তাকে ফলো করছে।
পরী এক পা এক পা করে হাঁটল। নার্স মেয়েটি তার পিছু পিছু ঘুরল। ডক্টর মেহতাব দেখল পরীকে। খালি পায়ে পরীকে দেখে বলল, খালি পায়ে কেন? জুতো কোথায় মামুনি?
পরী ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল ডক্টর মেহতাবের দিকে। বলল, দুতো নাই। নাই। নাই।
ডক্টর মেহতাব হাত বাড়িয়ে বলল, কোলে আসো। পাপ্পি দেই।
পরী মারার জন্য হাত পেছনে করে তুলল। চোখ রাঙিয়ে বলল, ইননা মাবববো।
পরী দৌড়ে গেল অন্যদিকে। নার্স মেয়েটি দৌড়ে গেল। পরী ততক্ষণে কোথায় উদাও হলো। নার্স মেয়েটি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। এটুকুনি একটা ছোট্ট মেয়ে, কি অসভ্য! গেল কোথায়?

_______________

জহির মিয়া আসল কেবিনে হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে । কানে ফোন। মুনা বলছে, বাবা পরীকে নিয়ে আসুন। ওঁকে খাওয়াতে হবে। গোসল করাতে হবে। অনেকক্ষণ হয়েছে। জহির মিয়া মাথা নেড়ে ইশার দিকে তাকাতেই দেখল ইশা বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু পরী কোথায়?
জহির মিয়া চেঁচিয়ে উঠল। ইশু? পরী কোথায়??
ইশাকে গায়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকল জহির মিয়া। ইশা হকচকিয়ে উঠে বসল। বুকে হাত দিয়ে জোড়াল শ্বাস নিয়ে বলল, কি হয়েছে মামা?.
জহির মিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলল, পরী তোর সাথে ঘুমিয়েছে না? কোথায় গিয়েছে?
ইশার বুক ধড়ফড় করে উঠল। ক্লান্ত শরীর চলতে চাইল না। সে ক্লান্ত ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ল বেডে। ডুকরে কেঁদে উঠে বলল,
‘ সবাই চলে যাচ্ছে আমাকে ছেড়ে। রিপদা চলে গেল। পরী কোথায় গেল। তুমি বাইরে দেখো না?
জহির নিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলল। ও হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে গেছে মনে হয়। বেশিদূর যেতে পারবে না। আচ্ছা আমি দেখছি। হসপিটালের নার্সগুলোর সাথে দেখা হলো জহির মিয়ার। তারা ক্ষোভ নিয়ে বলল,
” আপনারা কেমন অভিভাবক? ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছেন?
‘ কোথায় এখন পরী?
নার্স মেয়েটি বিতৃষ্ণা নিয়ে উচ্চারণ করল।
‘ জানিনা। ওর পেছন পেছন অনেক দৌড়লাম। কোথায় লুকিয়ে গিয়েছে আর বেরোচ্ছেনা।
ডক্টর মেহতাব আসলেন। বললেন, পুঁচকুটা তো আমার সাথে অনেক কথা বলেছে। কোথায় গিয়েছে?
ইশা বের হয়ে আসল। জহির মিয়াকে বলল, মামা ফোনটা দাও। আমি জানি পরী কোথায় গিয়েছে।
জহির মিয়া ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কোথায় গিয়েছে? ও একা একা কোথায় যাবে? কার কাছে ফোন দিবি?
ইশা নাম্বার তুলে ফোন দেয় আজিজ চৌধুরীকে। আজিজ চৌধুরী ফোন ধরার সাথে সাথে ইশা উদ্ভ্রান্তের মতো চেঁচিয়ে বলল,
‘ আমাকে নিজের গোলাম বানিয়ে রাখিয়ে রাখার জন্য এখন ছোট্ট মেয়েটাকে ও ব্যবহার করছেন? লজ্জা হয়না। লজ্জা নেই আপনার? ছিঃ পশুর চেয়ে ও অধম আপনি। আপনারা।
পুরোটা সময় আজিজ চৌধুরী চুপ থাকলেন। কোনো টু শব্দ করলেন না। ইশা যখনই রাগ ঝেড়ে খানিকটা শান্ত হলেন তখন আজিজ চৌধুরী বললেন,
‘ ও আমার কাছে নেই। যদি আমার কাছে থাকত আমার চাইতে খুশি কেউ হতোনা।
ইশা কানে নিল না সেই কথা? বলল, মিথ্যুক। একদম মিথ্যে বলবেন না। আমি বিশ্বাস করিনা আপনাকে।
ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ইশা কাঁপাকাঁপা পায়ে হাঁটে। ডক্টর মেহতাব ইশাকে আর আটকাল না। ইশা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে। মিনুমাকে ফোন দেয়। কান্নার আওয়াজ আরো জোড়াল ও হয়। মিনুকে কিছু বলতে না দিয়ে সে বলে,
‘ ওরা আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছে মিনুমা। পরী নেই আমার কাছে। আমি যেটা নিয়ে ভয় পায় সেটাই হয়। ডক্টর! ডক্টর কোথায়? মিনুমা ডক্টর কোথায়?
মিনুমা শক্ত জবাব দেয়।
‘ ও বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। আসিস কাল বিয়ে বাড়ি। তোর তো খুব শখ নিজের স্বামীর আবার বিয়ে দেখার। কাঁদছিস কেন তুই? তোর মেয়ে দেখ হয়ত নিজে নিজেই তার জন্মদাতাকে খুঁজে নিয়েছে।
মিনু ফোন কেটে দেয়। ইশা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ডক্টরের কাছে পরী? না এ কি করে হয়? পরীকে আমি দেব না। কাউকে দেব না। পরী আমার মেয়ে।
ইশার পেছন পেছন আসে জহির মিয়া। বলল, তুই চলে যাহ চৌধুরী বাড়ি। নিয়ে আয় পরীকে। পরীকে ওখানেই আছে। যাহহহহ।
রাস্তায় পুরোটা সময় ইশা চুপ হয়ে ছিল। কিন্তু বাসায় পা রাখার সাথে সাথে ইশার মনে হলো পুরো বাড়িটা খালি। রিপদা নেই। পরী ও নেই। রিক বেরিয়ে আসল। বলল, পরী কই? বাবা পরী কোথায়? কোথায় রেখে এসেছ? কার কাছে পরী?
ইশা ছুটে গেল রিকের কাছে। বলল, বড়দা রিপদা কোথায়? চলে গিয়েছে? নেই এখানে? রিপদা চলে গেলে আমি আমার মেয়েকে আর ফিরে পাব না। রিপদা পারবে ওকে এনে দিতে। বলোনা রিপদা কোথায়?
রিক দাঁড়িয়ে থাকল শক্ত হয়ে। বলল, আবার ও ইশু। আমি কি এবার ও চুপ করে থাকব? তুই বলেছিলি এমনটা কখনো হবেনা। তাহলে? এখন তো বারবার সেটাই হচ্ছে। ওরা কি শুরু করেছে?
ইশা কিচ্ছু বলতে পারল না। দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না তাই বসে পড়ল মেঝেতে। কাঁদল না। দিশেহারা হয়ে পড়ল। কি করবে এখন সে। ডক্টর সত্যই নিয়ে গেছে পরীকে? কি চাইছে ডক্টর?
ইশা শুনল। মুনা কথা বলছে ফোনে কারো সাথে। তার কন্ঠস্বর কান্নায় ভরপুর। ইশা ফোন কেড়ে নিল মুনার হাত থেকে। ফোনের ওপাশের ছেলেটির সাথে দুটো কথা বলার আগে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। হিঁচকি তুলে তুলে ডাকল, রিপদা……..
ছেলেটি চুপ হয়ে শুনল মেয়েটির কান্না। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিল তার এতদিনের রাগগুলো। মেয়েটির কান্নাগুলো যে দেখার মতো না। শোনার মতো না। ছেলেটি বলল, আমি পুলিশ স্টেশনে আছি। দেখছি।
ইশা আর ও জোরে কেঁদে দিল। এই মানুষটাকে সে ঠকিয়েছে? যে তাকে আগলে রেখে এসেছে চিরটাকাল। এখন তার মেয়েকে ও। জীবনের এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে কেন জানাল না একটিবার রিপদাকে। এই অপরাধবোধ আর কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে ?
এই বিয়েটাই যে সব নষ্টের মূল। সে একদিনের জন্য ও ভালো ছিল না এই বিয়েটার পর। না এখন ভালো আছে। তার ঘেন্না হয় নিজের উপর। অমন একটা মানুষকে সে কেন ভালোবাসল। যাকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেতে হলো।

_________________

ইশা যখনি পৌঁছাল পুলিশ স্টেশনের সামনে। বাইরে ওই নির্জন জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে একটি ছেলেকে রেগে কথা বলতে দেখা গেল ফোনে। ইশাকে দেখার সাথে সাথে সে কথা বলা বন্ধ করে দিল। ইশা দৌড়ে গেল। জাপটে জড়িয়ে ধরল। বলল, আমি জানতাম তুমি যাবে না। তুমি আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারো না রিপদা। তুমি যেওনা।
রিপ দাঁড়িয়ে থাকে শক্ত ভঙ্গিতে। সোজাসাপ্টাভাবে বলে, ছাড়।
ইশার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে যায়। রিপ কর্কশ গলায় বলে,
” আমি আজ হোক না কাল ঠিকই যাব । পরীকে পার্মানেন্ট ভাবে বড়দার কাছে দিয়ে যাব। আর যারা এই নোংরা খেলা খেলছে তাদের শাস্তি দেব। আপনি মিসেস চৌধুরী,, আপনাকে যেতে হবে আদি চৌধুরীর কাছে। আদি চৌধুরীর মুখোমুখি হয়ে জানতে চাইব বউ রেখে সে আবার বিয়ের পিড়িতে বসে কি করে?
ইশা দু পা পিছু হাঁটে। বলে,,আমি? আমি চাইনা ডক্টরের কাছে যেতে। আমি যেতে পারব না। তুমি এমনটা করো না রিপদা। তোমাদের সাথে থাকব আমি। থাকতে চাই শেষ অব্ধি। আমি যেতে চাইনা ডক্টরের কাছে। ডক্টর দূরে থাকুক। আমি ফিরতে পারব না। বুঝার চেষ্টা করো রিপদা।
রিপ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ইশা তার পা ধরে রাখে, মাথা এলিয়ে দেয়। বলে, তুমি যাবেনা রিপদা। আমি দেখতে চাই তোমাকে শেষঅব্দি। আমাকে এতবড় শাস্তি দিওনা রিপদা। শাস্তি শব্দটাকে আমি ভয় পাই রিপদা। আমার ভয় হয়। আমি আর নিতে পারছিনা। আমি ভালো নেই রিপদা। তুমি আমাকে ইশু বলে ডাকোনা। আমার মাথায় হাত রাখোনা। আমার সাথে ভালো করে দুটো কথা বলোনা। বারবার দূরে চলে যেতে বলো। আমার কষ্ট হয় রিপদা। তুমি প্রতিশোধ নিচ্ছ রিপদা? তোমাকে দেওয়া কষ্টগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছ?
তুমি এমনটা করোনা রিপদা। ডক্টরের কাছে যেতে বলোনা। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে দুবছর আগে। আমি ডিভোর্সি। ডক্টর আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আমি চাই ডক্টর এখন ভালো থাকুক। অন্য কারো সাথে ভালো থাকুক। কারণ ডক্টর আমার সাথে ভালো থাকবে না। আমি ভালো রাখতে পারব না। আমি জড়াতে চাই না আর। ফেরা সম্ভব নয় রিপদা। আমি শেষটা অব্ধি তোমাদের সাথে থাকতে চাই। আমাকে এই শেষবারের মতো আশ্রয় দাও রিপদা। দূরে ঠেলে দিওনা। আমি যাওয়ার আগে কারো কাছে আশ্রয় চাই না রিপদা। শুধু তোমার কাছে চাই। তুমি আমাকে আগলে রেখেছ এতগুলো বছর। শেষ পর্যন্ত ও আগলে রেখো রিপদা। যেওনা তুমি।

রিপ পা সরায়। সামনাসামনি বসে ইশার। তার গলার কাছে যেন কাঁটা বিঁধে গেছে। বহুযন্ত্রণায় কাতর কাতর হতে হতে জিজ্ঞেস করল,

‘ তোর কি হয়েছে ইশু?

ইশা যেন এবার ধরা পড়ল। রিপ গর্জে উঠল। তার গর্জনে আকাশ বাতাস একাকার হলো। ইশাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ এই তুই চুপ মেরে গেলি কেন? কি হয়েছে তোর? তুই চলে যাবি? কোথায় যাবি। দেশ ছেড়ে? নাকি পৃথিবী ছেড়ে? তুই কোথায় যাবি? বল।

ইশা হাসল। শক্ত করে রিপকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আমি কতদিন পর তোমার মুখে ইশু ডাকটি শুনলাম রিপদা। দেখো তুমি এখনো আমায় নিয়ে কতটা ভাবো। কে বলেছে, তুমি আমার কেউ নও?

রিপ শক্ত হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এই ছলনাময়ী তার আসলরূপ বের করার জন্য এতক্ষণ অভিনয় করছিল? রিপ উঠে দাঁড়াল। আর পিছু ফিরে তাকাল না। মেয়েটির দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না।

________________

বাথটাবে বসিয়ে রাখা মেয়েটির দিকে এক নজরে চেয়ে থাকল ছেলেটি। বাচ্চা মেয়েটির কান্না থামল বাথটাবে বসিয়ে দেওয়ায়। আদি দেখল ডাগর ডাগর দুটো চোখ। নরম তুলতলে হাত পা। চিকন চিকন চুল। চোখের পাপড়িগুলো লম্বা লম্বা। বাথটাবের পানিতে হাত নেড়ে নেড়ে খেলা করছে। ফোলা ফোলা চোখমুখে খিলখিল করে হাসছে। ডাকছে,পাপপপপা। মামমমমা। আদির কষ্ট লাগল। কাঁপাকাঁপা হাতে ছুঁল মেয়েটিকে। বাথটাব থেকে তুলতেই মেয়েটি আবার ও কেঁদে দিল। ডাকল, মামমা, পাপপপা।
আদি আবার বসিয়ে দিল তাকে বাথটাবে। একা এই ফ্ল্যাটটাতে আর কেউ নেই। এখন কে শান্ত করাবে মেয়েটিকে। কে বুঝাবে তাকে, এই ছেলেটিই তার বাবা। বাবার কোলে আসতে কি সমস্যা। কান্নাকাটি কেন?
পরী হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে পানি ছিটকি দেয় আদির মুখে। আদি কোলে তুলে নেয় বলে,, ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
পরী কান্না করে। চেঁচিয়ে কান্না করে। আদির চুলগুলো ইচ্ছেমত টানে। কেঁদে কেঁদে বলে, মাবববো।
আদি হাসতে পারেনা। তার হাসি আসেনা। তার নিজের মেয়ে তার কাছে থাকতে চাইনা। সব মিষ্টির দোষ। মিষ্টিকে সে ছাড়বে না। আর ও কষ্ট দেবে। নিজের কাছে এনে। ছুঁতে দেবেনা মেয়েকে।

পরী কান্না করে। আদি পরীর জন্য আনা কাপড়গুলো থেকে বেছে একটা লাল রঙের ফ্রক নেয়। সেটি পরীকে পড়িয়ে দিতে কষ্ট হয়। পরী অনবরত কাঁদে। কিচ্ছু খায়না। আদির দিকে ফিরে তাকায় না। আদি মেঝেতে হাঁটুগেড়ে বসে খাটের উপর বসে পা মেলিয়ে কান্নারত মেয়েটির মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে অসহায় হয়ে। এটি তো তার মেয়ে। নিজের মেয়ে। তাকে চিনতে পারছেনা কেন? তার কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে।
পরী নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদে। ডাকে, পাপপপা মামমমা।
আদি খাবার আনে। বক্স ভর্তি চকলেট আনে। পুরো রুম খেলনাপাতি দিয়ে সাজায়। পরীকে মাঝখানে বসিয়ে রাখে। তারপর হাসানোর চেষ্টা করে। পরী নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মিনমিন করে বলতে থাকে, নাই ইশআ নাই। পাপপা নাই। মামমা নাই। রিইইই নাই। দাদদা নাই। মিননি নাই।
আদি পরী কি বলছে তা শোনার চেষ্টা করে। কিন্তু বুঝতে পারেনা।

আদি ফোন দেয় আলিয়াকে। সিক্ত কন্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বলে, মা আমার মেয়ে আমায় চিনতে পারছেনা। কান্না করছে। ও খেলছে না। কথা বলছেনা। আমার হাতে খাচ্ছে না। সব তোমাদের জন্য হয়েছে। ও যতদিন আমায় না চেনে, আমায় বাবা না ডাকে ততদিন আমি তোমাদের কাছে ফিরব না। তোমাকে মা ডাকব না। আজিজ চৌধুরীকে ও বাবা ডাকব না। আর মিষ্টি? মিষ্টিকে আমি ছাড়ব না।

________________

অবিরত নিজের ফোনটা বাজায় ইশা মেঝে থেকে উঠে। ফোনটা রিসিভ করে কানে দিল।ফোনের ওপাশ থেকে তীব্র ক্রোধ নিয়ে বসে থাকা ছেলেটি শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘ কেমন আছ মিষ্টি?

রাগ দেখাতে পারল না। কি আশ্চর্য!

ইশা সোজাসুজি বলল,

‘ আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন আমি কেমন আছি?

‘ তোমার মেয়ে কি করে হয়? সে তোমাকে মা ডাকে?

ইশা চুপ থাকেনা। ক্ষোভ নিয়ে বলে, আপনার জন্য ডাকেনা। কারণটা আপনি। আপনি শেষ করে দিয়েছেন আমার জীবনটা। আপনাকে বিয়ে করে দয়া দেখানোটা আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আদি চোখবন্ধ করে হেসে আবার আলুথালু হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে। মেয়েটিকে টেনে নেয় নিজের বুকের কাছে। ফোলা ফোলা চোখদুটোতে ঠোঁট ছোঁয়ায়। নিজের চোখদুটো চেপে ধরে ছোট্ট মেয়েটার ছোট্ট হাতটাতে। ফোনের ওপাশের মেয়েটিকে বলে,

‘ তোমার রেখে যাওয়াটা শাড়িটা আমার কাছে আছে মিষ্টি। পুতুলটা ও আমি রেখেছি যত্নে। বকুল ফুলের মালাটি ও। তোমার প্রত্যেকটা স্মৃতি আমি আঁকড়ে ধরে রেখেছি। কিন্তু তুমি রাখোনি। কিচ্ছু রাখোনি। তুমি নিজেই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে। নিজেই আমাকে বিয়ে করেছিলে। নিজেই আমাকে ভালোবেসেছিলে। ওহ সরি। ভালোবেসে ছিলে নয়, দয়া দেখিয়েছিলে।

ইশা চুপ থাকে।
আদি এবার গর্জে বলে,

‘ আমি বলেছি আমাকে দয়া দেখাতে। বলো? চুপ করে থাকবে না মিষ্টি। বলো। আমি বলেছি দয়া দেখাতে। বলেছি আমাকে বিয়ে করতে? করেছ কেন? কেন করেছ? আমি যাইনি তোমার কাছে। তুমি নিজেই এসেছ। আবার চলে গিয়েছ। এখন দোষটা আমার?
তুমি আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছ অন্যের কাছে মিষ্টি। সে আজ অন্যকে বাবা ডাকে। আমাকে নয়। তুমি এত বড় অন্যায় করেছ তোমার ক্ষমা হয়না। তোমার কতবড় সাহস তুমি অন্যের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিয়েছ। তোমার সাহসের প্রশংসা করতে হয় মিষ্টি। তুমি আসলেই সাহসী। অতটা সাহস না থাকলে কেউ নিজের স্বামীর বিয়ে শুনে চুপ থাকতে পারেনা। আসলেই সাহসী তুমি। তোমাকে কিভাবে ভাঙানো যাবে মিষ্টি। কিভাবে কষ্ট দিলে তুমি ভাঙবে। কষ্ট পাবে। তুমি সত্যিই কোনোদিন আমাকে ভালোবাসোনি মিষ্টি। দয়া দেখিয়েছ। দেখাচ্ছ।

ইশা চুপ করে শোনে। বলে, বিয়ে করে নিন। আর আমায় শাস্তি দিন। যান।

আদি হাসে।

‘ করব। কেন করব না? সেজন্যই তো মেয়েকে এনেছি। ইমিকে দিয়ে দেব পরীকে। তোমার কাছে ফিরতে দেব না। তুমি দেখবে না আর পরীকে। তোমার শাস্তি এটাই। যাও এবার যা করার করো। থানা পুলিশ, কোর্ট-কাছারি,আদালত এক করো। পরী আমার কাছে থাকবে। তোমার মতো নিকৃষ্ট মহিলার কাছে নয়। ঘৃণা করি আমি তোমায়।

ফোন কেটে দেয় আদি। ইশা হাঁটুগুজে বসে থাকে। কাঁদেনা শুধু হাসে। পাগলের মতো হাসে। হেসে হেসে বলে,

‘ আপনি মিথ্যেবাদী ডক্টর। ঠিক আপনার বাবা মায়ের মতো। আমি দেব না পরীকে। কেড়ে নিয়ে আসব আইমির হাত থেকে। ও শুধু আমার মেয়ে। এতবছর পর এসে বাবা হতে আসছেন?

_________________

তখন মাত্র বিয়ের তোড়জোড় চলছে। আইমিকে হাসিখুশি দেখাচ্ছে না। আদি তাকে কেন নিচে ডাকল। তাদের তো রাতেই ভালোমন্দ কথা হলো।

আইমি কিছুক্ষণ এদিকওদিক হাঁটল। তারপর তার চোখ গেল তার দিকে এগিয়ে ছেলেটির দিকে। কোলে একটি ছোট বাচ্চা। বাচ্চা মেয়েটি কেঁদেই চলেছে। আইমি অবাক হলো। কে মেয়েটি?

আদি আসার সাথে সাথে পরীকে দেখাল আইমিকে। বলল, চিনতে পারছ ইমি কে হতে পারে বলোতো?
আইমি হাসার চেষ্টা করে বলল, আজ আমাদের বিয়ে আদি?
এটা কেমন মজা? কে এই বাচ্চাটি?
আদি হাসল। বলল, আদি চৌধুরীর মেয়ে।

আইমির বিস্ময় আকাশ ছুঁল।

‘ মানে? কি?

আদি নির্বিকার জবাব দিল।

‘ কি জিজ্ঞেস করছ? তাহলে শোনা এই ছোট বাচ্চা মেয়েটিই হলো তোমার শাস্তি।

আইমির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু ফোটা জল। আদি হাসল তা দেখে।

বলল, কিসের শাস্তি জানো?

‘ আমাকে মিথ্যে বলার শাস্তি। আমার কাছ থেকে মিষ্টিকে দূরে সরানোর শাস্তি। আমি মিষ্টিকেই ভালোবাসি সেটা মিথ্যে প্রমাণ করার শাস্তি। আমাকে পাওয়ার লোভ করার শাস্তি। আমাকে ভুল বোঝানোর শাস্তি। জোর করে ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার শাস্তি। আমি তো অর্ধেক সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম মিষ্টির সেবায় কিন্তু তোমার কারণে আমাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্ল্যানটা তোমার ছিল ইমি। আমি এতদিন কোথায় ছিলাম জিজ্ঞেস করেছিলে না? রহস্য খুঁজে বের করতে গিয়েছিলাম। আর আমার ট্রিটমেন্ট। আমি তোমাকে ধরে ফেলেছি ইমি।

তুমি কেমন ভালোবেসেছ আমাকে? দুটো আঘাত পেলে নাহয় পেতে? তারপর ও আমার অসুস্থতার সময় আমার পাশে থাকতে পারতে। মিষ্টির মতো। আমি মিষ্টিকে কত আঘাত দিয়েছি। শুধু আমি নয় চৌধুরী বাড়ি প্রত্যেকটা সদস্য তাকে যেখানে সহ্য করতে পারত না সেখানে,,, ও আমার জন্য থেকে গেছে। দিনরাত আমার সেবা করেছে। আমি আঘাত দিলে ও ভালোবাসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আজ মিষ্টি আমাকে চায়না ইমি। ও স্বীকার করে আমাকে ভালোবাসাটাই ওর ভুল। আমাকে বিয়ে করাটাই ওর অপরাধ। কেন বলে জানো? তোমাদের জন্য বলে। তোমরা শুধু নিজের স্বার্থ চেয়েছ ইমি। মিষ্টির ভালোটা দেখোনি? মিষ্টির মতে করে তুমি কখনো আমায় ভালোবাসোনি ইমি। দেখো মিষ্টির কোনো লোভ নেই আমার প্রতি। ও ফিরতেই চায়না আমার কাছে। তোমার জন্য। তোমাদের জন্য। এই দেখো এই বাচ্চাটা আমার। আমার মেয়ে। আমাকে বাবা ডাকেনা তোমার জন্য ইমি। আমাকে চেনে না ইমি। আমার কষ্ট হয় ইমি। তুমি কেন করলে ইমি? এটা কেমন ভালোবাসা? ভালোবাসাই শুধু চাওয়ার শব্দটা থাকলে হয়না ইমি। দেওয়ার শব্দটা ও থাকতে হয়। তুমি আমায় কিচ্ছু দাওনি ইমি। দিয়েছ মিথ্যে আশ্বাস, মিথ্যে বিবৃতি। নিজের ভালো থাকাটাকে মূল্য দিয়েছ। আমার ভালো থাকাটা কোথায় তা জেনে ও তুমি আমাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছ। তুমি জানো, জানতে সেই প্রথম থেকে আমি তাকে ভালোবাসতাম। সেই বৃষ্টিরূপে। তখন ও তুমি মাকে বলে মিথ্যে কথা বলেছিলে আমাকে। সবাই আমাকে মিথ্যে বলেছে,

‘ মিষ্টি অন্য কাউকে ভালোবাসে। তার বিয়ে ঠিক আছে। সবটা মিথ্যে বলেছ। মা মিথ্যে বলেছে আমায়।
মিষ্টি শুরু থেকে আমার ছিল। আমার আছে। মাঝখানে তোমার ষড়যন্ত্রের কারণে আমাকে দূরে যেতে হয়েছে মিষ্টির কাছ থেকে। কতটা কষ্ট হয়েছে মিষ্টির? অনুভব করতে পারো? পারো না। কারণ তোমার মন বলতে কিচ্ছু নেই। তুমি নির্দয়। পাষাণ ইমি। তুমি ঠকিয়েছ আমায়। তুমি অপরাধী ইমি। ভালোবাসি শব্দটা তোমার মুখে মানায় না ইমি। তুমি ভালোবাসতে জানো না। পারো না। শিখে নিও। চলি।
আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আফাজ আহমেদ ও। পেছনে ইমদাদ সাহেব। আইমির দিকে তাকায় আফাজ আহমেদ। বলে, ইমি আদির মেয়ে????
আইমি কাঁদে না। শুধু বলে আজ সবটা শেষ হয়ে গেল বাবা। সবটা শেষ হয়ে গেল। আইমি সত্যি ভালোবাসতে জানে না। কিন্তু আমি তো শিখতে চেয়েছিলাম। পেরে উঠতে পারিনি। আমাকে শেখানো হয়নি বাবা। আদি ঠিকই বলেছে। কোথায় মিষ্টি কোথায় ইমি?
#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩২
#পুষ্পিতা_প্রিমা

অবিরত কাঁদার কারণে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে পরীর। আদির কাঁধে পড়ে রয়েছে ক্লান্ত হয়ে। আদি মলিন চেহারায় পা রাখল চৌধুরী বাড়িতে। তাকে দেখে আগে ছুটে এল মিনি। মিনি এখানে কি করে এল আলিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে দেরি হলোনা আদির। আদি মিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এখানে এসেছে। মিনি উড়ে এল। আদির কাঁধে বসল। ডাকল,

আদি প্রিন্সেস। মিস ইউ। মিস ইউ।

পরী আদির কাঁধ থেকে মাথা তুলে তাকাল। মিনিকে দেখে ফোলা ফোলা চোখমুখে একটুখানি হেসে ডাকল,

‘ মিনননি……

মিনি খুশি হয়ে এদিকওদিক উড়ল। ডানা ঝাপটাল। আলিয়া মিনুমা রাইনা ছুটে এল। আলিয়া পরীকে আদির কোলে দেখে খুশিতে যেন কেঁদে দিল। সে এক্ষুণি যাচ্ছিল আইমিদের বাসায়। আফাজ আহমেদ ডেকেছেন শীঘ্রই। এমন সময় আদির আগমন অপ্রত্যাশিত। আর আদির কোলে পরী কি করে?
পরী এতক্ষণ পর হাসল। হাত হাতে তালি দিয়ে ডাকল, মিননি..
মিনি উড়ে পরীর হাতে ঠোকর দিয়ে আবার উড়ে গেল। পরী আদিকে হাত দেখিয়ে বলল, দুক্কু। মিনননি মাবববো।

আদি হাসল। হাতটাতে ফুঁ দিয়ে বলল, মিননি দুক্কু দিয়েছে?
পরী মাথা নাড়াল। আদি জড়িয়ে ধরল। বলল, আমরা এখন বাসায় যাব। মিননিকে সেখানে খুব মারব।
পরী তার মতো করে বলল, মাববো।

আলিয়া চৌধুরী সামনাসামনি এসে দাঁড়াল। পরীকে ছুঁতে চাইল। আদি সরে গেল। বলল, মিসেস চৌধুরী আমি এখানে থাকতে আসিনি। আর আমার মেয়েকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।
আলিয়া চৌধুরী এবার সবার সামনে কেঁদে দিল। বলল, ওকে আমার কোলে দাও আদি। তুমি এখানে থাকো। ও থাকুক। সবার সাথে থাকলে আর কাঁদবেনা। দাও।
আদি সরে গেল। বলল, না। ও শুধু আমার সাথে থাকবে। দেব না।
মিনুর কাছে ছুটে গেল আলিয়া। বলল, মিনু তুমি আটকাও না আদিকে। আদিশা আমাদের সাথে থাকলে ভালো থাকবে। মিনু গেল। আদি অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল। মিনু পরীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, এসো দাদু আমম খাবে?
আদি বলল, আমম কি?
পরী হাতের মুঠো গালে দিয়ে বলল, আমম। মাম। পাপপা, মামমা।
আদি দেখল পরীকে। বলল, আমি খাওয়াব। চলো।
আলিয়া ধরে ফেলল আদির হাত। নিজের দুহাতের মুঠোয় আদির হাত নিয়ে বলল,
‘ এমন করোনা আদি। ওর একটু ও অযত্ন হবেনা।
পরী তারমধ্যেই কেঁদে উঠল। বলল, পাপপা,মামমা নাই। নাই।
আদির চেহারা আবার ও বিবর্ণ রূপ ধারণ করল। আদি পা বাড়াল চলে যাওয়ার জন্য। আলিয়া আদির হাত ধরে রাখল। বলল, এতবড় শাস্তি দিওনা আদি। আমি মিষ্টির কাছে ক্ষমা চাইব। দোষ স্বীকার করব। তুমি নিয়ে যেওনা আদিশাকে। প্লিজ আদি। অনুরোধ করছি।
আদি মিনুর দিকে তাকাল। মিনু মাথা নাড়াল। পরী সিড়ি বেয়ে নামা রেহানকে দেখে আদিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, ওতততো।
আদি রেহানকে দেখে বলল, ভাই….. তোমার ভাই…
পরী আদির মুখে মুখে জপতে লাগল, ব্বেই ব্বেই….
রেহান দৌড়ে এসে আদিকে জড়িয়ে ধরল। বলল, আমার চাচ্চু। পরী আদির কোলে থেকে নিচু হয়ে রেহানকে ছুঁতে চাইল। হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল রেহানের চুল, বলল, আমমাল চুচচচু।
আদি হেসে দিল। রেহান তার চুল ধরে বলল, চাচ্চু আমি ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড়তে বলো।
পরী ছাড়ল না। রেহানের চুল টেনে গালে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল, আমমমাল।
আদি আর ও নামিয়ে দিল পরীকে। পরী রেহানের চুল শক্ত করে ধরল, মুখের কাছে রেহানের কপালে লালা লাগিয়ে দিয়ে বলল, আমমমাল চুচচু আমমাল।
রেহান একগাল হাসল। সাথে হাসল আদি। পরী ও হাসল। হাসতে হাসতে ঝাপ দিল রেহানের কোলে।
রেহান কোলে নিয়ে আদর করল পরীকে। পরী রেহানের দুগালে মেরে মেরে বলল, ব্বেই ব্বেই। মিননি।
রেহান পরীকে কোলে নিয়ে বলল, তোমার মা কোথায়? কাকিয়া কোথায় চাচ্চু? কাকিয়া আসবে না?
পরী রেহানের মুখে মুখে বলল, আমমা। আমমা নাই। নাই নাই।
আদি তাকাল আলিয়ার দিকে। আলিয়া মাথা নিচু করে ফেলল। আদি কোলে নিয়ে নিল পরীকে বলল, আববা আছে। আমমাকে দরকার নেই।
পরী ঠাস করে মারল আদির নাকের উপর।বলল, আমমা নাই? মাববো। মাববো।
আদি চলে গেল নিজের রুমে। পরীকে দিল না কাউকে। রাইনা গেল। বলল,তুই ফ্রেশ হয়ে নে। পরীকে আমাকে দে।
আদি দিতে চাইল না। পরে বলল, আর কাউকে দেবে না। এখানেই বসে থাকো।
রাইনা তাই করল, পরীকে নিয়ে বসে থাকল। আদি ফ্রেশ হয়ে আসল। পরীকে ফ্রেশ করে দিল। রাইনা বলল, ওকে নিয়ে খেতে আয়।
পরীর সামনে বসল আদি। পরী কতক্ষণ তাকিয়ে থাকল ওর দিকে,যেন নতুন করে চিনছে। নতুন করে অনুভব করছে। কিন্তু মুখে ফুটে বাবা ডাকটি বেরোলো না। যা শোনার জন্য আকুঁল হয়ে অপেক্ষা করছে ছেলেটি। পরী আদির ভেজা চুলে হাত ডুকিয়ে দিল। এলোমেলো করে দিল আদির চুল। খিলখিল করে হাসল। চুলগুলো টেনে গালে দেওয়ার মতো করে বলল, আমম।
আদি তাকে কোলে নিয়ে নিল। বলল, চলো আম খাবে।
পরীকে আদি নিজ হাতে খাওয়াল। মিনু আর রাইনা আর রেহানকে ছাড়া কাউকে ছুঁতে ও দিল না। আজিজ চৌধুরী আর আলিয়া চৌধুরীকে ছুঁতে দিল না। নিজ হাতে খাওয়াল। নিজ হাতে সবটা করল। পুরোটা দিন মেয়ের সাথে কাটাল। মেয়েকে বুকের উপরে শুইয়ে ঘুম পাড়াল। মিননিকে পেয়ে পরী তার কান্না যেন ভুলে গেল। মিনি আর আদির সাথে খেলতে খেলতে উচ্চারণ করল, পাপপা নাই। মামমা নাই। রিইইই নাই। আমমা নাই।

আদি শুনল মেয়ের মুখ থেকে বের হওয়া কথাগুলো। যখন আদি ছিলনা তখন কি পরী বলেছিল, বাবা নাই?
বুকের ভেতর হওয়া নীরব আর্তনাদ গুলো কেউ দেখল না। কেউ বুঝল না।
পরী খেলা করছে মিনির সাথে। অদৃশ্য কিছু খাইয়ে দিচ্ছে মিনিকে। যখন আদিকে দেখল আদির দিকে হাতের মুঠো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমম?
আদি ছোট্ট হাতটাতে আলতো করে কামড় দিল। বলল, খেয়েছি আম্মি।
পরী খিলখিল করে হাসল। আদির কাছাকাছি গিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, পাপ্পি।
আদি বুঝে হাসল। মেয়ের গালে মমতা,স্নেহ, ভালোবাসার স্পর্শ দিল বেশ গাঢ় করে। পরী ও দিল। বাবার চোখের নিচে লালা লাগিয়ে বলল, আমমমমি।
আদি বলল, আববা ডাকো একবার। ডাকো।
পরী চেয়ে থাকল আদির দিকে। হাতটা উপরে তুলে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, ইননননা মাবববো।
আদি সরে গেল। নিজের দুচোখ যেন লুকোলো। ফোন দিল মিষ্টিকে। মিষ্টি শুনল না তার আঁকুতি। বলল, আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন আমার কাছে। নইলে আমি পুলিশের কাছে যাব।
আদি চুপ হয়ে গেল। সে বলতে পারল না,
‘ মিষ্টি পরীকে বলো আমাকে বাবা ডাকতে।
কিন্তু বলল না। পুলিশে যাবে মিষ্টি। যাক।
আদি হাসল। দুষ্টুমি করে বলল, মিষ্টি তোমার মেয়েটা তোমার মতোই হয়েছে। পুরোটাই বজ্জাত, নিমকহারাম।
ইশা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।
‘ আমার মেয়ের নামে উল্টাপাল্টা বলবেন না। নাহলে,
‘ নাহলে কি করবে? মেরে ফেলবে। উফফ ভয় পেয়েছি।
ইশার বিরক্ত লাগল। এই লোকটা তাকে নিয়ে মজা করছে??
আদি বলল, মিষ্টি আমার আর ও একটা পরী লাগবে। এই পরীটা আমায় চেনেনা। পরী টু যখন আসবে আমি তাকে আমার কাছে রেখে দেব। তোমাকে যখন ও চিনবে না, তোমাকে যখন মা ডাকবে না তখন তুমি বুঝবে কতটা কষ্ট হয়। তার আগে বুঝবে না। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে পরী টু আনার ওয়েটা কি?
আবার কি পাগলা ডক্টর সাজতে হবে নাকি? আমি তো কিছুই জানিনা।
রাজ্যের বিরক্তি ভর করল ইশার কন্ঠে। আর রাগ। বলল, বেয়াদব লোক।
ফোনটা কেটে দিলল তারপর পরই। আদি হো হো করে হেসে উঠল। পরী চেয়ে রইল তার হাসির দিকে। বলল, মাববো।
আদি তার মুখ বাড়িয়ে দিল পরীর দিকে। বলল, সারাক্ষণ মাবব মাবব করেন কেন? আমমা শিখিয়েছে তাই না?
পরী মাথা দুপাশে দুলিয়ে বলল, আমমা নাই।
আদি একগাল হাসল। বলল, আমমা আছে, ফোন দেব? হ্যালো বলবে?
পরী মাথা একপাশে কাত করে সায় দিল। আদি ফোন দিল ইশাকে। ইশা ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে বলল, দেখুন মিঃ চৌধুরী ডং করার সময় নেই আমার। যা বলতে চাইছেন ক্লিয়ার করে বলুন।
আদি বলল, আমার মেয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।
ইশা অবাক হয়ে বলল,
‘ আপনার মেয়ে কখন হলো? ও আমার মেয়ে।
আদি বলল, ‘ ঝগড়া পরে করো এখন নাও কথা বলো। ও আমার মেয়ে।
আদি পরীর কানের কাছে ফোন রাখল। পরী ফোনটা আদির কাছ থেকে কেড়ে নিল । নিজে নিজেই রাখল কানের নিচে। মৃদুস্বরে ডাকল, আমমমা?
ইশা চুপ হয়ে শুনল সেই ডাক। বলল, মা টা কেমন আছে?
পরী মৃদুস্বরে আবার ও ডাকল, আমমা…
ইশা হাসল। বলল, আমমার কাছে আসবে না?
পরী আবার ও ডাকল, আমমা।
ইশা বলল, পাপপা মামমমা মিস করছে তোমায়। দাদাই মিস করছে। রিইইই মিস করছে। কখন আসবে?
পরী আচমকা দুম করে কিল বসাল বিছানার চাদরে। আওয়াজ করে বলল, মাবববো।
ইশা অবাক হলো। মেয়েটা সারাক্ষণ এসব কি বলে?
ইশা হাসল। বলল, কাকে মাববেন আপনি?
পরী কাঁদোকাঁদো হয়ে আবার বিছানার চাদরে মেরে বললো মাবববো ইনননা মাবববো।
ইশা বুঝতেই পারল না সব আদির কারসাজি। আদি চোখ রাঙিয়ে তাকাচ্ছে পরীর দিকে। যাতে পরীর মুখ দিয়ে বের হয় মাবববো। আর মিষ্টি তা শুনুক।
আদি হাত নাড়িয়ে বলল, পরী মাবববো।
পরী চেঁচিয়ে উঠল। রাগ ঝেড়ে বলল, মাবববববো।
তারপর পরই চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল। আদি তাড়াহুড়ো করে ফোন কেড়ে নিল। ইশাকে বলল, আমার মেয়ে তোমাকে সহ্যই করতে পারে না। দেখো ও আমাকে আদর করছে, আর তোমাকে মারবে বলছে। সো স্যাড মিষ্টি। মাত্র দুদিন হয়েছে এনেছি এরমধ্যেই তোমাকে ভুলতে বসেছে। ওহহো এবার দেখো কি হয়?
ইশা অবাক হলো। বলল, কি করছেন ডক্টর। পরী কাঁদছে। ওকে থামান আগে।
আদি চুপ মেরে গেল। পরীকে কোলে তুলে নিল। পরীকে শান্ত করিয়ে বললো।

‘ ভালো লাগল।

ইশা ক্ষেপে বলল,

‘ কি?

আদি হেসে বলল,

‘ ওই যে ডক্টর ডেকেছ?

ইশা ধরে পড়ে চোর যেমন করে তেমন তোতলাতে তোতলাতে বলল, আমি…….

আদি কথা ঘুরিয়ে বলল,

‘ ভাগ্যিস ডক্টর হয়েছি, যদি ডক্টর না হয়ে অন্যকিছু হতাম,তাহলে তুমি কি ডাকতে?
নিশ্চয় ডাকতে মুচি,নাপিত, দর্জি, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, ব্যবসায়ী, মাস্টার,প্রকৌশলী?
কেমন কেমন লাগত মিষ্টি! ডক্টরই বেস্ট। তোমার মুখে ওটাই ভালো মানায়।

‘ আমার নাম মিষ্টি নয়। ইশা। যদি ডাকতে হয় ওটাই ডাকবেন। আপনি করে বলবেন। তুমি করে নয়। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই অহেতুক ফোন দিবেন না। কাল যথাসময়ে আমার মেয়েকে এনে দেবেন খান বাড়িতে। ওর সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ওর মুখে বাবা ডাক শোনার চেষ্টা করবেন না। আপনি ওর কেউ নন।

আদি অবাক হলো মিষ্টির মুখে অতটা কঠোর কথা শুনে। কিন্তু দেখাল না । মিষ্টিকে বুঝাল না। বলল, ও যদি তোমার মেয়ে হয় তাহলে ও আমার ও মেয়ে। একশবার বলব। হাজারবার বলব।

ইশা সাথে সাথে রুক্ষ কন্ঠে জবাব দিল।

‘ ও আমার মেয়ে নয়। আমার ভাইয়ের মেয়ে। আমার ভাইঝি। ও আমাকে ফিপি ডাকে। আমার ভাইঝিকে কোন সাহসে আপনি আপনার কাছে রেখেছেন? দিয়ে যাবেন নাহলে দেখবেন আমি কি করি? কেড়ে নিয়ে আসবো।

বিষাক্ত তীরের ফলা হয়ে বিঁধল সেই কথাগুলো ছেলেটির কানে। একজন বাবার কানে, ও আমার মেয়ে নয়। আমার ভাইয়ের মেয়ে।
মেয়েটি এতটাই পাষাণ যে বুঝতে পারল না। অনুভব করতে পারল না ছেলেটির হাহাকার। মেয়েটি ফোন রেখে দেওয়ার আগেই শোনা চাপা কন্ঠস্বর,

‘ বুক কাঁপল না এমনটা বলতে? কাঁপল না?

ইশা ফোন কেটে দিল সাথে সাথে। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে মেরে শুয়ে পড়ল। চোখদুটো বালিশে চেপে ধরল,সেই অবস্থায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরী আদির কাঁধে পড়ে রইল। ছোট্টছোট্ট করে ডাকল, এব্বে এব্বে এব্বে।
আদি তার মাথা তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু পরী উঠল না। উল্টাপাল্টা বকতে বকতে ঘুমিয়ে পড়ল বাবার কাঁধে । আদি সারারাত নিজের উপর শুইয়ে রাখল পরীকে। ভয় ভর করল তার সাহসী মনে। মিষ্টি পরীকে কেড়ে নেবে না নাতো? মিষ্টির সাথে কি সে লড়াইয়ে পারবে?

___________________

একটি মিষ্টি সকাল এল। সেই মিষ্টি সকালটাতে আলিয়ার চোখে পড়ল এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে একটুকরো সোনালি রোদের আভা ছুয়ে দিল বেতের চেয়ারে বসা বাবা, আর তার কোলে ঘুমন্ত ছোট্ট মেয়েটির মুখটাতে। মেয়ের মাথায় মুখ লাগিয়ে চোখবুজে আছে ছেলেটি। আলিয়া ছুঁতেই যেন কেঁপে উঠল। মেয়েকে কোলের উপর যত্নসহকারে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘ ও ঘুম থেকে উঠে কান্না করছিল। তাই এখানে এসে বসেছি। আপনি এখানে কি করছেন?
আলিয়া বলল, ‘ আদিশা কয়দিন থাকবে এখানে?
আদি রেগে গেল অমন কথা শুনে।
‘ ও আমার মেয়ে। আমি যেখানে থাকব ও সেখানেই থাকবে। যতদিন,যতবছর থাকতে ইচ্ছে হয়। কেন আপনার কি সমস্যা?
পরী নড়েচড়ে উঠল। আদির কন্ঠস্বর শুনে বিরক্তি নিয়ে নড়েচড়ে আওয়াজ করল, উমমম,উমমমম।
আদি পিঠে চাপড় দিয়ে আবার ও ঘুম পাড়াল। বলল, আপনার সাথে আমার কথা নেই। যান।
আলিয়া চলে গেল। আসল কথাটি সে বলতে পারল না। ছেলের হাসিখুশি মুখটা আর অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতে মন চাইল না।
পরীর ঘুম ভাঙল সাড়ে সাতটার দিকে। আদি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে মেয়ের পাশে গালে হাত দিয়ে। পরী নড়েচড়ে উঠল। উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ তুলে তাকাল আদির দিকে। আদি যখন তাকে দেখে হাসল,সে ঘুম ঘুম কন্ঠে হাতটা উপরে তুলে বলল, মাবববো।
আদি আবার ও হাসল। বলল, মাববেন নিন মারেন। কিন্তু আপনার মায়ের মতো মারিয়েন না। আপনার মা বেশি আঘাত দেয়। আমি বেশি আঘাত পায়। আপনি ও কি দেবেন?
পরী সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। হাত পা এক জায়গায় কুড়িয়ে আদিকে তার দিকে টেনে নিল। হাত পা ছুড়ল তার মুখে। আঁকিবুকি করতে করতে বলল,
‘ আমম। মামম।
আদি একগাল হাসল। মুখ দিয়ে সুড়সুড়ি দিল পরীর পেটে। পরী খিলখিল করে হেসে উঠল। আদির চুলগুলো মুঠোয় নিয়ে হাসতে হাসতে বলল, মাববো।

আদি ছোট্ট মুখটা ধরে আদর দিল পুরো মুখে। ছোট্টছোট্ট হাত দুটোতে চুমু দিল। কোলে তুলে নিয়ে পানি দিয়ে মুখ মুছে দিল, কাপড় বদলে দিল।

তারপর কোলে নিয়ে আদর করতে করতে নেমে গেল নিচে। রাইনাকে ডেকে বলল, খেতে দাও আমার আম্মিকে। আম দাও। মাম দাও।
রাইনা স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে এগিয়ে এল। বলল, নে খাইয়ে দে।
পরী দুপাশে মাথা নাড়াল। আদির দিকে তাকিয়ে বলল, চককো, লিলি……
আদি হাসল। বলল, এখন কি চককো খাওয়ার সময় প্রিন্সেস? এখন এগুলো খাবে,তারপর এত্তগুলো চককো দেব।
পরী ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ খেল। আজিজ চৌধুরী আর আলিয়া চৌধুরী আড়চোখে দেখল বাবা মেয়ের কান্ড। আদি পরীকে বসিয়ে দিল টেবিলের উপর। পরী হামাগুড়ি দিয়ে আজিজ চৌধুরীর প্লেট কেড়ে নিল। চামচ নিয়ে ডিমের পোচে প্যাচ মারতে মারতে কাটল। আদি চুপচাপ দেখল। আজিজ চৌধুরী অবাক হয়ে বলল, এসব কি হচ্ছে?
পরী হামাগুড়ি দিয়ে আদির কাছে চলে আসল। ধমক দিয়ে বলল, ভোববব।
আলিয়া শাড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে হেসে উঠল। নীরবে হাসল মিনুমা রাইনা। রেহান তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” দাদাভাই ভয় পেয়েছে। দাদাভাই ভয় পেয়েছে।
আজিজ চৌধুরী বলল, আদি তুমি ওকে টেবিলে কেন তুলে দিয়েছ?
পরী খালি চামচটা আদির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে খেতে বলল, দিইইই উমমম উমম।
আদি খালি চামচটা গালে দিল। আর ছাড়ল না। পরী চেহারা খারাপ করে ফেলল। বলল,
‘ মাববো।
আদি তারপরে ও ছাড়ল না। পরী কেঁদে দিল। আদি ছেড়ে দিল চামচ। পরী সেই চামচটা ছুড়ে মারল আজিজ চৌধুরীর দিকে। আজিজ চৌধুরী দাঁড়িয়ে পড়ল। আলিয়াকে বলল,
‘ লিয়া খাবার টেবিলে এসব কি হচ্ছে?
আদি ও দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল,
‘ এটা ওর বাড়ি। যাই ইচ্ছে তাই করবে।
পরী আঙুল দেখিয়ে বলল, ভোববব।
আলিয়া কোলে নিয়ে নিল পরীকে। সেই সুযোগে আদর করে দিয়ে বলল, ও কি বুঝে আজিজ? তুমি একটা বাচ্চা মেয়ের উপর রাগ করছ।
আলিয়া চোখের ইশারায় আজিজকে দেখিয়ে দিল আদিকে। চুপ হতে বলল।
আদি পরীকে কোলে নিয়ে নিল। বলল, থাকব না আমি এমন লোকদের সাথে। আমার মেয়েকে আমি রাখব না এখানে।

_____________

আদি নিজে রেডি হতে গেল। পরী বসা বিছানার উপর। আদি আয়নায় দেখল পরী পিটপিট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে চোখ টিপল পরীকে। পরী মুখের উপর হাত দিল। আদি আবার ও চোখ টিপল, পরী খিলখিল করে হেসে উঠল। দুহাতে মুখ ঢাকল। বলল, নাই, নাই পরীইইই নাই।
আদি আয়নায় তারপর ও তাকিয়ে থাকল। পরী ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে দেখল আদিকে। আদি চোখ টিপল আবার। পরী হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আদি ও কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। পরীকে তার কাছে টেনে সুড়সুড়ি দিয়ে বলল, কাতুকুতু কাতুকুতু।
পরী হাসতে হাসতে বলল, কুততুকুততু। দিইইই ভোবব। ভোবব।
আদি তার ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে বলল, আচ্ছা ভোবব।
পরী হাসল। আদির মতো করে চোখ টিপে বলল, পররীইই ভোবব।
আদি হেসে বলল, বাহ চোখ টেপা শিখে গিয়েছ? গুড ইমপ্রুভ। মিষ্টিকে এভাবেই চোখ টিপে দেবে ওকে?
পরী হাসল। বলল,মিততততি?
আদি বলল, ইয়েস মাই প্রিন্সেস। তোমার আমমার নাম মিততি।
পরী খিলখিল করে হাসল। বলল, মিততি দিইইইই মাববো।
আদি হো হো করে হাসল। পরীর বুকের উপর আলতোকরে মাথা রাখল ভার না দিয়ে। বলল, আম্মি চুলে বিলি কেটে দাও।
পরী চুপচাপ আদির চুলগুলো নিয়ে খেলল। কিছুক্ষণ পর বলল, দিইইই দুক্কু।
আদি মাথা তুলে গাঢ় চুম্বন করল মেয়ের গালে,কপালে,নাকের উপর।
পরী বলল, দিইইই মাববো।
আদি হাসল। দুহাতের উপরে মেয়েকে নিয়ে বলল, একবার বাবা ডাকো। আববা ডাকো। ডাকো। একবার।
পরী তার শার্টের বোতাম গুলো নিয়ে খেলতে খেলতে বলল, বেব্বে,বেব্বে,এব্বে।
আদি জোরে চুমু খেল কপালে। বলল, আমাকে বলেছ?
পরী বোতাম ছেড়ে তার দিকে চোখ তুলে তাকাল। হাত তুলে বলল, ইনননননা মাবববো।

______________

চৌধুরী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেল আদি। কারো আকুতি মিনতি, চোখের জল কোনোটা তাকে আটকাতে পারল না। মেয়েকে কোলে নিয়ে সে বেরিয়ে গেল। পুরোটা রাস্তায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখল শক্ত করে। পরী ও যেন চুপচাপ। আদির ফোনে কল এল। ফোনদাতার নাম দেখে অন্ধকারে তলিয়ে গেল তার প্রশান্তির মুখ। ফোন রিসিভ করল ঠিক, কিন্তু ফোনের ওপাশে কথা বলা মেয়েটিকে সে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো দেখল ফোন কানে দিয়ে। মেয়েটি এগিয়ে এল তার দিকে। ফোনে কথা বলল না। দৌড়ে এসে কোলে নিতে চাইল পরীকে। কিন্তু নিতে পারল না। আদির বাধঁন এতটাই শক্ত। ইশা পুরো গালে আদর দিল পরীর। আদি তা মুগ্ধ চোখে দেখল। মিষ্টি যেন দেখলই না তার ডক্টরকে। ইশা নিজের চোখমুখ মুছে নিয়ে আগলে ধরল পরীর মুখ। বলল, কেমন আছ মা? আমম খেয়েছ? কে খাইয়েছে?
আদি বলল, না খায়নি। চৌধুরী বাড়িতে রান্না হয়না তো। জানো না?
রান্না করার জন্য একটা মিষ্টির খুব অভাব।
ইশা কানে নিল না। বলল, পরী কোলে আসো। ফিপির কোলে আসো। পাপপার কাছে,মামমমার কাছে যাবে।
পরী হাত তালি দিল। চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠল। বলল, পাপপা, মামমা রিইইই?
ইশা মাথা নাড়াল। হাত বাড়িয়ে দিল। আদি পরীকে চেপে ধরল। বলল, না, ও যাবে না।
ইশা অনেকক্ষণ পর তাকাল আদির দিকে। গলতে গলতে আর ও শক্ত হলো সে। বলল,
পরী আমার মেয়ে।
আদি চেপে ধরল তাকে। বলল, ও শুধু, শুধুই আমার মেয়ে।
পরী আদির বুক থেকে মাথা তুলে তাকাল। দুহাতে দুজনকে ঠাস ঠাসস করে কষে চড় মারল নাকের উপর। বলল, ইনননা পরীইইইই আমমমাল। উমম, উমম আমমমাল।
আদি হো হো করে হেসে দিল। বলল, হ্যা হ্যা পরী তোমমাল মেয়ে। শুধুই তোমমাল মেয়ে।
ইশার হাসি পেলে ও হাসল না। চেয়ে থাকল আদির দিকে। এত হাসির কি আছে?
আদি পরীর কানে ফিসফিস করে বলল, আমমি চোখ টিপে দাও মিতততিকে এভাবে।
পরী আদির চোখ টেপা দেখল। তারপর ইশার দিকে ফিরল। ইশা পরীর তাকানো দেখে বলল, কি মা?
পরী কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আচমকা চোখ টিপে দিল। বলল, মিতততি?
ইশা চোখ লাল করে তাকাল আদির দিকে। বলল, সব অসভ্যতামি শিখিয়ে ফেলেছেন তাইনা? অসভ্য লোক একটা?
আদি ঘাড় কাত করে হাসল। ইশার মুখের সামনে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, ঠিক, তোমার চাইতে বেশি কে জানে?
ইশা ব্যঙ্গ করে হাসল। বলল, এটাই পারেন আপনি। মেয়েদের আবেগ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। আইমিকে কি করলেন,শেষমুহুর্তে এসে তাকে ও ছেড়ে দিলেন। যাকে এতগুলো বছর স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন,এক নিমেষেই তার স্বপ্নগুলো ভেঙ্গচুড়ে দিলেন? কত মহান আপনি মিঃ চৌধুরী। প্রশংসা করতেই হয়।
আদি চুপ হয়ে গেল।
নীরবতায় পার হলো কয়েক মুহূর্ত। আদি কোনো জবাব দিল না। হাসি হাসি মুখ করে চেয়ে থাকল মিষ্টির দিকে। কতদিন এভাবে দেখেনা। কতগুলো মাস। বছর।
দুজনের নীরবতাকে ভেঙ্গে দিয়ে পুলিশ আসল। আদি অবাক হলো। মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল অবিশ্বাস্য চোখে। অফিসার শাহেদ বলল, বাবা ছেলে কখন থেকে কিডন্যাপিং শুরু করেছেন মিঃ চৌধুরী। আজ না এলে তো দেখতেই পারতাম না। আদি শুনল না কারো কথা। তাকিয়ে রইল মিষ্টির দিকে। বলল, এসব কি মিষ্টি?
ইশা অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকল। মহিলা পুলিশ এসেই কোলে নিয়ে নিল পরীকে। আদি ইশা দুজনই অবাক হলো। শাহেদ বলল, আদালতে কেস উঠেছে, আদিশা খানমকে নিয়ে। তাই পুলিশের তদারকিতে থাকবে আদিশা।
মিঃ চৌধুরী আপনারা নিয়োগ করুন উকিল। মিঃ খানের পক্ষে নাম্বার ওয়ান উকিল তো আছেনই।
আদি বিস্ময় নিয়ে তাকাল মিষ্টির দিকে। বলল, কেন এসব?
ইশা বলল, এরকম কথা ছিল না অফিসার। পরী আমার কাছে থাকবে।
শাহেদ বলল, পরীকে দাবি করছেন দুই পরিবার। কার কাছে রাখার অনুমতি দেবে আদালত। চিন্তা করবেন না। পরী ভালো থাকবে। ওর অযত্ন হবে না।
আদি গর্জে উঠল। বললেই হলো? আমি দেব না ওকে। আমার কাছে থাকবে ও।
শাহেদ মহিলা পুলিশটিকে ইশারা করল। পরী আদির দিকে তাকিয়ে ডাকল, এব্বে, এব্বে, বেব্বে।
আদি ছুঁতে পারল না পরীকে। ঘটনা এতই দ্রুত ঘটল ইশা নিজে ও কিচ্ছু বুঝতে পারল না। ইশা আদি দুজনই পরীর পিছু পিছু গেল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না।
ইশা থমকে দাঁড়ায়। গাড়ি ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। পরী ততক্ষণে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আদি স্পষ্ট দেখল পরীর চোখে কান্না।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল তার পেছনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে। মেয়েটি কিছু বলতে চাইল, আদি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিতে টাল সামলাতে পারল না ইশা। পরে গেল। পিঠে ব্যাথা পেল। হু হু করে কেঁদে দিল। আদি বসল তার সামনে। একহাতে খামচে ধরল ইশার বাহু। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আর কত নিচে নামবে মিষ্টি? আর কত? তুমি শেষপর্যন্ত আইনকেই বেছে নিলে? তোমার কি আমার সুখ সহ্য হয়না? আমি তোমার কোন জন্মের শত্রু? বলো? কোন জন্মের শত্রু। আমি আজ নিজ হাতে ছুঁয়েছি আমার মেয়েকে। খাইয়েছি। ঘুম পাড়িয়েছি। স্বর্গসুখ পেয়েছি এই একটা দিনে। মিষ্টি আমি শুধু ওকে নিয়ে থাকতে চেয়েছি। তুমি দিলেনা? তুমি এমন কেন?আমার সুখ তোমার কেন সহ্য হয়না। তুমি কেন আমার ভালো দেখতে পারোনা? কেন আমাকে সহ্য করতে পারো না মিষ্টি? কি পেয়েছ তুমি ওকে আমার কাছ থেকে দূরে পাঠিয়ে? কি পেয়েছ? নিজেকে দেখো মিষ্টি। নিজেকে আয়নায় দেখো। কি হাল হয়েছে তোমার? তুমি নিজে কতটা ভালো আছ? নিজে ভালো নেই তাই আমাকে ও ভালো থাকতে দিচ্ছ না তাই না?
তোমাকে আমি ছাড়ব না মিষ্টি। এই তুমি কাঁদবে না। তোমার চোখের জলগুলো ও অভিনয়।
সব অভিনয়। তুমি প্রতারক। বেঈমান। যাও আমার সামনে থেকে। যাও।
ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদে। বলে, আমি জানিনা, জানিনা,,,,,,,,,
আদি তার হাতের বাহু ছেড়ে দিল। নিজে বসে পড়ল সেই লনের উপর।
ইশা হাটুগুজে কাঁদল। আদি কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর আচমকা আবার আক্রমণ করল ইশাকে। হাতের বাহু জোরে শক্ত করে চেপে ধরে গর্জন করে বলল,
‘ আমি কিচ্ছু পাইনি। কিচ্ছু না। সেই শুরু থেকে তোমাকে ভালোবেসে আমি কিচ্ছু পাইনি মিষ্টি। তুমি একের পর আমাকে কষ্ট দিয়ে গেছ। তুমি কি ভেবেছ আমি ভালো ছিলাম এতদিন? সুখে ছিলাম? তুমি ভালো রেখেছ আমাকে? ভালো থাকতে দিয়েছ? আমি জানি কতটা নিঃস্ব আমি। ছিলাম। আছি আর…থাকব। কারণ তুমি যতদিন থাকবে আমার জীবনে ততদিন আমি এইরকম নিঃস্ব থাকব। তুমি বলেছিলে না আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই? আসলেই কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই উঠে না। যদি থাকত মনের সম্পর্ক তাহলে আমি যা চাইতাম তুমি ও তাই চাইতে, আমি যা বলতাম তুমি ও তাই বলতে। তুমি পাষাণ, হৃদয়হীন মিষ্টি। আমি ঘৃণা করি তোমায়। ঘৃণা করি এই আমাকে। কারণ একটাসময় আমি ও তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।
ইশা কাঁদে। আদির বলা প্রত্যেকটা কথা আঘাত করে তাকে। সে বলতে পারেনা কোনোকিছুই।
আদি আর কোনোকিছু বলেনা। উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। ইশা ও উঠে দাঁড়ায় কাঁপা কাঁপা পায়ে। বলে, ডক্টর আমায় ভুল বুঝবেন না।
আদি তার মুখ মুছে হাতের কব্জি দিয়ে। সাথে চোখ ও। কিচ্ছু না বলে দাঁড়িয়ে থাকে। ইশা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বলে, আমি যতদিন থাকব আপনার জীবনে ততদিন আপনি নিঃস্ব থাকবেন, তাই তো আমি চলে গিয়েছি। আপনি কত সহজে বলে দিলেন কথাটা। আমি আপনাকে নিঃস্ব করে দিয়েছি তাই না?
আদি পুরোটা সময় নীরব থাকল। কথা বলল না, তার কথা বলতে ইচ্ছে করল না।
ইশা বলল, আমি কাগজেকলমে দিয়ে দিয়েছি পরীকে। আপনি এসব লড়াইয়ে নামবেন না ডক্টর।

আদি তীব্র ক্রোধ নিয়ে বলে,
‘ আমি! আমি নেমেছি? এসব কার প্ল্যান?
ইশা সোজাসুজি জানায়,
‘ আপনার বাবা করেছে।
আদি অবাকের চরম পর্যায়ে। বলল, কাগজেকলমে দিয়ে দিয়েছ? আমার অনুমতি ছাড়া? তোমার সাহস কি করে হয়? আমার মেয়েকে আমার, আমার পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিক্রি করে দেওয়ার।
ইশা কোনোকথা বলেনা। আদি বলল,
‘ তুমি এমনই চালাক যে আমাকে ইন্ডিয়া যেতে বাধ্য করেছ। তোমার কথা শুনতে বাধ্য করেছ। আর এখন আমার মেয়ের বেলায় ও। এবার তোমার চালাকি কাটবেনা।
ইশা এবার মৃদু হাসল। বলল, বারবার আপনার মেয়ে আপনার মেয়ে করছেন কেন? কি প্রমাণ করতে চাইছেন? একদিন নিজের কাছে রেখে, বাবা হয়ে গেছেন। ও বাবা ডেকেছে আপনাকে?
আদির তীব্র আক্রোশ গিয়ে পড়ল মেয়েটার উপর। এখন ও কি ঘাড়ত্যাড়া কথা বলছে?
এই মেয়েটা নরম হবে কিসে??
আদি ধাক্কা মারল তাকে। ইশা গিয়ে পড়ল দূরে। ব্যাথা পেল তীব্র। আদি তার সামনে একহাটু গেড়ে বসে একহাতে মুখটা চেপে ধরে শক্ত কথা শুনিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু শক্ত কথা বেরোলো না। কন্ঠ তার নরম হয়ে এল,সাথে মিষ্টির চোখেরজল দেখে হাতের বাধঁন। বলল,
‘ সেদিন ও আমায় দয়া দেখিয়েছিলে মিষ্টি, ভালোবাসোনি। আজ ও দেখাতে পারতে দয়া। আজ আমার তোমার ওই লোকদেখানো দয়াটার খুবই প্রয়োজন ছিল। তোমার দয়ায় যদি আমি ফিরে পায় পরীকে তাহলে আমি তা মাথা পেতে নেব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজ ভালোবাসারা বহুদূরে। ভালোবাসা তো বহু বহুদূর, আমার প্রতি তোমার দয়াটা ও কাজ করছে না। তুমি এতটাই পাষাণ হয়ে গেছ যে একজন বাবার আর্তনাদ তুমি শুনতে পারছ না। শুনতে পারবে কি করে? কোনোদিন বাবা বলে ডেকেছ কাউকে? ছিল কেউ?
ইশার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল ফোটা ফোটা জলের নহর। সে অবাক হয়ে শুনল ডক্টরের মুখ দিয়ে বের হওয়া প্রত্যেকটা তিক্ত কথা। বলল, আজ যদি বাবা বলতে কেউ থাকত আমার, তাহলে তিনবছর আগে আপনার সাথে আমার বিয়েটা কখনো হতোনা। আপনি আর আমি দুই মেরুর বাসিন্দা। আমি মাতৃহীন পিতৃহীন। আমি ও চেয়েছিলাম নিজের শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে মা বাবার জায়গায় বসাতে। পারিনি আমি ডক্টর। আপনার মা বাবা আইমির মুখে মা বাবা ডাক শুনতে চেয়েছিল। তাই আমার দিকে ছুড়ে মেরেছিল ডিভোর্স পেপার। আমি ও মাতৃপিতৃহীন। এত অন্যায়ের প্রতিবাদ কেই বা করবে? একজন ভুল মানুষকে বিয়ে করে আমার অবস্থা দেখুন।
আদি দাঁড়িয়ে পড়ে। একপলক তাকিয়ে থাকে মিষ্টির দিকে । ইশা অন্যদিকে মুখ করে ফেলে। আদি বলল অনেকক্ষণ পর, আমি ভুল? আমি ভুল ছিলাম? তোমার মুখ দিয়ে আর কত বিষাক্ত তীর বেরোবে মিষ্টি? তুমি আজ ও আমায় বুঝলে না। বুঝলে না।
ইশা দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। যা হবে কোর্টে।
আদি তার অসহায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করল মিষ্টির উপর। মেয়েটি যখন তাকাল না। তাকে দেখল না, সে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। ইশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই লোকটা কি পাগল? কি করছে?
প্রায় কেটে গেল এভাবে অনেকক্ষণ। আদি শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে। বলল, আমি ঠকেছি মিষ্টি। তোমাকে ভালোবেসে। আইমি ও ঠকিয়েছে আমায়। এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে তলে তলে আমার ক্ষতি করে এসেছে। আমাকে থাকতে দেয়নি স্ত্রী সন্তানের পাশে। চিনতে দেয়নি। জানতে দেয়নি। কিন্তু আজ যখন চিনেছি, যখন তাদের নিয়ে সাজাতে যাচ্ছি আমার পৃথিবী তখন তুমি এসে সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছ। মিষ্টি আমি তোমাকে চায়,পরীকে চায়। তোমাদের দুজনকেই আমার চায়। আমার সাথে এমনটা করোনা মিষ্টি। আমার কষ্ট হচ্ছে। এতটাই যে আমি তোমাকে বুঝাতে পারব না। কিসের শাস্তি দিচ্ছ মিষ্টি? একটিবার ভেবে দেখ আমার দোষটা কোথায়? আমার কি দোষ? আমি তো ছাড়িনি তোমার হাত, তুমিই ছেড়েছ। তাহলে এখন কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি। চুপ থেকোনা মিষ্টি। তুমি ফিরে এসো আমার কাছে, পরীকে নিয়ে। আমায় আর কষ্ট দিওনা মিষ্টি। এভাবে মেরো না। আমি অসহায় খুব। চারপাশে সবাই থাকলে ও দিনশেষে আমি খুব অসহায়। আমি এই মিষ্টিকে তো কখনো ভালোবাসিনি, আমি তাকেই ভালোবেসেছিলাম যে আমি কাঁদার আগে কেঁদে দিত। আমার কষ্টে সে ও ব্যাথিত হতো। আমার দুঃখ কষ্টগুলো আমার আগে তাকে গিয়ে ছুঁতো। তাহলে আজ কি হলো মিষ্টি? আজ কেন ছুঁতে পারছেনা। তুমি কি তাহলে বদলে গেছ মিষ্টি? তুমি ভালোবাসোনা আমাকে? ডক্টরকে ভুলে গিয়েছ?
ইশা কোনোকথা বলেনা। আদি ছেড়ে দেয় তাকে। দুহাতে মুখ আগলে ধরে বলে, মিষ্টি পৃথিবীটা উল্টেপাল্টে যাক তুমি আমি পরী এক থাকি? আমাদের ছোট্ট একটি সাজানো সংসার হোক? তুমি কি চাওনা মিষ্টি?
অনেকক্ষণ পর ইশা আওয়াজ করে বলে, চেয়েছিলাম।
হাত আলগা হয়ে আসে আদির। হাতের বাঁধন থেকে মেয়েটি ছুটে যায়। যেতে যেতে বহুদূরে চলে যায়। ফিরে তাকায় না ছেলেটির দিকে। ছেলেটি বসে পড়ে সেই সবুল তৃণের উপর। প্রায় ঘন্টাখানেক পর নামে আকাশের বুক ছিড়ে বৃষ্টি। আকাশ গর্জন করে তার কষ্টগুলো জানান দেয়। কিন্তু চিৎকার করে শোনাতে পারেনা তার কষ্টগুলো। আজ এসময়টাতে মিষ্টি নেই তারপাশে। বৃষ্টি নামার সাথে সাথে চারপাশ অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকল। বজ্রপাত হচ্ছে আশেপাশে কিন্তু ঠিক জায়গায় হচ্ছেনা। যদি হতো তাহলে মুক্তি পেত ছেলেটি। মুক্ত করে দিত সবাইকে। ভালো থাকত সবাই তাকে ছাড়া। কিন্তু আফসোস বজ্রপাত হয়না তার মাথার উপর। হঠাৎ আচমকা তার মনে হলো কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মেয়েটি হাত বাড়িয়ে ডাকছে, আয় আয় আয়। দিইইই আয়।
আদি ছুটে গেল সেদিকে। ছোট্ট মেয়েটি তখন সামনের দাত দুটো দেখিয়ে হাসছে। আর হাত বাড়িয়ে বলছে, আয় আয় আয়।
আদি হাত বাড়িয়ে দিল তার কিন্তু মেয়েটিকে ছুঁতে পারল না। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে হেসে মিশে গেল,হারিয়ে গেল বৃষ্টির জলের মাঝে।
সেই মধ্যরাতে আদির ঘুম ভেঙে গেল আচমকা। সে দেখল আশেপাশে কেউ নেই। ঘড়ির এলার্ম ও বাজেনি। তাহলে ঘুম ভাঙল কেন?
সে রুম থেকে বেরোতেই শুনতে পেল সেই ডাক, দিইইই আয় আয় আয়।
বারান্দা গ্রিল ধরে বাইরে চোখ মেলল সে। দেখল ছোট্ট মেয়েটির চোখমুখ লাল। কেঁদে কেঁদে ডাকছে দু হাত বাড়িয়ে ডাকছে,,,, আমমা আববা আয় আয়।

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here