মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৩৬+৩৭+৩৮

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩৫
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সিউর হওয়ার জন্য সোহাদ রায়জাদা দ্রুত পায়ে অভিদের রুমের দিকে চলে যায়।
রুহি আবারও বমি করার পর মাথা ঘুরতে থাকে। রুহি ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে দুর্বল শরীর নিয়ে দেয়াল ধরে কোনো রকমে আসছিলো তখনই সোহাদ রায়জাদা হুরমুর করে রুমে ঢুকে পরে। রুহি শব্দ পেয়ে চমকে দরজার দিকে তাকায়। এই রুমে সোহাদ রায়জাদাকে দেখে রুহি অনেকটা অবাক হয়। সোহাদ রায়জাদা রুহির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রুহির পেটের আকৃতির কিছুটা পরিবর্তন দেখে সব বুঝে নেয়। তার পুরো চেহারায় রাগে লাল আকার ধারণ করে। সোহাদ রায়জাদা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রুহিকে সজোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রুহি টান সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়। রুহি পরে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়ে চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠে। সোহাদ রায়জাদা রেগে রুহির কাছে এসে রুহির গলা চেপে ধরে শক্ত দুই হাতে। রুহি শ্বাস নিতে না পেরে ছটফট করতে থাকে আর গলা ধরে কাশতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা রেগে বলতে থাকে
” আমার থেকে সব কেড়ে নিতে চাস তাই না ? আমার সব শেষ করে দিতে চাইছিস ? তোকে তো আমি মেরেই ফেলবো। তুই কি ভেবেছিস ? একবার বেঁচে গিয়েছিস বলে প্রত্যেকবার বাঁচতে পাড়বি ? তোকে আর তোর সন্তানকে আমি মেরে ফেলবো। অভদ শুধুমাত্র আমার সোনার ডিম পাড়া হাস আর কারো কিছু নয়।”
এদিকে রুহির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কিন্তু সোহাদ রায়জাদার সেদিকে খেয়ালই নেই। রুহি শ্বাস নিতে না পেরে গলা ধরে কাশতে থাকে। সোহাদ রায়জাদার হাত ছাড়িয়ে নিতে পারছে না তাই আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎ সোহাদ রায়জাদার কানে নিচ থেকে অভিদের গলা ভেসে আসে। সোহাদ রায়জাদা সাথে রুহিকে ছেড়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আবার রুহির দিকে তাকাতেই রুহির অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। অভিদ যদি তাকে এখানে দেখে তাহলে বিপদ হয়ে যাবে ভেবে কিছু না ভেবেই দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুহি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। ধীরেধীরে রুহির চোখের সামন সব অন্ধকার হয়ে যায়। রুহি চোখ বন্ধ করে ফ্লোরে পরে যায়।
অভিদের আজকে ডিল কনফ্রাম হয়ে গিয়েছে। আজকে আর ইম্পরট্যান্ট কোনো কাজ না থাকায় অভিদ,রায়হান, তুষার চলে এসেছে। অভিদ সবার মাঝে রুহিকে না দেখে বললো
” রুহি কোথায় ?” কৌশিকা রায়জাদা চিন্তিত হয়ে বলে
” কি জানি ! মেয়েটা এখনও একবারের জন্যেও নিচে নামেনি। শরীর টরীর ঠিক আছে তো ? আমি এখনই ভাবছিলাম যাবো।” অভিদ উপরের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি দেখছি তুমি চিন্তা করো না।”
রুমের ভেতর ঢুকতেই রুহিকে অভিদ নিচে পরে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। অভিদ দৌড়ে রুহির কাছে আসতেই হতবাক হয়ে যায়। অভিদ রুহির মাথাটা উঠিয়ে নিজের বাহুডোরে নিয়ে গাল চাপড়ে ডাকতে থাকে
” রুহি ! রুহি চোখ খোলো ! তোমার এই অবস্থা কিভাবে ? রুহি ? এই বাবুই পাখি ! এই রুহি ! হাত পা ও তো ঠান্ডা হয়ে আছে।” অভিদ বারবার রুহিকে ডাকতে থাকে কিন্তু রুহির চোখ খোলার কোনো লক্ষণ দেখলো না। অভিদ চিৎকার করে কয়েকবার রায়হানকে ডাকলো। রায়হান দৌড়ে রুমে আসে। রুহির অবস্থা দেখে রায়হানও অবাক হয়ে গেলো। অভিদ ভীতুগ্রস্ত গলায় বলে
” কি করবো এখন ?” রায়হান অস্থির হয়ে ফোন বের করে বলে
” তাড়াতাড়ি রুহিকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে, চল। আমি নিলয়কে ফোন করে বলে দিচ্ছি।”
অভিদ রুহিকে কোলে তুলে বেড়িয়ে পরে। রায়হানও অভিদের সাথে যেতে থাকে। রুহিকে নিয়ে নিচে আসতেই সবাই রুহির অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। গাড়ি আগে থেকে বের করা থাকায় অভিদ রুহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। রায়হানও অভিদের সাথে গাড়িতে উঠে পরে। রায়হান নিলয়কেও জানিয়ে দিয়েছে। গাড়ি হসপিটালের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
নিলয় কেবিন তৈরি করে রেখেছিলো অভিদরা আসতেই রুহিকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। অভিদ ধপ করে চেয়ারে বসে পরে। রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” চিন্তা করিস না কিছুই হয়নি রুহির।”
অভিদ নিশ্বাস নিয়ে দুই হাতের মাঝে মুখ গুঁজে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর…..
নিলয় বের হতেই অভিদ আর রায়হান দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” রুহির কি হয়েছিল ?”
নিলয় শান্ত গলায় বলে
” সকাল থেকে অনেকবার বমি হয়েছে ওর তাই শরীর খারাপ। আর আমি ভালো করে দেখলাম ওর গলায় লাল দাগ হয়ে আছে। মনে হলো কেউ গলা চেপে ধরায় শ্বাস নিতে না পেরে নাক থেকে রক্ত বেড়িয়েছে আর কাশি হওয়ায় গলার চামরা কিছুটা ছুঁলে গিয়েছে। গলায় ব্যাথা পাবে কথা বলতে গেলে। শরীর অনেকটা দুর্বল তাই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।”
অভিদ, রায়হান অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। নিলয় আলতো হেসে সেখান থেকে চলে যায়। রায়হান অবাক হয়ে বলে
” রুহির সাথে এমন কে করেছে ? বাড়িতে এতো মানুষের মাঝে কে এসেছিলো ?”
অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” বাড়িতে কারোর আসার কি প্রয়োজন ? বাড়িতে শত্রু থাকতে আর কারোর আসা দরকার হয় না। এটা সোহাদ ছাড়া আর কেউ করেনি। ওর শাস্তির পাল্লা ধীরেধীরে বাড়তেই আছে। এবার কমানো প্রয়োজন।”
অভিদ রুহির কেবিনে ঢুকে গেলো। রায়হানও অভিদের সাথে কেবিনে ঢুকলো। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির গালে হাত বুলিয়ে কিছুটা ঝুকে কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। রায়হান মুচকি হাসলো দুজনকে দেখে। অভিদ সোজা হয়ে বসতেই রুহির বা গালের দিকে চোখ যায়। লাল লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। অভিদ রুহির গাল ঘুরিয়ে ভালো করে দেখে এটা আঙ্গুলের ছাপ। অভিদ চোয়াল শক্ত করে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” রায়হান !” রায়হান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হলো আমি তো এখানেই আছি চেঁচাচ্ছিস কেনো ?”
অভিদ রাগে ফুঁসতে ফুসঁতে বলে
” এদিকে আয়। দেখ রুহির গালেও মারের দাগ। সোহাদ রায়জাদার এতো বড় সাহস কি করে হয় ? আমার বাড়িতে থেকে আবার কলিজার গায়েই হাত তোলে !”
রায়হান রুহির গাল আর গলা ভালো করে চেক করে দেখে সত্যিই দুই জায়গা লাল হয়ে রয়েছে।
রায়হান ঢোক গিলে বলে
” আচ্ছা তুই এভাবে রাগিস না বাড়িতে গিয়েই সব করতে পারবি। ক্যামরা তো রুমে আমি আগেই সেট করে রেখেছিলাম সেটা চেক করলেই হবে। এখন হসপিটালে রাগরাগি করার দরকার নেই।”
অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” রাগারাগি করবো না মানে ? আমার রুহির গায়ে হাত দিয়েছে। এবার দেখবি আজকে আমি ওর কি অবস্থা করি ! ওর হাত কেটে ফেলবো আমি।”
পেছন থেকে কেউ কাধে হাত রাখতেই অভিদ উঠে পেছনে তাকায়। নিলয়কে দেখে অভিদ মুখ মলিন করে নেয়। অভিদ নিচু স্বরে বলে
” কি করে ক্ষমা চাইবো বুঝতে পারছি না আমি।”
নিলয় হেসে বলে
” আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তোমাকে ? তোমার সব কথা আমাদের জানা। তোমার সম্পর্কে সব শুনেই আমরা রুহির হাত তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। আমি জানি তুমি রুহিকে আঘাত করনে না কখনোই তাই তোমার উপর রেগে নেই। তবে সোহাদ রায়জাদার থেকে রুহিকে দূড়ে রাখার চেষ্টা করবে নাহলে আবারও ক্ষতি করতে চাইবে।”
অভিদ নিলয়ের হাত ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে
” আমি রুহিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই এখনই। কোনো প্রবলেম হবে রুহির ?”
নিলয় মাথা নেড়ে বলে
” তেমন কিছু হবে না তবে আজকের পুরো দিনটা স্যালাইন দেওয়া হবে। রুহিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে রুহির শরীর দুর্বল তাই খেয়াল রাখবে ওর। তোমরা কাজে ব্যস্ত থাকলে মিশু, রাইমাকে বলবে ওর খেয়াল রাখতে।”
অভিদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
অভিদরা বাড়িতে আসার পর দেখে সবাই রুহির জন্য চিন্তা করছে এখনও। রুহিকে দেখে সবাই ছুটে আসে কিন্তু রুহি ঘুমিয়ে থাকায় অভিদ সবাইকে বেশি কথা বলতে না করে। স্ট্রেচে করে রুহিকে রুমে নিয়ে স্যালাইন সেট আপ করে দিয়ে বেড়িয়ে যায়। কৌশিকা রায়জাদা চিন্তি হয়ে বলে
” কি হয়েছিলো রুহির ? রুহি ঠিকাছে তো ? আর বাচ্চা সুস্থ তো ?”
অভিদ ক্ষেপে বলে
” কি বলছো এসব ফুপ্পি ? কার কি হবে ? দুজনই সুস্থ।” কৌশিকা রায়জাদা কপাল কুঁচকে বলে
” তাহলে কি হয়েছিলো ওর ?”
অভিদ রাগে ফুস ফুস করতে করতে এদিক ওদিকে পাইচারি করতে থাকে। দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” সোহাদ রায়জাদা ওর গায়ে হাত তুলেছে। আমি ওকে ছাড়বো না।” অভিদ রেগে হনহনিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে স্টাডি রুমে চলে যায়। রায়হানও ছুটে যায়। কৌশিকা রায়জাদা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে চিলে যায়। মিশু, রাইমা, অনি রুহির পাশে বসে থাকে।
অভিদ সিক্রেট রুমে এসেই টিভির সামনে বসে পরে। হসপিটালে যাওয়ার আগের সময়টা টেনে দেখতে থাকে। সোহাদ রায়জাদার সব কাজ আর কথাবার্তা শুনলো। কথা শুনে বুঝতে পারলো সে কেনো এমন করেছে ! বাচ্চার কথা তার কানে চলে গিয়েছে।
রায়হান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি করবি এখন ? রুহির তো রিস্ক বেড়ে গেলো।”
অভিদ রেগে টেবিলে বারি মেরে বলে
” এবার আমি আমার খেলার আসল চাল শুরু করবো। আর কিছু করার সুযোগ দেবো না।”
অভিদ সব লক করে রায়হানকে নিয়েউ আবার নিজের রুমে চলে আসে। রুহিকে দেখে কিছুক্ষণ পর অভিদ বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। অভিদ আর রায়হান একটা স্পেশাল ছুড়ি অর্ডার করে আর একটা বিশ জাতীয় কিছু অর্ডার করে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩৬
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ আর রায়হান একটা স্পেশাল ছুড়ি অর্ডার করে আর একটা বিশ জাতীয় কিছু অর্ডার করে।
সেগুলো কালকে সকালের মধ্যে অভিদের কাছে পৌঁছে যাবে। অভিদ রায়হান তাদের কাজ শেষে বাড়িতে এসে পড়ে। অভিদ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রুহির পাশে এসে বসে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। স্যালাইনের দিকে তাকিয়ে দেখে স্যালাইন প্রায় শেষ। অভিদ স্যালাইন খুলে বেডে হেলান দিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখলো রুহি পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করছে তা দেখে অভিদ সোজা হয়ে বসে।
রুহি দুইবার গলায় হাত দিয়ে কাশলো। অভিদ পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে রুহির মাথা হাত রেখে বলে
” নাও পানি খাও।” রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। অভিদ বুঝতে পেরে গ্লাসটা রেখে রুহির মাথা উঠিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে। রুহি অভিদের বুকে মাথা রেখে শব্দ করে কাঁদতে থাকে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে থাকে। কিছুক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে রুহির হিচকি উঠে যায়। অভিদ আবারও পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই রুহি দুই চুমুক খেয়ে সরিয়ে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” সকাল থেকে তোমার শরীর ভালো না আমাকে একবারও বলা হয়নি কেনো ?”
রুহি কান্নার বেগ কিছুটা কমিয়ে আস্তে করে বলে
” আপনার মিটিং ছিলো তাই বলেনি। ভেবেছিলাম পরে বলবো।”
অভিদ রুহিকে নিজের বুকের মাঝে কিছুটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রুহি এখনও কাঁদছে সোহাদ রায়জাদার ভয়ে। অভিদ বুঝতে পারছে রুহি ভয় পাচ্ছে। অভিদ কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো
” ব্যাথা করছে কোথাও ?”
রুহি মাথা নেড়ে না বললো। অভিদ রুহিকে সোজা করে বসিয়ে রুহির চোখ মুখ মুছিয়ে বলে
” আমি সব জানতে পেরেছি আর ভয় পেতে হবে না তোমাকে। সোহাদ রায়জাদার ছায়া যাতে তোমার উপর না পরে সেই ব্যবস্থা করবো আমি।”
রুহি ছলছল চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কিভাবে জেনেছেন ?”
অভিদ মুচকি হেসে রুহির গালে চুমু বসিয়ে বলে
” অভিদ রায়জাদার কাছ থেকে কোনো কিছুই লুকানো এতো সহজ না। আমি জানি কি হয়েছে।”
রুহি মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” উনি বলেছেন আমাকে আর আমার বেবিকে মেরে ফেলবেন উনি।”
অভিদ নিজের বাহুডোরে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” আমি থাকতে এমন হবে না। তোমাদের দুজনের কিছু হবে না।” রুহি কান্না বন্ধ করে অভিদের বুকে মাথা দিয়ে রাখে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” কিছু খাবে ?” রুহি মাথা নেড়ে না করে। অভিদ কিছু না উঠে চলে যেতে নিলে রুহির অভিদের হাত ধরে জড়ানো গলায় বলে
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ?” অভিদ শান্তনা দিয়ে বলে
” আমি নিচে যাচ্ছি ভয় পেয়ো না। এখনই চলে আসবো আমি।”
রুহি নিচে নামতে নামতে বলে
” না আমিও যাবো আপনার সাথে।” রুহির এসে অভিদের পাশে দাঁড়াতেই অভিদ রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রুহি ভয় পেয়ে অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে। অভিদ রাগি গলায় বলে
” একদম না। তোমার শরীর অনেক দুর্বল। বেড থেকে নামবে না আজকে। ঠিকাছে আমি নিচে নামছি না জাস্ট মিশুকে গিয়ে কথাটা বলে আসছি। তুমি একদম নড়বে না।”
রুহিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মিশুর রুমে চলে যায়। মিশু,রাইমা, রায়হান বসে বসে কথা বলছিলো অভিদকে দেখে তিনজনই দাঁড়িয়ে যায়।
অভিদ মিশুর উদ্দেশ্যে বলে
” মিশু সার্ভেন্টকে গিয়ে একটু বলো রুহির জন্য থাই সুপ বা চিকেন স্টু বানিয়ে আনতে। রুহি ভয় পাচ্ছে তাই নিচে যেতে পারিনি।” মিশু মুচকি হেসে নিচে চলে যায়।
অভিদ রুমে এসে দেখে রুহি টিভি চালিয়ে শুয়ে রয়েছে। অভিদ রুহির পাশে বসেই রুহির গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। রুহি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে অভিদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। রুহি নিচু স্বরে অনুরোধ করে বলে
” একটু ব্যালকনিতে যাই ?”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” একদম না। অনেক রাত হয়েছে এখন ঠাণ্ডা লাগবে ব্যালকনিতে গেলে।” রুহি আর কিছু না বলে টিভি দেখতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর খাবার আসতেই অভিদ রুহিকে খাইয়ে দিয়ে রুহির হাতে মেডিসিন দেয়। রুহি সেগুলো মুখে নিয়ে পানি দিয়ে খেয়ে অভিদকে বলে
” আপনি খাবেন না ?” অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমি মেডিসিন খাবো কেনো ?” রুহি বোকার মতো তাকিয়ে বলে
” আমি ডিনারের কথা বলেছি।” অভিদ থতমত খেয়ে যায়। নিজেকে ঠিক করে বলে
” হ্যা একটু পর। তুমি ঘুমাও।”
রুহি ব্ল্যাংকেট গায়ে দিয়ে শুয়ে অভিদের এক হাত ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ মুচকি হেসে অন্য হাত দিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
ডিনার শেষে অভিদ রুমে এসে রুহিকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে অভিদের ঘুম ভাঙতেই চোখ পড়ে রুহির দিকে। রুহি এখনও অভিদের বুকে মাথা রেখেই বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে রয়েছে। মুখের সামনে এলোমেলো গুলো নিশ্বাস ফেলার সাথে সাথে উড়ছে। অভিদ মুচকি হাসি দিলো রুহিকে দেখে। অভিদ নিজের হাতটা রুহির পেটের উপর থেকে সরিয়ে এনে রুহির মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দেয়। হঠাৎ অভিদের ফোন বেজে উঠে। রুহি ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুঁচকে নেয়। অভিদ দ্রুত হাত বাড়িয়ে নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করে ধমক দিয়ে বলে
” আর কোনো সময় পাও না তোমরা ? এতো সকালে কেনো ফোন করেছো ?”
অপরপাশ থেকে কেউ ভয়ে ভয়ে বলে
” স্যার আমি আপনার জিনিস গুলো নিয়ে এসেছিলাম। আজকে সকালে ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিলো।”
অভিদের খেয়াল হতেই বলে
” ও হ্যা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন আমি আসছি।”
অভিদ ফোন কেটে দেয়। রুহিকে ধীরেধীরে ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে। রুহিকে ভালো করে শুয়ে দিয়ে অভিদ জ্যাকেট পরে আলমারি থেকে টাকা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
নিচে এসেই দেখতে পেলো গেটের বাইরে একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। অভিদ একজন গার্ডকে বলে সেই লোকটাকে গ্যারেজে নিয়ে আসার জন্য। অভিদ গ্যারেজে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর গার্ড লোকটাকে নিয়ে গ্যারেজে আসে। লোকটা অভিদের হাতে একটা ব্যাগ তুলে দিয়ে বল্র
” স্যার এটার মাঝেই সেই ছুড়ি আর বিশটা রয়েছে।”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” বিশে কাজ না করলে কি হবে জানেন তো ? আমার সাথে বেইমানি করে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না।”
লোকটা ভয়ে ভয়ে বলে
” কোনো বেইমানি করিনি স্যার। এটা কাজ করবে এর থেকেও দশগুণ কাজ করে সেই বিশও রয়েছে। আপনি চাইলে সেটাও দিতে পারবো।”
অভিদ আবারও একই ভঙ্গিতে বলে
” লাগবে না এটাই যথেষ্ট। আর আমি তো আছিই। এই নাও তোমার টাকা।” লোকটাকে কাঁপা কাঁপা হাতে টাকাটা নিলো। লোকটা অভিদের গম্ভীর চেহারা দেখে এমনি ভয় পাচ্ছে। গার্ড আবারও তাকে নিয়ে যায়। অভিদ ব্যাগটা নিয়ে বাড়িতে এসে পরে। বাড়িতে ঢুকতেই সামনে পরে সোহাদ রায়জাদা। তিনি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বাইরে যাচ্ছে। অভিদ ব্যাগটা জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে বলে উঠে
” কোথায় যাচ্ছো মিস্টার সিনিয়ার ?”
সোহাদ রায়জাদা ভুতের কথা শোনার মতো লাফিয়ে উঠে। অভিদকে দেখে ঢোক গিলে বলে
” আমি জগিং করতে যাচ্ছিলাম। ততুমি কোথায় গিয়েছিলে ?”
অভিদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে
” অনেক দিন ধরে জগিং করা হচ্ছে না তাই একটু হেটে আসলাম আর জগিং পার্কটা ভালো করে দেখে আসলাম। সেখান কোনো বড় সড় গেইম খেলা যাবে কিনা সেটা দেখে আসলাম।”
সোহাদ রায়জাদা ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিসের গেইম খেলবে ?” অভিদ বাকা হেসে বলে
” সেটা সময় হলেই দেখতে পাবে। যাই হোক কাল কোথায় ছিলে তুমি ? রুহি এতো অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো ওকে নিয়ে হসপিটালেও গেলাম কিন্তু এসেও তোমাকে দেখতে পেলাম না কেনো?”
সোহাদ রায়জাদা জোরপূর্বক হেসে বলে
” আমি তো তখন বাড়ি ছিলাম না। আমার বিজনেসের একটা মিটিং ছিলো সেখানে প্রেজেন্ট হতে হয়েছে। তা রুহি এখন কেমন আছে ?”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” মোটামুটি ভালো।” সোহাদ রায়জাদা তাড়া দেখিয়ে বলে
” আচ্ছা তাহলে আমি একটু হেটে আসছি তুমি রুহির কাছেও যাও।” অভিদ সম্মতি জানাতেই সোহাদ রায়জাদা হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ উপরে চলে যায়।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই কথা বলছে আর খাচ্ছে আর সোহাদ রায়জাদা চেহারায় গম্ভীর্য ভাব নিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে। রুহির আর অভিদের খাবার উপরে পাঠিয়ে দেওয়ায় ওরা নিচে নামেনি।
এদিকে অভিদ হাতে গ্লাভস পরে ছুড়িতে ভালো করে বিশ মিশিয়ে নিয়েছে। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি ছুড়ির দিকে আতংকিত ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। অভিদ হালকা হাসলো রুহিকে দেখে। রুহি ঢোক গিলে বলে
” এটা দিয়ে কাকে মারবেন ?”
অভিদ বাকা হেসে বলে
” মারবো না থেরাপি দেবো। দেখতে চাও কাকে ?”
রুহি মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোঝায়। অভিদ রুহির দিকে এগিয়ে এসে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে
” ভয় পাবে না তো ?” রুহি ঢোক গিলে কিছুক্ষণ ভেবে বলে
” নাহ আমি দেখতে চাই না কিছু।”
অভিদ মুচকি হেসে বলে
” গুড।” অভিদ বাইরে বেড়িয়ে দরজা লক করে দেয়। সেখানের রেলিং এ দাঁড়িয়ে ছুরি নিয়ে সোহাদ রায়জাদার হাতের দিকে তার লক্ষ রাখে থাকে। সোহাদ রায়জাদা খেতে খেতে হাতটা টেবিলের উপরে রাখে। অভিদ তার সরু চোখ দিয়ে সোহাদ রায়হাদার সেই হাতের তালুর উল্টো পিঠ বরাবর তাকিয়ে থাকে।
দক্ষতার সঙ্গে হঠাৎ সেই ছুরিটা সেই হাত বরাবর ছুরে মারে। ছুরিটা সোহার রায়জাদার হাতের উল্টো পিঠের মাঝে ঢুকে তালু ছেদ করে ছুরির কোণা বেড়িয়ে থাকে । সোহাদ রায়জাদা হাতের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে উঠে। সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে হাতের দিকে। সোহাদ রায়জাদার চিৎকার বাড়তেই থাকে। তার গগন ফাটানো চিৎকার শুনে বাকিদের হুশ আসে। #মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ রায়জাদার চিৎকার বাড়তেই থাকে। তার গগন ফাটানো চিৎকার শুনে বাকিদের হুশ আসে। কৌশিকা রায়জাদা ভয় পেয়ে সোহাদ রায়জাদার পাশে এসে ছুরিটাতে হাত দিতেই সোহাদ রায়জাদা চেঁচিয়ে উঠে। কৌশিকা রায়জাদা ঢোক গিলে সরে যায়। রায়হান এতোক্ষণ শান্ত ভাবেই বসে ছিলো সোহাদ রায়জাদার এতো চিৎকার শুনে নিজের মধ্যে একটা অস্থির ভাব নিয়ে এসে গার্ডদের ডাকতে থাকে। গার্ডরা ছুটে আসতেই রায়হান অস্থির গলায় বলে
” চাচ্চুকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো ! চাচ্চুর কষ্ট হচ্ছে।”
গার্ডরা তাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উপর থেকে অভিদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখে মুখে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। রায়হান একবার অভিদের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয়। অভিদ হেসে ইশারা করে হসপিটালে যাওয়ার জন্য। রায়হান চোখের পলক ফেলে চলে যায়। অভিদ বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে রুমের লক খুলে ভেতরে ঢোকে। রুহি ফ্যালফ্যাল করে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কাজ শেষ আপনার ?” অভিদ এসে ধপ রুহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। রুহির কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ মাথাটা কিছুটা উঁচু করে রুহির ঠোঁটে চুমু খেয়ে হেসে বলে
” এখনও অনেক কাজ বাকি।” রুহি লজ্জায় আলতো হাসলো। অভিদ রুহির হাতটা নিজের চুলের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে বলে
” তোমার নরম নরম হাতে আমার মাথাটা টিপে দাও বাবুই পাখি। একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে নেই।” রুহি আলতো হাতে অভিদের মাথা টিপে দিতে থাকে। অভিদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
এদিকে সোহাদ রায়জাদাকে নিলয় এর হসপিটালে নিয়ে এসেছে। নিলয় সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে কেবিনে ঢুকেছে অনেক সময় হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর….
নিলয় কেবিন থেকে বেড়িয়ে রায়হানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রায়হান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি অবস্থা এখন ?”
নিলয় অস্থির হয়ে বলে
” উনার এই অবস্থা কিভাবে ? এতবাজে ভাবে কে ছুরি মেরেছে ? তার উপর সেই ছুরিতে বিশ ছিলো। বিশ থাকায় সেটা তার হাতের কব্জি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে আর হাত অকেজো হয়ে গিয়েছে। এই বিশ পেয়েছে কোথায় সেটাই বুঝতে পারছি না। যাই হোক, উনার হাত অকেজো হয়ে গিয়েছে। হাতটা মাঝে মাঝে নাড়াতে পারলেও পুরো পুরিভাবে কোনোদিন ঠিক হবে না।” রায়হান মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে
“কি হবে এখন ? চাচ্চু তো এটা জানলে তুফান বইয়ে দেবে।” নিলয় সন্দেহী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন করে বসে
” আচ্ছা এসব তোমরা করোনি তো ? অভিদ রায়জাদা আর রায়হানের জন্য এসব অসম্ভব কিছু নয়। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তোমাদেরই কাজ।” রায়হান বাকা হাসি দিয়ে নিলয়কে চোখ মারে। নিলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এটা সত্যি এই দুজনের কাজ। নিলয় হতাশার নিশ্বাস মাথা নেড়ে ফেলে চলে যায়। রায়হান হাসতে থাকে।
সোহাদ রায়জাদার জ্ঞান ফিরতেই এই নিউজ জানতে পেরে এই কেবিনের ভেতর তুফান ছেড়ে বারোটা বাজিয়ে দেয়। নিলয় এসে তাকে শান্ত করতে চাইলে সোহাদ রায়জাদা আরো রেগে যায়। শেষে নিলয় তাকে ধমক দিয়ে গম্ভীরভাবে বলে শান্ত হয়ে থাকতে নাহলে পুলিশকে ফোন করবে। সোহাদ রায়জাদা কিছুটা শান্ত হয়।
রায়হান সোহাদ রায়জাদাকে কিছুটা শান্তনা মুলক কথাবার্তা বলে। সোহাদ রায়জাদা ধরতে পারে এটাও O.R.R. মাফিয়ারই কাজ কিন্তু সে বাড়ির ভেতর কি করে ঢুকলো সেটা তার মাথায় ঢুকছে না। সোহাদ রায়জাদা আজই বাড়ি চলে যেতে চায়। কিন্তু নিলয় বলে আগামীকাল ছাড়া তাকে ডিস্টার্চ দেওয়া হবে না। সোহাদ রায়জাদা রাগে রি রি করতে থাকে। রায়হান কিছুক্ষণ থেকে বাড়িতে চলে যায়। এদিকে সোহাদ রায়জাদার অভিদের কথা মাথায় আসতেই তাকে খুঁজতে থাকে। অভিদ তাকে দেখতে আসেনি ভেবে তার কিছুটা সন্দেহ হলো।
রায়হান বাড়িতে এসে দেখে সবাই সোফায় বসে বসে পপকর্ন খাচ্ছে আর মুভি দেখছে। আর তুষার তার প্রাণের ফোন নিয়ে বসে রয়েছে। রায়হান কৌশিকা রায়জাদার বসা সোফার হ্যান্ডেলে গিয়ে বসে মুখ কুঁচকে বলে
” ফুপ্পি তোমার ভাই না হাত অকেজো করে হসপিটালের বেডে শুয়ে রয়েছে ? তুমি এখানে বসে মুভি দেখছো ?”
কৌশিকা রায়জাদা শান্ত ভাবেই বললো
” যার যা প্রাপ্য সে সেটা পেয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা করে লাভ কি ?”
রায়হান এক ভ্রু উঁচু করে মাথা নেড়ে বলে
” তা ঠিক।”
এদিকে অভিদের মাথা টিপে দেওয়ায় সে ঘুমে কাতর হয়ে রয়েছে। রুহি অভিদকে শুয়ে দিয়ে ব্যালকনির দোলনায় বসে রয়েছে।
একটু পর দরজা ঠেলে রায়হান রুমে ঢুকে পরে। অভিদকে ঘুমে দেখে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে রুহিকে খুঁজতে থাকে। রুহিকে ব্যালকনিতে দেখে রায়হান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রায়হান অনির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অনির কিছু কথা ওর কানে আসতেই থেমে গেলো। রায়হান ভ্রু কুঁচকে নেয় অনির কথাবার্তা শুনে। রায়হান একটু এগিয়ে এসে অনির রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনির রুমের দরজা খোলা থাকায় রায়হান সহজেই দেখতে পেয়ে গেলো অনি কার সাথে কথা বলছে। অনির ল্যাপটপ স্ক্রিনে একজন সুদর্শন পুরুষের চেহারা দেখা যাচ্ছে। অনির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে যদিও তার কোনো কথা রায়হান শুনতে পাচ্ছে না অনির ব্লুটুথ হেডফোন কানেক্টেট থাকায়। অনিও তার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে না। মুখে একটু লজ্জা লজ্জা ভাব রয়েছে এছাড়াও আলাদা একটা উজ্জ্বলতা ভাব রয়েছে। রায়হানের কাছে ঘটনাটা সন্দেহ জনক মনে হলো। রায়হান সন্দেহ নিয়েই সেখান থেকে সরে যায়।
বিকেল হলে অভিদ রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সোহাদ রায়জাদার কাছে এসেই অভিদ ইমোশনাল কাহিনী করে যাচ্ছে। রায়হান এসব দেখে নিজেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সোহাদ রায়জাদা একসময় বলে
” আমি যখন হসপিটালে ছিলাম তখন তুমি কোথায় ছিলে ?” অভিদ মাথা নিচু করে অপরাধী স্বরে বলে
” সরি চাচ্চু। আমি এসব জানতাম না কিছুই। রায়হান একটু আগেই আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে সব কিছু। আমি তখন প্রেস মিটিং করছিলাম রুমে তাই কিছুই জানতে পারিনি ।”
সোহাদ রায়জাদা অভিদকে শান্তনা দিয়ে বলে
” আর কেঁদে কি হবে ? যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে।এখন কান্না করার কথা আমার। বাংলাদেশে আসার পর থেকে একের পর এক অঘটন ঘটে যাচ্ছে আমার সাথে। এখন হাতটাও নেই বললেই চলে।”
অভিদ রায়জাদা দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” কে তোমার এই হাল করেছে সেটা আমি খুঁজে বের করবো। আমার বাড়িতে ঢুকেই এভাবে তোমাকে আঘাত করেছে ? আমি সব কিছুর খোঁজ নিয়ে দেখছি। তুমি চিন্তা করো না চাচ্চু।”
অভিদ আরো কিছুক্ষণ থেকে সন্ধ্যার দিকে তার গোডাউনের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।
অভিদ, রায়হান সেখানে গিয়ে তাদের গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে
” নতুন কোনো ইনফরমেশন আছে ?”
একজন গার্ড এগিয়ে এসে বলে
” জি স্যার। কালকে বিকেলে সোহাদ রায়জাদার একটা টিম ড্রাগস সাপ্লাই করবে। শুনেছি তার কয়েকটা সোহাদ রায়জাদার কাছেও যাবে। সোহাদ রায়জাদা নিজে ওদের মাঝে থাকবে যাতে O.R.R. এবার কোনো ঝামেলা করতে না পারে।” অভিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” এতো বুদ্ধি ?”
সেই গার্ডটা আবার বলে
” স্যার আরেকটা ইনফরমেশন পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে আবারও অনেক মেয়ে পাচার করা হবে দুইদিন পর। সোহাদ রায়জাদারই টিম কাজ করবে। ওদের রাত ১১টায় সুইজারল্যান্ডেরই কোনো Brothels এ পাঠানো হবে।”
অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আমাদের এতোবছরের সব ধৈর্যের বাধ শেষ হবে সেইদিন। সব কিছু সবার সামনে তুলে আনবো আমি।”
রায়হান গম্ভীর গলায় বলে
” তোমরা তোমাদের প্রস্তুতি শুরু করো। কালকের জন্যেও আর সেইদিনের জন্যেও।” গার্ডরা মাথা নাড়িয়ে বলে
” ওকে স্যার।”
অভিদ আর রায়হান বেড়িয়ে যায়। গাড়িতে হঠাৎ রায়হানের অনির কথা মনে পড়ে। রায়হান অভিদের দিকে তাকিয়ে দেখে অভিদ চোখ মুখ শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রায়হান ভাবতে থাকে এটা কখন বলা প্রয়োজন। রায়হান ঢোক গিলে বলে
” অভিদ তোকে একটা কথা বলার ছিলো।”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো রায়হানের দিকে। গম্ভীর গলায় বলে
” কি কথা ? এই আবার এসব পারমিশন মেওয়া শুরু করেছিস কবে থেকে ?”
রায়হান দাঁত কেলিয়ে বলে
” এই তো মাত্র থেকেই। আচ্ছা আমার কথা শোন।”
অভির আবারও গম্ভীর গলায় বলে
” হুম বল। ”
রায়হান নিশ্বাস নিয়ে বলে
” আজকে আমি অনিকে দেখেছি একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। মানে ছেলের দরকারে বা বন্ধু হলে কথা সাথে বলতেই পারে তবে আমার কাছে অনির ব্যাপারটা কিছুটা অন্যরকম লেগেছে। তুই আর রুহি যেভাবে কথা বলিস তখন যেই রিয়েকশন বা লজ্জা লজ্জস ভাব থাকে রুহির মাঝে তেমন কিছুই ।”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুই সিউর ?” রায়হান মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। অভিদ শান্ত গলায় বলে
” ছেলেটার খোঁজ খবর নিতে থাক। নষ্ট ছেলে হলে তাকে অনির জীবন থেকে সরিয়ে দিবি। আর অনির সাথে বাকিটা কথা বলবো আমি।”
রায়হাম মাথা নেড়ে হ্যা বলে।

চলবে~ইনশাল্লাহ………

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here